অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৭

0
544

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৭
কৌতুহলে ভরে যায় মাধুর্যের চোখজোড়া। জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে ২১ বছর আগের ঘটনাগুলো। কেন ওর মা-বাবা ওকে ফেলে চলে গিয়েছিল হসপিটাল থেকে? কি এমন ঘটেছিল? হতে পারে এর থেকে মাধুর্য জানতে পারবে ও কেন স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়! সামিহার ডান হাত ধরে অস্থির চাহনি নিয়ে এলোমেলো ভাবে বলে ওঠে….
–“আমাকে আজ বলবে প্লিজ সামিহা আপু?”
সামিহা মানা করে না। ব্যস্ত কন্ঠে বলতে শুরু করে ওর জানা সব ঘটনাগুলো। মাধুর্য মনোযোগী হয়ে পড়ে।

২১ বছর আগে…..
ডক্টরের কেবিন থেকে সবে চেক-আপ করে ফিরছে মধুরিমা চৌধুরী এবং মুহিত চৌধুরী। মাঝে মাঝে মিষ্টি হেসে পেটে হাত রাখছে মধুরিমা। মুহিতও প্রাণোচ্ছল হাসি নিয়ে মধুরিমার হাত যত্নের সঙ্গে ধরে রেখেছে আর অন্য হাতে ড্রাইভ করছে গাড়ি। মধুরিমা প্রেগন্যান্ট। তাও ৩ মাসের। তবে ও খানিকটা চিন্তিত নিজের পেট এই ৩ মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বড় হবার কারণে। মুহিত বলেছিল তাদের টুইন বেবি হবার আশঙ্কা আছে। তবে ডক্টর তাদের ভুল প্রমাণ করে। আর এটাও বলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবুও নিজেকে মনস্থির করতে পারছে না মধুরিমা। হঠাৎ তার পেটের এক অংশে মনে হলো বেবি কিক মারল। চমকে ওঠে মধুরিমা। দ্রুত বলে ওঠে….
–“মুহিত, দেখো বেবি রেসপন্স করছে।”
–“কি যে বলো না! সবে ৩ মাস প্রেগ্ন্যাসির। এতো তাড়াতাড়ি বেবি রেসপন্স করবে কি করে মধু?”
মধুরিমা চুপ হয়ে যায়। সত্যি তো! তাহলে এটা কি মনের ভুল ধারণা ছিল?

একসময় গাড়ি থামিয়ে দেয় মুহিত। গাড়ির একটা টায়ারে প্রবলেম হয়েছে। মুহিতের সঙ্গে মধুরিমাও নামে। গাড়িতে অস্বস্তি হচ্ছিল তার। বমি বমি পাচ্ছিল। সন্ধ্যার সময়। যাবার সময় এই রাস্তা যেমন দিনের বেলায় গাছপালার কারণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তেমনই সন্ধ্যা নামতেই ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মধুরিমা এদিক ওদিক হাঁটতে শুরু করে। মুহিত তাকে বেশি দূরে যেতে মানা করে।
একটু একটু করে হাঁটতে হাঁটতে বেখেয়ালি হয়ে পড়ে মধুরিমা। বেশ খানিকটা দূরেই এসে পড়ে। তখনই ওর ঘোর কাটে। কোনদিকে যাচ্ছে ও? ও তো নিজে থেকে আসেনি। যেন ওকে কেউ বাধ্য করে নিয়ে এসেছে। ভয়ে শিউরে ওঠে মধুরিমা। আশেপাশে ভয়ে ভয়ে পর্যবেক্ষণ করে সে। জঙ্গলের ছোট ছোট গাছ নড়ে ওঠার শব্দ আসতে থাকে তার কানে। একটু একটু করে পিছাতে থাকে সে। চিল্লিয়ে ডাকে….
–“মুহিত!”
মুহিতের সাড়া পাওয়া যায় না। হঠাৎ ছোট জঙ্গলি গাছের আড়ালে কিছু চকচকে নীল চোখ দেখতে পায় সে। মনে হচ্ছে কোনো হিংস্র প্রাণি তার দিকে চেয়ে আছে।

আগপাছ না ভেবে দৌড়াতে শুরু করে মধুরিমা। পেছন থেকে কিছু পায়ের ধাপের আওয়াজ আসছে। কেউ সঙ্গে কোনো অদ্ভুত প্রাণীর ডাক। বুকের ভেতরটা ভয়ে দুরুদুরু করছে। প্রাণপণে দরুদ পাঠ করছে যাতে সে বাঁচতে পারে। একসময় পেটে তীব্র আঁচড় অনুভব করে সে। পড়ে যায় রাস্তায়। পেটে বেশ আঘাত লাগে। বড়বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে তার অনুভূত হয় তার পেট থেকে গড়িয়ে কোনো তরল পদার্থ পড়ছে। পেটের দিকে তাকায় মধুরিমা। শাড়ির আঁচল আলতো সরাতেই তার পেটে বড়সড় আঁচড়ের দাগ দেখতে পায়। সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আর দেখার সাহস পায় না মধুরিমা। দৌড়াতে শুরু করে আবারও উঠে। পথেই এক বৃদ্ধকে দেখে থেমে যায় সে। থেমে যায় বলতে থেমে যেতে বাধ্য হয়। কেননা, বৃদ্ধ লোকটি তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্ধকারে তেমন চেহারার আন্দাজ পাচ্ছে না মধুরিমা। কিন্তু বুঝতে পারছে লোকটি তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। অন্ধকারে কি দেখছে লোকটি?

–“শুরু হয়ে গেছে তাহলে বিপদ! সবাই উম্মাদ হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছে তাকে। খোঁজও পেয়েছে। সাবধানে থাকো। নয়ত ছিড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলবে ওরা।”
–“এ….এসব কি আজেবাজে কথা বলছেন আপনি?”
লোকটা পাগলের মতো হাসে। তারপর বলে….
–“তোর গর্ভে সাধারণ কেউ নয়। বরণ একজন অগ্নিশিখার মতো কেউ একজন বেড়ে উঠছে। যার ওপর নির্ভর করে আছে সবাই। যে কাটাবে ৪৯ বছরের সেই ঘুমন্ত অভিশাপ। অপেক্ষা, অপেক্ষা, অপেক্ষা…..!!”
ভড়কে যায় মধুরিমা। সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটি তার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। পিছু ডাকলেও তার কথা শোনে না লোকটি। কিছুক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে মধুরিমা। এ কি হচ্ছে তার সাথে? মুহিতের কন্ঠে পেছন ফিরে তাকায় মধুরিমা। যেন প্রাণ ফিরে পায় সে। দ্রুত গিয়ে ঝাপ্টে ধরে মুহিতকে। হাউমাউ করে কেঁদে দেয় সে।

–“কি হয়েছে মধু? আমাকে বলো। কোথায় গিয়েছিলে তুমি? জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম? কি হয়েছে আমাকে বলো। শান্ত হও।”
কোনোমতে শান্ত করায় মুহিত মধুরিমাকে। মধুরিমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সবটা বলে। মুহিতের কাছে সব অবিশ্বাস্য মনে হয়। সে কোমল সুরে বলে ওঠে….
–“এসব কিছুই নয়। আমার কথা শোনো, ওই বৃদ্ধ লোক যদি ওসব কিছু বলেও থাকে তাহলে সব মিছেমিছি বলেছে। আজকাল ওসব হয় না? ওইযে সাধুবাবা, জ্যোতেষী? এরা ভন্ড হয়। এদের কথা মাথায় রাখতে নেই।”
মধুরিমা তবুও মানে না।
–“তাহলে উনি কি করে জানলেন আমি প্রেগন্যান্ট? আমি তো বলিনি মুহিত।”
মুহিত আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে মধুরিমাকে শান্ত করতে সফল হয়। তখনই মধুরিমার মনে পড়ে ওর পেটে আঘাত লেগেছিল। দ্রুত সরে গিয়ে পেটে হাত দেয় সে। সবকিছু স্বাভাবিক লাগে তার। এটা কি করে হলো? ও তো তীব্র ব্যাথা অনুভব করেছে। তাহলে? তার মনে পড়ে, বৃদ্ধ লোকটি বলেছে তার গর্ভে কোনো সাধারণ বাচ্চা নেই। এই আঘাত ঠিক হবার পেছনে কি তাহলে বাচ্চার কি হাত আছে?
সেদিন আর কিছুই বুঝতে পারে না সে। চলে আসে বাড়িতে।

কাটতে থাকে দিন। ধীরে ধীরে পেট বড় হতে থাকে। তার সঙ্গে আরো ঘটতে থাকে অস্বাভাবিক ঘটনা। প্রেগন্যান্সির সময় তার রক্তের গন্ধ ভালো লাগতো। ইচ্ছে করতো একটু রক্ত খেতে। কিন্তু পারত না। আজেবাজে স্বপ্ন আসতো। রাতে ঘুম আসতো না। ব্যাপারগুলো স্বাভাবিক হলেও ওর কাছে মোটেই ঠিকঠাক লাগছিল না। আশ্চর্যজনক ভাবে ঠিক ৫ মাস ৫ দিনের মাথায় মধুরিমার পেইন ওঠে। চিৎকার করে সারা বাড়ি মাথায় করে সে। দ্রুত হসপিটালের নেওয়া হয় তাকে। ডক্টর জানায় দ্রুত অপারেশন করতে হবে। মুহিত অবাক হয়। অস্থির ভঙ্গিতে বলে….
–“এটা কি করে হয় ডক্টর? আমার ওয়াইফের সবে মাত্র প্রেগন্যান্সির ৫ মাস ৫ দিন হয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি বেবি পর্যাপ্ত বড় কি করে হতে পারে?”
–“এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয় মি. চৌধুরী। আমাদের মেডিক্যাল সাইন্সে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। যদিও ঘটনাটি দুষ্কর বটে। তবুও অসম্ভব নয়।”

সেদিনই অপারেশন হয় মধুরিমার। মুহিতসহ মধুরিমার ভাই আফতাব আহমেদ এবং মধুরিমার ভাবি রেনুকা থাকেন বাইরে। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। চাঁদ অনেক কাছে দেখা গিয়েছিল। যেন চাঁদ নিচে নেমে এসেছে। কিছু মানুষের ধারণা এমন পূর্ণিমা ৯৯ বছরে একবার হয়। এই দিন নাকি পৃথিবী মাঝে মানুষের জগতে এক অন্য গ্রহ বা রাজ্যের জীবের আগমন ঘটে। যদিও এটা কুসংস্কার মানা হয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজের বদলে খিলখিল হাসির আওয়াজ পাওয়া যায় অপারেশন থিয়েটার থেকে। যেই হাসির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে পুরো হসপিটালে। মুহিত আর মধুরিমার কোল জুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। সে ছিল যেম জন্ম থেকেই আরেকটি চাঁদ। চাঁদের মাঝেও খুঁত থাকলেও সেই কন্যার মাঝে ছিল না কোনো খুঁত। পুরো হসপিটালের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাকে দেখার জন্য। কারণ মেয়েটি কান্নার বদলে হেসেছিল।

মুহিত আর মধুরিমার চোখ জুড়িয়ে যায় তাদের সন্তান দেখে। এ কোন রাজ্যের পরী? নিজেদের দিকে তাকাতাকি করে তারা। তারা কেউই তো এতো সৌন্দর্যের অধিকারী নয়। মুহিত নিজের মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলে….
–“এ যে মাধুর্যের মেলা বসেছে! তাহলে তোমার নাম আজ থেকে মাধুর্য।”
ছোট্ট মাধুর্য তখন জানালার বাইরে চাঁদের দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হাসতে ব্যস্ত। মাত্র কয়েকঘন্টা আগে জন্মগ্রহণ করা বাচ্চার এতো চঞ্চলতা দেখে হতভম্ব মধুরিমা আর মুহিত। সে চিন্তা করতে থাকে সেদিনের বলা ওই বৃদ্ধ মানুষের কথাগুলো। সবাই আড়ালে চাঁদের আলোতো তাকিয়ে থাকতে সবুজ বর্ণের হয়ে ওঠে তার মাধুর্যের বড় বড় চোখজোড়ার মনি। মূহুর্তেই তা মিলিয়ে যায়।

জন্মের পর নিয়মই হচ্ছে বাচ্চারা কাঁদবে। তাদের কান্নার আওয়াজ শোনা যাবে। কিন্তু মাধুর্যের ক্ষেত্রে তা উল্টো হওয়ায় সবাই যেটা পজিটিভলি নেয়নি। বিশেষ করে ডক্টর মাধুর্যকে বেবি অবজারভেশনে রেখে দেওয়ার জন্য বলেছিল মুহিতকে। মুহিত রিস্ক নিতে চায় না মাধুর্যকে নিয়ে। সে রাজিও হয়ে যায়। বেশ কয়েকদিনের জন্য আলাদা হয়ে যায় তার মা-বাবার থেকে মাধুর্য। এরপর যে তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা হবে না সেটা কি সে জানতো?
মাধুর্যের যখন বয়স মাত্র ৭ দিন। অদ্ভুত ও রহস্যময় ভাবে গায়েব হয়ে যায় মধুরিমা ও মুহিত। তাদের আর পাওয়া যায় না। সবাই আকাশ থেকে পড়ে। এতোটুকু ফুটফুটে বাচ্চা রেখে কোথায় গেল তারা? কেনই বা গেল? মাধুর্য আলাদা ছিল অবজারভেশনে। সেদিন থেকেই নিজের বোনের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন আফতাব আহমেদ। নিজের ছায়ায় বড় করে তোলেন মাধুর্যকে।

বর্তমান…..
সবকিছু জেনে থ মেরে বসে আছে মাধুর্য। চোখে টলটল করছে তার পানি। তার মা-বাবা কেন তার প্রতি এই অন্যায় করল? কেন ছেড়ে গেল তাকে? মাধুর্যকে চুপচাপ দেখে সামিহা তার বাহু ধরে ঝাঁকুনি দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সামিহাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় মাধুর্য। সামিহা বুঝতে পারে মাধুর্যের মনের অবস্থা। তার লাল লাল চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে সামিহা।
–“মা-বাবা আ…আমার সঙ্গে এমন কেন করল? আমি কি দো…দোষ করেছিলাম বলতে পারো আমায়?”
–“এভাবে বলিস না মাধুর্য। হয়ত তাদের সঙ্গে নিশ্চয় কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেছিল। হয়ত উনারা তোকে ইচ্ছে করে ছেড়ে যাননি।”
মাধুর্যের কান্নার বেগ বেড়ে যায়।

সামিহা তাকে চুপ করাতে অভিমানি হয়ে বলে ওঠে….
–“এটা ঠিক নয় কিন্তু। আমার বার্থডে আজকে আর তুই কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছিস। আমার মন খারাপ করে দিচ্ছিস মাধুর্য?”
মাধুর্য মাথা উঠায়। চোখের পানি মুছে ফেলে। সামিহা আলতো হেসে বলে….
–“এখন স্মাইল দে।”
মাধুর্য চুপ থেকে কিছুক্ষণ পর মন ভুলানো হাসি দেয়। সামিহাও হেসে দেয়। কিন্তু মাধুর্যের মনে থেকে যায় হাজারো প্রশ্ন। এর উত্তর কোথায়?

সন্ধ্যা প্রায় ৭ টা। বেশ কয়েকজন মেহমান এসেছে সামিহাদের বাড়িতে সামিহার জন্মদিন উপলক্ষে। ছোট বাড়িটা মূহুর্তেই সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলেছে মাধুর্য। আশেপাশে ফেইরি লাইটে ঝলমল করছে। বিভোর নিজে মেহমানকে আপ্যায়ন করতে নিশ্বাস ফেলতে পারছে না। সামিহা যেহেতু বার্থডে গার্ল তাই তাকে যেন পুতুল সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সানিয়া এখনো সাজতে মগ্ন। আর মাধুর্য ছোটাছুটি করছে। রেণুকা তাকে এক মূহুর্তের জন্যও রেহাই দিচ্ছেন না। একসময় জুস অন্যসময় সফট ড্রিংকস দিয়ে বেরাচ্ছে মেহমানদের। কবিতা বার বার মাধুর্যকে ধমক দিয়ে যাচ্ছে। কেন ও এসব করছে? মাধুর্য হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে। মামি মায়ের কথার ওপর কথা কি করে বলবে সে? এক বিন্দুও বসার সময় নেই তার।

সামিহার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী এসে পড়ে অনুভব। গাড়ি থেকে নামে সে। একবার ওপরে উঠে থাকা চাঁদের দিকে পর্যবেক্ষণ করে। চোখ সবুজ বর্ণ হতে নিলে চোখ বুজে ফেলে সে। তৃষ্ণা পাচ্ছে তার। রক্তের তৃষ্ণা! সামলাতে হবে নিজেকে। এক ঢোক গিলে মাঝারি একটা বাড়ির দিকে পা বাড়ায় সে। সদর দরজা খোলা থাকায় ভেতরে ঢুকে পড়ে অনুভব। ভেতরে মানুষে ভরপুর। একটু অন্ধকার অন্ধকার পরিবেশ। ফেইরি লাইট এবং আশেপাশে কিছু ভুল দিয়ে সাজানোতে ছোট ড্রয়িংরুমটাও চমৎকার হয়ে উঠেছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে অনুভব। তার আগমনে কিছু মানুষ অদ্ভুত চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। তাতে ভ্রুক্ষেপহীন অনুভব। তার চোখজোড়া খুঁজছে চেনা মানুষকে। এমন সময় তার চোখ থমকে পড়ে সেই মোহময় মেয়েটিকে দেখে। হ্যাঁ তাকেই তো খুঁজছিল অনুভব। গোল্ডেন কালার লং জামা, তার ওপর ওড়না যেটা চিকচিক করছে অন্ধকারে। এই আবছা আলোয় মেয়েটির সৌন্দর্য দিব্যি ফুটে উঠে আছে। হাতে তার গ্লাসের ট্রে। ওপরজন মেয়ের সঙ্গে ভ্রু কুঁচকে কথা বলছে মেয়েটি। তার ঠোঁট নাড়ানোর ভঙ্গিও গভীর ভাবে দাগ কাটছে অনুভবের মনে। হালকা মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে যায় সে।

–“আজ ওই ছেলেটা আসবে? সত্যি বলছিস? উফফ…তাহলে দেখতে পাচ্ছি তোর সেই মোহের রাজা কে! বেশ এক্সাইটেড আমি।”
কবিতার কথায় চোখ ছোট ছোট করে ফেলে মাধুর্য। চাপা সুরে বলে….
–“আমি জাস্ট একজনের প্রশংসা করেছি কবিতা। এটা তো হতেই পারে। এতে এতো এক্সাইটেড হওয়ার কি আছে বল তো?”
–“দেখ মাধু, অন্য কেউ প্রশংসা করে সেটা নরমালি নিতাম। বাট মাধুর্য চৌধুরী একটা ছেলের প্রশংসা করছে। এটা অষ্টম আর্শ্চযের ব্যাপার! নিশ্চয় ছেলেটা কোনো প্রিন্সের মতো দেখতে।”
মাধুর্যের মনটা হঠাৎ বিষিয়ের যায় প্রিন্সের কথা শুনে। সে কিছু বলবার আগেই পেছন থেকে মাধুর্যের মনে উথাল-পাতাল ঢেউ সৃষ্টি করা কন্ঠস্বরটি ভেসে আসে।
–“আমায় নিয়ে কথা হচ্ছিল বুঝি?”

চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কেউ বাস্তবতার সঙ্গে মিলাবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here