#চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস
#মম_সাহা
পর্বঃ পাঁচ
(১০)
“মরার মত বাইচ্চা আছি,
আর মারবি কী?
শরীর থেকে আত্মাটাই তো
বের হওয়ার বাকি।
বেইমান ভরা দুনিয়ায় সব আঘাতে ভরপুর,
যে যার মতন আঘাত দিছে, পারছে যতদূর।”
গিটারের শব্দটা থামলো, পরিবেশে তখনও অভিযোগের সুর গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ করা মানুষটা নিশ্চুপ, নিরুত্তর। মধ্যরাতে শো শো করা বাতাসের কারণে মাঝে মাঝেই গানের তাল কেটেছিলো, কিন্তু অভিযোগের ঝুড়ি হালকা হয় নি। অভিযোগ গুলো বেশ শক্ত-পোক্ত কিনা।
ফোনের স্ক্রিনে ছোট্ট ম্যাসেজ আসতেই কালো, আঁধারিয়া স্ক্রিনটাতে আলো জ্বলে উঠলো। তত প্রয়োজনীয় বার্তা না, ইন্টারনেট প্যাকেজের ম্যাসেজ। বাহার দৃষ্টি রাখলো ফোনের স্ক্রিনটাতে। রাত তিনটা বেজে সাত মিনিট। রাতটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা, পানসে, বিষণ্ণ লাগছে যেন। ছাঁদের হরেক রকমের ফুল গাছের ফুল গুলো থেকে মিশ্রিত একটা ঘ্রাণ ভেসে আসছে। মিশ্রণের কারণে ঘ্রাণটা ঠিক মিষ্টি লাগছে না, বরং কিছুটা উদ্ভটই লাগছে। বাহার মুখ-চোখ কুঁচকালো। এই হরেক রকমের ঘ্রাণের থেকে তার পুড়ে যাওয়া নিকোটিনের ঘ্রাণটা বোধহয় বেশিই ভালো। হুট করেই ভীষণ ধোঁয়া উড়ানোর তৃষ্ণা পেলো তার। প্যান্টের পকেট তন্নতন্ন করে সে দেশলাইয়ের বাক্সটা ছাড়া আর কিছুই পেলো না। প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসটা না পেলে বিরক্তের স্রোত বয়ে যায় শরীরে। বাহারের ক্ষেত্রেও তাই-ই ঘটলো। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো। দুপুরেই তো সিগারেট টা শেষ হলো তারপর এত অঘটনের কারণে আর কেনা হয় না। ভাবতেই একটা হতাশার শ্বাস বেরিয়ে এলো। এই মুহূর্তে সিগারেট টা বেশিই প্রয়োজন। পানসে রাতটাকে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিলেই বিষণ্ণতা কিছুটা কমবে।
এলোমেলো ঝাকড়া চুল গুলো থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে গায়ে জড়ানো টি-শার্টটার অনেক অংশই ভিজে গেছে। সেদিকে খেয়াল দিলো না বাহার, বরং আস্তে ধীরে পা ফেলে সে সিঁড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নিচে চলে এলো। চিত্রাদের বাড়ির ছাঁদে যেতে হলে তাদের মেইন দরজার বাহিরে এসে সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়। সেই সুবাধে বলা যায় কে, কখন ছাদে যায় আসে তা এতটা বুঝতে পারে না ঘরের ভেতরের লোকজন।
ছাদ থেকে নেমে যেই না মেইন গেইট পাড় হয়ে বাহিরে যেতে নিবে তন্মধ্যেই চিত্রাদের বাড়ির বৃদ্ধ দারোয়ান বাহারকে ডাক দিলো,
“বাহার চাচা, আম্মাজান গো কী খবর? আপনি তো দেইখা আইছিলেন তাই না?”
যেতে যেতেও থেমে দাঁড়ালো বাহার। বয়সের ভারে কুঁচকে যাওয়া চামড়ার মানুষটার দিকে তাকালো। রাতের রাস্তার সোডিয়ামের হলদেটে আলোয় লোকটার কালো কুচকুচে মুখটা চিলিক দিয়ে উঠলো। বৃদ্ধ দারোয়ানের চোখের কোণে অশ্রুদের ভীড় চোখ এড়ায় নি বাহারের। বাহার অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলো বলে লোকটা থেকে বাহারের অবস্থান প্রায় সাত-আট হাত। বাহার পিছিয়ে এলো। বৃদ্ধ দারোয়ানের বরাবর দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,
“আপনি ঘুমান নি, চাচা?”
“না চাচা, বাড়ির ফুল গুলানের এই অবস্থা, আমি কেমন কইরা সুখের নিদ্রা যামু কও?”
লোকটার কথায় বাহার কিঞ্চিৎ অবাক হলো। বাড়ির সামান্য দেহরক্ষী অব্দি মেয়ে গুলোর চিন্তায় ঘুমায় নি অথচ সে দিব্বি এসে এক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিলো। অদ্ভুত!
“কইলা না তো চাচা, আম্মারা ভালো আছে?”
বাহার মুখ ছোটো করলো, বিরস মুখে উত্তর দিলো,
“না চাচা, তত ভালো নাই। তবে অহির ততটা ক্ষতি হয় নি। সে কাল-পরশুই বাসায় চলে আসতে পারবে। চেরি আর চিত্রারই অবস্থা খারাপ।”
বৃদ্ধ লোকটা ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে দিলো। চোখের পানি গুলো বাহারের কাছে মুক্তোর দানার মতন লাগলো। সে কেবল নির্মিশেষ তাকিয়ে রইলো ক্রন্দনরত আবু চাচার দিকে। পুরুষ মানুষদের কান্না করাটা ঠিক মানানসই না হলেও আবু চাচার কান্নাটা বেশ মায়া মায়া। কালো, কর্কশ মুখটার দিকে তাকালে কোনো টান অনুভব না হলেও কান্নার মাঝে অগাধ ভালোবাসা আছে। বাহার লোকটার ডান বাহুতে ভরসার হাত রাখলো, আশ্বাস দিয়ে বললো,
“কান্না করবেন না, চাচা। আল্লাহ্ রে ডাকেন। কান্না করে আর কি’বা হবে।”
আবু চাচা নিজের ডান হাতের তালুর সাহায্যে চোখের অশ্রুবিন্দু গুলো মুছলো। তবুও ভিজে ভিজে জল বিন্দু গুলো লেপ্টে আছে গালে। কান্না থামিয়ে লোকটা ভীষণ অসহায় কণ্ঠে বললো,
“জানো বাবা, এ বাড়ির মানুষ গুলা বড্ড ভালো। অহি মামুনি শান্ত ছিলো ছোট বেলা থেকে। ওর জন্য কারো চিন্তা ছিলো না কিন্তু চিত্রা মামুনি ছিলো অনেক দুষ্টু। একটু চোখের পলক পড়তেই মেয়েটা গেইটের বাহিরে চলে যেতো। অনেক নাকানিচুবানি খাওয়ালেও দিনশেষে মেয়েটা কত যত্নশীল ছিলো। আর চেরি মামুনিরে তুমি দেখলাই৷ ও গো এত বিপদ হইবো ভাবি নাই। সবই পাপের ফল বুঝলা। বাপ-মায়ের পাপ, সন্তানরে ধরে।”
শেষের কথা টুকু বাহারের মনে দারুণ সন্দেহ জাগালো কিন্তু সে প্রকাশ করলো না। কারণ সে এতটুকু জানে, আবু চাচা অনেক বিশ্বস্ত লোক, যে বাড়ির নুন খায়, সে বাড়ির খারাপ চাইবে না। হয়তো এখন অতি আবেগে কথা টা বের হয়ে গেছে, নাহয় এটাও বের হতো না। মনুষ্য জাত এমনই, এদের আবেগের স্রোত এত বেশিই যে, আবেগের বশে এদের বিবেকের মাঝে মাঝে কার্যক্ষমতা লোপ পায়।
বাহার আবু চাচাকে ঘরে পাঠিয়ে নিস্তব্ধ রাস্তায় পা বাড়ালো। ঘুমিয়ে আছে রাতের শহর, তাই তো এত নিশ্চুপ। চিত্রাদের রাজধানীর নামকরা প্রাইভেট হসপিটালে ট্রান্সফার করা হয় নুরুল সওদাগরের হম্বিতম্বিতে। কোনোমতেই সে এই সরকারি হসপিটালে মেয়েদের রাখবেন না। ভালো চিকিৎসা পেতে হলে তার মতে প্রাইভেট হসপিটালের বিকল্প নেই। বাহারের তখন এসব জিনিস গুলো একটু বেশি বেশিই মনে হয়েছিল। যে বাবার মেয়ের বাঁচা মরা নিয়ে ভাবনা নেই, তার হসপিটালের পরিবেশ নিয়ে ভাবনাটা নেহাৎ ই হাস্যকর মনে হলো। এমন গা জ্বালানো আদিখ্যেতা বাহারের ঠিক সহ্য হয় নি তাই সে রাত এগারোটার দিকেই চলে এসেছে। বাড়িতে আপাতত চাঁদনী, ফুপু,ফুপুর ছেলে অনয় আর চাঁদনীর স্বামী ছাড়া কেউ নেই। সবাই হসপিটালে। চিত্রার বড়ো চাচাও চলে এসেছে। চিত্রার ছোটো চাচাকেও জানানো হয়েছে। উনিও যত দ্রুত সম্ভব আসার চেষ্টা করবে।
চিত্রাদের এলাকায় এত রাতে অবশ্য কোনো দোকান খোলা নেই। বড়লোকের অভিজাত এলাকা কিনা। বাহার চুল গুলো ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে একটা বিরক্তের শ্বাস ফেললো। একটা বিদঘুটে রকমের শব্দ বের হয়ে এলো মুখ থেকে। পায়ের সামনে পড়ে থাকা খোলা বোতলটাকে ডান পায়ে লাথি দিয়ে তাচ্ছিল্য করে বললো,
“শা*লা বড়লোক হলেই ঝামেলা। সামান্য সিগারেট খেতে কিনা সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে! সামান্য একটা সিগারেটই যদি না পাওয়া যায়, তবে তোদের এত বড়োলোকি ভাবসাব দিয়ে কি লাভ? সিগারেট রাখে না ভদ্র এলাকা অথচ একেকটা বড় বড় পার্টির নাম করে ম*দ খেয়ে টাল হয়ে থাকে। নারী নে*শায় টাকা উড়ায়। সব রাতে করে, দিনেই এসব বড়োলোকেরা সাধু সাজে। যত্তসব ফাউল লোকজন। আমাদের গরীবদের ধোঁয়া উঠানোর আনন্দটাও তাদের সহ্য হয় না। গরীবদের শখ, আহ্লাদ, খুশিতে লা*থি মেরেই যেন এদের চিরসুখ।”
অনির্দিষ্ট, গন্তব্যহীন হেঁটে অবশেষে বড় রাস্তের মোড়ে খুপরির মতন চায়ের দোকানটা খোলা পেলো বাহার। সেখান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে যেই না বাড়ির পথে পা বাড়াতে নিলো, হঠাৎ মনে হলো তখনের অতিকষ্টে মিষ্টি হাসি দেওয়া মেয়েটাকে একটু দেখতে যাওয়া উচিৎ। কি নিদারুণ কষ্টই না মেয়েটা পেয়েছে?
(১১)
আধাঘন্টার পথ একা একা, বেখেয়ালি ভাবে হেঁটে অবশেষে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছালো বাহার। অথচ বাহারের জীবনে এত গুলো দিনেও কোনো গন্তব্য ছিলো না। একরাতের মধ্যে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও বাহার ভাইয়েরও একটা গন্তব্য হলো। ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখার জন্য দৃষ্টি দিতেই দেখলো একদম চারটা বাজে। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো বাহার। অলস, ধীর, ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে টেনে সাদা ধবধবে, পরিষ্কার হসপিটালের তিন তলায় নিয়ে গেলো।
করিডোরে মানুষ নেই তেমন। বাহার যেখানে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে প্রায় অনেকটা দূরে তুহিন চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, তুহিনের কাঁধে মাথা রেখে দিশান ঘুমাচ্ছে। বাহার যতটুকু জানে হসপিটালের নিচে তলায় একটা বিরাট জায়গা আছে যেখানে রোগীদের সাথে আসা মানুষরা থাকে। হয়তো বাকিরা সেখানেই। বাহার ধীর গতিতে গুনে গুনে পা ফেলে চিত্রার কেবিনের সামনে দাঁড়ালো। যেইনা কেবিনের দরজা খুলতে যাবে, তুহিনের ঘুম ঘুম ভরাট কণ্ঠ ভেসে এলো,
“বাহার ভাই, আপনি যে!”
বাহারের ভড়কে যাওয়ার কথা থাকলেও সে বেশ স্বাভাবিক রইলো। দরজার হাতলেই হাতটা রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে তুহিনের দিকে তাকালো। অতঃপর তার গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠে বললো,
“হ্যাঁ, দেখতে এসে ছিলাম তোমাদের। তুমি বিশ্রাম করো।”
তুহিন আর কোনো প্রশ্ন করলো না, প্রতিক্রিয়া জানালো না। বাহার ভাইয়ের কথা পালন করে সে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো। মিনিট দুই পেরুতেই ভারী ভারী শ্বাস ফেললো। বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে।
বাহারের হুট করেই মনে হলো এত রাতে আর দেখা করার প্রয়োজন নেই। যেই না সে হালকা খুলে যাওয়া দরজারটা আটকে দিয়ে চলে যেতে নিলো, পেছন থেকে মুমূর্ষু ডাক ভেসে এলো,
“বাহার ভাই।”
বাহার আর পা আগাতে পারলো না। পিছে ঘুরে বিছানায় লেপ্টে থাকা চিত্রার দিকে তাকালো। মেয়েটা এত রাত অব্দি জেগে আছে! মেয়েটার হাতে এই মোটা ব্যান্ডেজ। কাল হয়তো ওর আর চেরির সার্জারী নিয়ে আলোচনা হবে।
বাহারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দ্বিতীয় ডাক দিলো চিত্রা,
“বাহার ভাই, আসেন।”
এমন ডাক ফিরিয়ে দেওয়ার আগ্রহ বাহারের মাঝে আর দেখা গেলো না। সে ধীর গতিতে চিত্রার কেবিনে প্রবেশ করলো। কেমন হিমশীতল রুমখানা! বাহারের এতক্ষণের কিঞ্চিৎ ঘেমে থাকা শরীরটা শিরশির করে উঠলো কৃত্রিম শীতলতায়।
বাহার যেতে যেতে একবারে চিত্রার বেডখানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পা হতে মাথা অব্দি মেয়েটাকে পরখ করে বললো,
“কেমন আছো?”
এমন অসময়ে,অদ্ভুত প্রশ্নটা যেন বাহার ভাইয়ের মুখেই মানায়। ভোঁতা যন্ত্রণা নিয়ে বিষাদ হেসে চিত্রা উত্তর দিলো,
“আমি তো সবসময় ভালো থাকি।”
“তা, ঘুমাও নি কেনো?”
বাহারের প্রশ্নে চিত্রার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। বাহারকে বিব্রতবোধ করাতে বলে উঠলো,
“আপনার অপেক্ষায়।”
বাহার হাসলো। বাহার খুব সহজে হাসে না। আবার হয়তো হাসে কিন্তু চিত্রাদের বাড়ির মানুষদের সামনে তেমন হাসে না। মেয়েটা যে এমন যন্ত্রণার মাঝেও ঠাট্টা করছে, তা বাহারের বেশ লাগলো। বাহারও উত্তরে বললো,
“বাহারের অপেক্ষায় থেকো না মেয়ে, কংক্রিটের হৃদয় তো, আবেগ ছোঁয় কম। অঘোষিত অপেক্ষাদের পরে মৃত্যু হবে। অথচ তুমি তো পুষ্প প্রেমী,কাঁটায় কেন এত ঝোঁক?”
“মিষ্টতা নিতে নাহয় একটু আধটু কাঁটার ঘাঁ হলোই, এতে যদি আস্ত একটা বাহার ভাই পাই, তাতে ক্ষতি কী?”
“বাহার কিন্তু পু*ড়িয়ে দিতেই জানে কেবল।”
“কতটা পু*ড়ায় বাহার? সিগারেটের মতন? নাকি তার চেয়েও বেশি?”
বাহ্, আজ মেয়েটা কথায় জেতার বুদ্ধি করেছে বোধহয়। বাহার চিত্রার অসুস্থতায় জীর্ণশীর্ণ হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকালো। খুব ক্ষীণ, স্থির কণ্ঠে বললো,
“রঙ্গনা যদি জ্বলতে আসে তবে কিঞ্চিৎ নাহয় কম পু*ড়াবো।”
চিত্রা ফিক করে সকল যন্ত্রণা ভুলে হেসে উঠলো। বাহার সেই মুখটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে চলে যেতে যেতে ধীর স্বরে গাইলো,
“কথা হবে, দেখা হবে
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে,
কাছে আসা-আসি আর হবে না।
চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া হবে
ভালোবাসা-বাসি আর হবে না।”
চিত্রা যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। আপনমনেই প্রশ্ন তুললো,
“সত্যিই হবে না, বাহার ভাই?”
উত্তর এলো না এ প্রশ্নের, কারণ মানুষটা ততক্ষণে অনেক দূর চলে গিয়েছে। বয়ঃসন্ধির রঙ্গনার চোখ ঝাপসা করে জল এলো। ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
“আমি ভালো নেই, বাহার ভাই। ভালো নেই আমি।”
(১২)
আরও একটা দিন এলো হাজারো আশংকা নিয়ে। চেরির অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। চিত্রারও তেমন হুঁশ নেই। গতকালও মেয়েটা যতটুকু ভালো ছিলো আজ তার একাংশও ভালো নেই। সারাটাদিন সকলের কেবল সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে ডাকতে গেলো। কোনো ভালো খবর যেন আসে সে আশায়।
বাহারকে সারাদিনও আর দেখা যায় নি। আসে নি হসপিটাল। নুরুল সওদাগর ইনভেস্টিগেশনে নেমে গিয়েছেন খুব কঠিন ভাবে।
হুট করেই বিকেলে পাওয়া গেলো আরও একটা চাঞ্চল্যকর খবর। মহিন নাকি আজ ভোরেই সিলিং ফ্যানের সাথে ঝু*লে গিয়েছে। পুলিশ যখন তার খোঁজে তার বাসায় গেলো তখন তাকে মৃ*ত অবস্থায় পাওয়া যায়। নুরুল সওদাগরের সন্দেহের খাতায় ছিলো কলেজের বখাটে ছেলেটা এবং মহিন। বখাটে ছেলেটা নাকি চিত্রার এমন ঘটনা শোনার পরই উধাও হয়ে গেছে, আর মহিন তো মৃ*তই। খুব সহজ সরল কেসটা হুট করেই জটিল হয়ে গেলো। মহিনের মৃত্যুটা খু*ন নাকি আত্ম*হত্যা তা নিয়ে সাড়া পড়ে গেলো। সব গুছিয়ে থাকা জিনিস যেন হুট করেই এলোমেলো হয়ে গেলো।
#চলবে
[প্রিয় পাঠকমহল, ভালোবাসা নিবেন। যারা উপন্যাসের নামের অর্থ বুজঝেন না তাদের বলছি, আমি চেয়েছিলাম যেন পাঠক মহল নামের অর্থ বুঝতে বিভ্রান্তিতে পড়ুক। অবশেষে তা-ই হলো। আমি উপন্যাসের এই পর্যায়ে এসে নামটার অর্থ ভেঙে বলবো না, শেষের দিকে বলবো। সো চিল।]