শ্রেয়সী #লেখাঃKhyrun Nesa Ripa #পর্বঃ৪

0
385

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ৪

একজোড়া গাঢ় কাজল কালো চোখ শিশিরের সামনে ভেসে উঠলো। সেই সাথে স্নিগ্ধ হাসিভরা একটা মায়াবী মুখ। হঠাৎই কিছু একটা সাথে ভিষণ জোরে সংঘর্ষ হতেই বাইক থেকে দশ-বারো হাত দূরে গিয়ে ছিটকে পরলো শিশির।

আজ সকাল থেকেই মনটা কেমন ছটফট করছে শিরিনা বেগমের। বারবারই কেমন একটা অচেনা কম্পন হচ্ছে বুকের ভেতর। হাত থেকে বারবার এটাসেটা পড়ে যাচ্ছে। শরীরটাও যেন টলছে গায়ে একদম জোড় পাচ্ছেন না। ছেলে-মেয়ে দুইটাই বাড়ির বাহিরে। চারদিকে যেভাবে বিভিন্ন সব দূর্ঘটনা ঘটছে এতে করে মনটা সবসময়ই ছোট হয়ে থাকে শিরিনা বেগমের। কিন্তু আজ বেশিই ভয় ভয় লাগছে। ছেলে-মেয়েদের যে স্কুলে,কলেজ,মাদ্রাসায় পড়তে পাঠাবে নিশ্চিন্তে তারও জো নেই। কারণ সেখানেও খুঁটি গেড়ে বসে থাকে কিছু মানুষরুপী মুখুশদারী শয়তান। সুযোগ পেলেই নিজের আসল রুপটা দেখাতে এরা দু’বার ভাবে না। এখন বিভিন্ন টিভি-চ্যানেলে, পেপার-পত্রিকায় বিভিন্ন সব দূর্ঘটনার চিত্র দেখা যায়। অবশ্য সব কিছুকে দূর্ঘটনাও বলা যায় না। অনেকে পরিকল্পিতভাবেই তো কাউকে হত্যা করছে। দিন দিন সামান্য কোনো কারণে কেউ কাউকে খুন করছে। খুন,হত্যা,রাহাজানি বিভিন্ন হাঙ্গামা তো লেগেই আছে।

এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় এসে ভর করতেই চিন্তাটা দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়ে দু’টোতে বাড়ি না আসা পর্যন্ত মনে শান্তি আসে না শিরিনা বেগমের। ঘড়িতে প্রায় দেরটা বাজে। প্রতিদিন শিশির একটার সময়তেই বাড়ি এসে পৌঁছে। রিদি আসতে আসতে দু’টো বেজে যায়। এ পর্যায়ে চিন্তাটা প্রগাড় হতে শুরু করে দিয়েছে যদি কিছু হয়ে যায় শিশির বা রিদির!

শিহাবের খিদায় পেট চো চো করছে অথচ আজ কাজের লোক না আসায় রান্নায় বেশ দেরি করে ফেলেছেন সাহেলা বেগম। এক হাতে আর কত কী সামলাবেন। একটা মেয়ে থাকলেও একটু হাতের কাজ করে দিতো। ছেলে দু’টো হয়েছে দুনিয়ার অলস। শিহাব সারাক্ষণ বাড়িতে ঘুরাঘুরি করলেও কখনোই একটু কোনো কাজে সাহেলা বেগমকে সাহায্য করে না। শিহাবেরা দুই ভাই শিহাব আর সিয়াম। সিয়াম এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। শিহাবের বাবা সাজিদ আহমেদ ব্যবসার কাজে বেশিরভাগ সময় বিদেশেতেই থাকেন। শিহাবের আবার ব্যবসা পছন্দ না। চাকরি করবে। এতেই নাকি তার সুখ। তাই এ বিষয়ে সাহেলা বেগম বা সাজিদ আহমেদ কেউই ছেলেকে জোড় করননি। কারণ ছেলে-মেয়েদেরকেও তো তাদের পছন্দের দাম দিতে হয়।

–মা, ওমা আর কতক্ষণ? খিদেয় মরে যাব তো?”
–তোরদের কারণেই তো আমার যত অশান্তি আজ ওই বাড়িতে গায়ে হলুদে কত আনন্দ হবে না তুই গেলি না সিয়াম। তোরা গেলে আমিও তো যেতে পারতাম। তাহলে আজ আর হাত পুড়িয়ে রান্না করতে হতো না। কাল বলেছিলি যাবি তাই আজ কাজের মেয়েটাকেও আসতে না বলেছি। সেই আমাকেই একা একা খাটিয়ে মারলি।”
–উফ মা তোমার হাতের রান্না ওই বাড়িতে বাবুর্চির রান্নাকেও ফেল করিয়ে দেবে। তাই আর যাইনি।”
–হয়েছে আর পাম দেওয়া লাগবে না। হাত-মুখে ধুয়ে সিয়ামকে ডেকে নিয়ে আয় আমার খাবার দিচ্ছি।

কালকে সুমির বিদায়ের পালা। সে নিয়ে ভিষণ মন খারাপ বিন্দুর মামা-মামীর। কিছুক্ষণ পরপর ডুকরে কেঁদে ওঠেন বিন্দুর মামী রেহানা বেগম।ঘরের বড় মেয়ে বলে কথা। সারাক্ষণ মায়ের গা ঘেঁষেই থাকতো সুমি। আজ বাদে কালই মেয়েকে এ বাড়ি থেকে বিদায় দিয়ে দেবেন ভেবেই বারবার মনটা অশান্ত হয়ে উঠছে রেহানা বেগমের। কিন্তু এটাই যে বিধাতার নির্ধারিত নিয়ম। প্রতিটা মেয়েকেই নির্দিষ্ট বয়সে স্বামীর সংসারে যেতে হয়। সুমির বেলাতেও তাই। সবটাই তো নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ। অবশ্য এই নিয়মগুলো আল্লাহপাক ভালোর জন্যই তৈরী করেছেন। হয়তো প্রথম প্রথম সবারই একটু মানতে কষ্ট হয়। পরে অবশ্য সময়ের আবর্তনে সবটা ঠিক হয়ে যায়।

–বিন্দু, এই বিন্দু!”
–হ্যাঁ, মা। কিছু বলবে?”
–শোন কালকে অনেক মানুষ আসবে বাড়িতে বিধুকে তোর কাছে কাছে রাখবি। জানিস তো ও কেমন। আর হ্যাঁ ভুলেও ওই বাড়ি থেকে আসা ছেলেদের ধারে কাছেও যাবি না। সুমির বিদায়ের পরই বাড়িতে যাব৷ রাত হয় হোক। কাল তোর বাবা আসবে।

মায়ের কথা শুনেই ভয়ে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠলো বিন্দুর। তবে কী সাজেদা বেগম কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছেন? ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে বিন্দুর। কোনোরকম গলার স্বর ছোট করে বললো,
–আচ্ছা।”
–আচ্ছা বললে হবে না। যা বলছি তা যেন মাথায় থাকে। কথার নড়চড় হলে তো বুঝসই আমি কী করতে পারি।”
এবার আর কথা বলার মতোও কোনো শক্তি নেই বিন্দুর। শুধু মাথা নাড়িয়ে সাজেদা বেগমকে বিদায় করলো। সাজেদা বেগম চলে যেতেই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো সে। এতক্ষণ মনে হয়েছিল মাথার কাছে বন্দুকে ঠেকিয়ে পেটের ভেতরের সব কথা আদায় করে নেবে। মায়েরা এত চালাক হয় কী করে ভেবে পায় না বিন্দু। আর একটু হলেই সম্ভবত সব কথা মুখ দিয়ে গড়গড় করে বেরিয়ে যেত।

দরজায় টোকা পড়তেই একরকম দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললেন শিরিনা বেগম। রিদি ভাইকে ধরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর শিশিরের মাথায় ব্যান্ডেজ, হাতে ব্যান্ডেজ। তাড়াতাড়ি ছেলেকে ধরে ঘরে নিয়ে বসালেন শিরিনা বেগম। বুকের মধ্যে কেমন দরফর করছে ওনার৷ কথা বলারও শক্তি পাচ্ছেন না। কীভাবে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও বারবার গলা ধরে আসছেন। লোড শেডিংয়ের আর টাইম-টেবিল নাই৷ যে গরম পরছে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। এখন একটু ফ্যানের বাতাস দরকার আর এই সময়তেই কারেন্ট নেই। শিরিনা বেগম কোনোরকম হাঁপাতে হা্পাতে বললেন,
–রিদি হাত পাখাটা আমাকে খুঁজে দিয়ে। ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এক গ্লাস শরবত করে নিয়ে আয়।”
শিশির ওর মায়ের অস্থিরতা দেখে শান্ত গলায় বললো,
–মা আমি ঠিক আছি। তুমি ব্যস্ত হয়ে আবার প্রেসার বাড়িয়ে ফেলো না।”
এ পর্যায়ে ডুকরে কেঁদে ফেললেন শিরিনা বেগম।
–মা, ওমা কিছু হয়নি আমার একটু মাথায় চোট লেগেছে। দেখে বেচি জখম হয়নি৷ ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাব।”
–তোকে কতবার বলি আমি সবসময় ধীরে সুস্থে গাড়ি চালাবি। তা না করে আজ কী অবস্থা করে বাড়ি ফিরেছিস। যদি আল্লাহ না করুক বড় কিছু হয়ে যেত, তখন?”
–মা যেটা হয়নি সেটা নিয়ে চিন্তা করো না। এখন আমাকে তার চেয়ে বরং তোমার হাতে ভাত খাইয়ে দাও। খুব ক্ষুধা লেগেছে।”
শিরিনা বেগম আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে ছেলের জন্য ভাত বাড়তে গেল। এই ছেলেটা কেন যে বোঝে না তার কিছু হয়ে গেলে তার মা বাঁচবে কী নিয়ে”

যদি গল্পটা ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই জানাবেন। না লাগলেও জানাবেন। আর হ্যাঁ ঘাসফুলটাও দেব ইনশাআল্লাহ।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here