#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০৯
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
দিয়া ফোনটা রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।হিয়া কি ভেবে দিয়ার ফোনটা নিয়ে গ্যালারি চেক করে দেখলো নেহাল দিয়া আর একটা মেয়ের একসাথে অনেক গুলো ছবি।মেয়েটাকে দেখে হিয়ার মনে হল এই সে মেয়ে যার সাথে নেহালকে দেখেছিল রেস্টুরেন্টে।দিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ওর ফোন হিয়ার কাছে।দিয়া বলল
“আপু আমার ফোন নিয়ে কি করছো?”
“তোদের সাথে এই মেয়েটা কে রে?”
“কার কথা বলছো?”
“আরে এই যে মেয়েটা।”
হিয়া দিয়াকে ওদের তিনজনের ছবিটা দেখালো।ছবি দেখে দিয়া বলল
“আরে এইটা তো ফারিয়া আপু।”
“এই ফারিয়া আপুটা আবার কে?”
“ফারিয়া আপু তো নেহাল ভাইয়ার ফ্রেন্ড।”
“তুই চিনিস নাকি?”
“হ্যা এর আগেও একবার আপুর সাথে দেখা হয়েছিল।”
এইদিকে নেহাল কল রিসিভ করতেই ফারিয়া বলল
“শাড়িটা জাস্ট অসাধারণ!”
“তোমার পছন্দ হয়েছে?”
“শুধু কি আমার!এইটা নিয়ে কাজিনদের সাথে একটু আগে ঝগড়া পর্যন্ত লেগে যেতে যাচ্ছিল।”
“কেনো?”
“আমি যেনো ওদেরকে এইটা দিয়ে দেই।দুজন এইটা নিয়ে ঝগড়া করছিল।কাকে এই শাড়িটা দিবো।মন চাচ্ছিল শাড়ির প্যাকেটটা ওদের ছুড়ে মাড়ি।পরে আর মাড়ি নি।”
“তা এইখানে আর কত দিন আছো?”
“ঠিক বলতে পারলাম না।ভালো লাগলে থাকবো না হলে সিলেটে চলে যাবো।”
“আচ্ছা যাওয়ার আগে আমাকে বলো।”
“নেহাল আগামীকাল আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে?”
“আজ তো দেখা হলো।আচ্ছা কিছু কি হয়েছে নাকি?”
“তেমন কিছু না।এখন বলো আগামীকাল কি দেখা করতে পারবে?”
“আচ্ছা তাহলে আগামীকাল বিকালে দেখা হচ্ছে।”
“এখন রাখছি।ভালো থেকো।”
ফোন রেখে শুয়ে পরলাম।রাতে আম্মু এসে খাবারের জন্য নিয়ে গেল।টেবিলে গিয়ে দেখি খাবারের বিশাল আয়োজন।কি কি রান্না হয়েছে সেটা দেখছি।আমার অবস্থা দেখে আম্মু বলল
“সব তোর পছন্দের খাবার।তোর মামি আর হিয়া রান্না করেছে।”
মনে মনে বলছি(আগে কথা শুনিয়ে এখন আসছে আদর দেখাতে।ন্যাকামো দেখে মন চায় হাসতে হাসতে মরে যেতে।)
কিছু না বলে খেতে বসলাম।কিন্তু আমার আর নিজের হাত দিয়ে খেতে হল না।আম্মুই খাইয়ে দিল।ভাইয়া এইখানে থাকলে ভালো হত।আমাকে দেখে আজ জ্বলতো।আম্মু খাইয়ে দিয়েছে বলে খাবার খেতে কিছুটা দেড়ি হয়েছে।খাবার শেষ করে রুমে এসে দেখি হিয়া বসে আছে।হিয়াকে দেখে বললাম
“কিরে আজ হঠাৎ তুই আমার রুমে?”
“কেনো?আমি কি আসতে পারি না নাকি?”
“না সেটা না।অসভ্য নির্লজ্জের রুমে তো সবাই আবার আসতে চায় না।যদি আমি আবার অসভ্যতামি শুরু করে দেই।”
“এইভাবে বলছিল কেনো?”
“খারাপ কিছু কি বলেছি বল।”
“তাই বলে এইভাবে বলবি।আমি কি জানতাম নাকি দিয়া মিথ্যা বলবে।আর দিয়াকে তো কিছু বলিস নি তাহলে আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছিস কেনো?”
“দিয়া আর তুই কি এক?দিয়াকে আমি বড় হতে দেখেছি।সব সময় ওকে নিজের ছোট বোন মনে করেছি।আর তোর সাথে আমি বড় হয়েছি।তুই জানতিস না আমি কেমন?তাহলে সেই দিন কিভাবে ভাবলি আমি ওমন একটা কাজ দিয়ার সাথে করতে পারি?”
“ভুল হয়ে গেছে নেহাল।”
হিয়া কাঁদছে।কেনো জানি আজ ওকে কাঁদতে দেখতে ইচ্ছে করছে না।
“এই তুই কান্না থামা।নাহলে অন্য রুমে গিয়ে কান্না কর এইখানে কান্না করিস না।”
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
“ভুল হয়েছে গেছে।সরি আর ভুল হবে না।এখন প্লিজ রাগ করে থাকিস না নেহাল।”
“হিয়া ছাড় আমাকে।কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।ছাড় বলছি।”
“না আমি ছাড়বো না।ফারিয়া ধরলে তো তখন কিছু বলিস না।আমি জড়িয়ে ধরলেই তোর সমস্যা হয়।”
হিয়াকে ছাড়িয়ে বললাম
“ফারিয়া আর তুই এক না।তোর মত ফারিয়া আমাকে অবিশ্বাস করে না।”
হিয়া কিছু বলছে না।কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গেছে।রুম থেকেও যাচ্ছে না।খারাপ লাগছে কিছুটা।মামিকে ডেকে নিয়ে এসে বললাম
“মামি হিয়াকে বলো কান্না থামাতে নাহলে কিন্তু আমি বাসা থেকে চলে যাবো।”
“এই হিয়া কাঁদছিস কেনো?”
“আম্মু নেহাল না আমাকে সজ্জ করতে পারছে না।আমি তো ওকে সরি বলেছি আগের ঘটনার জন্য।তাহলে আমার সাথে এমন করছে কেনো?”
“আচ্ছা তুই আমার সাথে আগে রুমে আয়।”
মামি হিয়াকে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল।আমি দরজা লাগিয়ে শুয়ে পরলাম।নাহলে হিয়া আবার পরে আসতে পারে।মামি হিয়াকে নিয়ে অন্য রুমে গিয়ে বলল
“দেখ হিয়া আমরা ওর সাথে যা করছি তার পরেও নেহাল কিন্তু কিছু বলে নি।এমন কি দিয়াকেও কিছু বলে নি।আর তুই তো ওর সাথে থাকতি তার জন্য তোর উপর একটু বেশি রেগে আছে।আমার সাথেও ঠিক মত কথা বলে না।হয়তো এখনো অভিমান করে আছে।একটু সময় দে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আম্মু আমি তো নেহালকে অনেক কথা শুনিয়েছি।ও কি আমাকে ক্ষমা করবে?”
“করবে দেখিস।এখন কান্না থামিয়ে ঘুমিয়ে পর নাহলে রাতে মাথা ব্যথার করবে।”
“আচ্ছা আম্মু।”
পরের দিন সকালে নাস্তা করার পরে ভাইয়া কল দিলো।ভাইয়া বলল
“কেমন আছিস তুই?”
“ভালো।তোমরা কেমন আছো?”
“ভালো।আচ্ছা আম্মু কোথায়?একটু ফোনটা আম্মুকে দে তো।”
“আচ্ছা দিচ্ছি।”
ফোনটা আম্মুর কাছে দিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম।বিকালে দিয়ার সাথে গল্প করছিলাম তখন ফারিয়া কল দিল।ইস আজ তো ফারিয়ার সাথে দেখা করার কথা ছিল।ফোন রিসিভ করে আমার আসতে একটু দেড়ি হবে সেটা বলল তার আগেই ফারিয়া বলল
“নেহাল এখনি সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসো তো।”
“হাসপাতালে?কারো কি কিছু হয়েছে নাকি?”
“বড় আব্বু গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে।তুমি এখনি আসো।”
“আচ্ছা আমি এখনি আসছি।”
রেডি হয়ে চলে যাওয়ার সময় দিয়া বলল
“ভাইয়া কোথায় যাচ্ছো?”
“হাসপাতালে।”
“কারো কি কিছু হয়েছে নাকি?”
“ভাবির আব্বু এক্সিডেন্ট করেছে।আমি যাচ্ছি তুই আম্মুকে বলে দিস।”
হাসপাতালে এসে নিচ তলা থেকে জানতে পারলাম ভাবির আব্বু চতুর্থ ফ্লোরে আছে।চতুর্থ ফ্লোরে গিয়ে দেখি ভাবির আম্মু ফারিয়ার পাশে বসে কান্না করছে।সাথে আরো কিছু রিলেটিভ।আমাকে দেখে ফারিয়া দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল
“নেহাল বড় আব্বুর অবস্থা নাকি বেশি ভালো না।”
বড় একটা অপারেশন করতে হবে।
“ওনার কিছু হবে না।তুমি শান্ত হও আমি দেখছি।”
ফারিয়াকে রেখে ডক্টরের কাছে গেলাম।আঙ্কেলের এখন কি অবস্থা সেটা জানতে।আরে রাসেল ভাই এইখানে।রানার বড় ভাই।ওনাকে দেখে বললাম
“ভাইয়া আপনি এইখানে?”
“হ্যা এইখানে নতুন জয়েন করেছি।তুমি এইখানে কি করছো?”
আঙ্কেলকে দেখিয়ে বললাম
“ওনি নিলয় ভাইয়ার শ্বশুর।আচ্ছা ভাইয়া ওনার এখন কন্ডিশন কি?”
“তেমন একটা ভালো না।ইমেডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে।”
“তাহলে অপারেশন না করিয়ে এইখানে রেখেছেন কেনো?”
রাসেল ভাই কিছু বলবে তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।দেখলাম ভাইয়া কল করেছে।কল রিসিভ করতেই ভাবির কান্না শুনতে পেলাম।
“নেহাল আমার আব্বু ঠিক আছো তো?”
“হ্যা ভাবি ঠিক আছে।আমি হাসপাতালেই আছি।আপনি চিন্তা করবেন না।ভাইয়াকে ফোনটা দেন তো।”
“হ্যা নেহাল বল।”
“ভাইয়া ভাবির আব্বুর অবস্থা বেশি ভালো না। ভাবিকে এখন এইসব কিছু বলার দরকার নেই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।আমরা রাতের ফ্লাইটে রওনা হচ্ছি ততক্ষণ তুই ওনাকে দেখে রাখিস।”
“সমস্যা নেই আমি আছি এইখানে।আচ্ছা ভাইয়া তোমার সাথে একটু পরে কথা বলছি।”
ডক্টরের কাছে জানতে পারলাম..
#চলবে…