তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব–৫০ Writer তানিয়া শেখ

0
729

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫০
Writer তানিয়া শেখ

মাতভেই কদিন ধরে লক্ষ্য করছে ইসাবেলা গুম মেরে আছে। সারাদিন কী যেন ভাবে। মুখশ্রীতে রাজ্যের বিষণ্নতার প্রলেপ পড়েছে। মেয়েটা শান্ত শিষ্ট হলেও একেবারে নির্বাক মূর্তির মতো থাকে না। মাতভেইর সাথে গল্প করতে বসলে চঞ্চলা কিশোরি হয়ে ওঠে। আজকাল ও আর তেমন কথা বলছে না। বেনাসের মেয়ে আর ওর দাসীর সাথেও আগে বেশ মিশতো, সময় কাটাতো। এখন রুম ছেড়েই বেরোচ্ছে না। ওরা ডাকলেও অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে শুয়ে আছে রুমের এককোনায়। অসুস্থ ও ঠিকই, কিন্তু রোগটা দেহের থেকে মনের বলে মনে হচ্ছে বেশি। প্রশ্ন করলে মলিন মুখে হেসে ভিন্ন কথা তোলে। যেন এড়িয়ে যেতে চায় প্রশ্নের জবাব। শুধু মাতভেই নয়, মাদাম আদলৌনাও ইসাবেলার এই পরিবর্তন খেয়াল করেছেন। আজও ভিক্টোরিজা ডেকে পাঠাল ইসাবেলাকে। বাড়ির মালিকের মেয়ের ডাক প্রতিদিন তো আর উপেক্ষা করতে পারবে না। ইসাবেলা যেতে মাদাম ছেলেকে বললেন,

“ইসাবেল যেন কেমন চুপচাপ হয়ে আছে, খেয়াল করেছ?”

মাতভেই মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়। মাদাম হাতের শুকনো কাপড়টা ভাঁজ করে বললেন,

“আমি কাল জিজ্ঞেস করছিলাম। বলল, শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ডাক্তার দেখানোর কথা তুলতে বলল, দুদিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। মেয়েটাকে মাঝে মাঝে আমি বুঝে উঠি না। মনে হয় কত সরল আবার পরক্ষণেই দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে ও।”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মাদাম। কাপড়গুলো একপাশে রেখে রান্নাঘরে ফিরে গেলেন। মাতভেই একা বসে রইল বিছানার ওপর। হাতে একটা কবিতার বই। বইটা আর পড়া হলো না। এই ক্ষুদ্র জানালা বিশিষ্ট খুপরি মতো রুমে দিনের পর দিন বিছানায় শুয়ে বসে মাতভেইর মন এমনিতেই ভার হয়ে আছে। ইসাবেলার ভাবুক, বিষণ্ণ মুখ আর শূন্য চাহনি ওর ভেতরের ভারকে আরো ভারী করে তোলে।

প্রায় মিনিট পনেরো পর ইসাবেলা ফিরে এলো। দরজা খুলে এক চিলতে শুকনো হাসি হাসল মাতভেইর চোখে চোখ পড়তে। তারপর নিচে পাতা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। এইটুকু আসতে যেন হাঁপিয়ে উঠেছে। ওর পিঠ মাতভেইর দিকে। দুটো মানুষ এই ছোট্ট রুমে, অথচ কঠিন এক নীরবতা নামে সেখানে। অসহ্য লাগল মাতভেইর। কথা বলার জন্য ছটফট করে ওঠে।

“বেল?”

“হুঁ?” পাশ ফিরল না ইসাবেলা। মাতভেই পা টেনে ওর দিকে ঘুরে বসল।

“কী হয়েছে তোমার, বেল? মিথ্যা বোলো না কিছু হয়নি। আমি জানি__”

“পাপ! কোনো স্বাভাবিক মানুষ কি জেনেশুনে পাপকে ভালোবাসতে পারে মাতভেই?”

ইসাবেলা সোজা হয়ে শোয়। ওর দৃষ্টি সিলিংএ স্থির। মাতভেই কিছুক্ষণ চুপ করে বলল,

“ভালোবাসা কি পাপপুণ্য দেখে, বেল? ভালোবাসা কেবল ভালোবেসে যায়। এ হচ্ছে হৃদয়ঘটিত ব্যাপার। বাচবিচার করা তো মস্তিষ্কের কাজ।”

ইসাবেলা চুপ করে রইল আবার। মাতভেই ওকে ঠিক বুঝে উঠছে না। হঠাৎ এ ধরনের কথা কেন বলছে? কিন্তু ওর মধ্যকার হতাশা ও আন্দাজ করতে পারে।

“বেল, কাছে এসো।” হাত বাড়িয়ে ডাকল মাতভেই। ইসাবেলা ওর হাতের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর উঠে এসে বসল বিছানার পাশের মেঝেতে, ঠিক মাতভেইর সামনে। মাতভেই ওর মাথার ওপর হাত রেখে পরম স্নেহের সাথে শুধায়,

“কেন এমন হয়ে যাচ্ছো? কোন কারণে এত বিষণ্ণতা তোমার মধ্যে? তোমার এই নীরবতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, বেল। বোলো না কী হয়েছে?”

ছলছল করে ওঠে ইসাবেলার দুচোখ। ঠোঁট প্রকম্পিত হয়। মাতভেইর হাতটা মাথার ওপর থেকে এনে দুহাতের মাঝে নিলো। মুখটা হাতের ওপর রেখে অশ্রুরুদ্ধ গলায় বলল,

“আচ্ছা মাতভেই, ধরো কেউ এমন একজনকে ভালোবাসে যাকে এই সমাজ, ধর্ম স্বীকৃতি দেবে না। তার পরিবার মেনে নেবে না। তার মস্তিষ্ক বার বার সাবধান করছে, ও ঠিক নয় ওর জন্য। যে পুরুষের, যে জীবনের স্বপ্ন ও আজীবন দেখে এসেছে ও সে নয়। ও এক ঈশ্বরদ্রোহী, অভিশপ্ত প্রাণ। কিন্তু হৃদয় বলছে ভিন্ন কথা। সে সমাজ, ধর্ম মানতে নারাজ। সে পৃথিবীর সবকিছু তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে রাজি ওই মানুষটার জন্য, এমনকি ওই স্বপ্নগুলোও ভুলতে চায় যা ও এতদিন দেখে এসেছে। স্বেচ্ছায় পাপের বিষ গ্রহন করতে রাজি আজ সে। অভিশপ্ত হওয়ার ভয়ও আজ আর নেই। মস্তিষ্ক আর হৃদয়ের এই শীতল যুদ্ধে সেই মানুষটা বড্ড কাহিল হয়ে আছে মাতভেই। কিছুতেই বুঝতে পারছে না কার পক্ষ নেবে। একদিকে ধর্ম, পরিবার, সমাজ অন্যদিকে ভালোবাসা। বিষম এই দোটানায় পড়লে তুমি কি করতে মাতভেই? কোন পক্ষকে বেছে নিতে?”

মাতভেই ওর কথাগুলো ভাবল চুপচাপ। ইসাবেলা দুচোখ মুদে আছে। নীরবতা ভেঙে মাতভেই বলল,

“যে ভালোবাসা আমাকে আমার আপনজন, ধর্ম ও আপন স্বপ্ন থেকে বিচ্ছিন্ন করে তার পক্ষ আমি নেবো না, বেল। হৃদয় সবসময়ই অবুঝ হয়। ইতিহাস সাক্ষী, এই অবুঝ, একগুঁয়ে হৃদয়টার কারণে কত প্রেমিক উন্মাদ হয়েছে, কত প্রেমিকা বিষে বিষাক্ত হয়ে ত্যাগ করেছে প্রাণ বায়ু। এক ভালোবাসার কারণে তাঁরা সব ভুলেছে। এমনকি নিজেকেও। আমি চাই তুমি অবুঝ হৃদয়ের কথা শুনবে না বেল। তোমার মস্তিষ্ক যা বলছে তাই ঠিক। ও তোমার জন্য ঠিক নয়।”

মাথা তুলে তাকাল ইসাবেলা। মুখ জুড়ে অপ্রসন্ন অপ্রস্তুতভাব। মাতভেই হাতটা আবার ওর মাথায় রাখল।

“আমি জানি, এতক্ষণ যার কথা বলছিলে সেই মানুষটা তুমিই।”

“আমি এখন কী করব মাতভেই? তুমি বলছ মস্তিষ্কের কথা শুনতে। মস্তিষ্ক বলছে ও আমার জন্য ঠিক নয়, কিন্তু ওকে ছাড়া আমার পৃথিবী যে শূন্য মনে হয়। বেঁচে থাকাটা অর্থহীন লাগে। আমার বড়ো কষ্ট হচ্ছে মাতভেই। দমবন্ধ হয়ে আসছে। ভগ্নহৃদয়ে বেঁচে থাকা মৃত্যুসম মাতভেই, মৃত্যুসম।”

ইসাবেলা চোখের পানি ছেড়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। মাতভেইর বড়ো খারাপ লাগল ইসাবেলার দুরবস্থা দেখে। গভীর ভাবনায় বুঁদ হলো। ইসাবেলার নীরব কান্না আস্তে আস্তে শব্দ সৃষ্টি করে। বড়ো অসহায় লাগছে ওর। জীবন এত জটিল কেন? কেন ভালোবাসতে গিয়ে ও এত ব্যথা পায়। ভালোবাসাতে কি সুখ নেই? মাতভেইর হাতের স্পর্শে সিক্ত চোখে তাকাল। বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চোখ মুছে দেয় মাতভেই। ইসাবেলার ডান হাত মুঠোর মধ্যে নিয়ে বলল,

“আমিও প্রেমিক। প্রেমের পক্ষে থাকা উচিত আমার। তুমি পবিত্রপ্রাণা, সরলা ও নিষ্পাপ, বেল। যে ভালোবাসা তোমার পবিত্রতা, সরলতা আর নিষ্পাপতা ক্ষুণ্ণ করে তার পক্ষ নেওয়ার পরামর্শ আমি কিছুতেই দিতে পারি না। তবে হ্যাঁ, তাকে যদি শুধরানোর কোনো পথ থাকে তবে একটা পথ আমি দেখি। ভালোবাসা পবিত্র অনুভূতি বেল। লোকে বলে ভালোবাসা স্বয়ং ঈশ্বর। ঈশ্বরের ক্ষমতা অপরিসীম। তিনি সব অসাধ্য সাধন করতে পারেন। ভালোবাসাও এই একই গুনে গুণান্বিত। তুমি কি তাকে তোমার ভালোবাসা দিয়ে বদলাতে পারবে, বেল? তোমার পবিত্র, নিষ্পাপ ভালোবাসা দিয়ে তার পাপ ও শাপমোচন করতে পারবে? যদি এই দৃঢ়তা থাকে তবে আমি বলব, ভালোবাসো তাকে। সব ত্যাগ করে নয়, সব একপাশে রেখে কেবল তাকেই প্রাধান্য দাও। অতীতে যে স্বপ্ন তুমি দেখেছিলে, আজ ওই ব্যক্তিটাকে সেই স্বপ্ন বানিয়ে নাও। স্বপ্ন দেখলেই কিন্তু পূরণ হয় না, বেল। স্বপ্ন পূরণ করতে ধৈর্য, একাগ্রতা, সাধনার ভীষণ দরকার হয়। স্বপ্ন পর্যন্ত পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হবে শতসহস্র কণ্টকাকীর্ণ পথ।”

“সব পারব মাতভেই। নিকোলাসের পাপ ও শাপমোচন করতে এবং ওকে আমার করতে আমি সব পারব। আমি ওকে আমার প্রিয় স্বপ্ন বানিয়ে নেব। সেই স্বপ্ন পূরণে যে কোনো কঠিন পথ পাড়ি দিতে রাজি। তুমি ঠিকই বলেছ, ভালোবাসা ঈশ্বরের আরেক রূপ। ভালোবাসা সব পারে। আমি প্রমাণ করে দেবো সেটা।”

“নিকোলাস, এই তার নাম তাহলে?”

ইসাবেলা লজ্জায় অধোবদন হয়ে যায়। মাতভেই মুচকি হাসল।

“আমাকে বলবে না তার সম্পর্কে?”

“এখন না।”

“কেন?”

“কারণ এখন আমি অন্য একজনের কথা বলব। তোমার জনের।” চোখে তুলে তাকাল ইসাবেলা। মাতভেই ভুরু কুঁচকে বলল,

“আমার জনের?”

“হ্যাঁ, ওর নাম তাতিয়ানা, মাতভেই। আমার বড়ো বোন তাতিয়ানা।”

বিস্ময়াহত হয়ে যায় মাতভেই। গলা দিয়ে সহসা কথা বেরোলো না। কোনো রকমে বলল,

“কীভাবে বুঝলে?”

“ওই যে সেদিন ছবি দেখালে। ওই ছবি দেখেই চিনেছিলাম৷ সেদিন তোমাকে বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম সময় সুযোগে বলব। তোমার ভালোবাসার মানুষটিই আমার বড়ো তাতিয়ানা, মাতভেই।”

প্রিয়তমার সন্ধান পাওয়ার আনন্দে ভাষা হারিয়ে বসে মাতভেই। ওর চোখের কোণে জমা হতে থাকে অশ্রু। অবশেষে সে প্রিয়তমার সন্ধান পেল! কিন্তু পরক্ষণেই নিজের অবস্থার কথা ভেবে শঙ্কিত হয়। তাতিয়ানা কি মেনে নেবে এই অবস্থায় ওকে? ইসাবেলার নজর এড়ায় না সেই শঙ্কা। শক্ত করে মাতভেইর হাতটা ধরে। কিছু বলবে তখনই দরজা খুলে গেল। মাদাম আদলৌনাকে রুমে ঢুকতে দেখে হাত ছাড়িয়ে নেয় মাতভেই। মাকে ও তাতিয়ানার কথা বলেনি। এখনো প্রস্তুত নয় বলার জন্য। ইসাবেলা ওর মুখ দেখে বুঝতে পারল বোধহয়। উঠে দাঁড়ায় ও। মাদাম আদলৌনা ওদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। ইসাবেলা হেসে এগিয়ে এসে বলল,

“আমার একটু দরকার ছিল জুজানির সাথে। আমি আসছি।”

ও যেতে মাদাম আদলৌনা ছেলেকে দেখলেন। নির্নিমেষ চোখে চেয়ে আছে সামনে।

“কিছু কি হয়েছে বাবা?”

“না তো।”

গলা ঝেড়ে জবাব দিলো মাতভেই। দরজার বাইরে একজন চাকর মাদামকে ডাকলেন। বাড়ির কর্ত্রী জরুরি কাজে তলব করেছেন। ছেলের চিন্তিত মুখ দেখে তাঁর মনে অনেক প্রশ্ন জাগলো। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুই বলতে পারলেন না। আগত চাকরের সাথে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মা বেরিয়ে যেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বুজল মাতভেই। বুকের ভেতরটা উত্তেজনায় অস্থির। অস্ফুটে বলল,

“তাতিয়ানা, তাতিয়ানা।”

সেদিনের পর নিকোলাসের সাথে ইসাবেলা দেখা করেনি। নিজেকে রুমবন্দি করেছিল যেন নিকোলাসের সাথে দেখা না হয়। নিকোলাস যে ওর সাথে দেখা করার খুব চেষ্টা করেছে তা ইসাবেলা বেশ ভালোভাবেই জানে। রাতে রুমের ভেতর সোঁদা মাটির গন্ধও পেয়েছিল। মাদাম আর মাতভেইর উপস্থিতির কারণে ওই রুমে নিকোলাস স্বরূপে আবির্ভূত হয়নি। ইসাবেলা ঘুমের ভান ধরে পড়েছিল। তখন নিকোলাসের সামনে যেতে তৈরি ছিল না ও। আজ ইসাবেলা পুরোপুরি তৈরি। নিকোলাসকে ভালোবাসবে ও। ভালোবাসার শক্তিতে ওই পাপাত্মাকে পবিত্র করবে। ইসাবেলা সতর্কে ভাঁড়ার ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সামনে আবছা আঁধার। একটু আগে একটা কাজে জুজানি ওকে ভাঁড়ার ঘরে যেতে বলেছিল। ইসাবেলা অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে মানা করে এসেছে। ও জানে ওকে ভাঁড়ার ঘরে পাঠানোর প্লান নিকোলাসের। মানুষের মস্তিষ্কের ওপর ও সহজে প্রভাব খাটাতে পারে। ঠিক এই কারণেও এই কয়দিন দূরে ছিল ইসাবেলা। কিন্তু আজ মাতভেই ওকে পথ দেখিয়েছে। ওর দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটাতে সাহায্য করেছে। এখন নিকোলাসের মুখোমুখি হতে আর ভয় নেই। ওকে ভালোবাসতে ভয় নেই।

ভাঁড়ার ঘরের ভেতরে মিশমিশে অন্ধকার। নিজের অবয়বই দেখতে পাচ্ছে না। অন্ধের মতো এদিক ওদিক হাতরে দরজার পাশে এসে দাঁড়ায়। এই বাড়িতে দিনের বেলাতে একমাত্র এখানেই নিকোলাসের সাথে দেখা করা নিরাপদ। এই জন্যই এটা ওটার ছুতো দিয়ে এই ঘরে পাঠাতে চায় ইসাবেলাকে সে। ইসাবেলা দেরি করে হলেও আজ এসেছে এখানে। নিকোলাস কি জানবে ওর আগমনের খবর? কেন যেন ওর মন বলেছে এখানেই এলেই নিকোলাসকে পাবে। ও অধীরভাবে অপেক্ষা করছে। হঠাৎ সেই পরিচিত গন্ধটা পেল। বুকের ঢিপঢিপানি বেড়ে যায় সাথে সাথে। গন্ধটা ক্রমশ কাছে আসছে। ইসাবেলা অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। ও চোখ বন্ধ করে অনুভব করল নিকোলাসকে। খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে নিকোলাস। খানিক সেই নৈঃশব্দ। ইসাবেলার কান দুটো কাতর হয়ে আছে একবার প্রিয় গলার স্বরটা শুনবে বলে। কিন্তু হলো উলটো। ক্ষিপ্র গতিতে ঘাড় ধরে কাছে টেনে আনল নিকোলাস। ভীষণ রেগে আছে। ইসাবেলা টের পাচ্ছে সেটা। নিকোলাসের মুখ ওর দিকে নেমে এলো। দুজনের ঠোঁটের মাঝে ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁক। ইসাবেলা চোখ মেলতে একজোড়া রক্তজবা চোখের সম্মুখীন হয়। ওর ঘাড়ের ওপর নিকোলাসের হাতটা শক্ত হলো। ব্যথায় ককিয়ে উঠল ইসাবেলা,

“নিকোলাস!”

“বেলা, আমাকে উপেক্ষা করার শাস্তি কতটা ভয়াবহ হয় জানো না তুমি।” কর্কশ গলায় বলল নিকোলাস। ইসাবেলা ফিসফিসিয়ে বলল,

“তাহলে জানাও।”

“হুঁ?” ভুরু তুলে ওর দিকে তাকিয়ে রইল নিকোলাস। ধীরে ধীরে ঠোঁটের কোণে জেগে ওঠে সম্মোহনী হাসি। ঘাড় ছেড়ে ইসাবেলার কোমরে হাত রাখে। কানের কাছে মুখ এনে চাপা গলায় বলল,

“বড্ড সাহস বেড়েছে তোমার, বেলা। এত সাহস মোটেও ভালো নয়। পস্তাবে পরে।”

মুচকি হেসে পায়ের পাতায় ভর করে দুবাহুতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ইসাবেলা। তারপর ডান গালে চুমো দিয়ে কানে কানে বলল,

“কোনোদিন না, কোনোদিন না।”

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here