বকুলতলা ৩৯.

0
600

বকুলতলা

৩৯.
ঢাকার চিরচেনা এই অট্টালিকায় ফিরে এসে তরীর কেমন দমব’ন্ধকর অনুভূতি হলো। যেন এক রোবটের দুনিয়ায় ফিরে এসেছে সে। কারো মুখে হাসি নেই। পরিবারের মতো আনন্দের জমজমাট পরিবেশ নেই। কথা নেই। বরং তরীকে ফিরতে দেখে আয়েশা খাতুন একটু বেশিই মুখ কুঁচকালেন এবার। মামার অভিব্যক্তিও ছিল অচেনা। এবার নিজ থেকে ডেকে কথা পর্যন্ত বলেন নি তিনি। হয়তো বিয়ে নিয়ে সেই রাগের রেশটা এখনো আছে।
রাতে যখন খাওয়া দাওয়া হচ্ছিল, আয়েশা খাতুন ঠোঁট বাঁকিয়ে প্রায় বলেই ফেললেন, “তুমি কি আজীবন এখানেই থাকবে বলে ভেবে নিয়েছো, হ্যাঁ? এটা কেমন কথা?”

তরী তখন মাত্রই এক লোকমা ভাত মুখে দিয়েছে। আয়েশা খাতুনের কথা শুনে গলা দিয়ে নামতে চাইলো না তা। আড়চোখে মামার দিকে একটুখানি আশা নিয়ে তাকাতেই বুঝলো, মামাও তার আপন ছিল না কখনো। প্রণয়ের জন্য যা একটু স্নেহ-ভালোবাসা দেখাতেন! সে আস্তে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অ’পমানটা সযত্নে গিলে ফেলে উত্তর দিলো, “আমি তো আগেই যেতে চেয়েছিলাম মামী। মামাই তো আটকে রাখলেন।”
—“আটকালেই কি তোমার থাকতে হবে? মামা মানুষ। এসব বলবেই। তোমার কি আক্কেল নেই?”
কথাটা গায়ে বিঁ’ধলো খুব। কোথাও যেন তীব্র পচন ধরলো। তীব্র থেকে তীব্রতর। কিন্তু তর্কে যেতে মন সায় দিচ্ছে না। নির্লজ্জের মতো তরী আরেক লোকমা ভাত মুখে পুরে নিলো। বললো, “কয়েকটা দিন সময় দিন মামী। বাসা খুঁজছি।”
আয়েশা খাতুন আবারও মুখ বাঁকালেন। বিড়বিড় করে কি যেন বললেন! তরী শুনতে না পেলেও জানে, তিনি নিশ্চিৎ তাকেই গা’লমন্দ করছেন।

বাড়ির সবাই তরীকে অপছন্দ করলেও সালেহার কথা ভুললে কিন্তু চলবে না। আয়েশা খাতুনের ভ’য়ে সামনা সামনি কিছু করতে না পারলেও তরী যখন রান্নাঘরে নিজের এঁটো প্লেট ধুঁতে গেল, সালেহা যারপরনাই ঝাপটে ধরলো তাকে। ভীষণ শক্ত আলিঙ্গনে কেঁদে ফেললো হু হু করে। তরী প্রক্রিয়া করার সময় পেল না। নিজেও ঝাপটে ধরতে পারলো না। তার চোখেমুখে তখন বিমূঢ়তা নৃ’ত্য করছিল। ভাবছিল, এই ছোট্ট মেয়েটার সাথে তার তো কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। অথচ এই অনুভূতিটা! তাকে না দেখতে পেয়ে মেয়েটার কেঁ’দে ফেলেটা কি স্নিগ্ধ! আপনজনদের থেকেও কি ভীষণ আপন!
তরী আস্তে আস্তে তার বাম হাতটা সালেহার পিঠে আলতো করে রাখলো। নরম সুরে শুধালো, “কাঁদছো কেন সালেহা?”
সালেহা চোখের পানিতে গাল ভিঁজিয়ে ফেলল নিমিষেই, “তুমি মাতরো আসলা আপা। এহনই চইলা যাওয়ার কতা কও ক্যান? আমি তুমারে ছাড়া কেমনে থাকমু?”
—“আমি কি এখানে সারাজীবন থাকার জন্য এসেছি নাকি? চলে তো একদিন যেতেই হতো।”
—“কিন্তু… আমি তো তুমারে অনেক ভালা পাই। তুমি এইহানে না থাকলে আমার মন টিকবো না আপা।”
তরী আরেকটু নরম সুরে বোঝালো,
—“কান্না থামাও সালেহা। আমি যেখানেই যাই না কেন, তোমাকে আমার সবসময় মনে পরবে। আমি নিয়মিত কল করবো তোমায়। পারলে দেখা করতে আসবো।”
—“কিন্তু আমার কাছে তো মোবাইল ফোন নাই।”
—“আমি যাওয়ার আগে কিনে দিবো একটা। ঠিকাছে?”

সালেহার মন একটু হলেও ভালো হলো যেন। কিছুক্ষণ তরীকে জড়িয়ে রেখে সরে দাঁড়ালো সে। গাল মুছে কাজ করতে লাগলো আবার। তরী জিজ্ঞেস করলো, “তরকারিগুলো ফ্রিজে রেখেছো?”
—“না আপা।”
—“তাহলে তুমি তরকারিগুলো ঠিকঠাক ভাবে ফ্রিজে রাখো। আমি এগুলো ধুয়ে দিচ্ছি।”

অথচ সালেহা শুনলো না। ঘোর মেজাজ দেখিয়ে বললো, “তুমি আসছো বেশিক্ষণ হয় নাই আপা। রুমে গিয়া শুইয়া থাকো। আমি একলা একলা করতে পারুম।”
সালেহাকে কিছু বলেও টলানো গেল না। তরীও খানিকটা অসুস্থ বোধ করছিল। মাথা ব্যথা করছে প্রচন্ড। সরব, যাওয়ার পথে কলিংবেল বেজে উঠলো। একাধারে তিন, চারবার। তরী তার যাওয়ার রাস্তা পাল্টালো। এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা খুললো। প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে। চোখমুখ শুকনো। শরীর একটু শুকিয়েছে কি? শুকিয়েছে বোধহয়।
তরী একপলক তাকিয়েই সরে দাঁড়ালো। কিন্তু প্রণয় ভেতরে ঢুকছে না। নিষ্পলক চেয়ে দেখছে ওকে। মুখশ্রীতে কি যেন খেলা করছে। তরী ধরতে পারলো না। প্রবল অস্বস্তি নিয়ে বললো, “ভেতরে ঢুকছেন না কেন?”

জিভ দিয়ে শুষ্ক অধর জোড়া সিক্ত করে নিলো প্রণয়। আরেকবার তাকালো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য। পরপরই গটগট পায়ে ঢুকে পরলো ভেতরে।

দরজায় মৃদু করাঘাতের শব্দ হচ্ছে। ঘড়িতে রাত একটা বেজে দুই মিনিট। সেই বারোটায় ঘরে এলেও, তরীর চোখে নি’ষ্ঠুর ঘুমের দেখা নেই। জানালা গলিয়ে বাহিরের নিকষ কালো সৌন্দর্য পরখ করছিল সে। দরজা ধাক্কানোর শব্দে একটু অবাকই হলো। এ সময় কে এসেছে? সবার তো এতক্ষণে ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা। ক্ষীণ দ্বিধা নিয়ে তরী উঁচু গলায় বললো, “কে?”
—“আমি।”

আরেকদফা বিস্ময়ের সাগরে ডুব দিয়ে উঠলো তরী। কণ্ঠটা প্রণয়ের। সে এত রাতে এখানে এসেছে কেন?
—“আপনি? এত রাতে এখানে?”
—“দরজা খুলো। বলছি।”
তরী ইতস্তত ভঙ্গিতে দরজা খুললো। প্রণয় দরজার সম্মুখে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে বইয়ের মতো কি যেন। তরী ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বললো, “ভেতরে ঢুকতে দিবে না?”

তরীর বিশাল বিস্ময় শেষ হবার নয়। প্রণয়ের ঠোঁটের হাসিটা তাকে আরও ভাবিয়ে তুলছে। এ লোকের কি হয়েছে? এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন? আপাতত প্রশ্নগুলো দমিয়ে প্রণয়কে ভেতরে ঢুকতে দিলো সে। প্রণয় আস্তে ধীরে বিছানার একপাশে বসলো। চঞ্চল চোখদুটো পুরো ঘরময় ঘুরঘুর করছে।
—“আপনি এখানে কেন এসেছেন, বললেন না?”
মনোযোগটা এবার তরীর দিকে স্থির করলো প্রণয়। হালকা কণ্ঠে বললো, “বসো।”

তরী বসলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তা দেখে অল্প হাসলো প্রণয়। হাতের বইটা একবার আলতো করে ছুঁয়ে দেখলো। সময় নিলো। এরপর ঠোঁটের হাসিটা প্রগাঢ় করে বললো, “এই বইটা আমার জন্য অনেক মূল্যবান, তরী। আমি আমার সব অনুভূতি লিখে রাখি এখানটায়। কিন্তু আমার কি মনে হয় জানো? বইটায় সবকিছু লিখে রাখা উচিত হয়নি। অন্য কোনো হ্যাপি এন্ডিং বইয়ে আমার অনুভূতি লিখলে হয়তো আমার জীবনটাও হ্যাপি এন্ডিংয়ে ভরে যেত। আ পিওর হ্যাপি এন্ডিং! যেখানে দুঃখের চিহ্ন থাকবে না।”

এটা কি আসলেই সুস্থ, স্বাভাবিক হাসি? তরীর মনে হলো না। আশ্চর্য চোখে সে তাকিয়েই থাকলো। প্রণয় উঠে দাঁড়ালো এবার। তরীর কাছাকাছি এলো। বিমূঢ় হয়ে চেয়ে থাকা মেয়েটির হাতের মাঝে বইটা দিয়ে গাঢ় হেসে বললো, “এটা আজ থেকে তোমাকে দিয়ে দিলাম। কখনো সময় হলে, পড়ে নিও।”
—“আমি এটা নিতে পারবো না।”
—“আমার দেওয়া কত কিছুই তো নাও নি তরী। এটা নাহয় রাখো। আমার শেষ আবদার।”

প্রচন্ড অস্বস্তিতে এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘোরালো তরী। প্রণয়ের হাতের ভাঁজ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো অতি সন্তপর্ণে। ধৈর্যহীন ভাবে বললো, “আপনি মুভ অন করছেন না কেন? কেন আমাকে বারবার অপরাধী বানাচ্ছেন?”
—“কে বললো মুভ অন করিনি? আমি দিব্যি আছি তরী। বাবা, মা মেয়ে দেখছেন। বিয়েও করে ফেলবো কয়েকদিনের মাঝে।”
তরীর প্রণয়ের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। প্রচন্ড সন্দেহে মুখের অদল বদলে যাচ্ছে। এ লোক আসলে চাচ্ছে কি? হাবভাব, এই হঠাৎ আচরণ! সব কেমন গোলমেলে।

—“আপনি সত্যি বলছেন তো?”
—“হ্যাঁ। নাহলে এভাবে হাসতাম নাকি?”
—“আপনার হাসি স্বাভাবিক না।”
প্রণয় আরেকটু হাসলো,
—“না পাওয়াতেই একটা শান্তি আছে তরী। এইযে, তোমাকে পেলাম না। তোমাকে হারানোর ভয়টাও আর থাকলো না। কোনো পিছুটানও থাকলো না। এখন যা ইচ্ছে তাই করবো।”

বইটা দিয়ে প্রণয় বেরিয়ে গেল। তরী তখনো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। তার কোথাও যেন খুব খুশি লাগছে, আবার প্রণয়ের জন্য খারাপও লাগছে। সে চাইলেও প্রণয়কে ভালোবাসতে পারছে না। কোনো অনুভূতি অনুভব করতে পারছে না। তার ধ্যান-জ্ঞান একটা লোকের মাঝেই সীমাবদ্ধ। তার নাম মাহাদ। মাহাদ আয়মান।

ডিসেম্বর মাসের আগমন ঘটেছে আজ পাঁচদিন। আজকে বৃহস্পতিবার। সকাল থেকে একটু বেশিই শীত শীত লাগছে। ঢাকা শহরে কিন্তু সচরাচর এমন শীত পরে না। রাস্তার মানুষগুলোকে দেখে কেমন আজব লাগছে তরীর। যদিও সেও সেই আজব মানুষদেরই একজন। খুঁজে খুঁজে মোটা তাজা একটা সোয়েটার পরে এসেছে। অথচ সাংবাদিক মাহাদ আয়মানের দা’পট দেখো! এত শীতের মাঝেও লোকটা সোয়েটার তো দূর! পাতলা একটা শার্ট পরে ঘুর ঘুর করছে। তরী চোখ ছোট ছোট করে শুধালো, “আপনার কি শীত করছে না? এটা কি পরে বের হয়েছেন?”
মাহাদ ভীষণ হতাশ হয়ে উত্তর দিলো তখন, “আমি তো খালি গায়েই বের হতে চেয়েছিলাম তরী। কিন্তু আমার আকর্ষণীয় ফিটনেস দেখে যদি মেয়েরা হুমরি খেয়ে পরে? সেই ভয়ে তাও শার্ট-টা পরে এলাম। আজ যা গরম পরেছে!”

তরী চোখ পাকিয়ে তাকালো। ধমকের সুরে বললো, “আপনি শুধরাবেন না তাই না? আজীবন ত্যাড়াই থেকে যাবেন?”

জবাবে মাহাদ ভীষণ নির্লিপ্ত। মুখে কিছু বললো না। তরী টের পেল, মাহাদ তার হাতটা কেমন অদ্ভুত ভাবে ধরে আছে। বেশি শক্তও না, আবার বেশি হালকাও না। দৃঢ় অনুভবে আষ্টেপৃষ্টে রাখতে চাইছে যেন। আকাশের দিকে চেয়ে শুধু একটা দীর্ঘ, সুপ্ত নিশ্বাস ফেললো। তরী জানে, এই নিশ্বাস কাঙ্ক্ষিত কিছু পেয়ে যাওয়ার অদৃশ্য তৃপ্তি। মনের এককোণের ভীষণ যত্নে আগলে রাখা বহু দিনের সাধনা।
তরী আস্তে করে ডাকলো, “মাহাদ?”
মাহাদ দৃষ্টি ফিরালো। তাকালো তরীর চোখে চোখ রেখে। তরী আবার শুধালো, “কি হয়েছে?”
একরোখা মাহাদ তখন কি সুন্দর করে যে হাসলো! রোদে মলিন হওয়া তার মুখশ্রীর প্রেমে অজান্তেই হোঁ’চট খেল তরী। বুক ডিপডিপ করলো।
—“ভালো লাগছে তরী। আমার সবকিছু অনেক ভালো লাগছে।”

শুনে তরীরও খুব ভালো লাগলো। কিন্তু সেটা সে প্রকাশ করলো না। এড়িয়ে গিয়ে জানতে চাইলো, “আপনার মুখ শুকনো লাগছে কেন? কিছু খাননি?”
—“সকালে খেয়েছিলাম।”
—“দুপুরে?”
—“সময় পাইনি আসলে। বড় বাজারে দুপুরে আগুন লেগেছিল। সেটা নিয়েই দৌঁড়াদৌঁড়িতে ছিলাম। এখন তোমার কাছে লুকিয়ে এসেছি। তারপর আবার ওখানে যেতে হবে। বেশি সময় নিয়ে আসিনি আজকে।”

তরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “কতক্ষণ সময় নিয়ে এসেছেন?”
—“এইতো, আর পনেরো মিনিটের মতো।”
—“সামনের দোকান থেকে একপ্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে আসুন তাহলে। খেয়ে, তারপর যাবেন।”

মাহাদ তা-ই করলো। বিরিয়ানি এনে বায়না ধরলো, সে তরীর হাতে ছাড়া খাবে না। হতাশ তরী অবাধ্য হলো না। নির্মল নয়নে একবার দেখলো বে’প’রোয়া লোকটাকে। পার্কের দূর্বাঘাসে বসে আস্তে আস্তে খাইয়ে দিতে লাগলো। মাহাদ মহাতৃপ্তি নিয়ে খেতে খেতে প্রশ্ন করলো, “তোমার না কোথায় যেন বাসা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল? গিয়েছো? বাসা কেমন?”
—“ভালোই। কিন্তু বেশি টাকা চাচ্ছে। আমরা এত এফোর্ট করতে পারবো না।”
—“চলো বিয়ে করে ফেলি। আমার সাথে থাকবা। তিনবেলা খাইয়ে দিবা। পতিসেবা করে পূণ্য কামাবা। করবা বিয়ে? কাজী অফিস কিন্তু হাতের বামেই!”

এক লোকমা ভাত মাহাদের মুখে ঢুকিয়ে দিলো তরী। থমথমে গলায় বললো, “চুপচাপ খান।”
মাহাদ তখন ভীষণ ভাবে চোখ মুখ কুঁচকালো, “তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না তরী।”

প্রণয়ের দেওয়া একমাস আগের বইটা তরী ধরেও দেখেনি এতদিন। কি মনে করে বইটা হাতে নিয়ে বিছানার মাঝখানটায় বসলো সে। প্রচ্ছদটা খুব সুন্দর না হলেও খারাপ না। গোটাগোটা অক্ষরে বইয়ের নাম লিখা, ‘প্রিয়মের একা দিন’। লেখকের নামটা কালো কালি দিয়ে দাগকাটা। বোঝা যাচ্ছে না। তরী বইটা খুললো। একে একে পৃষ্ঠা ওল্টালো। হাত থামকালো, একটা গাছের ত্যাড়াব্যাকা চিত্র দেখে। সেটা কি গাছ, বোঝা যাচ্ছে না। নিচে খুব সূক্ষ্ণ ভাবে কি যেন লেখা। সেটাও বোঝার উপায় নাই। ৮০ পৃষ্ঠার পর থেকেই একেকটা ছোট্ট ছোট্ট চিঠি পেল সে। মন দিয়ে পড়লো। একদম শেষে, লেখপরিচিতির কাছে এসে আবারও থমকালো তরী। এখানেও লেখকের পরিচয় একটা হলুদ রঙের কাগজ গ্লু দিয়ে আটকে রাখা। কাগজে লেখা, “লেখকের প্রতি আমার খুব রাগ। আমার মনে হয়, লেখক তার গল্পে হ্যাপি এন্ডিং দেয়নি বলেই আমি আমার জীবনে হ্যাপি এন্ডিংয়ের দেখা পাইনি।”

তার পাশেই আরেকটা লেখা, “আমি সামলে নিয়েছি আমাকে, প্রিয়। তুমি সুখী হও। আমি নাহয় তোমার সুখ দেখে সুখী হবো।”

বইটা বন্ধ করে আবারও টেবিলে রেখে দিলো তরী। ফোন বাজছে। পাওয়ার বাটন চেপে দেখলো, মাহাদ কল করেছে। সময় দেখে নিলো একবার, রাত বারোটা বাজছে। তরী কল রিসিভ করলো। হ্যালো শব্দটা উচ্চারণ করতেই ওপাশ থেকে ব্যস্ত, রু’ক্ষ, অচেনা এক কণ্ঠ শুনতে পেল, “ভাবী, আমি মাহাদের বন্ধু আরিফ। মাহাদের সাথেই কাজ করি। মাহাদের অবস্থা বেশি ভালো নেই ভাবী। আ’গু’নে.. আপনি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসুন। আমি এড্রেস দিচ্ছি।”

তরী একমুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল যেন। কেঁপে উঠলো শরীর। খুব ক্ষীণ ভাবে। কিন্তু অনুভব করার মতো। ভীষণ স্বাভাবিক গলায় বললো, “ও কি বেঁচে আছে? নিশ্বাস নিচ্ছে?”

________________

চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here