লীলাবালি🌺 #পর্ব_৭

0
621

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭
আফনান লারা
.
কিসব ভেবে অর্ণব আবারও কুসুমকে কল করলো।কুসুম ফোন চাচির হাতে দিতেই যাচ্ছিল তখন।ফোন এসেছে দেখে থমকে গিয়ে আবার ধরলো।
অর্ণব কথা বলতে কেমন যেন সহজবোধ করছেনা।তাও নিজেকে ঠিক করে দশ সেকেন্ড চুপ থাকার পর বললো,’বাবাকে বলবেন না যে আমি মানা করেছি।
জানেন তো বাবা কেমন।আমি ফোনে আপনাকে এসব বলছি শুনলে যা তা অবস্থা করে বসবে।
আপনি আর কোনো উপায়ে মানা করতে পারবেননা?’

কুসুমের এমনিতেও মন খারাপ ছিল তার উপরে অর্ণবের মুখে এমন কথা শুনে আরও বিরক্ত লাগলো।কোনোমতে রাগ দমিয়ে বললো,’আমি বলবো আমি বিয়ে করতে পারবোনা কারণ আপনি আমায় পছন্দ করেননা।এর বেশি অথবা কম বাড়িয়ে কমিয়ে আমি বলতে পারবোনা।মিথ্যাও না’

-‘আপনি যদি এটা বলেন আমার বাবা সোজা করে একটু হাসবে তারপর বাচ্চা মেয়ে বলে হেসে উড়িয়ে দেবে পুরো ঘটনাটাকে’

কুসুম চরম বিরক্তি নিয়ে বললো,’তো এক কাজ করুন।একটা বিয়ে করে নিয়ে আসুন তাহলে আপনার বাবা চেয়েও আপনাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে পারবেনা’

-‘বুদ্ধি ভাল দিয়েছেন কিন্তু আমার যে চাহিদা অনেক।এমন মেয়ে পেতে পেতে বয়স পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ পার হবে’

কুসুম বিছানায় গোল হয়ে বসে বললো,’কি কি চাহিদা একটু শুনি। তাহলে বলতে পারবো আমার এই নাই,আমার ওই নাই’

-‘আপনাতে কোনো সমস্যা নেই।আপনি নিজেকে দোষ দেবেননা।আমার চাহিদা আছে এটা আমার একান্তই দোষ।তাই বলে আপনি খারাপ না।আপনি আমার চেয়ে ভালো কাউকে প্রাপ্য’

-‘একটা কথা জানেন? যার সাথে যার বিয়ের কথা অনেকদূর এগিয়ে যায় তখন সেই মানুষটার কোনো দোষ নজরে আসেনা।তাকে সুদর্শন মনে হয়।খুঁত চোখে পড়েনা।আমারও হয়েছে তাই।কিন্তু একই অনুভূতি আপনার হলোনা যার কারণে বিয়েটা ভাঙ্গতে যাচ্ছে।আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি কারণ আপনি আগেই আমাকে সত্যটা বলে দিয়েছেন।নাহলে বিয়ের পরে আমরা কেউই সুখী হতাম না।’

-“আচ্ছা শুনেন আপনি বলবেন যে আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি।আর নয়তো বলবেন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।একটা বলে বুঝিয়ে দেবেন’

কুসুম জানালার গ্রিলে হাত রেখে বললো,’বললেন না আপনার চাহিদার কথা।শুনতেও মানা নাকি?’

অর্ণব বালিশ কোলে রেখে বইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমার চাহিদা বলতে যাকে বিয়ে করবো সে যেন আমার মতন বই পড়ুয়া হয়,তার মধ্যে চঞ্চলতা থাকতে হবে,দুষ্টুমি করবে সারাদিন। আমাকে সে একটিবারও বোরিং হতে দেবেনা।ব্যস্ত রাখবে।তবে তার মানে এই না যে অবুঝ হবে।সে সব বুঝবে।যাকে বলে ম্যাচিউরড্।আমার ভুল হলে যেন সে ধরিয়ে দিতে পারে।আর সব চাইতে বড় কথা হলো আমাকে যেন সে বোঝে’

-‘আমি তো তাহলে আপনার যোগ্য নই।আমি অবুঝ,আমি দুষ্টুমি জানিনা,চুপচাপ স্বভাবের।তাছাড়া হয়ত আপনাকেও বুঝবোনা।কি দরজার জোর করে ঘাঁড়ে চাপার?আমি আজই এর কিছু ব্যবস্থা করবো।আপনি টেনসন করবেন না’

অর্ণব ধন্যবাদ বলে ফোন রেখে দিয়েছে।মনে শান্তি লাগলো ভেবে হয়ত বাবা এবার বুঝবে।
কুসুম ফোন রেখে মূর্তির মতন বসে থাকলো।মাথা ঘুরছে।শরীর কাঁপছে।যে মানুষটাকে নিয়ে এতটা বছর সে স্বপ্ন দেখেছে আজ তার সাথে যে একটা সম্পর্কের বন্ধন এতদিন আঁটকা পড়া ছিল সেটাকে ভেঙ্গে দেবে সে।দেহ হেঁটে গেলেও মন যে বারবার করে আটকে ফেলছে।মন বলছে মানা করিস না কুসুম!
কিন্তু তাকে যে এটা করতেই হবে।’
—–
-‘অর্ণব তোর ফোন বাজছে।কানে শুনিস না নাকি?এত রাতের ঘুম নষ্ট করলি আমার।ওঠ!দেখ কে ফোন করেছে।আমরা সবাই শুনছি আর তুই শুনছিস না?’

অর্ণব চোখ মুখ ডলতে ডলতে শোয়া থেকে উঠে বসলো।ফোন হাতে নিতেই দেখলো বাবার কল।রাত তখন দেড়টা বাজে।চমকে তাড়াহুড়ো করে বিছানা ছেড়ে নেমে ফোন নিয়ে বাসার বাহিরে এসে রিসিভ করতেই শুরুতে ধমক খেলো অর্ণব।

-‘তোর কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই?কান পকেটে নিয়ে ঘুমাস?কয় হাজার বার কল করেছি তোকে?আমার কল কি ইচ্ছে করেই ধরছিলিনা??’

-“সরি বাবা।ঘুমিয়েছিলাম’

-“তুই এই মূহুর্তে কুমিল্লার বাস ধরবি।”

অর্ণবের চোখে যা একটু আধটু ঘুম ছিল সেটাই গায়েব।আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু কেন।

-‘কেন মানে??তুই কুসুমকে কি বলেছিস?সেসব রিপিট করতে হবে নাকি তোর ঘুমের জোরে ভুলে গেছিস সব?’

-‘(বাচ্চা মেয়েটা বাবাকে আবার কি বললো আমার নামে?মনে হয় আমাকে ডুবিয়ে দিছে।বিপদে পড়ে সব আমার দোষ দিছে।কি সুন্দর করে বুঝিয়ে বললাম।মনে হয় সব উল্টো করে বলেছে।হায়রে।)
ইয়ে মানে বাবা আমি তো ওকে……”

-‘কোনো কথা বলবিনা তুই।যদি কুসুমের কিছু হয় তো তোর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকবেনা।আমি জানি তুই কুসুমকে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছিস তা নাহলে তার শরীর এত খারাপ হয়?’

-“মানে? আমি তো ওরে কিছুই বলিনি তেমন একটা।ওর শরীর খারাপ মানে?কি হয়েছে ওর?’

-“কি হয়েছে তা তো আমিও বুঝতেছিনা।ফোন তোর মায়ের হাতে দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।তখন থেকে চোখ খুলছেনা।ডাক্তার এনেছি, ডাক্তার ও কিছু বলতে পারছেনা।আমাদের এদিকের হসপিটাল যেটা আছে সেটা খোলা থাকলেও কোনো ডাক্তার নাই।তুই আসবি আর কুসুমকে ভাল ডাক্তার দেখাবি।তোর কারণে সব হয়েছে।সাথে করে ডাক্তার নিয়ে আসবি’

অর্ণবের কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে।সব মাথার উপর দিয়ে গেলো।সব কি নাটক নাকি সত্যি সত্যি কুসুম জ্ঞান হারিয়েছে?মরে টরে যায়নি তো??
কপাল মুছতে মুছতে রুমে ফেরত এসে নিজের বেতনের অবিশিষ্ট পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে।বাবা নাটক করেনি তো?ভুল বুঝিয়ে নিয়ে বিয়ে দিবেনা তো??কে জানে!!এত রেগে ছিল যে এ কথা একবার জিজ্ঞেস করে নিতেও পারিনি।যদি জোর করে?কি করবো তখন?’

কুমিল্লার বাসে উঠে চোখটা বন্ধ করার পরেও চোখে ঘুম আসলোনা ওর।বাবার দুই তিনটা ধমকে সব গায়েব।সেফটি হিসেবে মৃদুলকে বলে এসেছে।বাবা বিয়ের জন্য বাড়াবাড়ি করলে মৃদুল আসবে ওকে বাঁচাতে।
কুসুমের সত্যি জ্ঞান হারিয়েছে কিনা তা নিয়ে একবারও সে ভাবলোনা কারণ তার কাছে পুরোটাই নাটক মনে হলো।সামান্য কারণে কেউ এত সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে থাকতে পারে?এটা তো হাস্যকর।অদ্ভুত!!
তাকে তো আমি উল্টাপাল্টা কিছুই বলিনি।এমন কি তাকে বকাঝকা করিনি,ধমকাইওনি।তাহলে সে হঠাৎ জ্ঞান হারালো কেন?
চোখের সামনে নিজের বিপদ দেখছি।বিয়ের আসর!
গোলাপ গাঁদা ফুল!সাজানো বাসর!!
আল্লাহ আমায় রক্ষা করবেন।”

অর্ণবের পাশের সিটে একজন মধ্য বয়স্কা আন্টি বসেছিলেন।সেই শুরু থেকে তিনি খেয়াল করলেন অর্ণব দোয়াদরুদ পড়ছে জোরে জোরে।যার কারণে তিনি ঘুমাতেও পারছেননা।
মুচকি হেসে বললেন,’বাবা তুমি কি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছো?’

-“নাহ’

-“তাহলে কি পরীক্ষার রেসাল্টের জন্য দোয়া করছো?’

-“না। বিয়ে যাতে নাহয় সেজন্য দোয়া করছি।আপনিও প্লিজ দোয়া করবেন ‘

মহিলা অর্ণবের কথা শুনে তব্দা খেয়ে বসে আছেন।বিয়ে যেন হয় তার জন্য ছেলেরা কত কি করে।আর এই ছেলে দোয়া করছে যেন বিয়ে না হয়?
দোয়া তো করতেই হয়।দোয়া করি যার সাথে ও ভাল থাকবে তার সাথেই যেন ওর বিয়ে হয়।যাকে বিয়ে করবেনা বলে ভয় পাচ্ছে তার ভাগ্যে যদি এই ছেলেটা থাকে তাহলে আমার আর কি করার?তাও দোয়া করলাম যেন ভালো কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পায়।
যদি এর সাথে না হয়ে আরেকজনের সাথেও হয় তাও যেন ছেলেটা ভালো থাকে।নাও বাবা দোয়া করে দিলাম।এবার দেখো তো আমার ফোনে ইংরেজীতে এটা কি লেখা আছে?চোখে সমস্যা বলে বুঝতে পারছিনা’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here