বিপরীতে_হিত #পর্ব-১৪

0
196

#বিপরীতে_হিত
#পর্ব-১৪

“উমমম, ছাড় এখন। হাসফাস লাগছে খুব।”
সুমনা আদির থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। সেই তখন থেকে সুমনাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
“আর কিছুক্ষণ থাকনা। সেই কবে থেকে এরকম একটা দৃশ্য কল্পনা করেছি, জানিস?”
“এটা লাইব্রেরি শয়তান। কেউ দেখে নিলে কি হবে সে খবর আছে? ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে?”
কথাটা শুনে আদির হুশ আসলো। আসলেই তো! লাইব্রেরিকে সে প্রেমোওদ্যান বানিয়ে দিয়েছে। ছি ছি! জুনিয়র বা সিনিয়র কেউ দেখে ফেললে কি বলবে? সে তাড়াতাড়ি সুমনাকে নিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেড়িয়ে এলো। আদি তখনো সুমনার হাত ধরে আছে। সে অবস্থায়ই বললো-
“চল, আজ বাইরে কোথাও ঘুরি। তোর সাথে অনেক কথা বলার আছে। কথাগুলো পেটে জমে থেকে চরা পড়ে গেছে। না বলতে পারলে শান্তি পাবো না।”
সুমনা মাথা নেড়ে সায় জানালো।
“আমারও অনেক কিছু বলার আছে। চল যাই।”
দুজনে হেলতে দুলতে গল্প করতে করতে হাঁটছে এমন সময় পেছন থেকে মামুন ডাকলো-
“সুমনা, কোথায় যাচ্ছো? তোমার না আজ আমায় কি যেন বলার ছিলো?”
মামুনের গলা আদি আর সুমনা দুজনাই চমকে পেছনে তাকাল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। ওরা তো নিজেদের মাঝে এতোটাই বিভোর হয়ে ছিলো যে, মামুনের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। দুজন দুজনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ইশারা করলো। মামুনকে কি জবাব দেবে, দুজন সেটাই ভাবছে। সুমনা আর আদি ঘুরে দাঁড়ালো মামুনের দিকে।
“আরে! আদিও আছে দেখছি? বাহ, ভালোই হলো। তো মোনা বলো কি বলতে চাচ্ছিলে?”
“ইয়ে মানে মামুন ভাই, বলতে চাইছিলাম যে আমি আসলে আপনাকে আসলে…”
সুমনা বারদুয়েক ঢোক গিললো।
“আমাকে আসলে কি?”
“মানে আপনাকে আসলে আমার খুব ভালো বন্ধু ভাবি। আপনি এতো ভালো একটা মানুষ, আমার কতো যত্ন করেছেন, কতো আগলে রেখেছেন…বন্ধুর মতো…”
সুমনার কথা শুনতে শুনতে মামুনের চেহারা ক্রমশ গম্ভীর হয়ে উঠলো।
“ওয়েট মোনা ওয়েট! আমি তোমাকে মোটেও বন্ধুর মতো দেখিনি। আমার তোমাকে ভালো লাগে সেটা আমি অনেক আগেই বলেছি। কাল বলেছিলে, আজ জবাব দেবে আমাকে আমার ভালোলাগার ব্যাপারে..”
“মামুন, দোস্ত… ”
আদি কথা বলতে গেলেই মামুন হাতের ইশারায় আদিকে থামিয়ে দিলো।
“আদি, এখন শুধু আমি আর মোনা কথা বলবো। মাঝে আর কেউ কথা বলুক তা আমি চাই না।”
মামুনের চেহারা থমথমে। আদি একটু ভয় পেলো। মামুন একটু সহজ সরল ছেলে, ও সচরাচরই রাগে। আজ ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, ও রেগে আছে। বোকাদের রাগ চন্ডাল হয়। আদির ভয় হতে লাগলো। মামুন সুমনার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করবে না তো? সুমনা হাতের ইশারায় আদিকে আশ্বস্ত করে চুপ থাকতে বললো।
“মামুন ভাই, সেটাই বলতে চাইছিলাম। আমি আসলে ওভাবে আপনাকে কখনো দেখিনি। বন্ধুর মতোই দেখেছি। এর বেশি যতটুকু যা করেছি সেটা আদিকে জ্বলানোর জন্য। আপনাকে নিয়ে আমার মনে অন্য কোনো ফিলিংস নেই। সরি ভাইয়া, আমি যদি আপনাকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে থাকি।”
“তোমরা মেয়েরা কেন যে এমন করো বুঝি না। মনে আরেকজন মুখে আরেকজন। একজনকে বলির পাঠা তোমাদের বানাতেই হবে, তাই না? এরচেয়ে তো আদিই ভালো? ও আমাকে মানা করেছিলো তোমার সাথে মিশতে। অথচ তুমি কি করলে? তোমার জন্য আমি আদির সাথে পর্যন্ত ঝগড়া করেছি। তুমিই বলো, কাজটা কি ঠিক ছিলো?”
“ভাইয়া, আমি খুবই লজ্জিত আমার ব্যবহারের জন্য।”
“তোমার লজ্জিত হলেই কি আমার মন ভালো হয়ে যাবে? আমি আগের মতো হয়ে যাবো? কাজটা তুমি মোটেও ভালো করোনি।”
মামুন থমথমে মুখ নিয়ে হেঁটে চলে গেলো। একটা বার আদির দিকে ফিরেও দেখলো না। আদির মনটা খারাপ হলো। বন্ধুত্ব বুঝি নষ্ট হলো চিরজীবন এর মতো? কিন্তু ওর তো কোনো দোষ নেই? ও ঠিকই মানা করেছিলো মামুনকে। মামুন না শুনলে ওর কি করার আছে? তবে সুমনা মাথামোটা টার দোষ ষোলআনা! ও আদিকে শায়েস্তা করতে মামুনকে ইউজ করেছে যেটা মোটেও উচিত হয়নি। সুমনা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আদি ওর মাথায় গাট্টা মারলো-
“এসবের জন্য কেবল তুই দায়ী। আমি তখন মানা করেছিলাম তুই শুনিসনি। এখন ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব ঠিক আগের মতো করে দেওয়ার দ্বায়িত্ব তোর! তা না হলে তোর খবর আছে?”
“আমি কি করবো? তখন কি আমি জানতাম যে আমার মনে কি আছে? তবে তুই ভাবিস না, তোদের বন্ধুত্ব আমি ঠিক আগের মতো করে দেবো আর মামুন ভাইকেও ঠিকই ম্যানেজ করে ফেলবো। আমাকে সময় দে একটু।”
“থ্যাংকু। আচ্ছা এখন চলতো, তোর সাথে কথা বলতে না পারলে আমার ভাত হজম হবে না।”
“কি এতো কথা শুনি?”
আদি সুমনার হাত ধরে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় এলো-
“এই, বলতো! তোর এতো সুন্দর চুলগুলো বড় করিস না কেন?”
“তোর উপর রাগ করে, আবার কেন?”
“আমার উপর রাগ করে?”
আদি যেন আকাশ থেকে পড়ে।
“আমার সাথে তো তোর দেখাই হয়নি এতোদিন। তাহলে?”
“তাহলে কি? তোর কারণে চুল কেটে ফেলতে হয়েছিলো, তাই রাগে দুঃখে আর চুল বড় করিনি। কেন করিনি সেটার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। তবে কাল্পনিক তোর সাথে ভীষণ ঝগড়া করতাম আমি। কেন আমার চুলে হাত দিয়েছিলি তুই।”
“ওওওও, তাহলে তুইও আমাকে অনেক আগের থেকেই ভালোবাসিস দেখছি?”
“হুহ, মরন আমার। ক বললে কলাগাছ বুঝিস কেন? তোর কথা বল, তুই তো ভালোবাসিস আমাকে নাকি?”
“আমার তোর মতো অস্বীকারের এলার্জি নেই। আমি তোকে ভালোবাসি এটা বুঝলাম তুই স্কুল ছাড়ার পর পর। জানিস, এরপর আর কোনো মেয়ের দিকে আমি তাকাইনি কখনো?”
“সত্যি? কিন্তু তোকে দেখে কখনো এরকম মনে হয়নি।”
“কি মনে হয়েছিলো আমাকে দেখে?”
“ইচরে পাকা বাদর! তোকে আমার ফিলিংসলেস পারসন মনেহতো।”
“আর তুই এই বাদরের বাদরনী!”
বলেই সুমনার নাক টেনে দিলো আদি আদর করে।
“উফফ লাগে তো! আচ্ছা, তাহলে তুই আমাকে ভার্সিটিতে আমাকে এতো জ্বালাতন করলি কেন?”
“জ্বালাবো না? আমি তোর সাথে কথা বলতে চাইছি আর তুই আমার সাথে ভাব নিচ্ছিলি। না হলে আমি ভালো হয়ে গেছি সেই কবে!”
“ইশশ, আমার গুড বয়রে। আমার সাথে আর বাঁদরামি করবি না তো?”
“করবো। তোকে জ্বালাতে ভালো লাগে আমার। সারাজীবন ধরে জ্বালিয়ে যাবো তোকে। যখন বুড়ো হয়ে যাবো তখনও…”
“আদি…কলার কাদি…আমাকে সারাজীবন জ্বালানোর প্লান করছিস? তবেরে…”
সুমনা আদিকে তাড়া করছে আর আদি দৌড়াচ্ছে। দুজনার চোখে মুখে অপার্থিব আনন্দ খেলে যাচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে সুখের সময় পার করছে দুজনে। ভবিষ্যতের ভাবনা নেই কেবল ভালোবাসা আছে। আচ্ছা! ভবিষ্যতে ওরা দুজন মিলবে তো? নাকি ভালোবাসা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে?

চলবে—–
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here