কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:১২

0
564

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:১২
কলমে: ইয়াসমিন

প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ করে হন্তদন্ত হয়ে রিসোর্টের দিকে ছুটে এসেছে অধরা। সুলতান ভিলা থেকে যখন তখন বের হওয়া যায় না। তাছাড়া এই পরিবারের কোনো বউ পূর্বে কখনও ব্যবসা বা বাইরের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা সেই প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জমিদারি নেই তবে এদের জমিদারি ভাবটা এখনো বিদ্যামান। অধরার রিসোর্টের খু*ন আর বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য জুবায়ের সকালবেলা ওখানে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে ম্যানেজার ফোন দিয়ে বলল জুবায়ের কর্মীদের সঙ্গে মারামারি শুরু করেছে। তাই বাধ্য হয়ে অধরা গাড়ি নিয়ে ছুটেছে ওকে থামানোর জন্য। বাড়িতে কাউকে কিছু বলে আসেনি। গতকাল চৌধুরীরা এসেছিল সারাদিন থেকে রাতের ডিনার করে ওরা ফিরে গিয়েছে। অধরা প্রচণ্ডভাবে বিরক্ত জুবায়েরের উপরে। ওর রিসোর্টে পৌঁচ্ছাতে প্রায় আধা ঘন্টা টাইম লাগলো। ততক্ষণে মাঝামাঝি অর্ধেক শেষ। অধরা গিয়ে দেখলো জুবায়ের একটা ছেলের কলার চেপে ধরে রেখেছে বেশ কিছু ছেলে ওকে আটকানোর চেষ্টা করছে। অধরা ছুটে গিয়ে ওর হাত টেনে ধরে চিৎকার করে বলল,

> কি করছেন আপনি? বলেছিলাম মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে আপনি কথা শুনেন না। ওকে ছেড়ে দিন নয়তো আমি রেগে যাচ্ছি কিন্তু।

অধরার কথা শুনে জুবায়ের আর ধস্তাধস্তি করতে পারলো না পাছে অধরার গায়ে লেগে যাবে সেই ভয়ে।তাই হাত সরিয়ে নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলল,

> ওকে আমি জাষ্ট খু*ন করে ফেলবো ও চিনে না আমাকে। ওর সাহস হয় কিভাবে রিসোর্টে অনৈতিক কাজকর্ম করার? টাকার বিনিময়ে রাতে এখানে জলসা বসে, মেয়ে আনা হয় সেই সঙ্গে চলে রমরমা মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা। তুমি তো ঠিকঠাক এখানে আসোনা। ওরা কাজের নাম করে এখানে জয়েন করেছে। ভয় দেখিয়ে টাকা দিয়ে ম্যানেজারের মুখ বন্ধ করেছে। দুদিন আগে খু*ন হয়েছে ওই ছেলেটা কি করেছে জানো? খু*ন হওয়ার আগের রাতে গার্লফ্রেন্ড কে এখানে এনে খু*ন করে লা*শ গুম করেছে। এমনকি তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল। ওকে কে খু*ন করেছে জানিনা তবে একদম ঠিক করেছে। নয়তো আমি নিজেই কিছু করে ফেলতাম। অপেক্ষা করো পুলিশ আসছে। সবগুলোকে আমি দেখে নিচ্ছি।

জুবায়ের একদম কথাগুলো বলে থামলো। ওকে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে দেখে অধরা চোখ বন্ধ করে ওর হাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> কে বলেছে এসব? কিভাবে জানেন?
> তোমার কি মনে হয় আমার বউ একটা বিষয় নিয়ে বিরক্ত হয়ে আছে আমি সেটা নিয়ে খোঁজ নিবো না? কানে তুলো দিয়ে ঘুমাবো? আমি প্রথম দিন থেকে লোক লাগিয়েছি।গোপনে এই রিসোর্টে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি সেই। আর এই মৃ*ত ছেলেটার সব তথ্য আমার নখদর্পণে।

জুবায়েরের হাপাচ্ছে আর কথা বলছে। ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। কফি কালারের সার্টটা গায়ের সঙ্গে ভিজে আটকে আছে। সুঠাম শরীর শার্ট ভেদ করে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। অধরা একবার তাঁকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে পাশের একটা ছেলেকে ঠাণ্ডা পানি আনতে বলল। তারপর জুবায়েকে টেনে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। বাইরে পুলিশ এসেছে বেশ কিছু কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এই রিসোর্টটা মূলত জুবায়েরের নামে নামকরণ করা। অধরা ওকে মনে রাখতে এটা করেছিল। ও জুবায়েরের দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে সামনে বসে বলল,
> এগুলো কি ঠাণ্ডা মাথা করা যেতো না? মাথা গরম করে কি লাভ হয়েছে আপনার বলুন? ওরা যদি আপনার কিছু করে বসতো? আপনি আমাকে টেনশন ছাড়া কিছু দিতে পারেননা তাই না? বাড়ি থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছি। হার্ট এটাক করিয়ে মারবেন আমাকে।

অধরা কথাগুলো বলতেই জুবায়ের করুণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল,
> এতো কিছুর পরেও তুমি আমাকে মাথা ঠাণ্ডা করতে বলছো? পারবো না আমি। তুমি না আসলে ওকে আমি উচিৎ শিক্ষা দিতাম। এরপর থেকে সুলতান জুবায়ের ফারুকীর নামে বদনাম করার চিন্তা করার আগে দুবার ভাবতে হবে।

অধরা হতাশ হয়ে কপালে হাত রেখে বলল,
> আপনি ক্লান্ত হননা এই সব ডাইলগ বলতে বলতে? কতবার বলেছি যা করবেন একটু ভেবে চিন্তা করে। হুটহাট মাথা গরম করলে ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়না। আপনাকে বোঝানো বেকার টাইম নষ্ট। আপনি থাকুন আমি আসছি ।

অধরা রাগ দেখিয়ে উঠে আসলো। ম্যানেজারকে পুলিশ জিঙ্গাসাবাদ করছে। অধরা সেখানে যেতেই পুলিশের এস আই ফয়েজ উদ্দিন বললেন,

> ম্যাম জুবায়ের স্যারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বেশ কিছু ছেলেকে থানায় তুলে নিয়েছি এবার ম্যানেজারকে নেওয়ার পালা। মাদকদ্রব্যের বেচাকেনার সঙ্গে উনি জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ হচ্ছে। আমরা একটু জিঞ্জাসা করবো।

অধরা থমথমে মুখ নিয়ে বলল,
> নিশ্চয়ই তবে দেখবেন ভালো মানুষ যেনো সাজা না পেয়ে যায়। উনি ভয়ে হোক বা অর্থের জন্যই হোক এসবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ করেছেন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কি বিবেচনা করুণ তবে এখানে আমি আর উনাকে এখানে রাখছি না। আসুন এবার।

> থানায় একটু আসতে হবে স্যারকে বলেছি। এখন আসছি।

পুলিশ চলে যেতেই অধরা চৌধুরী সাহেবকে ফোন দিয়ে সবটা বলে দিল। ততক্ষণে আহির এসে হাজির হয়েছে। বাইরে বড়সড় একটা ভিড় জমেছে। এই ঘটনার জন্য রিসোর্টের বদনাম হবে। আগের মতো রেপুটেশন পেতে অনেক অপেক্ষা করতে হব। অধরা মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানালো। নিজের কাজ সব সময় নিজ দায়িত্ব নিয়ে করতে হয়। পরের উপরে ভরসা করা উচিৎ হয়নি। আহির ওর পাশে এসে অবাক হয়ে বলল,
> আন্টি এসব সত্যিই? আপনি জানতেন না আপনার অনুপস্থিতিতে সব হচ্ছে এখানে? বাইরে লোকজন কি আজেবাজে কথাবার্তা বলছে। ক্ষতি হয়ে গেলো অনেক। প্রচুর লস হবে।
অহিরের কথা শুনে অধরা ফস করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> টাকা বা লোকজনকে নিয়ে আমি ভাবছি না অহির। তোমার আঙ্কেল সামলে নিবে। আমি ভাবছি নিজের বুদ্ধি দেখে। কিভাবে পারলাম বাইরের লোকদেকে বিশ্বাস করতে যেখানে নিজের লোকরাই আপন থাকে না।
অধরার কণ্ঠে আফসোস ঝরে পড়ছে। জুবায়ের ইতিমধ্যে নতুন ম্যানেজার আর কিছু কর্মীর ব্যবস্থা করে ফেলেছে। ওর অফিসের কিছু লোকদের এখানে নিয়োগ দিয়েছে। অধরা ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করলো। ওর থমথমে মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে আহির। এদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তফাৎ হিসেব করতে ও ব্যস্ত। একজন মাথায় আগুন নিয়ে ঘোরে আরেকজন পানি। আহিরের ধ্যান ভাঙলো জুবায়েরের কথা শুনে।
> অধরা চলো এদিকে আমি সামলে নিয়েছি। এখন থেকে আমি সব দেখাশোনা করবো। তোমাকে ভাবতে হবে না।
জুবায়েরের কথায় অধরা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। মুখ ঘুরিয়ে থাকলো। আহির বুঝলো এদের মধ্যে কিছু চলছে তাই কথা ঘোরাতে বলল,
> আমার বাবা আপনাদের সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাইছেন। এদিকে সব ঝামেলা মিটলে উনি ভেতরে আসবেন। প্লিজ অনুমতি দিন
জুবায়ের কিছু বলতে চাইলো কিন্তু অধরা অনুমতি দিয়ে দিলো। আহির ছুটলো ওর বাবাকে ডাকতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভদ্রলোক এসে হাজির হলো। জুবায়ের আলাপ শেষে উনাকে বসতে বলে নিজেও বসলো। দূরে আহির দাঁড়িয়ে আছে। অধরা ভ্রু কুচকে ভদ্রলোকের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে। জুবায়ের সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করলো,
> কিছু বলবেন? আমাদেরকে এখুনি যেতে হবে আপনি শুরু করুন।
ভদ্রলোক আমতা আমতা করে মিনমিনে কণ্ঠে বললেন,
> ছেলের জন্য আপনাদের মেয়েকে আমার খুব পছন্দ একবার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্লিজ একবার ভেবে দেখুন। নিজের মেয়ের মতো রাখবো কহিনুর মাকে।

ভদ্রলোকের কথা শেষ হলো না জুবায়ের হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> আপনার ছেলের বয়স কতো? আমার মেয়েটা পনেরো পেরিয়েছে এখনো বাচ্চা। আপনি কিভাবে ওর বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারেন? মেয়ে ভাবলে বুঝি এই প্রস্তাব রাখতে পারতেন?
জুবায়েরের চোখেমুখে রাগের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। অধরা ওকে ইশারা করলো রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে। ভদ্রলোক বুঝেও না বোঝার ভনিতা করে বললেন,

> আমার স্ত্রীর খুব পছন্দ কহিনুরকে তাই এতোটা রিকুয়েস্ট করছি। তাছাড়া একবার ভেবে দেখুন আপনার মেয়ে বোবা বধির ওর জন্য আমার ছেলের চাইতে ভালো পাত্র পাবেন বলে আশা করা যায়না। সুযোগ বারবার আসেনা।

জুবায়ের এবার আর রাগ নিয়ন্ত্রক করতে পারলো না। ওর মেয়েকে ছোট করা হয়েছে দেখে ধুম করে টেবিল চাপড়ে বলল,
> আমার কোম্পানিতে আপনার ছেলের মতো হাজারটা ছেলে কাজ করে।মেয়ের জন্য আমি জামাই দরকার হলে কিনে আনবো তবুও আপনার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিবো না। বেশি ইনোসেন্ট সাজতে আসবেন না। দুটো দিন সময় দিন মুখোশ খুলে দিব। আমার মেয়েকে নিয়ে ভেবে অযথা সময় নষ্ট না করে নিজেকে রক্ষা করতে ঝাপিয়ে পড়ুন। আসছি

জুবায়ের উঠে অধরার হাত ধরে একপ্রকার টানতে টানতে বেরিয়ে আসল। মেজাজ আগেই ওর গরম ছিল এই লোকটার কথাশুনে আরও খারাপ হলো।তাছাড়া ওর কাছে কিছু তথ্য আছে সেগুলোর সঙ্গে এই ভদ্রলোক বিশেষভাবে জড়িত।
****************
দুই দিনের জন্য জার্মান গেছে জামসেদ। বহুমূল্যবান পাথরটা হারিয়ে ওর মেজাজ খারাপ। যেভাবেই হোক এটা ওর খুব দরকার। এতোদিনের সব প্রচেষ্টা ব্যার্থ হলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। অভিশাপ কেটে গেলে সব স্বাভাবিক কিছুতেই হবে না। মাস খানিক আগেও যেটা ওর হাতে ছিল হঠাৎ কে চুরি করলো পাথরটা ভেবে পাচ্ছে না। তাছাড়া কোম্পানির ঝামেলাতো আছেই। ইমরোজ খান পাথর ছেলেটা হাত ধুয়ে পড়ে আছে ওদের পেছনে। কিছু প্রডাক্ট মার্কেট প্রাইজ থেকে কম দামে বাজারে ছেড়েছে। সেই সঙ্গে লটারি সিস্টেম চালু করেছে। হাজারটা প্রডাক্টের মধ্যে একটা প্রাইজ দিতে কোম্পানির খুব একটা লস হবে না। রমরমা চলছে ওদের বিজনেস। এভাবে চললে সুলতানরা পিছিয়ে পড়া শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। জুবায়ের এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু জামসেদ খুব মুডি। হোক সব কহিনুরের নামে তাতে কি? ভোগ দখলের স্বাধীনতা আছে এটাইতো অনেক। তাছাড়া বাইরের কেউ পরিবারের কাহিনী কিছুই জানেনা।
********
পশ্চিম আকাশে থালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে। বেলি ফুলের কড়া গন্ধে হৃদয় পুলকিত হচ্ছে। জোছনার আলো ঠিকরে পড়ছে শরীরে। সবুজ দিগন্তে দুহাত মেলে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে পাথর। হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠেের মধুর ধ্বনিতে ধরণী মুখোরিত হয়ে উঠলো। পাথর ঝট করে চোখ খুঁলে সামনে তাঁকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার মুখে লম্বা একটা ঘোমটা। পাথর মেয়েটার মুখটা দেখতে না পারলেও পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষণ করলো। ওর সাদা হাত দুটো লাল টুকটুকে হয়ে আছে। হয়তো মেহেদীর রঙ কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো এভাবে কেউ মেহেদী পরে নাকি? পাথর কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গিয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> কে তুমি? তোমার হাতে এগুলো কি?
ওর প্রশ্ন শুনে মেয়েটা হাসলো। কি মিষ্টি সেই হাসি। ।হাসির শব্দে পাথরের পাথর হৃদয়ে মূহুর্তে ঝড় উঠে গেলো। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেই মিষ্টি হাসির শব্দটা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে ওর কর্ণ ভেদ করে মস্তিষ্কতে গিয়ে আঘাত করলো। পাথর কানে হাত দেওয়ার আগেই শুনতে পেলো,
> আমি র*ক্ত নিয়ে খেলতে ভীষণ পছন্দ করি। উষ্ণ এই তরলের টুকটুকে লাল রঙ দিয়ে আমি মেহেদী পরি। আমার মোহে পড়তে এসোনা বরং দূরে থাকো।
হুড়মুড় করে উঠে বসলো পাথর। চোখ লেগে গিয়েছিল তাই অফিসের সোফায় বসে এতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিল।ও হঠাৎ এই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখার কোনো মানে খুজে পেলো না। এখনো শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে।একদম জীবন্ত সেই মেয়েটা। প্রশ্ন জাগলো মনে, হঠাৎ কেনো দেখলো এই স্বপ্নটা?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here