সুপ্ত_অনুভূতি #পর্ব_১০

0
452

#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১০
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

রাসেল ভাই কিছু বলবে তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।দেখলাম ভাইয়া কল করেছে।কল রিসিভ করতেই ভাবির কান্না শুনতে পেলাম।

“নেহাল আমার আব্বু ঠিক আছো তো?”

“হ্যা ভাবি ঠিক আছে।আমি হাসপাতালেই আছি।আপনি চিন্তা করবেন না।ভাইয়াকে ফোনটা দেন তো।”

“হ্যা নেহাল বল।”

“ভাইয়া ভাবির আব্বুর অবস্থা বেশি ভালো না। ভাবিকে এখন এইসব কিছু বলার দরকার নেই।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।আমরা রাতের ফ্লাইটে রওনা হচ্ছি ততক্ষণ তুই ওনাকে দেখে রাখিস।”

“সমস্যা নেই আমি আছি এইখানে।আচ্ছা ভাইয়া তোমার সাথে একটু পরে কথা বলছি।”

ডক্টরের কাছে জানতে পারলাম রাতেই নাকি অপারেশন করবে।এর মধ্যে আম্মু আব্বু মামা মামি সবাই এসে পড়েছে।ডক্টরের সাথে কথা বলা শেষ করে বাইরে আসতেই আব্বু বলল

“নেহাল নাফিজার আব্বুর কি অবস্থা?”

“তেমন একটা ভালো না আব্বু।রাতেই নাকি অপারেশন করাবে।”

“নিলয়ের সাথে কথা হয়েছে তোর?”

“হ্যা হয়েছে।আজ রাতের ফ্লাইট।আর আব্বু ভাবির আব্বুর এই অবস্থা ভাবিকে এখন কিছু বলার দরকার নেই।”

“হ্যা আমারো তাই ঠিক মনে হচ্ছে।”

কিছুসময় পর সিনিয়র ডক্টর আসে।সে এসেই অপারেশনের জন্য সব প্রস্তুতি নিচ্ছে।এখন ভাবির আব্বুকে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে যাওয়া হয়েছে।একজন নার্স এসে বলল ‘ও’ পজেটিভ রক্ত লাগবে।আব্বুর যেহেতু ‘ও’ নেগেটিভ তাই আব্বুকে বললাম।আব্বু নার্সের সাথে অন্য একটা রুমে গেল।আমরা সবাই বাইরে অপেক্ষা করছি তখন ফারিয়ার আব্বু আম্মু হাসপাতালে আসলো।তাদের দেখে আমার কিছুটা অন্য রকম লাগলো।তারা তো ভাবির বিয়েতে আসলো না।আর সিলেট থেকেও আসা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব না।নাকি প্লেন দিয়ে এসেছে?ফারিয়ার থেকে এই বিষয়টা পরে জানতে হবে।
ফারিয়ার আব্বু কাঁদছে।হয়তো তার বড় ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে।

প্রায় তিনঘণ্টা পর ডক্টর বের হলেন।সবাই ডক্টরের সামনে দারিয়ে আছে।কি বলবে ডক্টর তা জানার জন্য।ফারিয়ার আব্বু বলল

“ডক্টর আমার বড় ভাই এখন কেমন আছে?”

“অপারেশন তো সাকসেসফুল হয়েছে।কিন্তু যতক্ষণ না ওনার জ্ঞান না ফিরছে আমরা কিছু বলতে পারছি না।”

ফারিয়া বলল
“আমরা কি এখন বড় আব্বুর সাথে দেখা করতে পারি?”

“এখন কেউ দেখা করতে পারবেন না।আগে জ্ঞান আসুক তারপরে।”

ডক্টর চলে গেলেন।কিছুক্ষণ পরে ভাবির আব্বুকে ক্যাবিনে শিফট করা হল।রাসেল ভাইয়ের সাথে কথা বলে ভাবির আম্মুকে ক্যাবিনের ভিতরের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলাম।কিন্তু রাসেল ভাই বলল

“নেহাল আন্টিকে বলিস ভিতরে গিয়ে যেনো কোনো কথা বা কান্নাকাটি না করে।”

“আচ্ছা ভাইয়া আপনি সেটা নিয়ে টেনশন করেন না।”

এখন পরিবেশটা কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।কিছুটা চিন্তা মুক্ত।আমি গিয়ে ফারিয়ার পাশে বসলাম।ফারিয়া আমাকে দেখে আমার ডান কাধে মাথা রাখলো।কিছুসময় মনে হলো বাম পাশে কেউ বসলো।তাকিয়ে দেখি হিয়া।আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
আমি চোখের ইশারাতে বললাম কি?
হিয়া একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ফারিয়ার দিকে তাকাচ্ছে।আমি আর সেই দিকে খেয়াল দিলাম না।
দিয়াকে দেখলাম একা একা বসে আছে আমি গিয়ে ওর পাশে বলে বললাম

“কিছু খেয়েছিস?”

“না ভাইয়া।”

“তাহলে তোর জন্য কিছু নিয়ে আসি?”

“না এখন কিছু খাবো না ভাইয়া।”

“তাহলে বাসায় গিয়ে খেয়ে নিস।

“আচ্ছা শুনো ভাইয়া।”

“হ্যা বল।”

“তুমি একটা ডক্টরকে ভাইয়া বলছিলে না।”

“হ্যা ওনি তো রাসেল ভাই।রানার বড় ভাই। কি হয়েছে?”

“সে না হিয়া আপুর দিকে তাকিয়ে থাকে।আমার না তাকে সুবিধার মনে হয় না।”

হেসে বললাম
“আরে না সে তেমন না।রাসেল ভাই অনেক ভালো ছেলে।তুই এই সব নিয়ে ভাবিস না।”

দিয়া আর কিছু বলল না।রাত দশটার দিকে নার্স এসে বলল এত মানুষ যেনো রাতে এইখানে না থাকে।আব্বুর সাথে কথা বলে আমি এইখানে থেকে যেতে চাইলাম।আব্বুও থাকতে চেয়েছিল কিন্তু আমি রাজি হইনি।ভাবিদের বাসা থেকে ফারিয়ার আব্বু থাকতে চেয়েছিল কিন্তু আমি আর ফারিয়া তাকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।ঠিক হল আমি আর ফারিয়া রাতে এইখানে থাকবো আর ভাবির আম্মু ক্যাবিনের ভিতরে ভাবির আব্বুর কাছে থাকবে।যাওয়ার সময় হিয়া এইখানে থাকতে চাচ্ছিল কিন্তু আমি মামাকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেই।

সবাই চলে গেছে এখন আমি ফারিয়া আর ভাবির আম্মু আছি।নার্স এসে প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিয়ে বলল এই মেডিসিন গুলো নিয়ে আসতে।ফারিয়াকে রেখে আমি মেডিসিন গুলো নিয়ে আসলাম।ফারিয়া বলল

“নেহাল।”

“হ্যা বলো।”

“ক্যান্টিনে চলো বড় আম্মুর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।”

কিছু না বলে ফারিয়ার সাথে গেলাম।আমরা হাল্কা কিছু খেয়ে ভাবির আম্মুর জন্য খাবার নিয়ে আসলাম।সারারাত আমি আর ফারিয়া ক্যাবিনে বাইয়ে বসে ছিলাম।কখন যে ঘুমিয়ে গেছে ঠিক জানি না।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ফারিয়া আমার একহাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।আর আমি ফারিয়ার মাথার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম।নার্স এসে বলল

“আপনাদের রোগীর জ্ঞান ফিরেছে।আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন।”

“ধন্যবাদ আপনাকে।”

“একটা কথা বলি?”

“হ্যা বলুন।”

“আপনার দুজনকে বেশ মানিয়েছে।”

ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।ফারিয়া এখনো ঘুমাচ্ছে।ফারুকে দেখে ভাবছি(ওকে দেখলে আমার এমন কেনো মনে হয় আমার কাছে এখন সব আছে।ওর তাকানোর ভঙ্গি কিছু বলতে চায় আমাকে।কিন্তু কি সেটা? নাকি আমিই ফারিয়াকে নিয়ে একটু বেশি বেশি ভাবছি।এই বিষয় নিয়ে ওর সাথে কথা বলাও ঠিক হবে না।যদি অন্য কিছু মনে করে।না থাক কিছু বলার দরকার নেই।ও পাশে আছে এটাই অনেক।)
কিছুসময় পরে ভাবির পরিবার এসে পরেআমি ফারিয়াকে ডেকে বললাম

“এই ফারিয়া উঠে পড়ো।দেখো সকাল হয়ে গেছে।”

“উম্ম..”

“আরে উঠো ফারিয়া উঠো।”

“হুম..।কি হয়েছে?”

“দেখো সকাল হয়ে গেছে।তোমার পরিবারের সবাই এসে গেছে।”

“ওহ।আচ্ছা বড় আব্বুর জ্ঞান ফিরেছে?”

“হ্যা কিছুক্ষণ আগে।যাও দেখা করে আসো।”

ফারিয়া ক্যাবিনের ভিতরে গেল।ভাবির পরিবারের সবাই দেখা করছে তখন আব্বু আম্মু মামা সহ বাকিরা হাসপাতালে আসলো।আব্বুকে বললাম ওনার জ্ঞান ফিরেছে।আমাদের পরিবারের সবাই ভিতরে গেল দেখা করতে।ভাবির আম্মু এসে বলল

“বাবা নেহাল তোমার আঙ্কেল তোমাকে ভিতরে ডেকেছে।”

ভিতরে গেলাম।আঙ্কেলকে দেখে কিছুটা সুস্থ মনে হচ্ছে।আমাকে কাছে ডাকলেন।আমি ওনার পাশে বসতেই আস্তে আস্তে বলল

“আমার জন্য তোমার অনেক কষ্ট হয়ে গেছে তাই না।”

“কি যে বলেন না।কষ্ট হবে কেনো?”

“আমি জানি।তোমার আন্টি আর ফারিয়া আমাকে সব বলেছে।”

ওনার কথাতে আমি কিছু বললাম না।কিছুসময় পর সবাই বাইরে এসে পরলাম।রাসেল ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম দুই তিন দিনের মধ্যেই আঙ্কেলকে রিলিজ করে দিবেন।রাসেল ভাইয়ের সাথে কথা বলার সময় দেখলাম হিয়ার দিকে কিভাবে জানে তাকাচ্ছে।এর মধ্যে রানা এইখানে এসে হাজির।কিছুই বুঝতে পারছি না।রানা এসে ভাবির আব্বুর খোঁজখবর নিচ্ছে ফারিয়ার থেকে।রানার বিষয়টা কেমন জানি সুবিধার মনে হচ্ছে না।আর রানাই বা এইখানে কেনো আসলো?”

সকাল দশটার দিকে ভাইয়া ভাবি হাসপাতালে আসলো।এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হাসপাতালে এসেছে।ভাইয়া ভাবি ভিতরে গেল।ভাইয়া আবার বাইরে ফিরে আসলো।আমাকে বলল

“নেহাল নাফিজার আব্বুকে তো দেখছি এখন মোটামুটি ভালোই আছে।”

“হ্যা কেনো তুমি খুশি হও নি?”

“কথা সেটা না।তুই যেইভাবে বলেছিলি তাই তো আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।এখন তো দেখছি আব্বু ঠিক আছে।ওনার কারনে আমার হানিমুনটা ভেস্তে গেল।”

হেসে বললাম
“আহারে আমার ভাইয়াটার হানিমুনের জন্য কষ্ট হচ্ছে তাই না।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here