শ্রেয়সী #লেখাঃKhyrun Nesa Ripa #পর্বঃ১৬

0
308

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ১৬

মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে নিচ্ছে শিশির। জীবনে কখনো মায়ের কাছে মিথ্যা বলা হয়নি। আজ প্রথমবার মাকে মিথ্যে বলবে সে। প্রচন্ড দোটানায় ভুগছে। মিথ্যে বলাটা কী উচিত হবে? জীবনের এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি মিথ্যে দিয়ে শুরু হয় তাহলে এর পরিণতি কী আধেও ভালো হবে? মনকে কোনোভাবেই বুঝ দিতে পারছে না শিশির। আর সত্যিটা জানার পর যদি শিরিনা বেগম বেঁকে বসে তাহলে কোনোভাবেই এই সম্পর্কটা পূর্ণতা পাবে না। সব মিলিয়ে মারাত্মক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছে শিশির। ঠিক মতো ক্লাসেও মনযোগী হতে পারছে না। কয়েকজন স্টুডেন্ট তো বলেই ফেললো,
“স্যার আপনি কী কোনো বিষয়ে টেন্সস্ট?”
একটু হেসে শিশির উত্তর দিলো,’না’।

ক্লাস শেষ হতেই তাড়াতাড়ি বাড়ির পথ ধরলো। বিন্দুদের বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই একরমক দুশ্চিন্তায় হাঁসফাঁস করছে। আজকেই যে করে হোক শিশির ওর মাকে সবটা জানাবে। যা হওয়ার হবে। বাড়ি এসে গাসল সেরে মসজিদে গিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরলো। রিদি আর শিরিনা বেগম রান্নার কাটাকুটি করছেন। শিশির এসে মায়ের পাশে একটা ফিরি নিয়ে বসলো। শিরিনা বেগম ছেলের দিকে এক নজর তাকিয়ে বললেন,
–কী রে কিছু বলবি?”
–হ্যাঁ মা কিছু বলার ছিল। রিদি তুই একটু যা পরে আসিস।”
রিদি চলে যেতেই শিশির আমতা আমতা করতে লাগলো,
–আরেহ এমন হাঁসফাঁস না করে যা বলার দ্রুত বলে ফেল।”
–মা আমি বিয়ে করবো।”
এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে থামলো শিশির। এতক্ষণ যেন এই কথাটাই গলার কাছে এসে কাঁটার মতো বিঁধে ছিল।
–এটা তো ভালো কথা। আমি তো আরও আগেই চাইছিলাম তোর বিয়ে দিতে তুইই তো রাজি হোসনি। তা কোনো মেয়ে-টে পছন্দ আছে নাকি?”
শিশির লাজুক ভঙিতে মাথা নাড়ালো।
–তা মেয়ের বাড়ি কোথায়? মেয়ের বাবা কী করে? মেয়ে দেখতে-শুনতে কেমন?”
–তোমরা গিয়ে দেখে এসো সবকিছু। ”
–আমার যদি মেয়েকে পছন্দ না হয় তাহলে কিন্তু বিয়ে হবে না বলে দিলাম।”
মায়ের কথাটা শুনেই মুখটা ছোট হয়ে গেল শিশিরের। যাও ওই কথাটা বলতে যাবে এখন মনে মনে ভেবে নিয়েছে যা হওয়ার বিয়ের পর হবে এখন জানানোর দরকার নেই। শিশির এমনিতেই নিজে যেচে গিয়ে সাজেদা বেগমকে এই প্রপোজাল দিয়েছে এখন যদি শিরিনা বেগম সত্যিটা জেনে গিয়ে বিয়েটা ভেঙে দেয় তাহলে শিশির কী করে সাজেদা বোগমকে মুখ দেখাবে। আর এমনিতেও তো বিন্দুকে সে করুনা করে বিয়ে করছে না। ভালোবাসে বলেই তো জীবনসঙ্গী করে পেতে চাইছে। তাহলে থাকুক না একটু কলঙ্কের দাগ। শিশির না হয় নিজের ভালোবাসায় সিক্ত করে মুছে দেবে সকল কলঙ্কের কালিমা। করে নিবে নিজের মতো করে পবিত্র। ভুল তো মানুষেই করে। তাকেও তো একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। জীবনে ভালো কিছু করার। এভাবে অবহেলা পেতে থাকলে সে তো এমনিতেই অতল-গহ্বরে হারিয়ে যাবে। বেঁচে থাকুক না একটু ফুল। এভাবে অকালে কেন হারিয়ে যাবে সে? একটু ভালোবাসা পেলে হয়তো মুছরানো ফুলটা আবারও নিজের রুপে ফিরে আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে নিজেকে কিছুটা শান্ত করলো শিশির। তারপর শিরিনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো,

–তোমার পছন্দ না হওয়ার মতো কোনো কারণই থাকবে না। শুধু একবার ওকে দেখে এসো তারপর তোমার মতামত জানিও। আর আমি বিয়েটা তাড়াতাড়িই করতে চাই। কারণ ঈদের পরপরই রিদির বিয়ে। আর আমি আমার বিয়েটা একদম সাদামাটা ভাবে করবো।
–সাদামাটা কেন? তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের কত আশা -ভরসা। আর এখনই বা বিয়ে করার কী দরকার এই রমজান মাসে।
— বিয়ে যেহেতু করবোই রমজান মাসে করলেই কী আর পরে করলেই বা কী? একসময় করলেই হলো। আর মা দেখ এমনিতেই ঘর করতে গিয়ে কত টাকা খরচ হয়েছে তার উপর আবার রিদির বিয়েতে কত খরচ হবে এখন যদি আমিও ধুমধাম করে বিয়ে করি তাহলে এত টাকা পাব কোথায়?”
সত্যিই এই ব্যাপারটা একদম খেয়াল ছিল না শিরিনা বেগমের।
–হুম তা যা বলেছিস৷ যা ভালো বুঝিস তাই কর। ”
–আমি চাইছিলাম কালকে সকালে তুমি আর রিদি গিয়ে দেখে এসো। তারপর না হয় যা কথা দেওয়ার দেবে।”
–হু।”

বিধুর তো খুশির অন্ত নেই। শিশির ভাইকে সেই কবে থেকে নিজের দুলাভাই বানানোর জন্য অস্থির হয়ে আছে। অবশ্য মাঝখানে এসে এই ভাবনাটা মন থেকে ঝেড়েই ফেলেছিল। কারণ শিশির যে সবকিছু জানার পরেও বিন্দুকে বিয়ে করতে রাজি হবে এমনটা কখনোই ভাবেনি সে৷ খুশিতে ইচ্ছে করছে আকাশে উড়তে। অন্যদিকে ভালো লাগছে এটা ভেবে আর যাই হোক বিন্দুকে কখনো কষ্ট দেবে না শিশির। কারণ বিধু বেশ ভালো করেই বুঝে গেছে শিশির ঠিক কতটা ভালোবাসে বিন্দুকে।যখনই শিশির ফোনে বিন্দুর কথা জিজ্ঞেস করতো বিধু যেন বিন্দুর প্রতি শিশিরের একটা আলাদা টান অনুভব করতো। বিন্দু কেমন আছে জানতে চাওয়া, বিন্দুর অসুখের খবর শুনেই বারবার ফোন করা,যেদিন এ বাড়িতে প্রথম এসেছিল বিন্দুর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকানো এ সব কিছুই বিধুর চোখ এড়ায়নি৷ এসব ভেবেই সাজেদা বেগমের সাথে বিন্দুর বিয়ে নিয়ে কথা বলেছিল বিধু। আজ সেটা এত সহজে সত্যি হয়ে যাবে এতটাও ভাবেনি বিধু। গুনগুন করে গান ধরেই এগুলো বিন্দুর রুমে। বিন্দুর শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না। যা খাচ্ছে সব বমি করে ফেলে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রচন্ড ক্লান্ত। বিন্দু খাটের মাঝ বরাবর একদম সোজা হয়ে হাত দু’টো পেটের ওপর রেখে ঘুমাচ্ছে। বিধু এসে এই দৃশ্য দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিন্দুর পাশে বসলো। বোনের মাথায় হাত রেখে আস্তে করে ডাকলো।
–আপু ওঠ।”
বিধুর ডাক শুনে আস্তে চোখ মেলে তাকালো। তারপর চোখের ঈশারায় জিজ্ঞেস করলো,
–কী?”
–তাড়াতাড়ি উঠে একটা ভালো ড্রেস পরে নে।”
–কেন?”
— একটু বাদেই বাড়িত মেহমান আসবে।”
–মেহমান আসবে তো আমি সেজে কী করবো?”
–সাজতে বলিনি। শুধু বলেছি একটা ভালো ড্রেস পরতে।”
–পরনেরটা খারাপ কোথায়?”
–উফ এত কথা বলিস না তো অসহ্য লাগে।” বলতে বলতেই বিধু গিয়ে আলমারী থেকে বিন্দুর একটা ড্রেস নামিয়ে আনলো। তারপর খাটের ওপর রেখে বললো,
–জাস্ট পাঁচ মিনিট টাইম দিলাম। উঠে এটা পরে আয়।”
কথা শেষ করেই হনহনিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল। বিন্দুকে আর কিছু বলার সুযোগও দিলো না।

বিন্দুদের বাড়িতে পা দিতেই চোখজোড়া চরকগাছ শিরিনা বেগমের। বিন্দুদের অবস্থা তো বিশাল। বাহিরটা দেখেই এমন অবস্থা ভেতরটা দেখে না জানি কেমন হয়। তার ছেলের এত বড় বাড়ির মেয়েকে পছন্দ করেছে। আরর তারাই বা কেন রাজি হয়েছে? এটা নিয়ে একটা প্রশ্ন এসে জট বাঁধলো শিরিনা বেগমের মনে। শিশির ওর মায়ের সাথে আসেনি শুধু শিরিনা বেগম আর রিদিই এসেছে। বাড়িতে পা রাখতেই সাজেদা বেগমের অমায়িক ব্যবহার আর বিধুর এমন আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন শিরিনা বেগম। এমন পরিবারে ছেলে বিয়ে করবে ভেবে মনটা যেন কয়েক হাত বড় হয়ে গেল শিরিনা বেগমের। এখানে আসার আগে মনমন করলেও এখন আর সেটা মনের মধ্যে কাজ করছে না শিরিনা বেগমের। পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলেন। সব মিলিয়ে দারুন পছন্দ হয়েছে সবকিছু। এখন শুধু মেয়ে দেখার অপেক্ষা। অবশেষে সাজেদা বেগম গিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসলেন। হলকা গোলাগীর মধ্যে কালো এই রকমের একটা প্রিন্টের থ্রি-পিচ পরেছে বিন্দু। মুখে কোনো প্রসাধনীই লাগায়নি৷ তবুও যেন অপরুপ সুন্দর লাগছে বিন্দুকে। যদিও চোখের নিচটা কালো হয়ে গেছে। তবুও যেন এই কালিটা আরও কয়েকগুন সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বিন্দুর। ছিপছিপে গড়নের উজ্জ্বল ফর্সা মেয়েটা শিরিনা বেগমের সামনে মাথাটা নিচু করে বসে আছে। শিরিনা বেগম যা প্রশ্ন করেন খুব সাবলীল ভাবে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। শিরিনা বেগম খুব রহস্য করে দু-একটা কথা বলতেই মুচকি হেসে ফেললো বিন্দু। এই মুচকি হাসিতেও গালের টোলটা খুব গাঢ়ভাবে
পরে। টোল পরার কারণে আরও বেশি মিষ্টি লাগছে বিন্দুকে। শিরিনা বেগম নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে এসে বিন্দুর কাঠি দিয়ে বাঁধা চুলগুলো ছেড়ে দিতেই ধপ করে চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে পরলো। শিরিনা বেগম বেশ শব্দ করেই বললেন,
–মাশআল্লাহ।

সব মিলিয়ে ভিষণ পছন্দ হয়েছে বিন্দুকে শিরিনা বেগমের। মনে মনে ছেলের প্রশংসাও করলেন ছেলের এত সুন্দর পছনের জন্য।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here