#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৩
মেসেজের টোন বেজে উঠতেই আয়না থেকে চোখ সরিয়ে বেডের ওপর পড়ে থাকা ফোনের দিকে। ফোনের লাইট একবার জ্বলে উঠছে একবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। না চাওয়া সত্ত্বেও একপা একপা করে এগিয়ে গিয়ে একটু ঝুঁকে ফোনটা হাতে তোলে মাধুর্য। ‘অনুভব’ নামটি দেখে হৃদয়টা এক মূহুর্তে শীতল হয়ে যায় মাধুর্যের। হার্টবিট ফাস্ট চলতে শুরু করে। মানুষটিকে সে যতই ইগনর করতে চাইছে যেন ততই তার সমস্ত জুড়ে জায়গা দখল করছে। কিছুক্ষণ স্থির থেকে মেসেজ ওপেন করে মাধুর্য।
–“আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই। এখন এবং এই মূহুর্তে। যদি তোমার ইচ্ছে হয় তবে সেই নদীর ধারে চলে এসো। যেখানে আমাদের অনুভূতি প্রগাঢ় হয়েছিল।”
মেসেজটা পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে মাধুর্য। মাথায় আসে হাজারো চিন্তাভাবনা। মাধুর্যের ধারণামতে তো অনুভব মানুষ। সে একটা প্রাণী। যতদূর তার মনে হয়েছে সে একজন ভ্যাম্পায়ার। যার সঙ্গে মানুষের কখনোই মিল হওয়া সম্ভব নয় হয়ত।
সব ভাবনা মাথা থেকে নামিয়ে ফেলল মাধুর্য। মাথা চেপে ধরো ভাবতে থাকল শুধুমাত্র অনুভবের কথা। সে অনুভবকে ভালোবাসে। প্রচন্ড ভালোবাসে। আজকে যখন লোকটা তাকে ডেকেছে তখন তার যাওয়া উচিত। হয়ত এটাই তার সঙ্গে শেষ দেখা। নিজেকে শান্তনা দিয়ে মাধুর্য বেরিয়ে পড়ে অনুভবের সঙ্গে দেখা করতে। হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, তার জীবনে রয়েছে শুধুই তিক্ততা! নেই কোনো মিষ্টত্ব। এমন জীবনও কারো হয়? যেখানে এক চিলতে সুখ থাকলে পরবর্তীতে হাজারো কষ্ট এসে ভীড় জমায়….!
আনমনে চলতে চলতে কখন যে মাধুর্য নদীর পাড়ে পৌঁছায় সে নিজেই জানে না। তবুও কাটে না তার চিন্তার রেশ।
নদীর পাড়েই গাছে ভর দিয়ে এক পা গাছে ভাঁজ করে রেখে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল অনুভব। তার কানে আসে কারো পায়ে হেঁটে যাওয়ার শব্দ। অর্ধেক ভেঙে যাওয়া মনটা জানান দেয়, যার অপেক্ষায় সে প্রহর গুনছিল সেই মানুষটা এসেছে। চোখ খুলে পাড়ের ওপরে তাকায় সে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক চাঁদপানা মুখ। মাধুর্যকে অনবরত হাঁটতে দেখে ভরাট গলায় তাকে ডাক দেয়।
–“মাধুর্য!”
ভাবনার রেশ কেটে যায় মাধুর্যের। ওপরে থাকা চাঁদটাও প্রভার ফেলছে তার ওপর। সে বুঝতে পারছে তার চোখ বার বার রঙ পাল্টাচ্ছে। নিজের মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে তাকায় মাধুর্য। চোখের সামনে পরিষ্কার দেখতে পায় তার প্রিয় মানুষটিকে। মনে অনেক দ্বন্দ্ব নিয়ে পাড়ের নিচে নামে মাধুর্য। অনুভব তার সামনে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মাধুর্যের ভেতরটা কেঁপে ওঠে অনুভবকে দেখে। মনে একটা প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, লোকটা কি ঘুমোয় না?
অনুভবের চোখদুটো অসম্ভব লাল হয়ে রয়েছে। মাথার চুল নেই পরিপাটি। সবসময় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখার অভ্যেস তার। তবে দাঁড়ি আগের থেকে বেশ বড়সড় হয়ে গিয়েছে। এতোদিন অনুভবের দিকে ঠিকমত তাকায়নি মাধুর্য তাই এসব পরিবর্তন তার খেয়ালেও আসেনি। আজ মনোযোগ দিয়ে দেখছে। শুকনো কেশে মাধুর্য প্রশ্ন করে….
–“কেন ডেকেছেন? কোনো কাজ ছিল?”
–“কাজ তো অনেক রয়ে গেছে মাধুর্য। সেসব কাজ শেষ করার সুযোগ টুকুও তো পেলাম না।”
ঘন চোখের পাপড়ি বার বার নড়তে থাকে মাধুর্যের। অনুভবের এসব প্যাঁচানো কথাবার্তার আগামাথা খুঁজতে থাকে সে। দমকা হাওয়া ছুঁয়ে দিয়ে যায় তাদের দুজনকে। দুজন শুনতে পায় দুজনেরই নিঃশ্বাসের শব্দ। দুজনের নিঃশ্বাস প্রচন্ড ভারি। প্রতিটা নিঃশ্বাস ফেলার সঙ্গে যেন কষ্টগুলো উপচে পড়ছে। মাধুর্য এবার স্পষ্ট ভাষায় বলে….
–“কি বলতে চাইছেন? কাল আপনার বিয়ে। আপনার এভাবে দেখা করতে আসা ঠিক হয়নি। আপনার যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। অনেক রাত হয়েছে। বাড়ি ফিরতে হবে।”
–“আমার বিয়েতে কি তুমি খুব খুশি??”
–“আমার খুশি বা অখুশি বিয়েতে কি কোনো প্রভাব ফেলে?”
অনুভব আচমকা মাধুর্যের হাতজোড়া ধরে নিজের বুকের ওপর রাখে। থতমত খেয়ে তাকায় মাধুর্য। মানুষটা তাকে যেকোনো মূল্যে দুর্বল করতে চায়।
–“আমি আর পারছিনা। চলো আমরা পালিয়ে যায়! যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না আমাদের।”
অনুভবের কথায় একটা বাচ্চাদের মতো জেদ খুঁজে পেল মাধুর্য। তবে মাধুর্যের তো তার এই বাচ্চামিতে সাথ দিলে চলবে না। নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উল্টো দিকে মুখ করে নেয় সে।
–“আপনার বোঝার মতো যথেষ্ট বুদ্ধি হয়েছে অনুভব। আপনাকে এসব মানায় না। আপনিও জানেন আপনাকে কবিতাকে বিয়ে করতে হবে। আমিও জানি।”
অনুভব দেখে তার নিষ্ঠুর মাধুর্যকে। হ্যাঁ, মেয়েটা আগের থেকে অবশ্যই নিষ্ঠুর হয়েছে। নয়ত তাকে অবজ্ঞা কি করে করতে পারে? অনুভব দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে ওঠে….
–“কিন্তু আমি তো কবিতাকে কখনোই সুখি রাখতে পারব না। আমি তোমাকে….”
কথায় মাঝেই থামিয়ে দেয় মাধুর্য অনুভবকে। সে শুনতে চায় না সেই কথা। সে দ্রুত গতিতে অনুভবের দিকে ফিরে বলে ওঠে….
–“বলবেন না এই কথা। প্লিজ! আমি আর সেই কথা শুনতে চাই না যেই কথা আপনি বলতে চাইছেন। আপনার মনের কথা আমার লোমকূপে অবধি শিহরণ জাগাতে পারে। আর এর ফল হতে পারে, নিজের পুরোনো বন্ধুকে ধোঁকা দেওয়া। যেটা আমি চাই না।”
–“কবিতা বলেই কি তুমি স্যাক্রিফাইজ করছো?”
–“জানি না। আমি কিছু জানি না। আমাকে আর প্রশ্ন করবেন না দোহায় লাগে!”
বিদ্যুতের গতিতে উধাও হয়ে যায় মাধুর্য। অনুভব তাকে আটকাতে গিয়েও পারে না। চোখ বন্ধ করে গাছে হাত দিয়ে আঘাত করে সে। সবটা হয়ে গেল এলোমেলো!
পরেরদিন….
সামিহা এসেছে আজ মাধুর্যের কাছে। সেই সঙ্গে বিভোরও এসেছে। আজকে কবিতার বিয়েতে তারাও ইনভাইটেশন পেয়েছে। তবে প্রথমে এসেছে মাধুর্যের কাছে। সামিহা যখন থেকে এসেছে মাধুর্যকে দেখেই যাচ্ছে সে। তার শুকনো চোখমুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেই ফেলে সামিহা।মাধুর্য রান্নাঘরে সামিহার জন্য কোল্ড কফি আর বিভোরের জন্য ব্ল্যাক কফি বানাচ্ছে। এই বাহানায় সামিহাকে এড়িয়ে যাচ্ছে ও। কারণ সে জানে ওর আপু কিছু একটা ধরেই ফেলবে। আজ বাড়িতে এলিনা নেই। অনুভবের বিয়েতে না চাইতেও তাকে সেখানে থাকতে হচ্ছে।
কফি বানিয়ে ট্রে তে নিয়ে বেরিয়ে এসে বেতের সোফার সামনের টেবিলে রাখে মাধুর্য। সামিহা মাধুর্যকে উদ্দেশ্য করে বলে….
–“আর কিছু লাগবে না। তুই এখানে এসে বস আমার পাশে।”
জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে সামিহার পাশে গিয়ে বসে মাধুর্য। সামিহা ভ্রু কুঁচকে দেখতে থাকে তাকে।
কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলে….
–“মুখে একটা প্লাস্টিক হাসি ফুটিয়ে রেখে কি বোঝাতে চাচ্ছিস আমাকে বল!”
মাধুর্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তোতলানো গলায় বলে…
–“কি বলছো আপু? আ…আমি কি বোঝাতে যাব?”
–“ঠিকই তো। কি বলছিস এসব সামিহা?”
বিভোর কফি হাতে নিয়ে কথাটি বলে ওঠে। সামিহা নিশ্চিত হয়ে বলে….
–“আমি যা বলছি ঠিকই বলছি। মাধুর্য কি হয়েছে তোর? এই বাড়িতে থাকতে সমস্যা হচ্ছে? নাকি হাত খরচের সমস্যা? আমাদের বল।”
নিজের কঠোরতা টিকিয়ে রাখতে পারে না মাধুর্য। হুট করেই সামিহার কোলে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করে সে। সামিহা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে। মাধুর্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে…
–“কি হয়েছে তোর?”
মাধুর্য সবটা বলে। সামিহা আর বিভোর কিছুটা হতবাক হয় বটে। যেই মেয়েটা ভালোবাসায় বিশ্বাসী ছিল না, যেই মেয়েটা বড়লোক ছেলে দেখলে কয়েক হাত দূরত্ব রেখে চলতো! সেই মেয়েটাই কি না এমন একজনকে ভালোবাসল যাকে নিজের করে পাওয়া বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
সামিহা ও বিভোর ঠিক কি বলে শান্তনা দেওয়া যায় তাদের মাথাতেই আসছে না। সামিহা অনেক ভাবনাচিন্তা করে বলে ওঠে….
–“প্রত্যেকটা মানুষের জীবনসঙ্গী আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তোর ভাগ্যে যদি অনুভব লিখা থাকে তবে কবিতার সঙ্গে বিয়ে হবার আগ মূহুর্তেই তোদের মিলন ঘটবে। আর যদি না থাকে তাহলে হাজার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যাবে না। তুই নিজেকে আগে শান্ত কর।”
মাধুর্য আস্তে আস্তে নিজের কান্না থামায়। বিভোর তাকে প্রশ্ন করে….
–“এরপর কি করবি ভেবে রেখেছিস?”
–“না এখনো ভাবিনি। আগে কবিতার বিয়েতে তো যেতে হবে। তারপর ভেবে দেখব।” (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
–“তুই যেতে পারবি সেখানে?”
–“যেতে তো হবেই বন্ধুত্বের কারণে।”
মলিন হাসে মাধুর্য। বিভোর ও সামিহা অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে মাধুর্যের পানে।
চারিদিকে বিয়ের আমেজ! ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন না করা হলেও বিয়ে বিয়ে ভাব ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশে। সিনহা বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সকল ভ্যাম্পায়ার ভীড় করেছে তাদের প্রিন্সের বিয়ের দেখবার জন্য। সকলে বিয়ের কাজে তাড়াহুড়ো করছে। প্রলয় সিনহা চান দ্রুত বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে। অনুভব কখন বেঁকে বসবে তার ঠিক নেই।
–“রায়মা! অনুভব তৈরি হয়েছে? হাতে আর বেশি সময় নেই। বিয়ের জন্য বের হতে হবে।”
প্রণয়ের কন্ঠে রায়মা তড়িঘড়ি করে ছুটে আসে। ওপরে ইশারা করে বলে…
–“অনুভব তৈরি হচ্ছে। আর একটু সময় লাগবে।”
–“সেই সময়টাই তো নেই। নেই বললে ভুল হবে প্রলয় ভাই দ্রুত যা করবার করতে বলেছে।”
–“ছেলেটাকে জোর করা কি ঠিক হচ্ছে প্রণয়?”
চিন্তিত সুর রায়মার। সে গত কয়েকদিন ধরে অনুভবকে খেয়াল করছে। অনুভব আগের মতো নেই। কেমন জানি হয়ে গেছে। ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়াও করে না। তাই তাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে রায়মার। প্রণয় যান্ত্রিক আওয়াজে বলে….
–“প্রলয় ভাইয়ের কথায় শেষ কথা। আর আমার মনে হয় এতে ভালোই হবে।”
ড্রেসিং রুমে বড় আয়নার সামনে টুলে শিরদাঁড়া সোজা করে দুই হাঁটুতে দুই হাত রেখে বসে আছে অনুভব। তার দৃষ্টি স্থির আয়নায় নিজের দিকে। মনে মনে অসংখ্য বার নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছে সে। তার মনটা বার বার বলে উঠছে….
–“ছি প্রিন্স অনুভব! ছি! যার জন্য তুই এতগুলো বছর অপেক্ষা করলি। যার জন্য তুই নিজের জীবনের সময় থামিয়ে রাখলি আজ তাকে পেয়েও ধরে রাখতে পারলি না? এই নাকি ওর ভালোবাসা? তুই আদোও ভাবনাকে ভালোবেসেছিলি তো?”
তার মস্তিষ্ক তীব্র প্রতিবাদ জানায় তার মনের কথায়।
–“কেন? এতো সন্দেহ কেন? ভালোবাসা আর বাবার কসমের মধ্যে কি দোটানায় রয়েছি জানিস না? কাকে বেছে নেব?”
মন এবার তাচ্ছিল্য হাসে।
–“তাই বলে একবার চেষ্টাও করে দেখবি না?”
–“চেষ্টা কি কম করেছি? যা করেছি তার ওপর বিশ্বাস আছে। আমার অপেক্ষা বিফলে যাবে না। কিছুতেই না। আমি শেষ পর্যন্ত আশা রেখে যাব মাধুর্য আমার হবে।”
মন আর মস্তিষ্কের এই তীব্র লড়াইয়ে কেউ জেতার আগেই দরজা খুলে প্রবেশ করে এলিনা। মাথা নত হয়ে রয়েছে তার এবং হাতে গোল বড় বাটির মতো কিছু একটা। যার ওপর রয়েছে খয়েরী রঙের রাজকীয় পাগড়ি।
–“প্রিন্স, এটা পড়ে নিন। আমাদের বের হতে হবে। কিং এর কড়া আদেশ। দ্রুত বের হতে হবে।”
পাগড়িটা রাখে এলিনা আয়নার সামনে। চোখেমুখে গম্ভীরতা রেখে পাগড়িটা মাথায় পড়ে অনুভব। সে বরাবরই সুন্দর দেখতে। তার চেহারার সঙ্গে প্রিন্স ভাবটা রয়েছে। তবে আজ নেই তার চেহারার আলাদা উজ্জ্বলতা। তার পরনে বিয়ের পোশাক। গোল্ডেন শেরওয়ানি, খয়েরী পাগড়ি, পায়ে খাগড়া। নিজেকে ভালোভাবে দেখে নেয় অনুভব। এলিনা মিনমিন করে বলে ওঠে….
–“মাধুর্য আপনাকে অনেক ভালোবাসে। কোনো কি উপায় নেই?”
–“আমি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না এলিনা। ড্যাড কে গিয়ে বলো আমি তৈরি।”
এলিনা বাধ্যমতো চলে যায়।
আশেপাশে বর এসেছে বলে আনন্দের চিৎকার লেগে গিয়েছে। ‘বর এসেছে, বর এসেছে’ বলে ধুম পড়ে গেছে। বিয়েটা যেহেতু অনুষ্ঠান করে নয় সেহেতু বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অনুভবদের বসতে দেওয়া হয়। দরদর করে ঘামছে অনুভব। বার বার শেরওয়ানির গলা ধরে টানছে ও। তার দুচোখ খুঁজছে তার প্রেয়সীকে। কবিতা কি তার কথা মানবে? নাকি বিয়েতেই রাজি হবে? প্রলয় রুমাল এগিয়ে দেন ছেলের দিকে। ফিসফিস করে বলেন….
–“মুখে রুমাল গুঁজে নে। এটা নিয়ম।”
–“দেখো ড্যাড, আমার ভালো লাগছে না। আমি মেয়ে নই যে লজ্জা পেয়ে রুমাল মুখের সামনে ধরে থাকতে হবে। প্লিজ স্টপ!”
প্রলয় সিনহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অন্যদিকে তাকান। কাজি বলেন বিয়ের জন্য মেয়েকে নিচে নিয়ে আসতে। অনুভবের টেনশন বেড়ে যায়। এতো অস্থিরতা কি ভালো লাগে?
কিছুক্ষণের মধ্যে নেমে আসে বিয়ের বউ। গায়ে বিয়ের সাজ। অনুভবের দুচোখ ব্যস্ত হয়ে পড়ে মাধুর্যকে খুঁজতে। মনে হচ্ছে মেয়েটা ভিড়ের মাঝেই কোথাও আছে। কিন্তু অনুভব খুঁজে পাচ্ছে না কেন? বিরবির করে বলে ওঠে….
–“মাধুর্য কোথায় তুমি? আই উইশ একটা মিরাকেল ঘটে যাক।”
অনুভবের ইচ্ছে যেন পূরণ হবার নয়। বিয়ের কনে কে নিয়ে এসে বসানো হয় অনুভবের পাশেই। কনের মুখ মাথার কাপড় দিয়ে ঢাকা। তবে অনুভব তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না পাশের জনের প্রতি। একসময় অনুভব বিরবির করে বলে….
–“কবিতা শেষমেশ তুমি বিয়েতে রাজি হলে? কেন?”
কবিতা নড়েচড়ে ওঠে। কবিতার হাতের স্পর্শ লাগে অনুভবের হাতের সাথে। অজানা অনুভূতি জাগে অনুভবের মনে। অবাক চোখে তাকায় ও। হুট করে জোরেই প্রশ্ন করে বসে….
–“কে তুমি?”
কবিতার মা এগিয়ে আসেন।
–“কেন অনুভব বাবা? ও কবিতা!”
–“না ও কবিতা হতেই পারে না।”
সঙ্গে সঙ্গে মুখের ওপর থেকে কাপড় তোলে বিয়ের সাজে থাকা মেয়েটি। সবাই ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। এ কি বাস্তব নাকি কল্পনা??
চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।