তবু_সুর_ফিরে_আসে ১৮তম পর্ব

0
597

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

১৮তম পর্ব

ন‌ওশাদ আর রেজোয়ান ডিজাইনারের সঙ্গে দরকারি মিটিং করছে রেস্টুরেন্টে বসে ! ন‌ওশাদ মিটিং এর মাঝে একটা ফাইল আনার জন্য নিজের কটেজে ফিরে এলো ! রুম খালি সে তার ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে ফাইলটা বের করে কাগজ গুলো উল্টে দেখছে ঠিক তখনই ঠাস করে শব্দ করে দরজা খুলে দৌড়ে হেরা ঘরে ঢুকলো ! ন‌ওশাদ কিছু বোঝার আগেই হেরা সোফা আর টেবিলের মাঝামাঝি একটা কর্নারে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। কেউ লুকিয়ে থাকলে যেভাবে বসে থাকে ঠিক সেভাবেই।
ন‌ওশাদ অবাক হলো কিছুটা!
কি হয়েছে হেরা ? এভাবে ফ্লোরে এসে বসলে যে ?
হেরা চুপ করে আছে এবং দরজার দিকে আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে আছে ! ন‌ওশাদ হেরা কাছে এগিয়ে গেল !
হেরা কি হয়েছে তোমার ?
হেরা চোখ তুলে ন‌ওশাদের মুখের দিকে তাকাতেই ন‌ওশাদ দেখে হেরার চোখ,মুখ সব লাল হয়ে আছে ! প্রচন্ড ভয় আতঙ্ক পুরো চোখে মুখে ! কি হয়েছে হেরা তোমার ? আচমকাই উঠে এসে হেরা ন‌ওশাদ কে জাপটে ধরলো ! ন‌ওশাদ পুরো হতভম্ব। কি হয়েছে ওর ?
আমাকে আপনি লুকিয়ে ফেলুন প্লীজ ! লুকিয়ে ফেলুন তাড়াতাড়ি!
কেন কি হয়েছে হেরা ? ন‌ওশাদ হেরা কে জড়িয়ে ধরে আছে ! এরকম করছো কেন ?
হেরা খুব শক্ত করে ন‌ওশাদ কে আঁকড়ে ধরে আছে ! থরথর করে কাঁপছে ! ন‌ওশাদ ওর কাছ থেকে নিজেকে আলগা করতে পারছে না !
কি হয়েছে কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না !
আচ্ছা ঠিক আছে তাকাও আমার দিকে ! হেরা ন‌ওশাদের দিকে চোখ তুলে তাকালো !
কি হয়েছে হেরা ?
হেরা কেঁদে উঠলো !
বলো কি হয়েছে এত ভয় কিসের জন্য পাচ্ছো আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি বলো ! এক সেকেন্ড দাঁড়াও আগে পানি টা খাও ! ন‌ওশাদ পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিল হেরার দিকে ! হেরা পানি তে কোন রকম একটু চুমুক দিয়ে গ্লাস সরিয়ে দিল।
এখন বসো তো কি হয়েছে বলো ?
হেরা চোখ মুছলো আমি দুপুরে যেখানে বসে ছিলাম সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ আগে বসে ছিলাম একা ! হঠাৎ পিঠে কে যেন হাত রাখলো ! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি একটা অপরিচিত দাঁড়িওয়ালা ছেলে একদম আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার পিঠে হাত দিয়ে রেখেছে , কিভাবে যে হাসছে , আমি কোনরকম দাঁড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে হাতটা সরিয়ে দৌড়ে ছুটে এলাম । হেরা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ন‌ওশাদ নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছে না ! কি বলছো এসব ?
হেরার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে! আমার খুব ভয় করছে ! নুরুলের লোকজন না তো ? আমার পিছুপিছু চলে এসেছে ?
ন‌ওশাদ কিছুই বুঝতে পারছে না ! তুমি এখানে থাকো আমি দেখছি ! এত বড় সাহস কার দেখতে হবে আমাকে !
না আপনি যাবেন না আমার খুব ভয় করছে! হেরা ন‌ওশাদের হাত টেনে ধরলো !
কিছু হবে না তোমার আমি আছি তো !
না না যাবেন না প্লিজ আমাকে একা রেখে যাবেন না !
ঠিক আছে আমি আছি ! ন‌ওশাদ মোবাইল বের করে রেজোয়ান কে কল করলো ! ওপাশে রেজোয়ান ধরেই বলা শুরু করলো,
কোথায় তুই , আমরা এখানে তোর জন্য অপেক্ষা করছি !
রেজোয়ান একটু আমার রুমে আয় তো তাড়াতাড়ি ঝামেলা হয়েছে সুমনা কে নিয়ে আয় প্লিজ জলদি !
ন‌ওশাদ ফোন রেখে হেরার মাথায় হাত রাখলো ! এখনো ভয়ে আতঙ্কে হেরা কাঁদছে ! ন‌ওশাদ বুঝতে পারছে না কি স্বান্তনা দিবে !
রেজোয়ান আর সুমনা ছুটে এলো ওদের ঘরে ! সুমনা অবাক হয়ে গেল হেরা কে দেখে!
কি হয়েছে ওর ?
ন‌ওশাদ পুরো ঘটনা খুলে বললো ! রেজোয়ান ন‌ওশাদ এর সব কথা শুনে রাগে লাল হয়ে গেল! উত্তেজিত হয়ে রেজোয়ান বলল, আমি রিসোর্টে র লোকজনের সঙ্গে কথা বলছি দাঁড়া !
সুমনা হেরার পাশে এসে বসেছে!
সুমনা তুমি ওকে দেখো আমিও যাচ্ছি রেজোয়ানের সঙ্গে !
হেরা ন‌ওশাদের হাত আটকে রেখেছে , আপনি আমাকে রেখে যাবেন না !
হেরা তুমি একটু বসো সুমনা আছে তোমার পাশে আমি যাব আর আসব !
আমার ভয় লাগলে খুব !
হেরা আমি আছি তোমার পাশে প্লিজ ওরা যাক দেখুক কার এত বড় দুঃসাহস !
সুমনা হেরার হাত ধরে বসলো ! হেরা কেঁদেই যাচ্ছে !
ভাবি দেখলেন তো আমার সঙ্গেই এমন হয় !
না হেরা ভয় পেয়ো না ! প্লিজ ওরা গেছে দেখবে ছেলেটাকে খুঁজে বের করবে !
আমার পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আমি ভয়ে নড়াচড়া করতে পারছিলাম না । কিভাবে যে দৌড়ে সেখান থেকে আসলাম ! সুমনা হেরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল । একটু স্বাভাবিক হ‌ও প্লিজ। হেরা সুমনা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে !

ন‌ওশাদ আর রেজোয়ান রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছে ! ওরা নিজেরাও ঘটনা শুনে অবাক হলো ! রেজোয়ান রেগে চিৎকার করে এলাকা গরম করে ফেলল !
হঠাৎ এক সিকিউরিটি গার্ড ছেলেটার বর্ণনা শুনে বলল, আশেপাশে এরকম একটা পাগল আছে ! হঠাৎ হঠাৎ সে রিসোর্টের আশেপাশে চলে আসে ! এটা তার কাজ হতে পারে !
ন‌ওশাদ বলল, পাগল হোক আর ছাগল আপনাদের সিকিউরিটি সিস্টেম এত দূর্বল কেন ? যে কেউ কিভাবে এখানে ঢুকে পড়ে ! আজ আরও বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো আমার ওয়াইফের সঙ্গে !
ম্যানেজার বারবার সরি বলছে !
আপনার সরি এসব কিছুর জন্য সাফিসিয়েন্ট না !
স্যার আমি খোঁজ করছি এটা সেই পাগল টা হলে আমি ধরে নিয়ে আসছি স্যার ! ম্যাডাম আইডেন্টিফাই করলে ওকে পুলিশের কাছে তুলে দিব !

ন‌ওশাদ কটেজে ফিরে এলো ! সঙ্গে রেজোয়ান।
হেরা আর সুমনা বসে আছে ! হেরার চোখে মুখে এখনও যথেষ্ট আতঙ্ক।
ন‌ওশাদ হেরার পাশে গিয়ে বসলো ! তুমি লোকটাকে দেখলে চিনতে পারবে ?
আমি দেখতে চাই না প্লিজ !
ঠিক আছে তোমার দেখার দরকার নেই! এখন শান্ত হ‌ও !
কি বলল রিসোর্টে র লোকজন ?
সুমনা ওরা বলছে একটা পাগল আছে নাকি আশেপাশে এটা তার কাজ !
কি বলো এরকম জায়গায় পাগল চলে আসে আর ওদের কোন সিকিউরিটি দেখে না !
ন‌ওশাদ সরি দোস্ত আমি এই ঘটনা ঘটবে এখানে বুঝতে পারিনি ! কত শখ করে তোদের এখানে নিয়ে ‌আসলাম !
তুই সরি বলছিস কেন ?
সরি হেরা !
রেজোয়ান প্লিজ এভাবে বলিস না আমি আর হেরা কষ্ট পাব তাহলে!
দোস্ত আমরা কালকেই এখান থেকে চলে যাব !
দেখাযাক কি হয় রেজোয়ান ?
হেরা চুপচাপ বসে আছে ! সুমনা হেরার হাত ধরলো , হেরা এভাবে ভেঙে পড়লে হয় একটা খারাপ মানুষের জন্য তুমি কেন কষ্ট পাবে ? তুমি ভয় পেয়ো না আমরা সবাই আছি এখানে !
তারপর ন‌ওশাদ এর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা রুমেই ডিনার করে নাও কেমন ! আমরা রুমে যাচ্ছি। সুমনা রেজোয়ান কে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো!
রেজোয়ান আর সুমনার সঙ্গে ন‌ওশাদ ও দরজা পর্যন্ত এলো !
সুমনা বলল,ন‌ওশাদ ওর পাশে পাশে থাকো খুব ভয় পেয়ে গেছে মেয়েটা !
পুরোনো ঘটনা মনে করে বেশি আতংকিত হয়ে গেছে ও !
আমারো তাই মনে হচ্ছে ন‌ওশাদ ! ওর সঙ্গে কথা বলো পরিবেশ টা হালকা করার চেষ্টা করো !
দেখি !
রেজোয়ান আর সুমনা রুম থেকে বের হয়ে গেলে ন‌ওশাদ হেরার কাছে এসে বসলো ! হেরা এখনো যথেষ্ট ভয়ে ভয়ে আছে !
হেরা তাকাও তো আমার দিকে !
হেরা চোখ তুলে তাকালো ন‌ওশাদের দিকে !
এখনও এত ভয় পাচ্ছো কেন ? ন‌ওশাদ হেরার হাতটা ধরলো !
জানি না আমার মনে হচ্ছে সেই আগের মত আমার আশেপাশের সব কিছু আমাকে শেষ করে ফেলবে !
একটা ঘটনা নিয়ে এভাবে ভেঙে পড়লে হয় ! এক কাজ করি চলো আমরা দুইজন বাহির থেকে হেঁটে আসি একটু । ভালো লাগবে তোমার ! চলো !
না না আমি এখন কোথাও যাব না !
আমার সঙ্গেও না ?
প্লিজ আমার ইচ্ছে করছে না !
আচ্ছা ঠিক আছে চেহারা টা ঠিক কর একটু , চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে আসো এটা তো করবে !
হেরা বেড থেকে নেমে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল !
ন‌ওশাদের খুব খারাপ লাগছে। কি একটা ব্যাপার হয়ে গেল ! এখন যেভাবেই হোক হেরা কে এই ট্রমা থেকে বের করা দরকার ! একটা মেয়ের জন্য এরকম মানসিক যন্ত্রণা কতটা কষ্টকর সেটা সে ছাড়া আর কেউ জানে না। ন‌ওশাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
হাতের ঘড়িটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে ন‌ওশাদ সিদ্ধান্ত নিল হেরার মুড সে ঠিক করে ছাড়বেই ! বাচ্চা একটা মেয়ে এভাবে কেঁদে রাত পার করবে কখন‌‌ই না !
হেরা ওয়াস রুম থেকে বের হতেই ন‌ওশাদ হাসি মুখে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো!
এই তো এখন চেনা যাচ্ছে তোমাকে ! কেঁদে চোখ লাল করে দিয়েছিলে টমেটোর মত !
চুল ঠিক করে এসো বারান্দায় গিয়ে বসি দুজন !
হেরা ঘাড় কাত করলো !

দুজন কিছুক্ষণ চুপচাপ পাশাপাশি বসে রইল ! তারপর ন‌ওশাদ ই প্রথম কথা শুরু করলো ! আজ তোমার গান শুনে তো আমি মুগ্ধ হেরা ! কেউ গান না শিখেই এত সুন্দর গাইতে পারে !
হেরা এখনো চুপ করে আছে !
ন‌ওশাদ হেরার কাছ ঘেঁষে বসলো ! হেরার হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলো ! কবিতা শুনবে হেরা ?
হেরা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো !
আপনি আবৃত্তি করবেন ?
হুম ! অনেক আগে ভার্সিটিতে থাকার সময় করতাম এখন হয়তো পারব না আগের মত ! তবে তোমার জন্য চেষ্টা করে দেখতে পারি ! কবিতা ও সবটা মুখস্থ নেই কোন টা, তারপরও দেখি কি হয় ?
ভাবি বলছিল আপনি খুব সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতেন !
সেরকম কিছু না , করতাম আর কি ! তবে একটা শর্ত আছে তুমি মন ভালো করবে, সন্ধ্যায় কি হয়েছে সব ভুলে যাবে !
এতটা সহজ কি ?
কি হয়েছিল যে ভুলে যাওয়া যাবে না ?
আপনি বুঝবেন না আমার শরীরটা এখনো কাঁপছে ঘীন ঘীন করছে !
হেরা ! এভাবে ভাবছো কেন ?
লোকটা আমার পিঠে হাত দিয়ে রেখেছিল ! আমি প্রথমে ভাবলাম হয়তো আপনি এসেছেন ডাকতে , কিন্তু হাতের স্পর্শ টা অন্য রকম ছিল, এরকম স্পর্শ আমি আরো একবার পেয়েছি বলেই শান্ত হতে পারছিনা ! আপনি তো জানেন সবকিছু !
ন‌ওশাদ হেরার পিঠে হাত রাখলো , প্লিজ বি নরমাল ! ওসব কথা বাদ দাও , এখন কবিতা শোনো , নির্মলেন্দু গুণের কবিতা । আমার খুব প্রিয় কবি , একটা সময় উনার সব কবিতা মুখস্থ ছিল ! কবিতা টার নাম ‘ ভালোবাসার জন্য ছুটি’
গতকাল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আবার ভালোবাসবো ।
ভেবেছিলাম আমি আর কাউকে ভালোবাসবো না, কিন্তু তোমাকে দেখার পর‌ই আমি আমার
সিদ্ধান্ত পাল্টেছি,
আমি আবার কিছুদিনের জন্য তোমাকে
ভালোবাসবো !
তোমাকে দেখার পর থেকে আমার কেবলই
মনে হচ্ছে,
তোমাকে আমার আবারও কিছুদিন
ভালোবাসা উচিত।
তাই আমি স্থির করেছি, আমি
তোমাকে ভালোবাসবো !
আর মনে নেই ব্যস এতটুকুই ! হেরা মুগ্ধ হয়ে গেল ন‌ওশাদের ভরাট কন্ঠের কবিতা আবৃত্তি শুনে।
কি ভালো হয়নি ?
আচ্ছা কিছুদিন কেন ভালোবাসবে ? সারাজীবন নয় কেন ?
সেটা তো আমি জানি না হেরা কবি বলতে পারবে! হেরার প্রশ্ন শুনে ন‌ওশাদ হেসে দিল ! তুমি জানতে চাইলে কবিকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারি ?
কবিকে চিনেন আপনি ?
অনেক আগে একবার দেখা হয়েছে ! তুমি চাইলে আবার দেখা করে প্রশ্ন করতে পারি !
না থাক !
কেমন লাগলো কবিতা আবৃত্তি সেটা তো বললে না ?
খুব সুন্দর !
তুমি এখনো অনেক বিক্ষিপ্ত হয়ে আছো হেরা , তোমার চেহারা তাই বলছে !
হেরা মাথা নিচু করে ফেলল ! ভালো লাগছে না কিছু !
আমি একটু ভেতর থেকে আসছি বলেই হেরা ঝট করে রুমে ঢুকে গেল ! ন‌ওশাদ কিছু বলার আগেই দেখতে পেল হেরা ওয়াস রুমে ঢুকে গেছে !
ন‌ওশাদ‌ও রুমে ঢুকলো ! ড্রেস চেঞ্জ করে আব্বার রুমে যাবে ভাবছে তখনই দরজায় নক করলো রুম সার্ভিস !
ডিনার পাঠিয়েছে রেজোয়ান ! টেবিলের উপর রেখে চলে গেল ওয়েটার !
রেজোয়ান এর ফোন পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো ন‌ওশাদ ,
হ্যালো
লোকটা ধরা পড়েছে ! মানসিক সমস্যা আছে আর ইয়াবা টাইপ নেশা করে হেরার গলার চেইন নেয়ার জন্যেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে ! পুলিশে দিয়েছে রিসোর্টে র লোকজন ! ওরা খুব সরি বলছে বুঝলি !
হুম!
হেরার কি অবস্থা ?
ও সহজ হতে পারছে না !
খেয়াল রাখ ঠিক হয়ে যাবে!
থ্যাঙ্কস বন্ধু !
আরে ধুর ! রাখছি দেখা হবে সকালে !
গুড নাইট।
ন‌ওশাদ আব্বাকে দেখতে রুমে ঢুকলো ! ফরহাদ আজমী টিভি দেখছে ! ছেলেকে দেখে সাউন্ড কমিয়ে দিল !
ডিনার শেষ হয়েছে আব্বা ?
হুম ! কোথায় ছিলি তুই ?
আমার রুমে ! কিছু লাগবে তোমার ?
না, হ্যাঁ রে বাবু তোর কি অনেক টাকা ?
হঠাৎ এই কথা কেন বলছো আব্বা ?
রাজু বলল, আপনার ছেলের অনেক টাকা তাই তো কয়দিন পর পর টিভিতে দেখায় !
ন‌ওশাদ হেসে দিল ! আব্বা ঘুমিয়ে পড়ো টাইমলী তা না হলে তোমার শরীর খারাপ করে কিন্তু !
ঠিক আছে যা তুই !

রুমে এসে ন‌ওশাদ দেখে হেরা এখনো ওয়াস রুমে ! সে খুব অবাক হলো ! কি ব্যাপার ?
ন‌ওশাদ একবার ভাবলো দরজায় নক করবে ! না থাক ও কি ভাববে ! পানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
ন‌ওশাদ ফাইল গুলো গুছিয়ে রাখছে । আজ ডিজাইনারের সঙ্গে মিটিং টা ক্যানসেল করতে হয়েছে‌। আগামীকাল তাড়াহুড়া করে শেষ করে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে !
ফাইল, ল্যাপটপ গুছিয়ে রাখছে যখন হেরা রুমে এসে ঢুকলো ! ন‌ওশাদ তাকিয়ে দেখে হেরা গোসল করে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে কাঁপতে কাঁপতে সামনে এসে দাড়ালো!
কি ব্যাপার তুমি এত রাতে গোসল করলে !
হুম !
তোমার এত ঠান্ডার সমস্যা এর মধ্যে এত সময় নিয়ে এই শীতে গোসল করা কি ঠিক হলো হেরা ? শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেলে !
হেরা কি যেন খুঁজছে ।
আমার শরীর ঘীন ঘীন করছে বললাম না , তাই অনেক সময় লাগিয়ে ভালো করে গোসল করে এলাম !
হেরা বেডের উপরে আশেপাশে কি যেন খুঁজছে !
তোমার নির্ঘাত ঠান্ডা লাগবেই হেরা দেখো, কোন দরকার ছিল না গোসল করার ! তুমি কি কিছু খুঁজে পাচ্ছো না ?
ওড়না টা ! এখানেই তো রেখে গিয়েছিলাম !
ন‌ওশাদ বালিশের পাশ থেকে ওড়না টা নিয়ে হেরার গায়ে পড়িয়ে দিল ! তারপর হেরার কাঁধে দুই হাত রেখে বলল, লোকটা ধরা পড়েছে ! সে তোমার গলার এই চেইন টা নেয়ার উদ্দেশ্যে এসেছিল আর কোন মতলব ছিল না হয়তো !
কি বলছেন চেইন নেয়ার জন্য পিঠে হাত দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিবে কোন চোর ! সে তো চেইন টান দিয়েই দৌড় দিবে , তাই না ?
তোমার কথায় যুক্তি আছে ! আচ্ছা বাদ দাও যা হ‌ওয়ার হয়ে গেছে ও ওর স্বাস্তি পাবে ! তুমি এত আপসেট হয়ে থেকো না হেরা !
আপনি বিশ্বাস করবেন না আমি আধ ঘন্টা ধরে সাবান ঘষে ঘষে গোসল করেছি আমার নিজেকে নোংরা মনে হচ্ছিল গা গোলাচ্ছিল !
ন‌ওশাদ হেরার ঠোঁটে আঙুল রাখলো ,চুপ প্লিজ এসব কথা আর না । অনেক হয়েছে ! দেখো আগে ভয়ে কাপছিলে এখন ঠান্ডায় কাপছো ! হেরা এখন নরমাল হ‌ও আমি আছি তো তোমার কাছে একটা দুই তিন সেকেন্ডের খারাপ ঘটনার জন্য তুমি এতটা কষ্ট পাচ্ছো কেন বলো !
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বারবার এসব ঘটনা আমার সঙ্গে কেন হয় ! আপনি আমার লাইফে আসার পর মনে হচ্ছিল সব কিছু সুন্দর , সব কিছু আনন্দময় কিন্তু আজকে আবার আগের মত একটা খারাপ ঘটনা ঘটলো তাই বেশি কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি মানুষ টাই হয়তো খারাপ !
ছিঃ এটা আবার কি কথা ! আসলে কি হয়েছে ঐ চোর এসেছিল চেইন চুরি করতেই কিন্তু তোমার পিঠ টা এত সুন্দর ওর আর চেইনের কথা মনে নেই মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে পিঠ দেখে !
কি বলছেন এসব ? হেরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো !
হুম আজ তুমি আর সুমনা দুপুরে বীচের দিকে ওখানেই তো বসে ছিলে আমি পিছন থেকে তোমাদের কাছে আসছিলাম প্রথমেই তোমার খোলা পিঠের দিকে চোখ পড়তেই আমিও কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম মুগ্ধ হয়ে ! ঐ চোরের অবস্থা ও তাই হয়েছে !
ন‌ওশাদের কথা শুনে হেরার কান গরম হয়ে গেল , গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, আপনি আর ঐ চোর কি এক হলেন নাকি ?
লুকিয়ে লুকিয়ে ই তো দেখেছি চোরের মত ! ন‌ওশাদ ঠোঁট চেপে হাসছে !
হেরা মনে মনে বলল, ঢং লুকিয়ে দেখা হয় বুঝি , কেন অধিকার নিয়ে সামনে আসতে পারেন না !
ন‌ওশাদ তাকিয়ে দেখে হেরার মুখটাতে একটু হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে ! মনে মনে বলল, যাক নরমাল হচ্ছে! শোনো এসব ব্লাউজের ডিজাইনার কি সুমনার ?
জ্বি!
ডিজাইন চেইন্জ করো তা না হলে আমার মত চোরের চোখ নষ্ট হবে ! হো হো করে অট্টো হাসিতে ন‌ওশাদ ভেঙে পড়লো ।
এখন এসো হেরা ডিনার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে !
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না !
উঁহু এসব কথা শুনবো না ! বাধ্য মেয়ের মত খেতে বসো !
আমার খুব ঠান্ডা লাগছে কম্বলের নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে !
খেয়ে নাও তারপর !

ডিনারের সঙ্গে সঙ্গে হেরা কম্বলের নিচে ঢুকে গেল ! ঠান্ডার ওষুধ গুলো ভাগ্যিস সঙ্গে নিয়ে এসেছিল ! ন‌ওশাদ বিছানায় শোয়ার সময় জিজ্ঞেস করলো, ওষুধ খেলে তাই না ?
হুম !
কালকে দেখবে আবার শ্বাস কষ্ট শুরু হবে !
ওষুধ খেয়ে নিয়েছি হবে না আশাকরি !
দেখা যাক !
হেরা ন‌ওশাদের দিকে ফিরে কাত হয়ে শুয়ে আছে !
আপনি কি সব আলো নিভিয়ে দিবেন ? আজ থাকুক একটু আলো আমার ভয় করছে !
এখনো ভয়ে করছে তোমার ? আমি আছি যখন ভয় কিসের ?
তারপরও কেমন অস্বস্তি লাগছে !
ন‌ওশাদ পাশ ফিরে হেরার গাল স্পর্শ করলো , সরি হেরা আমার দ্বায়িত্ব ছিল তোমার সিকিউরিটির আমি পারিনি সেটা রাখতে ! সরি !
ছিঃ আপনি একথা বলছেন কেন ! চিন্তা করে দেখলাম আমার ওভাবে একা বসে থাকা ঠিক হয়নি !
সেটা তো কিছু টা ঠিক হয়নি তোমার কিন্তু তবুও তোমার সব কিছুর দ্বায়িত্ব তো আমার নাকি !
বাদ দেন এসব কথা !
ঠিক আছে বাদ দিলাম তুমিও বাদ দিবে কথা দাও !
হুম দিলাম !
এই তো লক্ষী মেয়ে!
আচ্ছা তখন যে কবিতা আবৃত্তি করলেন অনেক সুন্দর ছিল কবিতা টা !
কিন্তু তুমি তো মনোযোগ দিয়ে শুনলে না !
আসলে মনটা তখন খুব খারাপ ছিল ! প্লিজ এখন একটা কবিতা শোনান না !
এখন !
হ্যাঁ হ্যাঁ ! প্লিজ !
কোন কবিতা শোনাই ইদানিং তো সব ভুলে গেছি ! দাঁড়াও একটু চিন্তা করে নেই !
ন‌ওশাদ চোখ বন্ধ করে আবৃত্তি করা শুরু করলো,
” আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত!
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক।
আমি হাত পাখা নিয়ে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন আমাকে জিজ্ঞেস করুক
আমার জল লাগবে কিনা,নুন লাগবে কিনা।
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা!
এঁটো বাসন গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা খুলে দিক।
কেউ একজন কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক কেউ অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করুক,‌ ‘ তোমার চোখ এত লাল কেন’ ?

চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে হেরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
হেরা ভাবছে আমি এসব কিছু আপনার জন্য করতে চাই । আমার পুরো জীবনটাই আপনার করতে চাই!
কি দেখছো হেরা?
অদ্ভুত সুন্দর! কবিতা এবং আবৃত্তি টা !
ধন্যবাদ।
ভাবি ঠিক কথাই বলেছেন আপনি খুব সুন্দর আবৃত্তি করেন। সেজন্যই আপনার জন্য ..
থেমে গেলে কেন , আমার জন্য কি?
আপনাকে ভার্সিটিতে থাকতে সবাই পছন্দ করতো এবং মেয়েরাও ! হেরা হাসছে।
মেয়েরা আমাকে পছন্দ করতো এই কথা সুমনা বলেছে? ন‌ওশাদ‌ও হেসে দিল হেরার কথা শুনে।
আর কে বলবে আমাকে বলুন?
সেরকম কিছু না, বুঝলে সুমনা বাড়িয়ে বলেছে।
একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো ?
বলো।
আমার আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনি অনেক রাগী যদিও কারো উপর এত দিনেও রেগে যেতে দেখিনি ,আজ এই ঘটনায় আমি ভয় পাচ্ছিলাম আপনি এই খারাপ লোকটাকে হয়তো অনেক বাজে ভাবে পানিসমেন্ট দিবেন ! কিন্তু আপনি আমার প্রত্যশার চেয়েও বেশি ধৈর্য্য দেখিয়েছেন !
তাই প্রত্যশার চেয়েও বেশি হেরা ?
হুম! আমি ঝামেলা ভয় পাই একটা সময় মনে হচ্ছিল আমি এতটা ভয়, কষ্ট পাচ্ছি আপনি না কিছু একটা করে ফেলেন ঐ লোকের সঙ্গে।
ন‌ওশাদ মুচকি মুচকি হাসছে ,সব কি আর আওয়াজ দিয়ে করতে হয় ! আমি আওয়াজ জিনিস টা অপছন্দ করি।
বুঝলাম না!
সব বুঝতে হবে না হেরা । ন‌ওশাদ হেরার দিকে ঝুঁকে হাত দিয়ে হেরার গালে ধরলো, তারপর হুট করেই ঠোঁট নামিয়ে হেরার ঠোঁটের নিচের সেই ছোট্ট তিল টাতে চুমু খেল !
সব কিছু বুঝতে হয়না হেরা আর ঐ লোক এই মুহূর্তে টের পাচ্ছে সে ন‌ওশাদ আজমীর কোন জায়গায় হাত দিয়েছিল ! তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও গুড নাইট!
ন‌ওশাদ পাশ ফিরে শুয়ে গেল!
হেরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে , সে কল্পনাও করতে পারছে না এই এক সেকেন্ডে কি ঘটে গেল! ন‌ওশাদ এভাবে ঝট করে ওর ঠোঁটের নিচে চুমু খেলো এটা কি বাস্তব ছিল না তার কল্পনায় !
হেরার বুক হাপড়ের মত উঠা নামা করছে মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। এরকম কিছু কি এই মুহূর্তে সত্যিই ঘটে গেছে নাকি সব তার স্বপ্ন ছিল ! ঠান্ডার ওষুধ খাওয়ার জন্য ওর ঘুম পাচ্ছিল কিন্তু এক ঝটকায় সব ঘুম উড়ে গেছে হেরা নিজের ঠোঁটের নিচে হাত ছোয়ালো । কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল লজ্জায়, আর উত্তেজনায় অনেক্ষণ তার চোখে ঘুম এলো না !
কিন্তু কি আশ্চর্য পাশে শুয়ে মানুষ টা ঠিক ই ঘুমিয়ে গেছে। হেরা উঠে বসে তাকিয়ে রইল ন‌ওশাদের দিকে ! তার খুব ইচ্ছে করছে মানুষটার ঠোঁটে আঙুল স্পর্শ করতে ,এটা তার অনেক দিনের ইচ্ছে !
এই মুহূর্তে এই ইচ্ছে টা খুব করছে খুব!
হেরা পাশ ফিরে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেল!

রাতের শেষ দিকে হঠাৎ কটেজের খুব কাছে কুকুর চিৎকার করে উঠতেই হেরা ঘুমের ঘোরে চমকে ন‌ওশাদকে জড়িয়ে ধরলো। ন‌ওশাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভয় জিনিস টা এখনও কাটেনি বোঝা যাচ্ছে। ন‌ওশাদ নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো না।
মনে মনে ভাবছে, আমি তো চাই কেউ একজন এভাবেই আমার হাত আঁকড়ে ধরে, আমাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকুক। আমার একাকীত্ব টাকে ছুড়ে ফেলে দিক । আমার রাত গুলোকে দীর্ঘ শ্বাসের চাদর থেকে টেনে বের করে আনুক। ছয় বছর পর কেউ জড়িয়ে আছে তাকে। আজ মনে হচ্ছে শুধু শারীরিক কামনা না ভালোবাসা আর নির্ভরতার এরকম স্পর্শের‌ও খুব প্রয়োজন হয় জীবনে।
ন‌ওশাদ হেরার মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিল!
রাতে হেরা হয়তো অনেক চমকে গেছে ন‌ওশাদের কান্ড দেখে কল্পনাও করেনি এরকম কিছু সে করবে! ন‌ওশাদের মাথা ব্যথা করছে ! সে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

সকালে অনেক বেলা করে ন‌ওশাদের ঘুম ভাঙ্গলো। তাও রেজোয়ানের ফোনের শব্দে।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে প্রায় আটটা বাজে।
হ্যালো!
তুই ঘুমাচ্ছিলি ?
হুম রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছে উঠতে পারিনি।
নো প্রোবলেম , হেরার কি অবস্থা ?
ঠিক আছে ঘুমাচ্ছে !
চেক আউট করে ফেলব ওরাও আমাদের সঙ্গে কক্সবাজার চলে যাবে হোটেল এ রুম নিতে বল আজহার কে । হেরা কে এখানে রেখে যাবো না !
ঠিক আছে আমি আজহারের সঙ্গে কথা বলছি !
রাখছি !

হেরা ঘুম থেকে উঠে দেখে ন‌ওশাদ রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেছে ! ও ফ্রেশ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দরজায় নক করল রাজু !
এসো ভেতরে!
আম্মা স্যার বলছে সব কিছু গুছিয়ে তাড়াতাড়ি খেতে যেতে আপনাকে আমরা একটু পরেই চলে যাব এখান থেকে !
এখনি ?
জ্বি !
আব্বা কি করে ?
দাদা স্যারের সঙ্গে ঐদিকে গেছে !
সুমনা ভাবি কোথায় ?
সবাই রেডি আপনার জন্য বসে আছে !
আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি!
রাজু রুম থেকে বের হতেই হেরা তাড়াহুড়া করে সব গুছিয়ে রেডী হয়ে গেল !
রেস্টুরেন্টে এসে দেখে সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে!
সরি ভাবি আপনারা আমার জন্য বসে আছেন , উনি আমাকে না ডেকে চলে এসেছে !
আরে ব্যাপার না আমিও মাত্র এলাম এখানে!
আমি ঠান্ডার ওষুধ খেয়েছি তাই মরা মানুষের মত ঘুমাচ্ছিলাম !
ঠান্ডা লেগেছে তোমার ?
অল্প !
আপনার বন্ধু কোথায় ?
ন‌ওশাদ ঐদিকে ফোনে কথা বলছে দেখলাম !
কথা শেষ করতে না করতেই ন‌ওশাদ আর রেজোয়ান ওদের কাছে এসে দাঁড়ালো !
কালো প্যান্ট আর সাদার ভেতর কালো চিকন স্টাইপের শার্টে ন‌ওশাদকে কি অদ্ভুত লাগছে , হেরা মুগ্ধ চোখে দেখছে ! কিন্তু উনার চোখ গুলো লাল হয়ে আছে কেন ? চশমার ফাঁক দিয়ে বোঝা যাচ্ছে !
ন‌ওশাদ হেরার পাশের চেয়ারে বসলো !
কি খবর তোমার , ঠান্ডা লাগেনি তো ?
হেরার কালকে রাতের কথা মনে হতেই লজ্জা লজ্জা লাগছে ! কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার উনি কত সহজ ভঙ্গিতে কথা বলছে যেন কিছুই করেননি !
হেরা গলা নামিয়ে বলল, আমি ঠিক আছি! কিন্তু আপনার চোখ গুলো লাল হয়ে আছে কেন?
ন‌ওশাদ মুচকি হেসে বলল,নির্মলেন্দু গুণের কবিতার মত ?
কবিতার মত মানে ?
কালকে আবৃত্তি করলাম না ‘ তোমার চোখ এত লাল কেন ‘?
ও আচ্ছা রাতের কবিতা টা ! সত্যিই আপনার চোখ লাল মনে হচ্ছে!
মাথা যন্ত্রণা করছে , রাতে ঘুম হয়নি !
ঘুম হয়নি আপনার ?
ন‌ওশাদ হেরার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, কিভাবে হবে কেউ যদি রাত ভর আমার দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে ঘুম আসে বুঝি ?
কে তাকিয়ে ছিল ?
দুটো সুন্দর চোখ !
আপনি জেগে ছিলেন ?
কি মনে হয় তোমার ? ন‌ওশাদ হাসছে !
হেরা লজ্জা পেয়ে চুপ করে গেল!
ন‌ওশাদ ঐ ঘটনার কি হলো ? সুমনার প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকালো ন‌ওশাদ ।
লোকটা পুলিশের কাস্টোডিতে আছে এখন !
সেটা রেজোয়ান বলেছে রাতেই ! ছিনতাইকারী নাকি ও !
হ্যাঁ !
একটু আগে লোকাল এসপির সঙ্গে কথা হলো ওকে ওর প্রাপ্য শিক্ষা রাতে দেয়া হয়েছে !
ভালো করেছো !
হেরা চমকে তাকালো , কি হয়েছে লোকটার ?
কিছু না হেরা তুমি ব্রেকফাস্ট শুরু করো !

সবাই ব্রেকফাস্ট শেষ করে চেক আউটের জন্য অপেক্ষা করছে !
ওদের সব কিছু গাড়িতে উঠানো হচ্ছে !
ন‌ওশাদ কে একা পেয়ে হেরা ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, ভাবি বলছিল আপনি ঐ লোকটাকে শিক্ষা দিতে বলেছেন পুলিশ কে !
হুম ! হি ডিজার্ভ ইট !
ওকে কি পুলিশ খুব মেরেছে ?
স্বাভাবিক , ও যদি তোমার চেইনটা টান দিয়ে নিয়ে চলে যেত আমি কিছুই বলতাম না ! একটা সামান্য গোল্ডের চেইন ডাজেন ম্যাটার ফর মী কিন্তু সে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তার প্রাপ্য স্বাস্তি তো তাকে পেতেই হবে তাই না হেরা ?
মেরে ফেলবেন ? হেরা চোখ বড় বড় করে তাকালো !
আরে না বোকা মেয়ে , তোমার কি আমাকে পাষন্ড মনে হয় নাকি ? আর কখনো এরকম কাজ যেন না করে সেটাই পুলিশ বুঝিয়ে দিচ্ছে ওকে !
আপনার তো অনেক ক্ষমতা , পুলিশ আপনার কথা শুনে !
আমার কোন ক্ষমতা নেই বোকা মেয়ে ! তুমি ওসব নিয়ে মাথা ঘামিও না তো ! এখন কাছে আসো আমার, তোমার টিপ টা বাঁকা হয়ে আছে ঠিক করে দেই !
ন‌ওশাদ হেরার টিপ ঠিক করে দিল !
হেরার টিপ ঠিক জায়গায় ই থাকে ওর খুব ভালো লাগে টিপ ঠিক করার সময় যখন হেরা মুখটা বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে ! ওর তখন ইচ্ছে করে কপালে টিপের জায়গায় আদর করে দিতে ! আরো দুষ্টু হতে ইচ্ছে করে কখনো কখনো ওর ! কিন্তু সে জানে এতটা বেপরোয়া হ‌ওয়া ওকে মানায় না!
চলো গাড়িতে উঠি !
চলেন !
তার আগে এসো দু’জন একটা ছবি তুলি !
ঠিক আছে চলুন!

ওরা সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে এলো ! এলিন, নাহিন কক্সবাজারের ছবি দেখার জন্য হেরাকে পাগল করে দিচ্ছে আসার পর থেকে !
কোন ছবি তুলি নাই!
কেন বৌমনি ?
আমার কি ক্যামেরা আছে নাকি ছবি তুলবো !
হেরার রুমে ওদের আড্ডা হা হা হি হি চলছে ! ন‌ওশাদ ওর রুম থেকে দেখলো ওদের হুড়োহুড়ি !
বৌমনি ওখানেও কি তোমরা দুই রুমে ছিলে ?
হেরা মাথা নেড়ে না করলো !
তাহলে এখানে কি সমস্যা ?
আমি কিভাবে বলব এলিন ?
তোমাদের ব্যাপার আমি কিছুই বুঝিনা বাবা !
বুঝতে হবে না ! হেরা হাসছে এলিন হতাশ চোখ তাকিয়ে আছে ওর দিকে !
একটু পর ন‌ওশাদের রুমে ঢুকতেই ন‌ওশাদ হেরার দিকে একটা খাম এগিয়ে দিল !
কি এটাতে ?
রেজোয়ান পাঠিয়েছে , তোমার আর সুমনার ছবি আছে বোধহয় ! আমি দেখিনি , খুলে দেখো !
হেরা ছবি গুলো বের করতেই হাসতে শুরু করলো !
হাসছো কেন ?
দেখুন অনেক ছবি ! আপনার আর আমার ছবি !
দেখি !
ন‌ওশাদ ছবি দেখে আকাশ থেকে পড়লো ! কারণ সে জানতোই না রেজোয়ান একজন ফটোগ্রাফার কে দিয়ে হেরা আর ন‌ওশাদের ছবি তুলিয়েছে ! ফটোগ্রাফার ছায়ার মত সঙ্গী হয়ে হেরা আর ন‌ওশাদের ছবি তুলেছে দূর থেকে ! এখানে সেই সব ছবি ! এমনকি ন‌ওশাদ যে হেরাকে কোলে তুলে নিয়েছিল বর‌ই গাছের নিচে সেই ছবিও আছে !
হেরা ছবি গুলো নিয়ে দৌড় দিল নিজের ঘরে !
ন‌ওশাদ রেজোয়ানের কান্ড দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে !

পরদিন ঘুম ভেঙ্গে হেরা দেখে ন‌ওশাদ এত বেলা হয়ে গেছে তবুও অফিস যায়নি !
আনারের মা ব্যস্ত রান্নাঘরে ! হেরার রুমে অন্য দিন এতক্ষনে চলে আসে সে ! আজ দেখা নেই তার।
হেরা নিচে ডাইনিং এ এসে দেখে ন‌ওশাদ বসে আছে !
আপনি এখনো অফিসে যাননি , শরীর ঠিক আছে ?
অনেক ভালো আছি এবং খুব আনন্দে আছি !
ভালো লাগছে দেখে আপনাকে!
কে আসছে বলো তো হেরা ?
কে ?
কিছুক্ষণ পর নিশাল আসছে , গাড়ি গেছে ওকে আনতে ! ন‌ওশাদের চোখে মুখে এক অন্য রকম আনন্দ আজ ! অনেক দিন পর নিজের সন্তান কে দেখবে সে তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতটা ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে ! বারবার ঘড়ি দেখছে সে !
তুমি যাও রেডি হয়ে এসো হেরা তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা হবে নিশালের আজ!
জ্বি যাচ্ছি !
হেরা ও ভেতরে ভেতরে অন্য রকম অনুভুতি ফীল করছে ! এত দিন কখনো মাথায় আসেনি ব্যপারটা , আচ্ছা নিশাল ওর সঙ্গে সহজ ব্যবহার করবে তো ?
হেরার নার্ভাস লাগছে কেন জানি !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here