লীলাবালি🌺 #পর্ব_৩০

0
480

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩০
আফনান লারা
.
অর্ণবের চাহনিতে রহস্য খুঁজে পেলো কুসুম।তার ঐ কথায় যে এমন করে তাকিয়ে আছে সেটা আর বোঝার অপেক্ষা করেনা।তবে কথাটা শুনে ভাল ভাবছে নাকি খারাপ?
যাই হোক,এই মানুষটা তো আমায় সবসময় খারাপই ভাবেন।আমি আর ভালোর সংজ্ঞা খুঁজতে যাবোনা।

অর্ণব খাবার শেষ করে চলে গেছে রুমে।বিছানায় বসে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলো।হঠাৎ জুথির একটা কাজে হাসবে নাকি কাঁদবে তা ভাবতে গিয়ে তব্দা খেয়ে বসে আছে সে।
জুথি ওর এমন কোনো পোস্ট বাকি রাখেনি যেগুলোতে এঙ্গরি রিয়েক্ট দেয়নি।এই কান্ড ঘটিয়েছে সন্ধ্যা বেলায়।মানে মেয়েটার মাথা মনে হয় গেছে।
ফোন রেখে সামনে তাকাতেই কুসুমকে দেখলো কি একটা বলার জন্য চলাফেরা করছে সামনে দিয়ে।বারবার ঘুরেফিরে এক জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে।
অর্ণব কথা না বলে উঠে বের হতে গেলো রুম থেকে।কুসুম ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছে সে।অর্ণব জানালো ভাত খাওয়ার পর ৪০কদম হাঁটা তার অভ্যাস।কুসুম আর কিছু বললোনা, অর্ণব ও চলে গেছে।সেসময়ে মিশু ভাবীর অট্টহাসি কানে আসায় কুসুম গেলো তার রুমের কাছে।ভিডিও কলে সাগর ভাইয়ার সাথে কথা বলছেন তিনি।কুসুম মুচকি হেসে চেয়ে রইলো ওদিকে।সাগর ভাইয়া মিশু ভাবীকে বলছেন ভাবীকে নাকি আজ বাচ্চাদের মতন লাগে।ভাবী সে কারণেই হাসছেন।
এটা দেখে কুসুমের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।তাকেও তো সবাই বাচ্চা বলে কিন্তু কই উনি তো পছন্দ করেন না!
অর্ণবের ফোন জ্বলছে।কুসুম রুমে এসে চেয়ে দেখলো জুথির কল।কিন্তু ধরলোনা।বুঝতেও পারলোনা এটা কার কল।কল একের পর এক আসছে।
ধরে নিলো মৃন্ময়ীর কল।
-‘কিন্তু উনি তো ফোন ধরতে মানা করলেন আমায়।বাহিরে গিয়ে বলবো যে ফোন এসেছে?
না থাক।নাহলে আবার ঝাড়ি দেবেন।’

কুসুম গিয়ে বিছানায় গোল হয়ে বসলো এবার।কল একের পর এক আসছে অনবরত।এরপর মেসেজ।ও ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজে চোখ বুলালো।ইংরেজীতে লেখা মেসেজ।একটা ওয়ার্ডও তার মাথায় ঢুকলোনা।বাংলা হলেও ঢুকতোনা।আকারে বড় মেসেজ।কুসুমের নিজের প্রতি রাগ হলো, কেন সে পড়ালেখা জানেনা?জানলে এখন লেখাগুলো পড়তে পারতো।
অর্ণব সেসময়ে রুমে ঢুকতেই কুসুম ফোনটা রেখে দিলো আগের জায়গায়।অর্ণব কাছে এসে বিছানার ওপর থেকে ফোন নিয়ে মেসেজে ক্লিক করেছে।জুথি লিখেছে- “””পারছিনা ভুলতে।”””কপি করে দশবার লেখা।
এটা দেখে অর্ণবের খারাপ লাগলো।কুসুম হাত নাড়িয়ে বললো,’মিননয়ি আপু মনে হয় আবারও ফোন করেছিল।আপনি তো মানা করেছেন তাই ডাকিনি”

অর্ণব ফোন পকেটে ঢুকিয়ে শুয়ে পড়েছে।কুসুম লুকিয়ে রাখা একটা গোলাপ বালিশের তলা থেকে বের করে হাতে নিয়ে মিটমিট করে হাসছিল নিঃশব্দে।গোলাপের ঘ্রান নাকে আসতেই অর্ণব পেছনে তাকালো।কুসুমের হাতে গোলাপ দেখে কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে সে।কুসুম গোলাপটা মাথায় গেঁথে বললো,’একটা কথা শুনবেন?’

-“না’

-‘সাগর ভাইয়ার নাকি বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে ভাল্লাগে।তাই মিশু ভাবীকে বলছিল আজ তাকে অনেক ভালো লাগছে তিনি কিসের নাকি বাচ্চামো করছিলেন।’

-‘তো?’

কুসুম কিছু বললোনা চুপ করে থাকলো।অর্ণব পেছনে ফিরে বললো,’আমার আর সাগর ভাইয়ার পছন্দের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ’

-‘ওহ।আচ্ছা আপনি কি ঢাকায় চলে যাবেন? ‘

-“হ্যাঁ’

-‘আর আসবেননা?’

-‘না আসবোনা।গেলে বাঁচি।এখানে আমার দম আঁটকে আসছে’

-‘আমাকে নেবেন?’

-‘না’

কুসুম এবারও উত্তরে কিছু বললোনা।চুপ করে শুয়ে পড়েছে।ওর নিরবতা হয়ত আশা করেনি অর্ণব।ভেবেছে কান্নাকাটি করবে যাবার জন্য।পরে ভাবলো ভালোই হলো নাছড়বান্দা গিরি দেখালোনা।জোর করলেও ওকে আমি সঙ্গে নেবো না।থাকি মেসে।ওকে নিলে আলাদা বাসা নিতে হতো।এখনও ঠিকঠাক চাকরিও পাইনি।তাছাড়া ওকে কদিন সহ্য করতে পারছিনা,সঙ্গে নিয়ে গেলে মাসের পর মাস সহ্য করতে হতো’

আজ রাতেও অর্ণবের ঘুম আসছেনা।এদিকে সবে বারোটা বাজে।ফজরের কাছাকাছি সময় হলে হয়ত মসজিদে গিয়ে বসে থাকতো।ওখানে একটু হলেও মনে শান্তি পাওয়া যায়।কিন্তু এ সময় তো রাতের শুরু।
উঠে বসে সে মুখটা মুছে নিলো দুহাত দিয়ে।কদিন ধরে না হচ্ছে ঘুম আর না যাচ্ছে মাথা ধরা।
-‘কবে আমার জীবন আবার আগের মতন হবে।’

হাতের ঘড়িটা দেখতে গিয়ে দেখলো হাতই খালি।খুলে কই রেখেছিল সেটাই মনে পড়লোনা।বালিশের তলায় চেক করে পেছনে তাকালে অর্ণব।চোখ পড়লো কুসুমের মুখের ওপর।রুমের লাইট তারা নেভায়নি বলে কুসুমকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো।ভেবেছিল ঢাকায় না নিয়ে যাওয়ার কথায় কুসুম কোনো রিয়েকশান দেখায়নি কিন্তু সে অবশ্যই রিয়েকশান দেখিয়েছে তবে তা নিরবে।চোখ পানিতে ভিজে আলোয় চিকচিক করছে।
অর্ণব মুখ ফিরিয়ে নিলো।মেয়েরা কথা দিয়ে ছেলেদের মানাতে না পারলে কান্না দিয়ে মানায়।তবে আমি মানছিনা।এমনিতেও জীবন থেকে শান্তি উঠে চলে গেছে।ওকে ঢাকায় নিয়ে গেলে জীবনে আর কিছু থাকবেনা আমার।তাছাড়া আমি পুরোটা সময় বাহিরে থাকবো।ও একা একটা মেয়ে কি করে থাকবে??ওরে একা রেখেও তো আমি সারাক্ষক্ষণ টেনসনে থাকবো।কি না কি হয়ে বসে।আমার ভয় লাগে না জানি বাবা জোর করে ওকে আমার সাথে পাঠিয়ে দেন।তাহলে আমি শেষ।কিছুতেই নেওয়া যাবেনা।এখানেই থাকুক।ভাল থাকবে।’

জুথির ফোন এসেছে আবার।অর্ণব ফোন মাত্র হাতে নিয়েছিল। জুথির কল দেখে কেটে অফ করে দিলো একেবারে।জুথির সাথে কথা বললে ও আরও ইমোশনাল হয়ে যাবে।আর ও তো বলে গেছে ওর কল যেন না ধরি।
বারান্দায় এসে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে সে ভাবলো যদি জুথি জেদ করে কিছু করে বসে?
ভয় লাগলো আবার।শেষে বাধ্য হয়ে সে নিজেই ফোন করেছে ওকে।অনেকক্ষণ রিং হবার পর জুথি রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে কোনে সাড়া না পেয়ে অর্ণব বললো,’কি হয়েছে?ঠিক আছেন?”

-‘আমি এত কষ্ট কোনোদিন পাইনি।আমার কোনো কিছু সহ্য হয়না।কি করলে নিস্তার পাবো একটু বলবেন?”

-‘সেটা যদি আমার জানার থাকতো তাহলে আমি নিজের উপর এপ্লাই করতাম’

-‘আচ্ছা আমাদের তো বেশিদিনের সম্পর্ক হয়নি।দেড় মাসই তো।তাহলে কেন এমন লাগে?কেন আমি আপনাকে ভুলতে পারছি না।বুকে জ্বালা করে।আমি আপনার পাশে ঐ মেয়েটাকে মেনে নিতে পারছিনা কেন?আপনি আমার হলেননা কেন?ভালোবেসে অপরাধ করেছি?’

কুসুম গোলাপের কাটার খোঁচা খেয়ে জেগে গেছে।অর্ণব নেই দেখে চমকে উঠে বসলো ।দরজা ভেতর থেকে লাগানো বলে বারান্দার দিকে তাকালো সে।ওখানে অর্ণব ফোনে কথা বলছিল।কুসুম বিছানা থেকে নেমে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।

-“না অপরাধ করোনি।আমি আসলে…..’

অর্ণব কথা বলতে বলতে পেছনে তাকিয়ে কুসুমকে দেখে কথা থামিয়ে ফেলেছে।
জুথি বললো,’আপনার স্ত্রী সামনে?’

অর্ণব সঙ্গে সঙ্গে কলটা কেটে দিয়েছে।কুসুম কিছু বললোনা।সে ভাবলো অর্ণব তার সাথে এক বিছানায় শুলে ওর ঘুম হয়না বলে বারান্দায় সময় কাটায়।কার ফোন এসেছিল তা ভাবলো না সে।
অর্ণব এগিয়ে এসে বললো,”আমার ফ্রেন্ড কল করেছিল।’

-“আমি কি জিজ্ঞেস করেছি?”

-‘তাহলে ওমন দাঁড়িয়ে কি দেখছিলে?’

-‘কিছু দেখছিলাম না।বুঝার চেষ্টা করছিলাম আপনার অসুবিধার কারণেই কি একসাথে বিছানায় শোন না’

-‘তো কি বুঝলে?’

-“কিছু বুঝিনি।আমি বালিশ নিয়ে মেহমানের রুমে যাবো?’

-“চুপচাপ গিয়ে ঘুমাও।এক মিনিট!তুমি গ্যাস্টিকের ঔষুধ খেয়ে আধ ঘন্টা পর ভাত খেয়েছিলে?’

-“না’

-“তো যাও খাও’

কুসুম চোরের মতন মুখ করে বালিশ একটা নিয়ে যেতে যেতে বললো,’আপনি আলো নিভিয়ে ঘুমান।শুভ রাত্রি’

-‘এই দাঁড়াও!’

-“কি?’

-“বালিশ রাখো।তোমাকে আমি বলছি অন্য রুমে গিয়ে থাকতে?আমার কথার অবাধ্য হওয়া কে শিখিয়েছে তোমায়?স্বামীর কথা স্ত্রীর মেনে চলতে হয় জানোনা এটা??’

কুসুম মুখে হাসি ফুটিয়ে বালিশ রেখে চলে গেলো খেতে।
অর্ণব ফোন বন্ধ করে বিছানায় বসে পড়েছে।কিসের মধ্য দিয়ে সে হাঁটছে তা সে নিজেও জানেনা।একজন দায়িত্ব আরেকজন অনুভূতি।
-‘জুথিকে ফোন দেওয়াই আমার উচিত হলোনা।ও এখন আরও পাগলামো করবে।কোনদিকে যাব!
ও নিজেকে আমার থেকে দূরে সরাতে পারছেনা,আর আমিও পারছিনা।’

কুসুম একা একা ভাত খেতে বসেছে।অর্ণবের বাবা তখন পানি খেতে এসেছিলেন।কুসুমকে একা খেতে দেখে তার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।সোজা গেলেন অর্ণবের কাছে।সেখানে ওকে বসে থাকতে দেখে বললেন,’কুসুম এ সময়ে খেতে বসেছে কেন?তখন তোর সঙ্গে খায়নি?’

-‘না।ওর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে ঔষুধ খেয়েছিল।’

-“তো যা ওর পাশে বসে থাক, জেগেই যখন আছিস।’

কুসুম সব শুনে ভাত জলদি মুখে দু লোকমা পুরে প্লেট লুকিয়ে ফেলে বললো,’আমার খাওয়া শেষ।উনাকে আসতে হবেনা।এতক্ষণ তো আমার সামনেই ছিলেন।রুমে গেলেন বেশি সময় হয়নি তো ‘

-‘ওহহ’

বাবা আর কিছু বলেননি।চলে গেলেন।কুসুম পানি খেয়ে ফিরে আসলো রুমে।অর্ণব হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে আছে।আলোটা নিভিয়ে কুসুম ল্যাম্প শ্যাডের কাছে এসে সুইচ টিপলো ওটা জ্বালাতে।কিন্তু আলোটা জ্বলছিলোই না।তাই শুরু করলো সুইচ নিয়ে যুদ্ধ।শেষে অর্ণব হাত বাড়িয়ে সুইচটা অন করে বললো,’রাত করে বাঁদরামি করতে মন চায় তোমার?আচ্ছা তোমার মা, বাবা তোমায় কি করে সামলাতো?বাড়িতেও এমন আকাম কুকাম করে বেড়াতে??মারতোনা তোমায়?বকতোনা?আমার জীবনে এমন উঠতি বয়সী, টইটই করে শয়তানি করে বেড়ানো মেয়ে আর দেখিনি।তোমাকে দেখে শান্তশিষ্ট মনে হলেও তুমি তা নও।খুব জ্বালাও আমাকে।এ কারণে তোমাকে আমি ঢাকায় নেবোনা’

-“যদি জ্বালানো কমিয়ে দিই।তাহলে নেবেন?’

-“আমি কাল চলে যাব।জ্বালানো কমানোর সময় ঢের পাবে এখানে থেকে থেকে’

কুসুমের মুখটা আবার ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।মন খারাপ করে নিজের বালিশটা নিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো খনিকের মধ্যেই।অর্ণব ওকে বিছানায় আসতে না দেখে উঠে বসে দেখলো সে তো রুমেই নেই।বালিশটাও নেই।
-‘চুপচাপ চলেও গেছে???
এই মেয়েটা এমন কেন!!!থাকুক মেহমানের রুমে।যত যাই করুক নেবোনা ঢাকায়।আমার রাগ আরও বেশি।হুহ!’
অর্ণব রাগ করে আবার শুয়ে পড়েছে।
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here