অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #আনিশা_সাবিহা পর্ব ২

0
744

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২
অন্ধকার এক ঘরে কাতরাচ্ছে এক সুন্দরী রমণী। তার গায়ে অদ্ভুত পোশাক। পেটে ঢুকে গেছে তলোয়ার। যেই তলোয়ার বেয়ে পড়ে যাচ্ছে তার তাজা রক্ত। সেই সঙ্গে চোখ বেয়ে পড়ে যাচ্ছে পানি। তার ওপর পড়ছে চাঁদের আলো। চাঁদের আলো পড়া ব্যতীত জায়গায় চারিদিকে অন্ধকার। মেয়েটি দেখতে পাচ্ছে তার প্রিয় মানুষটির অবয়ব। যে কি না নিষ্ঠুরের মতো হেসে চলেছে। তার মন কি কাঁদছে না প্রেয়সীর জন্য? মেয়েটি আটকা আটকা গলায় বলে….
–“তু…তুমি এমনটা কি করে ক…করতে পারো আমার সাথে? ব্যাস একবার তু…তুমি বলো এসব মিথ্যে। তুমি আমাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত কর নি। বি….বিশ্বাস করো আমি সব ভুলে যাব। আমি তোমার কথা মে…মেনে নেব।”

যুবকটির হাসির শব্দ আরো বাড়ে। হালকা নিচু হয় সে। নিষ্ঠুরের মতো মেয়েটির গাল চেপে ধরতেই নিজের রক্তমাখা হাতটা যুবকটিকে আঁকড়ে ধরে। যুবকটির হৃদয় কাঁপে না। ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় মেয়েটিকে। হার হিম করা কন্ঠে বলে……
–“কি করে ভাবলে তুমি? তোমার মতো সাধারণকে আমি ভালোবাসব? কে আমি জানো? প্রিন্স আমি। রাজকুমার যাকে বলে বাংলা ভাষায়। একজন প্রিন্স হয়ে সে তোমাকে কি করে ভালোবাসবে? তোমার শক্তি শেষ। তুমিও শেষ। বিদায়!”
মেয়েটির মুখ থেকে আর কিছু বের হয় না। কিছু বলার নেই তার। সে শুধু এক ভাবে তাকিয়ে আছে প্রিয় মানুষটির দিকে। কত নিপুণ অভিনয় ছিল তার। চোখ বন্ধ করে সে।

চোখ খুলে ফেলে মাধুর্য। আশেপাশে তাকিয়ে দ্রুত উঠে বসে পড়ে সে। হালকা আলোতে নিজের রুমে আবিষ্কার করে সে। ঠোঁট কামড়ে ধরে তার স্বপ্নের কথা ভাবতে থাকে। এই স্বপ্নের কারণেই সে রাজকুমারের গল্প শুনলে রাগ হতো। এ কারণে বড়লোকদের পছন্দ করে না মাধুর্য। ওপরে ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে। তবুও দরদর করে ঘামছে সে। নিজের চুল ওপরে তুলে দিতেই পাশে ঘুমিয়ে থাকা সামিহা উঠে বসে। আশেপাশে আযান হচ্ছে। মাধুর্যের চোখমুখ দেখে চিন্তিত গলায় বলে…..
–“মাধুর্য, কি হয়েছে তোর? আবার সেই স্বপ্নটা দেখলি?”
মাধুর্য কিছু না বলে হাঁটুতে থুঁতনি ঠেকিয়ে বসে থাকে। সামিহা মাধুর্যের মাথা বুলিয়ে দেয়।
–“স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়। বাস্তব হয় না কখনো। এসবের ভিত্তি খুঁজতে যাস না।”
–“কিন্তু, আমার কেন মনে হয়? যে ওই স্বপ্নের মেয়েটা যেমন যন্ত্রণা পাচ্ছিল ঠিক তেমনই আমি পাচ্ছি। মনে হয়, ওই প্রিন্স কে যদি আমি পেতাম তাহলে ওকে ছাড়তাম না। কিছুতেই না। খুব রাগ হয়।”

সামিহা মাধুর্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। মেয়েটার রুপ এই আঁধারেও জ্বলজ্বল করছে। মাধুর্যের নাকের ঘাম মুছে দিয়ে বলে….
–“দেখ, ওই প্রিন্স তোর কল্পনা। এসব নিয়ে চিন্তা করিস না তুই। এমনিতে তোর ঘুম আসে না রাতে। একটু আগে রাত তিনটের দিকে ঘুমিয়েস আমি টের পেয়েছি। আর এসব স্বপ্নের জন্য নিজের ঘুম নষ্ট করিস না। নামাজ পড়ে শুয়ে পড়।”
মাধুর্য মাথা নাড়ায়। উঠে ওযু করে সামিহার সাথে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের ব্যবধানে ঘুমিয়ে যায় সামিহা। তবে চোখে ঘুম আসে না মাধুর্যের। ও জানে ভোর ছয়টা বাজে ওর মামির ডাক পড়বে। তাই ঘুমিয়ে লাভ নেই।
ভোরে ছয়টা বাজে উঠে পড়ে মাধুর্য। বাইরে গিয়ে চোখ পড়ে বিভোরের দিকে। বিভোরের সকাল বেলা ওঠার অভ্যেস। প্রতিদিন জগিং করতে যায় ও। মাধুর্যকে দেখে হালকা হেসে দেয় সে। অতঃপর বলে….
–“মাধুর্য, এতো সকাল বেলা? কালকে ডক্টরের এপোয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলি?”

মাধুর্য মাথা দুলায়।
–“হ্যাঁ ভাইয়া। আজ যেতে বলেছে।”
–“আচ্ছা দাঁড়া।”
মাধুর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বিভোর নিজের মানিব্যাগ বের করে এক হাজার টাকা হাতে নিয়ে মাধুর্যেট হাতে গুঁজে দেয়। চমকে উঠে টাকাগুলো না ধরতেই টাকা পড়ে যায়। মাধুর্য নাবোধক মাথা নাড়িয়ে বলে….
–“বিভোর ভাইয়া, কাল তো তুমি টাকা দিয়েছিলে। আজ টাকা দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার কাছে আছে টাকা।”
বিভোর টাকা তুলে আবারও মাধুর্যের হাতে গুঁজে দেয়।
–“আমি জানি তুই মায়ের জন্য টাকা নিতে চাইছিস না। মা জানবে না চিন্তা করিস না। জাস্ট টাকা নে। এটা আমার আাদেশ।”
কি আর করার? টাকাগুলো নেয় মাধুর্য। সেগুলো জায়গায় রেখে হাঁটা দেয় রান্নাঘরের দিকে।

তরকারি কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মাধুর্য। তখনই আগমন ঘটে রেনুকার। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখে নেয় মাধুর্যকে। তারপর রান্নাঘরে ঢুকে কেঁড়ে নেন হাতে থাকা ছুরি। ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মাধুর্য। রেনুকা তরকারি কাটতে শুরু করেন। ভার গলায় বলেন….
–“তোকে তরকারি কাটতে হবে না। আমি কাটছি। তুই শুধু রান্না করবি।”
–“ঠিক আছে মামি মা।”
মাধুর্য চুলার তাপে রান্না করতে থাকে। রেনুকা সবসময় মাধুর্যকে চুলার দিকে ঠেলে দেন। মনে মনে হিংসে করেন মাধুর্যের এই সৌন্দর্যকে। কারণ তার কোনো মেয়ের সৌন্দর্য এমন নয়। তাই চুলার তাপে মাধুর্যের গায়ের রঙ নষ্ট যেন হয়ে যায় সেই ব্যবস্থার করতে থাকেন উনি। কিন্তু ভাগ্য যেন চায় না এসব কিছু। মাধুর্যের কোনোকিছুতেই কিছু হয় না। বরণ তার সৌন্দর্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ঝলমলে হয়ে চলেছে তার গায়ের রঙ।

সকাল প্রায় সাড়ে আটটা। তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে মাধুর্য। তার বেস্টফ্রেন্ড কবিতা দাঁড়িয়ে আছে হাইওয়ে তে। ও নাকি বাড়িতে আসবে না! রেনুকার খিটখিটে মেজাজ অসহ্য লাগে কবিতার। তাই আসবে না সে। দ্রুত পায়ে রেডি হয়ে সে সামিহা কে বলে উঠল….
–“আমি আসছি সামিহা আপু।”
সামিহা সোজাসুজি ভাবে বলে….
–“আগে ডক্টর, দেন ইউনিভার্সিটি। মনে থাকে যেন।”
–“হ্যাঁ বাবা থাকবে।”
এক গাল হেসে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে মাধুর্য। বাইরে কড়া রোদ। শরীর যেন ঝলসে যাচ্ছে। চোখ জ্বলসে বার বার। তাই একটু পর পর চোখ কচলিয়ে সামনে তাকাচ্ছে মাধুর্য।

মিনিট দশেক হেসে চলে আসে হাইওয়েতে। যেখানে কবিতা মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাধুর্য কবিতার সামনে দাঁড়াতেই ও আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে…..
–“তুই অলওয়েজ লাস্ট টাইমে উপস্থিত হয়ে কি শান্তি পাস, মাধু?”
–“তুই বুঝবি না। রিকশা নে। আগে ডক্টরের কাছে যেতে হবে।”
কবিতা নাক ঘষে রিকশা দাঁড় করায়। দুই বান্ধবী উঠে পড়ে রিক্সাতে। মাধুর্য বার বার নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে রোদ থেকে। হাইওয়েতে কোনো গাছও নেই যে ছায়া পাবে। বিরক্ত হয় মাধুর্য।
রিকশা ডক্টরের হসপিটালের এসে থামে। দুজন যায় ভেতরে।

ডক্টর দেখানো শেষে বেরিয়ে পড়ে ওরা। একটা ক্লাস অলরেডি মিস হয়ে গিয়েছে। এখান থেকে দ্রুত পৌঁছাতে হবে ইউনিভার্সিটিতে। দ্রুত পায়ে শর্টকাট রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ওরা। কবিতা সেই রাস্তা দিয়ে যেতে নারাজ। কারণ রাস্তাটা অদ্ভুত! আশেপাশে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। একজন লোক কে জিজ্ঞেস করায় লোকটা শর্টকাট রাস্তা হিসেবে সেই রাস্তা দেখিয়ে দেয়। সেটা ধরেই হাঁটছে ওরা। হাঁটতে হাঁটতে একটা কুয়োর সামনে আসতেই কবিতা মাধুর্যের হাত টেনে ধরে থামিয়ে দেয়। মিনমিন করে বলে ওঠে….
–“মাধু রে! ভূতুড়ে রাস্তায় কেন এলাম রে? রিকশা নিয়ে মেইন রাস্তা দিয়ে গেলেই তো হতো। আর ওই কু…কুয়ো। কুয়ো।”
মাধুর্য বিরক্ত হয়। কিন্তু কবিতার এমন কথাগুলো শুনে হাসি ফেটে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু হাসে না সে।

–“কি হয়েছে কুয়োতে? ভূত আছে? পেত্নী আছে? ভীতুর ডিম।”
কথাটা বলে কুয়োর দিকে তাকায় মাধুর্য। সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত অনুভূতি হয় ওর। শরীর হালকা কেঁপে উঠে।
–“আরে এই কুয়ো সম্পর্কে শুনেছি। এটা সাধারণ কুয়ো নয় মাধু।”
–“তো কিসের কুয়ো? আমি তো অসাধারণ কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।”
ভ্রু কুঁচকে বলে মাধুর্য। তারপর যেতে নেয় কুয়োর দিকে। কিন্তু কবিতা ওর হাত খামচে ধরে।
–“ওরে, চল না আমরা যাই এখান থেকে? এই কুয়োর ব্যাপারে অনেক শুনেছি। ওই কুয়োর ভেতর থেকে নাকি অন্যজগতের প্রাণী বের হয়ে আসে।”
এবার না পেরে হেসেই দেয় মাধুর্য। কবিতা বেশ রাগ হয়। তবুও ভয়ে ভয়ে বলে….
–“আরে সত্যি বলছি। এই জায়গা শুধু এই কুয়োর জন্য এমন পরিত্যক্ত।”
–“তুই কোন জগতে থাকিস কবিতা? এখনো এসব ভাবনা ভাবিস? এটা ডিজিটাল দুনিয়া। এসব ভাবনার ভিত্তি নেই।”

কবিতা ভয় তাও দূর হয় না।
–“তোর য…যখন এতোই সাহস তাহলে যা কুয়োর সামনে। তারপরেই আমি ওর সামনে দিয়ে হেঁটে যাব।”
চোখ মুখ জড়িয়ে ফেলে মাধুর্য। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যায় কুয়োর কাছে। তখনই ভেসে আসে মাধুর্যের কানে অদ্ভুত কন্ঠ।
–“এসো! এসো! তাড়াতাড়ি এসো।”
ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মাধুর্য। ওই কুয়োটা ওকে ডাকছে? ঘাড় ঘুড়িয়ে কবিতার দিকে তাকায় সে। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
–“তুই কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেলি?”
–“ক…কই না তো। ওমা গো! ভূত নাকি?”
কথাটা বলে গাছের পেছনে গিয়ে লুকোয় কবিতা। মাধুর্য বুঝতে পারে এই মেয়ের সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ নেই। সে এগিয়ে যায় কুয়োর দিকে। মনে হচ্ছে ওই কুয়ো তাকে ডাকছে। সেখানে না গেলেই নয়।

এগিয়ে যেতেই মাধুর্য দেখতে পায় কুয়োর একেবারে নিচে পানি। একটু ঝুঁকে পড়তেই মাথা ভনভন করে ওঠে তার। মাথা চেপে ধরতেই এমনি এমনি পা স্লিপ কাটে। পড়ে যায় কুয়োর। এবার ভয় ঝেঁকে বসে তার মনে। চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। কিন্তু লাভ হলো না। ঠাওর পেল না কোনোকিছুর। ডুবে গেল পানিতে।
চোখ খুলতেই মাধুর্য বড় বড় আঁখি জোড়া নিয়ে আশেপাশে তাকায়। সবকিছু এতো অন্ধকার কেন? মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ বের হতেই আলোতে আশপাশটা পরিষ্কার হয়ে যায়। চাঁদ উঠেছে। তার মানে এখন রাত? এ কি করে সম্ভব? একটু আগেই তো সকাল ছিল। তাহলে? ভয়ে ঢক গিলে মাধুর্য। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে…..
–“ক…কেউ আছে? কবিতা? কোথায় তুই?”
আওয়াজ এলো না। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে মাধুর্য। এটা কোথায় এসে পড়েছে সে?

তখনই তার মনে পড়ে তার গায়ে থাকা ড্রেস এখনো শুকনো। বিস্ময়ের সর্ব সীমানায় পৌঁছে মাধুর্য। ও তো কুয়ো তে পড়ে গিয়েছিল। তবুও ভিজল না কেন? বিরবির করে সে বলে….
–“এটা কি তাহলে সত্যিই কবিতার বলা অন্যজগত? কিন্তু কেউ নেই কেন? সব কিছু শান্ত কেন?”
নিজের শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে সামনে তাকায় মাধুর্য। নিজেকে শক্ত করে নেয় সে। ও মোটেই ভীতু স্বভাবের মেয়ে নয়। সে অন্যরকম স্বভাবের। যাকে এক কথায় সাহসী আর স্মার্ট বলে। সামনে তাকায় সে। কিছুদূরে বৃহৎ আকারের একটা রাজমহল চিকচিক করছে। তবে নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে রাজমহল টা। এখানে রাজমহল কি করে আসবে ভেবে পায় না মাধুর্য। তবে রাজমহল তাকে টানছে। সেও হাঁটছে নেশাগ্রস্থের ন্যায়। হেঁটে দাঁড়ায় রাজমহলের ইয়া বড় লম্বা দরজার সামনে। যা কত বছর ধরে যেন খোলা হয় না! মাকড়সার জাল বেঁধে গেছে। মাধুর্য কাঁপা কাঁপা হাতে দরজায় হাত লাগতেই খুলে যায় সেই দরজা। চমকে যায় সে। ভেতরটা অন্ধকার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। ও কি যাবে আর ভেতরে?

মনটা ভেতরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। পেরে ওঠা গেল না মনের সাথে। হাতড়ে হাতড়ে ভেতরে ঢোকে। ভেতরে একটা গুমোট ও বাজে গন্ধ! নাক শিটকায় মাধুর্য। ওর কাছে ফোনও নেই যে টর্চ অন করবে। হাতের ব্যাগটা বোধহয় ওই কুয়োর কাছেই পড়ে আছে। মাধুর্য ধীরেই বলে ওঠে…
–“কেউ আছেন?”
ধীরে বলা সত্ত্বেও যেন তার কন্ঠের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে দেওয়ালে ঠেস লাগিয়ে বসে মাধুর্য। তখনই কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পায় সে। উঠে দাঁড়ায় তৎক্ষণাৎ। হাত দেয়ালে রাখতেই হালকা শব্দ হয়ে টিমটিম করে জ্বলে ওঠে আলো। লাইটও যেন বহুবছর ধরে জ্বলে না। তাই একবার জ্বলছে একবার নিভছে। আশেপাশে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বড় সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় মাধুর্য। মনকাড়া পরিবেশ। আশেপাশে কত ছবি!

সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথমে একটা ঘরের দরজা চোখে পড়ে মাধুর্যের। নজরকাঁড়া কারুকাজ দরজায়। না চাইতেও যেন বাধ্য হয় ঘরের দরজা খুলতে সে। হাত রাখতেই খটখট শব্দ করে খুলে যায় দরজা। ঘরটা চাঁদের আলোয় হালকা হালকা আলোকিত। পা টিপে টিপে প্রবেশ করে ঘরে। ঘরটা বেশ বড়। কিন্তু অজস্র ধুলোবালি আর মাকড়সার জাল জড়ানো। পা ফেলে ফেলে সে দাঁড়ায় জানালার কাছে। যেন চেনা তার সবটাই। অথচ সে কখনো এখানে আসেই নি। হঠাৎ কোনো পুরুষালি গানের সুমধুর সুর তার কানে ভেসে আসে। আবেশে চোখ বন্ধ করে মাধুর্য। কয়েক সেকেন্ড বাদেই সে জোরে চেঁচিয়ে ওঠে….
–“বন্ধ করো! বন্ধ করো এই সুর।”
বন্ধ হয়ে যায় সেই সুমধুর সুর। পিছিয়ে যেতেই কারো বিশাল বড় পেইন্টিং নজরে পড়ে মাধুর্যের। তবে পেইন্টিং কার সেটা তার ধারণার বাইরে। কারণ ধুলোতে পুরো পেইন্টিং অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর পেইন্টিং এতো বড় যে মাধুর্যের হাত পৌঁছাবে না ওপরে।

আরো দুই কদম পিছিয়ে যেতেই আয়নায় সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মাধুর্য। আয়নায় থেকে ধুলো মুছতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার। আয়নায় একজন সুন্দর রমণীকে দেখাচ্ছে। এটা তো সেই রমণী! যাকে ও স্বপ্নে কাতরাতে দেখে। ও এখানে কি করে এলো? আয়নায় তো ওর প্রতিচ্ছবি দেখানোর কথা। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে মাধুর্যের। চিৎকার দিয়ে উঠে চোখমুখ খিঁচে। মিটমিটি চোখ খুলে দেখে এবার তারই প্রতিচ্ছবি দেখাচ্ছে। বোকা বনে যায় মাধুর্য। সবকিছু কেন রহস্যময় এখানে? মাথা চক্কর দিতেই নিজের অবস্থান থেকে সরে যায় মাধুর্য। তার পায়ে আঘাত লাগে কোনো বস্তুর সাথে। পড়ে যেতে নেয় সে। তার হাত গিয়ে পড়ে কোনো শক্ত কিছুর ওপর। ফিরে তাকায় মাধুর্য। অদ্ভুত অনুভূতি খেলে যায় তার মনে। তার শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়ে আসে। পেছনে কফিন দেখে যেমন ভয় তাকে ঝেঁকে ধরেছে ঠিক তেমনই একটা অদ্ভুত অনুভূতির ঢেউ খেলছে। যেই অনুভূতি প্রথম বার হচ্ছে তার মনে।

ভয়ে হাত সরিয়ে ফেলে মাধুর্য। ওর ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে। কফিটা একা একা খুলে যায়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে মাধুর্যের। পোশাক খামচে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সে। মনে মনে দোয়া জপতে থাকে। এ কোন দুনিয়ায় এলো সে?
কফিনটা আস্তে আস্তে খুলতেই ঘামতে শুরু করে মাধুর্য। কথা বলার সব শক্তি হারিয়ে যায়। কফিন ভর্তি ছোট ছোট সাপ কোনো ব্যক্তিকে পেঁচিয়ে ধরে আছে। যার কারণে ব্যক্তির মুখ অবধি দেখা যাচ্ছে না। মুখ খুলে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে মাধুর্য।
–“সাপ, সাপ, সাপ!”
এক মূহুর্ত দেরি করে না মাধুর্য। ও সাপে বড্ড ভয় পায়। ঝড়ের গতিতে বাইরে বেরিয়ে যায় সে। দৌড়ানোর সময় পড়ে যায় তার গলা থেকে সাদা রঙের ওড়নাটি। মাধুর্যের সেসবে খেয়াল নেই। যেন হাজার ভোল্টের শখ পেয়েছে ও। রাজমহলের বাইরে এসে বড় বড় শ্বাস ফেলতে থাকে মাধুর্য। এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাপের দৃশ্যটি। কাঁপতে কাঁপতে মাথার দুপাশে হাত রেখে চোখমুখ খিঁচে চিৎকার দেয় সে।

কফিন ভর্তি সাপ একটু একটু করে সরতে থাকে। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির হাত দেখা যায়। ধবধবে ফর্সা কোনো পুরুষালি হাত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চোখ মেলে তাকায় সেই মানুষ। চোখের মনি নীল রঙের থাকলেও আস্তে আস্তে সবুজ বর্ণে পরিণত হয়। হাত-পা ঝাড়া দিতেই সাপগুলো ছিটকে পড়ে যায়। বিষ বিহীন সাপ ছিল সেগুলো। উঠে বসে সেই ব্যক্তি। সবুজ চোখ স্বাভাবিক হয়ে নীল রঙে পরিণত হয়। নীল চোখের মনি, কপালে রাজমুকুট জাতীয় কিছু, জোড়া ভ্রু, নাকের ওপর ছোট্ট তিল, গালে হালকা দাঁড়ি, প্রশস্ত চেহারার অধিকারী। সব মিলিয়ে আকৃষ্ট করার মতো পুরুষটি। কফিন থেকে বের হয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। ঘড়ির দিকে তাকায়। হালকা গোলাপি আভায় আবৃত ঠোঁটজোড়া দিয়ে কিছু একটা বিরবির করতে থাকে।
–“ঘড়ি চলছে। তার মানে সময় চলতে শুরু করেছে! কারণ অভিশাপ মুক্ত হয়েছি? অভিশাপ দেওয়ার সময় তো ঘড়ির কাটা বন্ধ ছিল। এই রাজ্যের সময় থেমে গিয়েছিল। তাহলে কি ৪৯ বছর পেরিয়ে গেছে?”

চোখ স্থির হয়ে যায় তার। তার চোখে ভাসতে থাকে এক যুবতির প্রতিচ্ছবি। মুখে ফুটে ওঠে তার হাসি। তার প্রেয়সী কি ফিরে এসেছে? কথামতো, সে ছাড়া এই অভিশাপ কাটাতে পারত না কেউই। কোথায় সে? আশেপাশে শূন্য দৃষ্টিতে তাকায় ব্যক্তিটি। কাউকে দেখতে পায় না। ফ্লোরে তাকাতেই তার নজর আটকে যায় একটা সাদা ওড়নায়। কয়েক ধাপ হেঁটে গিয়ে এক হাঁটু গেঁড়ে ওড়নাটি হাতে নিতেই যেন বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বয়ে যায় তার শরীরে। ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে ব্যক্তিটির সর্বাঙ্গ! অস্পষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে….
–“সে কি এসেছিল? আমাকে মুক্ত করতে? প্রেয়সী ভাবনা!”

চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. সবার একই কথা। নাম দেখেই পড়তে ভয় করছে😐। বার বার বলছি নাম গল্পের ইন্ডিং এ কোনো ইফেক্ট করবে না। নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন। আবার অনেকে অরুণ কেও নায়ক হিসেবে চাইছেন। তাদের বলব আস্তে আস্তে পড়ুন। তারপর বুঝতে পারবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here