#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ১
গায়ে হলুদের শাড়ি পরে বাসট্যান্ডের মোড়ে একা একা দাড়িয়ে আছে বিন্দু। গলায় গাদা ফুলের মালা, কানে গাদা ফুল দিয়ে তৈরী জিনিস। কপালে একটা কালো টিপ,হাত ভর্তি লাল-হলুদ কাঁচের চুড়ি,নাকে একটা নোলক আর খোপাতে গাদা ফুল গুঁজে দেওয়া। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগছে বিন্দুকে। রাস্তার জোয়ান,বৃদ্ধ সবাই আড় চোখে তাকাচ্ছে। কেউ কেউ আবার বাজে মন্তব্য করতেও ছাড়ছে না। শিশুরাও পর্যন্ত পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিন্দুর কোলে উঠতে চায়। আবার সেই বাচ্চারা ফুল নিয়েও টানাটানি শুরু করে দেয়। সব মিলিয়ে প্রচন্ড এক বিরক্তিকর পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িতে চড়ে যেসব যাত্রীরা যাচ্ছে তারাও একইভাবে তাকাচ্ছে। বড্ড বিরক্তি লাগছে বিন্দুর এখনো কেন বাস আসছে না। তার ওপর মা-বাবার ওপরও ভিষণ রাগ লাগছে ওনারা আসলে তো আজ এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। সবাই তখন এভাবে তাকাতে দু’বার ভাবতো। কোনো মেয়ের সাথে অভিভাবক না থাকলে বিশেষ করে সাজুগুজু করে কোথাও গেলে সবাই এইভাবেই তাকায়। বারবার নাক বরাবর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। হাতে রাখা ট্যিসুটা দিয়ে বারবার ঘেমে ওঠা নাক মুছছে বিন্দু।
আজ ওর মামাতো বোন সুমির বিয়ে। আর উদ্দেশ্যেই একা একা রওনা হয়েছে সে। বিন্দুর বাবা সাহেদ আলী একজন কাপড় ব্যবসায়ী। ভোলার জিয়া মার্কেটে বিশাল বড় একটা দোকান ওনার। মার্কেটে ওনার যথেষ্ট সম্মান আছে। এলাকাতেও সবাই সৎ ব্যবসায়ী বলেই সবাই চেনেন তাকে। মুসলিম পাড়া এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে সাহেদ আলী একজন। বিন্দুরা দুই বোন। বিন্দু আর বিধু। বিন্দুই বড়। এবার এস.এস.সি পাস করে মহিলা কলেজে ইন্টারে সায়ন্সে ভর্তি হয়েছে। ছাত্রী হিসেবে মোটামুটি মেধাবী। আর বিধু এবার ক্লাস এইটে পড়ে। বাবা-মায়ের চোখের মণি মেয়ে দুইটা। বিন্দুর আর কোনো ভাই-বোন নেই। বিন্দুর মা সাজেদা বেগম সবসময় রোগা-পাতলা একজন মহিলা। বছরের বারো মাসই ওনার এটাসেটা রোগ লেগেই থাকে। তাই একটা ছেলের ইচ্ছে থাকলেও বউয়ের এমন অবস্থায় ছেলে-পেলের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলেন সাহেদ আলী। ওনার কাছে মেয়ে দু’টোই ওনার ছেলে-মেয়ে। মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন এসবই ওনার আশা। সব স্বপ্ন ওনার মেয়ে দুই মেয়েকে ঘিরে।
আজ বিন্দুর মামাতো বোনের বিয়েতে সবাই মিলে যাওয়ার কথা থাকলেও হুট করেই দোকানের কাপড় আনতে ঢাকা চলে গেলেন সাহেদ আলী। সাজেদা বেগমও মাজার ব্যথায় নড়তে-চড়তে পারছেন না ঠিক মতো। আর বিধুর এসব বিয়ে-টিয়ে নিয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাই ও নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবে যায়নি। কিন্তু সবার এত সমস্যার মধ্যেও সুমির বিয়েতে যাবে বলে জেদ ধরেছে বিন্দু। দুই মামাতো ফুফাতো বোনের মধ্যে বেশ ভাব। হয়তো একজন ছেলে একজন মেয়ে হলে দু’জন দু’জনকেই বিয়ে করে নিতো। সেই প্রিয় বোনের বিয়েতে বিন্দু থাকবে না এটা মানতে সে নারাজ। আর এজন্য সাজেদা বেগম এত মানা করা স্বত্ত্বেও সব বাঁধা উপেক্ষা করে একা একাই মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বিন্দু। কিন্তু এখন তো বাঁধলো আরেক বিপত্তি দৌলতখান যাওয়ার বাসও আসছে না। তাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়াও কোনো পথ নেই। আর পার্সে করে যেটুকু টাকা নিয়ে এসেছে তা দিয়ে রিক্সায় করে যাওয়াও যাবে না। সব টাকা ফুরিয়ে যাবে।
হঠাৎই একটা রিক্সা দেখে চোখ-মুখে প্রাণখোলা হাসি ফুটে উঠলো বিন্দুর। ওর মা আর বোন রিক্সায় করে আসছে। ওনাদের দেখেই হেসে সেদিকে এগিয়ে গেল। রিক্সা থামতেই সাজেদা বেগম মেয়েকে রিক্সায় উঠতে বললেন। যাক অবশেষে একটা ব্যবস্থা হয়েছে ভেবেই অসম্ভব ভালো লাগছে। তবুও বিন্দু বিধুকে একটু ভাব লাগিয়ে বললো,
–এই বলে আসবি না তো এখন কীভাবে এলি?”
ওমনি বিধু মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠলো,
–তুই আমার সাথে একদম কথা বলবি না। আমার এসব বিয়ে-ফিয়ে ভালো লাগে না। মানুষের এত হৈ-হুল্লোড় জাস্ট ডিজগাস্টিং। ”
বিন্দুও কম যায় না। সেও ভেংচি কেটে বললো,
–তা নবাব নন্দিনী আপনাকে আসতে বলেছে কে শুনি?”
–কে আবার? আপনার মা আমার সাজেদা খালা। ওনার মেয়েকে রাস্তায় যদি আবার কেউ তুলে-টুলে নিয়ে যায়। সে নিয়ে আমার খালার বহুত চিন্তা। তাই তো আমাকে একরকম জোড় করে নিয়ে এসেছে। নয়তো আমার আসতে বয়েই গেছে। অবশ্য ওনার মেয়েকেও বলি হারি। এত সেজেগুজে রাস্তার সব মানুষ পাগল না করলেই কী চলছিল না তার।”
বিন্দু হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে নেকাবের ওপর দিয়েই মায়ের গালে চুমু খেলো। তা দেখে বিধু ভেংচি কেটে বললো,
–বাঁচি না এত সোহাগ দেখলে। ঢং যত্তসব।”
বিধুর কথা শুনে বিন্দু আর সাজেদা বেগম দু’জনেই একটু শব্দ করে হেসে ফেললো। তা দেখে বিধু রাগ দেখিয়ে মুখ ভার করে বসে আছে।
অবশেষে অনেকক্ষণ রিক্সায় চেপে বিয়ে বাড়িতে এসে পৌঁছলো সবাই। বিন্দুদেরকে দেখেই দৌঁড়ে এলো ওর মামি। এসেই সাজেদা বেগমকে জড়িয়ে ধরলেন।
–কেমন আছেন ভাবি? আর বিধু-বিন্দু গোরা কেমন আছিস? দুলাভাইকে দেখতে পাচ্ছি না উনি কোথায়?”
–মামি আমরা ভালো আছি। মা বেশি একটা ভালো নেই। বাবা ঢাকাতে গেছে তাই আসতে পারেনি। এখন বলো সুমি কোথায়?(বিন্দু)
— ও রুমেই আছে। তুই এখনই সেজে এসেছিস কেন? গায়ে হলুদ তো বিকালে। ”
–আজ সুমির শেষ। ও বলছে গায়ে হলুদ নাকি আজ সকালে তাই সেজেগুজে এসেছি যদি সময় না পাই তাই।”
–আচ্ছা তোরা যা কর, কর। আসেন আফা আপনে আমার সাথে।”
বিন্দুর মামি রেহানা বেগম সাজেদা বেগমের বড় ভাইর বউ। বয়সে বড় হলেও সবসময় সাজেদা বেগমকে আফা বলেই সম্ভোধন করে। খুব সাদাসিধে ধরনের মানুষ রেহানা বেগম। খুব একটা প্যাঁচগোছ ওনার মধ্যে নেই। রেহানা বেগমের বড় মেয়ে সুমি আর দুইটা ছেলে আছে। রাকিব আর রাসেদ। বিধু আর বিন্দুকেও তিনি মেয়ের মতো ভালোবাসেন। আজকাল এমন মামী পাওয়া সবার ভাগ্যে জোটে না। সেদিক থেকে রেহানা বেগম একদম ব্যতিক্রম। আর সুমি আর বিন্দু তো একজন অন্ত অন্যজন প্রাণ।
বিকেলে গায়ে হলুদ দেওয়ার কথা থাকলেও ছেলে পক্ষ আসতে আসতে মাগরিব বাঁধিয়ে ফেলেছে। সবাইকে আপ্যায়ন করে অবশেষে গায়ে হলুদের আয়োজন শুরু করা হলো। বিন্দু সেই কখন থেকেই দেখছে একটা ছেলে খালি ওকে ফলো করে যাচ্ছে। ব্যাপারটায় খুব একটা পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে সে। অবশেষে শুরু হলো নাচ-গানের আয়োজন। কথা হয়েছে প্রথমে ছেলে পক্ষের কাউকে ডান্স করতে হবে তারপর মেয়ে পক্ষের কাউকে। যে দল জয়ী হবে সে দলকে বিপরীত দলকে টাকা দিতে হবে। ছেলের পক্ষ থেকে নাচতে আসলো একটা ছেলে। মিউজিকের তালে তালে অসম্ভব সুন্দর করে নাচতে লাগলো ছেলেটা। মিনিটের মধ্যেই নাচ দেখিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে ফেলেছে। বিন্দুর সেদিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে। একটা ছেলে এত সুন্দর করে ডান্স করতে পারে জানা ছিল না বিন্দুর। একটু খেয়াল করতেই বিন্দু দেখলো এটাই সেই ছেলে যে বারবার বিন্দুকে আড় চোখে দেখছিল। কেন যেন এক অজানা ভালোলাগায় মুহূর্তেই শিহরিত হয়ে উঠলো সে। এটা কেমন শিহরণ বড্ড অজানা বিন্দুর। এই ভালোলাগা,শিহরণ সম্পর্কে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তার। ভাবনার পালাক্রম শেষ হওয়ার আগেই মিউজিক বন্ধ হয়ে গেল। চারদিকে সবার করতালিতে ধ্যান ভাঙলো বিন্দুর সবার সাথে পাল্লা দিয়ে সেও হাততালি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অবশেষে এলো মেয়েদের পালা। মেয়েদের কেউই ডান্স করতে রাজি না। কারণ সবার জানা এই ছেলের ডান্সকে টেক্কা দিয়ে জয়ী হওয়া খুব একটা সহজ হবে না। তবুও নিজেদের সম্মান বাঁচাতে বিন্দুকেই ডান্স ফ্লোরে যেতে হলো। মিউজিকের তালে তালে বিন্দুও কম যায় না। কাঁপানো ডান্সের মাধ্যমে এই পর্ব শেষ করলো। এখন শুরু হলো বিচারের পালা। উভয় দলের মুরুব্বিদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিন্দুকেই শেষমেশ জিতিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হলো।
অবশেষে ডিনারের ব্যবস্থা করা হলো। রাতের খাবারের মেনুতে রইলো বিরিয়ানি সাথে একটা ঝাল ঝাল রোস্ট আর একটা করে স্প্রাইট। বিন্দুও সবার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বিরিয়ানির প্লেট তুলে দিচ্ছে সকল গেস্টদের। বিরিয়ানির প্লেট দিতে গিয়েই সেই ছেলেটার সাথে আবারও চোখের মিলন ঘটলো বিন্দুর। ঠোঁটের কোণে প্রশস্থ হাসি ঝুলিয়ে বিন্দু বিরিয়ানির প্লেটটা ছেলেটার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ছেলেটাও হেসে প্লেটটা নিয়ে নিলো। বিন্দু চলে যেতে নিলেই পিছু ডাকলো ছেলেটি,
–এই যে ম্যাম এত তাড়া কিসের? একটু সময় কী দেওয়া যায় না আমাদের?”
বিন্দু হেসে সামনের দিকে ফিরে বললো,
–বড় বোনের বিয়ে বলে কথা একটু বস্ত তো থাকতেই হয়। তবুও সময় দেওয়া যায়। চলুন ওইদিকটায় বসি।”
বিন্দু সেই ছেলেটা আরও একটা ছেলে গিয়ে এক কর্নারের তিনটা চেয়ারে বসলো। ছেলেটা হাত দিয়ে অল্প একটু বিরিয়ানি মুখে তুলে দিতে দিতে বললো,
–আপনারটাও নিয়ে আসুন না আমরা তিনজন একসাথে খাই।”
–না না আমি এখন খাব না। আমার খিদে লাগছে না।”
–আমাদেরও তো খিদে নাই তার চেয়ে বরং এগুলো নিয়ে যান।”
–আরেহ না। সমস্যা নাই আমি কথা বলি আপনারা খেয়ে নিন।”
–নাম কী আপনার?”
–মুনতাহা জাহান বিন্দু।”
–ওয়াও নাইস নেইম। শিশিরের বিন্দু কণা!”
ছেলেটার কথা শুনে বিন্দু হেসে ফেললো। কিন্তু ছেলেটার পাশে বসা ছেলেটা বিষম খেল। বিন্দু তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি এনে ছেলেটার হাতে দিলো। তখন ছেলেটা পানি খেতে খেতে বললো,
–ধন্যবাদ। ”
–স্বাগতম।”
এরপর বিন্দু আবারও ডান্স করেছিল সেই ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো,
–আপনি কিন্তু ভয়ংকর সুন্দর ডান্স করেন। জাস্ট অসাধারণ! ”
–আপনিও তো কম জান না। পুরো সব কাঁপিয়ে ফেলেছেন।”
বিন্দু শুধু হালকা হেসে বললো,
–আপনার নাম কী?
–শোয়েবুর রহমান সিহাব।”
–আপনার নামটাও খুব সুন্দর। ”
–ধন্যবাদ। কিসে পড়েন আপনি?”
–আমি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে। আপনি?”
–আমি পড়াশুনা শেষ করে পূবালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে আছি। কিন্তু তুমি তো একদম পিচ্চি। ”
–মোটেও না আমি এখন ইন্টারে পড়ি। সো আমি অনেক বড়।”
বিন্দুর কথা শুনে শিহাব আর ওর বন্ধু হেসে ফেললো। এরপর শিহাব তার বন্ধুর উদ্দেশ্যে বললো,
–ও শিশির। সেই ছোটবেলা থেকেই এক স্কুলে পড়া তারপর বন্ধুত্ব এখনও একসাথে আছি। ও এখন পড়াশুনা শেষ করে একটা প্রাইভেট হাইস্কুলে আছে।”
বিন্দু সৌজন্যের খাতির একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।
সেই সাথে মাথা অব্দি পা পর্যন্ত তাকালো। শিহাবের তুলনায় ছেলেটার হাইট একটু কম মেবি পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি হবে,শিহাব একদম ফর্সা কিন্তু সেই ছেলেটা শ্যামলা,চোখে চশমা, চিপচিপে গড়নের,অন্যদিকে শিহাবে মোটামুটি স্বাস্থ্যের অধিকারী। সব মিলিয়ে কোনোভাবেই শিহাবের সাথে ওকে তুলনা করা যায় না। তবুও সব মিলিয়ে দেখতে খুব একটা খারাপ লাগছে না শিশির নামের ছেলেটাকে ।
–আপনারা দুই বন্ধুর তো কথার জন্য কিছু খাওয়াই হলো না। আপনারা খেয়ে নিন। আমি একটু আসছি।”
শিহাব মাথা নাড়িয়ে যেতে বললো। বিন্দু চলে যেতেই শিহাব শিশিরের উদ্দেশ্যে বললো,
–বিন্দুকে কেমন লাগছে তোর?”
–ভালো।”
–আমার তো ওকে খুব ভালো লেগেছে।”
শিশির একবার শিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে সুক্ষ্ম গলায় বললো,
–এটা আর নতুন কী! এ যাবৎ তো অনেক মেয়েকেই তোর খুব ভালো লেগেছে।”
–ওহ্ শিশির পাস্ট ইজ পাস্ট। সত্যিই আমার বিন্দুকে অসম্ভব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ওর কথা বলার স্টাইল,ওর ঠোঁটের সেই মৃদু হাসি কীভাবে যেন শরীর দুলিয়ে কথা বলে। জাস্ট অসাধারণ। আমার বুকে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছে ওর চোখের গভীর কালো মণির চাহনি ।”
শিশির কথা শুনছে আর মুখে বিরিয়ানি তুলে দিচ্ছে কিন্তু কোনো কথাই বলছে না।
— কিরে কিছু বল?”
–কী বলবো?”
–বিন্দু আমার জন্য কেমন হবে?”
–ভালো।”
–উফ এইরকম ফিকে কথাবার্তা শুনতে ভালো লাগছে না। যা বলবি ঠিকঠাক ভাবে বলবি।”
এ পর্যায়ে কিছুটা গলায়র স্বর রুক্ষ্ম করে শিশির বললো,
–আমার তো বিন্দুকে নিয়ে কোনো কনফিউশন নেই। কারণ ওর চোখে আমি তোর প্রতি ইন্টারেস্ট দেখেছি। কিন্তু তুই আধেও ঠিক থাকবি কি না সেটাই তো ভাবাচ্ছে আমাকে।”
–তোর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে বিন্দুই হবে আমার জীবনের শেষ প্রেম আমি ওকে নিয়েই আমার জীবনের সমস্ত রঙ সাজাবো।”
শিশির স্প্রাইটের মুখে মুখ লাগিয়ে কয়েক ঢোক গিলে বললো,
–তাহলে তো ভালোই হয়।”
–তবে এই ভালোর কাজটা তোকে করতে হবে। তুই বিন্দুকে বলবি আমার কথা।”
–পারবো না আমি। প্রেম করবি তুই আর আমি কেন বলবো? আমি এসব পারবো না। তুই গিয়ে বল।”
–প্লিজ দোস্ত। এমন করিস না। ওই দেখ বিন্দু ওখানে একা আছে। তুই যা। আর পারলে আমার ফোন নাম্বারটাও দিয়ে আসিস।”
শিহাবের পিড়াপীড়িতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো শিশির। ধীর পায়ে এগিয়ে চললো বিন্দুর দিকে। বিন্দু পিছু ঘুরতেই দেখলো শিশির ওর মুখোমুখি একদম সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিন্দু হালকা হেসে বললো,
–কিছু বলবেন?”
–ভালোবাসি!”
বিন্দু হা করে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলের সাহস দেখে বিন্দু প্রায় হতবাক। শিশির বিন্দুর সামনে একটা তুড়ি বাজাতেই বিন্দুর ঘোর কাটলো। শিশির হেসে হেসে বললো,
–এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জাস্ট ফান করলাম। দেখলাম তুম সাহসী কি না। কিন্তু তুমি ফেল করে গেছো। ভীতুর ডিম একটা! তুমি বয়সে ছোট তাই তুমি করেই বললাম। কিছু মনে করো না। শিহাব তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন আমাকে বলেছে তোমার কাছে থেকে উত্তর নিয়ে ফিরতে। এখন আমাকে তাড়াতাড়ি উত্তরটা দিয়ে দাও।
বিন্দু শিশিরের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না কত সহজেই কথাগুলো বলছে শিশির। আবার উত্তরও চাইছে। বিন্দুকে চুপ থাকতে দেখে শিশির বিন্দুর হাত থেকে ঝট করে ফোনটা নিয়ে নিলো। বিন্দুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই শিহাবের নাম্বারটা সেভ করে দিয়ে বললো,
–ওকেই না হয় উত্তরটা জানিয়ে দিও। নাম্বারটা সেভ করে দিলাম। আর কিছু না বলেই শিশির সেখান থেকে চলে গেল। বিন্দুকেও কিছু বলার সুযোগ দিলো না।
ডিনার শেষে ছেলে পক্ষ বিদায় নিয়ে চলে গেল। কিন্তু সেই সাথে বিন্দুর চোখের ঘুমও কেড়ে নিয়ে গেল একজন। অন্য একজনেরও যে চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেছে। সে একজন কে হতে পারে?
চলবে,,,,,,,