সুপ্ত_অনুভূতি #পর্ব_০৭ #মেহরাজ_হোসেন_রনি

0
460

#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০৭
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

রাতে সবাই শপিং থেকে বাসায় ফিরে আসে।আমি তখন ছাদে ছিলাম।মনে হল কেউ আমার পিছনে দারিয়ে আছে।তাকিয়ে দেখি দিয়া।দিয়াকে দেখে বললাম

“কিরে এইখানে কি করিস?”

“তেমন কিছু না এমনেই আসলাম।তুমি কি করছিলে ভাইয়া?”

“ভালো লাগছিল না তাই এসেছিলাম।”

“হিয়া আপুকে কি এখনো পছন্দ করো?”

আমি কিছু না বলে সামনে তাকিয়ে ছিলাম।কারন আমার কাছে উত্তর ছিল না।আমার থেকে উত্তর না পেয়ে দিয়া আবার বলল

“দুদিন পর তো নিলয় ভাইয়ার বিয়ে তার পরে তুমি কি চলে যাবে?”

“এখনো কিছু ঠিক করি নি।”

“আমার জন্য তোমার এমন হয়েছে তাই না ভাইয়া।”

“আরে তোর জন্য হতে যাবে কেনো।আমার ভাগ্যে যেটা ছিল সেটা কি তুই বদলাতে পারবি বল।”

দিয়া কান্না করছে।মেয়েটা এখনো ছোট নাহলে এইভাবে কেউ কান্না করে।আমি ওর কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম

“কান্না করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আর এই সব বিষয় নিয়ে বেশি টেনশন নিস না।পড়াশুনোতে মন দে বুঝছিস।এখন কান্না থামা।”

কিছুসময় পর দিয়ার কান্না থেমেগেল।আমি এখনো দিয়ার সাথেই দারিয়ে আছি।

“তোর অসভ্যতামি এখনো যায় নি তাই না।একা পেয়ে আমার বোনের সাথে আবার অসভ্যতামি শুরু করে দিয়েছিস।”

হঠাৎ কথাটাতে কিছুটা চমকে গেলাম।ছাদের দরজার তাকিয়ে দেখি হিয়া দারিয়ে আছে।দূর দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেকটা রেগে আছে।হয়তো আমাদের এইভাবে দেখে।হিয়াকে দেখে দিয়া কিছু বলবে তার আগেই হিয়া বলল

“দিয়া তুই এখনি রুমে যা।”

“আপু আগে আমার ক..”

“তোকে বলছি না রুমে যেতে।এখনো দারিয়ে আছিস কেন?যা রুমে যা।”

আমি বললাম
“দিয়া তুই রুমে যা।ভয় পাস না।আমি আছি।”

দিয়া আমার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে থেকে চলে গেল।হিয়া আমার সামনে এসে বলতে লাগলো

“দিন দিন তুই অসভ্য সাথে নির্লজ্জও হয়ে যাচ্ছিস।রেস্টুরেন্টে একবার ছাদে একবার যেইখানে মেয়ে পাচ্ছিস সেইখানেই শুরু করে দিচ্ছিস তোর অসভ্যতামি।”

“দেখ হিয়া তুই যা ভাবছিস তেমন কিছু না।আমি তো শুধু..”

“হ্যা এখন আমি দেখে নিয়েছি বলে আমাকে অন্য কিছু বুঝাবি।আমার যা বুঝবার বুঝা হয়ে গেছে।আর তোর সাথেই বা আমি এত কথা বলছি কেনো?”

হিয়া আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেল।আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।হিয়া চলে যেতেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কেউ যদি কিছু শুনতে না চায় তাহলে তাকে বলে কিছু হবে না।

পরের দিন কাজের মধ্যেই পার হয়ে গেল।
আজ ভাইয়ার গায়ে হলুদ।সকাল থেকে বাসায় একটা আনন্দের ছাপ লেগে আছে।সন্ধ্যার পরে হলুদের আয়োজন শুরু হল।সব রিলেটিভরা একে একে ভাইয়াকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে।
আর অন্য দিকে আমার সব কাজিনরা গান ছেড়ে নাচে বেস্ত হয়ে পরেছে।মেয়ে কাজিনরা সব আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল আজ গায়ে হলুদে শুধু মেয়েরা নাচবে।মিরা আপু বাদে সব মেয়েরাই নেচেছিল।হিয়া আর দিয়া ডুয়েট ভাবে নেচেছে।আমি আমার বন্ধুদের সাথে বসে বসে দেখছি।এর বেশি কিছু তো করার নেই।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে নাফিজা ভাবি কল দিল।কিছুটা অবাক করার বিষয়ই ছিল।হঠাৎ ভাবি কেনো কল দিলেন?আমি রিসিভ করতেই ভাবি বলল

“নেহাল তোমার ভাই কোথায় এখন?”

“ভাবি ভাইয়া তো এখনো স্টেজে বসে আছে।”

“এখনো গায়ে হলুদ শেষ হয় নি।”

“না ভাবি।তা হঠাৎ আজ আমাকে কল দিলেন যে।কিছু দরকার ছিলো নাকি?”

“তেমন কিছু না।আমার তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ তাই নিলয়কে কল দিয়েছিলাম কিন্তু ও তো ফোনটা ধরছে না।তাই তোমাকে কল দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম।”

“ভাইয়ার মনে হয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে।আচ্ছা ভাবি আপনার গায়ে হলুদে নাচের অনুষ্ঠান হয় নি।”

ভাবি কিছুটা হেসে বলল
“আর বলো না নেহাল।এই নাচের অনুষ্ঠান করতে করতেই সব কাজিনরা ক্লান্ত।একজনের পর একজন নেচেছে।আজ ফারিয়া একদম ফাটিয়ে দিয়েছে।তুমি যদি দেখতে ভাই তাহলে বলতে।ফারিয়া খুব সুন্দর নেচেছে।”

“তাই নাকি।ইস তাহলে তো মিস করে গেলাম ফারিয়ার নাচটা।”

“সমস্যা নেই আমার কাছে নাফিজার নাচের ভিডিও আছে আমি তোমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।তুমি দেখে নিও।”

“আচ্ছা ভাবি।”

“আর শুনো তোমার ভাইকে বলো ফ্রি হলে আমাকে কল দিতে।এখন তাহলে রাখছি।”

কিছুসময় পরেই ফোনের মেসেজ আসলো।দেখলাম ভাবি ভিডিও পাঠিয়েছে।ভিডিওটা দেখলাম।ফারিয়ার নাচ আসলেই খুব সুন্দর ছিল।
পরের দিন সকালে উঠে সবাই বউ নিয়ে আসার আয়োজন করছে।সব কিছু রেডি করে বারো টার দিকে রওনা দেয়া হল।
কমিউনিটি সেন্টারের গেটে দারিয়ে আছি কিন্তু ভিতরে যেতে দিচ্ছে না মেয়েরা।তাদের ডিমান্ড পঞ্চাশ হাজার টাকা।ভাইয়া তো মহা বিপাকে পরে গেছে।ভাবে নি এত টাকা চাইবে।আমার কানে ফিসফিস করে বলল

“নেহাল ওরা এত টাকা কেনো চাইছে?আর আমার কাছেও এত টাকা নেই।আর আব্বুও তো ভিতরে চলে গেছে মনে হচ্ছে।”

“আব্বুকে লাগবে না।আমি দেখি কি করা যায়।”

ভাবির কাজিনদের একটু বুঝিয়ে বললাম।তারা সবাই ফারিয়া দিকে তাকিয়ে কি জানি হিসাব করে বিশ হাজারে রাজি হল।টাকা দিয়ে আমরা ভিতরে গেলাম।ভাবির পাশে ভাইয়াকে বসালাম।তাদেরকে একা ছেড়ে আমি অন্য দিকে চলে আসলাম।তখনি একটা আমাকে দেখে বলল

“আরে নেহাল ভাইয়া কেমন আছেন?”

মেয়েটা দেখে ঠিক চিনতে পারলাম না।কিন্তু তাও মনে হচ্ছে কোথায় যেনো দেখেছি।কিছুটা ভেবে বললাম

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।কিন্তু তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না?”

“ভাইয়া আমি তানহা।নাফিজা আপুর কাজিন।সেই দিন না ফারিয়া আপু সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো?”

তাও কিছু মনে পরছে না।মেকআপ ছাড়া থাকলে হয়তো চিনতে পারতাম কিন্তু মেকআপ দেয়ার পর চেনা মুশকিল হয়ে পরেছে।তাও ভদ্রতার জন্য বললাম

“হ্যা মনে পরেছে।তা তুমি কেমন আছো?”

“ভালো।সেই দিন আপনার বাসায় গিয়েছিলাম ভাবলাম আপনার সাথে একটু আড্ডা দেয়া যাবে কিন্তু বাসায় গিয়ে আপনাকে পেলাম না।”

“তুমি আবার কবে আমাদের বাসায় গেলে?”

“দুই দিন আগেই তো ফারিয়া আপুর সাথে গেলাম।তার নাকি নিলয় ভাইয়ার সাথে কি কাজ ছিল।পরে আপনার আম্মুর সাথেও দেখা করে এসেছি।কেন আপু কি কিছু বলে নি?”

“নাহ ফারিয়া তো কিছু বলে নি আমাকে?”

“এই তানহা তোকে নাফিজা আপু ডাকছে যা।”

হঠাৎ করেই ফারিয়া এসে কথাটা বলল।তানহা কিছুটা দুষ্টুমি করে বলল

“যাচ্ছি যাচ্ছি এতো তাড়া দেয়ার কি আছে।আমি তো শুধু নেহাল ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলতে এসেছিলাম এর বেশি কিছু না।”

তানহা চলে গেল।এবার ফারিয়া বলল

“সুন্দর মেয়ে দেখতে কথা বলতে মন চায় তাই না নেহাল?”

“আমি কথা বলি নি তানহা নিজে এসেই কথা বলেছে।”

“হ্যা বুঝি বুঝি বলতে হবে না।আচ্ছা আজ আমাকে কেমন লাগছে?”

ভালো করে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম।খুব সুন্দর লাগছে লেহেঙ্গাতে।তাও একটু মজা করার জন্য বললাম

“মোটামুটি।”

“হ্যা এখন তো মোটামুটি বলবাই।তোমাকে আমার ভালো করেই চেনা আছে।শাড়ি পরে আসলে তো ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকবে সেটা কি আমি জানি না ভেবেছো?”

“আমি আবার কবে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকি?”

“থাক আর বলতে হবে না।আর শুনো তোমাকে কিন্তু আজ অনেক কিউট লাগছে।”

ফারিয়া চলে গেছে।দুর ফারিয়ার কাছ তো জানতেই পারলাম না আমাদের বাসায় কেনো গিয়েছিল।কিছুসময়ের মধ্যে ভাইয়ার বিয়ের কাজ শেষ হয়ে গেল।
এইখানের সব কাজ শেষ করে ভাবিকে নিয়ে সবাই বাসায় চলে আসলো।ভাইয়ার রুমে যাওয়া যাচ্ছে না রিলেটিভদের কারনে।সবাই ভিড় করে আছে।সবাই ভাবির সাথে কথা বলতে আর ছবি তুলতে বেস্ত।

রাতে সব কাজিনরা মিলে ভাইয়া ভাবির রুমে হাজির হলার দুষ্টুমি করার জন্য।সবাই ভেবেছিল ভাবি সাথে একটু দুষ্টুমি করবে কিন্তু হল তার উল্টো।ভাবির সবার সাথে ফাজলামো করছে।পরের দিন সব রিলেটিভরা আসতে আসতে চলে গেল কারন এখন আর কোনো অনুষ্ঠান হবে না।
কারন ভাইয়া একদিন পরেই হানিমুনে ভাবিকে নিয়ে বাইরে যাবে।সব রিলেটিভ চলে যাওয়ার বাসাটা কেমন জানি খালি হয়ে গেল।এখন শুধু মামার পরিবার আছে।

পরের দিন সকালে ভাইয়া ভাবি তাদের হানিমুনে চলে গেল।বিকালে ঘুমিয়ে ছিলাম তখনি কান্না শব্দে ঘুম থেকে উঠি।দেখি আম্মু পাশে বসে কান্না করছে।আম্মুকে কান্না করতে দেখে আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছি।আম্মু হঠাৎ এইভাবে কান্না করছে কেনো?আম্মুকে এই অবস্থায় দেখে বললাম

“আম্মু তোমার কি হয়েছে এইভাবে কাঁদছো কেনো?কি হয়েছে বলো?”

আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো বেশি করে কান্না করতে লাগলো।আম্মু হঠাৎ করে এইভাবে কান্না করছে কেনো?কারো কি কিছু হয়েছে নাকি?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here