তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব—৭৮ Writer তানিয়া শেখ

0
645

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব—৭৮
Writer তানিয়া শেখ

জাদুর বোতলের বন্দিত্বে ছটফট করেন আগাথা। এখান থেকে বের হতে চান তিনি। সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও এই বন্দিদশা ঘোচেনি। চন্দ্রদেবীকে সর্বক্ষণ ডেকে যাচ্ছেন। তিনি জানেন তাঁর সেই ডাক চন্দ্রদেবী পর্যন্ত যাচ্ছে না। গেলে অবশ্যই দেবী সাড়া দিতেন। হতাশ হন। তারপর আবার আশায় বুক বাঁধেন। ডাকেন, বোতলে মাথা কোটেন। একে বন্দিত্বের জ্বালা তার ওপর মনটা কু গাইছে। কেন বন্দি করেছে এরা তাঁকে? কী চায়?
মাঝে মাঝে দু’একজন মানুষের ফিসফিস শুনতে পান। দুজনেই পুরুষ। এদের একজন তাঁকে বন্দি করেছে। দুজনের একজনকেও চেনেন বলে মনে হয় না। কী চায় সেটাও বলে না। প্রশ্ন করলে হেঁয়ালি করে। বিদ্রুপ করে হাসে। কথার ধরণে বোঝা যায় এরা তাঁকে চেনে। তিনি তো আজ মরেননি! তবে কী করে চেনে এরা? অসংখ্য প্রশ্নের জট। কিন্তু তিনি সেই জট ছাড়াতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেন। এখন একমাত্র চন্দ্রদেবীই তাঁর ভরসা। তাঁর শক্তিবলে যদি আগাথাকে এই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে পারেন নয়তো আর পথ দেখেন না।

চন্দ্রদেবীর সুশ্রী মুখখানায় রাজ্যের চিন্তা। আগাথা এতদিন নিখোঁজ। গোলক পর্যন্ত ওর খবর এনে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বুঝতে পারছেন না কী ঘটছে এসব। কালোরাত কেটে যাওয়ার পরও কেন পৌঁছাতে পারছেন না আগাথা পর্যন্ত! দেবী উঠে দাঁড়ালেন৷ কিছু একটা করতে হবে। এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। দূত মারফত সূর্যদেবের কাছে খবর পাঠালেন। দিনের রাজা তিনি। সবখানেই তাঁর রশ্মি যায়। নিশ্চয়ই একটা আশার খবর তিনি দিতে পারবেন। চন্দ্রদেবী অস্থির, চিন্তিত হয়ে বসে রইলেন সিংহাসনে। কার এত সাধ্য যে দেবীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার দুঃসাহস দেখায়। কার? একসময় দেবী সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। তাঁকে এখন ইন্ডিমিয়নের সমাধিস্থলে যেতে হবে৷ প্রেমিকের ঘুমন্ত মুখ দর্শনে চিন্তা যদি কিছুটা দূর হয়।

ইসাবেলা বাবা-মায়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এর বেশি আর ওর পা চলছে না সামনে৷ বরং পিছিয়ে যাচ্ছে বার বার। সকাল থেকে অনেকবার এমন করে দরজায় দাঁড়িয়েছে তারপর আবার ফিরে গেছে রুমে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। ভেতরে শব্দ হতে দ্রতগতিতে প্রস্থান করল। কড়িডোর ধরে নিজের রুমের দিকে এগোচ্ছে। কী বলতে এসেছিল? নিজের বিয়ের কথা? এঁরা মানবে? তাই বলে এঁদের ছাড়া বিয়ে করবে ও! পরক্ষণেই ভেতর থেকে জবাব এলো, “এ ছাড়া আর উপায় কী?” ইসাবেলার মন মানে না। জীবনের বিশেষ মুহূর্তে আপজনদের ও কাছে চায়। জানে এ অসম্ভব তবুও স্থির হতে পারছে না। যদি মিরাকল কিছু ঘটত! কী বোকা ও! চোখ জ্বলতে লাগল। পরশু নিকোলাসের সাথে ওর বিয়ে। কিন্তু পরিবার জানে না। নিকোলাসও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। কীই-বা মন্তব্য করার আছে ওর। ও তো আর জীবিত কোনো মানুষ নয় যাকে ওর পরিবার জামাতা হিসেবে সাদরে গ্রহণ করবে। ইসাবেলাকে আগেই সাবধান করেছে। সব জেনেশুনে যখন ও বিয়েতে মত দিয়েছে তখন আর কী বলবে নিকোলাস। ইসাবেলা মোটেও পস্তাচ্ছে না মত দেওয়াতে। কিন্তু জীবনের এতবড়ো একটা মুহূর্তে পরিবার থাকবে না তাতে মন খারাপ ওর। অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। বিয়ের গাউন পরবে কিন্তু পরিবারের বড়োদের আশীর্বাদ কপালে জুটবে না। কার হাত ধরে আইল থেকে নামবে? বাবা ওর কন্যা সম্প্রদান করবে না! এসব ভাবলে মন আকাশে একরাশ কালো মেঘ জমে ওঠে। ভালোবাসার পূর্ণতার সুখও পরিপূর্ণতা পায় না তখন।

সারাদিন ভেবে ভেবে মনকে বুঝ দিলো ইসাবেলা। এই ওর নিয়তি। পরিবার অথবা নিকোলসের মধ্যে নিকোলাসকে বেছে নিয়েছে। অপরাধ কি করেছে? হয়তো! ওর এই প্রেমিকা সত্তা পৃথিবীর সবকিছু উপেক্ষা করে নিকোলাসকে ভালোবেসেছে। ভালোবাসবে আর বিসর্জন দেবে না? পরিবার, ধর্ম ও সমাজ এই তো ওর বিসর্জন। প্রেমের ক্ষেত্রে ঠিক-বেঠিক অযৌক্তিক। প্রেমিক -প্রেমিকারা কেবল পূর্ণতা চায়। এই মোহ মাঝেমাঝে বাকি সকল মোহকে ভুলতে বাধ্য করে। ইসাবেলার মনে হয় ও বড়ো অসহায় আজ। ভালোবাসা যেমন সাহস দিয়েছে তেমন দুর্বলও করেছে। নিকোলাসকে হারানোর ভয় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড়ো ভয় ওর কাছে।

ওর পরিবার নিকোলাসকে কোনোদিন মেনে নেবে না। না মানবে এই সমাজ, এই ধর্ম। সব জেনেই তো ভালোবেসেছে ও। গ্রহণ করেছে নির্দ্বিধায়। তবে কেন এখন এত কষ্ট পাচ্ছে? কেন দুষছে ভাগ্যকে? ভাগ্য এমন নিষ্ঠুর খেলা কেন খেললো? পরিবার ও নিকোলাস দুটোই যে ওর চায়। বাবা-মায়ের মুখ বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে৷ খুব দুঃখ পাবে তাঁরা। পিতা-মাতার দুঃখের কারণ হওয়া প্রতিটি সন্তান অভিশপ্ত। ইসাবেলা অভিশপ্ত হবে। এই ওর নিয়তি। নিকোলাস ওর নিয়তি৷

“বেলা!”

প্রিয় কণ্ঠস্বরটি শুনে ঘুরে তাকায় জানালার দিকে। ওই তো ওর নিয়তি দাঁড়িয়ে আছে। দু’বাহু মেলে কাছে ডাকছে। এই ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য ইসাবেলার নেই। চোখেমুখে নিকোলাসের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পায়। পরিবার বিচ্ছেদের বেদনা বুকে চেপে মুচকি হাসল।চোখ টলমল। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় নিকোলাসের দিকে। বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠে। ও পারেনি পরিবারের বিচ্ছেদ বেদনা চেপে রাখতে। এত কঠোর এখনও হয়ে ওঠেনি। নিকোলাস কিছু বলে না। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ইসাবেলা কাঁদছে। ওর পাপের কারণে আজ ইসাবেলা কাঁদছে। পিশাচ না হলে নিশ্চয়ই কাঁদত না।

চলবে,,,

আজ পর্বটা ছোটো হয়ে গেল। ছোটো হোক বা বড়ো আমি চেষ্টা করছি নিয়ম করে উপন্যাসটা দেওয়ার। চেষ্টা সফল হলে ভালো লাগে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here