সুপ্ত_অনুভূতি #পর্ব_১১

0
338

#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১১
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

সকাল দশটার দিকে ভাইয়া ভাবি হাসপাতালে আসলো।এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হাসপাতালে এসেছে।ভাইয়া ভাবি ভিতরে গেল।ভাইয়া আবার বাইরে ফিরে আসলো।আমাকে বলল

“নেহাল নাফিজার আব্বুকে তো দেখছি এখন মোটামুটি ভালোই আছে।”

“হ্যা কেনো তুমি খুশি হও নি?”

“কথা সেটা না।তুই যেইভাবে বলেছিলি তাই তো আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।এখন তো দেখছি আব্বু ঠিক আছে।ওনার কারনে আমার হানিমুনটা ভেস্তে গেল।”

হেসে বললাম
“আহারে আমার ভাইয়াটার হানিমুনের জন্য কষ্ট হচ্ছে তাই না।”

“নেহাল ফাজলামো করা বন্ধ কর।আব্বুকে রিলিজ দিচ্ছে কবে?”

“দুই তিন দিনের মধ্যেই রিলিজ দিয়ে দিবে।”

ভাবিকে বলেছিলাম বাসায় চলে যেতে।অনেক জার্নি করে এসেছে কিন্তু ভাবি নাকি যাবে না।এইখানেই থাকবে।ভাবির আম্মুকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম সাথে ফারিয়াকেও।বিকালে ফারিয়া এসে বলল আমাকে বাসায় চলে যেতে।বাসার বিশ্বাম নিয়ে পরে আবার আসতে।

আজ ভাবির আব্বুকে রিলিজ দিবে।তাই আমাদের বাসার থেকে আমি আর ভাইয়া গেলাম।হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম ভাবির আম্মু ভাবি ফারিয়া আর ফারিয়া আব্বু।আমরা যাওয়ার পর ভাইয়া আর আমি সব ফর্মালিটি শেষ করে ভাবির আব্বুকে বাসায় নিয়ে গেলাম।ভাবিদের বাসায় সবাই অনেক খুশি।
ভাবির রুমে বসে আছি।আমার পাশে ভাবির দুই কাজিন একজন তানহা আরেকজন মনে হয় লিজা।তানহাকে আমার কাছে ঠিক মনে হলেও লিজাকে কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে।মেয়েটা জানি কেমন।তাকালেই শুধু মুচকি মুচকি হাসে।তানহা বলল

“তা নেহাল ভাইয়া আপনারা বিয়ে করছেন কবে?”

তানহার কথা শুনে কিছুটা ভাবনায় পরে গেলাম।এইখানে আপনারা বলতে আমার সাথে কার কথা বলছে।আমি এই সব ভাবছি তখন লিজা বলল

“কি সব বলছিস তানহা?ওনি আবার কাকে বিয়ে করবে?”

তানহা লিজার কানে কিছু বলল।লিজা আমার দিকে বিরক্তভাবে তাকিয়ে বলল

“ধুর আপনার বিষয়ে কি কি ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি..”

এতটুকু বলেই লিজা চলে গেল।আমি বললাম

“তানহা তুমি কি বললে যে লিজা এমন করলো?”

“না মা..নে আমি কিছু বলি নি।আচ্ছা আপুকে পাঠাচ্ছি।”

তানহা চলে গেল।কিছুই বুঝলাম না।আর তানহা তোতলাচ্ছিল কেনো? কিছুসময় পর ফারিয়া আসলো।ফারিয়া এসেই বলল

“তা একা একা বসে কি করছো?”

“কিছু না।আচ্ছা তানহা লিজাকে কি বলল যে লিজা ওমন করলো?”

“আরে তুমি সেটা বুঝবে না।আর লিজা কিছুটা গায়ে পড়া মেয়ে বুঝছো তাই এমন করছে।আর ওর সাথে বেশি কথা বলতে যেও না।”

“সেটা আমারো মনে হয়েছে।ওর দিকে তাকালেই জানি কেমন কেমন করে।”

“হ্যা সেই কারনেই বলছি।আচ্ছা কেউ যদি বিয়ের বিষয়ে কিছু বলে তাহলে বলে দিবে ফারিয়া সব জানে ঠিক আছে।”

“কি জানো তুমি বিয়ের বিষয়ে?”

“আরে বোকা সব কাজিনরা জানতে চাচ্ছিল যে তোমার আর তোমার প্রেমিকার বিয়ে কবে।তাই আমি বলে দিয়েছি আমি যখন বলল তখন ওদের বিয়ে হবে।আমি কি খারাপ কিছু বলেছি বলো নেহাল?”

“আরে আমার আবার প্রেমিকা আসলো কোথা থেকে?”

“আরে বুদ্ধু এতো বড় ছেলে হয়েও কোনো মেয়ে পটাতে পারো নি বিষয়টা তো অনেক লজ্জার কথা।তাই আমি বলে দিয়েছি তোমার প্রেমিকা আছে আর তাকেই তুমি বিয়ে করবে।”

“হ্যা একদিক দিয়ে ভালোই হবে।কেউ তো আর দেখতে যাচ্ছে না আমার প্রেমিকা কে তাই না।তার থেকে ভালো বিয়ের কথা বললে বলল ফারিয়ার জানে।”

“এটাই ঠিক হবে।আচ্ছা তুমি থাকো আমি একটু আসছি।”

একটু পরেই দুইটা মেয়ে আসলো।জান্নাত আর নেহা।আগের বার এদের সাথে পরিচয় হয়েছিল।নেহা বলল

“তা বিয়েটা কবে করছেন আপনারা?”

“ফারিয়া জানে।”

কথাটা শুনে জান্নাত আর নেহা খুশি হয়ে চলে গেল।এতে খুশি হওয়ার কি আছে?দুপুরে ভাবি খাবার খেতে নিয়ে গেল।দেখলাম টেবিলে শুধু আমি আর ভাইয়া।বাকিরা দারিয়ে আছে।হয়তো পরে খাবে।ভাইয়াকে আর আমাকে খাবার দেয়া হল।কিন্তু সব কিছুতে আমাকে বেশি বেশি দিচ্ছে।ভাইয়াকে একটা মাছ দিলে আমাকে দুইটা মাছ দিয়েছে।ডিম একটা ভাইয়াকে দিয়েছে আমাকে দিয়েছে তিনটা।খাবার এই অবস্থা দেখে ভাইয়া বলল

“এই তোমরা নেহালকে এত বেশি বেশি কেনো দিচ্ছো?আর আমাকে সব কিছুতেই কম দিচ্ছো কেনো?”

ভাবি বলল
“তুমি তো সারাদিন বসে থাকো বেশি খাবার খাওয়ার দরকার নেই।বেশি খেলে মোটা হয়ে যাবে।আর নেহাল তো কত কাজ করে।বেস্তটার কারনে ঠিক মত খেতেও পারে না।তাই এই সময় একটু বেশিই খাবারের প্রয়োজন ওর।এখন চুপচাপ খাও।”

ভাবির কথায় বাকিরা মুচকি মুচকি হাসছে।এইদিকে খাবার খেয়ে আমার অবস্থা কিছুটা খারাপ।বাসায় আর যেতে পারলাম না।খাবার খেয়ে শরীর কিছু আসলে হয়ে গেছে তাই ফারিয়ার রুমে শুয়ে পরলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি ফারু আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আমি যে জেগে গেছি সে দিকে ফারিয়ার খেয়ালই নেই।ফারিয়াকে বললাম

“এই ফারু কি করছো তুমি?”

আমার কথায় ফারিয়া মাথা থেকে হাত সরিয়ে বলল

“ঘুম ভালো হয়েছে তোমার?”

“হ্যা।তুমি কি করছিলে?”

“তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই দেখছিলাম।”

“হুম সেটা তো দেখলামই।আচ্ছা কয়টা বাজে?”

“সাতটা বাজতে আর দুই মিনিট বাকি আছে।কেন?”

“বাসায় যাবো তাই।ভাইয়া কোথায়?”

“ভাইয়া তো আপুর সাথে।”

ভাবির রুমে গেলাম।দেখলাম ভাইয়া রুমে নেই।ভাবি বলল

“নেহাল তোমার ভাইয়াকে খুজছো?”

“হ্যা ভাবি।ভাইয়া কোথায়?”

“একটু বাইরে গেছে।”

“ভাবি আমি বাসায় যাচ্ছি।আপনারা তো আজ থাকবেন তা না।”

“হ্যা।তুমিও থেকে যাও আজ।”

“না ভাবি।আজ না।কিছু লাগলে বইলেন আমি এসে পড়বো।”

ভাবি কিছু বলল না।ভাবির আম্মু আব্বু আর ফারিয়ার আম্মু আব্বুর সাথে দেখা করে চলে আসলাম।আম্মু বলল

“নেহাল শুন?”

“হ্যা আম্মু বলো।”

“রাসেল ছেলেটা কেমন রে?”

“কোন রাসেলের কথা বলছো?”

“আরে তোর বন্ধু রানার বড় ভাইয়ের কথা বলছি।তা ছেলেটা কেমন?”

“রাসেল ভাই তো খুব ভালো ছেলে।কেনো আম্মু?”

“তোর মামা জানতে যাচ্ছিল তাই আর কি।”

রাতে ছাদে দারিয়ে ফারুর বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।ফারিয়াকে কি বলে দিবো নাকি না।কিছুই বুঝতে পারছি না।নাকি সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিবো?না সেটাও ঠিক হবে না।আগে জানতে হবে আমার প্রতি ফারিয়ার অনুভূতি কি।তা পরে সব কিছু।

“কিরে একা একা কি করছিস?”

ফারিয়ার কথা চিন্তা করতে করতে খেয়ালই করি নি হিয়া আমার পাশে দারিয়ে আছে।

“তেমন কিছু না।”

“নেহাল তোকে একটা কথা জিজ্ঞাস করি?”

“হ্যা কর।”

“তুই কি আমাকে পছন্দ করিস?”

“নাহ তোর প্রতি তেমন কোনো অনুভূতি নেই আমার।”

“তাহলে কার প্রতি তোর অনুভূতি আছে ওই ফারিয়ার প্রতি?”

“হ্যা সেটা থাকতেও পারে।কেনো তোর কোনো সমস্যা?”

“যেদিন অন্য কেউ আমাকে নিয়ে চলে যাবে সেই দিন বুঝবি।”

কথাটা বলেই রেগে হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেল।ওর যাওয়ার দিয়ে তাকিয়ে হাসলাম।পরের দিন সকালে দেখলাম বাসায় কিছু আয়োজন করা হচ্ছে।আম্মু আর মামি রান্না করতে বেস্ত।আব্বুকে বললাম

“আব্বু বাসায় কি কেউ আসবে নাকি যে এত আয়োজন করা হচ্ছে?”

“হ্যা।কেনো তুই জানিস না।”

“কই না তো।তা কে বা কারা আসবে?”

“তোর বন্ধু রানা আছে না।ওর পরিবার আসবে।”

“ওরা কেনো আসবে?আর আমি তো ওনাদের আসতে বলি নি।”

“তোর মামা আসতে বলেছে।হিয়াকে নাকি দেখতে আসবে আজ।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here