অবাধ্য_পিছুটান #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_২৪

0
114

#অবাধ্য_পিছুটান
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_২৪

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

[ প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

তুর্য ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকালো আরুশের পানে। ছেলেটাকে সজাগ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে একটু চেপে বসলো পৃথার পানে। হাত বাড়িয়ে ঘুমন্ত পৃথাকে টেনে নিল নিজের কাছে।‌ ইসসস কি নরম, নমনীয় শরীর খানা। তুর্যের শরীর শিউরে উঠলো। স্ত্রীর শরীরের স্পর্শে হৃদস্পন্দন বাড়লো মুহুর্তেই। নিষিদ্ধ চাওয়ারা চনমনে হয়ে গ্রাস করলো মন মস্তিষ্ক। তুর্য ঢোক গিললো। নিজেকে সংযত করার চেষ্টা চালালো। কিন্তু বরাবরের মতোই হৃদয় তার বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। সে সান্নিধ্য চাইছে বউয়ের। তুর্য হাঁসফাঁস করে উঠলো। বিরবিরিয়ে বলল,

-“বউটাকে ভেবেছিলাম দেশি মুরগির বাচ্চার মতো হবে কিন্তু না এ তো দেখছি পল্ট্রি মুরগির বাচ্চার মতো। নাহ, অভদ্র বউটা আর আমার নিয়ন্ত্রণ রাখতে দিল না।”

এবার আর তুর্য নিজেকে সংবরণ করলো না। ঘাড় ঘুরিয়ে আরেকবার দেখে নিল আরুশকে। বোকা ছেলেটা এদিক ওদিক না তাকিয়ে দিব্যি এক ধ্যানে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। তুর্য আরও সুযোগ পেল। বউয়ের সুঢৌল নরম কোমড়খানায় নিজের পুরুষালি হাত চালিয়ে খুব সাবধানে নিয়ে নিল বাহুবন্ধনে। এই প্রথম কোনো নারীকে এতটা কাছ থেকে এতটা গাঢ়ভাবে ছুঁয়েছে তুর্য। বিদেশে অনেক নারীদের সাথে ওঠাবসা থাকলেও বউয়ের কথা ভেবে সর্বদা নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছে। সে না রাখতে চাইলেও তার মনটা জোর করে রাখিয়েছে। আজ প্রথম বউয়ের এতটা নিকটে এসে নিজেকে কেমন ভীত লাগছে তার। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেশ দেখা যাচ্ছে। একবার ভাবলো নাহ আজ এই পর্যন্তই থাক বাকিটা পরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যাবে কিন্তু মন মানছে না। পৃথার ঘুমন্ত মুখশ্রীটা খুব করে টানছে তুর্যকে। আবার মেয়েটার দিকে এগুতে গেলে হাঁটু কাঁপছে। কি একটা অবস্থা! শেষ পর্যন্ত হাঁটু দুটোও তার সাথে বেইমানি করছে। জীবনে কত বড় বড় কাজ করলো, কত গু’ন্ডা মা’স্তা’ন’কে মেরে শুইয়ে দিল তখন হাঁটু কাঁপলো না আর এখন মুরগির বাচ্চার মতো একটা বউয়ের সাথে একটু উষ্ণ সময় কাটতে এসে হাঁটু কাঁপছে? তুর্য রেগে গেল। হাঁটুর পানে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বলল,

-“বজ্জাত হাঁটু। একবার বাড়িতে যাই তোদের দুটোকেই কে’টে পানিতে ভিজিয়ে রাখবো বেয়াদব। কাঁপাকাঁপির আর জায়গা পাস না?”

থামলো তুর্য। গোল গোল চোখে নিজের হাঁটু দুটোর পানে তাকিয়ে বলল,

-“এই তোরা আবার আমার পুরুষত্বের পানে আঙ্গুল তোলার জন্য কাঁপাকাঁপি করছিস না তো? এইসব কাঁপাকাঁপি তো মেয়েদের স্বভাব। ভাগ্যিস বউটা আমার জেগে নেই নয়তো নির্ঘাত আমার পুরুষত্বের উপর প্রশ্ন তুলে জ্ঞান হারাতো।”

তুর্য ধাতস্থ করলো নিজেকে। জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে তাকালো বউয়ের মুখ পানে। মনের মধ্যে একটু সাহস জুগিয়ে আলতোভাবে নিজের কম্পমান ওষ্ঠজোড়া ছোঁয়ালো বউয়ের কপালে। ব্যস তুর্যের শরম ভেঙে গেল। আর একবার শরম ভাঙলে সে যে গরম হয়ে যায় তা জনগনের জানা কথা। এবার আর তুর্যের কাঁপাকাঁপি হলো না। হৃদয়ে বেশ উষ্ণ অনুভূতি নিয়ে একটু ঝুঁকে আলতোভাবে চু’মু খেল বউয়ের কোমল গালে দু খানায়, নাকের ডগায়, বন্ধ হওয়া চোখের পাপড়িতে। এরপর! এরপর বাকি রয়েছে পৃথার ঐ পদ্ম পাপড়ির ন্যায় গোলাপী কোমল ওষ্ঠজোড়া। এই ওষ্ঠের স্বাদ কেমন হবে? নিশ্চই মিষ্টি উষ্ণময় অনুভূতিপূর্ণ হবে। এই প্রথম কোনো নারীর ওষ্ঠে চু’মু খাবে তুর্য। দেহ মন শিহরনে অভিভূত হলো ছেলেটার। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তুর্য তাকালো পৃথার পানে। ধীরে ধীরে ঝুঁকে গেল মেয়েটার নরম ওষ্ঠের পানে। এই তো আর একটু হলেই দুজনের ওষ্ঠের মিলন ঘটবে। তুর্য নিজের ওষ্ঠে বউয়ের নরম ওষ্ঠের ছোঁয়া পাবে। ঠিক তখনই তরাক করে চোখ মেলে তাকালো পৃথা। তুর্যকে এত নিকটে থেকে বিস্মিত হলো মুহুর্তেই। তুর্যও বিস্ময়ের চড়ম পর্যায়ে। এমন একটা মুহুর্তেই মেয়েটার চোখ খুলতে হলো আরেকটু ঘুমালে কি এমন হতো? দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকালো দুজনের পানে। ছিটকে দুই দিকে সরে গেল দুজন। পৃথা তেতে উঠলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

-“আপনি! আপনি আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছিলেন ব্রিটিশ, অ’স’ভ্য পুরুষ?”

তুর্য অপ্রস্তুত হলো। প্রথমবারের মতো বউয়ের একটু কাছাকাছি গিয়ে এখন কিনা ঝাড়ি খেতে হবে? তবে সে নির্লজ্জ। আরুশ না থাকলে এসবে তার কিছুই আসতো যেতো না। বউয়ের ঝাড়ি খেতে খেতেও টপাটপ বউয়ের গালে দুই চারটা চু’মু বসিয়ে দিতো। লজ্জা তো প্রথম চু’মু’তে’ই ভেঙে গেছে। কিন্তু এই ব্যাটা আরুশের সম্মুখে বউয়ের ঝাড়ি খাওয়াটা দৃষ্টিকটু। এক প্রকার মান ইজ্জতের দফা রফা। নাহ বয়সে ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেদের সম্মুখে নিজের মান ইজ্জত এভাবে হারানো যায় না। নিজের অপ্রস্তুত ভাবকে নিজের ভিতরেই দাফন করলো তুর্য। গলা উঁচিয়ে পৃথাকে বলল,

-“আমি তোমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছিলাম নাকি তুমি আমার? ছিঃ বউ! কেবল আইনিভাবে বিয়েটা সাড়লাম একটু বাড়ি পর্যন্ত যেতে তো সময় দিবে তা নয় গাড়ির মধ্যেই। এই টুকু তর সইলো না তোমার?”

কথাটা বলেই তুর্য নিজের চোখ মুখে লজ্জালু ভাব ফুটিয়ে তুললো। লাজুক স্বরে বলল,

-“ইসস আমার এখন লজ্জা লাগছে। এই মুখ আমি আরুশকে কিভাবে দেখাবো।”

পৃথা যেন আকাশ থেকে পড়লো। সে আবার কি করলো? সে তো ঘুমে ছিল এতক্ষন। পৃথা হতবাক সুরেই বলল,

-“আমি কি করলাম? তাছাড়া আপনি আমার কাছাকাছি এসেছিলেন আমি না।”

তুর্য তাকালো পৃথার পানে। নিজের সিটের দিকে ইশারা করে বলল,

-“চেয়ে দেখো আমি আমার সিটের সাথেই বসেছিলাম তখন কিন্তু তুমি তোমার সিট থেকে সরে এসেছিলে। অর্থাৎ তুমি আমার দিকে এসেছো আমি তোমার দিকে ততটা আগাইনি। এখন তুমিই বলো কে কার কাছাকাছি গিয়েছিল?”

পৃথা তাকালো নিজের অবস্থানের পানে। স্মরনে আনার চেষ্টা করলো তুর্যের থেকে ছিটকে সরে আসার আগে নিজের অবস্থানের কথা। বেশ গভীর চিন্তা ভাবনায় সে খুঁজে পেল পৃথা নিজের সিট থেকে সরে গিয়েছিল। অর্থাৎ সে গিয়েছে তুর্যের কাছাকাছি। লজ্জা পেল পৃথা। ইসস সে ঘুমের মধ্যে কিনা একজন পুরুষের নিকট এভাবে চলে গিয়েছিল। তুর্য তাকে কি ভাবলো! নিশ্চই গায়ে পড়া মেয়ে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো পৃথা। আমতা আমতা করে বলল,

-“না মানে ঘুমের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম বোধহয়।”

তুর্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নিজেকে ভালো সাজিয়ে বলল,

-“আরে এ বিষয়ে তোমাকে কইফিয়ৎ দিতে হবে না কোনো। আমরা আমরাই তো।”

পৃথা আর কিছু বলল না। গাড়ির জানালার পানে মুখ করে তাকালো বাইরের দিকে। তুর্য স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো। ভাগ্যিস পৃথার দিকে মাত্র একটু খানি চেপে বসেছিল তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে পৃথাকে তার সিট থেকে সরিয়ে নিজের দিকে টেনে এনেছিল। তাইতো মেয়েটাকে এভাবে চুপ করিয়ে দেওয়া গেল। নয়তো তার মতো একজন সুপুরুষের মান ইজ্জতের এখন দফা রফা হয়ে যেতো।

২৭.
প্রায় শেষরাত। ঢাকার মতো ব্যস্ত কোলাহল পূর্ণ শহরটাও নিস্তব্ধতায় ঘেরা এই মুহূর্তে। পুরো শহর যেন গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। তুর্যদের গাড়িটা মাত্রই এসে থামলো চৌধুরী বাড়ির সম্মুখে। সময় ব্যয় না করে পৃথাকে নিয়ে দ্রুতই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো তুর্য। পৃথা গোল গোল চোখে তাকালো তার সম্মুখে দাঁড়ানো বিশাল বিল্ডিংটার পানে। কারুকার্য খচিত বেশ শৌখিন বিল্ডিংটা। বাড়িটা দেখেই মেয়েটা আন্দাজ করে নিল তুর্যদের অর্থবৃত্ত সম্পর্কে। পৃথারদের পরিবার বেশ সচ্ছল হলেও বর্তমানে তুর্যদের মতো হয়তো এত নয়। মেয়েটার হৃদয়ে কেমন ভয় কড়া নাড়লো। বিয়েটা সাত বছর আগে হলেও শ্বশুর বাড়িতে তার আসা এই প্রথম। হয়তো সাত বছর আগে এই বাড়ির মানুষ গুলোর সাথে পরিচয় ছিল তার কিন্তু এখন সবাই অপরিচিত। এদের কার চেহারা কেমন ছিল তাও খুব একটা স্মরণে নেই পৃথার। মেয়েটা অভিমানে নিজের পরিবার তো ছেড়ে চলে এলো কিন্তু এখন এই পরিবারের লোকেরা কেমন হবে, এত বছর পর তাকে মেনে নিবে তো নাকি জীবনে নেমে আসবে নতুন কোনো যন্ত্রনা। পৃথার ভাবনার মধ্যেই তার এক হাত ধরলো তুর্য। হয়তো বুঝলো সে পৃথার চিন্তা ভাবনা। ভরসা দিয়ে বলল,

-“ভয় পেও না। চলো আমার সাথে।”

কথাটা বলে আর সময় ব্যয় করলো না তুর্য। পৃথার হাত টেনে নিয়ে এলো বাড়ির সদর দরজার সম্মুখে। আরুশও এসেছে তাদের পিছু পিছু। তুর্য নিজের হাত উঠিয়ে বাড়ির কলিংবেলটা চাপলো। একবার, দুই বার, তিনবার__নাহ কেউ খুলছে না। হয়তো গভীর নিদ্রায় মত্ত বাড়ির সবাই। তুর্য আর অপেক্ষা করলো না। পকেট থেকে নিজের মুঠো ফোনটা বের করে কল লাগালো কাউকে। কল ধরার সাথে সাথে শুধু এইটুকু বলল,

-“তাড়াতাড়ি দরজা খোল।”

মিনিট দুইয়েকের মধ্যেই বন্ধ দরজাটা খুলে গেল। ওপাশ থেকে দেখা মিললো ঘুম জড়িত চোখ মুখের একজন যুবককে। বলিষ্ঠ দেহে এক খানা ধূসর বর্ণের টিশার্ট জড়িয়েছে আর পড়নে থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট, চুলগুলো উস্কো খুস্কো। মুখের আদলে অনেকটা তুর্যের সাথে মিল রয়েছে, তবে ফর্সাটা তুর্যের থেকে একটু কম। হবে নাই বা কেন তুর্য তো এত বছর বিদেশে ছিল আর এ ছেলে দেশে। ছেলেটা অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে তুর্য এবং পৃথার পানে। তুর্য ভ্রু কুঁচকালো। কন্ঠে কিঞ্চিৎ ক্রোধ নিয়ে বলল,

-“তোর দামড়ার মতো দেহটা নিয়ে দরজার সম্মুখ থেকে সরে দাঁড়া তৌফিক আমি ভিতরে ঢুকবো।”

ভাইয়ের কথায় টনক নড়লো তৌফিকের। নয়তো এত রাতে ভাইয়ের পাশে এক রমনীকে দেখেই নিজের হুশ খেয়াল হারিয়ে ফেলেছিল ছেলেটা। তৌফিক তড়িঘড়ি করে দরজার সম্মুখ থেকে সরে দাঁড়ালো। তুর্য সেদিকে একবার তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো পৃথার পানে। আদেশের সুরে বলল,

-“আমি না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে।”

কথাটা বলে তুর্য লম্বা লম্বা পা ফেলে গেল ভিতরের দিকে। একেবারে মা বাবার কক্ষের সম্মুখে গিয়ে পা থামালো তার। এত রাতে যদিও মা বাবার কক্ষে এভাবে টোকা দিতে ইতস্তত লাগছে তবুও উপায় নেই। তুর্য আলতোভাবে টোকা দিল বন্ধ দরজায়। মৃদু স্বরে ডাকলো,

-“মা! মা!”

ভিতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ এলো না। এবার তুর্য একটু জোরেই টোকা দিল দরজায়। গলা বাড়িয়ে ডাকলো,

-“মা! ও মা!”

এ পর্যায়ে দরজা খুললেন তাহমিনা বেগম। সম্মুখে এত দিন পর এত রাতে ছেলেকে দেখেও চমকালেন না একটুও। বরং বিরক্তি নিয়ে বললেন,

-“কি হয়েছে? ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছো কেন?”

তুর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মায়ের পানে। কই এতদিন পর বাড়িতে ফিরেছে মা একটু আদর যত্ম করবে, জড়িয়ে ধরবে কান্নাকাটি করে শার্ট ভেজাবেন তা নয়। আচ্ছা এটা তার নিজের মা তো! মাঝে মাঝে সন্দেহ লাগে তুর্যের। সে যাই হোক এখন অত কিছু ভাবার সময় নেই। ছেলেটা মায়ের পানে তাকিয়ে থমথমে কন্ঠে বলল,

-“রাজশাহী থেকে ফিরেছি মাত্রই। সাথে তোমার….”

এই টুকু বলতেই তাকে থামিয়ে দিলেন তাহমিনা বেগম। কপাল কুঁচকে বললেন,

-“এত রাতে ফেরার কি দরকার ছিল? কাল দিনে ফিরতে। আমি সজাগ থাকতাম। শুধু শুধু আমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙতো না।”

চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here