#চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস
#মম_সাহা
পর্বঃ তিন
(৬)
বাহারের হুট করে অদ্ভুত গানের কারণে হা হয়ে রইলো অহি। বিষ্মিত কণ্ঠে বললো,
“আপনি কাকে মিন করে গানটা গাইলেন!”
বাহার আঁধারে ঢাকা সিঁড়ির দিকে একবার পলক ঝাপ্টা দিয়ে তাকালো, অতঃপর কিছু হয় নি এমন ভাব করে আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো। অহি জানে বাহার এত সহজে উত্তর দেওয়ার পাত্র নয়। তাকে প্রশ্ন করাটা নেহাৎই বোকামি। আর অহির মতন চালাক মেয়ের বোকামি করা সাজে না।
গলা পরিষ্কার করে কথা ঘুরানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে অহি বললো,
“আপনার জন্য খাবার এনেছিলাম। সারাদিন তো না খাওয়া আপনি।”
অহির কথা থামতে দেরি অথচ বাহারের পিছে ঘুরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলতে দেরি নেই। যেন বিদ্যুৎ এর বেগে পিছে তাকিয়েছে এক সেকেন্ড ব্যয় না করে। বাহারের দৃষ্টি অহিকে ক্ষানিকটা ভড়কে দিলো। মেয়েটা বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে আমতা-আমতা করে বললো,
“আমি না, মেঝো মা পাঠিয়েছে।”
বাহার অহিকে পা থেকে মাথা অব্দি একবার পরখ করলো। অতঃপর ঠোঁটের ভাজে থাকা সিগারেটার মাঝে দু’টো টান দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে দিলো আকাশে। খুব গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“মিথ্যে কেন বলেছিলে? তোমাকে তো মহিন কিছু করে নি।”
অহির স্থির হাত দুটো কেঁপে উঠলো। সেই কাঁপা হাতেই খাবের প্লেট টা ধরে রেখে আছে বহু কষ্টে। বাহার কাঁপা হাতের দিকে দৃষ্টি দিলো অতঃপর কণ্ঠ সামান্য উঁচু করে আঁধারে নিমজ্জিত সিঁড়ির পানে তাকিয়ে হাঁক ছাড়লো,
“এই মেয়ে, এখানে আসো তো একটু।”
চিত্রা এতক্ষণ সবকিছুই আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছিলো। আকষ্মিক ডাকে সে ভীত হলো। ধরা পরে যাওয়ার লজ্জাও পেলো। তবুও সে জায়গা থেকে এক ইঞ্চিও নড়লো না।
বাহার অধৈর্য হলো। বিরক্তও হলো কিঞ্চিৎ। সম্পূর্ণ ঘটনায় বোকা বনে রইলো অহি। অবাক কণ্ঠে বললো,
“ওখানে কেউ নেই তো।”
বাহার অহির কথায় তেমন পাত্তা দিলো বলে মনে হলো না। কণ্ঠের জোর বাড়ালো, বিরক্তের সহিত অধৈর্য্য কণ্ঠে বললো,
“রঙ্গন ফুল কানে গুঁজে রাখা রঙ্গনা, তোমাকেই বলছি, এখানে আসো।”
চিত্রা এবার সিউর হলো বাহার তাকেই ডাকছে। ইশ্ এমন লুকিয়ে কথা শুনতে গিয়ে ধরা পরে যাওয়ার মতন লজ্জা যেন আর হয় না। এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে লজ্জার পাল্লা বাড়বে বৈ যে কমবে না তা চিত্রার বেশ জানা আছে। তাই ধীর পায়ে দরজা পেরিয়ে অহিদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো৷
অহি অবাক হলো চিত্রাকে দেখে। সে যে এখানে মোটেও চিত্রাকে আশা করে নি, সেই কথা ছড়িয়ে গেলো তার মুখ-চোখ জুড়ে। ফ্যাল ফ্যাল নয়নে চিত্রার পানে তাকিয়ে আকাশ সমান বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“তুই এখানে!”
লজ্জায় চঞ্চল চিত্রা ক্ষানিকটা নেতিয়ে গেলো। মুখটা ছাঁদের খড়খড়ে ছাই রাঙা উঁচু নিচু ফ্লোরে নিবদ্ধ করে ধীর কণ্ঠে বললো,
“আমি, আমি তো বাহার ভাইয়ের কাছে এসেছিলাম। সে খাবে কিনা জিজ্ঞেস করতে। ছোট চাচীই তো পাঠালো।”
অহি ভ্রু কুঁচকে কেমন দৃষ্টিতে যেন কতক্ষণ তাকালো চিত্রার দিকে অতঃপর ঘাড় অব্দি চুল গুলো বাতাসে উড়িয়ে গা ছাড়া ভাবে বললো,
“অথচ আম্মু বিকেলে চাঁদনী আপাকে নিয়ে চ্যাকআপ করাতে গেছে। আমি যতটুকু জানি সে এখনো ফিরে নি। তাহলে!”
একে তো লুকিয়ে এসে ধরে পড়ে গিয়েছে তার উপর মিথ্যেটাও যুক্তিহীন হয়ে যাওয়ায় লজ্জায় মাথা নত করতে করতে চিবুক ঠেকলো গলদেশে। অহি হাসলো, প্রায় খোঁচা মেরেই বললো,
“সব ধরণের খারাপ অভ্যাস তোর আয়ত্তে ছিলো, এখন কি আড়ি পেতে কথা শোনার অভ্যাসটাও রপ্ত করতে চাচ্ছিস!”
সবটা সহ্য করতে পারলেও অহি আপার খোঁচাটা সহ্য করতে পারলো না চিত্রা। চোখ টইটুম্বুর হয়ে দেখা দিলো অশ্রুর স্রোত। ঠোঁট কাঁপিয়ে কিছু বলার আগেই বাহারের রাশভারী কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ঝগড়া করার হলে তোমরা নিচে গিয়ে ঝগড়া করতে পারো। বিনা কারণে একমাত্র মহিলা জাতিই বোধহয় এত কথা খরচ করতে পারে।”
কথা কাটাকাটি থেমে গেলো। চুপ হলো প্রকৃতি। চিত্রা নাক টেনে গিলে ফেললো কান্না। বাহার এবার চিত্রার দিকে তাকালো, স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“চেরির মতন বাচ্চা মেয়ের সাথে খারাপ ঘটনা ঘটেছে, অথচ তুমি সেটা জেনেও কীভাবে হজম করলে! অদ্ভুত!”
চিত্রা থতমত খেয়ে গেলো। বাহার ভাই অব্দি কথা কীভাবে এলো? তাহলে কি চেরিই বলেছে? চেরি না বললে অহি আপাও বা জানলো কীভাবে? সবটা তাহলে চেরির কাজ!
ভাবনার মাঝেই বাহারের ছোটোখাটো একটা রামধমক ভেসে এলো,
“কেনো বলো নি চেরির ঘটনাটা?”
আকষ্মিক ধমকে দু’বোনই কেঁপে উঠলো। চিত্রার আকাশ-পাতাল উজাড় করে মন খারাপ হলেও সে প্রকাশ করলো না বরং মাথা নত করেই বললো,
“আমি ভেবেছিলাম পরে আলাদা করে বলবো। এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে যদি এসবের স্বীকর হয় তাহলে মেয়েটার কত খারাপ সময় যায়! আর যদি সে সময়ে সমাজের মানুষ তিলকে তালায় বানায় তাহলে বাচ্চাটার উপর দিয়ে কি যাবে ভেবেছেন? এ জন্য ই আমি বলি নি।”
এবার বাহার দ্বিতীয় প্রশ্নটা ছুঁড়লো অহির উদ্দেশ্যে,
“তুমি কোনো মিথ্যে বলেছো? নিশ্চয় চিত্রার বলা কারণ টার জন্য, তাই না?”
অহি মাথা উপর-নীচ করে সম্মতি প্রদান করলো। বাহার তপ্ত একটা শ্বাস ফেলে ঘুরে ছাঁদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়ালো। অথচ বয়ঃসন্ধির চিত্রা তখন মনের ভিতর অবাকের সাম্রাজ্য নিয়ে অথৈজলে প্রায় ডুবন্ত অবস্থায়। বাহার ভাই আর অহি আপা অব্দি খবরটা কীভাবে গেলো না জানা অব্দি যেন মাথা ঠাণ্ডা হবে না।
মনের এই তুমুল উত্তেজনা নিয়েই আড়ষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন তুললো চিত্রা,
“আপনারা সবটা জানলেন কীভাবে, বাহার ভাই?”
বাহার উত্তর দেয় না। মনের সুখে গিটারে টুংটাং সুর তোলে। লোকটা যেন সব কিছুই নিজের মন মর্জি মতন চালাবে। তার যখন বলতে ইচ্ছে হবে বলবে, শুনতে ইচ্ছে হলে শুনবে কিন্তু কারো কথায় তার নিয়মের কিঞ্চিৎ অবহেলাও করে না।
অহি কতক্ষণ চিত্রার উৎকণ্ঠা মাখানো মুখের উপর চোখ বুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,
“তুই চলে আসার পর চেরি আমার সাথে ভয়ে সেঁটে ছিলো। প্রাণোচ্ছল মেয়েটার এমন কান্ড দেখে অনেক অবাক হই। তারপর এক কিনারে নিয়ে বাচ্চাটাকে জোর করে জিজ্ঞেস করতেই সব অকপটে বলে দেয়। বাহার ভাই হয়তো শুনেছিলেন সবটা। তাই মে*রেছেন। কিন্তু সবার সামনে চেরির কথা বললে সবাই হালকা ভাবেও নিতো হয়তো, বা অন্যান্য দিক বিবেচনা করেই আমি নিজের ঘাড়ে নিয়েছি সবটা।”
চিত্রা মনযোগ দিয়ে সবটা শুনলো। অহি আপার প্রতি ভালোলাগা টা আরেকটু বেড়ে গেলো। অহি আপার সাথে তার গলায় গলায় ভাব ছিলো না কখনোই। কারণ আপা বেশি গম্ভীর। আর খুঁতখুঁতে স্বভাবের হওয়ায় চিত্রার চঞ্চলতা তত পছন্দ করেন না। অহি আপাকে আদর্শ নারীর খাতায় রাখা যাবে নির্দ্বিধায়। নারী সত্তার সকল গুণ তার মাঝে অবস্থিত।
নিরবতার জাল ভেঙে নিচ থেকে চিত্রার মায়ের গলার স্বর ভেসে এলো। সে চিত্রাকে বেশ ব্যাতিব্যস্ত কণ্ঠে ডাকছে। চিত্রা আর অপেক্ষা করলো না, ধপাধপ পা ফেলে ছুটে গেলো নিচে। অহি গম্ভীর কণ্ঠে সবধান বাণী দিলো, “আস্তে যাবি, অন্ধকার এখানটায়। পড়ে যাস না যেন।”
চিত্রার মুখের হাসি প্রশস্ত হলো। একটু আগে অহি আপার খোঁচা দেওয়া কথাটা যতটা ব্যাথা দিয়েছিলো এখন সাবধানী কণ্ঠটা ততটাই প্রশান্তি দিলো।
চিত্রা চলে যেতেই অহি তার হাতের খাবের প্লেট টা বাহারের চিলেকোঠায় নিয়ে গিয়ে রাখলো নিঃশব্দে। আবার শব্দহীন পায়ে বাহারের পিছে এসে দাঁড়ালো। বাহার ঘুরলো না অহির দিকে। আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে থেকে ফিচলে কণ্ঠে বললো,
“কিছু বলবে?”
“আপনি আগাগোড়া পুরোটাই নকল মানুষ, তাই না?”
অসময়ে অহির এমন অদ্ভুত কথা শুনেও চমকালো না বাহার। এমন কি কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখালো না। বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“আচ্ছা! নকল মানুষ? তা নকল হলেও বা কী? তোমার কোনো সমস্যা তো হচ্ছে না?”
“আপনি জ্বলন্ত নে*শা বাহার ভাই। যে নে*শা হয়তো আমার আর চিত্রার শরীরে ভয়ঙ্কর বেগে ছুটছে। চিত্রা টিনএজার, আবেগের বয়স ওর। দুনিয়া রঙিন ওর। কিন্তু আমি, আমার মতন মেয়েকেও আপনি ঠিক থাকতে দিচ্ছেন, বাহার ভাই। আপনি জলজ্যান্ত বি*ষ, যা চিত্রা না বুঝে গ্রহণ করছে আর আমি বুঝে।”
অহির শেষ দিকে কণ্ঠটা কেমন উত্তেজিত লাগলো। হয়তো এত গম্ভীর আলোচনা করতে গিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তার শরীরের সবটুকু রক্তকণিকায়।
বাহারের ভাব এমন যে অহির কথা গুলো নিত্যান্তই স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কথা থামিয়ে অহি কতক্ষণ জিরিয়ে নিলো। অতঃপর বাহারের দিকে কতক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিরস মুখে হাসি দিয়ে বললো,
“আমি জেনেশুনে বি*ষ, করিয়াছি পান।”
এক সেকেন্ডও আর দাঁড়ালো না অহি। ব্যস্ত ভঙ্গিতে ছাঁদ ছেড়ে দিলো সে। তার মতন অত লাজুক, ঠান্ডা মেয়ে এমন কথা বলতে পারে ভাবতেই লজ্জায় তার শরীর হিম হয়ে আসছে। বাহারের সামনে থাকলে আর মুখ দেখাতেই পারবে না। তাই লজ্জা লুকাতেই চলে যাওয়া।
বাহারের দ্বিতীয় সিগারেট টাও শেষ হলো। আড়মোড়া ভেঙে সে অলস ভঙ্গিতে দেহটা টেনে নিয়ে গেলো নিজের ঘরটাতে। ঘরের কৃত্রিম আলোটা বন্ধ করে মাথার নিচে দু’হাত গুঁজে শুয়ে পড়লো। থালার ভাত, গ্লাস ভর্তি পানি স্থির ভাবে আগের জায়গাতেই পরে রইলো। বাহার ছুঁয়েও দেখলো না বরং গলা ছেড়ে গাইলো,
“শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া-দাওয়া কিছু মজা হবে না।”
(৭)
চিত্রা সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদ থেকে নামতেই তার বাবার মুখোমুখি হলো। মা বোধহয় এ জন্য ই এত ডাকছিলেন। বাবার সামনে এসেই চঞ্চল পা জোড়া থেমে গেলো চিত্রার। মাথাটাও নিচু করে দৃষ্টি নামালো।
নুরুল সওদাগর মুখ চোখ কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকালেন। অতঃপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“রাত-বিরেতে ওর দস্যিপনা বন্ধ করলেই আমি খুশি হবো।”
চিত্রার মা মুনিয়া বেগম মেয়ের দিকে তাকালেন। অতি স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন,
“এখনই তো একটু দস্যিপনা করবে। যে বয়সে যেটা মানানসই, সেটা করবে না? অদ্ভুত কথা বলো।”
স্ত্রীর কথা বিশেষ পছন্দ হলো না নুরুল সওদাগরের। বিশাল এক ধমক দিয়ে বললেন,
“অতি উড়লে ঝরতে সময় লাগবে না। সামলাও।”
অপমানে চিত্রার মুখ লাল হয়ে গেলো। রাগে-ক্ষোভে চোখে জল এলো। কান্নাটা আটকে দিয়ে বললো,
“একদিন আমার ঝরে যাওয়ার কারণ নিশ্চয় আপনি হবেন, আব্বু। আমি দেখতে পারছি আমার ভবিষ্যৎ।”
এই প্রথম, এই প্রথম বোধহয় চিত্রা বাবার মুখের উপর কথা বললো। ব্যাপার টা ভীষণ অপ্রত্যাশিত ছিলো। রান্নাঘর থেকে চিত্রার বড় চাচী অব্দি হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইলেন। তৃষাণ আর দিশান সোফায় বসা ছিলো। চিত্রার কথায় তারাও আহাম্মক হয়ে গেলো।
চিত্রা আর দাঁড়ালো না, এক ছুটে নিজের ঘরে চলে গেলো। বাবার মুখের উপর যে সে এমন একটা কথা বলতে পারবে কখনো ভাবে নি। সবটাই যেন বাহার ভাইয়ের ছোঁয়াচে রোগ। লোকটার গা ছাড়া ভাব দেখতে দেখতে নিজের মাঝেও কেমন সে ভাব চলে এসেছে। বাহার ভাই জলজ্যান্ত রোগ। যা ছড়িয়ে পড়ছে মস্তিষ্ক জুড়ে।
(৮)
উত্তপ্ত দুপুরে শরীর পুড়ে যাওয়ার যোগাড়। আজ চিত্রার মেজাজটাও বেশ চটে আছে। কলেজ থেকে বের হতেই তার ক্লাসমেট রিফাত তাকে পত্র দিয়েছে। তাও যে সে পত্র না, একশ বানান ভুল পত্র। পত্র পেয়ে যতটা না উৎফুল্ল হয়েছে ততটাই বানান দেখে রেগে গিয়েছে। প্রেমপত্র না যেন ক্লাসের সবচেয়ে গ*র্দ*ভ ছাত্রের পরীক্ষার খাতা। চিঠিটা ছিঁড়ে কুটিকুটি করে রিফাতের মুখেই ছুঁড়ে ফেলে এসেছে সে।
রাস্তা পাড় হতেই অহি আপার সাথে দেখা চিত্রার। অহি আপা চেরিকে স্কুল থেকে নিতে এসেছে। চিত্রার কলেজ আর চেরির স্কুল প্রায় কাছাকাছি। পরিচিত মুখ দেখতেই চিত্রার মন নেচে উঠলো। ছুটে গেলো অহি আপার কাছে। চেরিও বেশ খুশি হয়েছে চিত্রা আপাকে দেখে। চিত্রা আপার সাথে তার আবার বেশ ভাব।
স্কুল কলেজের গলি ছাড়িয়ে নিজেদের এলাকায় ঢুকতেই বাহার ভাইকে চোখে পড়লো চিত্রার। পাড়ার মোড়ের বড় পিলারটার সাথে দাঁড়িয়ে মনের সুখে সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছে। দুনিয়ায় যেন তার এটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর নেই।
চিত্রা আড় চোখে তাকালো, মিনমিন করে বললো,
“বাহার ভাইয়ের কাছে এলেই সব জ্বলে যায়, হোক সেটা নিকোটিন কিংবা হৃদয়।”
নিজের কথায় নিজেই অবাক হলো চিত্রা। অহি আপা শুনে ফেললো না তো! ভয়ে ভয়ে অহি আপার দিকে তাকালো সে। অহি তখন ফোনে ব্যস্ত। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন চিত্রা। দু একটা রিক্সা চলে যাচ্ছে অদূরে। চিত্রার জুতোর ফিতা টা কিছুটা খুলে যাওয়ায় উপুড় হয়ে বসে ফিতাটা লাগিয়ে নেয় সে। অহি আর চেরি বেশখানিকটা সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
বাহার সিগারেট শেষ করে হাসিমুখে চেরির কাছে এগিয়ে আসতে নিলেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটা চলন্ত বাইক থেকে কিছু তরল পদার্থ ছুঁড়ে মারলো চিত্রা দের উদ্দেশ্যে। তিন মেয়ের ভয়ানক চিৎকারে ভারী হলো এলাকা। বাহার কেবল হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে