সুপ্ত_অনুভূতি #পর্ব_০৮

0
363

#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০৮
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

পরের দিন সকালে ভাইয়া ভাবি তাদের হানিমুনে চলে গেল।বিকালে ঘুমিয়ে ছিলাম তখনি কান্না শব্দে ঘুম থেকে উঠে দেখি আম্মু পাশে বসে কান্না করছে।আম্মুকে কান্না করতে দেখে আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছি।আম্মু হঠাৎ এইভাবে কান্না করছে কেনো?আম্মুকে এই অবস্থায় দেখে বললাম

“আম্মু তোমার কি হয়েছে এইভাবে কাঁদছো কেনো?কি হয়েছে বলো।”

আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো বেশি করে কান্না করতে লাগলো।আম্মু হঠাৎ করে এইভাবে কান্না করছে কেনো?কারো কি কিছু হয়েছে নাকি?
আম্মু কান্নার থামার কোনো নামই নেই।আম্মুকে ছেড়ে যেতেও পারছি না।রুমের বাইরে গেলে হয়তো কিছু জানতে পারলাম।অনেকসময় পর আম্মু কান্না থামিয়ে বলল

“নেহাল আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।আমি ইচ্ছে করে তোর সাথে এমন করি নি।”

“আরে কি হয়েছে সেটা তো বলবে?আর ক্ষমা চাচ্ছো কেনো তুমি।”

“আজ আমি দিয়া থেকে সব সত্যি জেনেছি।তুই কিছু করিস নি।তোকে শুধু শুধু ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম।আর কোনো সময় তোকে ভুল বুঝবো না।”

“তাই বলে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে কান্না করতে হবে।আর তুমি আমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আমাকে পাপের ভাগিদার করতে চাচ্ছো?দয়া করে আর এই সব বলো না।আর তোমার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই।তাই এখন কান্না থামাও।”

কান্না কিছুটা কমেছে।আজ অনেক দিন পরে আম্মু কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি।অনেক ভালো লাগছে।আম্মুকে বললাম এবার রুমে যেতে।ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে দেখি বসার রুমে সবাই কিছুটা হিম হয়ে বসে আছে আর দিয়া কাঁদছে।
দিয়ার কাছে গিয়ে বললাম

“এই দিয়া তুই কাঁদছিস কেনো?কি হয়েছে তো বল আমাকে?”

পাশ থেকে আব্বু বলল
“হিয়া আর ওর আম্মু ওকে মেরেছে?”

“ওকে মেরেছে কেনো? কি করেছে দিয়া?”

মামা বলল
“তোর নামে যে মিথ্যা কথা বলেছিল সেই কারনে ওকে মেরেছে।আমার কারনেই দিয়া এত আস্কারা পেয়েছে।না হলে এমন মিথ্যা কথা বলে কেউ।”

“তাই বলে গায়ে হাত দিতে হবে নাকি।আর মামা তুমি ওদের কিছু বলো নি কেনো?”

“ভালোই করেছে মেরে।নাহলে পরে আবার এই রকম কিছু একটা করবে।”

“ছোট মানুষ না বুঝে এমন করেছে তাই বলে..।পরের বার থেকে কেউ যেনো আর দিয়ার গায়ে হাত না দেয়।মামা তোমাকেও বলছি তুমিও হাত তুলবে না।”

মামি আর হিয়া চুপ করে আছে কিছু বলছে না।দিয়াকে আমার সাথে রুমে নিয়ে আসলাম।দিয়াকে বললাম

“ইস কান্না করতে করতে মুখ একদম লাল করে ফেলেছিস।এইভাবে কেউ কান্না করে।তুই না বড় হয়ে গেছিস তাহলে ছোটদের মত কান্না করছিস কেনো?”

“আম্মু আর আপু অনেক জোড়ে মেড়েছে ভাইয়া।এখনো ব্যথা করছে।”

“আচ্ছা এখন আর কান্না করিস না তাহলে কিন্তু বিকালে ঘুরতে নিয়ে যাবো না।”

আর কিছু করতে হল না।দিয়ার কান্না ওইখানেই শেষ।দিয়া খুশি হয়ে বলল

“সত্যি ভাইয়া আজ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে?”

“যেতে তো চেয়েছিলাম কিন্তু তুই যেই ভাবে কান্না করছিস মন চাচ্ছে না আর নিয়ে যেতে।”

“প্লিজ ভাইয়া নিয়ে চলো আমি আর কান্না করবো না প্লিজ প্লিজ।”

“আচ্ছা তাহলে একটু পরেই আমরা বেরোচ্ছি।”

“তাহলে আমি রেডি হয়ে নেই।তা না না তা না..

নাচতে নাচতে চলে গেল দিয়া।ফারুকে কল দিলাম।রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না।আবার কল দিলাম।এবার রিসিভ করে বলল

“হ্যা নেহাল বলো।”

“ফোন ধরছিলে না কেনো?”

“বড় আম্মুর কাছে ছিলাম।মাত্রই রুমে এসে দেখলাম তুমি কল দিয়েছো।”

“আচ্ছা আজ কি একটু বাইরে আসতে পারবে?”

“কেনো কিছু কি হয়েছে?”

“না একটু ঘুরতে যাচ্ছি তাই বললাম।”

“কি বেপার নেহাল।আজ নিজে থেকেই ঘুরতে যাচ্ছো কারনটা কি?”

“বুঝেছি তুমি যাবে না।আচ্ছা রাখছি।”

“আরে আমি কি বলেছি নাকি যে যাবো না।আমি এখনি বের হচ্ছি।”

“আর হ্যা শাড়ি পড়ে বের হওয়ার দরকার নেই।অন্য কিছু পড়ে বের হও।”

ফোন রেখে রেডি হয়ে নিলাম।দিয়াকে কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু আসলো না।দিয়া না এসে আসলো আম্মু।আম্মু এসে বলল

“কিরে তুই দিয়াকে ডাকছিস কেনো?”

“ওকে নিয়ে বাইরে যাবো।দিয়া কই এখন?”

“দিয়া তো রুমে।আচ্ছা নেহাল শুন।”

“হ্যা আম্মু বলো।”

“এত কিছু হয়ে গেল কিন্তু দিয়াকে কিছুই বললি না যে?”

“আরে দিয়ার তো এখনো ছোট তেমন কিছু বুঝে না।ছেলেমানুষি করে সব কাজ করে।ওকে বলে আর কি হবে বলো তো।আর সব থেকে বড় কথা দিয়া আমার ছোট বোন।ওর হাজার দোষ থাকলেও কিছু বলল না।এখন ওকে একটু ডেকে নিয়ে আসো তো।দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।”

আম্মু চলে গেল।আমি বসার রুমে গিয়ে মামাকে বললাম

“মামা আমি একটু দিয়াকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি।”

“বেয়াদবটাকে নিয়ে তোর কোথাও যাবে লাগবে না।”

“মামা তুমি এখনো রেগে আছো।ছোট মানুষ ভুল করেছে সেটা নিয়ে এখনো বসে আছো।বাদ দেও তো।”

আব্বু বলল
“হ্যা শালাবাবু নেহাল ঠিকই বলেছে।এ সব নিয়ে আর মাথা গরম করো না।আর নেহাল তুই দিয়াকে নিয়ে যা।”

“চলো ভাইয়া আমি রেডি।”

দিয়া চলে এসেছে।সবাই দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুসময় আগেই তো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিল।আর এখন কত খুশি।আমি দিয়াকে নিয়ে বের হবো তখন মামি বলল

“তুই কি আমার উপর রেগে আছিস নেহাল?”

“আরে কি যে বলো না মামি।রাগ করবো কেনো?তেমন কিছু না।আচ্ছা তোমরা থাকো আমি দিয়ার সাথে একটু বাইরে থেকে আসছি।”

মামি কিছু বলল না।দিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।আসার সময় হিয়াকে দেখলাম আমার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে আছে।হয়তো আগে ঘটনার জন্য ও অনুতপ্ত।
আমরা যাওয়ার আগেই ফারু এসে পরেছে।ফারুকে দেখে দিয়া বলল

“আপু আপনি এইখানে?”

“নেহাল ডেকে এনেছে ঘুরতে যাওয়ার জন্য।”

“ভালোই হয়েছে আপু।আজ অনেকসময় ঘুরবো আর ভাইয়ার পকেট ফাকা করে দিবো।”

“আচ্ছা।”

এতক্ষণ ওদের দুজনের বকবক শুনে বললাম

“তোমরা চেনো একে ওপর কে?”

দিয়া বলল
“হ্যা ভাইয়া এই আপু তো সে দিন তোমাদের বাসায় এসেছিল।”

“ওহ আচ্ছা।এখন চল।”

ওদের নিয়ে প্রথমে পার্কে গেলাম।কিছুসময় ঘুরে শপিং মলে গেলাম।দিয়ার জন্য কিছু গিফট কিনতে।দিয়ার জন্য গিফট কিনে ফারিয়ার জন্য একটা শাড়ি কিনে নিলাম।
ঘুরাঘুরি আর শপিং শেষ করে দিয়া বলল

“ভাইয়া আমার না খুদা লেগেছে।চলো কিছু খেয়ে নি।”

পরে রেস্টুরেন্টে গেলাম।দিয়ার খুশি দেখে কে।দিয়াকে বললাম

“কি কি খাবার অডার দিবো বল।”

“তোমার কিছু অডার দিতে হবে না।আমি গিয়েই সবার জন্য অডার করে আসছি।তোমরা বসো।”

দিয়া খাবার অডার দিতে চলে গেল।এবার ফারু বলল

“তাহলে তোমার মামার পরিবারের সাথে সমস্যা শেষ হয়েছে?”

“তুমি সেই দিন এই কারনেই গিয়েছিলে?”

“আমার তো খেয়েদেয়ে কাজ নাই।মন চেয়েছিল তাই গিয়েছিলাম।”

“তাহলে আমাকে আগে বলো নি কেনো?”

“তোমার বাসায় যেতে এখন আমাকে তোমার থেকে অনুমতি নিয়ে যেতে হবে?বেশি কথা বললে ফোন মেরে মাথা ফাটিয়ে দিবো।”

কিছু আর বলার নেই।বললে হয়তো সত্যি সত্যি ফোন ছুড়ে মারতে পারে।দিয়া অডার দিয়ে এসে আমাদের নিয়ে কয়েকটা সেল্ফি তুললো।এর মধ্যে খাবার এসে পরেছে।খাবার শেষ করে ফারিয়াকে টেক্সিতে উঠিয়ে দিয়ে দিয়াকে নিয়ে বাসায় আসলাম।আসার সময় ফারুকে শাড়ির প্যাকেটটা দিয়ে বলেছি এটা বাসায় গিয়ে খুলতে।

দিয়াকে নিয়ে বাসায় আসতে রাত আটটা বেজে গেল।দিয়াকে ওর গিফটগুলো দিয়ে আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।এসে দেখি ফারু কল দিয়েছে।আর ওই দিকে দিয়া গিফট নিয়ে খুশি মনে রুমে গেল।দিয়ার হাতে এত কিছু দেখে হিয়া বলল

“এই গুলোতে কি?”

“নেহাল ভাইয়া আমাকে গিফট দিয়েছে।আজ কত মজা হয়েছে জানো আপু!উফ বলার মত না।তুমি না গিয়ে মিস করলে খুব।আচ্ছা তুমি থাকো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

দিয়া ফোনটা রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।হিয়া কি ভেবে দিয়ার ফোনটা নিয়ে গ্যালারি চেক করে দেখলো নেহাল দিয়া আর একটা মেয়ের একসাথে অনেক গুলো ছবি।মেয়েটাকে দেখে হিয়ার মনে হল এই সে মেয়ে যার সাথে নেহালকে দেখেছিল রেস্টুরেন্টে।দিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ওর ফোন হিয়ার কাছে।দিয়া বলল

“আপু আমার ফোন নিয়ে কি করছো?”

“তোদের সাথে এই মেয়েটা কে রে?”

“কার কথা বলছো?”

“আরে এই যে মেয়েটা।”

হিয়া দিয়াকে ওদের তিনজনের ছবিটা দেখালো।ছবি দেখে দিয়া বলল

“আরে এইটা তো ফারিয়া আপু।”

“এই ফারিয়া আপুটা আবার কে?”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here