অবৈধ_বিয়ে #Sabriha_Sadi পর্ব : ৩১+৩২ (শেষ)

0
747

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ৩১+৩২ (শেষ)

সারাদিন ঘুরাঘুরি আর শপিং করার পর সন্ধের সময় তারা হোটেলে ফিরল।

ফ্রেশ হয়ে তারা ৮ টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে নিল। হোটেলের চারপাশটা ঘুরে নিজেদের রুমে চলে গেল। ৯ টা বাজতেই রাজ ঘুমানোর জন্যে তোড়জোড় করতে লাগল।

– এত তারাতরি ঘুমিয়ে যাবো?
– হুম। চুপ করে বুকে এসে শুয়ে পড়ো।
– না।
– কি না?
– আমি এখন ঘুমাবো না। আপনি আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরবেন।
– এখন? মাথা খারাপ তোমার?
– কি বললেন?
– ঠিকি তো বললাম। পাগলির মতো আবদার ধরছো।
– ঠিক আছে লাগবে না।

রানি মুখ গোমরা করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

রাজ রানি কে নিজের বুকে আনার জন্যে জোরাজুরি করছে। কিন্তু রানিও আসতে চাইছে না। রাগে অভিমানে রাজ কে বাঁধা দিতে চাইছে। কিন্তু রাজ নাছোড়বান্দা তো ছাড়বেই না।

অনেক জোর করে রানি সে নিজের বুকে আনতে সক্ষম হয়েছে। রানি রাগে রাজের বুকে একটা কামোর দিল। রাজ মুছকি হেসে রানি কে নিজের বুকের সাথে চেঁপে রেখেছে।

– রানি।

হিম শীতল বাতাসে রানির শরীর কনকন করছে। তারপরেও রাজের মধুর সুরে রানি মাঝরাতে ঘুম ঘুম চোখে তাকাল রাজের দিক।

মিটমিট করা চোখের সামনে আকাশের মিটমিট করা তারা আর রূপের ছটা চাঁদ ভেসে উঠল। সাথে অন্য একটা মানুষও আছে। রাজ নামক ব্যক্তিটা মুখ ভরা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে সে। রানি কিছুই বুঝতে পারছে না। চারপাশটা দেখার পর বুঝতে পারল রাজ পাগল টা তাকে কোলে করে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।

– Happy marriage anniversary Pranosi…..

রানি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। ডেবডেব চোখে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।

– এই সব কি ভাবছো তো?
-….
– তুমি ঘুমিয়েছো ১১ টার দিকে। আর আমি তোমাকে কোলে নিয়েছি ১১.৩৫ মিনিটে। তখন থেকে তোমাকে নিয়ে হেটেছি। তারপরে ১১.১৫ মিনিটে নিয়ে বাহিরে এসেছি। এই খোলা আকাশের নিচে। এই মন ভরা শীতল বাতাসে ঘুম ভাঙ্গবে জানতাম আমি। এখন রাত ঠিক ১২ টা বাজে। আবারও বলছি “Happy marriage anniversary” and, “Happy 1st meet day”…. আজ আমাদের বিয়ের এক বছর হলো প্রাণোসী। আর তুমি আমার জীবনে এসেছো ২ বছর হলো। ২ বছর আগে ঠিক এই দিনই তুমি দেখে দিয়েছি আমার জীবনে আমার প্রাণোসী হয়ে। দেখতে দেখতে আমাদের বিবাহিত জীবনের ১ বছর কেটে গেলো। আমি চাইলে আর সব দম্পতির মতো আমাদের Marriage anniversary পালন করতে পারতাম। কিন্তু আমি তা চাইই নি। আমি চেয়েছিলাম আমাদের এই দিন টা আমি আর তুমিই কাটাব। অন্যদের মতো এত ফুল এত মোমবাতি এত আয়েজন করি নি। কারণ আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলে তুমি। আমি জানি তোমার কি পছন্দ। তাই কোলে করে এই খোলা আকাশের নিচে এই চাঁদ তারার মেলায় নিয়ে এলাম তোমায়। আশা করি এতে তুমি খুশি।
তোমাকে আমি বলেছিলাম না রানি, আর কিছু দিন সময় দাও আমি সব টা বলব? এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম আমি। আজ তোমাকে তোমার উত্তর দিব আমি।
আমি ছোট থাকতেই বেশ আনন্দ আর হাসি খুশির মাঝে বড় হয়েছি। বাবা মা তো জানোই কেমন। উনারা খুব ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছে আমায়। পড়ালেখা শেষ করে বাবার অফিসের দায়িত্ব নেই নিজের উপর। আমি আমার সব টা দিয়ে চেষ্টা করতাম বাবার অফিসের কাজ ঠিক করে করার জন্যে। সবটা দেখে রাখার জন্যে। মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলাম। আমার ভয়ে অফিসের সবাই বেশ ভালো ভাবেই কাজ করত। খুব উন্নতি হতে থাকল বাবার ব্যবসায়। এইভাবেই কাটলে লাগল আমার দিন। অফিস আর বাসা মিলে বেশ সুখেই কাটছিল জীবন।
কিন্তু সুখের সময় যে বেশি দিন থাকে না। দুঃখ নামক কালো ছায়া পড়ল আমার জীবনে। শহরের সব চেয়ে বড় চাঁদাবাজ আমাদের অফিসে এসেছিল। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য বশত আমি সেদিন অফিসে ছিলাম না।
অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আমাকে অন্য এক জায়গায় যেতে হয়েছিল। মিটিং টা আমাদের খুব বেশিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৬ কোটি টাকার ডিল ছিল একটা। ডিল টা আমাদের পেতেই হতো। এমন একটা ডিল আমাদের অফিসের সবার জন্যে দরকার ছিল। তাই মিটিং টা আমি অন্য জায়গায় ঠিক করি।
যখন অফিসে এলাম, তখন দেখলাম প্রায় সবার মুখে কালো ছাপ। যেন সবাই এমনিতেই চুপচাপ হয়ে আছে। বাবা কে বেশ চিন্তিত লাগছিলন। মনমরা হয়ে বসে ছিল। বাবা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম বাবা কিছু বলে নি। বাবা চুপ করে চেয়ারে বসে ছিল। অফিসের সবাই কেই জিজ্ঞেস করেছি। কেউ কিছু বলে নি। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। রাগারাগি করেও কিছু জানতে পারলাম না।
রাগে নিজের কেবিনে গিয়ে ভাবতে লাগলাম। উপায় ছিল জানার। আমি না থাকা কালীন কি হয়েছিল তা সিসি ক্যামেরায় দেখে নিলাম।
চাঁদাবাজরা এসে বাবা কে সেদিন হুমকি দিয়েছিল, ৭/৮ কোটি টাকা দিতে। আমাদের অফিসের ফান্ডে ছিল টাকা। কিন্তু বাবা দিতে চায় নি। ওরা অনেক কিছু বলে গিয়েছিল বাবা কে। তা দেখে হাতের সামনে থাকা গ্লাসটা হাত দিয়ে চেঁপে ধরেই ভেঙ্গে ফেললাম। খুব রাগ হচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল লোক গুলি কে জিন্দা করব দেই।
সেই দিনের পর থেকে, ওদের খুঁজ খবর নিতে থাকি আমি।
পেয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু একদিন রাতে আমি বাসায় ডুকতে গিয়ে দেখি, লোক গুলি আমার বাসায় এসে বসে আছে। মায়ের দিকে বন্দুক তাক করা। বাবার কলারে ধরে রেখেছে এক জন। মাথা যেন পুরো বিগড়ে গেল আমার। কিন্তু আমি তখন চুপ ছিলাম। কারণ তখন আমি কিছু করলে, আমার মা বাবার কিছু হতো। খুব কষ্টে আড়ালে ছিলাম। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে গেল ওরা। ওরা যাওয়ার পর ঘরে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙ্গতে লাগলাম। রাগ সামলাতে পারছিলাম না। মা বাবা কেউ বাঁধা দেই নি। নিজের কোট টা ছুড়ে ফ্লোর ফেলে দিয়েছিলাম। তার পরের দিন বাবা মা কে বলে চিটাগাং থেকে চলে গেলাম ঢাকা। নিজের জীবনের ভয় না করে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম। বাবা কে অপমান করার প্রতিশোধ টা আমার প্রবল হয়ে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে তোমাকে দেখলাম। তারপর থেকে তোমার পিছু পিছু ছুটতাম। এক সেই লোক গুলিকে সামনেও পেয়ে গেলাম। তবে সবাই কে না। কারণ আস্তে আস্তে আমি ওদের অনেককে শাস্তি দিয়েছি। তবে পেয়েছিলাম, যেই লোকটা বাবা কে মেরেছিল। রাগ যেন মাথায় উঠে গেল। খুব করে মেরেছি। তা দেখে তুমি আমাকে ভেবেছো, আমি খারাপ একটা ছেলে, মারামারি করি রাস্তায়। আমি একটা গুন্ডা।

চলবে……

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব: ৩২

রানি ডেবডেব করে রাজের দিকে আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ গুলি ছলছল করছে।

রাজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

– “কখনো কখনো, কাছের মানুষদের সুখের জন্যে খারাপ মানুষের সাথে খারাপ কিছুই করতে হয়। খারাপ মানুষদের সাথে তেমনটাই করতে হয়, যেমনটা করলে তারা বুঝে। আমি আমার বাবার সাথে তেমন ব্যবহার টা সহ্য করতে পারি নি। খারাপ লেগেছে। এক প্রকার ভীষণ ভাবে রেগে গিয়েছিলাম। তাই এমন ভাবে লোক গুলি কে মেরেছি। আশা করি এখন তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছো। এখনো যদি আমাকে তোমার খারাপ আর গুন্ডা মনে হয় তুমি আমার কোল থেকে নেমে যেতে পারো। আমার আর কিছু বলার নেই। তবে এটা যেনে রেখো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি।”

রানি চোখের টলটল ভরা পানি নিয়ে ছলছল করে তাকিয়ে আছে। সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে।

রানি কিছুটা সময় যাওয়ার পর রাজের কোল থেকে নেমে গেল।

রাজের মনটা কালো মেঘের ছায়ায় ডেকে গেল। তবে রানি কি তাকে মেনে নিবে না? রানি তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্যেই কি, তার কোল থেকে নেমে গেল? রাজের মাথা যেন কাজ করছে না। ভাবতে পারছে না আর কিছু।

রানি হঠাৎ করেই রাজ কে জড়িয়ে দরল।
– “তোমাকে খুব ভালোবাসি।”

রাজের যেন সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। রানি তাকে তুমি বলল? সত্যিই কি বললো? তার সাথে রানি ভালো ব্যবহার করলেও, মেনে নিলেও কোনো দিন, “ভালোবাসি” কথাটা উচ্চারণ করে নি। রাজ কি সত্যিই এমন কিছু শুনল?

– “খুব ভালোবাসি তোমাকে। খুব ভালোবাসি। ভালোবাসি আমি আমার সাইকো বর টা কে। ভালোবাসি আমার ভালোবাসাটা কে।”

রাজ চুপ করে সব কিছু অনুভব করছিল।

হুট করেই রানি কে নিজের বাহুডোরে শক্তে করে চেঁপে নিল। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। রানিও কান্না করছে।
দুজন আজ ভালোবাসাময় কান্নায় মেতে উঠেছে। আজ তাদের Marriage anniversary এর সুখের কান্না কাঁদছে। ভালোবাসা পাওয়ার কান্না করছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দুটি দম্পতি তাদের অন্যরকম ভাবে নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করছে।

অনেকক্ষণ এইভাবেই ছিল দুজন চাঁদ তারার মেলায়।

রাজ রানি কে কোলে তুলে নিল। রানিও কিছু বলল না, উল্টে লজ্জা পেয়ে লজ্জাবতী পাতার মতো রাজের বুকে মিশে যাচ্ছে।

রাজ ঘরে গিয়ে রানি কে কোল থেকে নামিয়ে দিল। ব্যাগ থেকে সাদা ধপধপে নাইটড্রেসটা হাত নিল। নাইট ড্রেসটা দেখে রানি বলে উঠল,,

– এটা? এটা এলো কোথা থেকে?
– তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আর আমি এটা প্যাকিং করে নিয়েছিলাম।
– তাই নাকি?
– জ্বি মহারাণী।
– বাহ্। ভালো।
– হুমম। এখন যাও এটা পড়ে এসো।
– তাই? আমি পড়ব?

কথাটা বলতে বলতেই রানি নিজের গলা থেকে ওড়নাটা সরিয়ে নিল।

– আরে আরে করছো কি? আমার নিজেরই তো লজ্জা করছে।
– তাই বুঝি?
– এই দেখো আমি আমার চোখে হাত দিয়েছি। ওড়নাটা নিজের শরীরে দাও।
– কই? আমি তে দেখছি আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে তুমি ঠিকি দেখছ।
– প্রাণোসী মিথ্যে বলো না।
– মিথ্যা না সত্যিই বলছি।
– দিন তো দেখি উল্টা এলো। নিজেই এখন নিজের ওড়না খুলে দেয় মেয়েরা?
– ওই চুপ একদম চুপ।

রানি রাজের কলার ধরে নিজের কাছে টেনে আনল।

– করছো কি?
– চুপ।
– বলবে তো কি করছো।
– আজ আমি যা ইচ্ছে করব। আমার স্বামীর সাথে যা ইচ্ছে করব। তাতে তোমার কি?
– আমিই তোমার স্বামী। আমার সাথে কি করবে আমি জানতে চাইব না?
– না।
– কেন?
– কারণ আজ আমার রাত।

রাজ আর কিছু বলল না। রানি তার ওড়না দিয়ে রাজের চোখ দুটি বেঁধে দিল।

– চোখ বাঁধলে কেন?
-……

রানি চোখ বেঁধে দিয়ে রাজের হাত গুলি তার কোমরে নিল। রাজ যেন বুঝতেই পারছে না রানি কি করতে চাইছে। কিন্তু কি চাইছে তা বেশ বুঝতে পারছে রাজ।

– নাইটড্রেসটা তুমি আজ পড়াবে।
– কি?
– হ্যাঁ। চোখ তো তার জন্যেই বেঁধে দিলাম। চোখ বন্ধ করেই পড়িয়ে দাও।

রাজ কথা না বাড়িয়ে, রানির কোমর ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। আস্তে করে রানির পোশাক গুলি রাজ খুলে নিল। রাজের হাতের স্পর্শে রানির শরীর শীতল হয়ে যেন জমে যাওয়ার উপক্রম। রাজ খুব যত্নে তার প্রাণোসী কে নাইটড্রেসটা পড়িয়ে দিল। তারপরে তার প্রাণোসীর ইচ্ছে পূরণ করার জন্যে কোলে নিয়ে নিল। আজ তাদের ভালোবাসার রাত। আজ কোনো দ্বিধা নেই। নেই কোনো পিছুটান, কোনো বাঁধা। আজ পূর্ণ ভালোবাসার রাত তাদের। আজ যে তাদের Marriage anniversary.. তাদের পূর্ণ মিলনের রাত।

ওরা ৩/৪ দিন এইভাবেই সুখে দিন কাটিয়েছে। পাহাড় দেখতে গিয়েছে, ঘুরাঘুরি করেছে। চাকমা, মারমাদের অনেক খাবার হোটেল থেকে খেয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মন মতো ঘুরতে পেরেছে রানি। এত দিনের ইচ্ছে যেন পূর্ণ হলো তার। এখানে এসে আল্লাহ সব চেয়ে ভালো ভালো জিনিস গুলি উপহার দিয়েছে তাকে। রাজের মতো একটা স্বামী যার জীবনে আছে, সে কি আর দুঃখে থাকতে পারে?

আজ তারা বাড়ি ফিরছে। মা বাবা অধীর আগ্রহে বসে আছে তাদের জন্যে। চমক অপেক্ষা করছে যে রানির জন্যে।

বাসায় যেতে যেতে তাদের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল।

মেইনডোর খোলা দেখে রানি বেশ অবাক হলো। এই সময় তো দরজা খোলা থাকার কথা নয়। আর এই ভরসন্ধ্যা বেলায় ঘর এতো অন্ধকার কেন? রানি কৌতূহলী হয়ে ঘরে ডুকল। লাইট টা রাজ অন করতেই রানির যেন চোখ কপালে। সামনের মানুষের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সত্যিই কি সে ঠিক দেখছে? বিশ্বাস করতে পারছে না রানি। এত কিছু এক সাথে পেয়ে যাবে ভাবতেই পারছে না। সামনে নিজের বাবা কে দেখে রানির চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখের সামনে দুই বাবা দাঁড়িয়ে আছে। এক জন নিজের জন্মদাতা বাবা। আরেকজন তার নিজের বাবার চেয়ে কম না। জন্মদাতা না হলেও নিজের বাবার চেয়েই মনে হয় বেশি। তার শ্বশুর। এমন শ্বশুর শাশুড়ি আর স্বামী পেলে জীবনে আর কিছু লাগবে না।

কান্না করতে করতে রানি নিজের বাবা কে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। কত দিন পর বাবা কে দেখতে পারছে। খুশির যেন রেশ কাটছে না তার। খুশির পর খুশি হয়ে যাচ্ছে সে। আল্লাহ যেন রানি কে দু হাত উজাড় করে খুশি দিয়েছে।

বাবা নিজের মেয়ে কে, বুকের মানিক কে কাছে নিয়ে খুশি তে কেঁদে দিল। বাবা মেয়ে কাঁদছে। সুখের কান্না কাঁদছে।

– কিরে মা নিজের বাবা কে পেয়ে এই বাবা কে ভুলে যাবি?

শ্বশুরের এমন কথা শুনে রানি উনাকে জড়িয়ে ধরল।

– আমি না আপনার মেয়ে? আপনাকে আমি ভুলতে পারি?
– এই তো আমার লক্ষ্মী মেয়ে। আমার ঘরের আলো। তুই কয়েকদিন ছিলি না। অনেক কষ্ট লেগেছে আমাদের।
– আর যাবো না।

– বাহ্ ভালো তো। দুই বাবা কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি? মা কে মনে রেখে আর কি করবি? থাক। বাবাদের নিয়েই বসে থাক।

– মা। তুমি রাগ করছো? তুমি না আমার মা। তুমি কেন রাগ করবে?
– ভুলে গিয়েছিস তো।
– কখনোই না।
– তাই বুঝি?
– হুম, হুম, হুমমমম।

– মাঝ খান থেকে আমাকেই ভুলে গেলো সবাই। বেশ বেশ। খুবই ভালো। সাধু সাধু। আমাকে মনে রেখে করবেন কি আপনারা? আমি কে? আমাকে মনে রেখে কিই বা করবেন?

– কে বলেছে বাবা? তোমাকে কেন ভুলব? তোমাকে কেউ ভুলেনি। ভুলবেও না। তোমার জন্যেই এত দিন পর মেয়েটাকে ফিরে পেলাম।

নিজের বাবার কথা শুনে রানি অবাক। তার মানে রাজই কি বাবা কে ফিরিয়ে আনল?

– কি বলছো বাবা?
– হ্যাঁ মা ঠিকি বলছি। আমাকে রাজ বাবা ভিডিও কল করে সবটা বলেছে। কি কি হয়েছে। সে নিজের কাজের জন্যে লজ্জিত। তুই ভুল কিছু করিস নি। রাজও না। হয়তো ভালোবাসার পাগল করা আবেগটা চেঁপে বসেছিল তার মাঝে। কাল রাতে গিয়ে তোর শ্বশুর শাশুড়ি আমাকে নিয়ে এসেছে এখানে।

পিছন থেকে রাজের বাবা বলে উঠল,
– হ্যাঁ রে মা আমাদের ছেলেটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তাই ওই সব কিছু করেছে। আগের সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু কর। রাজ বাবা আমাদের বারণ করেছিল বলতে। তাই কিছু বলিনি।

রানি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কি বলা উচিৎ লোকটা কে? এই লোকটাকেই সে খারাপ ভেবে কত কিছুই না করেছে। কতই না কষ্ট দিয়েছে।

– হয়েছে হয়েছে। রাজ বউমা কে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। খেয়ে নিবি।
– ঠিক আছে মা। রানি চলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামবে।
– ঠিক আছে।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই মিলে অনেক কথা বলেছে।

রাজ অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে প্রাণোসী আসার জন্যে। কিন্তু সে তো আসছেই না। রাজের যেন রাগ হচ্ছে।
যেই রানি ঘরে ডুকলো। সে গিয়ে আগে দরজা টা বন্ধ করে রানির হাতটা দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরল।

– হলো কি তোমার?
– এত দেরি কেন করেছো?
– বাবা মার সাথে কথা বলছিলাম।
– কেন? জানো না তোমার জন্যে ঘরে একজন অপেক্ষা করছে হয়তো।
– হুম জানি তো।
– তাহলে?
– তাহলে কি?
– কিছু না।

রাজ রানি কে কাছে টেনে নিল।

– সেদিন তুমি চেয়েছিলে। আজ আমি চাইছি। আমি আজ তোমাকে শাড়ি পড়াব।
– কেন?
– সেদিন তুমি কেন বলেছিলে?
– ইচ্ছে হয়েছিল। তাই।
– আজ আমারও ইচ্ছে হয়েছে তাই।
– ঠিক আছে চোখ বেঁধে…..
– না নাআ।
– কি না?
– তা হবে না।
– কি?
– হুমম। আজ আমি চোখ খোলা রেখে তোমাকে শাড়ি পরাতে চাই।
– না। প্লিজজজ।
– সুওও চুপ। মানে চুপ।

রাজ আলমারি থেকে একটা সাদা শাড়ি নিয়ে এলো। শাড়ি টা একদম দুধের মতো সাদা ধপধপে। ঠিক যেমন রানির শরীর টা তেমনি সাদা।

রাজ আলতো হাতে প্রাণোসীকে শাড়ি পড়াতে লাগল। রাজের ওমন ভালোবাসাতুত স্পর্শে রানি রাজের নেশায় ডুবে যাচ্ছে।
রাজ যখন নরম হাতে কুচি গুলি রানির মেদহীন পেটের পেটিকোটের ভিতর দিল। রানি যেন আরেক ধাপ কেঁপে উঠল। রাজের চুল গুলি নিজের আঙ্গুল দিয়ে চেঁপে ধরল। রাজ মুচকি হাসি দিয়ে রানির দিকে তাকাল। রানির চোখে মুখে নেশায় ভরপুর। রাজ খুব সুন্দর করে রানি কে শাড়ি পড়িয়ে দিল। আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে চুল গুলি ছেড়ে দিল। রানিও নিজেকে এই রূপে দেখতে লাগল।

– প্রাণোসী কে তো দারুণ লাগছে।
– তোমার জন্যেই তো।

রাজ তার প্রাণোসী কে কোলে তুলে নিল। কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল। ধীর পায়ে রানি কে নিয়ে বিছানায় গেল। সুখের রাজ্যে ডুবে আছে দুজন। যা ভালোবাসার দেশ। আজ তারা জীবনের সুখের অধ্যায় শুরু করবে। এত দিনের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে আজ সুখের অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে দুজন।

আজ এক #অবৈধ_বিয়ে বৈধ রূপ নিল। সব দিক থেকেই রাজ রানির অবৈধ_বিয়ে বৈধ_বিয়েতে পরিণত হলো।

সত্যিকারের ভালোবাসার সংসার গুলি এইভাবেই সুখের রাজ্যের রূপ ধারণ করুক।

—–সমাপ্ত—–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here