অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৯

0
534

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৯
গাড়িতে গুটিশুটি হয়ে থম মেরে বসে আছে মাধুর্য। অনুভবের চোখমুখ দেখে এখনো একটা টু শব্দ অবধি বলার সাহস হয়ে ওঠেনি। বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেল গাড়ি চলছে। বেশ স্পীডেই চলছে গাড়িটি। কিন্তু কোন ঠিকানা বা কোন দিশায় চলছে জানা নেই মাধুর্যের। তার তো আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কোথায় যাবে সে?
রাগে ফোঁস ফোঁস করছে অনুভব। এক ধ্যানে গাড়ির গ্লাসের বাইরে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে সে। এই দুনিয়ার মানুষ বড্ড স্বার্থপর। মানুষ যেমন এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব তেমনই মানুষই এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বার্থপর উপাধি টাও পেয়ে থাকে। কিন্তু এতো কেন রাগ হচ্ছে ওর? ব্যাপারটা ভেবে নিজেই বিস্ময়ের স্বীকার হয় অনুভব। ঠিক কোন সম্পর্ক বা কোন মায়ার টানে মাধুর্যকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়েছে জানে না অনুভব। ও শুধু এতোটুকু জানে, ও মাধুর্যের একবিন্দু অপমান সহ্য করতে পারবে না। গায়ে সুঁচের মতো বিঁধবে তার।

এই ব্যাপারে বেশিক্ষণ নিজের মাথায় চাপ দিলো না অনুভব। বড় শ্বাস নিয়ে বাঁকা দৃষ্টিতে মাধুর্যের দিকে তাকালো। মাধুর্য বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। জানালার কাঁচ খোলা থাকায় শীতল হাওয়াতে মাধুর্যের লম্বা লাল ও কালো রঙের মিশালো চুলগুলো একধারে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। যেন সমুদ্র হওয়ার শখ জেগেছে তাদের। নিজের এক হাত অন্য হাত দিয়ে কচলিয়ে চলেছে মাধুর্য। ব্যাপারটা বুঝে অনুভব নিজেই বলে ওঠে…..
–“কিছু বলবে?”
অনুভবের ভূতের মতো কন্ঠ শুনে আঁতকে তাকায় মাধুর্য। তারপর আটকা আটকা গলায় বলে….
–“আ…..আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমার মতো আর যাওয়ার জায়গা নেই। আমাকে বরণ মামি মায়ের কাছেই রেখে আসুন। আমি মামি মাকে ম্যা…ম্যানেজ করে নেব।”
–“কিভাবে ম্যানেজ করবে? হাতেপায়ে ধরে? কি করে সহ্য করো এসব? সম্মান নিয়ে বাঁচতে শিখতে হয় মাধুর্য। সবসময় সবকিছু সহ্য করতে হয় না।”

চুপ করে যায় মাধুর্য। চোখে পানি ভরে ওঠে। শুধু বেয়ে পড়ার অপেক্ষা। তখনই অনুভব কপট গলায় বলতে শুরু করে….
–“আমি আগেই বলেছি চোখের পানির দাম সস্তা নয়। নিজের চোখের পানি এতো সস্তা বানিয়ো না। আমার সস্তা জিনিস পছন্দ নয়।”
নাক টেনে হাত দিয়ে চোখ থেকে পানি মুছে ফেলে মাধুর্য। কিছুক্ষণ পরেই অনুভব গাড়ি থামায়। আশপাশটা অন্ধকার। গাড়ির জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করে বাইরের চারিপাশ। আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছে চাঁদের আলোয় আশেপাশে ঘেরাও করা গাছপালা। দরজা খুলে নামে মাধুর্য। অনুভব নেমে আবার মাধুর্যের হাত চেপে ধরে।
–“জায়গাটা নতুন। কোথায় কি আছে জানো না। পড়ে যেতে পারো। ফলো মি।”
মাধুর্যেট উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে হাঁটতে শুরু করে অনুভব। মাধুর্য ঠিক কোনটাকে দেখবে বুঝে উঠতে পারছে না। অনুভবকে দেখবে নাকি আশপাশটার পরিবেশ?

অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে অনুভবের দিকেই। তাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে এই আবছা আলোতেও ও দিব্যি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে। তার চলাফেরার গতি দেখে মনে হচ্ছে ওর আশপাশটা দিনের মতো ঝকঝকে। কিন্তু মাধুর্য মনোযোগ দিয়েও ভালোভাবে দেখতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিছুদূর হাঁটতেই অনুভব এবং মাধুর্য গিয়ে দাঁড়ায় একটা বাড়ির সামনে। একতলা বাড়ি। মাঝারি আকারের। অন্ধকার হওয়ায় গা ছমছম করছে। বাড়িতে লতাপাতা ঝুলে পড়েছে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চাবি দিয়ে বাড়ির দরজা খোলে অনুভব। ভেতরটা আরো অন্ধকার। অনুভব বলে ওঠে….
–“এখানে দাঁড়াও। আমি আলো জ্বালায় আগে।”
–“ঠিক আছে।”
ভেতরে ঢুকে যায় অনুভব। কয়েক সেকেন্ডেই আলোতে ঝলমল করে ওঠে ভেতরটা। অনুভব মানুষটিও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সে মাধুর্যকে ভেতরে আসতে ইশারা করে।

একপা দুইপা করে ভেতরে ঢোকে মাধুর্য। মাথা তুলে আশপাশ তাকাতেই নজরে পড়ে বড় লিভিং রুম। কয়েকটা জায়গায় ধুলোময়লা পড়া দেখে সে বুঝতে পারে বাড়িতে কেউ থাকে না। এখানে কি করতে এনেছে লোকটি?
সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় মাধুর্য। বামপাশে একটা বড় খোলা বারান্দা। তার এক পাশে একটা রুম। যেটার দরজা লাগানো। একটা কোণায় সিঁড়ি দেওয়া ওপরে ওঠার জন্য। তার পাশে বাইরের ওয়াশরুম। রুমের অন্যপাশে রয়েছে ছোট রান্নাঘর। অনুভব গিয়ে রুমের দরজা খোলে। ভেতরের রুমটাও দৃশ্যমান হয়। লাইট জ্বালাতেই দেখতে পায় মাঝারি আকারের বেডরুম। বেশ পরিপাটি করে সাজানো এবং মনোরমও বটে। অনুভব রুমের ভেতর থেকে জোর গলায় বলে ওঠে….
–“কাম হেয়ার।”

গুটি গুটি পায়ে রুমে ঢুকে পড়ে মাধুর্য। অনুভব বুকে দুই হাত রেখে ওপরে তাকিয়ে বলে ওঠে….
–“এইটা আমার ফার্মহাউস। মাঝে মাঝেই মাইন্ড ফ্রেশ করতে আসা হয়। তবে কেউ থাকে না। তাই ধুলোবালি পড়েছে। আমি তো এসব পরিস্কার করতে পারি না। আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে।”
চকিতে তাকায় মাধুর্য। মুখটা আপনা-আপনি হা হয়ে যায়। এই বাড়িতে ও কি করে থাকবে? এটা তো ওর বাড়ি নয়। তাহলে কি অনুভব তাকে দয়া করছে? মাধুর্য সব সহ্য করতে পারে কিন্তু দয়া জিনিসটি তার আত্মসম্মানে আঘাত করে। নির্বিকার সুরে বলে ওঠে….
–“এখানে আমি কি করে থাকব? সরি। আমি থাকতে পারব না। এটা আমার বাড়ি নয়। আমি এভাবে থাকতে পারব না।”
অনুভব কড়া নজরে তাকায় মাধুর্যের দিকে। তবে তার বুঝতে বেশি সময় লাগে না যে, মাধুর্যের আত্মসম্মানে আঘাত লাগছে।

এগিয়ে আসে অনুভব। একটু নিচু হয়ে শান্ত সুরে বলে ওঠে….
–“ওহ হ্যালো মিস মাধুর্য! তোমাকে এখানে থাকতেই হবে। আমি যখন বলেছি এখানেই থাকতে হবে। আমি আমার গাড়ির পেট্রোল খরচ করে এতোদূর নিয়ে এলাম আর তুমি বলছো থাকবে না। হেই ওয়েট, তুমি কি বাই এনি চান্স আমার এই বাড়িতে থাকতে দেওয়াকে দয়া বলে ভাবছো?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাধুর্য। তৎক্ষনাৎ অনুভব আবারও বলতে শুরু করে…..
–“তাহলে তো তুমি বড়ই ভুল করছো। আমি তোমাকে দয়া করছি না। এখানে আমারও স্বার্থ আছে বলেই নিয়ে এসেছি। তোমার মামি মাকে যতদূর চিনেছি তোমাকে উনি বিন্দুমাত্র শান্তি দেন না। আর তুমি আমার ড্যাডের অফিসে কাজ পেয়েছো তাও আমার জন্য। কাল থেকে তোমার পড়াশোনা, তোমার কাজের চাপ থাকবে। বাড়ি গিয়ে মামি মায়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে তুমি। অতঃপর অফিসের কাজ করতে হিমশিম খাবে। হয়ত কখনো কখনো কমপ্লিট করতে পারবে না কাজ। তখন তো প্রবলেম হয়ে যাবে না? আমার আর ড্যাডের কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন বুঝতে পারছো? আমার স্বার্থ ঠিক কোথায়? তুমি যাতে শান্তিতে আমার কাজ কমপ্লিট করতে পারো সেকারণেই তোমাকে এখানে নিয়ে আসা।”

এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না মাধুর্য। অনুভবের এমন লজিকের সামনে মিইয়ে গেছে সে। একটা মানুষের মধ্যে এতো প্যাঁচ কি করে থাকতে পারে? ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে সে। সেটা দেখে হালকা কাশি দেয় অনুভব। তারপর আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে নিজের প্যান্ট শার্ট বের করতে থাকে অনুভব। একটু বাঁকা হেসে বলে…
–“এভাবে তাকিয়ো না। প্রেমে পড়ে যাওয়ার চান্স ১০০%।”
কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে মাধুর্যের। মুখ ফুলিয়ে বলে….
–“০%। আপনার প্রেমে পড়তে আমি মরে যাইনি।”
হাসিটা প্রগাঢ় হতেই মরে যাওয়ার কথা শুনে থেমে যায় তার পুরো শরীর। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বিরবির করে বলে…..
–“একজন তো মরেছিল। আমাকে ভুল বুঝে প্রাণ ত্যাগ করেছিল। সঠিক টা বোঝাবার সময়টুকুই পায়নি।”

অনুভবের কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে ঠেকে মাধুর্যের কাছে। শুকনো গলায় বলে ওঠে….
–“কি বললেন?”
হুঁশ ফেরে অনুভবের। দ্রুত আলমারি লাগিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে….
–“কিছু না। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
চলে যায় অনুভব। থম মেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে মাধুর্য। কয়েক সেকেন্ড পর সেও ঢুকে পড়ে ওয়াশরুমে।

নিজের হাতে ফুলের ইয়া বড় বুকে নিয়ে বসে আছে সামিহা। ফুলের বুকে টা অনুভবের দেওয়া। যখন অনুভব মাধুর্যকে নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই আবার ফুলের বুকে দিতে আসে। দিয়েই শুষ্ক গলায় উইশ করে শুধু বলে….
–“আজ থেকে মাধুর্য কখনো এই বাড়ি আসবে না। আপনার যদি ওর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে হয় তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এসব রেডিকিউলেস পিপলস দের সঙ্গে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে সে।”
এতেটুকু বলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অনুভব। তখন থেকেই একমনে বসে আছে সামিহা। বিভোর রেগেমেগে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। আজ তার মা অতিরিক্ত করে ফেলেছে। সে মাধুর্যকে নিজের বোনই ভেবেছে। অন্যদিকে সানিয়া ফেসপ্যাক লাগিয়ে মোবাইল ঘাঁটতে ব্যস্ত। তার মুখে কোনো রিয়েকশন নেই। মাধুর্যকে নিয়ে চিন্তিত নয় সে। বরণ তার জন্য মাধুর্য গিয়েছে ভালো হয়েছে। ও থাকলে পাড়ার কেন? কোনো ছেলেই যেন ওর দিকে ফিরেও তাকাতো না। এইজন্য বড্ড হিংসে হতো তার মাধুর্যের প্রতি। একারণে মনে মনে খুশি সে।

সামিহার পাশে গিয়ে বসেন রেনুকা। চিন্তিত সুরে বলেন….
–“সামিহা রে, তোর ভাই দরজা খুলছে না। খেতে ডেকেছি। তাও খুলছে না। তুই একটু ওকে বল।”
–“কেন মা? আমি বলব কেন? তোমার ওপর রাগ দেখানো কি ভাইয়ের যৌক্তিক নয়? আজ তুমি এমন কান্ড বাঁধালে ভাবলেও নিজেরই খারাপ লাগছে। মেয়েটার সাথে এতো নিষ্ঠুর কি করে হতে পারো তুমি? ওর বয়স তো সানিয়ার মতো। আর তুমি ওর মনে এতোটা আঘাত দিতে পারলে?”
রেনুকার দিকে তাকিয়ে এক নাগারে কথাগুলো শুনিয়ে দিল সামিহা। ও আজ সত্যিই এমনটা আশা করেনি। রেনুকা আশ্চর্যজনক ভাবে তাকিয়ে জোরে বলে ওঠেন….
–“আজ ওই পর মেয়েটার জন্য আমার বিরুদ্ধে কথা বলছিস সামিহা? আজ ও তোর কাছে বেশি দামি হয়ে গেল? ওর গুরুত্ব বেশি তোর কাছে? আমি তোদের কেউ না?”

বিরক্তিতে চোখ বুজে আবারও খোলে সামিহা। সে কি বলেছে আর তার মা কোথায় বিষয়টা টেনে নিয়ে যাচ্ছে! নিজের চোখমুখ জড়িয়ে বলে…..
–“আমি সেটা বলিনি। তুমি বিষয় অন্যদিকে ঘোরাচ্ছো। মাধুর্যের তো কেউ নেই মা। আমরাই তো ওর কাছে সব ছিলাম। তুমি তাকে পারতে না কাছে টেনে নিয়ে আমাদের মতোই বড় করতে?”
–“শোন, আমার এতো জন দরদী হবার ইচ্ছে নেই। পরের মেয়ের জন্য এতো টান দেখাতে পারব না আমি।”
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় সামিহার। উঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে ওঠে….
–“তাহলে মাধুর্য গেছে ভালো হয়েছে। ও যেন কোনোদিনো এখানে ফিরে না আসে। নিজেকে বদলাও মা। নয়ত পরে পস্তাতে হবে।”
গটগট করে নিজের রুমের দিকে চলে যায় সামিহা। গিয়েই সজোরে দরজা লাগিয়ে দেয়। ওর ভালো লাগছে না। মাধুর্যকে ও আর কাছে পাবে না। ভাবতেই মনটা বিষন্ন হয়ে উঠছে আর সব হয়েছে তারই মায়ের জন্য।

ফ্রেশ হয়ে গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে মাধুর্যের ঘরের দরজায় উঁকি দেয় অনুভব। মেয়েটা বসে আছে বিষন্ন হয়ে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে দিয়ে কিছু একটা ভাবছে সে। দরজায় টোকা দিতেই ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। অনুভব ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে….
–“এখনো বুঝি এডজাস্টমেন্ট করতে সমস্যা হচ্ছে?”
আমতা আমতা করতে থাকে মাধুর্য। অনুভবের এক গাল হাসিতে মূহুর্তেই চুপ হয়ে গিয়ে তাকায় এই বিমোহিত লোকটির দিকে। হাসি থামিয়ে লোকটি বলে….
–“নিজের সমস্যার কথা বলতে শেখো স্ট্রেটলি। আস্তে আস্তে থাকো ঠিক হয়ে যাবে। আমি মাঝে আসব এখানে। আর তোমার ভয় করলে আমি এখানে কোনো মেয়ে সহকর্মীকে পাঠিয়ে দেব।”
–“আচ্ছা, আপনি কি আজ রাতে এখানেই ঘুমোবেন?”
মাধুর্যের কথাগুলোতে একটু ভয় মিশে আছে। তাকে আরো ভয় পাওয়াতে ইচ্ছে করছে অনুভবের। তাই সে মাথা নাড়িয়ে বলে….
–“হ্যাঁ। আমি আজ এখানেই থাকব।”

ঢোক গিলে মাধুর্য। কন্ঠস্বর আরো মিনমিনে হয়ে আসে।
–“কোথায় থাকবেন?”
–“কেন এই ঘরে। তোমার সাথে।”
–“কিহ?”
হু হা করে হেসে ওঠে অনুভব। মাধুর্যের ভয়ে মাখা চেহারা বেশ ইনজয় করছে সে। মাধুর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে। এই মজাটা তার মোটেও ভালো লাগেনি। হাসতে হাসতেই অনুভব বলে….
–“এই বাড়িতে দুটো বেডরুম আছে। ওইযে খোলা বারান্দা দেখেছো সেখানে আরেকটা বেডরুম আছে। যেটা খেয়াল কর নি। আমি সেখানেই থাকব। একটু ভরসা করতে শেখো। অনুভবকে অনুভব করতে শেখো।”
শেষ কথাটা কম্পন খেলে এসে পৌঁছায় মাধুর্যের কানে। বার বার একই কথা তার কানে বাজতে থাকে। এই কথাটা যেন আগেও কোথাও শুনেছে সে। এই কথাটা ইতিমধ্যে তার কাছে হয়ে উঠেছে মধুর।

অনুভব নিজের মাথার চুল এপাশ ওপাশ করে। হাতের দুটো আঙ্গুল নাড়িয়ে বলে ওঠে….
–“গুড নাইট।”
চলে যেতে নেয় অনুভব। দরজার দিয়ে বের হতেই পিছু ডাকে মাধুর্য।
–“অনুভব শুনুন।”
মাধুর্যের মুখে অনুভব নামটি অনুভবের কানে নয় হৃদয়ে এসে আঘাত করে। তার হৃদয় মূহুর্তেই বুলেটের ন্যায় ফুটো করে দিয়ে চলে যায়। এই ডাক তো তাকে আগেও থামিয়েছে। হাজার বার থামিয়েছে। কিন্তু অনুভব যা ভাবছে সত্যি কি তাই? নাকি এটা শুধু ওর কল্পনা? সিউর না হয়ে মাধুর্যকে নিজের মনে জায়গা দিতে চায় না সে। তার কারণ ওর হৃদয়ে শুধু ভাবনারই বসবাস।
পিছু ফিরে তাকায় অনুভব। ইশারা করতেই মাধুর্য অস্বস্তি নিয়ে বলে ওঠে….
–“আমি কি এই কাপড়েই ঘুমাবো? মানে এমন ড্রেস পড়ে তো ঘুম আসবে না।”

সত্যি তো! মাধুর্যের পরনে যেমন ড্রেস তা পড়ে ঘুমানো সম্ভব নয়। অনুভব গিয়ে আবারও আলমারিতে হাত দেয়।
–“তোমরা মেয়েরাও না! কিসব ড্রেস পরিধান করো। যা পড়ে তোমরা বেশিক্ষণ থাকতেই পারো না তা কেন পড়ো কে জানে।”
অনুভবের কথায় হাসি আসে মাধুর্যের। মুখ টিপে হাসে সে। হাতে একটা গেঞ্জি বের করে মাধুর্যের সামনে ধরে সে। গেঞ্জি দেখে থতমত খায় মাধুর্য। অসহায় চোখমুখ করে বলে….
–“এটা?”
–“আমি তো মেয়ে নই। আমার আলমারিতে কয়েকটা গেঞ্জি আর শার্ট ছিল তাই দিলাম। এখন ভেবে দেখো পড়বে কি না। তাছাড়া অন্য কোনো অপশন নেই।”
ঠোঁট উল্টে গেঞ্জি হাতে নেয় মাধুর্য।
–“ওকে বাই।”
তাড়াহুড়ো করে চলে যায় অনুভব। যেন ওর কোনো তাড়া আছে। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে লাইট ওফ করে দেয় মাধুর্য।

অনুভবের গেঞ্জি পড়ে চাদর মুড়িয়ে শুয়ে পড়ে সে। তার সামিহার কথা খুব মনে পড়ছে। সামিহা তো তার কাছেই থাকতো। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে চোখ বুজে ফেলে সে। নাকে একটা গন্ধ এসে ঠেকতেই আধো আধো চোখ খোলে। চাদরে নাক লাগিয়ে দেয় মাধুর্য। এই পারফিউম এবং স্মেল অনুভবের। যেটা মাধুর্যকে বেশ টানে। শুধু চাদরেই নয়, অনুভবের গেঞ্জি, বালিশ সব খানেই এই স্মেইল রয়েছে। তার যেন মনে হচ্ছে অনুভব তার আশেপাশেই আছে। বেশ খানিকক্ষণ ঘুম না এলেও একসময় ঘুমে তলিয়ে যায় সে।
গভীর রাতে কোনো প্রাণীর হুংকার কানে আসে মাধুর্যের। তবে চোখ খুলতে পারে না সে। অন্যপাশ ফিরে আবারও ঘুমের রাজ্যে ডুবে যায়।

চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here