লীলাবালি🌺 #পর্ব_৬৯ আফনান লারা

0
409

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৯
আফনান লারা
.
‘আচ্ছা তার মানে আপনি আমার চেয়েও বেশি ভয় পাচ্ছেন?মেয়ে আমি নাকি আপনি?’

অর্ণব হাতের টবটা উঁচু থেকে নিচু করে গোমড়া মুখে বললো,’ছেলেরা ভয় পেতে পারেনা?’

‘অন্তত আমি জানি ছেলেরা ভীষণ সাহসি হয়।মেয়েরা ভয় পেলে বরং তারা এসে আগলে রাখে’

অর্ণব টবটা এবার হাত থেকে রেখেই দিয়েছে।আস্তে আস্তে দরজা থেকে সরে এদিকে আসতে আসতে বললো,’ওহহ।হ্যাঁ তাই তো!আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম না।দরজাটাও জানালার মতন খোলা কিনা দেখতে গিয়েছিলাম।এমন কি তোমাকে বাঁচাতে টবটাও হাতে তুলে নিয়েছিলাম জানো?’

কুসুম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে চুপচাপ।অর্ণব ও শোয়ার জন্য আসতেছিল সে সময় ফোন বাজার আওয়াজ পেয়ে ফোনের কাছে গিয়ে হাতে নিয়ে দেখলো একটা বিদেশী নাম্বার থেকে কল এসেছে।কৌতুহল নিয়ে রিসিভও করলো সে।
জুথির গলা শুনে হাত থেকে ফুলের টবের প্লাস্টিকের ফুলটাই নিচে পড়ে গেছে।অবশ্য কোনো আওয়াজ হয়নি তাতে, কুসুমও জানতে পারলোনা।সে অন্যদিকে ফিরে শোয়া ছিল।

‘হ্যালো??আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’

‘হুম’

‘ওহ।কুুসুম পাশে বুঝি?’

‘হ্যাঁ’

‘আমি প্রেমালাপ করতে কল করিনি।একটা কথা জানতে ফোন করেছিলাম।এসব যদি কুসুম শুনেও থাকে তবে কোনো সমস্যা হবেনা আশা করি’

‘বলেন শুনছি’

‘মৃদুল ভাইয়ার কি বিয়ে কাল?’

‘বিয়ে?কার?’

কলিংবেল বেজে উঠলো সেসময়ে।অর্ণব জুথির কল হোল্ডে রেখে গেলো দরজা খুলতে।সুলতান শাহ লোক পাঠিয়ে কলিংবেল ঠিক করিয়েছিলেন রাতেই।তার মতে জিসানের পরিবারের কেউ যদি কুসুম অর্ণবের বাসা দেখতে এসে দেখে কলিংবেল নষ্ট দেখে তখন আবার কি ভেবে বসে।
কুসুম উঠে বসে ওর পিছু পিছু আসার সময় ওর চোখ গেছে জ্বলে থাকা ফোনটার দিকে।

‘কিরে তুই!এত রাতে!!এখানে?’

মৃদুল ভেতরে চলে এসে বললো,’আগে বল জুথি তোকে ফোন করেছিল?’

‘হোল্ডে আছে।মাত্রই করেছিল’

‘নিশ্চয় জিজ্ঞেস করেছে আমার বিয়ে কিনা?’

‘হ্যাঁ।কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতেছিনা।’

মৃদু্ল কোমড়ে হাত দিয়ে গান শুরু করলো।

গাড্ডি তে না চারদি”” গাড্ডি তে না চারদি”””
গাড্ডি তে না চারদি””” গাড্ডি তে না চারদি”””
বলো তারারা বলো তারারা

‘ভাই থাম!আগে বল ঠিক কি ঘটেছে?জুথিকে কি বলবো এখন?তোর কি সত্যি সত্যি বিয়ে?’

‘আরে না।খাঁচার পাখি খাঁচায় ফেরাতে চাল চেলেছি।এবার তুই কল আনহোল্ড করে বলবি আমার কাল গায়ে হলুদ।ঠিক আছে?আগে এটা বলে আয় তারপর সব বলছি তোকে’

অর্ণব রুমে ফিরে এসে দেখলো কুুসুম ফোনের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।মৃদুলকেও আসতে দেখে আঁচল টেনে ঘোমটা দিলো সঙ্গে সঙ্গে।
অর্ণব জুথিকে বললো সত্যি সত্যি মৃদুলের বিয়ে।এরপর লাইনটা কেটে দিলো।মৃদুল দাঁত কেলাচ্ছে শুধু।
অর্ণব ওর ঘাঁড় ধরে বাহিরে নিয়ে এসে বললো,’এবার বল এমন মিথ্যে কথা রটালি কেন?’

‘ঐ যে বললাম!খাঁচার পাখি।
সে আমায় পছন্দ করে কিন্তু স্বীকার করবেনা।এবার আমি স্বীকার করাবো’

‘জুথি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে।ওকে এরকম টাইপের যুক্তি দিয়ে ফাঁদে ফেলতে পারবিনা’

‘ফাঁদে ফেলেছি অলরেডি।নাহলে সে তোর সাথে কি পরিমাণ রেগে থাকার পরেও সেসব ছেড়ে কল করেছে শুধুমাত্র এটা জানতে যে আদৌ আমার বিয়ে হচ্ছে কিনা’

কথাটা বলে মৃদুল মুখ বাঁকিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেছে।অর্ণব কপালে হাত দিয়ে বললো,’পাগল একটা!!’

মৃদুল মেস থেকে ব্যাগ নিয়ে সোজা অর্ণবদের বাসায় ঢুকেছিল।এরপর নিচ তলায় এসে কলিংবেলে চাপ দিয়ে ব্যাগ থেকে চশমা বের করে চোখে দিয়ে রাখলো।জাহান এসে দরজা খুলেছে তাও অনেক দেরিতে। দেরি হবারই কথা।রাতের ১টা বাজে এখন।
মৃদুলকে দেখে সে এক চিৎকার করে উঠেছে।অনেক বছর পর মৃদুল বাসায় ফিরেছে তাই হঠাৎ ওকে দেখে সে ইমোশান কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি।
মৃদুল ওকে চিৎকারের আওয়াজ কমাতে বলছে ইশারা দিয়ে ততক্ষণে ওর চিৎকারে সুলতান শাহ লাঠি হাতে ছুটে এসেছেন তার রুম থেকে।
এসে মৃদুলকে দেখে তিনিও ঝটকা খেলেন।এমন ঝটকা খেলেন যে তার বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা মৃদুল নাকি অন্য কেউ।চোখ ডলে চেয়ারে বসে জাহানকে বললেন পানি দিতে।মিজুয়ানা উঠে এসে মৃদুলকে দেখে খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরে ভেতরে নিয়ে আসলেন।

‘মা কেমন আছো?’

‘খুব ভাল।মায়ের কথা মনে পড়লো তাহলে!আমি তো ভাবলাম আমাকে ভুলেই গিয়েছিস’

‘দুইদিন ভিডিও কল দিই নাই বলে এটা বলছো?’

সুলতান শাহ পানি খেয়ে বললেন,’এই থাম!গরু ছাগল!তুই আসলি ঠিক আছে তাই বলে কেউ এত রাতে আসে?তোকে মেস থেকে বের করে দিয়েছে বুঝি?’

মৃদুল সোফায় বসে বললো,’তা কেন হবে?আমাকে তো ওরা হাতে পায়ে ধরে আটকে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু আমি এখন গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেছি।মেসে থেকে আর কি হতো তাই চলে আসলাম।জাহান আমাকে কফি বানিয়ে দেও।মম কোথায়?’

মিজুয়ানা মৃদুলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,’ঘুমায়।আজ তো ওকে দেখতে আসছিল ছেলে পক্ষ।ওদের মমকে খুব পছন্দ হয়েছে। কাল পরশুর দিকে আমরা দু পরিবার মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করবো’

‘থামো তুমি।আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দাও।এই তুই আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?একদম বাসা থেকে বের করে দেবো’

মৃদুল ব্যাগ হাতে নিতেই মিজুয়ানা এসে ওর হাত ঝাঁপটে ধরে রাগান্বিত স্বরে বললেন ‘তোমার কি সমস্যা? ছেলেটা এতদিন পর বাড়ি ফিরেছে, আসার পরপরই এসব কথা বলতে হবে?আর ছেলে আছে তোমার?’

সুলতান শাহ রান্নাঘরের দিকে চেয়ে বললেন,,’এই জাহান!মৃদুলের কফিতে চিনি কম দিবা।’

মৃদুল মায়ের দিকে তাকাতেই তিনি চোখ বড় করে বললেন,’এই জাহান তুই চিনি বেশি দিবি।
শুরু হয়ে গেলো তোমার কিপটামো!!এসবের জন্য আমার ছেলেটা সবসময় আমার কাছ থেকে দূরে থাকে।’

‘আমি চিনি কম দিতে বলেছি কারণ আমার ডায়াবেটিস। মৃদুলের উচিত নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা।নাহলে বংশগত হয়ে ওর ও ডায়াবেটিস দেখা দেবে।পরে কেঁদেও কূল পাবেনা’

‘বাবা শোনো!রোগ যদি ভাগ্যে লেখা থাকে তবে চিনি খেলেও হবে,না খেলেও হবে।কফিতে চিনি না দিলে তেতো কফি গেলা যাবে?’

‘গলা নামিয়ে কথা বলবি।এতদিন পর এসেছে,কোথায় গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে থাকবে সেটা না করে গলা তুলে কথা বলছে।আমার কপালে এসব লেখা ছিল!!জানলে তোরে ছোটকালে টিকা দেওয়ার সময় অটিস্টিক হয়ে যাবার একটা টিকা ধরিয়ে দিতাম তাতে করে….’

‘থামবে তুমি?মৃদুল যা তুই নিজের রুমে।আমি খাবার আনছি।কফু খেয়ে খাবারটা শেষ করে শুয়ে পড়বি।বাবা আমার কলিজার টুকরা !!”

মৃদুল মুচকি হেসে চলে গেছে।
—–
“জুথি শুধু মৃদুলের খোঁজ নিতে ফোন করেছিল।এর বাহিরে কিছু বলেনি’

কুসুম বসে বসে হাতে ১,২,৩ গুনছিল।অর্ণবের কথা শুনে বললো,’আমি তো আপনার থেকে জানতে চাইনি’

‘তোমার তো সন্দেহের বাতিক আছে।পরে ভাববে গভীর রাতে বউ ঘরে রেখে আলাপ জমিয়েছি ওর সাথে।আগে থেকে জেনে রাখা ভাল’

‘হুম অনেক ভাল’

‘তুমি কি এখনও সন্দেহ করছো?’

‘মোটেও না।ঘুমান।অনেক রাত হয়ে গেলো’

‘নাহ।ঘুম নাই আমার।তুমি ঘুমাও,আমি দেখি’

‘কি দেখবেন?’

‘দেখার জিনিসের অভাব নেই।ফুল,ফুলের টব,চেয়ার,টেবিল,আলমারি,ওয়ারড্রব,কার্পেট,দরজা,জানালা,লীলাবালি,মশারি,বিছানার চাদর,আয়না,বারান্দা’

‘আপনি লীলাবালি বললেন?’

‘কানে মনে হয় অতিরিক্ত শোনো।লীলাবালি কেন বলবো আমি?তোমাকে ঘুমাতে বলেছি, ঘুমাও’
—-
মৃদুল ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিতেই দেখতে পেলো মৃন্ময়ীর আইডি থেকে দশটা ফটো এসেছে মেসেঞ্জারে।আগ্রহ নিয়ে ফটো গুলোতে ক্লিক করে দেখলো একটা বিদেশী ছেলের ঘাঁড়ে হাত রাখা,হাতে হাত রাখা জুথির কতগুলো ছবি।
মৃদুল তো আকাশ থেকে পড়লো এমন অবস্থা।মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলো ছেলেটা কে।জুথি জানালো ছেলেটা নাকি ওকে অনেক ভালবাসে।

মৃদুল সঙ্গে সঙ্গে ওকে কল করেছে।

‘এ্যাই তুমি এসব কি বলতেছো!সাদা চামড়ার বাঁশটা কই থেকে জুটলো?এতদিন তো শুনিনি’

“ওর নাম মোরকো।আমার ছোটবেলার বন্ধু।এন্ড হি লাভস্ মি সো মাচ’

‘তোমার মাচ তোমার কাছে রাখো।আমাকে তরকারির কথা বলো।ঐ ছেলে কি আমার চেয়েও পাগলা তোমার জন্য?’

‘অবশ্যই।সে আমাকে বিয়ের পরে কিস করবে বলেছে।অথচ এখানকার বেশিরভাগ ছেলেই বিয়ের আগে কিস- টিস সব সেরে ফেলে।তাহলে ভাবেন কত ভালবাসে আমায়।’

‘সব ভং।বিশ্বাস করবানা ঐ বাঁশরে।বিয়ের আগেরদিন তোমাকে পটিয়ে চুমুটুমু দিয়ে দেবে।এই খবরদার!ওর থেকে দূরে থাকো।আমার কোনো বিয়ে -টিয়ে হচ্ছেনা।সব মিথ্যে,সাজানো নাটক’

‘আই নো!!
আমার গুলাও সাজানো নাটক’

চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here