পর্বঃ১৪+১৫ #অবৈধ_বিয়ে

0
593

#পর্বঃ১৪+১৫
#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ১৪

দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে।

বৃষ্টির টুপটুপ করা পানির কণা গুলি যেন তাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে। চুপচাপ বানিয়ে দিয়েছে তাদের।
নীরবতা কাটিয়ে রাজ বলল,

– রানি। তোমার সেদিনের বৃষ্টির কথা মনে আছে?
-…..
– ভাবছো, তোমার সাথে কবে আমার বৃষ্টির দিনে দেখা হলো?
রানি, তোমার সাথে আমার বৃষ্টির দিনে দেখা হয় নি। আমি তোমাকে বৃষ্টির দিনে দেখেছিলম। তুমি নও।

রাজের এমন কথা তে রানি তার দিকে একবার ফিরে তাকাল। তারপর আবার বাহিরের দিকে দৃষ্টি রাখল।

রাজ কফির কাপে মুখ দিতে দিতে আবার বলল,

– রানি তুমি সেদিন আমাকে রিজেক্ট করে বলেছিলে, আমার মুখ যেন তোমাকে না দেখাই। কিন্তু তোমার মুখ দেখতে আমাকে বারণ তো করো নি।

রানি অবাক হয়ে রাজের পানে তাকিয়ে আছে। আর রাজ বাহিরের দিকে। রানির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে আবার বলতে লাগল।

– সেদিনের ঘঠনার পর থেকে আমি আর তোমার সামনে যাই নি। নিজেকে যে ভাবেই পারি সামলে রেখেছিলাম। তবে তার প্রায় ১ মাস পর দেখি বুকের মাঝে কেমন চিনচিন ব্যথা হচ্ছিল। দেখার জন্যে মনটা বড়ই চঞ্চল হয়ে পরেছিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তোমার ভার্সিটির ছুটির সময় প্রায় হয়ে এসেছে। আর কিছু না ভেবে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। একটু পর পর ঘড়ি দেখছিলাম, সময় যেন শেষ না হয়ে যায়। দেখি তোমার ভার্সিটি ছুটির আর ১৫ মিনিট আছে। কিন্তু মেইন রাস্তা দিয়ে যেতে আমার আরো ৩৫ মিনিটের মতো লাগবে। কি করব তখন মাথা কাজ করছিল না। শর্টকাট রাস্তা দিয়েও যেতে ২০/২৫ লাগবে। আবার মাঝ পথে ঝুম বৃষ্টি পরতে লাগল। আমি খুব জুরে গাড়ি চালিয়ে ছিলাম। যেন তারাতরি যেতে পারি। ভার্সিটির অনেকটা দূরে যেই চায়ের ছোট দোকান টা ছিল, সেখানে গাড়িটা পার্ক করে রেখেছিলাম। একটু আড়ালেই ছিলাম আমি। যার কারণে তুমি আমাকে দেখতে পারো নি। তবে আমি যখন সেখানে গেলাম দেখি ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে। এত মানুষ আর ছাতার মাঝে সেই মুখটাই দেখতে পারছিলাম না। যা দেখার জন্যে আমি তখন ছটফট করছিলাম। অনেকক্ষণ হয়ে গেল, তুমি আসছিলেই না। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিল। আর একটু আগে আসতে পারলাম না বলে। ভাবছিলাম তখন, আর একটু আগে এলে হয়তো তোমাকে দেখতে পেতাম।
আর ভালো লাগছিল না। হঠাৎ দেখি অনেক পরে তুমি আর সাথে ঝরা আসছিলে। মনটা যেন বৃষ্টির পানির মতো শান্ত হয়ে উঠে ছিল। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ভেসে এলো। মনটা শান্ত হয়ে পড়েছিল। যেমনটা বৃষ্টির পর পরিবেশটা শান্ত আর স্নিগ্ধ মনে হয় তেমনটা। ভীষণ রকম ভালো লাগছিল।
কিন্তু বৃষ্টির পানি তে তোমার কাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে ছিল। যা আমি ছাড়াও একটা ছেলের দৃষ্টি কাড়ছিল। ছেলেটা খারাপ নজরে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তুমি দূরে যাওয়ার পরপরই আমি ওর কাছে যাই। খুব করে মেরেছিলাম ওকে। অনেকটাই মেরেছিলাম। ইচ্ছে করছিল, চোখ দুটিই নষ্ট করে দেই। কিন্তু তা না করে খুব মেরেছি। আমি ছেলেটাকে মারছিলাম, আর ও শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করছিল কেন মারছি। আমি কোন উত্তর দেইনি। দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নি। ছেলেটা কে মেরে শুধু বলেছিলাম, “এই টাকা টা দিয়ে ঔষধ কিনে বাসায় যাবি। আর কোনো মেয়ের দিকে এই ভাবে তাকালে, সেদিন মার খাবি। তবে তার জন্যে টাকা তকে দিব না। তোর কাফনের কাপড় কিনার জন্যে অন্যের কাছে দিব। মনে রাখিস কথাটা।”
এটা বলেই চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। আসার পর মনটা মান ছিলোই না। বারবার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে যে ছবি গুলি তুলেছিলাম, সে গুলি দেখে দেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপরে আর কিছু মনে হয়। সকালে উঠে আবার নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম। এর পর থেকে প্রায় লুকিয়ে দেখতাম তোমায়। তবে প্রতিদিন নয়। কারণ প্রতিদিন দেখলে মন ঠিক রাখতে পারতাম না। নিজেকে সামলাতে পারতাম না। তাই কিছুদিন পরপর যখন মানাতে পারতাম না তখনই যেতাম দেখতে। দেখার পর আবার সেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠত নিজের মাঝে।

রানি অবাক হয়ে রাজ কে দেখছিল। রাজের দিকেই তাকিয়ে ছিল এতটা সময়। কিন্তু রাজ একবারও তাকায়নি তার দিকে।

রাজ বেলকুনি থেকে রুমে চলে এলো।
রানি একাই সেখানে দাঁড়িয়ে রইল।

রানি এতক্ষণের কথা গুলি নিয়ে চিন্তার খেলায় মেতে উঠল। রাজ ঠিকি বলেছে। সেদিন ভার্সিটি থেকে সে আর ঝরার আসার পথে সেই ছেলে টা তার দিকে কুনজরে তাকিয়ে ছিল। বাজে কথাও বলছিল। সে আর ঝরা এমন দিনে ঝামেলা না করেই চুপচাপ চলে এসেছিল।

রানি এতক্ষণ যে রাজ কে দেখছিল, তার মনেই হয় নি সে রাজ খারাপ কিছু করতে পারে তার সাথে। সেই রাজের চোখের ভাষা তো অন্য কিছু ছিল। সেই রাজের চোখে ছিল, অজানা কিছু অনুভূতি। তার চোখে বাজে কিছু ছিল না। কিন্তু সে সামনে যা দেখে সেটাই বা অস্বীকার করবে কি করে?
তার তাকিয়ে থাকা রাজের জন্যেও বুকের মাঝে অজানা কিছু অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে।
তাহলে তার রাগ কি রাজের প্রতি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে? কিন্তু তা কি করে হয়? লোকটার মাঝে এত চরিত্র থাকে কি করে? একটা লোক তার মাঝে কত ধরনের চরিত্র ধারণ করতে পারে? একটা মানুষের আর কত রূপ দেখবে সে? রানি রাজের কোন রূপ আসল কোনটা নকল, বুঝতে পারছে না। রাজ নামক ব্যক্তি টা বড় কৌতূহলজনক।

দুপুরে,
– এখন রান্না করবে? নাকি আমি বাহির থেকে কিছু নিয়ে আসব?
-….
– কি হলো রান্না করবে?
– আচ্ছা আমাকে দিয়ে যে আপনি আপনার হুকুম করান। অন্য কেউ হলে তাই করাতেন?
– আমি কখনোই অন্য কাউকে চাইতাম না। আর তুমি যদি সব টা মেনে নিতে তাহলে রাজরানীর মতো রাখতাম তোমায়। তোমার কাজে আমি সাহায্য করতাম। তোমাকে নিজের হাতে খায়িয়ে দিতাম। তোমাকে নিয়ে অনেক গল্প করতাম। আমাকে যদি তুমি ভালোবাসতে, তাহলে কষ্ট জিনিসটা হয়তো তোমাকে পেতে দিতাম না।
তুমি না মানলেও তোমার উপর নিজের অধিকার ফলাই। কিন্তু যদি মানতে তাহলে দেখতে পেতে রাজ চৌধুরীর ভালোবাসাটা কি।
যাই হোক, তুমি থাকো আমি বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসি।
– লাগবে না।
– তুমি খিদে নিয়ে থাকতে পারো না তা আমি জানি। থাকো আসছি।
– খিদে নিয়ে থাকবে কে? আমি খিচুড়ি রান্না করছি আপনি থাকুন।
– আমার এত হুকুম মানতে হবে না। কষ্ট করতে হবে না এখন। আমি নিয়ে আসছি।
– বললাম তো আমি খিচুড়ি রান্না করব। আর এই বৃষ্টির দিনে সেটা ছাড়া অন্য কিছু ভালো লাগে না। বাবাও তাই বলত।
– আমি বাহির থেকে খিচুড়িটাই নিয়ে আসব।
– বাহিরের টা আর ঘরের টা কি এক হলো? বেশি কথা বলবেন না তো।

রানি তা বলে এক ভেংচি দিয়ে চলে গেল।
আর রাজ বেচারা হা করে তাকিয়ে আছে। এটা যেন তার স্বপ্নের রানি।

চুপচাপ রানি রান্না করছে। আর রাজ তাকিয়ে তাকিয়ে তার দৃষ্টি তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।

রাজ যেন এই রানি কেই চাইত। এই রানির সাথে সুখে থাকতে চাইত। এই রানির সাথেই তো সে স্বপ্নের সংসার করে। রাজের বুকের ভিতরটা শান্ত হয়ে উঠছে।

রানি খিচুড়ি, গরম গরম মাছ ভাজি আর ডিম ভাজি করে টিবিলে সাজাতে লাগল।
– আপনি কোথায়?
– আসছি। তুমি বসো।
– আরে তারাতরি আসবেন তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
– হুম আসছি।

– কি ব্যাপার বলতো? এতটা যত্ন যে?

রাজের কথাতে রানিও ভাবতে লাগল, সত্যিই তো সে এমন স্বাভাবিক ব্যবহার করছে কি করে? তার সাথে রাজ যা যা করল তার পরেও কোন মায়ার টানে সে এমন করছে? কিসের মায়াটান? রানি এই সব চিন্তা করতে লাগল।

আর রাজের মুখে আবারও সেই প্রাপ্তির এক চিলতে হাসি ভেসে এলো।

চলবে….

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ১৫

রাজ রানি এক সাথে খাবার টেবিলে বসে আছে।

খাওয়া শুরু করার আগেই রাজের ফোন টা বেজে উঠল। রাজ নিজের ফোনটা পকেট থেকে বের করতে করতে বললো,
– ১ মিনিট।

ফোনের দিকে তাকিয়ে সে অবাক। রাজ বলেছিল তাকে যেন ফোন না দেয়। সে নিজে থেকে ফোন দিলে তবেই কথা হবে। তাহলে তার বাবা এখন কেন ফোন দিল?
হ্যাঁ ফোনটা তার বাবাই করেছে।

– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
– ওলাইকুম আসসালাম বাবা। কেমন আছিস?
– বাবা তোমাকে না বলেছিল আমি….
– চুপ কর তুই। একটা কথাও বলবি না। আর কত দিন ঢাকা থাকবি তুই একা একা? বাবা প্রায় দেড় বছর হয়েছে। এখন তো ফিরে আয়। আর মাথায় রাগ নিয়ে থাকিস না। তোর মা রোজ তোর জন্যে মন খারাপ করে থাকে। তুই এবার চিটাগাং চলে হায় বাবা।
– তুমি জানো বাবা আমি কাজে এসেছি।
– হ্যাঁ জানি তোর কাজ। দরকার নেই ওসবের। তুই শুধু এবার ভালোই ভালোই চলে আয় আমাদের কাছে।
– আমি আমি যে কাজের জন্যে এখানে এসেছিলাম, তা প্রায় শেষ। ব্যাস শুধু আর একটা মাথা বাকি।
– বাবা তুই শুধু শুধু ঝামেলায় জড়িয়ে যাবি। এই সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে আয়। আর কত একা একা সেখানে থাকবি তুই? আমাদের কথা কি একবারও মনে হয় না তোর? কতদিন হলো দেখি না তোকে। সেখানে কখন কি করিস কে জানে। চলো আয় বাবা।
– বাবা।
– হ্যাঁ বল।
– বাবা আসলে আমি…
– কি? কিছু হয়েছে? এমন করে বলছিস কেন? দেখ সেখানে কোনো সমস্যা হলে আমাকে বল।
– না বাবা সমস্যা নয়। আসলে তোমাদের না জানিয়ে বড় একটা কাজ করে ফেলেছি।
– কি করেছিস? দেখ আমার টেনশন হচ্ছে। কি করেছিস বলবি তো।
– আমি তোমাদের না জানিয়ে আমাদের পরিবারে আর এক জন সদস্য বারিয়ে ফেলেছি বাবা।
– হাহাহাহা। শুনছো মায়া, তোমার ছেলে নাকি বিয়ে করেছে। আমাদের মন আশা বুঝি এবার পূরণ হবে। ঘরে একটা মেয়ের সাথে নাতিনাতনির মুখো দেখতে পাবো।

বাবার এমন আচরণে তার অবাক হওয়ার কথা নয়। রাজ আর যাই হোক এই বিষয়েও তার বাবা এমন আচরণ করবে ভাবেনি। বিয়ের মতো এমন একটা কাজে তার বাবা এতো সহজ ভাবে নিয়ে নিল। সত্যিই এমন মা বাবা পেয়ে রাজ খুব খুশি। এমন মা বাবাও হয় তা তার আগে জানা ছিল না।

রানি এতক্ষণ রাজের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কি বলছে কি লোকটা?

– যাই হোক বাবা ভালো করেছিস। এবার তো আমার বউ মা কে ফোন টা দে।
– হুম বাবা দিচ্ছি।

– আমার বাবা। কথা বলো।
– হুম।
– সালাম দিও কিন্তু।

রাজের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রানি কথা বলতে শুরু করল।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ মা তোমার কন্ঠ অনেক সুন্দর মনটা কেমন যেন ভরে উঠল। ঠিক যেন আমার মা কথা বলছে হাহাহা।

রানি রীতিমতো ধাক্কার উপর ধাক্কা খাচ্ছে। কোন দেশে এসে পড়ল সে?
সেখানে রাজ একবার এক রকম করলে অন্য বার আরেক রকম করে। তার উপর তার বাবার এমনভাবে কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল সে। তাদের না জানিয়ে ছেলে বিয়ে করল তার বউয়ের সাথে এই ভাবে এত সুন্দর করে কথাও বলছে। রানির বেশ অবাকই লাগছে তাদের পরিবারটা কে।
কি অদ্ভুত।

– কি হলো বউ মা? কথা বলছো না কেন? লজ্জা পেও না। আমাকে নিজের বাবা মনে করবে। দেখবে তুমিও আমার মেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারবে।
এই ধরো তোমার শাশুড়ি মা তোমার সাথে কথা বলার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছে।
আর একটু হলে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করবে। হাহাহা। নাও কথা বলো।
– জ্বি।

রানি এ কোন পরিবারের এলো? ভাবতে পারছে না কিছু। সব যেন তার ঘুলিয়ে যাচ্ছে।

– হ্যালো।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওলাইকুম আসসালাম মা। কেমন আছো তুমি?
– জ্বি আন্টি ভালো।
– কি বললে তুমি? আমি তোমার আন্টি হবো কেন? আমি তো তোমার শাশুড়ি মা।
শাশুড়ি মা কে মা বলতে হয়। মা বলে ডাকবে আমায়।

রানির ভেতর টা কেঁপে উঠল এম কথা তে। নিজের মাকে মা ডাকতে পেরেছিল কি না তার মনে নেই। এই রকম মায়া মমতা পূর্ণ কথা শুনে তার চোখ দিয়ে যেন পানি পড়ে যাবে। রানির মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

– কি হলো মা ডাকো। লজ্জা পাচ্ছো তাই না? জানো প্রথম দিন আমিও আমার শাশুড়ি মা কে মা ডাকতে পারছিলাম না। তখন উনি আমাকে বলল, আস্তে আস্তে অভ্যাস করে নিতে। আমিও তোমাকে বলছি, আমাকে মা বলেই ডাকবে তুমি।
কখনো ওই শয়তান ছেলেটার বউ মনে করবে না। মনে করবে তুমি আমাদের মেয়ে। আমার মেয়ে নেই। ভালোই হলো একটা মেয়ে পেয়ে গেলাম।
এখনো কি মেয়ের মুখ থেকে মা ডাক শুনবো না?

এমন কথা শুনে রানির চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো টুপটুপ করে পানি পরছে। রাজ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কিছু বলছে না।

– মা। (কেঁদে কেঁদে)
– এই তো আমার লক্ষ্মী মেয়ে। দেখেছো, মেয়ে এলে কেউ এত তারাতরি মা ডাক শুনতে পারে? কিন্তু আমার মেয়ের হওয়ার সাথে সাথেই আমি মা ডাক শুনতে পেলাম।
– মা। আপনি খুব ভালো। আমার নিজের মা নেই। খুব ছোট থাকতে মারা গিয়েছে তেমন মা ডাকতে পারি নি। আপনাকে মা ডেকে বুকটা জুড়িয়ে গেল আমার।
– পাগলি মেয়ে। তুমি আমাকে আজ থেকে মা ডাকবে আজ থেকে আমিই তোমার মা।
দেখো তো কি করছে লোক টা। তোমার শ্বশুর কথা বলতে ধরো।
– হুম। উনার কাছে দিন।
– হ্যালো মা। তুমি তোমার শাশুড়ি কে মা ডাকলে আমাকে তো বাবা ডাকলে না। তোমার সাথে রাগ করেছি।
– ঠিক আছে রাগ করতে হবে না বাবা। এখন থেকে আপনাকেও বাবা বলে ডাকব।
– এই তো আমার মেয়ের মতো কথা। আচ্ছা রাজ কে দাও তো।
– হুম।

– হ্যাঁ বাবা।
– রাজ।
– বলো বাবা।
– কবে আসছিস তুই?
– বাবা এটা কেমন কথা? তুমি তো জানো।
– আর জানতে চাই না আমি। ভুলে যায় না এখন তোর সাথে আমরা ছাড়াও আরো এক জন আছে। তার কথা ভেবে সব বাদ দিয়ে চলে আয়। তোর কিছু হলে মেয়েটার কি হবে বল তো।
– বাবা আমার কিছু হবে না। আমি যার কারণে এখানে এসেছিলাম, সেই কাজ টা তো প্রায় শেষ। শেষ বলতে তাদের সাথে আমি দেখাও করে নিয়েছি। ঠিকও করেছি। তারপরেও..
– তারপরেও আর কিছু নেই। তুই তারাতারি বউমা কে নিয়ে চলে আয়। আর কিছু জানি না আমি।
– বাবা ঠিক আছে আর কয়েকটা দিন যাক পরে আমি আসব।
– পরে ভুলে যাবি না তো?
– না বাবা।
– ঠিক আছে। বউমার খেয়াল রাখিস।
– হুম তোমরাও ভালো থেকে। রাখছি।
– ঠিক আছে।

রাজ ফোনটা কেটে দিল।
– আমার মা বাবা এমনই। খুব ভালে।

রাজ বলে শেষ করার আগেই সে রাজ কে জড়িয়ে ধরল। রাজ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তার মাথায় হাত রাখল।

রাজ বুঝতে পেরেছে রানি কষ্ট পাচ্ছে। “এত দিন মা হারা মেয়ের মায়ের সুখের আভাস পেয়ে আনন্দে কেঁদে দিল।” রানি এত ভালোবাসা পেয়ে সুখে কান্না করে দিল। রানি কান্না করছে আর রাজ তার মাথায় হাত বুলাতে লাগল।

রানি অনেকক্ষণ পর, রাজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।
রানি উঠে যেতে নিলেই রাজ তার হাত ধরে তাকে শান্তু করে বসিয়ে দিল।

রাজ শান্তু কন্ঠে রানি কে বলল,
– বসো।
-…..
– হা করো।

রানি একবার রাজের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল।

– কি হলো হা করো?
– আমি নিজে খেয়ে নিব। আপনি খেয়ে নিন।
– আমি তোমাকে হা করতে বলেছি। মানে হা করো।

রানি আর কথা না বারিয়ে হা করল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here