#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ৫
আকাশের দিকে ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে বিন্দু। সত্যিই মানুষের জীবনটা কত বৈচিত্র্যময়। কত সহজেই এই হৃদয়ের বদল ঘটে। বদল ঘটে হৃদয়ে বসবাসরত ছোট্ট ছোট্ট অনুভূতিগুলোর। এতগুলো বছরেও হৃদয়ের এক কোণে কখনওই কেউ একজন একাধিকবার চেষ্টা করেও একটুমাত্র জায়গা দখল করতে পারেনি। আর মাত্র কয়েক মুহূর্তেই মনটা লেনদেন হয়ে গেছে। যাকে এর আগে কখনো চোখের দেখা অব্দিও দেখা হয়নি। আজ সে অনায়াসেই হৃদয়ের সবটা জুড়ে বিচরণ করছে। বিচরণ করছে বিন্দুর প্রতিটা ভাবনায়,স্বপ্নে-কল্পনায়। এটাই বোধহয় ভালোবাসা। যার কিছুই পূর্বে বিন্দু কখনোই উপলব্ধি করতে পারেনি। সত্যিই অনেক কিছু কত সহজেই হয়ে যায়। আর কত কিছু অনেক চেষ্টা করেও মানুষ পায় না।
ভাবতে ভাবতেই আনমনে হেসে ফেললো বিন্দু। প্রথম প্রেমে পড়লে বোধহয় এমনটাই হয়। সারাক্ষণ প্রিয় মানুষটাকে নিয়েই যত জল্পনা-কল্পনা। এর মধ্যেও যেন এক অজানা সুখ নিহিত। যতই ভাবনা ততই যেন ভালো লাগা। যেন এতে বিন্দুমাত্রও ক্লান্তি লাগে না। লাগে অনেক অনেক প্রশান্তি!
শিহাবের ফোন কলে ভাবনায় ছেদ পরলো বিন্দুর। তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করলো,
–হ্যালো।”
–হ্যাঁ… প্রিয়। কেমন আছো?”
–আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”
–এইতো আছি কোনোরকম।”
–কোনোরকম কেন? আমার তো তোমার সাথে কথা বললেই ভালো লাগে।”
–আমারও তো তাই।”
–তাহলে কোনোরকম কেন বললে?”
–আজ তোমাকে দেখবো ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখা তো হলো না। তাই একটু মন খারাপ।”
–বাব্বাহ এত প্রেম! আমার কপালে এত ভালোবাসা সইবে তো?”
বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো বিন্দু। শিহাব মুগ্ধ হয়ে ফোনের ওপাশে তার বিন্দুর মুক্তা ঝরা হাসির শব্দ শুনছে। যেন প্রতিটা শব্দ এক নতুন ছন্দের সৃষ্টি করছে। আর সেই প্রতিটা ছন্দরে তালে তালে হারিয়ে যাচ্ছে শিহাব। শিহাব তার মোলায়েম কণ্ঠে বললো,
–ওগো প্রিয় এভাবে হেসো না। আমি তো ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি।”
শিহাবের কথার প্রত্ত্যুতরে আর কোন কথা বলতে পারলো না বিন্দু। লজ্জায় চুপ করে রইলো।
–বাব্বাহ আমার লজ্জাবতী। এত লজ্জা পেতে হবে না। এখন বলো এতক্ষণ কী করছিলে? ”
বিন্দু লাজুক হেসে বললো,
–তোমার কথা ভাবছিলাম।”
–সত্যিই? ”
–তা নয়তো কী!”
–তাহলে তো আমি ধন্য।”
“এক সুশ্রী রমণী আমার প্রেমে মশগুল হইয়্যা দিবানিশি যায় তার আমার কথা ভাবিয়া!”
–দেখো আমি কিন্তু ফান করছি না।”
–দেখো বিন্দু আমিও কিন্তু ফান করছি না। শুধু ইয়ার্কি করছি।”
শিহাবের কথা শুনে বিন্দু আবারও স্ব- শব্দে হেসে উঠলো আর শিহাব! সেও মুগ্ধ হয়ে সেই হাসির শব্দ উপভোগ করছে।
এক্সিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করছে। বিকেল টাইমে স্কুলে ক্লাস থাকলেও প্রিন্সিপাল স্যারের থেকে ছুটি নিয়ে নেয় শিশির। এত ব্যথা নিয়েই বিছানায় ছটফট করে কাটাচ্ছে ৷ রাত যত বাড়ছে ব্যথার তীব্রতা ততই প্রকট হচ্ছে। বারবার নিজের হাতে সব শক্তি দিয়ে চুলগুলো টানতে লাগলো শিশির। তবুও কোনো উপায় হচ্ছে না। এ পর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে একরকম জোড়ে আর্তনাদ করে উঠলো শিশির। শিশিরের আর্তনাদের শব্দ পেতেই শিশিরের রুমে দৌড়ে আসলেন শিরিনা বেগম। মাকে দেখেই কান্নাজড়িত কণ্ঠ শিশির বলে উঠলো,
–মা আমি মনে হয় বাঁচবো না । মাথাটা আমার ছিড়ে যাচ্ছে।”
ছেলের এমন করুন পরিস্থিতি দেখে অস্থির হয়ে পড়লেন শিরিনা বেগম। রিদিকে দিয়ে ওনাদের এলাকার ডাক্তার কাছে ফোন দিলেন।
–ডাক্তার আমার ছেলের কী অবস্থা? ”
–চিন্তা করবেন না। মাথায় আমরা সাধারণ কোনো আঘাত পেলেই মাথাব্যথা প্রকট আকার ধারণ করে। আর ও তো এক্সিডেন্ট করে ভালোই আঘাত পেয়েছে তাই এরকম মাথাব্যথা বাড়ছে। চিন্তা করবেন না ইনশাআল্লাহ কমে যাবে৷ কিছু খাওয়ার আগে একটা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাইয়ে দেবেন। খাওয়ার পরে মাথা ঠাণ্ডার ঔষধ খাইয়ে দেবেন। তাহলেই ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে৷ এখন ওর একটু ঘুমোনোর দরকার।আর দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ভাগ্য ভালো অত বেশি আঘাত লাগেনি । নয়তো বাইকের এক্সিডেন্ট যা মারাত্মক হয়। অনেকের তো স্পটেই মৃত্যু ঘটে৷ আল্লাহ সহায় আছেন। ভাগ্যিস তেমন বেশি ইনজুরি হয়নি৷ কিছুদিন রেস্ট করতে বলবেন৷ আর ভুলেও কোনো প্রেসার যেন না নেয়।”
ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে ছেলের সেবায় নেমে পরলেন শিরিনা বেগম। ঔষধ খাইয়ে দিতেই শিশির চোখে ঘুম নেমে আসলো। এ পর্যায়ে শিরিনা বেগমের বুকের দরফরানিটা কিছুটা হলেও কমের দিকে। একটু শান্তি লাগছে ছেলেটা ঘুমাচ্ছে ভেবে। একটু আগেই ছেলেকে নিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেছিলেন। ছেলে যে তার চোখের মণি সেই মণির এমন দশা কিছুতেই চোখে সহ্য করা যাচ্ছিলো না।
সকাল হয়ে গেছে বেশ খানিকক্ষণ আগে অথচ বিন্দু এখনো বিছানায় পরে পরে ঘুমাচ্ছে। মেজাজ গরম হচ্ছে বিধুর। বিন্দুকে কখনওই এর আগে এতটা অনিয়ম করতে দেখেনি বিধু। সবসময় সকালে উঠেই নামাজ সেরে কোরআন তেলাওয়াত করতো। আর অথচ এখানে আসার পর থেকে বিধু লক্ষ্য করছে বিন্দু বেশ বেলা করে ঘুম থেকে ওঠছে। সকালের নামজও আর পড়া হচ্ছে না। কয়েকবার জাগানোর পরেও যখন দেখলো বিন্দু একটু নড়ছে না শুধু ঘুমিয়েই যাচ্ছে। ওমনি বিধু জোরে একটা ধাক্কা মারলো। ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে বিন্দু সোজা গিয়ে নিচে পরলো। চিৎকার করে উঠতেই সাজেদা বেগম আর রেহানা বেগম দৌড়ে আসলেন। আর এসে দেখলেন বিধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে আর বিন্দু নিচে পরে কোমরে হাত দিয়ে ব্যথায় উঁহ্,আহ করছে। সাজেদা বেগম তাড়াতাড়ি এসে বিন্দুকে তুলে খাটে বসালেন। বিধুকে ধমক দিয়ে বললেন,
–কেউ ব্যথা পেয়েছে আর উনি হাসছে। ”
–তো কী করবো? তোমার মেয়ে সেই কখন থেকে মরা ঘুম ঘুমিয়ে যাচ্ছে এত করে জাগাচ্ছি কিছুতেই উঠছে না। তাই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিছি। ”
বলেই আবারও হাসতে শুরু করলো। রেহানা বেগম শাসনের সুরে বিধুর উদ্দেশ্যে বললো,
–বিধু ভুলে যেও না ও তোমার বড় হয়। এভাবে ধাক্কা দিয়েছো যদি বড় কোনো এক্সিডেন্ট হতো তখন?”
সত্যিই এত কিছু মাথায় ছিল না বিধুর। সে তো মজার ছলেই ধাক্কাটা দিয়েছে৷ সত্যিই বিষয়টায় ভাবা উচিত ছিল তার। বিধু নরম গলায় বললো,
–আসলে মামী আমি এতটা বুঝতে পারিনি।”
বিধুর মন খারাপ বুঝতে পেরে রেহানা বেগম বিধুর মাথায় হাত বুলিয়ে কোমল স্বরে বললো,
–বুঝতে পারোনি সেটা তো বুঝলাম। এখন থেকে আর কখনো এভাবে মজা করো না। কারণ কখনো সামান্য মজা অনেক বড় বিপদ ডেকে আনে। আজ যদি বিন্দুর পা মোচড়ে যেত তাহলে আজ ও বিয়ে বাড়িতে কিভাবে আনন্দ করতো? বা হাত মোচড়ে যেত। তখন কী তোমার ভালো লাগতো?”
বিধু মাথা নাড়িয়ে না বললো।
–এই তো গুড গার্ল। সব বুঝতে পারে। এখন যাও দু’জন ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে এসো। আর মন খারাপ করবে না কেমন?”
বিধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। বিন্দুর মা আর মামী চলে যেতেই বিন্দু চোখ মারলো বিধুকে। বিধু ভেংচি কেটে বললো,
–তুই আমার সাথে কথা বলবি না।”
–এ আর নতুন কী। যখন থেকে কথা বলতে শিখেছিস তখন থেকেই তোর এই বুলি শুরু হয়েছে। কেমন লাগলো বকুনি?(হাসতে হাসতে বললো)
–খুব খুব খুব মিষ্টি। তুই এসব বুঝবি না। বকুনি তো মানুষ তাকেই দেয় যাকে মানুষ অনেক ভালোবাসে। মামী আমাকে খুব ভালোবাসে তাই এগুলো বলেছে৷ বাট এগুলো আমার কাছে বকুনি মনে হয়নি। বরং কথাগুলো আমার জানার দরকার ছিল সেক্ষেত্রে আমার উপকারই হয়েছে।”
–এ বাবা কার মুখে কী শুনছি। এই কী সেই পিচ্চি বিধু! কত পাকা পাকা কথা শিখেছে। বুড়ি একটা! মাকে বলবো তাড়াতাড়ি ছেলে দেখে তোকে বিয়ে দিয়ে দিতে।”
–শয়তান ছেমরি থাম এখন নয়তো তোর চুল ছিঁড়বো। আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।”
কথা শেষ করেই রুম ছেড়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল বিধু। ও বেশ ভালো করেই জানে এখানে থাকলে এখন শুধু কথা বাড়বে আর বিন্দুর সাথে কথায় পেরে ওঠা ওর কম্য নয়।
বাড়ির পুরো উঠোন হতে রাস্তা অব্দি লাল,নীল,সবুজ রঙের বাতিতে সেজে উঠেছে। অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশান করা।
চারদিকে মানুষের সোরগোল। কেমন যেন গমগম আওয়াজ হচ্ছে। বিভিন্ন সাজে মানুষের উপস্থিতিতে বিয়ে বাড়ির অবস্থা পুরো জমজমাট। তার ওপর সূর্যের প্রখর উত্তাপ। সব মিলিয়ে এই অবস্থায় শাড়ি পরে বিন্দুর যায়যায় অবস্থা। প্রচণ্ড গরম লাগছে তারউপর কাতান শাড়ি পরে গরমের তীব্রতা যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বারবার নাকের ডগায়, থুতুনিতে আর কপালের মাঝাখানটা ঘেমে ঘেমে উঠছে। বরযাত্রীও চলে এসেছে। এত ভিড়ের মাঝে সাজেদা বেগম মেয়ে দু’টিকে যেতে দেননি। বাড়ির মধ্যেই উঠোনের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বিন্দু চোখজোড়া রাস্তার পাণে কাউকে খুঁজে চলেছে হন্যে হয়ে। সহসাই চোখজোড়া আটকে গেল বিন্দুর। চোখ সরাতে পারছে না কিছুভাবেই। নেভী ব্লু কালারের একটা পাঞ্জাবি পরেছে শিহাব। নেভিব্লুর মধ্যে গোল্ডেন পাথরের কম্বিনেশন। অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে শিহাবকে। আজ নিশ্চই বিন্দুর নজর লেগে যাবে। শিহাব কখন যে বিন্দুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে তারও খবর নেই। তখনও বিন্দু হা করে শিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। শিহাব বিন্দুর কানের কাছে মুখটা নিয়ে আস্তে করে বললো,
–এভাবে তাকিয়ে থাকলে মুখে মশা ঢুকবে। ”
কারো কণ্ঠস্বর শুনতেই ধ্যান ভাঙলো বিন্দুর। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে লাজুকভাবে শুধু একটু হাসলো বিন্দু।
–অপূর্ব!”
অপূর্ব শব্দ শুনতেই বিন্দু শিহাবের দিকে তাকালো। শিহাব কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। বিন্দু লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিলো। আস্তে করে বললো,
–এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন? চলুন ওইদিকটায় গিয়ে বসি।”
দু’জনে গিয়ে এক প্রান্তের চেয়ারে বসলো।
আজ যেন এই বিয়ে বাড়ির একমাত্র আকর্ষণ শিহাব। মেয়েরা পারে না যেন সেধে সেধে এসে শিহাবের সাথে কথা বলে। খুব অসহ্য লাগছে বিন্দুর।
–এই আপনি একদম চারপাশে তাকাবেন না।”
–কেন?”
–মেয়েরা আপনাকে চোখ দিয়ে গিলছে৷ আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে।”
বিন্দুকে ক্ষেপানোর জন্য শিহাব বললো,
–বাট আমার তো বেশ ভালোই লাগছে। সবাই আমাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে এটা তো সবার ভাগ্যে জোটে না।”
বিন্দু নাক-মুখ ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–তা আমার সাথে কে বলেছে আপনাকে প্রেম করতে? যান না যান গিয়ে ওখানের ওই ঢংগী মেয়েদের সাথে প্রেম করুন।”
–ইশ বিন্দু তুমি এত হিংসুটে আমার জানা ছিল না। এমন বুঝলে কখনওই তোমার সাথে রিলেশনে জড়াতাম না।”
বিন্দুর বুক ফেটে কান্না আসছে এসব কী বলছে শিহাব। কত ভালোবেসে ফেলেছে ও শিহাবকে মাত্র কয়েক মুহূর্তের পরিচয়ে আর ও কিভাবে পারছে এসব বলতে। চোখের একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরার আগেই শিহাব হাত দিয়ে মুছে দিলো।
–আরেহ পাগলী মেয়ে আমি জাস্ট ফান করছি আর তুমি সিরিয়াস হয়ে কাঁদতে বসে গেছো। এখন সাজুগুজু নষ্ট হলে তোমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়তাম আমি।”
–হইছে ঢং করা লাগবো না। আমার সাথে কখনো এমন ফান করবে না। আমি সহ্য করতে পারি না।”
শিহাব অবাক হয়ে দেখছে তার সামনে বসে থাকা ছোট্ট মেয়েটার দিকে। এই অল্প মুহূর্তে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছে এই মেয়েটা। সত্যিই অবিশ্বাস্য। অসম্ভব ভালো লাগছে শিহাবের এমন একজনকে জীবনের সাথে জড়িয়ে। সত্যিই বিন্দুর তুলনা হয় না।
একা একা বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিধু। বিন্দুকেও খুঁজে পাচ্ছে না এত মানুষের ভিড়ে। শিশিরেরও একঘেয়েমি লাগছে। কতবার করে বলেছে আসবে না শিহাবের অনুরোধে না এসেও কোনো উপায় ছিলো না। অগত্যা অনিচ্ছাসত্ত্বেও আসতে হলো। কিন্তু এখানে এসেও একা একা সময় কাটাতে হচ্ছে। শিহাব তো বিন্দুর সাথে খোশগল্পে ব্যস্ত। আর এদিকপ একা থাকার কারণে আজেবাজে চিন্তাগুলো বেশি বেশি মাথায় ভর করছে শিশিরের।
–এক্সকিউজ মী।”
–ইয়েস।”
–আমরা কী কিছু সময় কথা বলতে পারি?”
অনিচ্ছাসত্ত্বেও একটু মুচকি হাসলো বিধু। তারপর বললো,
–অবশ্যই চলুন ওইদিকটায় বসি।”
–ওকে চলুন।”
–আপনি কী বরের বাড়ির লোক?”
–হ্যাঁ আমার ফ্রেণ্ডের চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে।”
–ওহ্ তার মানে আপনি রিহাদ(সুমির বরের নাম) ভাইয়ার চাচাতো ভাইয়ের বন্ধু?”
–হ্যাঁ। নাম কী তোমার?”
–বিধু।”
–আমি যদি ভুল না ভেবে থাকি তাহলে তুমি বিন্দুর বোন?”
–হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। আপনার নাম কী?”
–শিশির।”
–ওয়াও শিশির! এই নামটা আমার অনেক প্রিয়!”
–এত প্রিয় হওয়ার কারণটা কী জানতে পারি।”
–জানি না। তবে সকালের শিশির বিন্দুর প্রতি আমার এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। বিশেষ করে সকালের শিশিরের ওপর খালি পায়ে হাঁটতে, আলতো করে হাত ভুলাতে। জাস্ট অসম্ভব ভালো লাগে আমার। আচ্ছা আপনার কী এসব ভালো লাগে না?”
শিশির উদাসীন একটা হাসি দিয়ে বললো,
–ভালো লাগাগুলো স্বতন্ত্র। কখন যে কী ভালো লাগে সেটাই তো বুঝার উপায় নেই।”
–এটা তো আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না।”
–যাই বলো তুমি কিন্তু বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারো।”
–এ আর এমন কী কঠিন ব্যাপার চাইলে আপনিও পারবেন। জানেন?”
–না বললে জানবো কী করে?”
–তাও ঠিক। আসলে আমাদের স্কুলের সব টিচাররা এবং মেমরাও বলে আমি নাকি খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারি।”
–ভালো তো। এটা তোমার একটা পজিটিভ সাইড। কিসে পড়ো তুমি?”
–এইবার জে এস সি দিব।”
–আমার পক্ষ থেকে অনেক শুভ কামনা রইলো। অনেক আগেই জানিয়ে দিলাম।কারণ হয়তো আর কখনো তোমার সাথে দেখাই হবে না।”
–এভাবে বলবেন না আবার আল্লাহ চাইলে দেখা হতেও তো পারে। এখন বলুন আপনি কিসে পড়েন।”
শিশির হেসে হেসে বললো,
–আমার পড়া শেষ এখন একটা প্রাইভেট স্কুলে জব করি”
–আল্লাহ আপনি আমার কত বড়। তবে কী জানেন আপনাকে আমার কাছে খুব পিচ্চি পিচ্চি লাগছে। আর চশমাতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।”
–তাই?”
–হু। অন্নেক।”
–আমারও তোমাকে অনেক ভালো লেগেছে। কত্ত মিষ্টি একটা মেয়ে তুমি। আমার ছেট্ট বোনটার মতো। অবশ্য ও তোমার থেকে বড়।”
–আপনার বোন কিসে পড়ে?”
–ও এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে।”
–ওহ্। আপনাদের বাসায় কে কে আছেন?”
–মা আমি আর ছোট বোন।”
–আপনার বাবা?”
–নেই।”
কথাটা বলতে গিয়ে গলটা ভিষণভাবে কা্পছিল শিশিরের বিধু বুঝতে পেরে আস্তে করে বললো,
–স্যরি না চাইতেই আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।”
শিশির টিস্যুতে চোখ চোখ মুছতে মুছতে বললো,
–ইট’স ওকে। এইবার উঠি অনেক কথা হয়েছে। বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলেই পিছু ডাকলো বিধু।
–ভাইয়া!”
শিশির অবাক হয়ে পেছন ফিরতেই বিধু হেসে বললো,
–আপনার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যান। আমার পরীক্ষার সময় আপনাকে ফোন করে জানাতে হবে তো। নয়তো আপনি আমার জন্য দোয়া কীবেন কিভাবে।”
বিধুর কথা শুনে হেসে ফেললো শিশির। এরপর নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে প্রস্থান ত্যাগ করলো।
কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবে না। তোমাদের মন্তব্যই আমার লেখার অনুপ্রেরণা।
চলবে,,,,,