(১)
“চাঁদনী আপার দেবর আমার বুকে হাত দিয়েছে, আপা। আমি খুব ব্যাথা পেয়েছি জানো? কি বিশ্রী ছোঁয়া!”
সাত বর্ষীয় ছোটো বোনের মুখে এমন বিশ্রী একটা কথা শুনতেই শরীরটা শিরশির করে কেঁপে উঠলো চিত্রার। ঘর্মাক্ত মুখ খানা রাগে লালবর্ণ ধারণ করলো। বোনের দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখলো ছোট্টো মেয়েটা ভয়ে কেমন গুটিশুঁটি মেরে আছে! তাড়াতাড়ি বোনকে নিজের দু’হাতের আঁজলে আগলে নিলো সে। হতভম্ব কণ্ঠে বললো,
“দেখি তো আমার চেরি সোনা, জামাটা একটু সরাও। আপা একটু দেখি।”
সবচেয়ে নিকটতম ভরসার স্থান পেয়ে মেয়েটা নির্দ্বিধায় জামা সরালো। জামা সরাতেই আৎকে উঠলো চিত্রা। কেমন লাল হয়ে গেছে মেয়েটার সাদা ধবধবে চামড়াটা! কি ভীষণ বিশ্রী ভাবেই না ছুঁয়েছে এতটুকু বাচ্চাটাকে! ভাবতেই ঘৃণায় টইটম্বুর হয়ে গেলো চিত্রার শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরা। ক্ষ্যাপে উঠলো সে। অথচ বাড়ি ভর্তি এত মানুষ! ঝোঁকের বশে কিছু করে বসলে তার খেসারত না আবার ছোটো চেরিকে দিতে হয়। বিরক্ত, রাগ দুটো অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যখন আ*ন্দোল*ন শুরু হলো চিত্রার মস্তিষ্কে, তখন বাহির থেকে তার ডাক পড়লো। আজ তার বড় বোন চাঁদনীর গর্ভকালীন সময়ের সাত মাস পূর্ণ হওয়ায় ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানেই চাঁদনীর শ্বশুর বাড়ির লোকজনও এসেছে। অবশ্য তার আপন বড় বোন না চাঁদনী, তার বড় চাচার মেয়ে হলো চাঁদনী আপা। আর ছোট্ট চেরিও তার আপন বোন না। তার ছোট চাচার মেয়ে হলো চেরি। চেরির পূর্ণনাম হলো তোফা। কিন্তু আদর করে সবাই বাচ্চাটাকে চেরি বলে। আর মেয়েটা চেরি ফলের মতনই সুন্দর, আদুরে, গোলগাল। তাই তো এতটুকু বাচ্চাও আজ বাজে ছোঁয়ার স্বীকার হলো।
চিত্রার পরিবারটা বেশ বড় পরিবার বলা যায়। চিত্রার মা-বাবা, বড় চাচা-চাচী, ছোট চাচা-চাচী, চিত্রার আপন বড় ভাই তুহিন, বড় চাচার ছেলে দু’জন দিহান আর তৃষান, ফুপি আর ফুপির একমাত্র ছেলে বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য অনয়, চেরি,চেরির আরেকজন বড় বোন যে চিত্রারও বড় অহি আপা এবং চিত্রা নিজে। চাঁদনীও বড় চাচার মেয়ে কিন্তু তার বিয়ে হয়েছে বিধায় তাকে এই পরিবারের দলে আর টানা হয় না কারণ সে এখন অন্যের ঘরের। একমাত্র চাঁদনীর বিয়ে হওয়ার ফলে এত বড় পরিবারে একজন মাত্র সদস্য কমেছে।
“আপা, আম্মু শুনলে তো আমায় বকবে তাই না? আম্মু তো বলে দুষ্টুমি করতে না এত। অচেনা কারো সাথে খেলতে না। আমি কীভাবে জানবো ঐ ভাইয়াটা আমাকে চকলেটের কথা বলে এমন ব্যাথা দিবে! আমি আর দুষ্টুমি করবো না, আপা।”
চেরির এমন অসহায়ত্ব দেখে বুক ভার করে কান্না এলো চিত্রার। বয়ঃসন্ধির বয়স তো, তাই আবেগের স্রোতে কান্নাটাই আসে প্রথমে। কিন্তু সে কাঁদবে না মেয়েটার সামনে, তাহলে মেয়েটা আরও বেশি ভয় পেয়ে যাবে। কণ্ঠনালিতে আটকে থাকা কান্নার স্রোতটা গিলে ফেললো চিত্রা। খুব কষ্টে মুখে হাসি হাসি ভাব ফুটিয়ে বললো,
“কেনো খেলবে না তুমি হ্যাঁ? অবশ্যই খেলবা। আপা আছি না তোমার সাথে? কেউ কিছু করবে না আর দেখো। তুমি কেবল ঐ পঁ*চা ভাইয়াটার রুমের সামনে আর যাবে না, কেমন? মনে থাকবে তো?”
অবুঝ চেরি ডানে-বামে মাথা নাড়ালো। কি নিষ্পাপ ছোটো মুখখানা! টানা টানা, মায়া মায়া দু’টি চোখ বাচ্চাটার। অনেক ফর্সা আর স্বাস্থ্য ভালো হওয়ায় ভীষণ আদুরে লাগে মেয়েটাকে। আর এই ছোট্ট মেয়েটার শরীরে হাত দিতে নাকি বাঁধে নি ঐ লোকটার। কিছু তো একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। এত সহজে তো ছাড়া যাবে না অ*স*ভ্য টাকে। বোনের মুখ খানা ধুইয়ে দিয়ে সুন্দর করে চুল গুলো বেঁধে দেয় চিত্রা। কান্না করতে করতে লাল হয়ে গেছে বাচ্চাটার মুখ। পারে না যেন বুকের সবটুকু স্নেহ ঢেলে দেয় মেয়েটার তরে।
চেরিকে তৈরী করিয়ে চিত্রা নিজেও গোসল করে এলো। মাত্রই কলেজে থেকে এসেছিলো সে। সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা তার। তাই এখন নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে কলেজে। সে সুবাধেই বাড়িতে অনুষ্ঠান থাকা স্বত্তেও তাকে কলেজ যেতে হয়েছিলো। সে অবশ্য তত উন্নত শ্রেণীর ছাত্রী না। কোনোমতে চলনসই রেজাল্ট হলেই সে সন্তুষ্ট। ভাদ্রের উত্তপ্ত গরমে পরিবেশ ঘর্মাক্ত। আর সেই গরম দিয়ে এসে হুট করে এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়াতে বিরক্তিতে তেতো ভাব চলে এলো তার শরীরে। গোসল করায় আপাতত কিছুটা শান্তি মিলছে।
গোসল করে লাল টকটকে একটা থ্রি-পিস পড়লো চিত্রা। অতঃপর চেরির হাত ধরে বাড়ির বাগানের দিকে এগিয়ে গেলো,মূলত অনুষ্ঠান টা সেখানেই।
(২)
বিরাট আয়োজন করা হয়েছে চাঁদনীর জন্য। কত রকমের খাবারের যে আয়োজন করা হয়েছে তা হিসেব করেও শেষ করা যাবে না যেন। চিত্রা ছুটে এসেই ধপ করে তার আপুর পাশ ঘেঁষে বসে পড়লো।
চিত্রাকে দেখে ভারী পেটের গোলগাল, ফর্সা ধবধবে চাঁদনী মুচকি হাসলো। বাম গালটা টেনে দিয়ে বললো,
“কই ছিলিস চিতাবাঘ? এতক্ষণ লাগিয়ে কী পরীক্ষা দিয়েছিস শুনি! পরীক্ষাকে এত সিরিয়াসলি নেওয়ার মেয়ে তো তুই না? কি ব্যাপার শুনি!”
বড় আপার দিকে আর চোখে তাকিয়ে মুখ বাঁকালো চিত্রা। বেশ ভাব নিয়েই বললো,
“তোমাদের মতন জর্জ-ব্যারিস্টার হওয়ার মতন ছাত্রী হয়তো না তাই বলে পাশ মার্কটা তুলবো না? বাবাকে তো চেনো, ফেল করার অপরাধে না আবার জেলে দিয়ে দেয়। নিজের ক্ষমতার যে দাপট দেখায় সে!”
চিত্রার কথায় হাসলো চাঁদনী। মেয়েটা তার বাবাকে তেমন পছন্দ করে না বলা যায়, বেশ ভয় পায়। একমাত্র নিজের বাবাকে ছাড়া পুরো পৃথিবীকে উ*ত্যক্ত করার ক্ষমতা ওর আছে। বাবার সাথে ওর যে শীতল একটা যুদ্ধ প্রতিনিয়ত হয় তা সবারই জানা আছে। তবুও নিজের বাবাকে তো আর এমন কথা বলা শোভা পায় না। সেই জন্যই চাঁদনী চোখ রাঙালো, ছোট্টো ধমক দিয়ে বললো,
“এমন বলে না চিতাবাঘ, তুই না ভদ্র মেয়ে।”
“হ্যাঁ, আমি কী তা অস্বীকার করেছি? ভদ্র বলেই তো পিছে পিছে বলছি, অ*ভদ্র হলে তো মুখের সামনে বলতাম।”
কথাটা বলেই ফিচলে হাসলো চিত্রা। চাঁদনী চেয়েও রাগী রাগী মুখ করে রাখতে পারলো না। চিত্রাটা এমনই, যেখানে থাকবে সেখানেই হাসির মেলা বসবে।
চাঁদনী আর চিত্রার কথার মাঝে চোখের গোল চশমাটা ঠেলতে ঠেলতে হরেক পদের ভাজার থালা নিয়ে উপস্থিত হলো অহি। ঘাঁড় অব্দি চুল গুলো গরমে বেশ বিরক্ত করছে তাকে। অহির মুখমন্ডলে একটা নিষ্পাপ নিষ্পাপ ভাব থাকে সবসময়। আর মেয়েটা বেশ গম্ভীরও।
বড় পিতলের থালাটার মাঝে সাত রকমের ভাজি। ভারী থালাটা চাঁদনীর সামনে রেখে ক্ষান্ত হলো সে। সব খাবার আপাতত চলে এসেছে। থালাটা রেখেই ওড়না দিয়ে নিজের মুখটা মুছলো অহি। চেরিকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ছোট্টো কণ্ঠে বললো,
“তোমার খিদে লেগেছে, চেরি? আপা কি তোমাকে খাবার খাইয়ে দিবো?”
ছোট্টো চেরি অহির কোমড়ের দিকে জামা আঁকড়ে ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে বললো,
“বড় আপার খাওয়া হোক, তারপর আমি খাবো। চিত্রা আপা খাইয়ে দিবে।”
চেরির কথাটা ভালো লাগলো না অহির। বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকে বললো,
“তোমার চিত্রা আপা নিজের খাবার নিজে খেতে পারে নাকি? যে তোমাকে খাইয়ে দিবে!”
অহির কথায় মুখ ভেংচি কাটলো চিত্রা। চেরির দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,
“তোমার মেঝো আপা অনেক খেতে পারে বুঝলা? তাই তো এমন কাঠির লাহান শুকনা।”
“এই চিত্রা, কেমন ভাষার ব্যবহার করিস বাড়িতে? তোর সাথে থেকে চেরিও এসব শিখে।”
অহির নাক-মুখ ছিটকানো কথায় ফিক করে হেসে দিলো চিত্রা। হাসতে হাসতেই বললো,
“ছোট আপা, তুমি তো শিক্ষক হবে তাই না? তোমার সাথে পার্ফেক্ট মানাবে সেই পেশা। এখনই তোমার মাঝে একটা মাস্টারনি মাস্টারনি ভাব আছে। সমস্যা নাই, তুমি আমাদের দিয়েই প্রথম প্রেকটিস টা করতে পারো। আমরা মাইন্ড করবো না।”
চিত্রার কথার তালে চাঁদনীও হাসলো। অহি কপাল কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো উত্তর বিহীন। চিত্রার সাথে কথা বলা টাই একটা বোকামি। আর অহি বরাবরই নিজেকে ভীষণ চালাক দাবী করে।
পুরো বাগান ভর্তি নিজেদের বাড়ির মানুষেই গিজগিজ করছে। মাত্রই অনুষ্ঠান শুরু হবে। হুট করে কোর্ট প্যান্ট পড়া চাঁদনীর দেবরটা হাজির হলো। ধপ করে বসে পড়লো চিত্রার পাশে। তাকে দেখতেই গুটিয়ে গেলো ছোট্টো চেরি। চিত্রারও হাসি হাসি মুখে অমাবস্যা নামলো। মুখ আঁধার করে সে চাঁদনীর পাশ থেকে উঠে চেরির সাথে দাঁড়ালো।
চাঁদনীর দেবর মহিন সবার দিকে তাকিয়ে কেমন হাসলো। গদোগদো কণ্ঠে চিত্রার উদ্দেশ্যে বললো,
“আরে আরে বেয়াইন সাহেবা, উঠে পড়লেন যে! আমার পাশে বসলে কি ক্ষয় হয়ে যাবে নাকি শরীর?”
চিত্রা মুখ বাঁকালো। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনার তো অনেক কারেন্ট, যদি শক খেয়ে যাই।”
চাঁদনী কোনো মতে নিজের হাসিমুখ বজায় রাখলো। বোনের এমন ভঙ্গির কথা তার যে তত পছন্দ হয় নি সেটা প্রকাশ না করার আপ্রাণ চেষ্টা চালালো।
চিত্রার বড় ভাই তুহিন এগিয়ে এলো বোনদের দিকে। বেশ গম্ভীর স্বরে বললো,
“চিত্রা, যা তো একটু ছাদে, ছাদের মরিচ গাছ থেকে কালো কালো কয়েকটা মরিচ তুলে আন। জানিস না চাঁদনীটা মরিচের ঘ্রাণ পেলেই খুশি হয়ে যায়? যা নিয়ে আয়।”
“ভাইজান, বড় আপার পেটের ছোট্টো বাবুটা ঝাল খেতে পারবে?”
চেরির প্রশ্নে হাসলো তুহিন। মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বললো,
“হ্যাঁ খেতে পারবে, চেরি। ও তো খুব সাহসী বাবু, তাই পারবে। ঝাল না খেলে বড় হবে কীভাবে!”
“ঝাল না খেলে বড় হওয়া যায় না বুঝি? এ জন্য ই কি বাহার ভাই এত ঝাল খায়? তাই তো বলি বাহার ভাই অত বড় কেন!”
তুহিন মিষ্টি হেসে চেরির গাল টেনে দিলো অতঃপর চোখের ইশারায় চিত্রাকে মরিচ আনার তাগাদা দিলো। যেই না চিত্রা যেতে নিবে তন্মধ্যেই চিত্রার বড় চাচী হাজির হয়। ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বলে,
“আহা, দুপুর হয়ে এলো যে! অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। চিত্রা মা, যা তো বাহারকেও ডেকে আন। এক দৌড়ে যাবি আবার এক দৌড়ে আসবি। যা।”
চিত্রা মাথা দুলিয়ে ছুট লাগালো ছাঁদের দিকে। তবে যাওয়ার আগে চেরিকে ছোট আপার সাথে থাকার নির্দেশ দিয়ে গেলো।
(৩)
ছাদে টুকটাক সবজি গাছের পাশাপাশি অনেক রকমের ফুল গাছ অবস্থিত। বিভিন্ন ধরণের ফুল সংগ্রহ করাই যেন চিত্রার কাজ। তার ভীষণ ভালো লাগে এ কাজ করতে। তাই তো ছাদে প্রবেশ করার সাথে সাথেই পা বাড়ালো ফুল গাছ গুলোর দিকে।
কয়েকদিন আগে তিনটি নতুন ফুলের চারাগাছ লাগিয়ে ছিলো। আজ সব গুলোরই কি সুন্দর হাসি হাসি ফুটন্ত মুখ দেখা যাচ্ছে! চিত্রা মুগ্ধতা সামলাতে না পেরে পত্রলেখা, মৌসন্ধ্যা আর রঙ্গন ফুলের গাছ থেকে একটা একটা করে ফুল ছিঁড়ে নিলো। এই ফুলের গাছ গুলো তত সহজলভ্য নয়। কিছুদিন আগে যখন সে এই তিনটা ফুলের গাছের জন্য হা হুতাশ করছিলো তখনই ছাঁদে দেখা যায় এ ফুলের গাছ। চিত্রা জানে, ভাইজান বা বড় চাচা ছাড়া কেউ এ কাজ করবে না। কারণ তারা দু’জনই চিত্রার সকল আবদার পূরণ করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকে। আর চিত্রার আবদারটাও যেন তাদের কাছেই।
আনমনেই ফুল গুলো মাথায় গুঁজতেই পেছন থেকে ভরাট পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এলো,
“এই মেয়ে, ফুল ছিঁড়েছো কেনো? গাছের ফুল গাছেই শোভা পায়। তাকে ছিঁড়ে নিজের চুলে গোঁজার মধ্যে কোনো মহত্ত্ব নেই।”
গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠের এমন ধমকে বিরক্ত হলো চিত্রা। সেই বিরক্ত ভাব কপাল কুঁচকে ঝেরে ফেলে বললো,
“গাছটা কি আপনার!”
“গাছটা কি তোমার? তোমারও না। গাছটা বর্তমানে যেখানে অবস্থানরত, যে মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছে, গাছটা এখন তার।”
লোকটা যে বরাবরই যুক্তিতে পারদর্শী চিত্রা তা জানে। তাই এই গম্ভীর মানবকে বিব্রতবোধ করাতে কুটিল হেসে বললো,
“তাহলে আপনিও তো আমার বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাহলে আপনি কি আমার!”
ছেলেটা হাসলো। চিত্রার মাথায় যে অস*ৎ বুদ্ধির ছড়াছড়ি সেটা তার ভালোই জানা আছে। তাই দু’আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট টার শেষ টান দিয়ে ধোঁয়া গুলো আকাশ পানে উড়িয়ে কেমন সতর্ক কণ্ঠে বললো,
“আমায় জ্বালাতে এসো না মেয়ে, নিজেই জ্বলে যাবে।”
চিত্রা মুখ ভেংচি কাটলো। গোমড়া মুখে বললো,
“নিচে আপার অনুষ্ঠান শুরুর পর্যায়ে, আপনাকে ডাকছে বড় চাচী।”
“আমি গিয়ে কী করবো? তোমার আপা কীভাবে এত খাবার খায়, সেটা দেখবো!”
চিত্রার পারদে পারদে বিরক্তের ভাব বাড়লো। মরিচ গাছের দিকে যেতে যেতে বললো,
“একদম আপনার গা ছাড়া ভাব আমায় দেখাবেন না। যেতে মন চাইলে যাবেন না হয় যাবেন না। অনুষ্ঠান তো আর আমার না যে আপনার হাতে পায়ে ধরে নিয়ে যাবো। আর তাছাড়া আপনি তো সবসময় বাসায় থাকেন না, আজ আছেন বলেই ডাকছে।”
“আমি গেলে তো তোমার হি*টলার বাপ নাক-মুখ কুঁচকাবে। যাই একটু উনার শিরার-উপশিরার বিরক্ত ছড়িয়ে আসি।”
চিত্রা আর কোনো উত্তর দিলো না। মরিচ গাছের দিকে এগিয়ে গেলো সে। লোকটার বাউণ্ডুলে, ছন্নছাড়া ভাবটা ঠিক পছন্দ না তার। বাবা-মেয়ের এ দিকে ভীষণ মিল। দু’জনেই এই ছেলেকে দেখতে পারে না।
বাহারের ধপাধপ চলে যাওয়ার শব্দ শোনা গেলো। যেতে যেতে বললো,
“শুনো মেয়ে,
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে, অকারণেই যাবে ঝড়ে,
গলে যেন সে বরফ গলে না।”
চিত্রা তাকিয়ে রইলো লোকটার দিকে। শ্যামলা, ছিপছিপে গড়নের লোকটার এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস গুলোই যেন বয়ঃসন্ধির আকর্ষণ। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল গুলো কেমন হেলেদুলে পড়ছে, সিগারেট ফুঁকে যাওয়া পোড়া ঠোঁটও যেন আরেক প্রকারের মা*দ*কতা আছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ো খয়েরী রঙের ঠোঁটটাকে বহুরূপী ডালিয়া মনে হয়।
চিত্রার ভাবনার মাঝেই নিচ থেকে হৈচৈ ভেসে এলো। চিত্রা দৌড়ে ছাঁদের কার্নিশ ঘেষে নিচে তাকাতেই দেখলো মহিন গাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনে বেশ গা ছাড়া ভাব নিয়ে দু’হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে বাহার। উফ্, সত্যিই লোকটা জ্বালিয়ে দিবে একদিন।
#চলবে
#সূচনা_পর্ব
#চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস
#মম_সাহা
[অবশ্যই প্রথম পর্বে গঠনমূলক মন্তব্যের আশাবাদী]