অবৈধ_বিয়ে #Sabriha_Sadi পর্ব : ২৭+২৮

0
454

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২৭+২৮

মিসেস মমতা চৌধুরী রান্নাঘরে রান্না করছিল।

রানি কে নিচে নামতে দেখে তিনি মুখে হাসি নিয়ে বলল,
– আয় মা এদিকে আয়।

রানি আস্তে আস্তে পায়ে মায়ের কাছে গেল।

– দেখলে তো তোমাকে আমি খাবার টেবিলেও তুই বলেছি, এখনো বলে ফেললাম।
– মায়েদের মুখ থেকে তুই টাই তো শুনতে ভালো লাগে মা। আমাকে আপনি তুই করেই বলবেন।
– না তা হবে না। আমি আমার মেয়েকে যখন যা ইচ্ছা তাই বলে ডাকব।
– ঠিক আছে মা।

ওদিক থেকে সোফায় বসে সাদমান চৌধুরী, পেপার পড়তে পড়তে তার স্ত্রী কে বলল, চা করে দেওয়ার জন্যে। তখন তার স্ত্রী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল,

– এই ভরদুপুর বেলায় আবার কিসের চা? একটু পরেই তো খাবে ভাত। তো এখন চা কেন?
– তোমার কি? আমার টাকা দিয়ে আমি চা খাবো। তাতে তোমার কি? নিজের বাপের বাড়ি থেকে আনো নাকি?
– কি বললে তুমি? তুমি আবারও আমার বাপের বাড়ির কথা বললে? থাকব না আমি। থাকব না আর তোমার ঘরে। অনেক হয়েছে। আর না। থাকবই না।
– তা যাবে কোথায় শুনি?
– যে দিকে চোখ যাই সেদিকে যাবো। তাতে তোমার কি?
– আমারই তো সব। তুমি কোথাও চলে গেলে আমারই তো কষ্ট হবে। আমার কষ্ট করে করে খুঁজতে হবে। আমাকে আর আমার ছেলে কে কষ্ট দিবে। তোমাকে খুঁজতে হলে আমার বেকার গাড়ির তেল ফুরোবে। আমার এই বয়সে কষ্টও করতে হবে। তাই গিয়ে আর দরকার নেই।
– হ্যাঁ। এই তো বলবে। সারাজীবন এই বলেই তো আটকালে। আমার হয়েছে যা।
– থাক আর তেলে বেগুনে জ্বলার দরকার নেই আমি চা খাবো না।
– আমাকে তুমি কি বললে? আমি তেলে…..

– থাক মা। থামুন। আমি করে দিচ্ছি চা বাবাকে। আমার মাথা টাও ধরেছে। আমিই করে দিচ্ছি।
– না মা থাক। তুমি বসো আমি করে দিচ্ছি।
– মা। কি বলেন এই সব? আপনি সরুন। আমি চা বানাই।
– ঠিক আছে মা। আমার লক্ষ্মী মেয়ে।

চা বানিয়ে রানি নিজের জন্যে এক কাপ। আর তার শ্বশুরের জন্যে এক কাপ নিয়ে উনার কাছে গেলেন।

– এই নিন বাবা আপনার চা।
– ধন্যবাদ মা। দেখেছো তো? সবটা সময় আমার সাথে তোমার মা পায়ে পা লেগে ঝগড়া করে।
– কি বললে তুমি আমার নামে?
– কিছুই না। বললাম আমার বউ ভালো।

বলতে বলতে সাদমান চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিল।

– শুনছো মমতা। তোমার হাতে চা খেয়ে খেয়ে মুখের স্বাদ চলে গেছে। এখন থেকে আমার মেয়েই আমার জন্যে চা বানাবে। চা তো নয় যেন অমৃত।
– ফের যদি শুনি তোমার মুখ থেকে আমাকে চা বানানোর কথা বলেছো তখন হবে।
– যাও যাও। আর বলবোই না।
মা চা খুব ভালো হয়েছে।

উত্তরে রানি শুধু একটা মুচকি হাসি দিল।

– বউ মা। যাও রাজ কে ডেকে আনো। খাবার খাবে।
– ঠিক আছে মা।

রানি গিয়ে দেখে রাজ বেঁহুশের মতো ঘুমাচ্ছে। রাজের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

– শুনছেন?
-……
– কি হলো শুনছেন? মা ডাকছে।

রাজের তো হুম বলার নামই নেই। সে তো ঘুম দেশের বাসিন্দা। রানি এবার রাজের পাশে বসল। রানি কে ঢেলছে, ধাক্কা দিচ্ছে, আর ডাকছে।

হঠাৎ রাজ ঘুমের মাঝেই রানির হাতটা ধরে টান দিল। রানি ছিটকে গিয়ে রাজের বুকের উপর পড়ল। রাজ ঘুমাচ্ছে। রানি হা করেই তাকিয়ে আছে। সে যেন রাজের স্নিগ্ধ মুখের স্নিগ্ধতায় ডুবে আছে।

রানি অনেকক্ষণ রাজের বুকে এভাবেই পরে ছিল। রাজ একটু পর মিটমিট করে চোখ খুলে দেখল রানি তার বুকের উপর।
চোখ গুলির মাঝে যেন শান্তির ছাপ। দুজনে দুজনের দিকে এভাবেই তাকিয়ে ছিল।

রানি যখন বুঝতে পাড়ল। সে রাজের বুক থেকে তখন সরে এলো।

– মা ডাকছে। খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে। তারাতরি চলে আসুন।

কথা গুলি বলে রানি এক দন্ড না দাঁড়িয়ে বেড়িয়ে এলো। রাজ খুশি হয়ে মুখের কোণোয় এক চিলতে হাসি বিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেল।

রাজ গিয়ে দেখে সবাই খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে।

– কিরে বেটা। এত দেরি লাগে কেন?
– বাবা ঘুমে ছিলাম।
– ঠিক আছে। বসে পড় এখন।

সবাই কথা বলছে খাচ্ছে আর হাসছে। রানি ওদের ব্যবহার দেখে সত্যিই অবাক। এতটা হাসি খুশি করে জীবন কাটাচ্ছে। রানি চুপচাপ। রাজের দিকেও তাকাচ্ছে না। চুপ করে আছে। রাজ বিষয়টা খেয়াল করছে। রাজ তার বাবা মার সাথে কথা বলছে আর রানির দিকে খেয়াল করছে। রাজ তার মা কে ইশারা দিল রানি কে দেখার জন্যে।

– মা। মন খারাপ?
– কই মা। না হতো।
– কথা বলছো না। চুপচাপ।
– এমনি মা।

রাতে,,
রানি ঘরে গিয়ে দেখে রানি বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রানিও সেখানে গিয়ে পাশে দাঁড়াল।

– বাবা মা অনেক ভালো। মন টাও ওদের অনেক ভালো। ওরা সব সময় এমম ভাবেই হাসি খুশি থাকে তাই না?
– হুম।
– ওদের সম্পর্ক দেখলে মনেই হবে না ওদের এত বছরের সংসার। সদ্য মনে হয়। তাই না?
– হ্যাঁ। বাবা মা কে খুব ভালোবাসে। মাও বাবাকে। দুজন দুজনের জীবন। দুজনই দুজনের খেয়াল রাখে। আমি এত বছরেও একবার দেখিনি বাবা মায়ের ঝগড়া। তবে সারাক্ষণ কথা কাটাকাটি করে। পরে বাবা এমন কথা শুনায় মার মন নরম হয়ে যায়। আর রাগ করে থাকে না। ওদের জীবন এই ভাবেই চলছে।
– ওদের সাথে থাকলে আমার মনেই হয় না এটা শ্বশুর বাড়ি। মনে হয় নিজের মা বাবা।

“শ্বশুর বাড়ি” কথাটা শুনে রাজ একবার রানির দিকে তাকাল। রাজের তাকানো দেখে রানি বেশ লজ্জা পেল। লজ্জায় মনে হচ্ছে মাটিতে মিশে যাবে। হঠাৎ রাজের সামনে কি একটা কথা বলে ফেলল। মুখ ফসকে বেড়িয়ে পড়ল কি করে এমন একটা কথা। রানি নিজেই ভাবতে থাকে তার কান্ডের কথা।

– তুমি তো আমাকেই মানো না। শ্বশুর বাড়ি মানো?
-…….
– উত্তর দিলে না যে।
– আমি নিজেই তো অনেক উত্তরের অপেক্ষা করছি। আমার উত্তরের উপর অনেক কিছু নির্বর করছে।
– অপেক্ষা করো উত্তর পেয়ে যাবে।

সেই সময়ই নিচ থেকে মার কন্ঠ ভেসে এলো।

– রাজ কই গেলি? তারাতরি খেতে আয়। বউ মা সাথে নিয়ে আসবি তো নাকি?

– চলো মা ডাকছে। খেয়ে নিবে।
– বাবা মা অনেক টা ভালো। এমন মানুষ হয় না। এক জনের জন্যে অন্যেরাও বসে থাকে।
– হুম। এখন তোমার জন্যেই বসে থাকে।
– আমি এখানে বলে ওরা?
– বাবা এমনই একজন কে রেখেও খাবার শুরু করবে না।
– চলুন।
– হুম চলো।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই মিলে কিছুক্ষণ হাসি, কথা আড্ডা দিয়ে রানি উপরে চলে গেল।

বিছানা ঠিক করছিল এমন সময় রাজ রুমে ডুকল।

– আমাকে তো সোফাতেই শুতে হবে। কপাল আমার।
– আমি বললাম এটা? ঝগড়া করবেন নাকি এই সব নিয়ে?
– তুমি তো মায়ের মতোই পায়ে পা লেগে ঝগড়া করুন।
– মার সাথে বাবা যেমন করে কথা বলে ঝগড়া করে দেখছি আপনিও তেমনই করছেন।
-…..

রাজ কথা না বাড়িয়ে একটা বালিশ নিয়ে সোফার দিকে হাটা দিল।

– বলছিলাম কি, মাঝখানে কোল বালিশটা দিয়ে বিছানায় শুয়া যায় না?
– তুমি বলছো শুবো?
– আশা করি কানে কম শুনেন না ইুঁদরের মতো।
– কেন কাছে পেতে ইচ্ছে করে বুঝি?
– ছিঃ। লজ্জা করে না আপনার? কি যা তা বলছেন? নিজেকে সবার মতো ভাবেন। লম্পট কোথাকার।
– কি বললে তুমি আমাকে?

– কাছে আসছেন কেন? সরে যান। আমি যা বললাম ঠিক বললাম। আপনি একটা আফ্রিকার গরু।
– আমাকে না জেনে তুমি লম্পট বললে। তা লম্পটতা একটু দেখাই।
– মাআআ।

রাজ দৌড়ে গিয়ে রানির মুখ চেঁপে ধরল।

– আরে আরে করছো কি তুমি।
– হুমহু হুমহুমমম।
– চুপ। ছাড়ছি আমি। মাকে ডাকলে মুখ বেঁধে রাখব কিন্তু।

রানির চুপ করে গেল।
রাজ আস্তে আস্তে রানির মুখ থেকে নিজের হাত সরাল। রানি জোরে নিশ্বাস ত্যাগ করল। মনে হয়েছে দম টা যেন বন্ধ হয়ে যাবে তখন।

– চুপপ। একটা কথাও বলবে না। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরো।
– আপনি কি সোফায় ঘুমাবেন?
– আমার জায়গা ওখানেই।

রাজ তাচ্ছিল্য হাসি দিল। কথাটা রানির বুকে লেগেছে।

– আপনি বিছানায় শুতে যাবেন?
– থাক। তোমার সোফায় ঘুমাতে সমস্যা হবে। কষ্ট হবে তোমার।
– দুজনেই না হয় বিছানায় শুই?

রাজ একবার রানির দিকে তাকাল।

– না মানে মাঝে কোলবালিশ থাক।

রাজ কথা না বাড়িয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ল। রানিও বালিশটা মাঝে দিয়ে শুয়ে পড়ল। রানি চিন্তার দেশে ডুব দিল।

আপর দিকে রাজ শুয়ে এক হাত কপালে ডেকে ভাবনার জগতে পারি জামাল। রাজ ভাবতে লাগল, রানির ব্যবহার নিয়ে। রানির ব্যবহারে রাজ অনেক টা অবাক। আগের থেকে অনেকটা স্বাভাবিক ব্যবহার করে। তার জন্যে রানির চোখ মুখে কেমন একটা মায়া দেখে সে। রানি এখন তার জন্যেও চিন্তা করে। যা রাজ নিজেও এখন বুঝতে পারে। রাজ ভাবছে, রানির কাছ থেকে তাকে ভালোবাসা পেতেই হবে। “ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করতে হবে।” রানির উপর সে এখন থেকে জোর করবে না। “রাজ ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা নিবে রানির কাছ থেকে।”

– মিসেস চৌধুরী, কাল থেকে আপনি রাজ চৌধুরীর অন্য রূপ দেখবেন। দেখবেন রাজ চৌধুরী ভালোবাসতে জানে। আমি আমার প্রাণোসীর কাছ থেকে ভালোবাসা নিজেই আদায় করব।

মনে মনে কথা গুলি বলে, রাজের মুখে হাসি ফুটে উঠল। রাজ মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে চোখ বন্ধ করল।

সকালে,,
রানি ঘুম থেকে উঠল। ঘুম ঘুম চোখে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে এতো সকালে রাজ তার পাশে নেই।

তাকিয়ে দেখল রাজ ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। রানি বুঝতে পারে না বেকার মানুষের এত কিসের কাজ? ল্যাপটপ নিয়ে কি কাজ করে? অফিস নেই। কিছু নেই। কি করে ল্যাপটপ নিয়ে?

রাজ তার প্রাণোসীর দিকে তাকিয়ে মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলল,
– সুপ্রভাত।

রানি উত্তর দিল শুধু হুম।

আর কোনো কথা না বলেই রানি ওয়াশরুমে ডুকে গেল।
নিজে নিজেই বলতে লাগল,

– লোকটার হলো কি? এমনিতেই তো সব সময় গায়ে পড়ে থাকতে চায়। আমাকে স্পর্শ করতে চায়। কাছে আসতে চায়। আজ হঠাৎ কাছে না এসেই দূর থেকে সুপ্রভাত জানাল? উনি ঠিক আছে তো? এত ভালো মানুষি কেন আবার? আল্লাহ রহমত করো। দেখো যেন খারাপ কিছু না হয়। গন্ডারর মুখে যেন আমাকে পড়তে না হয়। আর যাই হোক রাক্ষসের মতো যেন গিলে না খায়। খোদা সহায় হও। দয়া করো।
দূর উনাকে নিয়ে না ভেবে ফ্রেশ হয়ে নেই। যত্তসব আজগবি কর্মকাণ্ড।

রানি ফ্রেশ হয়ে বাহির থেকে বের হলো। চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। হাল্কা মেরুন কালারের থ্রী পিজ পড়েছে। রানি কে যে মেরুনপরী লাগছে। রাজ চোখই সরাতে পারছে না।

আস্তে করেই রানির কাছে গেল। একটু না খুব কাছেই রাজ।

রাজ কে এত কাছে দেখে রানি চোখ বন্ধ করে নিল। রানির বন্ধ করা চোখ দেখে রানি মুচকি হাসল। রানির চুল থেকে টুপটুপ করে পড়া পানি গুলি রাজের হাতে উপর পড়ছে। রাজ হাসি মুখে নিজের হাতের উপর পানি গুলি নিল। হাত থেকে ফোটা ফোটা পানি গুলি রানির মুখের উপর ছিটকে দিল। রানি সাথে সাথেই চোখ গুলি খুলে ফেলল।

রাজ মুখে হাসি নিয়ে বলল,
– “আমার মেরুনরানি কে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে। সুন্দরের মাত্রা টা আরো বেড়ে গেল, ভিজে চুলের টুপটুপ করে পড়া পানি গুলিতে। আমার প্রাণোসী কে তো সব সময় মায়াপরী লাগে। কারণ আমার প্রাণোসীর বিচরণ আমার প্রাণ জুরে।”

কথা গুলি বলে রাজ চলে গেল। আর রানি তো থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হা করে রাজের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিল।

সে চিন্তায় পড়ে গেল, এটা রাজ তো? মানে রাজই তো? এতটা কাছে এসেও রাজ তাকে কিছু না করেই চলে যাবে তা রানি ভাবতেই পারছে না। এটা রাজ রূপি অন্য কেউ না তো? মানে রাজ এমন টা করল? সব টা যেন রানির পায়ের নিচ দিয়ে গেল। ভাবতেই পারছে না সে।

তাহলে সে নিজেই কি রাজের স্পর্শ মিস করছে? না না এমন টা হবে কেন? এমনটা হতেই পারে না।
রানি এই সব চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিল।

চলবে…….;

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২৮

নিচে নেমে গিয়ে দেখে, সবাই তার জন্যে অপেক্ষা করছে। চুপ করে রানি গিয়ে চেয়ারে বসে গেল।

রাজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুচকি হাসছে। রানি ভ্যাবাচেকা খাচ্ছে রাজের আচরণে। সে রীতিমতো বোকা হয়ে যাচ্ছে রাজকে দেখে। ভেবে পাচ্ছে না লোকটার হলো কি?

খাওয়া দাওয়া শেষ করে, রানি বাবা মার সাথে কথা বলছে আর রাজ উপরে চলে গেছে।
একটু পর রানিও উপরে গেল। যার যেই কাজ। রাজ এখনো ল্যাপটপ গিয়ে বসে আছে। নাছোড়বান্দা লোক একটা।

রানি ঘরে গিয়ে সেই কখন থেকে বসে আছে, লোকটা একবারও তার সাথে কথা বলে নি। কিছু জিজ্ঞেসও করে নি। কথা বলা তো দূরের কথা তার দিকে একবার তাকায় নি পর্যন্ত। রানি যেন রাগে ফুসতে থাকে।

না পেরে কর্কশ গলায় কাশি দিল। রাজ একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিল।

এবার রানি আরেক ধাপ রেগে গেল। আরো জোরে কাশি দিল।

রাজ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই তাকে বলল,

– কিছু বলবে?
-….
-….

রানি আর সহ্য করতে পারল না। বিছানা থেকে একটা বালিশ ছুড়ে মারল রাজের দিকে।

– আরে কি করছো?
-……. (রানি রাগে ফুসছে।)
– রাগপরীর রাগ হলো কেন? রাগলে যেন রাগপরী কে লাল টমেটো মনে হয়।
– কি বললেন আপনি?
– হুম।
– আমি লাল টমেটো? তাহলে আপনি কি? আপনি কি শুনি? আপনি তো একটা লাল পিঁপড়া, উল্লুক একটা, রামগরু কোথা কার। গন্ডার একটা আপনি।
– আচ্ছা রামছাগল শুনেছিলাম, কিন্তু তুমি রামগরু পেলে কোথায়?
– আপনি রামগরু। আপনি হাতির দাঁত। আপনি একটা অসভ্য ইতর জানোয়ার ছোটলোক, কুত্তা, খেঁকশিয়াল। গন্ডারের জম।
– আরে আরে থামো। এত বকলে তো আমার নিজেকে মানুষ বলেই মনে হবে না।
– আপনি তা মনে করেন?
– করব না কোন?
– কারণ আপনি মানুষই না। মানুষ হলে কি আমাকে চোখে পড়ত না? আমি সেই কখন থেকে ঘরে এলাম আপনি একটা কথাও বললেন না। মানুষ হলে তো নিশ্চয় বলতেন।
– তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না। আমার থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করো।
– তাই বলে কি কথা বলা যায় না?
– কথা তো তুমি বলতে চাও না। আমার কথাও তোমার ভালো লাগতে চায় না। তুমি তো তোমার মতোই থাকো। কেন আমার ওই পাগলামি গুলি মিস করো বুঝি?

রানি রাগে তার উপর আরেকটা বালিশ ছুড়ে দিল।

তারপর আলমারি থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে ডুকে গেল।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়েও দেখে যেই কে সেই। রাজ নাছোড়বান্দা এখনো ল্যাপটপের সামনে।

রানি ভিজে চুল গুলি মুছতে লাগল। আর আড় চোখে রাজ কে দেখছে। রাজ তো একবারও তার দিকে তাকাচ্ছে না।

এবার রানি খুব জোরেই চুল গুলি ঝাড়তে লাগল। পানির ছিটেফোঁটা রাজের চোখ মুখে লাগল।

রাজ অনেকক্ষণ রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। ভিজে চুলে মেয়েটাকে এতো দারুণ লাগে কেন সে বুঝতে পারে না। মনে হয় যেন নেশার জগৎ। “এ জগতে পা দিলে হয়তো সুখের রাজ্যে ভাসবে নয়তো নরকের আগুনে পুড়তে হবে।”

রাজ একটা হাসি দিয়ে ল্যাপটপ টা রেখে দিল।

রানি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সেও রানির পিছনে গেল। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে হাত দিয়ে আয়নার মধ্যে দেখাল বেশ দারুণ লাগছে।

আরো একটা হাসি দিয়ে রাজ কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেল।

রাজের কাজে সে অবাক না হওয়ার উপায় নেই। যে মানুষটা প্রতিদিন ভিজে চুলে তার গালে কপালে একটা চুমু এঁকে দিত। ভালোবাসার পরশ টা না দিলেও ভিজে চুলে তাকে দেখলে একবার তার কাছে আসত। নয়তো বা ভিজে চুলের ঘ্রাণ নিত। সে কিনা আজ এমন কিছু না করে ওই রকম অদ্ভুত একটা কাজ করে চলে গেল?

রানি হা করে তাকিয়ে আছে। যেন মুখে এই মশা ঢুকবে।

রাজ নিচে নেমে দেখে, তার প্রাণোসী আর মা এক সাথে কাজ করছে। বাবা টিভি দেখছিল। রাজও সেখানে গিয়ে বসল।

– রাজ একটা কথা ছিল।
– হ্যাঁ বাবা বলো।
– দেখ বাবা অনেক তো হলো। অনেকদিন তো তুই অফিসে যাস না। প্রায় দুই বছর হলো তুই অফিস যাস না। আমিও আজকাল যেতে পারি না। বয়স হয়েছে তো। তুই এবার থেকে অফিস যাওয়া শুরু কর বাবা।

বাবার এমন কথা শুনে রান্নাঘর থেকে রানি অবাক। কি বলছে? উনি অফিস করত?

– মা।
– হুম মা বলো।
– বলছিলাম কি, আপনার ছেলে কি আগে অফিস করত? মানে..
– হ্যাঁ মা। ও আগে ওর বাবার অফিসে যেত। সব কাজ নিজে করত। ওর জন্যে ওর বাবা ব্যবসায় নিয়ে এতো চিন্তায় করতো না। নিজেই সব টা সামলে নিত। তুমি ভাবতে পারবে না ও কতটা কাজ পাগল ছেলে। দিনরাত অফিস থাকত। রাত ১১/১২ টায় এসে সকাল ৮ টার আগেই চলে যেত। ওর জন্যে অফিসের সব কর্মচারী বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ করত। ভয় পেত অনেকটা। কাজ শেষ না হলে মনে হয় মাথায় আগুন লাগত তার। কাজ ছাড়া থাকতেই পারত না। কি থেকে কি হয়ে গেল। দুই বছর হয়ে যাচ্ছে অফিসে যায় না।

রানি বেশ অবাক এমন কথা শুনে। এই তাহলে এত ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকার কারণ। রানির একবার মনে হয়েছিল মার কাছে রাজের সব টা জানতে চাইবে। পরে আবার মত পালটে ফেলল। কারণ রাজ নিজেই ওকে বলেছে সে বলবে। রানি যদি এমন কিছু মা কে বলে তাহলে হয়তো উনি রেগে যাবে। এটা ভেবেই কিছু বলতে চেয়েও বলল না।

– বাবা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু….
– আর কোনো কিন্তু নয়। তুই আমার এ কথাটা রাক বাবা। না হলে অফিসটা শেষ হয়ে যাবে।

রাজ অনেক ভেবে বলল,

– তুমি আর ম্যানেজার মিলে চিটাগাং এর অফিসটা সামলাও। আমি না হয় ঢাকার অফিসটা দেখে নিব। এখানের অফিসটা আমি তোমাদের সাথে যোগাযোগ রেখেই সামলাব। তুমি শুধু কিছুদিন পর পর গিয়ে দেখে আসবে।
– ঠিক আছে বাবা। তুই আমায় বাঁচালি। তবে একটা কথা।
– আবার কি কথা বাবা?
– তুই আগের মতো অফিস যাবি। আর কাজ করবি সবটা সামলাবি।
– আচ্ছা দেখি।
– দেখি না যা বললাম তাই।
– ঠিক আছে বাবা তাই হবে। ও মা খেতে দাও খিদে লেগেছে তো।

– হ্যাঁ লাগবেই তো বউ রান্না করেছে না আজ খিদে তো লাগবেই।

মায়ের কথা শুনে রানি লজ্জায় মাথা নিচু করল।

– মা। আমি কি জানি নাকি আজ ও রান্না করেছে। ওকে যাও খিদে নেই খাবো না আমি।
– চুপ কর। খেতে আয় খাবার দিচ্ছি।

সবাই খেতে বসে পড়ল। খাবার খাচ্ছে আর রানির প্রশংসা করছে।

বাবা বলছে,
– আমার মেয়ে তো খুব ভালো রান্না করে। খেয়ে তৃপ্তি মিটছে।

মা বলছে,
– সত্যিই রান্নাটা বেশ লাগছে। আমাকে তো কিছু করতেই দিল না। সবটা নিজেই রান্না করেছে।

ওদিকে রাজ বলে উঠল,
– দেখতে হবে না বউ কার।

রাজের এমন কথায় মা বাবা হেসে উঠল। আর রানি লজ্জায় মিশে যাচ্ছে। লোকটার মুখে কিছু আটকায় না।

– তুই তো দেখি আমাকে কপি করিস।
– কি বলো বাবা।
– ঠিকি তো বললাম, জানিস আমিও তোর মাকে এই একই কথা বলতাম। হাহাহাহা।
– চুপ করবে তুমি। নাকি আমি উঠে যাবো।
– না না লক্ষ্মী টা চুপ করছি। তুমি খেয়ে না।
– মুখে কিছু আটকায় না তোমার যত্তসব।

ওদের কথা শুনে এবার রাজ রানি মুচকি মুচকি হাসছে।

রাতের খাবার খেয়ে রাজ এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল। পিছন থেকে রানি বলে উঠল,

– আপনি ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করেন?
– মার থেকে হয়তো অনেক কিছু জানা হয়ে গিয়েছে তাই না?
– তেমন কিছু না। আপনি আগে অফিস যেতেন শুধু এই টাই জানলাম।
– হুম আমি ল্যাপটপে অফিসের কাজই করি। দুই বছর ধরে আমি অফিস না গেলেও কাজ করছি। কারণ এটা গুলি বাবার কষ্টের দাম। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই গুলি তৈরি করেছে। তাই উনার স্বপ্ন টা পূরণ করতে চাইছি। আমি দুই বছর এই ভাবেই ল্যাপটপ দিয়ে সব কাজ করি। সব খবর এভাবেই রাখছি।
– আপনি ঠিকি আপনার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন। অথচ আমি? আমি পারছি না।

কথাটা বলেই একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিল রানি।

– বাদ দিন। এই দুই বছর আপনি অফিস যান নি কেন?
– অফিস গিরেই তোমার সব উত্তর। ওখানেই তোমার সব উত্তর জমে আছে। তবে আর থাকবে না। আমি উত্তর দিয়ে দিব। শুধু আর একটু অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে।
– এখান বললে কি হয়?
– সব কিছুর সময় আছে। আশা করি বুঝবে আর অপেক্ষা করবে।

রাজ আর কথা না বলে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ল। রানিও লাইট টা অফ করেই বিছানার অন্য পাশে গা এলিয়ে দিল।

তবে এত কিছুর পরেও মাঝে একটা দেওয়াল হয়েই গেল।

রানি চাইলেও পারছে না এক হতে। রানির প্রশ্নের বাঁধা রাজের সাথে তাকে মিলে মিশে একাকার হতে দিচ্ছে না।

দিন এইভাবেই যাচ্ছে। রাজ এক অন্যরকম ভালোবাসার মাঝে তার প্রাণোসী কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে।
রাজের আর কোনো পথ ছিল না। নিজের প্রাণোসীকে সারাজীবন আপন করে রাখার জন্যে এত কষ্ট টা রানি কে দিতেই হতো। রাজ তো এত দিন পাগলের মতোই ভালোবেসে রানি কে। এবার তার থেকে এক সাথে থেকেও দূরে দূরে থাকছে। এই দূরত্বে যদি রানি একে বারে তার হয়ে যায়, সে তার প্রাণোসী কে এই কষ্ট টাও দিতে রাজি।

অন্য দিকে রানি আর যেন পারছে না। মনে হয় এখুনি তার দম টা বের হয়ে যাবে। রাজ তার থেকে দূরে থাকছে। হয়তো কাছে আসছে না। তবে তার খেয়াল টা ঠিকি রাখছে। রাজ তো তার সাথে ঠিক করেই কথা বলে। তার কোনো সমস্যা হলেও সে নিজে খেয়াল করে, যত্ন করে। আর কি? রাজ তার কাছে আসছে না, তাকে আর ভালোবাসছে না, আগের মতো তার উপর জোর খাটাচ্ছে না। এই জন্যেই তার মন খারাপ? রানি কি তাহলে এই গুলিই মিস করছে? রানি এই কষ্ট টাই অনুভব করছে?

রানি এই সব নিয়ে আর ভাবতে পারছে না।

যত দিন যাচ্ছে রানির মনে হচ্ছে সে সব কিছু হারিয়ে ফেলছে। জীবন থেকে অনেক মূল্যবান জিনিস সে হারাতে চলছে। রাজ কে যে সে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলছে। রানি আর সহ্য করতে পারছে না। সব মিলিয়ে সে হাপিয়ে উঠেছে। আর কিচ্ছু সহ্য করতে পারবে না।

গোধূলি লগ্নে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে একা একাই নিজের মন কে বলতে লাগল,

– পারবি না তুই রানি। পারবি না। উনাকে ছাড়া থাকতে তুই পারবি না। আমি কেন পারছি না উনাকে ভুল তে। উনার স্পর্শ, উনার রাগ, আমার উপর উনার জোর করা কেন মনে পড়ে আমার? আমি কেনই বা এই গুলি এখন সারাক্ষণ অনুভব করি। আমি উনার থেকে নিজেই আর দূরে থাকতে পারছি না। আমার জীবন থেকে উনাকে আমি হারিয়ে যেতে দিতে পারবো না আমি। প্রশ্ন গুলি না হয় আমার অজানাই থাক। “অজানা কিছু অনুভূতির মতো আমার প্রশ্ন গুলিও না হয় অজানার ভিড়ে হারিয়ে ফেলি?” তাতে যদি উনাকে জীবনে পাই ক্ষতি কি? নিজের মন কে তো শান্তু করতে পারব? নিজে তো শান্তি পাবো? এত কষ্ট তো আর সহ্য করতে হবে না? মন টা শান্ত থাকলে তো অনেক কিছু। মন ঠিক তো সব ঠিক। ভালোবাসার মানুষ টা তো কাছে পাবো। তাতেই হবে। আর কিছু চাই না।

চোখের পানি মুছে নিল রানি। আলমারির সামনে গিয়ে রাজের সেদিনের কিনে দেওয়া একটা শাড়ি হাতে নিল রানি। যে জানে রাজের সাদা রং টা বেশ পছন্দের। তাই সাদা পাতলা শাড়িটাই রানি নিল। মুখে এক চিলতে হাসি নি ওয়াশরুমে গেল।

সাদা শাড়িতে রানি কে বেশ লাগছে। চোখে কালো কাজল। চোখ দুটি যেন কালো রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তুলেছে।
ঠোঁটে লাল টুকটুকে লিপস্টিক। চুল গুলি ছাড়া। তাতে আজ দারুন লাগছে। নিজেই নিজেকে এ রূপে একবার আয়নার সামনে দেখে নিল।

রাজ তাড়াহুড়া করে ঘরে ডুক ছিল। ওমন সময় চোখ যায় রানির দিকে। চুল গুলি হাত খোঁপা করছে। ইসসস,, সাদা পাতলা শাড়ির ফাকে সাদা দুধের মতো ধপধপে পেট টা যেন চাঁদের মতো ভেসে উঠল। রাজের নজর যেন রানির চাঁদ মাখা পেটের দিকে। রানির মুখে এক চিলতে হাসি।

রাজ মনে মনে বলতে লাগল,

– “মেয়েটা কি পাগল নাকি? এই ভাবে কেউ সাদাপরী সাজে? আমি যে নিজে কে আর নিজের মাঝে রাখতে পারছি না। এত দিন নিজেকে যে কষ্টে ঠিক রেখেছি আজ কি সব টা এই মেয়ে নষ্ট করে দিবে নাকি? আমার মাঝে যে নেশা উঠে যাচ্ছে। আমার প্রাণোসী কে য়ে আজ সাদাপরী লাগছে। খুব করে টানছে যে।”

রানি লজ্জা মাখা মুখে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ তাকে খুব নজর দিয়ে দেখছে। তবে সাদা পাতলা শাড়ির উপর দিয়ে মেদহীন চাঁদের মতো পেট টাই ভেসে উঠছে। রাজ কে রানির ওই চাঁদের মতো পেট আর কাঁপা কাঁপা লাল টুকটুকে ঠোঁট গুলি খুব টানছে।

রাজ আস্তে পায়ে রানির দিকে এগিয়ে গেল। রানি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজেও অনেকক্ষণ কাছ থেকে তার সাদাপরী কে দেখছে।

রানি মনে মনে ভাবছিল, এই বুঝি রাজ তার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিবে। তবে যা ভেবে ছিল তা হলো না।

রাজ এক হাতদিয়ে যথেচ্ছ দূরত্ব বজায় রেখে রানির হাত খোঁপটা খুলে ফেলল। মুখের কোণায় হাসি নিয়ে বলল,

– এবার ঠিক আছে।

রানি অনেকটা অবাক। রাজ আর কিছু না বলে চলে যেতে নিল।

পিছন থেকে রাজের হাত টা রানি খপ করে ধরে নিল।
ছলছল চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে রানি। রাজ রানির এমন রূপ দেখে বুকের ভিতর তার চিনচিন ব্যথা হচ্ছে।

– আমি আজ আপনার কাছে আমার অধিকার চাই।

রাজ যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। যা চেয়েছিল সে আজ তাই পেলো? রাজ রানির কথা শুনে যেন বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

– রানি নিজেকে ঠিক করো। প্লিজ।
– আমি স্ত্রীর অধিকার চাই। আপনি দিবেন কি না।
– রানি শুনো আমার কথাটা…
– আপনি দিবেন কি না।
– রানি প্লিজ….
– আপনি দিবেন না তো? (অনেকটা জোরেই কথাটা বলল রানি)
– আমি দিবো। (চিৎকার দিয়ে বলল)
আমি দিবো। তোমাকে তোমার অধিকার দিবো। কিন্তু আমি চাই না তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর না জেনে আমাকে মেনে নাও। এখন তুমি কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমাকে কাছে পেতে চাইছ। কিন্তু কিছু দিন পর আবার তোমার মনে এমন প্রশ্ন উঠবে। দ্বিধা না কাটলে কিছু ঠিক হয় না। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে তুমি থাকতে পারবে না কিছুদিন পর আবার অশান্তি হবে। তার থেকে আর কয়েকটা দিন সময় দাও আমি সব টা বলব তোমাকে। তারপরেই কাছে টেনে নিব।

রাজ চলে যেতে নিলেই রানি তাকে জড়িয়ে ধরে।

– “আমি প্রশ্নের উত্তর চাই না। প্লিজ আমাকে আর নিজের থেকে দূরে রাখবেন না। এই কয়েকটা মাস আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। নিজের মন কে বুঝিয়ে আজ আপনার কাছে এসেছি। আপনি ফিরিয়ে দিবেন না আমাকে। আমাকে আর কষ্ট দিবেন না আপনি।”

কান্না করতে করতে রাজকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলি বলল। রাজ তার প্রাণোসীর কান্না সহ্য করতে পারছে না। রানি কে ছাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্যে পিছন ফিরল।

রানি সাথে সাথে নিজের পড়নের শাড়ি খুলে ফেলল। শরীর তার শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট জড়িয়ে আছে। চোখে টলমল করা পানি।

রানি কে এই ভাবে দেখে রাজ যেন সব কিছু হারিয়ে ফেলছে। দুনিয়া যেন উল্টেপাল্টে যাচ্ছে তার।

– আপনি আমাকে আজ কাছে টেনে নিবেন কি না। না নিলে আজ আমি এইভাবেই নিচে নেমে যাবো। বাবা মা আছে, আশা করি কি হবে বুঝতেই পারছেন।

“প্রতিটা মানুষের সব চেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তার ভালোবাসার মানুষ।” রাজেরও তাই। আর ভালোবাসার মানুষ কে কষ্ট পেতে দেখলে সহ্য করা যায় না।

রাজ এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে। রানি কে নিয়ে এক টানে বিছানার উপর নিয়ে গেল। নিজের হাত প্রাণোসীর চুলের ফাঁকে বিলিন করে দিল। পাগলের মতো রানির ঠোঁট গুলি নিজের করে নিল। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে রানির ঠোঁট গুলি। পাগলের মতো কিস করছিল রানির ঠোঁটে।

চোখ বেয়ে রানির পানি গড়িয়ে পড়ছিল। রাজ রানি কে ছেড়ে দিল।

– দেখলে তো রানি, তুমি মন থেকে সব টা মানতে পারছো না। আমি তোমাকে পরেই নিজের করে নিব। যেদিন সব টা মানতে পারবে। আজ মানতে পারছো না বলেই তোমার চোখে পানি।

রাজ বিছানা থেকে উঠতে নিলেই রানি রাজের ঠোঁটে ঠোঁট মিশাল। পরম ভালোবাসার সাগরে ডুবে যাচ্ছে দুজন।

মাঝরাতে রাজের ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ গেল রানির উপর। কি সুন্দর গুটিশুটি মেরে তার বুকের উপর ঘুমাচ্ছে। কি মায়াবী যে লাগছে তা না দেখে বলা যায় না।

সত্যি কথা, “ভালোবাসার মানুষটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলে এমনিতেই মায়াবী লাগে।”

ঘুমন্ত রানির মাথায় রাজ হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– আমি তোমার মনের দ্বিধা দূর করবোই করব। তোমাকে নিজের করে নিব প্রাণোসী। তোমার মনের সব টা জুরে আমি থাকব।

সকালে,
রানি ঘুম থেকে উঠে দেখে রাজ এখনো ঘুমে। জড়িয়ে রেখেছে তাকে। রানি ঘুমন্ত রাজের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে নেমে গেল।

গোসল করে ভিজে চুল নিয়ে রাজের কাছে গেল।

দুষ্টুমি করে তার চুল রাজের মুখের উপর রাখল। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে রাজের মুখের উপর। রানি খিলখিল করে হাসছে।

রাজ চোখ মেলে দেখে রানির খিলখিল করা হাসা মাখা চাঁদ মুখটা। রাজ তাকিয়ে আছে। যেন চোখের তৃপ্ততা মিটাচ্ছে। রাজ রানির কোমর ধরে তার বুকের উপর ফেলল।

– প্রাণোসী ঘুমাতে কেন দিচ্ছে না?
– কারণ সকাল হয়েছে। তাই।
– তাতে কি একটু ঘুমাই না প্লিজ?
– না। এখুনি উঠুন।
– পরে। তুমি মার কাছে যাও।
– মাকে গিয়ে বলব?
– কি বলবে?
– মা কে গিয়ে বলি, মা আপনার ছেলে রাতে বাড়ি আসেনি। এখন পড়েপড়ে ঘুমাচ্ছে।

রানির মিথ্যে কথা শুনে রাজ হা।
– রাতে আমি বাড়ি ছিলাম না?
– না।
– তাহলে আদর কে করল শুনি?
– কই কেউ না?
– ও তাই? তাহলে এখন করি?
– মা কে ডাক দিচ্ছি। মা মআআআ আপনার ছেলে রাতে বাড়ি ফির…..
– আরে আরে করো কি? তুমি না আমার লক্ষ্মী বউ। প্লিজ একটু ঘুমাতে দাও।
-…

রানি রাজের হাতে দিল এক কামোর।

– আহহহ।
– আমার মুখ চেঁপে ধরে চিলেন তাই দিলাম। এখন না উঠল আমাকে গিয়ে বলে দিব।
– উঠছি উঠছি। সব বউয়েরা এক হয়। সকালে কোনো বউ ঘুমাতে দেয় না। কোন জল্লাদীয় বউ আমার আল্লাহ জানে।
– কি বললেন আপনি???
– না না। কিছু না।

রাজ দৌড়ে ওয়াশরুমে ডুকল।

সবাই মিলে বেশ ঝমঝমিয়ে খাবার খেলো।

– রাজ।
– হ্যাঁ বাবা।
– বউ মা কে নিয়ে এদিকে আয়। কথা আছে।
– ঠিক আছে বাবা। রানি বাবা ডাকছে।

রাজ রানি পাশাপাশি বসে আছে। অন্যদিকে বাবা মা এক সাথে আছে।

– কি বলবে বাবা?
– দেখ বাবা তোদের বিয়ে তো অনেক দিন হলো। আমি আর তোর মা একটা অতিথি চাই। তোমরা এবার আমাদের একটা নাতিনাতনি দাও। বুড়ো হয়েছি একা একা আর ভালো লাগে না। এবার আমাদের একটা নতুন অতিথি লাগবে।

বাবার কথা শুনে রাজ বিষশ খেলো। রানি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। মা রাজের সামনে পানি ধরল।

– নে পানি খা। তারপরেও আমাদের আশা পূরণ কর বাবা।

– মা আমি আসছি আমার উপরে একটু কাজ আছে।

রাজ কে একা রেখে রানি উপরে চলে গেল।

– দেখলি তো তোর বউ লজ্জা পেয়েছে। লজ্জা পেলে হবে? এবার সত্যিই একটা বাচ্চাকাচ্চা নে।

– হ্যাঁ। হুমম মা। দেখছি।

রাজ পানি খেয়ে নিল। এক টানে গ্লাসের সব টা পানি শেষ করে নিল। খুব নার্ভাস লাগছে নিজেকে। কত কত অফিসের কাজ করেছে। কত বড় বড় মিটিং করল কোনো দিন সে নার্ভাস হয় নি। আজ সে কি না একটা বাচ্চার কথা শুনে পানি খেতে খেতে তার জীবন শেষ।

মনে মনে বলতে লাগল,,

– বাচ্চা কি শুধু আমি দিব? আমি একা কি বাচ্চা এনে দিব? যে বাচ্চার মা হবে যে জন্ম দিবে সে নিজেই তো হনহন করে উপরে চলে গেল। আমি একা কি করব? আল্লাহ। কি বউ আমার। আমাকে এই ভাবে ওদের মাঝে রেখে চলে গেল। ইচ্ছে করছে মা বাবার সামনে বেঁধে রেখে জোর করে ওদের কথা শুনাই। আমি একা কেন শুনব?

চলবে….

(আসসালামু আলাইকুম। গল্প যখন শুরু করেছি শেষ করবই। আর ২ পার্টের মাঝে শেষ করে দিব ইনশাল্লাহ। তবে আরো একটা গল্প আসছে, আশা করি সেটাও ভালো লাগবে আপনাদের।)

— হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here