#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ৩৩ (শেষ পর্ব)
#লেখকঃ- Tamim
,,
,,
দু’দিন পর…
আজ আরশির বিয়ে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে বাসাটা একেবারে বিয়ের সাজে জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে। বিয়েতেও অনেক মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। মেহমানে বাসাটা একেবারে ভরে গিয়েছে। বিয়েতে সবাই আসলেও ফারহান আসেনি। আজকের দিনেও সে তার অফিস নিয়ে পরে আছে। থাকবে না কেন? যাকে সে ছোটবেলা থেকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে এসেছে আজ তার বিয়ে তাও অন্যকারো সাথে। সে কীভাবে নিজ চোখে তার ভালোবাসার মানুষটার বিয়ে অন্যকারো সাথে হওয়াটা দেখবে? এই দু’দিনে অবশ্য ফারহান আরশির সাথে সামনা-সামনি অথবা ফোন কলেও যোগাযোগ করেনি। আরশিও এতে বেশ অবাক হয়েছে। যেই মানুষটা তাকে এতো ভালোবাসে এখন সেই মানুষটাই তার বিয়ের কথা শুনেও তার সাথে দু’দিন যাবত কোনো যোগাযোগ করছে না এতে আরশি অবাক না হয়ে পারছে না। তবে আরশি নিজেকে এই বলে বুঝ দিয়ে ফেলেছে যে ফারহান তার সাথে কোনো যোগাযোগ না করাতে তারই ভালো হয়েছে।
বরপক্ষ চলে এসেছে, বরপক্ষ চলে এসেছে।
আচমকাই বিয়েতে আসা মেহমানদের মুখে মুখে কথাটা ফুঠে উঠলো। ছোট আর মাঝবয়সী কিছু বাচ্চারা তাড়াতাড়ি গিয়ে বিয়ের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পরলো বরের থেকে কিছু টাকা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। এর মধ্যে আরশির কানেও বরপক্ষ আসার খবরটা চলে গেল। আরশিকে তখন তার রুমে বসিয়ে তার বান্ধবীরা বিয়ের জন্য সাজিয়ে দিচ্ছিল। সাজাতে সাজাতে হঠাৎ রুহি বলে উঠলো, “উফ আরশি তোকে যে আজ কতো সুন্দর লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। দুলাভাই তো তোকে দেখলে চোখই ফেরাতে পারবে না।”
রুহির কথায় আরশি কোনো কর্ণপাত করলো না শুধু নিরবে আয়নার দিকে তাকিয়ে তাকে এক পলক দেখে নিল। এরপর তার বান্ধবীরা তাকে সাজাতে সাজাতে এক পর্যায়ে একে অন্যের সাথে সবাই গল্পে মেতে উঠলো। এর মধ্যে বাচ্চাদের দাবি আদায় করে গেইট ভাড়া দিয়ে সাকিব তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ভিতরে এসে ঢুকলো। তার কিছুক্ষণ পরেই মেহমানদের খাবার খাওয়ানোর তাল পরে গেল। রফিক আহমেদ অনেকবার ফারহানের নাম্বারে কল দিয়েছিলেন এখানে আসার জন্য কিন্তু ফারহান উনার কল রিছিভ করেনি। উনিও পরে আর কল দেননি। প্রায় ঘন্টা দুয়েক লাগলো বিয়েতে আসা মেহমানদেরকে খাবার খাওয়াতে। খেয়ে দেয়ে ইতিমধ্যে দূর থেকে আসা অনেক মানুষ চলেও গিয়েছে। তার কিছুক্ষণ পর আমজাদ হোসেন উনার বন্ধুর সাথে কথা বলে কাজিকে বিয়ে পড়ানো শুরু করতে বললেন। কাজিও উনাদের কথামতো বিয়ের কাজ শুরু করলেন আর কনেকে নিয়ে আসার জন্য বললেন। আমজাদ হোসেন এবার আরশির রুমে এসে ওর বান্ধবীদেরকে বললেন আরশিকে নিয়ে যেন ওরা নিচে চলে আসে।
আমজাদ হোসেন কথাটা বলেই চলে গেলেন। এরপর আরশির বান্ধবীরা আরশিকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো আর এনে সাকিবের পাশে নিয়ে বসিয়ে দিল। এরপর কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। শুরুতেই কাজি সাহেব সাকিবকে কবুল বলতে বললেন। কাজির কথানুযায়ী সাকিব কবুল বলতে যাবে তখনই সেখানে ভীড় ঢেলে ফারহান উপস্থিত হলো। ফারহান দেখেই সাকিব থমকে গেল। আচমকা ফারহানের এমন উপস্থিতিতে আরশিও কিছুটা চমকে উঠলো যেন। তবে ফারহানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। মূহুর্ত খানিক সময় ফারহান দাঁড়িয়ে থেকে একসময় তাদের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। ফারহানকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সাকিব আরশি দু’জনেই কেমন যেন একটা অদ্ভুত লুক নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। এদিকে ফারহান ততক্ষণে তাদের কাছাকাছি এসে আরশির সামনে এসে থামলো আর পকেটে থেকে একটা ছোট্ট লাল রঙের বক্স বের করে সেটা আরশির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“এই নে তোর বিয়ের গিফট।”
ফারহানের এমন কথায় আরশি অনেকটাই অবাক হলো। এই মানুষটা কীভাবে এই মূহুর্তে তাকে তার বিয়ের গিফট দিতে পারলো! এই মানুষটা না তাকে ভালোবাসে? আরশি নির্বাক চোখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু। ফারহান ততক্ষণে সেখান থেকে তার আম্মু-আব্বুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো পরলো আর কাজিকে উদ্দেশ্য করে বললো, “কি ব্যাপার আপনি বসে আছেন কেন? বিয়ে পড়ান।”
ফারহানের এহেন কথায় আরশি আর সাকিব দুজনেই বেশ অবাক হলো। এরপর কাজি সাহেব আবার সাকিবকে কবুল বলতে বললেন। কাজি সাহেবের কথায় সাকিব একবার আরশির দিকে তাকালো আরেকবার ফারহানের দিকে তাকালো আবার তার বাবা আর আমজাদ হোসেনের দিকে তাকালো। কবুল না বলে সাকিবকে চারদিকে তাকাতে দেখে সাজ্জাদ হোসেন বলে উঠলেন, “কি ব্যাপার সাকিব, কবুল বলছিস না কেন?”
সাজ্জাদ হোসেনের কথায় সাকিব এক মূহুর্ত কি যেন ভাবলো এরপর চট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। আচমকা সাকিবকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে আমজাদ হোসেন কিছুটা এগিয়ে এসে বলে উঠলেন, “কি ব্যাপার সাকিব, তুমি দাঁড়িয়ে পরলে কেন বাবা?”
-“আমি এই বিয়ে করবো না আংকেল।”
সাকিবের কথায় উপস্থিত সবাই যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খেল। কবুল বলার মূহুর্তে যদি বর বলে উঠে সে বিয়ে করবে না তাহলে কে না অবাক হবে। তেমনি সাজ্জাদ হোসেন আর আমজাদ হোসেনও অবাক হয়েছেন। তবে বেশি অবাক হয়েছে আরশি। কেননা সাকিব একবার বলেছিল তার আব্বু যখন ঠিক করেছেন তার সাথে তাকে বিয়ে দিবেন তাহলে সে তার আব্বুর কথার অবাধ্য হবে না। তাহলে এখন হঠাৎ সে বিয়ে করবে না কেন বলছে? আমজাদ হোসেন এবার কি বলবেন কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলেন, “মানে! কেন বিয়ে করবে না?”
-“কারণ আপনার মেয়েকে বিয়ে করলে আমি কখনো সুখী হতে পারবো না।”
-“তোমার কথার মানে ঠিক বুঝলাম না।”
-“না বোঝার মতো তো কিছু বলিনি আংকেল। আপনার মেয়েকে একটা মানুষ বিগত ১০ বছর ধরে ভালোবেসে আসছে আর আপনি কি-না তার সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে না দিয়ে আমার সাথে বিয়ে দিচ্ছেন! মানলাম সে আপনার মেয়েকে ছোট থেকেই শাসিয়ে এসেছে, সামান্য ভুলের কারণে গা*য়ে হাত তুলেছে তাই বলে যে তার সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে সে আপনার মেয়ের জীবন নষ্ট করে ফেলবে এমনটা ভাবার কোনো প্রশ্নই আসেনা। হয়তো আপনার মেয়ে তাকে ভালোবাসে না। তবুও আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি তার সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে হলে আপনার মেয়ের কপাল পুড়বে না। উলটা আমি বলবো আমার সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে হলে আপনার মেয়ের কপাল পুড়বে। কেননা আমি শুধু আব্বুর কথাতে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। এমনিতে আপনার মেয়ের প্রতি আমার মনে কোনো ভালোবাসা নেই। তবে বিয়ের পর হয়তো ভালোবাসা জন্ম নিবে কিন্তু উনার মতো করে আমি কখনো আরশিকে ভালোবাসতে পারবো না।” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে সাকিব থামলো।
-“বাবা তুমি কার কথা বলছ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।”
-“এখনো বুঝতে পারেননি কার কথা বলছি? আপনার বোনের ছেলে মানে আপনার ভাগিনা, ফারহানের কথা বলছি।”
-“কিন্তু বাবা আরশি তো…”
-“হ্যাঁ আরশি তো তাকে ভালোবাসে না এটাই বলবেন। কিন্তু উনি তো আরশিকে ভালোবাসেন তাইনা? আমিও তো আরশিকে ভালোবাসি না, আরশিও আমাকে ভালোবাসে না। তারপরও তো আপনারা আমাদের বিয়ে দিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করেন তো আপনার মেয়েকে, সে আমাকে ভালোবাসে কি-না।”
সাকিবের কথাগুলো শুনে আমজাদ হোসেন আরশির দিকে তাকালেন। তা দেখে আরশি সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললো।
-“তার মাথা নিচু করে ফেলাতেই আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন আশা করছি।”
-“সাকিব তুই এইসব কি বলছিস? যেই ছেলের সাথে আমজাদ আরশির বিয়ে দিতে চাচ্ছে না যাকে আরশিও পছন্দ করে না তাহলে কেন তুই ওই ছেলের সাথেই আরশিকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বলছিস?” সাজ্জাদ হোসেন বললেন কথাগুলো।
-“ওই যে প্রথমেই বললাম আরশিকে বিয়ে করে আমি জীবনে সুখী হতে পারবো না। কারণ কেউ একজন তাকে এতো ভালোবেসে চাওয়ার পরও পেল না অথচ আমি তাকে না চাইতেই পেয়ে গেলাম! তাহলে ওই মানুষটার কি দোষ? তার কি আরশিকে ভালোবাসাটাই ভুল হয়েছে?”
-“তাহলে তুই এখন কি চাচ্ছিস?”
-“আমি আরশিকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি চাই আজকে ফারহান ভাইয়ের সাথে আরশির বিয়ে হোক।”
-“তুই কি শিওর?”
-“হ্যাঁ।”
-“আমজাদ তোর খেয়াল কি এখন?”
-“তুই একটু আমার সাথে এদিকে আয়।” এই বলে আমজাদ হোসেন উনার বন্ধু সাজ্জাদকে নিয়ে সেখান থেকে একটু আড়ালে চলে আসলেন।
-“এমন ভরা মজলিশের মধ্যে তোর ছেলে এটা কেমন কাজ করলো বলতো?”
-“আমারও প্রথমে ওর কাজটা একদমই ভালো লাগেনি। তবে ওর কথাগুলোই যুক্তি আছে। ও কিন্তু ভুল কিছু বলেনি। আমি তো এইসবের কিছুই জানতাম না। তবে আজকে সাকিবের মুখে কথাগুলো শুনে সবকিছু বুঝতে পেরেছি। তোর আসলে আমাকে প্রথমেই এইসব বলা উচিত ছিল। এইসব যদি আমি আগে জানতে পারতাম তাহলে আমিই তোর ভাগনার সাথে আরশির বিয়ে দিয়ে দিতে বলতাম।”
-“মানে তুই কি বলতে চাচ্ছিস?”
-“তোর ভাগিনা ফারহানের সাথে আরশির বিয়ে দিয়ে দে।”
-“কিন্তু আ…”
-“কোনো কিন্তু না। ওর সাথে তোর মেয়ের বিয়ে দিলে তোর মেয়ে সুখী হোক বা নাই হোক সেই ছেলেটা তোর মেয়েকে সারাজীবন সুখী রাখবে আমার মন বলছে।”
-“তুই বলছিস এমনটা করবো? আচ্ছা আয় দেখি কি করা যায়।”
এরপর আমজাদ হোসেন উনার বন্ধুকে নিয়ে সেখান চলে আবার বিয়ের স্টেজের কাছাকাছি চলে আসলেন। এসে উনার বোন রোকসানা বেগমের কাছে গিয়ে বললেন, “আপা ফারহান কোথায়?”
-“ফারহান তো এখানেই ছিল। এখন কোথায় গেছে কি বলবো?”
-“আন্টি ফারহান ভাইয়া বাসার বাহিরে এক জায়গায় বেহুশ হয়ে পরে আছেন। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।” হঠাৎ নীলা দৌড়ে এসে রোকসানা বেগমকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে উঠলো।
-“বলো কি! কোথায় আমার ফারহান চল দেখি তো।” এই বলে উনি আর বাকিরা নীলার পিছু পিছু যেতে লাগলো।
সবাই বাসার বাহিরে এসে দেখলো ফারহান এক জায়গায় বেহুশ হয়ে পরে আছে। এ দেখে রোকসানা বেগম আর রফিক আহমেদ দৌড়ে গিয়ে ফারহানের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তারা এসেই দেখলেন ফারহানের মুখ থেকে লাল পানি জাতীয় কিছু একটা গড়িয়ে পরছে। রোকসানা বেগম হাত দিয়ে দেখলেন এটা র*ক্ত।
-“ফারহান কি হয়েছে তোর বাবা? চোখ খুল বাবা কি হয়েছে তোর?” এই বলে রোকসানা বেগম ফারহানকে ধাক্কাতে লাগলেন কিন্তু ফারহান উঠলো না।
মূহুর্তের মধ্যেই সেখানে ফারহানকে নিয়ে হৈহল্লা পরে গেল। ফারহানের চোখে পানির ছিঁটা দেওয়া হলো কিন্তু ফারহান চোখ খুললো না। এক পর্যায়ে রফিক আহমেদ ফারহানের জন্য একটা এম্বুলেন্স ডাকলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে এম্বুলেন্স এসে হাজির হলো। এরপর ফারহানকে ধরে ধরে তার এম্বুলেন্সে উঠানো হলো। এম্বুলেন্স করে ফারহানকে একটা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। ডাক্তার এসে ফারহানকে দেখেই তাকে ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে আসতে বলে নিজেও সেখানে চলে গেলেন। এরপর ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে ডাক্তার ফারহানের ট্রিটমেন্ট শুরু করলেন।
.
-“এরপর তুমি ভালো হলে কীভাবে আব্বু?” রাইসা জিজ্ঞেস করলো কথাটা।
-“ওইদিন তো আমার কিছু হয়ইনি আম্মু, আমি তো শুধু বেহুশ হওয়ার অভিনয় করেছিলাম।”
-“তাহলে নানু যে তোমার মুখে র*ক্ত দেখতে পেলেন সেটা কি ছিল?”
-“আরে ওইটা তো রুহ আফজা ছিল আম্মু।”
-“তার মানে তুমি আম্মুকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছ! আম্মু এইসব জানে?”
-“তোমার আম্মুকে বললে তো জানবে।”
-“তাহলে আমি এখন আম্মুকে গিয়ে সবকিছু বলে দিব।” এই বলে রাইসা দৌড়ে রান্নাঘরে আরশির কাছে চলে আসলো।
-“আম্মু জান আব্বু তোমাকে ঠকিয়েছে।”
-“তাই নাকি? তা কীভাবে আম্মু?”
তারপর রাইসা আরশিকে ফারহানের বলা সব কথা বলে দিল। সব শুনে আরশি তেমন রিয়েক্ট করলো না। রাইসাকে সাথে সাথে কোলে তুলে নিল আর বললো, “আচ্ছা চল তোমার আব্বুকে এর জন্য একটা শাস্তি দেই।” এই বলে আরশি রাইসাকে নিয়ে রান্নাঘর থেকে তাদের থাকার রুমে চলে আসলো। ফারহানের চেহারায় এখন কিছুটা ভয়ের চাপ ফুটে উঠেছে। না জানি রাইসা আরশিকে কি-না কি বলেছে এই ভেবে।
-“এই যে মহারাজা, টেবিলের উপর বাজারের লিস্ট রাখা আছে। যান ফ্রেশ হয়ে বাজার করতে যান।”
-“নাস্তা না করেই বাজারে যাব নাকি?”
-“হু যেতে হবে।”
ফারহানের বাজারের লিস্টা হাতে নিয়ে দেখলো সেখানে অনেক পদের নাম লিখা।
-“এতো বাজার কেন?”
-“আজকে যে রাইসার জন্মদিন সেটা কি ভুলে গেছেন? জন্মদিন উপলক্ষে এতিমখানায় কিছু খাবার পাঠাবো আর রাইসার বন্ধুবান্ধবদেরও দুপুরে আমাদের বাসায় দাওয়াত খাওয়াব তাই।”
-“সেটা তো আমি জানিই। আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসছি। তা রাইসা কি তোমায় কিছু বলেছে নাকি? না মানে কেমন গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছ যে।”
-“রাইসা যা বলেছে তা আমি আগে থেকেই জানি। প্রতিদিন একটা করে ফ্রেন্ডকে যে আমাদের এই বিয়ের কাহিনী শুনান সেই থেকেই আমার সবকিছু জানা হয়ে গেছে।”
-“তার মানে তুমি…”
-“হ্যাঁ আমি আগে থেকেই সবকিছু জানতাম। এবার আর দেরি না করে বাজারে যাও, আমার অনেক রান্না করতে হবে আজ দেরি করলে চলবে না।”
-“ওলে আমাল সোনা বউটারে কত্ত ভালো তুমি।” ফারহান চট করে বসা থেকে উঠে এসে আরশির গাল টেনে দিয়ে কথাগুলো বললো।”
ফারহানের এমন কাজে আরশি কিছুটা রেগে গিয়ে ফারহানের হাতে থাপ্পড় মে*রে বললো, “মেয়ের সামনে কি করছ এইসব?”
-“কোথায় মেয়ের সামনে কি করলাম? আম্মু তুমি একটু চোখ বন্ধ কর তো।”
-“আচ্ছা আব্বু, এই যে আব্বু চোখ বন্ধ করলাম।” রাইসা তার হাত দিয়ে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে বললো।
রাইসা চোখ বন্ধ করতেই ফারহান আরশির গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বসলো আর তাড়াতাড়ি করে তার মানিব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো।
-“আব্বু তুমি আম্মুকে পাপ্পি দিলে আমাকে দিলে না কেন?” খানিকটা রাগ দেখিয়ে।
-“ওলে আমার আম্মুটারে এতো দুষ্টু হয়েছে তুমি! চোখ বন্ধ করার অভিনয় করে আমার পাপ্পি দেওয়াটা দেখে ফেললে। এই নাও তোমাকেও আব্বু পাপ্পি দিলাম হয়েছে এবার?” বলতে বলতে ফারহান রাইসার গালেও একটা চুমু খেল।
-“তোমার থেকেই শিখেছে অভিনয়টা। এবার তাড়াতাড়ি বাজারে যাও।”
-“যাচ্ছি মহারাণী।” বলেই ফারহান রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
সেদিন ফারহানের কিছুই হয়নি। সে শুধু তার কিছু হয়েছে এমন অভিনয় করেছে আরশিকে পাওয়ার জন্য। অথচ তার আগেই আমজাদ হোসেন তার সাথে আরশিকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন এটা ফারহান অনেক পরে জেনেছিল। মূলত নীলার সাথে প্ল্যানিং করে ফারহান এমনটা করেছে। ফারহান বেহুশ হয়েছে এমনটা বলতে সেই নীলাকে তার আম্মুর কাছে পাঠিয়েছিল। তারপর যখন তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসা হয় তখন আরশিও ফারহানের অবস্থা দেখে মনে মনে ফারহানের ভালোবাসাটা উপলব্ধি করে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। সেদিন ফারহান ডাক্তারকে বলে উনি যেন সবাইকে বলেন সে বিষ খেয়েছিল, ফারহানের কথামতো ডাক্তারও ওইদিন সবার কাছে তাই-ই বলেছিলেন। এরপর দু’দিন পর ফারহান আর আরশির ধুমধাম করে বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের দু মাস পরে আবার নীলার বিয়ে হয় তাও সাকিবের সাথে। এরপর দু বছর পর ফারহান আর আরশির সংসার আলোকিত করে রাইসার জন্ম হয়। আর আজ সেই রাইসার ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। দোয়া করবেন তাদের জন্য এইভাবেই যেন তাদের ছোট্ট সংসারটা দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় মেতে থাকে।
.
.
The End…..