লীলাবালি🌺 #পর্ব_৫৫ আফনান লারা .

0
461

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৫৫
আফনান লারা
.
‘আচ্ছা শোনো!তুমি কখনও সমুদ্র দেখেছো?’

কুসুম পেছনে তাকিয়ে মুখটা গোমড়া করে বললো,’ঐ যে নদীর বাবা?’

‘নদীর বাবা?’

‘নানু বলতো,সমুদ্র আকারে অনেক বড় হয়।দেখতে নদীর মতন তবে আকারে বিশাল।তাই সে হলো নদীর বাবা।অবশ্য আমি কখনও দেখিনি।দেখার ইচ্ছে আছে।যেগুলো জীবনে দেখিনি সেগুলা দেখে শেষ করার ইচ্ছা আমার মধ্যে ভরপুর।তবে সময় শেষ হয়ে যায় তাও দেখা হয়না’

অর্ণব তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,’কিসের সময় শেষ হয়?বয়স কত তোমার?বোকা কথা’

অর্ণবের বাবা হালকা কেশে রুম থেকে বের হলেন সেসময়ে।অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বললেন তিনি বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলতে যাচ্ছেন।সে মাথা নাড়ালো।মা এখনও ঘুমে।
কুসুম গলায় হাত রেখে আয়নার কাছে এসে দেখছিল মনযোগ দিয়ে।তারপর কি মনে করে বইগুলো গুছিয়ে ছুটে অর্ণবের সামনে গিয়ে ধপ করে নিচে বসে পড়েছে সে।অর্ণব গালে হাত দিয়ে রেসাল্ট নিয়ে ভাবছিল।কুসুমকে ওমন ছুটে আসতে দেখে ভাবনা ফেলে বোঝার চেষ্টা করলো কি চাইছে।

‘সকালে তো পড়তে পারিনি।এখন পড়াবেন?’

অর্ণব কিছু না বলেই বইয়ের পাতা দুটো উল্টে জিজ্ঞেস করে শেষে বললো সকালে কি পড়িয়েছিল তা মুখস্থ বলতে।
কুসুম ঢোক গিলে হাতে গুনে গুনে এক থেকে পাঁচ বলেছে।অর্ণব ধমকিয়ে বললো সে এক থেকে দশ পর্যন্ত পড়িয়েছিল তাহলে সে মাত্র পাঁচ পর্যন্ত জানে কেন।কুসুম মুখটা ছোট করে মাথা নিচু করে ছিল।অর্ণব ওকে পাঁচ থেকে আবারও পড়ানো ধরেছে।
পড়ানোর ফাঁকে কুসুম বারবার ওকে দেখছিল।তাতে করে অর্ণব ভাবলো ওর হয়ত পড়াতে মনযোগ নেই।তাই রেগে কুসুমের কান খিঁচিয়ে ধরে ঝাড়ি দিয়ে বললো,’এমন করলে আর পড়াবোনা বলে দিলাম ‘

ধমক খেয়ে কুসুম আর মাথা তুলেনি।বইয়ের দিকে চেয়ে গটগট করে পড়ে যাচ্ছিল।এবার অর্ণব ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এই ত্যাড়াব্যাঁকা চুলগুলোকে সোজা করে টেনে ধরে দেখতে কেমন লাগে।বেশ অদ্ভুত চুলগুলো।আজ পর্যন্ত এমন ব্যাঁকা চুল আমি আর দেখিনি।তারপর ইচ্ছে করে গালটা কিছুক্ষণ টিপে ধরে ছেড়ে দেই।যে লাল রঙের আবির্ভাব ঘটবে সেটা অনেকক্ষণ ধরে দেখবো।এরপর মন চায় একবার তাকে কাছে টেনে দেখতে তখন তার কি অবস্থা হয় সেটা দেখার জন্য।
ইশ!কি ভাবি এগুলো!’

অর্ণব উঠে চলে গেলো হুট করে।তা দেখে কুসুম ভাবনায় পড়েছে সে আবার কি দোষ করেছে।দু মিনিট পর সে আবার ফেরত এসে বসলো ওর সামনে।কুসুম জিজ্ঞেস করেনি কোথায় গিয়েছিল কারণ সে দেখেছে অর্ণব দূরে ভেসিনের কাছে গিয়ে চোখে পানি দিয়েছিল।অর্ণব তার ভেজা চুলগুলোকে মাথায় লেপে দিয়ে বললো,’শুনাও এক থেকে এগারো’

কুসুম মাথা নাড়িয়ে গড়গড় করে বলে গেলো।কিন্তু এক থেকে এগারোতে আসার আগে নয়ের আগে সাত বলেছে।অর্ণব সেটা ঠিক করে বুঝিয়ে আবারও পড়তে দিলো ওকে।

‘আচ্ছা শোনো!’

‘কি?’

‘ধরো আমি তোমার হাত ধরবো।কি করবে তখন? ‘

‘কেন ধরবেন?’

‘নাহ থাক।যা বলেছি ভুলে যাও।পড়ো পড়ো।’

কুসুম কপাল কুঁচকে শুরু করলো পড়া।এদিকে অর্ণবের আবার কেমন কেমন লাগছিল বলে সে আবারও উঠে চলে গেছে।কুসুম গলার মালাটায় হাত দিয়ে পড়ছে।সুন্দর কিছু কিনলে দশ বারো দিন ধরে সেটা ধরে বসে থাকে সে।এখন এই মালাটাকেও কারণে অকারণে ছুঁয়ে দেখবে সারাদিন।কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে কষ্ট হচ্ছে!
উনার হলোটা কি?এমন ব্যবহার করলেন কেন?আমার হাত ধরার কথা বললেন কি জন্যে?এরকম উদ্ভট প্রশ্ন তো উনি করেন না সচরাচর। হিহি!অসুখ আমার নাকি তার!’

অর্ণব দূর থেকে কুসুমকে মিটমিট করে হাসতে দেখেছিল।লজ্জায় এবার সে নিজে লাল হয়ে আছে।নিজের মাথায় নিজে বাড়ি মেরে দেয়ালে কপাল ঠুকরাতে ধরতেই মা এসে বললেন,’কিরে?দেয়ালে কপাল পিঠছিস কেন?কি হলো তোর?শরীর খারাপ?’

‘না তো।কই?আমি তো তেলাপোকা দেখছিলাম’

‘কই তেলাপোকা? ‘

‘নেই?’

‘না’

‘তাহলে সত্যিই নেই!’

অর্ণব চলে গেলো তার রুমে।মা কুসুমের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন অর্ণবের কি হয়েছে, জানে কিনা।কুসুম ও একইভাবে চমকে বসে আছে।
অর্ণব তার মাথা থেকে উল্টো পাল্টা চিন্তা সরাতে ফেসবুকে ঢুকেছে আধ ঘন্টা হলো।কুসুম তার পড়া শেষে বই হাতে আগের মতন দরজার ফটক ধরে দাঁড়িয়েছিল।পড়া বলবে তাই।
অর্ণবকে অনেকক্ষণ ধরে দেখে নিয়ে আস্তে করে বলেছে সে পড়া বলবে।অর্ণব ফোনে চোখ রেখে বললো পড়া বলে যেতে।
কুসুম ঠিকঠাক এক থেকে এগারো পর্যন্ত বলতে পেরেছে।অর্ণব খুশি হয়েছে তবে প্রকাশ করেনি।কুসুম যখন শুনলো তার গণনা ঠিক তখন সে আনন্দিত হয়ে চলে গেছে মাকে জানাতে।
রান্নাঘরে মা সেমাই বানাচ্ছিলেন।আসার সময় ঘরের কত কি নিয়ে এসেছিলেন।তিনি বেশ জানতেন ওদের নতুন সংসারে নুন পেলে চিনি পাওয়া যেতে মুশকিল হবে তাই অনেক অনেক সামগ্রী সাথে করে এনেছেন।
সেমাইয়ের সুগন্ধে পুরো ঘর মৌ মৌ করছে।কুসুম তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল।মা সেমাই নাড়তে নাড়তে বললেন,’হ্যাঁ রে কুসুম।আমার ছেলে আদর যত্ন করে তো?নাকি এখনও আগের মতন তোকে সহ্য করতে পারেনা?’

কুসুম হেসে বললো,’জানিনা।তবে আগের চেয়ে একটু বদল হয়েছে।এখন আমায় একটু হলেও সহ্য করেন।সবই তার দায়িত্ব কিনা!’

মা কথাটা শুনে কুসুমের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে ছিলেন।মেয়েটা নিজেও বুঝতে পেরেছে অর্ণব তাকে শুধু দায়িত্বের খাতিরে বিয়ে করে আজ এতটাদিন কাটাচ্ছে তার সাথে।তাহলে কি আমার ছেলেটা ওরে কখনওই ভালবাসবেনা?কতটা কষ্ট পেলে সে নিজ থেকে বলে এসব কিছুই দায়িত্ব। আজই ওর সাথে কথা বলা জরুরি।মেয়েটার মলিন মুখ আর দেখতে পারিনা আমি’

বাটি আনতে টেবিলের দিকে যাচ্ছিল কুসুম।তখন অর্ণব ও এদিকে আসছিল সেমাইর গন্ধ সুঁকে।
দরজা দিয়ে বের হতেই দুজনে বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়ে গেলো।যাতে পড়ে না যায় সে জন্য অর্ণব এক হাতে ওকে ধরে ফেলেছিল আর অন্য হাতে দেয়াল।
মায়ের কণ্ঠ স্বর শুনে দুজনে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।মা এসে জানতে চাইলেন কি হয়েছিল।দুজনে উত্তর না দিয়ে দুদিকে চলে গেলো মাকে গোলকধাঁধায় ফেলে।
—–
‘রবীন্দ্র সরোবরে আসলে অর্ণবের কথা খুব মনে পড়তো।আর এখন মৃদুল ভাইয়াকে বেশি মনে পড়ছে।ইশ কেন যে এলাম!বারবার ঐ লোকটার দাঁত বের করে হাসা আর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকার দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে।সেদিনটা কত সুন্দর করে দিয়েছিলেন।আমার চুলে বেলুনের সুতো লাগানো।
অল্প কিছু দিয়ে কত বড় ভালো লাগা মনে গেঁথে দিলেন আজ পর্যন্ত ভুলছিনা।সায়নীকে কতবার করে বলেছিলাম দেরি করবিনা।আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো?একা ভালো লাগে এতো?ঘরে থেকে থেকে ইন্ট্রোভার্ট হয়ে গেছি।এখন একা বের হলে নিজেকে এলিয়েন মনে হয়।কখন আসবে ধুর!’

বিরক্ত হয়ে জুথি চেয়ার থেকে উঠে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।তখন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া চেনা মানুষের মুখ দেখেছে মনে হলো।তাই সে পেছনে তাকালো আবার।এটা মৃদুল ভাইয়া!
সঙ্গে তার পাঁচ ছয়টা বন্ধু।
‘আচ্ছা উনি কি আমায় দেখেননি?নাকি দেখেও না দেখার ভান ধরলেন।’

‘মৃদুল ওটা জুথি না?ঐ যে অর্ণবের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল?’

মৃদুল পেছনে তাকিয়ে জুথিকে দেখে বললো ‘নাহ এটা মৃন্ময়ী। মৃন্ময়ীরা পাগল হয়না,পাগল করে দেয়’

‘মানেহ্?’

‘তুই বুঝবিনা।যে পাগল হয়েছে সে বুঝবে’

মিরাজ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কে পাগল হয়েছে।মৃদুল জবাব দিলোনা।জুথির দিকে ফিরে একটা চেয়ার নিয়ে বসেছে।বাকি সবাইও বসেছে ওর সাথে।জুথি কোমড়ে হাত রেখে একটা ছোট ছেলের সাথে কথা বলছিল।ছেলেটার হাতে এক বালতি হলুদ গোলাপ ছিল।সে মনে হয় গোলাপ কিনবে বলে কথা বলছে।
মৃদুলের একটা বন্ধুর কথায় ওর মনযোগ হটে গেলো জুথির থেকে।
কিছুক্ষণ পর এসে সেই ছেলেটা একটা হলুদ গোলাপ মৃদুলের হাতে দিয়ে ছুটে চলে গেছে।মৃদুল বুঝতে পেরে ফুলটাকে নিজের কাছে রেখে দিলো।জুথি কোত্থাও নেই।অথচ এই ফুলটা রয়ে গেছে ওর কাছে।
‘আচ্ছা সে কি চায় দেখা করতে?’

এই ভাবনা মৃদুলকে টেনে ঐ খানটায় নিয়ে আনলেও সেখানে কোথাও জুথিকে সে পেলোনা।ফুলটাকে হাতে ঘুরিয়ে সে আবারও ফিরে আসলো আগের জায়গায়।
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here