তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব—৭৬

0
561

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব—৭৬
Writer তানিয়া শেখ

আয়নার সামনে শেষবার নিজেকে দেখে নিলো ইসাবেলা। গলার মাফলারটা আরেকটু ভালো করে পেঁচিয়ে লম্বা করে শ্বাস ছাড়ে। বাড়ির সকলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাত্রির গম্ভীরতা সর্বত্র। দেওয়াল ঘড়িটার টিক টিক শব্দ কানে লাগছে খুব। আয়নার ভেতর থেকে সময় দেখল। ২টা সাতাশ বাজে। আজ ওর দেরি হচ্ছে। একবার ভাবল আজ আর নিকোলাসের সাথে দেখা করতে যাবে না। কারণ জিজ্ঞেস করলে, শরীর ভালো নেই বলে বাহানা দিয়ে দেবে। বিছানার কোণায় গিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসল। সংকোচ হচ্ছে নিকোলাসের মুখোমুখি হতে। গতকাল রাতের ঘটনা স্মরণ হলে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠছে। কী একটা পাগলামি করেছে! মাঝেমাঝে এমন অধৈর্য হয়ে যায়! নিকোলাস না জানি কী ভাবছে! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে তন্দ্রা এসে গেল। টের পেল কেউ ওকে বিছানা শুইয়ে মাথার তলে বালিশ দিয়ে দিলো৷ আলগোছে খুললো গলার মাফলার। ইসাবেলার ঘুম তখন পাতলা হয়ে এসেছে। বুকের কাছে কম্বলের ভার টের পাওয়ার সাথে সাথে নাকে সেই সুমিষ্ট সোঁদা মাটির ঘ্রাণ পায়। এক ঝটকায় চোখ মেলে তাকালো।

“তুমি!”

নিকোলাস ওর পাশে বসে আছে। বিলি কাটছিল চুলে। মুচকি হাসল। ওর মুখ চেয়ে গতকালের কথা মনে পড়ে গেল ইসাবেলার। লজ্জায় চোখ নামিয়ে উঠে বসতে গেলে বাধা দিলো নিকোলাস।

“এখন আর উঠো না। ঘুমাও। কাল বরং বাইরে যাব।”

ইসাবেলা নীরব রইল। নিকোলাসও আর কথা বলল না। চুপচাপ ওর আনত বদন দেখে গেল। একসময় উঠে দাঁড়ায়। বলে,

“আজ আমি আসি।”

ইসাবেলা খপ করে ওর হাত ধরে বলল,

“আরেকটু থাকো না।”
সাথে সাথে লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিলো।

“ঠিক আছে।” বসল আবার ওর পাশে নিকোলাস। তারপর বলল,

“তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।”

ইসাবেলা দুচোখ বন্ধ করল। নিকোলাস ওর চুলে বিলি কাটতে শুরু করে। ইসাবেলা অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারল না। হঠাৎ ফুঁপিয়ে উঠল। উদ্বিগ্ন হলো নিকোলাস।

“কী হয়েছে? কাঁদছো কেন, বেলা?”

“তুমি আমার ওপর রাগ করেছ,না? আমি ভারী পাগল। তুমি ঠিকই বলো, নির্বোধ আমি। যা মনে আসে বলে ফেলি। আসলে_” উঠে বসল বিছানার ওপর। নিকোলাস থামিয়ে দিয়ে বলল,

“ওসব কেন বলছো? আর তোমার ওপর রাগই বা কেন করব?”

“ওই যে গতকাল ওই কথা বলেছি বলে।”

নিকোলাস ঢোক গিললো। সহজ ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করে বলল,

“ধুর! ওই কথায় কেউ রাগ করে না কি। আমার তো মনেও ছিল না।”
বিড়বিড় করে বলল,
“রাগ তো ভীষণ করেছি তবে তোমার ওপর না। রাগ করেছি আমি আমার ওপর।”

ইসাবেলা ওর বিড়বিড়িয়ে বলা কথা বুঝতে পারল না৷ কথাটা মনেও রাখেনি নিকোলাস! এত তুচ্ছ ছিল? মনে মনে ভারী অভিমান করল। মুখে তার ছায়া খানিকটা পড়ল। বুঝতে না দিয়ে শুয়ে পড়ে।
নিকোলাস কিন্তু ঠিকই বুঝেছে। তবুও মুখে আনল না। হেসে ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল,

“রাগ করলে এখানে তোমার পাশে বসে থাকতাম, বলো? তোমার ওপর রাগ করা আমার কোনোদিনই হবে না। তুমি আমার হাসির কারণ, সুখের কারণ, কিন্তু রাগের কারণ নও, বেলা। ওই কথা নিয়ে আর ভেবো না। মন খারাপ করো না। চোখ বন্ধ করে ঘুমাও তো এখন।”

ইসাবেলা কোনো কথা না বলে চোখ বন্ধ করে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। নিকোলাস ওর কথা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করল? আজ ওর কথা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে কাল ওকে করতে বাধবে? রাগে, অভিমানে অনেক কথা মনে এলো। কিন্তু মুখ ফুটে একটা শব্দও উচ্চারণ করল না। করবেই না আর। নিকোলাসের যদি এভাবে চলতে ভালো লাগে তাহলে তাই চলুক। হঠাৎ মনে হলো ভেতরটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। দৈহিক মিলনের কথা মনে করলেও এখন কেমন বিতৃষ্ণা জাগে।

পরদিন ওকে চমকে দিয়ে নিকোলাস দুপুরের পরেই রুমে এসে হাজির। ইসাবেলার মনটা ভালো ছিল না বিধায় রুমেই শুয়ে ছিল। নিকোলাসকে এই সময় দেখে অবাক হলো।

“তুমি? এই সময়ে?”

“তৈরি হও। বাইরে যাব।”

“কেউ দেখবে না?”

“না, ব্যবস্থা আছে। ওঠো তো।” একপ্রকার জোর করে উঠিয়ে পছন্দমতো কাপড় খুঁজল আলমারিতে। নিজের দেওয়া সেই ড্রেসটা দেখে থমকে গেল। মুখখানা মলিন হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে তামাটে স্কার্ট ও বেবি ব্লু ব্লাউজ বেছে নিলো।

“যাও পরে এসো।”

পোশাকগুলো হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ওর দিকে ইসাবেলা। তারপর বলল,

“আজকের দিন কি স্পেশাল?”

নিকোলাস বিছানায় বসে বলল,

“না তো।”

ইসাবেলা আশা করেছিল ও বলুক, তোমার সাথে কাটানো প্রতিদিন স্পেশাল। স্পেশাল হলে তো বলবে। ইসাবেলা গোমরা মুখে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। কাপড় পরে ওয়াশরুম ছেড়ে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে। ড্রেসটায় বেশ মানিয়েছে৷ আকর্ষণীয় লাগছে কি? এখান থেকে বিছানা দেখা যায়। নিকোলাস সেখানে বসে একদৃষ্টে ওকেই দেখছে। চোখে যেন কামনার তীব্র শিখা জ্বলছে। কামনা! ইসাবেলা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। নিকোলাস ততক্ষণে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। ভুল ভেবেছে ইসাবেলা। নিকোলাস ওকে মোটেও কামনার চোখে দেখবে না। তেমন কিছু ফিলই করে না। পাশ থেকে গরম কোর্টটা গায়ে চাপিয়ে বলল,

“আমি তৈরি।”

নিকোলাস কাছে এলো। সবসময়ের মতোই ওর কপাল এবং হাত দুটোতে চুম্বন করে কোমর জড়িয়ে ধরে। ওষ্ঠ চুম্বনও করে কিন্তু গতকাল করেনি আজ এখনপর্যন্তও না। ওর স্পর্শে ইসাবেলা বরাবরই রোমাঞ্চিত হয়। আজ রোমাঞ্চিত ব্যাপারটাতে শৈত্যপ্রবাহের একটা চাপ এলো। শান্ত, চুপচাপ হয়ে রইল ও। সকলের অলক্ষ্যে নিকোলাস ওকে নিয়ে ছুটল অনেকদূরে। মাঠ, তেপান্তর, বন পেরিয়ে ওরা এসে থামল একটি গ্রামীণ এলাকায়। লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে নেমে পায়ে হেঁটে এগোতে লাগল। কাঁচা রাস্তা ধরে হাটতে হাঁটতে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় ইসাবেলা। চারপাশে ঘন সবুজ বন, সরু লেক, শীতকালীন গমের ক্ষেত। বসতিগুলো বেশ ফাঁকা ফাঁকা। কিছুদূর এগোলেই কোলাহল কানে এলো। লোকাল বাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের বেশভূষা ওদের থেকে কিছুটা আলাদা। ভিড় ঠেলে এগোনোর সময় কয়েকজন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো। বাজারে বিভিন্ন জিনিসের পসরা বসেছে। নিকোলাস ওকে নিয়ে বসল একটা ব্যস্ত রেস্তোরায়।

“কী খাবে বলো?” জিজ্ঞেস করল নিকোলাস। ইসাবেলা আশপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,

“এটাও কি সারপ্রাইজ ডেট?”

“হ্যাঁ।”
ইসাবেলার ধারণা ডেট ফেট কিছু না। গতরাত থেকে না খাওয়া ও। আসার সময় হয়তো ওর পেট ডেকে ওঠা শুনেছে। তাই এখানে আসা। পরক্ষণেই ভাবল, নিকোলাস যে ডেট জাতীয় কিছু করতে পারে এতে অবিশ্বাসের কী আছে। এর আগেও সারপ্রাইজ ডেটের আয়োজন করেছিল। এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল? আজেবাজে ভেবে, অভিমান করে একটু বেশিই জটিল করে তুলছে না তো সম্পর্ক? সম্পর্কে টক্সিক হতে নেই। ও কি টক্সিক হয়ে যাচ্ছে? না, না আর এসব ভাববে না। নিকোলাস ওকে ভালোবাসে। সবার ভালোবাসা তো আর এক রকম হয় না। তাছাড়া ও তো আর সাধারণ কোনো মানুষ নয়। ইসাবেলা কেন যে ভুলে যায় এই কথা। সব সম্পর্কে ত্যাগ ও মানিয়ে নেওয়ার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ ভিতস্বরুপ। কোনো মানব পুরুষকে ভালোবাসলে দুটোই করতে হতো। পিশাচ পুরুষের বেলায় একটু বেশি মানিয়ে চলতে তো হবেই। ত্যাগও করতে হবে৷ হঠাৎ করেই যেন চেতনা ফিরল ওর। পুষে রাখা রাগে-অভিমান বরফের ন্যায় গলে গেল। হাসল। নিকোলাসকে ভালোবেসে ও সব পারবে। চিরজীবন কুমারী হয়ে থাকতেও।

ইসাবেলার একটু আগেও খিদে ভাব ছিল না। এখন মনে হচ্ছে কিছু খেলে ভালো লাগবে। পেটে ক্ষুধা থাকলে ভেতর-বাহির দুর্বল হয়ে যাবে। আরও উলটো পালটা ভাবনা এসে জেঁকে বসবে। আর নেগেটিভ ভাববে না। বেয়ারা খাবারের লিস্ট বলতে অনেকগুলো খাবার অর্ডার করে ফেললো ইসাবেলা। নতুন কিছু খাবার ট্রাই করার কৌতূহল সামলাতে না পেরেই কাজটা করল। অথবা, অন্য কারণে৷ খাবার আসতে সময় লাগল। এই সময়ের মধ্যে দুজনের কেউ ই কথা বলল না। নিকোলাস অন্যমনস্ক হয়ে আছে। ইসাবেলা চেষ্টা করেছিল কিন্তু নিকোলাসের গম্ভীর মুখ দেখে চুপ রইল। খাওয়া শেষ হলে লম্বা একটা হাসি দিয়ে কথা শুরু করবে। কিন্তু কী বলবে? একরাতে লজ্জা বেড়ে গেছে ওর।

টেবিল ভরে গেল খাবারের আইটেমে। কয়েকটা বেশ লোভনীয় দেখতে। কয়েকটা দেখে নাক কুঁচকে গেল। মনে মনে স্থির করল যেমনই হোক সব ট্রাই করবে। দুটো আইটেম খেল। একটা খুব মজা আরেকটা মোটামুটি। খেতে গিয়ে হঠাৎ নিকোলাসের দিকে তাকায়। গভীর মনোযোগ দিয়ে ওকে দেখছে। অপ্রতিভ হয়ে পড়ল। হাতের চামচটা নামিয়ে বলল,

“তুমি যে কিছু খেলে না? এটা খাও। হা করো।”

নিকোলাস শান্ত গলায় বলল,

“তুমি হয় ভুলে গেছো নয়তো জানা নেই যে, নরমাল মানুষের মতো খাবার খেতে পারি না আমি। রক্ত আর কিছু তরলখাদ্য আমার খাবার। মাঝে মাঝে অবশ্য কাঁচা মাংসও খেতাম। তবে সেটা এখন অতীত।”

ইসাবেলা এখনও চামচ ওর মুখের কাছে ধরে আছে। আস্তে আস্তে সেটা প্লেটে নামিয়ে কিছু ভাবল। তারপর বলল,

“মাদামের বাড়িতে তো খেয়েছিলে।”

“মাদামের যেন সন্দেহ না হয় তাই। রাতে বদহজম হয়েছিল। অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছিল সেই কারণে।”

ইসাবেলার খেতে অস্বস্তি হচ্ছে। একই টেবিলে একজন খাবে অন্যজন চেয়ে চেয়ে দেখবে! আগের ডেটে নিকোলাস শ্যাম্পেইন ছাড়া কিছু মুখে দেয়নি৷ সেদিন ব্যাপারটা এমন ছিল না। আজ নিকোলাসের কথাগুলো শুনে ক্ষুধাভাব মরে গেল।

“আমার পেট ভরে গেছে। চলো উঠি।”

“সারাজীবন এমন করে পেট ভরে যাবে?”

“মানে?”

“ধরো, যদি আমাদের একসাথে থাকতে হয়। তখন আমি খাই না বলে কি তুমিও খাবে না?”

ইসাবেলার ভুরু কুঁচকে যায়। নিকোলাস কী বুঝাতে চাইছে ওকে? সন্ধানী চোখে তাকাল। কিন্তু নিকোলাস তখনই বলল,

“আচ্ছা বাদ দাও৷ চলো ওঠা যাক।”

খাবার বিল মিটিয়ে ওরা আবার নেমে এলো রাস্তায়। নির্জন একটি স্থানে এসে নিকোলাস ফের ওকে শূন্যে নিয়ে ছুটল। এসময় চারপাশটা দ্রুতবেগে সরতে থাকে। ঠিক সময়ের মতো। ইসাবেলা মুখ তুলে নিকোলাসের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনকার বলা কথাগুলো এখনও ভাবাচ্ছে।

ওরা এবার একটি বাড়ির অদূরে বাগানে এসে থামল। সূর্য ঢলে পড়েছে। ম্লান আলো চারিদিকে। নিকোলাস আগে আগে হাঁটছে। ইসাবেলা ওর থেকে একটু পেছনে৷ বাড়ির কাছাকাছি আসতে কান্না শুনে চমকে ওঠে। নিকোলাস থামল না। দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। ইসাবেলা অনুসরণ করে। পলকে এই বাড়িতে দেখে অবাক হলো ও। নিকোলাসকে দেখে পল এবং একজন মধ্যবয়স্কসহ আরও দুজন লোক এগিয়ে এলো। দুজনের একজন বেশ বয়োজ্যেষ্ঠ। আরেকজন পলের কাছাকাছি বয়সের। বেশ চেনা মুখ কিন্তু এই মুহূর্তে মনে পড়ল না ইসাবেলার। ওর দিকে একপলক তাকালো তারা। মধ্য বয়স্ক লোকটাকে ভীষণ রুগ্ন আর বিষণ্ণ লাগছে। নিচু গলায় কথা বলছে ওরা। কান্নারত মহিলার দিকে তাকাল ইসাবেলা। তারপর সামনে শায়িত মেয়েটির দিকে। নিথর হয়ে পড়ে আছে। রক্তশূন্য মুখ, শুকনো ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। চোখ বসে গেছে। ইসাবেলার চোখ গেল ওর উঁচু পেটটার দিকে। ও কী গর্ভবতী? চামড়া লাগানো কঙ্কালের ন্যায় লাগছে মেয়েটিকে। পেটটা সেই কারণে বুঝি বিশাল দেখাচ্ছে৷

পল মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মধ্যবয়স্ক লোকটি গিয়ে কান্নারত মহিলাকে কিছু বলতে বিস্মিত চোখে তাকাল। তারা স্বামী-স্ত্রী। মেয়েটি বোধহয় ওদের সন্তান। মহিলার মুখ ভীত হয়ে ওঠে।

“না, না। ও মরে যাবে।”

“এটা না করলে নিশ্চিত মরবে। শেষ চেষ্টাটুকু করতে দাও। ঈশ্বরের ওপর ভরসা রাখো।”

মহিলাটি ফের কাঁদতে লাগল। লোকটি তাকে নিয়ে একটি রুমে ঢুকে যায়। কিছু সময় পরে একা ফিরে এলো একটা ট্রে হাতে৷ ট্রেতে কোনো খাবার পানীয় নেই। ধারালো ছুরি, সেলাই করার সুই সুতো, ব্যান্ডেজ আরও কিছু আছে কিন্তু ইসাবেলা বুঝতে পারল না দূরে দাঁড়িয়ে। এগিয়ে যেতে নিষেধ করেছে নিকোলাস। ওকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। কী করতে যাচ্ছে মেয়েটির সাথে? ভাবল ইসাবেলা। পল ধারালো ছুরি হাতে তুলে নিতে মেয়েটির বাবা বাধা দিলো। তাকালো ইসাবেলার দিকে।

“ও থাকবে।” বলল নিকোলাস। মেয়েটিকে তরল কিছু খাওয়ালেন বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি। কিছুক্ষণ পর ওর ঠোঁট কাঁপা-কাঁপি বন্ধ হয়ে গেল। নিশ্চল দেহ। পল ছুড়ি হাতে ঠিক ওর পেটের পাশে দাঁড়ায়।

“ও-ও কী করতে যাচ্ছে?” আর্ত গলায় বলে ইসাবেলা। নিকোলাস এক হাতে ওর কাঁধ চেপে মুখটা আড়াল করে বুকের ওপর। ইসাবেলা কাপড় ছেঁড়ার শব্দ শুনতে পেল। নিকোলাসের হাতটা এখনও ওর মাথার পেছনে চেপে ধরে আছে। ইসাবেলা যেন বুঝে গেছে কী করতে যাচ্ছে পল মেয়েটির সাথে৷ কিন্তু কেন? ডাক্তারের কাছে কেন নিচ্ছে না মেয়েটিকে?

“নিকোলাস, ওকে থামাও।”

“শান্ত হও তুমি। সব ঠিক হয়ে যাবে।” কথাগুলো যেন ইসাবেলা নয় নিজেকেও বলছে ও। ইসাবেলা শান্ত হতে পারে না। বুক ঢিপঢিপ করছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে নিকোলাস ওর মাথার ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। ভয়ে ভয়ে ঘুরে তাকালো ইসাবেলা। পলের হাতে একদলা রক্তাক্ত মাংসপিণ্ড। কাপড়ে মুড়িয়ে রাখল সেটা। বাচ্চাটাকে ওরা এভাবে শেষ করে দিলো? ক্রোধে জ্বলছে ইসাবেলার চোখ।

“আর দেরি করো না। তাড়াতাড়ি তোমার রক্ত ওর মুখে দাও।” পলের বয়সী লোকটিকে বলল বয়োজ্যেষ্ঠ। এগিয়ে এলো সে। নিজের হাতের কব্জিতে কামড় বসিয়ে দেয়। বেরিয়ে আসে কালো রক্ত। মেয়েটির ঠোঁটের ওপর ধরে হাতটি। একফোঁটা, দুফোঁটা, তিনফোঁটা….

“যথেষ্ট।” হাত ধরে সরিয়ে নেয় বয়োজ্যেষ্ঠ।

“এর বেশি ওর জন্য প্রাণনাশক।”

মেয়েটির ঠোঁট নড়ে ওঠে। রক্তের ফোঁটাগুলো মুখের ভেতরে প্রবেশ করে। সকলের দৃষ্টি ওর দিকে স্থির। এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট, চার মিনিট এবং ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় এক আশ্চর্য ঘটনার লক্ষ্য করল ইসাবেলা। কঙ্কালসার মেয়েটি চোখের নিমেষে সুস্থ ও সুন্দরী এক যুবতীতে পরিবর্তন হয়েছে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। অপরিচিত মুখগুলো দেখে ভয় পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। বয়োজ্যেষ্ঠ ওকে অভয় দিলো। মেয়েটির বাবা মা মেয়েকে সুস্থ ও স্বাভাবিক দেখে খুশির জল ফেললেন। স্তব্ধ হয়ে দেখছিল এতক্ষণ ইসাবেলা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে নিকোলাস। ওকে সেভাবে রেখে মেয়েটির কাছে গেল। নিচু গলায় কিছু বলল ওদের। তারপর ইসাবেলার কাছে এসে হাত ধরে বলে,

“এসো।”

“ও-ও__” ওর তোতলানো দেখে সকলে তাকালো। নিকোলাস বলল,

“সব বলছি এসো।”

ইসাবেলা বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে শেষবার বাড়ির ভেতরে তাকালো। মেয়েটি ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here