#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৬
এই অদ্ভুত লোকটির সঙ্গে আবারও যে সাক্ষাত হবে এবং এতো তাড়াতাড়ি তা মাধুর্যের ভাবনার বাইরে ছিল। অনুভব নীল রঙের কলম দিয়ে নিজের মাথায় স্লাইড করছে আর মুখে ঝুলিয়ে রেখেছে সুন্দর হাসি। যেই হাসিতে কাবু হয়ে যেতে পারে অনেক মেয়ে তাও খুব সহজেই। তবে মাধুর্য এতো সহজে কাবু হতে চায় না। কিছুতেই না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও মুখ খুলে অনুভব।
–“কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি দেখা হবে সেটা আমিও আশা করিনি। আমার মনে হচ্ছে কোনোদিক থেকে তুমি আমাকে ফলো করছো। এম আই রং?”
–“ইয়েস, রং। আমি আপনাকে ফলো করা তো দূর ছায়াও মারাতে চাইনি।”
কথাটা বলে চলে যেতে উদ্যত হয় মাধুর্য। পেছন থেকে অনুভবের জোর গলা ভেসে আসে।
–“ফিউচার অফিসের বস এর সঙ্গে এমন রুড ব্যবহার করা উচিত নয়। নয়তো পড়ে চাকরি চলে যেতে পারে।”
মাধুর্য হতভম্ব হয়ে পেছন ফিরে। ততক্ষণে চোখের পলকে অনুভব চেয়ার থেকে উঠে সোজা মাধুর্যের সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে পড়েছে। এতো দ্রুত লোকটাকে এতো কাছে দেখে পড়ে যেতে নেয় মাধুর্যের হাত থেকে তার ফাইল। সেকেন্ডেই তা ধরে ফেলে অনুভব। তবে মাধুর্যকে ফিরিয়ে দেয় না সে। নিয়ে বসে পড়ে নিজের চেয়ারে। মুখ ফুলিয়ে মাধুর্যও পেছন পেছন যায় অনুভবের। টেবিলে থাবা দিয়ে বলে….
–“আমায় ফিরিয়ে দিন আমার ফাইল।”
কথাটা অনুভবের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। পায়ের ওপর পা তুলে মাধুর্যের ফাইল ঘাটাঘাটি করছে অনুভব। বেশ কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে….
–“মাধুর্য চৌধুরী? ভেরি ইম্প্রেসিভ নেম।”
–“আপনি কি আমার ফাইলটা দেবেন?”
–“তুমি তো এখানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলে? না দিয়ে চলে গেলে কি করে চাকরি পাবে বলো তো?”
বলেই মাধুর্যের দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকায় অনুভব।
–“আপনি আমার ইন্টারভিউ নেবেন? কিন্তু কি করে? আপনি অফিসের বস নন। কারণ আমি নেমপ্লেটে দেখেছি এটা প্রলয় সিনহার কেবিন। আর আপনি একটু আগে নিজের নাম অনুভব সিনহা বলেছেন।”
অনুভব অবাক চোখে তাকিয়ে নিজের ডান হাত তুলে বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুল দুটো লাগিয়ে বলে….
–“তোমার মেমোরি তো বেশ ভালো। মাত্র একবার নিজের নাম বলেছি আর মনে থেকে গেছে? বাট ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি এখন যার কেবিনে বসে আছি সে আমার বাবা হয়। আর আমি তার একমাত্র ছেলে। ভবিষ্যতে এই কেবিন আমার হবে। সো এই কেবিনে আমি থাকতেই পারি। ইন্টারভিউ তো তুমি দিতে এসেছিলে। এবার মনে হচ্ছে আমিই তোমার কাছে ইন্টারভিউ দিচ্ছি।”
মাধুর্য চুপ হয়ে যায়। মনে মনে বকতে থাকে তার সামিহা আপুকে। এখন যেতেও পারছে না সে। আবার যেতে কেমন চাইছেও না। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
অনুভব মাধুর্যকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। মাধুর্যের চুপ থাকা দেখে মিটিমিটি হাসে ফাইলের আড়ালে। ও অফিসে আসে না। তবে আজ এসেছে বাধ্য হয়ে। প্রলয় সিনহা ওর বাইকের চাবি নিয়ে রেখে দিয়েছে যাতে অনুভব বাইরে না বের হয়। আজ অনুভবের বাইরে বের হবার কথা ছিল বাইক নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে। অগত্যা চাবি নিতে অফিস পর্যন্ত এসে পড়েছে সে। প্রলয়ের কেবিনে ঢুকে প্রলয়কে না দেখে সরাসরি সেখানেই টেবিলের ওপর পা তুলে বসে থাকে সে। কম্পিউটার অন করতেই সিসিটিভি ফুটেজে ওর নজরে আসে মাধুর্য। আজ অনুভব সুযোগ পেয়েছে মাধুর্যের মাঝে কি আছে তা জানার এবং ও কে সেটা বোঝার। সেটা হাতছাড়া করতে চায়নি অনুভব।
–“প্লিজ সিট মিস. মাধুর্য! আমি এখন আপনার ইন্টারভিউ নিতে যাচ্ছি। সো বি রেডি।”
অনুভবের কথায় ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে অনুভবের সামনাসামনি চেয়ারে বসে পড়ে মাধুর্য। তখনই নক পড়ে দরজায়। অনুভব উঁচু গলায় বলে….
–“কামিং।”
একজন মেয়ে ঢুকে পড়ে কেবিনে। মিনমিন করে বলে….
–“আমাদের স্যার আর কিছুক্ষণের মধ্যে অফিসে আসছে। বলছি যে, আপনিই কি ইনার ইন্টারভিউ নেবেন? নিলে স্যার আপনার সঙ্গে আমাকে থাকতে বলেছে। আসলে আপনি অফিসের তেমন কিছু জানেন না তো তাই।”
তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় অনুভব। মেয়েটি একটা ঢক গিলে। চোখ নামিয়ে শান্ত সুরে অনুভব বলে….
–“ওকে। তুমি থাকতে পারো। কিন্তু টু শব্দও যেন আমি না শুনি তোমার মুখ থেকে।”
মেয়েটি মাথা দুলিয়ে চুপ থাকে। অনুভব এক হাত নিজের থুঁতনিতে রেখে মাধুর্যের দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির করে। কি আছে এই মেয়েটার মধ্যে? কোনো চেনা মানুষের প্রতিচ্ছবি কেন বার বার তার মাঝে ভাসছে? দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে অনুভব। মাধুর্যকে পুরোপুরি জানতে হলে তার কাছাকাছি থাকা বেশ প্রয়োজন। তার ব্যবস্থা ভেবেও রেখেছে অনুভব। থমথমে গলায় প্রশ্ন করে…..
–“তুমি এর আগে কোথাও জব করেছো? এক্সপেরিয়েন্স আছে তোমার?”
–“না। এর আগে আমি কোথাও জব করিনি।”
অনুভব কিছু বলার আগেই কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বলে….
–“কিন্তু এখানে আমরা যতই পার্ট টাইম জবের জন্য মানুষ নিই। আমাদের এক্সপেরিয়েন্সড লোক লাগবে। আমাদের স্যার বলেছেন।”
–“আমি তোমাকে চুপ থাকতে বলেছি। যদি চুপ না থাকতে পারো। সামনে দরজা আছে। গেট লস্ট।”
কঠোর গলায় বলল অনুভব। গুটিশুটি মেরে চুপ হয়ে যায় মেয়েটি। এবার অনুভব উঠে দাঁড়ায়। টেবিলে দুহাত ভর দিয়ে মাধুর্যের দিকে হালকা হেলে যায় সে। মাধুর্য পলকহীন ভাবে ভয়াতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
–“তোমার কাছে ভালোবাসা মানে কি?”
অনুভবের অদ্ভুত প্রশ্নে বিষম খায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি। চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় মাধুর্যের। তবুও নিজেকে সামলে আপনমনে বলে….
–“আমার কাছে ভালোবাসা মানে বিশ্বাসঘাতকতা মনে হয়। ভালোবাসা শব্দটিই শুধু আছে। কিন্তু এর মানে কিছু নেই। এর ভিত্তি নেই। ভালোবাসা জিনিস বোধহয় দুনিয়াতেই নেই। এই স্বার্থপর দুনিয়াতে ভালোবাসা নামক শব্দ রুপকথা ছাড়া কিছুই নয়।”
কপালে দৃঢ় কয়েকটা ভাঁজ পড়ে অনুভবের। মাধুর্যময় মেয়েটির মনে ভালোবাসা নিয়ে কিসের এতো ঘৃণা ভেবে পেল না সে। যেন ও কোনো বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার!
অনুভব পেছন ঘোরে। জানালার দিকে মুখ করে স্নিগ্ধ ভরা গলায় বলে ওঠে…..
–“না। ভালোবাসা বলতেও দুনিয়ায় একটা অনুভূতি আছে। ভালোবাসা মানে একে অন্যকে বুঝতে শেখা। ভালোবাসা মানে সারাজীবন হাত নিজের হাতের মাঝে নিতে চাওয়ার ইচ্ছে। ভালোবাসা মানে এক অনন্য অনুভূতি। এক দামি অনুভূতি। যেটা যার তার প্রতি আসে না। আবার যার প্রতি আসে তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে। একসময় বোধহয় হারিয়ে ফেলতেও হয়।”
দুর্বল হয়ে পড়ে অনুভব। হৃৎপিণ্ডে কেউ করাঘাত করছে সজোরে। যেন তার প্রেয়সী আছে! আশেপাশেই কোথাও আছে। তবে এক মূহুর্তেই নিজের দুর্বলতাকে ধামাচাপা দিয়ে দেয় অনুভব। ফিরে তাকায় মাধুর্যের দিকে। ফুটিয়ে তোলে এক অদ্ভুত হাসি। আবার হেলে পড়ে মাধুর্যের দিকে। মাধুর্য পিছিয়ে যাবার জায়গা পায় না। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে পেছনদিকে হেলে যায় মাধুর্য। ও পড়ে যাবার আগেই দ্রুত গতিতে মাধুর্যের পিঠে হাত দিয়ে ধরে নেয় অনুভব।
মাধুর্য টাল সামলাতে অনুভবের শার্টের কলার চেপে ধরে। মিশে যায় অনুভবের মাঝে। নিজের বড় বড় নয়ন দুটো দিয়ে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাধুর্য। এই স্পর্শ তাকে টানছে। বারে বারে শিহরণ জাগাচ্ছে। কলার চেপে ধরা অবস্থাতেই কাঁপতে শুরু করে তার দুটো হাত। অনুভবের ভ্রুযুগল উঁচু করে ইশারা করে বলে….
–“সাবধানে, পড়ে যাবে তো। ইন্টারভিউ দিতে এসে হাত-পা ভাঙলে নিশ্চয় ভালো দেখাবে না!”
চোখ নামিয়ে পিটপিট করতে থাকে মাধুর্যের চোখজোড়া। নেশায় যেন ডুবে যাচ্ছে অনুভব। এই মেয়েটার প্রতি তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ সে নিজের অজান্তে করছে। কেন করছে তার কারণও অজানা। অজানা থাকা কি ঠিক? কিছু কিছু বিষয় আমাদের কাছে হয়ত অজানা বা ধোঁয়াশায় থেকে যেতে হয়। এটাই নিয়ম।
হালকা কাশির আওয়াজ পেয়ে মাধুর্য ছেড়ে দেয় অনুভবকে। অনুভব সরে আসে। ওই মেয়েটি চোখ নামিয়ে হালকা কাশছে। হয়ত মাধুর্য ও অনুভবের ধ্যান ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্যই কাশছিল। অনুভব নিজের প্যান্টের পকেটের হাত ঢুকিয়ে একটু বাঁকা হয়ে বলে…..
–“তোমার চাকরি হয়ে গেছে মিস. মাধুর্য। কাল থেকে! নো নো, আজ থেকেই জয়েন করতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড।”
বিস্ফোরিত চোখে তাকায় মাধুর্য। ওর চাকরি এতো সহজে কি করে হতে পারে?
–“আমার চাকরি কি করে হলো? ইন্টারভিউ তো হলো না।”
–“হলো তো। তুমি এতো কঠিন প্রশ্ন ধরলাম তোমায়। তুমি উত্তর দিয়েছো। কিন্তু নেগেটিভ ভাবে। নো প্রবলেম। ইউ আর সিলেক্টেড।”
–“কিন্তু স্যার, ও আমাদের কাজ জানে কি জানে না তাও তো জানি না।”
মেয়েটির কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকায় অনুভব। চড়া গলায় বলে….
–“দরকার হলে আমি শিখিয়ে দেব। এনি প্রবলেম?”
দ্রুত মাথা এদিক সেদিক নাড়ায় মেয়েটি। তারপর চলে যায় বাইরে।
মেয়েটি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাধুর্যও ফাইল নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। অনুভব বলে ওঠে….
–“আজ থেকে জয়েন করবে না?”
–“না। কাল থেকে করব। কোনো সমস্যা হবে?”
–“না। এজ ইউ উইশ।”
মাধুর্য দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। বুক ধুকপুক করছিল তার। এই অজানা অনুভূতি কেন অনুভব সামনে এলে হচ্ছে তার। এই অনুভূতির সামনে দাঁড়ানো যে বড্ড অস্বস্তিকর। এটা এড়িয়ে চলার কি কোনো উপায় নেই? ভাবতে ভাবতে একপা একপা করে চলতে শুরু করে মাধুর্য। তবে একদিকে সে খুশি। এবার অন্তত নিজের খরচ চালাতে পারবে সে। বিভোর ভাইয়ার থেকে টাকা নিয়ে মামি মায়ের থেকে কথা শুনতে হবে না। কথাটা ভাবতেই খুশি খুশি হয়ে যায় তার মন।
কেবিনে চোখবুঁজে চেয়ারে বসে টেবিলে দুই পা তুলে মাথার পেছনে হাত দিয়ে বসে আছে অনুভব। এমন সময় প্রবেশ ঘটে তার বাবার। রুমে ঢুকেই উনি রেগে বলতে শুরু করেন…..
–“অনুভব, তুই আজ আমাদের ইন্টারভিউ ক্যান্সেল করিয়ে দিলি? আর এমন একটা মেয়েকে সিলেক্ট করলি যার কি না কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই? কেন করলি এমনটা? তুই যে বাইকের চাবি নিতে এসেছিলি সেটা আমি জানি। তাই বলে এতো বড় ক্ষতি করছিস কেন অফিসের?”
আয়েশে চোখ খোলে অনুভব। ধীর গলায় বলে….
–“রিলাক্স ড্যাড। আমি চাই ওই মেয়ে এখানে জব করুক। তাই ওকে সিলেক্ট করেছি। ওর জব ক্যান্সেল করার কথা ভেবোও না। আর হ্যাঁ আরেকটা খবর তোমাকে জানিয়ে রাখতে চাই, আমি কাল থেকে এই অফিসে আসছি। আই থিংক এতে তোমার কোনো আপত্তি নেই।”
–“অফিসের আসছিস ভালো কথা। আমিও তাই চাই তুইও আস্তে আস্তে অফিস সামলাতে শুরু কর। কিন্তু তোর রাগ, জেদ কন্ট্রোল করতে হবে তোকে। তুই জানিস এসব শয়তানের কাজ। আর আমরা শয়তান নই। আমরা ভ্যাম্পায়ার। আমাদের গুন ধৈর্য ধারণ করা, রাগ দমিয়ে রাখা, জেদকে মনে জায়গা না দেওয়া। এটাই আমাদের পরিচিতি।”
–“আমি জানি ড্যাড। কিন্তু তুমি জানো, আমি কেন এমন! আমি ইচ্ছে করে এমন হইনি। হতেও চাইনি। আমাকে বানানো হয়েছে। আর আমাকে এমন বানিয়ে…..”
কথাটা শেষ হবার আগেই বেজে ওঠে কারোর ফোন। এই ফোনের রিংটোন তো অনুভবের নয়। প্রলয়ের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে টেবিলে কারো ফোন বাজছে। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নেয় অনুভব। এটা মাধুর্যের ফোন। ফাইল হাতে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেও ফোন আর পার্স নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছে সে।
কিছুক্ষণ পর ফোনের কল কেটে যায়। প্রলয় কৌতুহলী হয়ে বলে ওঠেন….
–“কার ফোন এটা??”
–“মাধুর্য মানে ওই মেয়েটার ফোন।”
বলতেই আবারও বেজে ওঠে রিংটোন। স্ক্রিনে ভাসতে থাকে ‘সামিহা আপু’ নামটি। দেরি না করে কল রিসিভ করে এবার অনুভব। ওপাশ থেকে ভেসে আসে মেয়েলি কন্ঠ।
–“মাধুর্য, কখন আসবি তুই বল তো? দুপুরের মাঝে কি আসবি নাকি লেট হবে? মা আর সানিয়া মিলে একটা পার্টির আয়োজন করেছে আমার জন্মদিনের জন্য। তোর আসতে লেট হলে পার্টি ক্যান্সেল!”
অনুভব কিছুটা মুগ্ধ হয়। ওপর পক্ষের মানুষটি মনে হয় মাধুর্যকে বেশ ভালোবাসে। হালকা হেসে সে বলে ওঠে….
–“দুপুরের মধ্যেই পৌঁছাবে সে। পার্টিটা নিশ্চিন্তে করতে পারেন।”
সামিহা ওপর পাশ থেকে বেশ বিস্মিত হয়। ভালোভাবে নম্বর চেক করে আবার কানে ধরে উৎসুক কন্ঠে বলে ওঠে….
–“হ্যালো, কে আপনি? মাধুর্যের ফোন আপনার কাছে কি করে? ও ঠিক আছে তো?”
–“ও তো ঠিকই আছে। রাস্তায় আছে আমার যতদূর মনে হয়। আসলে আমি অনুভব সিনহা বলছি। ইন্টারভিউ দিতে ফোনসহ পার্স ফেলে গেছে আপনার খামখেয়ালী বোন। বোনই তো না?”
সামিহা কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়। কিছুক্ষণের জন্য ভয় পেয়েছিল সে। কয়েকটা শ্বাস নিয়ে হেসে ফেলে অনুভবের কথায়। আসলেই মাধুর্য খামখেয়ালী। মাথা নাড়িয়ে বলে….
–“হ্যাঁ ও আমার বোন হয়। ওর চাকরি কি হয়ে গেছে?”
–“হুমম, হয়েছে। কাল থেকে তাকে জয়েন করতে হবে।”
–“ওহ থ্যাংক ইউ।”
অনুভব হাঁটতে হাঁটতে চাপা সুরে বলে ওঠে….
–“থ্যাংক ইউ দিলে তো চলবে না। যতটুকু আপনার কথায় বুঝলাম আপনার বার্থডে আজকে সো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। আর বার্থডে পার্টিও রাখছেন। এই পার্টিতে ইনভাইটেশন না পেলে যে মন বড় খচখচ করবে। মানে আপনার বোনে পার্স আর ফোন ফেরতও তো দিতে হবে।”
–“অবশ্যই। আসবেন আজকে পার্টিতে। আমার ভালো লাগবে। মাধুর্যের স্যার হিসেবে।”
অনুভব রহস্যময় হাসি হাসে। তার কাছে এটি মেঘ না চাইতেই জলের মতো। ওর আসক্ত হয়ে পড়ছে এক অচেনা মেয়ের প্রতি। এই আসক্তি ছিল তার ভাবনার প্রতি। ৪৯ বছর আগের সেই ভাবনার প্রতি যেই ভাবনাকে মাধুর্যের মাঝে দেখতে পাচ্ছে ও।
–“ওকে তাহলে রাখছি।”
কথাটা বলেই কেটে দেয় অনুভব ফোনের কল। ভাবুক হয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নিজের ড্যাড এর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে কপট সুরে বলে….
–“আমার বাইকের চাবি দাও।”
প্রলয় কিছু না বলে দিয়ে দেয় চাবি। জানে এই ছেলের সঙ্গে পারা যাবে না। সে অন্যরকম! ওর রাগ ও সত্তাকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করছে। ওর সত্তাকে ও হারিয়ে ফেলছে। সেই সত্তাকে ফিরিয়ে আনতে ভালোবাসা প্রয়োজন। সেই ভালোবাসায় তো ওর কাছে নেই।
অনেকক্ষণ ধরে কিছু একটা খুঁজে চলেছে মাধুর্য। কাঙ্খিত জিনিসটি খুঁজে না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে সে বেডে। সামিহা অনেকক্ষণ ধরেই তা খেয়াল করে বলল….
–“কি খুঁজছিস?”
মাধুর্য চোখমুখ লাল করে বলে….
–“পার্স আর ফোন আপু।”
সামিহা মুখ টিপে হেসে বলে….
–“তুই সত্যিই খামখেয়ালি মাধুর্য। অনুভব স্যার ঠিকই বলেছিল। তুই যা খুঁজছিস তা সব অফিসে ফেলে রেখে এসেছিস।”
–“তুমি কি করে জানলে অনুভব স্যারের নাম আর উনি আমাকে খামখেয়ালি বলেছেন?”
সামিহা মাধুর্যকে সবটা বলে। সবটা শুনে মাধুর্য বিরবির করে বলে ওঠে….
–“নিজে থেকে ইনভাইটেশন কিভাবে চাইছে দেখো! যেন ইনভাইটেশন না পেলে উনার কি না কি হয়ে যাবে উফফ!”
তৎক্ষনাৎ ওর খেয়ালে আসে ওর দিকে রোদ দপদপ করে পড়ছে। ওর হাত-পা জ্বালা করতে শুরু করেছে। অন্যদিকে সরে বসে মাধুর্য। চোখমুখ মলিন হয়ে যায়। নিজের এক কচলাতে থাকে সে। নিরাশ হয়ে বলে…..
–“আমি এমন কেন বলতে পারো সামিহা আপু? অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো কেন রোদ সহ্য করতে পারি না? আমার সঙ্গে সবসময় অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটে? কেন মনে হয় ভাগ্য কোনো সাধারণ মানুষের মতো নয়? কেন আমি এমন?”
সন্দিগ্ধ হয়ে সামিহা বলে….
–“আমিও জানি না। হয়ত তোর মা-বাবা জানবে। কিন্তু ফুফি আর ফুফা যে কেন নিখোঁজ হয়ে গেল তাও তোর জন্মের সাতদিন পরেই। তা কেউ জানে না। কিন্তু মা বলে তোর জন্ম পুরোটাই কেমন জানি অদ্ভুত।”
–“জানো, আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না আমার মা-বাবা নেই। যেন তারা আছে। আর মামি মা কেন আমার সম্পর্কে এমন বলে?”
সামিহা নিজেও ভাবনায় পড়ে যায়। আর বলতে শুরু করে….
–“২১ বছর আগে তুই যখন ফুফির গর্ভে ছিলি তখন নাকি কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল।”
চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।