তিমিরে ফোটা গোলাপ পর্বঃ ০৬

0
480

তিমিরে ফোটা গোলাপ
পর্বঃ ০৬
Writer Taniya Sheikh

এখানের আসার পর অব্দি দিনে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়ার হুকুম জারি করেছিলেন মাদাম। ইসাবেলার শরীরও বেশ সায় দিয়েছিল তাতে। দুপুর বারোটা বাজতে চোখ বুঁজে আসত। আজ একটুও ঘুম এলো না চোখে। সারাক্ষণ মাদামের সাথে সাথে ছিল। অচেনা অচেতন যুবকটিকে সুস্থ করে তোলার ব্রত নিয়েছেন মাদাম। ইসাবেলা যত তাঁকে দেখছে অবাক হচ্ছে। একজন গম্ভীরা, রুক্ষস্বরা রমণীকে এতদিন দেখেছে সে। আজ নতুন এক মাদামকে দেখছে। পরিচিত, অপরিচিত তাঁর কাছে কোনো ব্যাপার না। তিনি যেন সেবার ব্রতকেই ধর্ম মনে করেন। সেদিক থেকে পুরোপুরি ধার্মিকা বলা যায় মাদামকে। ইসাবেলা মুগ্ধ হয়। মাদামের প্রতি শ্রদ্ধা আরো বাড়ে।
সাঁঝেরবাতি জ্বলে উঠেছে ঘরময়। মাদাম জংলী গাছ-গাছরা দিয়ে কিচেনে কীসব পথ্য তৈরি করছেন। চিন্তাতে তাঁর চোখের কোণের চামড়া আরো কুঁচকে যাচ্ছে। অজানা অচেতন যুবকটাকে লোকের সাহায্যে ঘরে এনে তুলেছেন। অনেক চেষ্টা করেও তার জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। যে তিনজন যুবকটির শরীর বহন করে এনেছিল, ওদের একজন বলছিল,

“মারা গেছে বোধহয়।”

মাদাম যুবকটির নাড়ি পরীক্ষা করে বললেন,

“না, মরেনি। স্নায়ু দূর্বল। ঘন্টা খানেকের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে।”

ঘণ্টা খানেকের স্থানে পুরো একটা দিনই শেষ হওয়ার পথে, কিন্তু যুবকের জ্ঞান ফেরার নামগন্ধ নেই। মাদাম খুব চিন্তিত। একটু পর পর দেখতে যান বসার ঘরে শায়িত অচেতন যুবকটিকে। ইসাবেলা দুপুরে একবার ডাক্তার ডাকতে বলেছিল। শুধু সে নয়, যে লোকগুলো যুবকটাকে ধরে এনেছিল, তারাও ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেয়। রেগে তাড়িয়ে দেন তাদের মাদাম। মুহূর্তে যেন ক্ষ্যাপাটে রূপ ধারণ করেন। লোকগুলো যেতে যেতে,”চাঁড়াল বুড়ি” বলে গালমন্দ করেছে। ইসাবেলাকে অবশ্য চোখ রাঙানি ছাড়া আর তেমন কিছু বলেনি মাদাম। মাদাম কিচেন থেকে সোজা গেলেন ওর ঘরের দরজার সামনে। ইসাবেলা লেপ মুড়ি দিয়ে জানালার পাশে বসেছিল। মাদাম বললেন,

“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ ছেলেটার পাশে বসো তো ইসাবেলা। আমি এই যাব আর ফিরব।”

একা একটা যুবকের সাথে খালি ঘরে থাকতে হবে জেনে ভয় ভয় করল ইসাবেলার। হোক না অচেতন, তবুও তো সে পুরুষ! মাদাম ফিরে আসার আগেই যদি জ্ঞান ফেরে? মাদাম বোধহয় বুঝলেন ওর ভয়। অভয় দিয়ে বললেন,

“ভয় পেয়ো না। ওর জ্ঞান ফেরার আগেই ফিরে আসব। এসো।”

মাদামকে আর না করতে পারে না সে। তাঁর চিন্তা নিবারণ করতে পারলেই খুশি হয় ইসাবেলা। বিছানা ছেড়ে উঠে এলো। মাথার স্কার্ফটা ঠিকঠাক করে নেয়। ওদের বাড়িতেও মেয়েদের মাথায় স্কার্ফ পরার চল আছে। তবে নিয়ম করে সব সময় পরতে হতো না। এই গ্রামের সব মেয়েরাই মাথায় স্কার্ফ পরে। সময় সময়ই পরে। আজ ইসাবেলার পরনে মেরুন রঙের উলের ব্লাউজ আর নিচে নীল রঙের স্কার্ট। স্কার্ট ঝুলছে গিঁটের উপরে। পায়ে কালো মোজা। বসার ঘরের তাপমাত্রাতে এই কাপড়ে শীত অনেকটা বশ মানে। সে গিয়ে বসল যুবকের সামনের ছোট্ট টুলটার ওপর। যুবক সটান হয়ে শুয়ে আছে সমান গদির সোফাতে। ইসাবেলার একটু পেছনে জ্বলছে ফায়ারপ্লেসের আগুন। দু’হাত কোলের উপর রেখে জানালার বাইরে ঘাড় ঘুরিয়ে আছে। যুবকের নিঃশ্বাস পড়ছে খুব আস্তে। ইসাবেলা সতর্কে সেই শব্দ শুনছে। এই ঘরে, এই অজানা, অচেনা যুবকের অচেতন দেহের সামনে বসে থেকে বুক ঢিপঢিপ করছে।

তুষার পড়ছে বাইরে। সন্ধ্যা উতরে গেছে। পাশের বাড়ির লনে জ্বলা বাতির ক্ষীণ আলো চারিদিকের আঁধারিয়া দুনিয়ায় যেন ছোট্ট এক টুকরো চাঁদ। ওই আবছা আলোতে চেয়ে ইসাবেলার গা ছমছম করে ওঠে। ধীর পায়ে উঠে দাঁড়ায়। জানালার মোটা পর্দা ফেলতে এ ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল। তখনই ইসাবেলা টের পায় বাতি নিভানো ছিল এতক্ষণ এই ঘরের। নেভানো নয়, এই ঘরের বাতিটি বোধহয় তেল ফুরিয়ে গেছে। কিচেনের বাতির আলো ছিটকে পড়েছে বসার ঘরের সামনে। ওর চোখ পড়ল অচেতন যুবকের দিকে। মৃদু আলো এসে পড়েছে যুবকের মসৃণ কালো চুলে। হাতদুটো বুকের উপর করে শায়িত। দেখে মনে হয়, কী গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন! ইসাবেলা ধীর পায়ে এসে আগের জায়গায় বসল। মনোযোগ দিয়ে যুবকটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথায় ঘন কালো মসৃণ চুল, লম্বাটে মুখ, দাড়িবিহীন শক্ত লম্বা চোয়াল, উঁচু নাক, প্রশস্ত কপাল আর ঠোঁট দু’টো যেন পুরো মুখটার সাথে মানানসই। ইসাবেলার দৃষ্টি যুবকের বোঁজা নেত্র পল্লব, ঘন চিকন ভ্রু’র উপর। যুবকের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে কখন যে ঝুঁকে গেছে টেরই পেল না। ওদের দুইজনের মধ্যে বেশ দূরত্ব। তবুও ইসাবেলা যুবকের নিঃশ্বাসের গতি পরিবর্তন টের পেল। নীরব ঘরের মধ্যে শব্দটা অদ্ভুত আলোড়ন ফেলে দেয়। নিজের অজান্তে ভ্রু কুঁচকে ওঠে ইসাবেলা। ঠিক তখনই দৃষ্টি স্থির হয় যুবকের ঠোঁটের উপর। স্মিত হাসি লেগে আছে ও ঠোঁটের কোণে। তৎক্ষনাৎ পদ্মনেত্র খুলে তাকাল যুবক। ইসাবেলা শ্বাস নিতে ভুলে যায়। কিছু আছে ওই দৃষ্টিতে। সম্মোহিত হয়ে রইল সে। নিজের হৃৎস্পন্দনের গতি শুনতে পাচ্ছে। দৃষ্টি সরিয়ে ফেলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। চোখদুটো যেন পাথর হয়ে গেছে। বাইরের দরজা খোলার শব্দ হতে যুবকের চোখের পলক পড়ে। ইসাবেলা স্পষ্ট দেখতে পায় ও চোখের চাহনির বদলে যাওয়া। এখন ওই চোখে নির্লজ্জ চাহনি, ঠোঁটের কোনের দুষ্টু হাসি। ধড়পড় করে উঠে এক ছুটে বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ইসাবেলা। মাদাম ডলি ছাতাটা বন্ধ দরজার পেছনে ঝুলিয়ে ইসাবেলাকে দেখলেন। হাঁফাচ্ছে মেয়েটা। যেন এইমাত্র মাইলকে মাইল দৌড়ে এলো।

“কী হয়েছে ইসাবেলা?” মাদাম জিজ্ঞেস করলেন। ইসাবেলা আঙুল বসার ঘরের দিকে দেখিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করল। গলা দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। মাদাম শঙ্কিত হয়ে তাড়াতাড়ি গেলেন সেদিকে। যুবক উঠে বসেছে। পিঠ দেয়ালে ঠেকানো, চোখ বোঁজা। বড্ড দুর্বল দেখাচ্ছে তাকে। মাদাম টুলটা এগিয়ে বসলেন সামনে।

“এখন কেমন বোধ করছ?”

যুবক ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। কিছুক্ষণ কোনো কথায় সে বলে না। মাদামের চিন্তিত মুখটা সে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখছে। যেন বুঝার চেষ্টা করছে কিংবা অন্য কিছু। মাদাম আবার জিজ্ঞেস করলেন,

“কেমন বোধ করছ এখন?”

“ভালো।” আস্তে করে জবাব দিলো। গলার স্বরে অনুমান করা যায় সে কতটা দুর্বল। মাদাম যুবকের নাড়ি পরীক্ষা করলেন আরেকবার। স্বাভাবিক নয়। যুবকটির মুখের দিকে চেয়ে বললেন,

“তোমার নাড়ির গতি স্বাভাবিক না। দুর্বল শরীর। পুরোপুরি বিশ্রামের প্রয়োজন।”

যুবকটি নীরবে শুনলো কেবল। মাদাম উঠে চলে গেলেন কিচেনে। ফিরলেন এক বাটি স্যুপ এবং ভেষজ ওষুধ নিয়ে। কোনো প্রশ্ন না করেই চুপচাপ খেয়ে নিলো যুবক। মাদাম সন্ধানী চোখে তাকে দেখতে লাগলেন। একসময় নীরবতা ভেঙে তিনি প্রশ্ন করলেন,

“তোমাকে দক্ষিণের ঝিরির পাড়ে অচেতন অবস্থা পেয়েছি। তোমার সাথে খুব সম্ভবত একটা ঘোড়া ছিল। অশ্বরব শুনতে পেয়েছিলাম আমি। পরে অনেক খুঁজেও ঘোড়াটাকে আর পাওয়া গেল না। বাড়ি কোথায় তোমার? ওই ঝিরির পাশে কী করে পৌঁছালে। ওদিক দিয়ে তো গ্রামের বাইরে যাওয়ার পথ নেই। এই গাঁয়ের লোক তোমাকে চেনে না। তাহলে ওখানে কীভাবে এলে?”

প্রৌঢ়ার এত প্রশ্নে যুবকটি খাওয়া বন্ধ করে মাথা নিচু করে রইল। মাদামের দৃষ্টি স্থির তার উপর। যুবক চোখ তুলে তাকাল মাদামের দিকে। ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাসি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল,

“ধন্যবাদ আপনাকে, মাদাম। কৃতজ্ঞ আমি আপনার কাছে। জি, আমি এই গাঁয়ের না। পুব দিক থেকে ফিরছিলাম। সঙ্গে ছিল আমার ঘোড়া। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়াতে ঘোড়াটা অস্থির হয়ে ওঠে। ভুল করে ও’পথে চলে গিয়েছিলাম। তারপর কী ঘটেছে আমার ঠিক মনে নেই। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি এখনই চলে যাব।”

“হুম। কীভাবে যাবে? তোমার ঘোড়াটা তো লাপাত্তা।”

“খুঁজতে হবে ওখানে গিয়ে। না পেলে অন্য ব্যবস্থা করব।”

“এই রাতে জঙ্গলে ঘোড়া খুঁজতে যাবে?”

“আর উপায় কী বলুন? তাছাড়া আমাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে দ্রুত।” এইটুকু বড়ো কষ্টে বলল সে। দেয়ালে সম্পূর্ণ ভর দিয়ে বসল ফের।

মাদাম মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ান। জানালার কাছে গিয়ে পর্দাটা একটু ফাঁক করে বাইরে চেয়ে বললেন,

“বাইরে খুব তুষার পড়ছে। এরমধ্যে এই অসুস্থ শরীরে তোমাকে কী করে ছাড়ি বলোতো?”

ঘুরে তাকিয়ে দেখেন যুবক গম্ভীর মুখে কিছু ভাবছে। মাদাম আবার গিয়ে বসলেন টুলের উপর। যুবকটি প্রসন্ন রোগা চোখে তাকাল। মাদামের ভারি মায়া হয়। এমনিতে তিনি কারো সামনে নিজের আবেগ, অনুভূতিগুলোকে দেখান না। আজ তেমনই কঠিন মুখাবয়বের মুখোশ পড়ে বললেন,

“এই শরীরে তোমাকে আমি ছাড়তে পারব না বাছা। তুমি বরং আজ রাতটা আমার এই ঘরেই কাটিয়ে যাও।”

“না না, তা কী করে হয়। এমনিতেই অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। অচেনা, অজানা এই আমার জন্য অনেক করেছেন আপনি। আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।”

মাদাম মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালেন। এঁটো পাত্রের ট্রেটা তুলে বললেন,

“থামো তো বাছা। এই গাঁয়ের লোককে সুস্থ করে তোলায় আমার দায়িত্ব। ওসব কৃতজ্ঞতা, টিতজ্ঞতা বলে আমার দায়িত্বকে ছোটো করো না। ঈশ্বর তোমাকে আমার দুয়ারে সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছেন। আমি সাহায্য না করলে আমার উপর তিনি বেজার হবেন। আজ বাদে কাল মরে যাব। ঈশ্বরকে বেজার করে মরতে চাই না। তুমি বাপু আজ এই ঘরে থাকবে। কাল সকাল হলে চলে যেয়ো। আমার তখন আপত্তি থাকবে না।”

যুবক না করতে গেলে মাদাম একরকম উপেক্ষা করে বসার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। ইসাবেলা বসার ঘরে ঘাড় গুঁজে বসে ছিল। মাদাম আর যুবকের কথা কিচেনে বসেই শুনেছে। যুবকটি আজ রাতে এই বাড়িতে থাকবে জেনে অস্বস্তি হচ্ছে। অস্বস্তি হওয়ার কারণ তখনকার বিব্রতকর পরিস্থিতি। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। অত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যুবকটাকে দেখার কী ছিল?

“জীবনে ছেলে দেখিসনি? পিটারকে তো কত দেখলি। তাতে আশ মেটেনি। ওভাবে যুবকটাকে কেন দেখতে গেলি? কেন?” নিজেকে তিরস্কার করে মনে মনে। ইসাবেলার মনে পাপবোধ জন্মে। পিটার ছাড়া আর কাউকে ওভাবে দেখল বলে মনে মনে নিজের উপর চটে যায়। মাদাম ওর মলিন মুখশ্রী দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

“কী হলো তোমার আবার? মন খারাপ কেন?”

ইসাবেলা সাথে সাথে অপ্রস্তুত হেসে বলল,

“উম.. না, এমনিতেই।”

মাদাম আর কিছু বললেন না। ওকে রাতের খাবার দিয়ে নিজের ঘরে গেলেন। একটু পর মোটা লোমশ কম্বল হাতে বসার ঘরের দিকে যান। ইসাবেলা কিচেনের চেয়ারে বসে। বসার ঘরের ফায়ারপ্লেস আর দেয়াল ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে তাদের কথাবার্তা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সে। মাদাম যুবকের ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাচ্ছেন। যুবকটি নিজের নাম নিকোলাস কুরিগিন জানায়। তার বাড়ি সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। ব্যবসায়িক কাজে পার্শ্ববর্তী শহরে যাচ্ছিল। সে আরো জানায়, তার স্নায়ুদৌর্বল্যের সমস্যা আছে। অতি ঠাণ্ডার কবলে পড়ে, দীর্ঘ পথ যাত্রার ধকলে অচেতন পড়েছে। মাদাম সব শুনে বললেন,

“আমার কাছে কিছু ভেষজ ওষুধ আছে। বোধকরি তোমার স্নায়ুদৌর্বল্য পুরোপুরি না সারলেও কমে যাবে। তুমি দু’দিন থাকো আমার বাড়ি। তোমাকে পুরোপুরি সুস্থ না করে আমি ছাড়ছি না।”

নিকোলাস এবার আর না করেনি। মাদামের কথা মেনে নিয়েছে। তাঁর চিকিৎসার উপর যুবকের আস্থা মাদামকে খুশি করে। ইসাবেলার অস্বস্তির মাত্রা বেড়ে গেল। এই নিকোলাস নামের অচেনা যুবকের সাথে এক ছাদের নিচে থাকতে হবে! মাদামকে বেরিয়ে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ায়। মাদাম এসে বললেন,

“ছেলেটা দু’দিন থাকবে। অসুস্থ খুব বুঝলে? এই অবস্থায় যেতে দিই কী করে?”

ইসাবেলা চুপচাপ শুনছে। মাদাম ওর দিকে চেয়ে বললেন,

“তোমার কী হয়েছে ইসাবেলা? গম্ভীর হয়ে আছো কেন?”

“ঘুম পাচ্ছে। আমি রুমে যাই মাদাম?”

মাদাম মাথা নাড়াতে ইসাবেলা কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো। কিচেন থেকে ওর রুমে যেতে বসার ঘর পড়ে। একপ্রকার দৌড়ে রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকে লাইট বন্ধ করে বিছানায় বসে। মাথার স্কার্ফ খুলে বিছানায় শোয়। গলা পর্যন্ত টেনে নিলো লেপ। অন্ধকারে একদৃষ্টে চেয়ে রইল ছাঁদের দিকে। কত কী ভাবল! পিটারের কথা, পরিবারের কথা, ভ্যালেরিয়ার কথা, মাদামের কথা তারপর আচমকা চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিকোলাসের সেই সম্মোহনী চাহনি। ও টের পায় ওর বুক ঢিপঢিপ করছে। খিঁচে চোখ বন্ধ করে লেপ মুড়ি দেয়। নিকোলাসের চাহনি ভুলতে ওর বেশিক্ষণ লাগে না। পিটারের ভাবনাতে উড়ে যায় আর সব ভাবনা। পিটারের মুখটা মনে করে আস্তে আস্তে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে। প্রায় রাতে ইসাবেলা পিটারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। আজও দেখল তেমন স্বপ্ন। পিটার ফিরে এসেছে। আবার নতুন করে বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়েছে। ওরা বিয়ের ওয়াদা শেষে পরস্পরকে চুম্বন করবে তখনই স্বপ্নটা ভেঙে যায়। বুকের উপর ভারী চাপ অনুভব করে। কারো ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে ও। ভয়ে দেহের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ইসাবেলা খুব চেষ্টাতে চোখ মেলে তাকায়। সমস্ত ঘরময় অন্ধকার। খুব কাছে জ্বলজ্বল করছে দু’টো চোখ। ওগুলো কীসের! মানুষের? না, মানুষের দৃষ্টি এমন তীক্ষ্ণ, হিংস্র হয় না। ইসাবেলা প্রাণপণে চেষ্টা করে চিৎকার করতে। কিন্তু গলা দিয়ে গোঁ গোঁ আওয়াজ ছাড়া কিছুই যেন বের হলো না। শরীর জড় পদার্থের মতো বিছানায় পড়া। ও দেখল হিংস্র চোখ দু’টো নেমে এলো ওর গলার কাছে। সামনের অন্ধকারে আর্ত বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে আছে ইসাবেলা। ঘাড়ের কাছে উঞ্চ দু’টো ঠোঁটের স্পর্শ পেতে শিউরে ওঠে। শিরায় শিরায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে একটা ভরাট গলার স্বর কানে এলো,

“বেলা, আমার বেলা।”

তারপরই সূঁচালো কিছু ঘাড়ের চামড়া ছিদ্র করে ঢুকে গেল রক্তনালিতে। দেহের সব শক্তি ব্যয়ে প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে ওঠে ইসাবেলা।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here