একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_50(Bonus) #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
84

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_50(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সমুদ্র প্রণালীর হাত ধরে তাকে শান্তর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসে। শান্ত পেছন থেকে চেচিয়ে বলতে থাকে,”আমি ছাড়া তুমি আর কারো সাথে সুখে থাকতে পারবে না প্রণালী। তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।”

সমুদ্র এই কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে প্রণালীর হাত আরো শক্ত করে ধরে নিয়ে যেতে থাকে।

এই দিকে লারা দূরে থেকে এতোক্ষণ সব কিছু দেখছিল৷ শান্তর প্রণালীর প্রতি হঠাৎ এই জেগে ওঠা ভালোবাসা লারার দুঃখের কারণ হলো। লারা শান্তর সামনে এসে বলল,”তুমি কেন করলে আমার সাথে এমন?”

শান্ত লারার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। লারা চিতকার করে উঠল। বলল,”আমার ফিলিংস এর সাথে কেন খেললে তুমি? আমি কি তোমার কাছে গিনিপিগ ছিলাম? সেই ছোটবেলা থেকে আমি তোমায় ভালোবাসি শান্ত। কিন্তু তুমি কখনো আমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। তবুও অবুঝ আমি তোমায় ভালো বেসে গেছি। আল্লাহর কাছে প্রতিটা মোনাজাতে আমি তোমায় চেয়েছি। আমার ভালোবাসা কতটা গভীর সেটা তুমি উপলব্ধি করতে পারবে না শান্ত। তোমার জন্য হাসতে হাসতে আমি আমার জীবন টাও দিয়ে দিতে পারি। তোমাকে বিয়ে করে তোমার সাথে সুখে সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি। কিন্তু তুমি কি করলে? আমার সব স্বপ্ন তুমি শেষ করে দিলে। আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা সব নষ্ট করে দিলে। এতোটাই যখন ভালোবাসো প্রণালীকে তাহলে আমায় কেন বিয়ে করলে তুমি?”

শান্ত চেঁচিয়ে উঠে বলে,”হ্যাঁ, আমি শুধু আর শুধু প্রণালীকেই ভালোবাসি। প্রণালীকে কষ্ট দিয়ে তোমায় বিয়ে করেছি শুধু আমার মায়ের কথায়। কারণ আমার মা চেয়েছিল আমি প্রণালীর উপর প্রতিশোধ নেই যেহেতু ওর বাবা-মার জন্য আমার মা জেলে। কিন্তু এখন আমার প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে। এখন আমি প্রণালীকে আবার হাসিল করে নেব।”

লারা ভগ্ন মন নিয়ে বলে,”তাহলে আমার কি হবে? আমি যে তোমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন সাজালাম তার কি হবে?”

“জানিনা, আমি কিচ্ছু জানিনা। তোমার কত টাকা লাগবে তুমি বলে দিও। কিন্তু তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ইউ গো টু দ্যা হেল।”

বলেই শান্ত চলে যায়। লারা সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে। আজ বড্ড বাজে ভাবে ঠকে গেল মেয়েটা। লারা চিতকার করে বলতে থাকে,”কি দোষ ছিল আমার? আমি তো শুধু তোমায় ভালোই বেসেছিলাম। তোমার কথাতেই তো তোমায় বিয়ে করেছিলাম আর এখন তুমি আমার সাথে এমন করছ। সব, এই সব হয়েছে ঐ প্রণালী নামের মেয়েটার জন্য। ওর জন্য আমি তোমাকে পাইনি। তাহলে আমি ওকেই সুখী থাকতে দেব না। আমি প্রণালীকে শেষ করে দেব। দুনিয়া থেকে ওর সব চিহ্ন মুছে দেব আমি।”

বলেই ভয়ানক ভাবে হাসতে থাকে সে। এই হিংসে মনোভাব কতদূর নিয়ে যাবে?!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র প্রণালীকে একটু দূরে নিয়ে এসে তার হাত ছেড়ে দেয়। প্রণালী যেন হাফ ছেড়ে বাসে। বারকয়েক শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,”এভাবে টানছিলেন কেন আমায়?”

“কেন? আমার স্পর্শ তোমার ভালো লাগছিল না বুঝি? তুমি তো ঐ শান্তর সামনে বললে তুমি আমায় ভালোবাসো।”

“আপনি ভাবলেন কি করে যে আপনার মতো মানুষকে আমি ভালোবাসবো? আপনার বোধহয় আমার বলা কথা মনে নেই। আমার এসব প্রেম-ভালোবাসায় কোন বিশ্বাস নেই। ভালোবাসা শব্দটাকেই আমি ঘৃণা করি।”

সমুদ্রকে এই কথাটা বলেই প্রণালী রিসোর্টের দিকে চলে যায়। এদিকে সমুদ্রর কেন জানি ভীষণ কষ্ট হয় প্রণালীর কথাটা শুনে। সে নিজেও জানে না তার সাথে হঠাৎ এসব কি হচ্ছে। আজ শান্ত আর প্রণালীকে একসাথে দেখে সমুদ্রর তো মাথাই গরম হয়ে গেছিল। ইচ্ছা করছিল সব শেষ করে দিতে। কিন্তু এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেন হচ্ছে তার? সমুদ্র সম্পূর্ণ এক গোলকধাঁধায় পড়ে যায়।

তবে এটা সে নিশ্চিহ্ন বুঝতে পারে তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসছে। তবে এই অনুভূতিতে তার মগজ সাড়া দিতে চাইছে না। কিন্তু বেচারা বুঝতেও পারছে না তার মন কিভাবে এই অনুভূতির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। এই অনুভূতির নামই কি তাহলে ভালোবাসা!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সিলেটের আবহাওয়া বেশ শীতল। বিশেষ করে রাতের দিকে সেখানে ভালোই ঠান্ডা অনুভূত হয়। তখন রাত ৮ টা। প্রণালী রিসোর্টেই বসে ছিল৷ সমুদ্র অনেকক্ষণ থেকে রুমে নেই। প্রণালীর মনে চিন্তাটা এসেছিল যে এত রাতে কোথায় গেল সে। কিন্তু প্রণালী চিন্তাটাকে বেশি পাত্তা দিল না। সমুদ্রকে নিয়ে একদমই আগ্রহ দেখাতে চায় না সে।

ঘরে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল প্রণালী৷ তাই ভাবল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসবে। এই ভাবনা থেকেই সে বাইরে চলে এলো। রিসোর্টের বাইরে এসেই প্রণালী হাঁটতে বের হলো একা একা। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারল কেউ তাকে ফলো করছে। পেছনে ফিরে তাকাতেই কেউ প্রণালীর নাকে একটা রুমাল ধরে। প্রণালী সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এদিকে সমুদ্র ডিনার শেষে প্রণালীর জন্য খাবার নিয়ে রিসোর্টে এসে দেখতে পায় প্রণালী সেখানে নেই। সমুদ্র ভ্রু কুচকে বলে,”এত রাতে কোথায় গেল প্রণালী।”

একবার ভাবল বাথরুমে গেছে বোধহয়। কিন্তু চেক করে দেখল নেই৷ বেলকনিতে গিয়েও প্রণালীকে না পেয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। ভয়ার্ত হয়ে রিশেপসনিস্টকে জিজ্ঞেস করে। রিশেপশনিস্ট বলে,”ম্যামকে তো আমি একা একা বাইরে যেতে দেখলাম।”

সমুদ্র বেশ ভয় পায়। এত রাতে একা কিভাবে বের হল? মনে কি একটুও ভয়ডর নেই? ভেবেই সে বের হয়ে আশেপাশে খুঁজতে লাগল প্রণালীকে কিন্তু কোন লাভ হলো না। সমুদ্র চিন্তায় পড়ে গেলো যে শান্ত প্রণালীর কোন ক্ষতি করল না তো? প্রণালীর ফোন নম্বরও নেই সমুদ্রর কাছে সে ভীষণ অসহায় বোধ করতে লাগল। প্রণালীর নাম ধরে চিতকার করতে লাগল।

~~~~
প্রণালীর জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি পাহাড়ের চূড়ায়। আরো ভালো করে খেয়াল করলে সে বুঝতে পারে তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রণালী নিজের চোখ খুলে নিজের চোখের সামনে এক নারী অববয় দেখতে পায়। ভ্রু কুচকে বলে,”কে ওখানে?”

লারা প্রণালীর সামনে চলে আসে। প্রণালী অবাক হয়ে বলে,”তুমি! তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছ? যেতে দাও আমায়।”

লারা উন্মাদের মতো হাসতে থাকে৷ যেই হাসি দেখে প্রণালী ভয় পেয়ে যায়। লারা হাসি থামিয়ে হঠাৎ করেই কাঁদতে থাকে। তার এই ব্যবহার প্রণালীর কেমন জানি লাগে। লারা প্রণালীর কাছে এসে তার হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে বলে,”জানো, আমি না একদম এমন ছিলাম না। আমার পাড়ায় গিয়ে যদি বলো এখানকার সবথেকে ভালো মেয়ে কে সবাই নিদ্বিধায় আমার নাম বলবে। আমার কি দোষ ছিল বলো? শুধু তো পাগলের মতো একজনকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সে আমার ভালোবাসা বুঝল না। শুধু নিজের স্বার্থে আমাকে ইউজ করল। তারপরেও আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি। কিন্তু তাকে পেতে হলে যে তোমায় আমায় মারতেই হবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও প্রণালী। আমার এটা করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু কি করব বলো? আমি যে বড্ড অসহায়। সরি।”

“না, না লারা তুমি এমন করবে না।”

লারা প্রণালীর কোন কথার তোয়াক্কা না করে তার হাতের বাধন খুলে তাকে দাড় করিয়ে পাহাড়ের একদম কিনারায় নিয়ে যায়। প্রণালী বলে,”তুমি ভুল করছ লারা। প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও।”

“ছেড়ে দেব? যাও দিলাম ছেড়ে।”

বলেই প্রণালীকে ধাক্কা দেয়।

প্রণালী বলে ওঠে, “নাআআআআআআআ”

to be continue…..
[আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় এই গল্পটা স্পর্শ করল ৫০ পর্বের মাইলফলক। এটা অবশ্যই আমার কাছে অনেক বড় পাওনা যে এতদিন পরেও আপনারা আমার গল্পটিকে আগের মতোই ভালোবাসা দিচ্ছেন। আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া এত দূর কখনো আসতে পারতাম না। আপনারা এভাবেই ভালোবাসা দিয়ে যান। আপনাদের ভালোবাসায় একদিন এভাবেই ৫০০ পর্ব সেলিব্রেশন করব ইনশাআল্লাহ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here