চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস #মম_সাহা বোনাস পর্ব

0
289

#চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস
#মম_সাহা

বোনাস পর্ব

(৫৪)

জীবন ধারার স্রোত কখন কোথায় গিয়ে বিরতি নেয় তা জানে না কেউ। শৈবালের মতন কেবল ভেসে ভেসে চলতে হয় সেই স্রোতের তালে। দিন যায়, ক্ষণ যায় কেবল যায় না স্মৃতিরা। কেমন বুক ভার ভার কষ্টের পাহাড় আঁকে রোজ নিয়ম করে মন মন্দিরে। কখনো স্মৃতিরা খিলখিল হাসি হাসে, কখনো বা তারা করে নিরব আর্তনাদ। আমরা মানুষেরা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখি নিজেদের স্মৃতির সেই ভয়ঙ্কর আহাজারি। স্মৃতি বদলানোর সাধ্য থাকলে, মানুষ সবার আগে নিজের খারাপ স্মৃতি বদলাতো। কারণ দিনশেষে স্মৃতিরা ভালো থাকতে দেয় না আমাদের।

সেপ্টেম্বরের উনত্রিশ তারিখ। বৃহস্পতিবার। চিত্রা নিজের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসার আজ পনেরো দিন হলো। কই, একটা সময় যে বাড়িটাকে নিজের পায়ের নিচের ভিত্তি, বেঁচে থাকার অবলম্বন মনে হয়েছিল, আজ সে বাড়ি বিহীন তো ভালোই কেটে গেলো পনেরোটা দিন। তাহলে আগে কেন মনে হতো, সে মানুষ গুলো ছাড়া নিজের কোনো অস্তিত্ব নেই? সময় মানুষকে বাঁচতে শেখায়। কখনো অনেক প্রাপ্তির মাঝে বাঁচতে হয়, কখনো বা বাঁচতে হয় তুমুল অপ্রাপ্তিতে। চিত্রারও সেই অপ্রাপ্তির জীবন শুরু হয়তো। অনেক তো হলো প্রাপ্তির ডানা ঝাপ্টানো।

ধানমন্ডি লেকের পাশের বড় রাস্তার কোণ ঘেষে যাওয়া গলিটার ভেতরের দিকের রঙচটা হলুদ রঙের বাড়িটার দু’তলার দুইরুমের নির্জন ফ্লাট টাতে ঠাঁই হয়েছে চিত্রার। নির্বাসন বলা চলে। চাঁদনীর অনাকাঙ্খিত ক্ষতির শাস্তি স্বরূপ চিত্রার দীর্ঘ নির্বাসন ঘোষণা করা হয়েছে। খারাপ কি! নিরব বেঁচে থাকাটা মৃত্যুর জীবন্ত স্বাদ। চঞ্চল চিত্রাকেও সে স্বাদ নিতে হলো প্রিয় মানুষদের কাঠিন্যতায়।

প্রকৃতিতে তুমুল ঝড় উঠলো। চিত্রা শুয়ে ছিলো খাটে। বারান্দায় ফুলের টব পড়ে যাওয়ার শব্দে তার গম্ভীর ধ্যান নষ্ট হলো। চোখে মেলে তাকাতেই দেখে দুপুরের ঠাঠা রোদ শূন্যে মিলিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন ভর সন্ধ্যে বেলা এটা! হুট করে প্রকৃতির এমন অসন্তুষ্ট অবস্থা দেখে বারান্দায় ছুটে গেলো চিত্রা। বারান্দায় কতগুলো জামাকাপড় শুকাতে দেওয়া হয়েছে, সে গুলোই আনার জন্য এত ব্যস্ততা।

জামাকাপড় আলগোছে সরিয়ে আনতেই আকাশ ভেঙে ঝপঝপিয়ে বৃষ্টি নামলো ধরার বুকে। চিত্রা ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলো। মানুষের সঙ্গ পছন্দ করা চিত্রা আজ নিরবতায় আচ্ছন্ন। ভাগ্যের চাকাটা খুব দ্রুতই ঘুরেছে বোধহয়।

বারান্দার দরজা আটকাতে গিয়ে বৃষ্টির ছাঁট কিছুটা গায়ে লাগলো চিত্রার। দরজার সাথে ডান হাতটার একটু জোরে ঘর্ষণ লাগতেই ডান হাতের তালুর উপর পরা বড় ফোসকা টা গলে গেলো। মৃদু স্বরে ‘আহ্’ করে উঠলো চিত্রা। একটু আগে ভাতের মাড় গালতে গিয়েই এই অঘটন টা ঘটেছে। অতিরিক্ত জ্বালায় চোখ টলমল করে উঠলো। অথচ চিত্রা ফিক করে হেসে দিলো নিজের ব্যাথা দেখে। হাসতে হাসতে হাঁটু মুড়ে বসলো বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে। ফোসকা পড়া জায়গাটার দিকে তাকিয়ে কেমন যেন ভীষণ রকমের আহাজারি করা সুর অথচ তাচ্ছিল্য নিয়ে বললো,
“তোর আজও ব্যাথা লাগে, চিত্রা? ব্যাথারা তবে এত আঘাত পাওয়ার পরও ম* রে নি!”

নিজের করা প্রশ্নের ধ্বনি কানে বাজতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো সে। যখন বাড়ি ছাড়লো, তখনও তো এমনই বৃষ্টি ছিলো তাই না? এমন তান্ডবই তো চলে ছিলো প্রকৃতিতে! এমন ধ্বংসই তো হয়েছিলো চিত্রার নরম, কোমল হৃদয়টা তাই না?

চোখ বুঝে চিত্রা। চোখের পাতায় ভেসে উঠে সেদিন তার র* ক্তা* ক্ত মুখের দৃশ্য টা।

চিত্রার নাক-মুখ দিয়ে অনবরত র* ক্তের স্রোত বেরিয়ে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায় তুহিন। তার ভীত কণ্ঠে বাড়ির বাকি সদস্যদেরও দৃষ্টি পরে চিত্রার উপর। মেয়েটার শরীর নিস্তেজ প্রায়। অবনী বেগম ছুটে আসে, পাগলের মতন চিত্রার চোখ-মুখে পানি ছিটাতে থাকেন। তুহিন হতভম্ব। সাথে হতভম্ব বাড়ির অন্যান্য মানুষেরাও। রোজা সওদাগরও আকষ্মিক ঘটনায় তাজ্জব বনে যায়।

বোনের এই নাজেহাল অবস্থাতেও বাবাকে অটল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় তুহিন। বাবার প্রতি ঘৃণায় রি রি করে উঠে তার শরীর। চিত্রা ততক্ষণে প্রায় বেহুশ অবস্থা। তুহিন বোনের হেলে যাওয়া শরীরটা দু’হাতে আঁকড়ে ধরে বাবার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আপনি সত্যিই মানুষ তো, আব্বু?”

নুরুল সওদাগর তেমন উৎকণ্ঠা দেখালেন না। বরং বেশ ধীরে বললেন,
“ওকে ঘরে নিয়ে যাও, ডাক্তারকে কল করো।”

তুহিন তাচ্ছিল্য করে উঠে। জীবনের প্রথম তার কোনো মানুষকে ঘৃণা হলো। সে মুখ ঝামটি মেরে বাবাকে বললো,
“আপনার সেটা না ভাবলেও হবে, আব্বু। আমার বোন তো, সামলে নিবো নাহয় আমি। আপনি বরং আপনার সংসার সামলান।”

তুহিনের কথায় এবার একটু চিন্তার ভাঁজ পড়লো নুরুল সওদাগরের মুখে। কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বললো,
“তুমি ব্যবস্থা করবে মানে?”

“যে মেয়েটা আপনাদের চক্ষুশূল, সে নাহয় আর আপনাদের চোখের সামনে না রইলো।”

তুহিনের এমন পরিস্থিতিতে এমন কথা হয়তো আশাকরি নি কেউ। তাই তো ফুপি ধমকে উঠে বললো,
“তুহিন, কি বলছিস বাবু তুই? মেয়েটার এ অবস্থাতেও এসব বলা লাগে? আপাতত কোনো ব্যবস্থা কর ওর। খারাপ কিছু হয়ে গেলে পরে!”

“ভালোই তো হবে, ফুপি। আপনাদের ঘরে থাকার চেয়ে আমার মনে হয় ওর ম* রে যাওয়াটা ওর জন্য সুখের, তাই না চিত্রার বড় চাচীম্মা?”

বাহারের হুট করে আগমন এবং এমন অপ্রাসঙ্গিক কথায় সবার মুখটা ছোটো হয়ে এলো। নুরুল সওদাগর ধমক দিলেন বাহারকে। আঙ্গুল উঁচিয়ে বললেন,
“তোমাকে কেউ আমার মেয়ের ব্যাপারে বা আমার সংসারের ব্যাপারে কথা বলতে বলেছে?”

“আপনার মেয়ে! হাসালেন তো। সুন্দর কৌতুক। তা আমি মনে করি, এমন বাবার মেয়ের এমন দুর্ভাগ্যই প্রাপ্য। এই যে র* ক্তা* ক্ত হয়ে পরে থাকাটাই তার প্রাপ্য। শুনেছি বাবারা সন্তানের বটগাছ হয়, একমাত্র আপনাদের পরিবারেই দেখলাম, বাবারা সন্তানের চরম সর্বনাশের কারণ।”

“তোমাকে দু’টো চ* ড় বসানো উচিৎ । বেয়া* দব ছেলে।”

“আরে স্যার, আগে নিজে তো আদবটা রপ্ত করুন। তারপর নাহয় অন্যকে বে* য়াদব বলবেন।”

নুরুল সওদাগরের কথা সেখানেই থেমে গেলো। বাহারের সাথে তর্কে জড়ানোটা নেহাৎই বোকামি ছাড়া কিছু না। বাহার এগিয়ে আসলো চিত্রার কাছে। অহির দিকে তাকিয়ে বরফ আনার নির্দেশ দিলো। অহি তৎক্ষণাৎ বরফ নিয়ে চলে এলো। চিত্রার নাকের কাছটাকে কিছুক্ষণ বরফ ধরে রাখতেই বন্ধ হয়ে গেলো র* ক্তের স্রোত। চিত্রার নিভু নিভু চোখে তখনও জল গড়িয়ে পড়ছে। ভেজা ভেজা কণ্ঠে অস্ফুটস্বরে সে বললো,
“আমি সত্যিই চাঁদনী আপার ক্ষতি চাই নি, বাহার ভাই।”

“আমি জানি।”

বাহারের ছোট্টো উত্তরটার পরে জ্ঞান হারালো চিত্রা। মেয়েটার বেহাল অবস্থা দেখে বুক কাঁপলো বাহারের। সে তুহিনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“তুহিন, মেয়েটাকে বাঁচতে চাইলো নিরাপত্তা দিতে হবে। অথচ তোমার পুরো বাড়িটাই বর্তমানে তার জন্য অনিরাপদ জায়গা। যা করবে, ভেবে করো।”

বাহারের ইঙ্গিতের কথাবার্তা হয়তো তুহিন ঠিক বুঝলো। বোনের মাথাটা চেপে ধরে বড়চাচীর হতভম্ব মুখটার দিকে তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কী চান?”

“আমি তোমাদের ভালোবাসি। তার চেয়ে বেশি ভালোবাসি আমি আমার সন্তানদের। চিত্রাকে সামনে দেখলেই আমার সন্তানের সর্বনাশের কথা মাথায় চলে আসে। বাকিটা তোমরা জানো।”

চাচীর উত্তর শোনার পর তুহিন বাবার মুখের দিকে তাকালো। তার এতটুকু বিশ্বাস ছিলো বাবা হয়তো এবার কিছু বলবে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বাবা কিছুই বললেন না আশানুরূপ। বরং নিবিড় কণ্ঠে বললেন,
“ভাবী আমাদের সংসারের কত্রী। তার কথাই শেষ কথা।”

অতঃপর তুহিন আর কারো পিছুডাক শুনলো না। বোনকে নিয়ে এক কাপড়েই বেরিয়ে গেলো। ছোটো চাচী, ফুপি, অহি সবাই ই পিছু ডাকলো, কেবল যার ডাকার কথা ছিলো সে-ই মানুষটাই নীরব রইলো।

সওদাগর বাড়ির বহু পুরোনো ভিত্তিটা কেঁপে উঠলো। ভাঙনের সুরে ইট-পাথর গুলোও যেন কেঁপে উঠলো। এই বাড়িটাকে এক সূত্রে বেঁধে রাখার জন্য যেই নারী জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ করেছিলো, আজ সেই নারীর হাত ধরে ভাঙন শুরু।

হঠাৎ বজ্রপাতে কেঁপে উঠলো চিত্রা। শরীরও প্রায় কিছুটা ভিজে গিয়েছে। চোখের কোণে সরল গতিতে বেয়ে পড়লো অশ্রুররেখা। কেমন ছাড় খাঁড় করা দুপুর এটা! কেমন নিস্তব্ধ করা বেলা!

বৃষ্টির শব্দকে ছাপিয়ে চিত্রার ডাক ভেসে এলো যেন ভয়াবহ বাতাস ভেদ করে। চিত্রা মনে মনে ভাবলো হয়তো ভুল শুনেছে। পর পর আবারও ডাক ভেসে এলো। বারান্দা দিয়ে তাকাতেই ভেজা শার্ট লেপটে থাকা শরীরে বাহার ভাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে। বাহার ভাইয়ের সাথে গত সপ্তাহে দেখা হয়েছিলো। এরপর আর লোকটার খোঁজ নেই। আজ হুট করে কোথা থেকে উদয় হলো সে!

চিত্রাকে ধ্যানে মগ্ন থাকতে দেখে বাহার তৃতীয় বারের মতন নাম ধরে ডাকলো এবং নিচে আসার ইঙ্গিত দিলো। চিত্রা মাথা দুলালো, প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“নিচে আসবো কেনো? আপনি উপরে আসুন।”

বাহার বৃষ্টির জন্য ভালো করে চোখ মেলে তাকাতেও পারছে না। তবুও বারান্দার জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসা চিত্রার মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তাড়াতাড়ি আসলে আসো নাহয় বসে থাকো। এত কৈফিয়ত দিতে পারছি না।”

চিত্রা অধৈর্য হয়ে বললো,
“দাঁড়ান দাঁড়ান, আসছি।”

বাহারের মাথায় দুষ্টবুদ্ধি চাপলো। সে মিটমিটিয়ে হেসে বললো,
“তাড়াতাড়ি আসো মেয়ে। বৃষ্টি যে আমাকে ভিজিয়ে নাজেহাল করে দিচ্ছে। অথচ আমার ভেজার কথা ছিলো তোমার প্রেম বৃষ্টিতে।”

এমন খোলামেলা, অস্ফুটে বাহারের লাগামহীন কথাতে তাজ্জব বনে গেলো চিত্রা। সে দ্রুত মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে ফেললো। লজ্জায় ক্ষাণিকটা সময় চুপও ছিলো। অতঃপর ফ্লাটের দরজা আটকে ছুটে গেলো নিচে।

(৫৫)

তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে, শীতে জুবুথুবু চিত্রার শরীর। হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে অনেকটা দূর। বাহার ভাইয়ের নাকি আজ ভেজা শহর দেখার শখ জেগেছে। সেই শখ পূরণ করতেই তার ছুটে আসা।

চিত্রাকে শীতে কাঁপতে দেখে আড়চোখে তাকালো বাহার। ঠাট্টার স্বরে বললো,
“অত কাঁপা-কাঁপি করে লাভ নেই মেয়ে, টিভির হিরোদের মতন গায়ের জামা খুলে দিতে পারবো না। আমারও তো লজ্জা-টজ্জা আছে নাকি।”

বাহারের কথায় গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে রইলো চিত্রা। ভাষাহারা তার কণ্ঠ। বিস্মিত কণ্ঠে সে বললো,
“বাহার ভাই, আজ কথার লাগাম ছেড়েছেন নাকি?”

“না না ছাড়ি নি। কেবল বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেছে বেড়িবাঁধ। ও তুমি চিন্তা করো না, বৃষ্টি চলে গেলে অনুভূতিরাও আবার লুকিয়ে যাবে।”

“বাহার ভাই জানেন? আপনি আমার বিশাল পূর্ণতা।”

“অথচ আমি মানুষটা গোটা এক শূণ্যতা।”

“আপনিও কী তবে আমায় ছেড়ে যাবেন?”

“ছাড়তে যদি হয়, তাইতো ধরতে করছি ভয়।”

“আপনি আমার বৃষ্টির দিনে এক কাপ চা।”

“তুমি আমার বৃষ্টির দিনে গরম গরম খিচুড়ির মাঝে, তেলতেলে ইলিশ মাছ ভাজা।

মিষ্টি মিষ্টি কথাকে শেষমুহুর্তে এসে ঠাট্টায় উড়িয়ে দিলো বাহার ভাই। আবার নিজেই হা হা করে হেসে দিলো। চিত্রা প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও পরক্ষণেই সেও হেসে দিলো বাঁধন ছাড়া হাসি। ভেজা রাস্তায়,তুমুল বর্ষণে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য বোধহয় এটা। দু’জন মানুষ দু’জনের দিক থেকে তুমুল ভেঙে যাওয়া অথচ দু’জনই দু’জনের সান্নিধ্যে চরম সুখী। অপ্রাপ্তির মাঝে সবাই হাসতে জানেনা, সবাই হাসাতে জানেনা, যারা জানে, তারা প্রত্যেকে একেক জন দারুণ মানুষ।

(৫৬)

ভেজা শরীরে গরম গরম খিচুড়ি সাথে ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে পেট পুরে খেয়ে নিলো দুজনেই। চিত্রা মাছ বাছতে পারে না বলে খুব যত্নে সে কাজটা করে দিলো বাহার ভাই। ভাবা যায়, একজন অগোছালো মানুষ কোনো একটা মানুষের কাছে এসে নিপাট ভালো মানুষ হয়ে যায়! ভালোবাসা সব পারে, তাই তো ভালোবাসা সুন্দর।

খিচুড়ি খেয়ে বেরুতেই চিত্রাকে থামিয়ে দিলো বাহার। চিত্রা অবাক হলো, অবাক কণ্ঠে বললো,
” বাসায় যাবেন না? অনেকক্ষণ তো হলো।”

বাহার হাসলো। মিষ্টি কণ্ঠে বললো,
“তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

“কি সারপ্রাইজ?”

বাহার চিত্রাকে ইশারা করলো পিছে তাকাতে। তখনও প্রকৃতিতে বর্ষণ অবস্থানরত। চিত্রা পিছু ফিরেই বৃষ্টির মাঝে ঝাপসা ঝাপসা ভাবে মানুষটার মুখ দেখতেই অবাক হয়ে গেলো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একবার বাহার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছুটে গেলো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে। নিসঙ্কোচে জড়িয়ে ধরলো সে মানুষটাকে। চোখের মাঝে তখন তুমুল খুশির অশ্রুরা। শক্ত করে মানুষটাকে জাপ্টে ধরে ক্রন্দনরত সুরে সে বললো,
“তোমার মতন কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারে নি। ওরা আমায় ভালোবাসে নি।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here