একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_52 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
121

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_52
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালীর আজকের সকালটা শুরু হলো বেশ অন্যরকম ভাবে। জ্বরের প্রকোপ কমার বদলে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে তার। একটু আগেই সমুদ্র মেপে দেখল ১০২° ছাড়িয়েছে। তবে প্রণালীকে যেটা অবাক করছে সেটা হলো সমুদ্রের পরিবর্তিত ব্যবহার। মিস্টার সমুদ্র চৌধুরী, অহংকারে যার মাটিতে পা পড়ে না, মায়ের কথা ছাড়া এক পা নড়ে না সেই সমুদ্র প্রণালীর সেবা করছে। এটা প্রণালীর কাছে একটু বিদঘুটে লাগছিল। সকাল থেকে সমুদ্র প্রণালীর মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। প্রণালী কিছু বলতেও পারছে না। কারণ এই সেবার ভীষণ প্রয়োজন। তবে সমুদ্রের প্রতি অঅন্যরকম কোন অনুভূতি তার নেই৷ ছেলেটার প্রতি বিরূপ ধারণা তার প্রবল। তবে এই মুহুর্তে ছেলেটার উপর সে ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে একথা সত্যি।

সমুদ্র প্রণালীর মাথায় জলপট্টি দিয়ে বলে,”আমি তোমার খেয়াল রাখছি এসব কিছু নিয়ে আবার বেশি কিছু ভেবে নিও না। আমি জাস্ট মানবিকতার খাতিরেই..”

“আমি কিছু ভাবছি না।”–প্রণালীর স্পষ্ট জবাব। যার পরে সমুদ্রর আর কিছুই বলার থাকে না। কিন্তু এই কথাটা যেন তাকে স্বস্তি দিলো না। বরঞ্চ তার বুকে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বের হচ্ছিল। সমুদ্রর যেন খুব করে শুনতে ইচ্ছা করছিল যে প্রণালী এবিষয় গুলোকে স্পেশাল ভাবছে, ইমপ্রেস হচ্ছে তার প্রতি। কিন্তু প্রণালী তো প্রণালীই। তার মন বরফ নয় পাথর। তাই এই মনকে গলিয়ে পানি করা যাবে না। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙতে হবে৷ যা মোটেই কোন সহজ কাজ নয়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~`
দুপুর নাগাদ প্রণালী কিছুটা সুস্থ অনুভব করল। অতঃপর বেরিয়ে পড়লো একটু বাইরে। ঘরে সবসময় থাকতে খুব দমবন্ধ লাগে। সমুদ্র প্রণালীর জন্য দুপুরের খাবার আনতে পাশেই একটু রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। প্রণালীকে রুমেই বাইরে আসতে দেখে ভীষণ রাগ হয় তার। বিড়বিড় করে বলে,”মেয়েটার কি কোন সেন্স নেই? এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে৷ এবার ওকে শিক্ষা দিতেই হবে।”

এই ভাবনা থেকে সমুদ্র প্রণালীর কাছে গেল। পিছন থেকে তার নাম ধরে ডাক দিলো। প্রণালী ফিরে তাকাতেই বললো,”তুই এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে বেড়িয়েছ কেন? তোমার এখন রেস্টের প্রয়োজন।”

প্রণালীর কাছে কেন জানি সমুদ্রের এই আচরণগুলো ভীষণ অযাচিত লাগে। সোজা বাংলায় বলতে গেলে তার মনে হয় সমুদ্র তার ব্যাপারে অনাধিকার চর্চা করছে যেটা তার মোটেই ভালো লাগছে না। এইজন্য প্রণালী বেশ রেগেমেগেই বলে,”আপনাকে আমার সো কলড স্বামী হয়ে আমার খেয়াল রাখতে হবে না। আ’ম টোটালি ফাইন৷ নিজেকে নিজেই সামলাতে পারি আমি। খুব খুশি হবো যদি আপনি আমার ব্যাপারে খুব একটা ইন্টারফেয়ার না করেন।”

প্রণালীর কথায় ভীষণ রেগে যায় সমুদ্র৷ সে তো ভালোর জন্যই বলেছিল কিন্তু এই মেয়ে তো নিজের জেদ নিতেই চলে। সে-ও বা কম কিসে? তাই সমুদ্রও বলে দিল,”ওকে, ফাইন। আমি আর তোমার ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করব না। তোমার যা খুশি তুমি করো।”

বলেই রিসোর্টের দিকে পা বাড়ালো৷ যাওয়ার সময় প্রণালীর জন্য আনা খাবারটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। আর বলতে লাগল,”এইজন্যই মেয়েদের বেশি পাত্তা দিতে নেই। মাথায় উঠে বসে৷ যা খুশি করুক, আমার কি।”

প্রণালীও নিজের মতো হাঁটতে থাকে। নিজের ব্যবহার নিয়ে কখনো সে ভাবে না। ছোট থেকেই বড্ড বেপরোয়া। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার অগাধ ভালোবাসা আর স্বাধীনতা তাকে এমন করে দিয়েছে। হুটহাট রেগে যায় আর তখন নিজের উপরেই নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কাকে কি বলে দেয় তার কোন খেয়াল থাকে না। এর আগে শান্তর ব্যাপারটা নিয়ে নিজের বাবাকেও তো কম কথা শোনায় নি। এখন সমুদ্রের সাথেও একই আচরণ শুরু করেছে!

~~~~~~~~~~
শান্ত বাথরুম থেকে বের হতেই লারা তার দিকে তোয়ালে বাড়িয়ে দেয়। শান্ত লারার দিকে একবার তাকিয়ে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে বলে,”এসব করে আমার মন জিতবে পারবে না। তাই বলছি চেষ্টাও করো না।”

লারার গলায় কান্না আটকে আছে। সে বলে ওঠে,”আমার সাথে এমজ কেন করছ শান্ত? আমি তো ভালোবাসি তোমায়। বিয়ের পর থেকে তো আমাদের সম্পর্ক ভালোই চলছিল। বাসর রাতেও তুমি কত সুন্দর আমায় কাছে টেনে নিলে। আর এখানে এসে প্রণালীকে দেখেই আবার এভাবে বদলে গেলে!”

শান্ত তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে তোয়ালেটা লারার দিকে ছু*ড়ে বলে,”হ্যাঁ, বদলে গেলাম। কারণ তোমার কাছে আমি সেই শান্তিটা খুঁজে পাইনা যেটা আমি প্রণালীর মধ্যে খুঁজে পেতাম। এই ক’দিন আমি তোমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। নিজের মনের কাছে হেরে গেছি। তাই বলছি আমার জীবন থেকে নিজ থেকে দূরে সরে যাও।”

“পারবো না আমি। তাছাড়া প্রণালীও তো এখন অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে। তুমি ওর আশায় বসে থাকছ কেন?”

“প্রণালী বিয়ে করুক, তিন বাচ্চার মা হোক আই ডোন্ট কেয়ার। আমার শুধু ওকেই লাগবে। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি শুধু আমাকে মুক্তি দাও।”

এই কথা বলেই শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে লারার কানে বাজতে থাকে শান্তর বলা কথাটা। শান্ত মুক্তি চাইলো তার কাছে! ভালোবেসে চাইলে তো লারা নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পারবে শান্তর জন্য। আর সে মুক্তি চাইছে!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রণালী ঘুরতে ঘুরতে বিরক্ত হয়ে আবার কটেজেই ফিরে এলো। কটেজে নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখল সমুদ্র সেখানে নেই। ব্যাপারটা প্রণালীকে এতোটা ভাবালো না৷ ভীষণ গরম লাগছিল। প্রণালী ভাবল গোসল করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। গোসল করতে বাথরুমে ঢুকল। গোসল শেষে একটা তোয়ালে মাথায় পেচিয়ে নিল। অতঃপর একটা কমলা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে নিলো। সে এসবেই কমফোরকেউ নক করল। প্রণালী ভাবল সমুদ্র এসেছে বোধহয়। তাই দরজাটা গিয়ে খুলে দিলো। দরজা খুলতেই সে হতবাক হয়ে গেল কারণ তার সামনে সমুদ্র নয়, দাঁড়িয়ে আছে শান্ত। প্রণালী কিছু বুঝে ওঠার আগেই শান্ত রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নিলো৷ প্রণালী শান্তর এই কাণ্ডে হতবিহ্বল!

প্রণালী বলে উঠল,”কি করতে চাইছ তুমি? কেন এসেছ এখানে? বের হয়ে যাও এখান থেকে। কোন সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করো না।”

শান্ত বলল,”আমি কোন সিনক্রিয়েট করতে চাই না। আমার শুধু তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা বলা দরকার। তাই আমি বাধ্য হয়ে…”

“তুমি যাও বলছি..”

শান্ত শোনে না। প্রণালীর হাতটা ধরে তাকে কাছে টানার চেষ্টা করে। প্রণালী হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলে,”ছাড়ো আমায় নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করো।”

“করো চিৎকার। এতে কিন্তু তোমারই সম্মানহানি হবে, আমার কিছুই হবে না।”

প্রণালী সরে আসার চেষ্টা করল। পারল না। শান্ত আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করল। প্রণালী আর উপায় পেল না। নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য বুঝি এবার চিৎকার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এরমধ্যেই প্রণালী টের পেলো বাইরে থেকে কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে। সমুদ্র চিৎকার করে পুরো রিসোর্টটা মাথায় তুলে দিচ্ছে। প্রণালী দরজার দিকে এগোতে যাবে তখনই শান্ত তার মুখ চেপে ধরে। এদিকে সমুদ্রর চিৎকারে আশেপাশের কয়েকজন লোক ছুটে আসে। তারা সবাই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে। সমুদ্র রেগে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েই শান্ত ও প্রণালীকে এত কাছাকাছি দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। আশেপাশের সবাইও নানা কাহিনি বানানো শুরু করে। কারণ ইতিমধ্যেই অনেকে সমুদ্র-প্রণালী ও শান্ত-লারার সম্পর্কে জানে যে ওরা স্বামী-স্ত্রী। তাই অনেকেই বলতে থাকে নানা কুরুচিকর কথা। আর প্রণালী নিস্তেজ হয়ে তাকিয়ে আছে সমুদ্রর দিকে। চোখের ভাষায় বোঝাতে চাইছে সে কিছু করে নি। এরমধ্যেই একজন হঠাৎ ছুটে এসে বলে,”আপনারা সবাই এখানে ভীড় করছেন। ওদিকে ৩১৩ নং কেবিনে একটা মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”

শান্ত আতংকিত হয়ে বলে ওঠে,”ঐ কেবিন তো আমার আর লারার! লারা!!”

to be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here