#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_23
আজ অফিস থেকে বের হতে দৃশ্যর অনেক দেরি হয়ে গেল।মিস লুবনার অধিক ব্যাস্ততার জন্য তাকেও অনেক রাত অবধি কাজ করতে হচ্ছে।সারাদিনের ব্যাস্ততায় সে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছে।তার উপর মাহাদ।সে মাঝে মাঝেই দৃশ্যর উপর চড়াও হয়ে পড়ে।তবে আজ মাহাদ তাকে কোনো ডিস্টার্ব করেনি।সারাদিন একবারও মাহাদের দেখা পায়নি।
দৃশ্য কয়েক জায়গাতে খবর নিচ্ছে আরেকটা চাকরির জন্য।এই চাকরিটা তাকে ছাড়তেই হবে।কারণ মাহাদকে চোখের সামনে দেখে সে ভীষণ দুর্বল হয়ে পরে।যা মোটেও কাম্য নয়।
অফিস থেকে বের হয়ে সে প্রায় দশ মিনিটের পথ হেঁটে বাস স্টেশনে আসলো।অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটা বাস আসলো। ভিড় ঠেলে কোনোমতে সে বাসে উঠতে সক্ষম হলো।এটা তার নিত্য দিনের কাজ।আজও বাসে কোনো সিট পেলো না।তাই কাধের ব্যাগটা বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কারণ এই বাসে মানুষের মুখোশ পড়ে অমানুষেরা ঘুরে বেড়ায়। সুযোক পেলে মেয়েদের শরীরে বাজে ভাবে স্পর্শ করে নিজের কামুকতা মেটাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
প্রথম প্রথম যখন দৃশ্য ঢাকায় আসে তখন এমন অনেক বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে।প্রথম যে দিন দৃশ্য জিনিয়ার সাথে বাসে উঠেছিলো তখন সিট না পেয়ে দাড়িয়ে থাকতে হয় তাদের।কিছুক্ষণ পর দৃশ্য টের পায় কেউ তার কোমরে বার বার স্পর্শ করছে।দৃশ্য ভয়ে জিনিয়ার দিকে চেপে দাড়ায়।বাস যখন থেমে যায় তখন ভিড় ঠেলে নামার সময় কেউ তার বুকে হাত দেয়।মুহূর্তেই দৃশ্য চিৎকার দিয়ে উঠে।পুরো শরীর থর থর করে কাপতে থাকে।সেদিন বাস থেকে নেমে দৃশ্য রাস্তার ধারে বসে চিৎকার করে কেদেছিলো। এতো বাজে পরিস্থিতিতে সে এর আগে কখনোই পড়েনি।তবে ধীরে ধীরে সে এই ঢাকার রাস্তায় চলতে শিখে গেছে।
বাস থেকে নেমে দৃশ্য আবারো হাঁটতে লাগলো। এখান থেকে প্রায় বিশ মিনিট হাঁটলে বাড়িতে পৌঁছে যাবে। কয়েক বছরে এই রাস্তাটা তার ভীষণ চেনা হয়ে গেছে। ওড়না টা নিজের গায়ে ভালো মতো জড়িয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে কাধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে হাটতে লাগলো দৃশ্য। তবে আজ এই পথে হাঁটতে তার কিছুটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে। নিজের মনের ভয়টা দূর করতে কয়েকবার পেছনে ঘুরে দেখেছিল।তবে সন্দেহভাজন কাউকে চোখে পড়েনি। দৃশ্য এবার নিজের হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর বাসায় পৌঁছে গেল।
মাহাদ নিজের গাড়িতে বসে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছে আর সামনের বাড়িটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। পুরনো দোতালা বাড়ি। বাড়ির বাইরে জায়গায় জায়গায় রং খসে পড়েছে। মাহাদের মনে এই মুহূর্তে হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে।
কয়েকদিন যাবত সে খেয়াল করেছে দৃশ্য কাজে ভীষণ ব্যস্ত। অনেক রাত করে অফিস থেকে বের হয়। মাহাদ ভেবে পায়না, দৃশ্যর পরিবারের মতো এতো কনসারভেটিভ পরিবার কি করে তাদের মেয়েকে চাকরি করার পারমিশন দিল? দৃশ্যর এত রাত করে বাড়ি ফেরা ফাহিম বা তার বাবা কিভাবে এলাও করছে? কারণ তারাতো তার মেয়েকে 24 ঘন্টাই চোখে চোখে রাখতো।
তবে সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে তাদের সব সময়ই কোচিং টাইমে দেখা করতে হতো। কারণ এই সময় ব্যতীত দৃশ্য বাড়ির বাইরে বের হবার পার্মিশন ছিল না।তাছাড়া দৃশ্যর পরিবার যথেষ্ট বিত্তশালী। তার বাবা রাজশাহী শহরের মেয়র। তাহলে এমন কি হল যে মেয়েকে ঢাকা শহরে পাঠিয়ে তাকে দিয়ে চাকরি করাচ্ছে? তাছাড়া দৃশ্য বাসে করে কেন যাতায়াত করছে এটা তো তার জন্য নিরাপদ না? এমন অনেক প্রশ্নই তার মাথায় আসছে।
সে দ্রুত কল করলো তানিমকে। অনেকদিন পর তানিমকে কল করল সে। তানিম কল রিসিভ করেই বললো
-“আরে শালা, সূর্য কোনদিকে উঠল? সেলিব্রিটি মানুষজন আমাকে কল করছে?”
-“মজা নিস না তো? কেমন আছিস?”
-“আমাদের খবর রাখে কে? যাই হোক ভালো আছি তোর কি অবস্থা?”
-“জানিসই তো সব।যাইহোক আমার একটা কাজ করে দিতে পারবি?”
-“আরে ফর্মালেটিস দেখাচ্চিস কেনো?বলে ফেল।”
-“দৃশ্যর খবর লাগবে।”
তানিম এবার কিছুটা অবাক হলো।এতো বছরে মাহাদ কখনো দৃশ্যর খবর নেয়নি।তাহলে আজ হঠাৎ।ভাবনা থেকে বের হয়ে বললো
-“হঠাৎ দৃশ্যর খবর কেনো চাইছিস?”
-“দৃশ্য ঢাকায় আছে।কিন্তু কেনো আমি জানতে চাই। প্লিজ আমাকে সবটা জানা।”
-“ঠিক আছে।সেই ঘটনার পর আমি আর ঐ দিকটাতে যায়নি।আমাকে দুই দিন সময় দে।”
-“হুঁম।”
-“তুই ঠিক আছিস?আর দৃশ্য তোকে দেখেছে?”
-“ও আমার অফিসে জব করছে।আগে জানলে হয়তো করতো না।”
-“এখনো ভালবাসিস তাইনা?”
-“ভালোবাসা কি ভোলার জিনিস?”
-“তুই চিন্তা করিসনা।”
-“আচ্ছা রাখছি।”
-“ওকে।”
কল কেটে মাহাদ আরো কিছুক্ষন সেখানে বসে নিকোটিনে ধোঁয়া উড়িয়েছে আর দোতলার বারান্দাটা পর্যবেক্ষণ করেছে।বিলাসিতায় বড়ো হওয়া দৃশ্যর মতো মেয়ে এমন একটা বাড়িতে কি করে থাকছে?একা বাড়ি থেকে যে মেয়ে বের হতে পারত না সে কিনা লোকাল বাসে চড়ছে।রাতের আধারে বাড়ি ফিরছে। মাহাদের কিউরিসিটি যেন বেড়েই চললো।
বাসায় ফিরে দৃশ্য আগে শাওয়ার নিলো।তারপর লতা আপু আর জিনিয়ার সাথে রাতের খাবার খেতে বসলো।লতা আপু বললো
-“কিরে তোর কি কাজের প্রেসার বেশি যাচ্ছে? রাতে তোকে খুব একটা লেখাপড়া করতে দেখিনা। পরীক্ষায় তো খারাপ করবি।”
-“আসলে আপু কাজের অনেক চাপ যাচ্ছে। বাসায় এসে ভীষন টায়ার্ড হয়ে পড়ি।”
-“যত কষ্টই হোক লেখাপড়াটা ঠিক রাখবি।”
-“জি আপু।”
অনেক ক্লান্ত থাকার পরও দৃশ্য বই নিয়ে টেবিলে বসলো। লতা আপু একদম ঠিক বলেছে শত কষ্টের মাঝেও লেখাপড়াটা ঠিক করে করতেই হবে।অন্তত নিজের জন্য হলেও করতে হবে।
__________________
সন্ধ্যায় ফাহিম বাসায় ফিরে তার মাকে এক কাপ চা দিতে বলে নিজের রুমে চলে গেল। ঘামে তার পুরো শরীর ভিজে যা-তা অবস্থা। আজ অমিত আর রাহুলের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হয়েছে তার। সেদিন রকি কে কেন মেরেছে তা নিয়েই তার সবার সাথে দ্বন্দ্ব বেড়ে গেছে।
বর্তমানে তার রকির সাথে কোনো সম্পর্কই নেই।তবে রকিকে নিয়ে অমিত আর রাহুলের সাথে মনোমালিন্য চলছে। রিজভী না থাকলে হয়তো বড়োসড়ো ঝগড়া বেধে যেত। শার্টের বোতামগুলো খুলতে খুলতে সে এসব কথাই ভাবছিল। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে পিছনে ঘুরে দেখলো তমা চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তমাকে দেখে ফাহিমের মেজাজ আরও গরম হচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে ফাহিম বললো
-“তুই আমার রুমে কি করিস?”
-“কেন আসতে মানা আছে নাকি?”
-“অবশ্যই মানা আছে। ,আর তোকে আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেয় কে বলতো?”
-“আমার কোন ইচ্ছা নাই আপনাদের বাড়িতে আসতে। আপনার মা নিজেই আমাকে আসতে বলেছেন।”
-“মা তোকে কেন আসতে বলবে?”
-“মনে হয় উনি ছেলের বউ মিস করছিলেন তাই?”
-“ফাইজলামি করার জায়গা পাস না বেয়াদব একটা।”
তমার মনে মনে ভাবলো
-“আপনার জন্য আমি চরম বেয়াদব হতেও প্রস্তুত ফাহিম ভাই। আপনি একবার মুখ ফুটে ভালোবাসি বলুন, দেখুন আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লক্ষী বউ হয়ে দেখাবো। একদম স্বামীর বাধ্যগত স্ত্রী হয়ে যাব। আপনি যদি বলেন সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে সেটাও মেনে নেব। শুধু একবার ভালোবাসি বলুন না।”
ফাহিম কিছুটা ধমক দিয়ে বললো
-“এখানে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে বের হ রুম থেকে।”
-“যাচ্ছি তো আমি তো জাস্ট চা দিতে এসেছি।”
-“বাসায় কি আর কেউ নেই তোকে দিয়ে পাঠিয়েছে কেনো?”
-“মনে হয় চাচী আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাইছেন।”
ফাহিমের এবার ভীষণ মেজাজ গরম হচ্ছে। সে তমার দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে শাসিয়ে বললো
-“তোর মত বেয়াদব কে যেন আর কোন দিন আমাদের বাসায় না দেখি। তোর মতো নিলজ্জ মেয়ে আমি আমার জীবনের একটাও দেখিনি।বের হয় বাসা থেকে।”
তমার এখন ভীষণ খারাপ লাগছে। সে ফাহিমের সব অপমান মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়। কিন্তু মাঝে মাঝে ফাহিম তার প্রতি একটু বেশি রুট হয়ে যায়। তমা আর কিছু না বলে টেবিলে চা কাপ রেখে বেরিয়ে গেলো।দু চোখ তার ভিজে উঠলো।এই পাষণ্ড মানুষটা কখনোই তার মন বুঝে না।এতো অপমানের পর ও সে এই সভ্য মানুষটার কাছে বারবার ছুটে আসে।
টেবিলে মাথা হেলিয়ে বসে আছে দৃশ্য। দুচোখ দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর অশ্রু কনা গড়িয়ে পড়ছে। ফাহিম ভাই মাহাদকে ঠিক কতটা অপছন্দ করে সেটা দৃশ্য খুব ভাল করেই জানে। তার ভাই আর মাহাদের মধ্যে আসলে কিসের দ্বন্দ্ব সেটা সম্পর্কে দৃশ্যর তেমন কোন আইডিয়া নেই। কয়েক বছর আগে একদিন ফাহিম ভাইকে ভীষণ রক্তাক্ত অবস্থায় হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল। দৃশ্য ওই বয়সে শুধু এটা বুঝতে পেরেছিল তার ভাই কারো সাথে মারামারি করে এই অবস্থা বাধিয়েছে। ফাহিম ভাই এর প্রতি বাবার ভালোবাসা সবসময়ই একটু বেশি ছিল। তাই ফাহিম ভাইকে যে মেরেছিল তার প্রতি বাবার অনেক বেশি ক্ষোভ রয়ে গেছে।তবে সেই ছেলেটাই মাহাদ ছিলো সেটা সে আজ বুঝতে পারলো।সামনে কি হবে সেটা দৃশ্য ভাবতেও পারছে না।হটাৎ ফোনের রিংটোনে তার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারল মাহাদ কল করেছে।দৃশ্যর এখন ভীষণ কান্না পাচ্ছে। ফোনটা রিসিভ করে চুপ চাপ কানে ধরে বসে রইল। ওইদিকে মাহাদ বললো
-“কি ম্যাডাম আজ চুপচাপ কেন?”
-”
-“আমার পিচ্চি কি কোন কারনে রাগ করেছে? আরে বাবা ঢাকায় পৌঁছে তো তোমাকে কল করলাম। তবু রাগ করে আছো কেনো?”
মাহাদের আদুরে কথাগুলো শুনে দৃশ্য ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। সাথে সাথে মাহাদের কপাল কুঁচকে গেল। সে অস্থির হয়ে দৃশ্যকে জিজ্ঞাসা করলো
-“কি হয়েছে পিচ্চি কাঁদছো কেন?প্লিজ বলো।”
দৃশ্য তখনও ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলছে। মাহাদ আবার বললো
-“দৃশ্য প্লিজ বল। তুমি কথা না বললে আমি বুঝব কী করে?”
দৃশ্য এবার নিজের কান্না থামিয়ে বললো
-“তুমি ফাহিম ভাইয়াকে আগে থেকেই চেনো তাই না?”
মাহাদ অবাক হলো। দৃশ্য কি কোন ভাবে বিষয়টা জেনে গেল? বিষয়টা জানলে যে দৃশ্য অনেকটা ভেঙে পড়বে তাই তো তাকে কিছু জানায়নি। তার ভাবনার মাঝে দৃশ্য কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো
-“তুমি সেই ছেলে যে ফাহিম ভাইয়ের সাথে মারামারি করেছিলো, যার জন্য ভাইয়া প্রায় তিন দিন হসপিটালে ভর্তি ছিল তাই না?”
মাহাদের এখন নিজের কপালে নিজে চাপড়াতে মন চাইছে। কেন যে সেদিন ফাহিমের সাথে লাগতে গেছিল। আগে যদি জানত ভবিষ্যতে তার বোনকে এতটা ভালোবেসে ফেলবে তাহলে হয়তোবা এমন করতে দুইবার ভাবতো।ফাহিম আর তার ঝগড়া ছাড়াও যে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে আরো অনেক দ্বন্দ্ব আছে সেটা সে দৃশ্য কে কিভাবে বলবে? তবে এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। অন্তত নিজের ভালোবাসাকে তো এভাবেই ছেড়ে দিতে পারেনা। নিজেকে সামলে মাহাদ বললো
-“দৃশ্য যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে এভাবে মন খারাপ করলে তো আর কিছু ঠিক হবে না তাই না। আমি তো তখন জানতাম না তুমি আমার জীবনে আসতে চলেছ।আমি সব ঠিক করে দেবো প্লিজ একটু বিশ্বাস রাখো।”
দৃশ্য আবারো কেঁদে উঠলো।আর বললো
-“আমি জানি কিছু ঠিক হবে না। ভাইয়া কখনোই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেবে না।”
-“পিচ্চি প্লিজ কেদোনা। তোমার কান্না সহ্য করতে পারিনা। আমাকে একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে ফেলব।”
মাহাদ আরো নানা কথা বলে দৃশ্যকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে নিজেই মনকে শান্ত করতে পারল না। সব কিছু কিভাবে ম্যানেজ করবে সেটা কিছুতেই মাথায় আসছে না। তাছাড়া তার বাবা সেটা জানলে কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে সেটাও মাহাদের জানা নেই। তবে যে করেই হোক তাকে সবকিছু ঠিক করতেই হবে। কারন পিচ্ছিটাকে ছাড়া সে নিজের লাইফ কল্পনাও করতে পারবে না। সে কিছুতেই সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে না।
মাহাদের কথায় নিজেকে শান্ত করলেও নিজের মনের ভয় দূর করতে পারল না দৃশ্য। সে তার বাবা ভাই সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত আছে। তারা যে বিষয়টা খুব সহজে মানবে না সেটা সম্পর্কে দৃশ্য নিশ্চিত। তার ছোট মস্তিষ্ক এতটা চাপ কিছুতেই নিতে পারছে না।
এভাবে আরো কিছুদিন তাদের সম্পর্কটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগুতে লাগলো। তাদের দুজনের মনেই হাজারো চিন্তা ভর করে আছে। তবে সময় নাকি সবকিছু ঠিক করে দেয়।তাই তারা সবকিছু সময়ের উপরে ছেড়ে দিল।
এভাবেই দিন গড়িয়ে যেতে লাগলো। দেখতে দেখতে দৃশ্যর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। মাহাদের অনেক বকা খেয়ে সে পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে উঠেছে। মাহাদ তাকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছে যদি সে পরীক্ষায় ভালো না করে তাহলে নাকি সে আর রাজশাহীতেই আসবেনা।
পরীক্ষাগুলোতে প্রতিদিনই ফাহিম তাদের পরীক্ষার হলে পৌছে দিত। একইভাবে শেষ পরীক্ষার দিন ও ফাহিম তাদের পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। দৃশ্য আর নাবিলা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে কিছুদূর যেতেই নাবিলা বললো সে ওয়াস রুমে যাবে। তাই দৃশ্য স্কুলের মাঠে বটতলায় অপেক্ষা করতে লাগলো।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ দৃশ্যর দুই চোখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেললো।দৃশ্য কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। এমন কাজ কে করতে পারে? দৃশ্য বললো
-“কে?”
-“আমার স্পর্শগুলো এখনো চিনতে পারো না?”
মানুষটির কণ্ঠ শুনেই দৃশ্যর মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠল। সে দ্রুত হাত ছাড়িয়ে পেছনে ঘুরে মাহাদকে জড়িয়ে ধরলো।কতদিন পর সে এই মানুষটিকে কাছে পেলো।দৃশ্যর দু চোখ ভিজে উঠল। মাহাদ ও দৃশ্যকে বুকে জড়িয়ে দৃশ্যর চুলে পরপর কয়েকটা চুমু একে দিল।এই মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ভীষণ শান্তি পায় মাহাদ।সকল চিন্তা ভুলে দুইজন এক মধুর আলিঙ্গনে ডুবে রইলো কিছুক্ষন। নিরবতা ভেঙে মাহাদ বললো
-“এই পিচ্ছি কান্না বন্ধ করবে নাকি চলে যাবো?আমিকি এতো দুর থেকে তোমার এই চোখের পানি নাকের পানি দেখতে এসেছি?”
দৃশ্য মুচকি হেসে মাহাদের টিশার্ট এ নাক মুছলো। মাহাদ নাক কুঁচকে বললো
-“দিলেতো আমার টিশার্ট নষ্ট করে।কি পেয়েছো আমাকে বলতো?কখনো বমি করে, তো কখনো নাকের পানিতে আমার জামা নষ্ট করো।”
দৃশ্য আহ্লাদি গলায় বললো
-“আমার জামাইর শার্ট আমি যখন তখন নষ্ট করবো তাতে তোমার কি?”
-“না আমার কিছু না।যা খুশি করো।”
মাহাদ আবার বললো
-“নির্লজ্জ মেয়ে ছারো আমাকে।ওইদিকে পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে খেয়াল আছে?”
দৃশ্য মাহাদকে ছেড়ে বললো
-“তুমি কখন রাজশাহী আসো যাও কিছুই আমাকে জানাও না।”
-“আমিতো আমার পিচ্চিকে সারপ্রাইজ দিতে চাই তাই বলিনা।ভালোভাবে পরীক্ষা দিবে।আর সাবধানে থাকবে।”
-“ঠিক আছে।”
-“আচ্ছা যাও।”
আজ মাহাদকে দেখে দৃশ্যর মনটা আনন্দে ভরে গেছে।তার মনে হচ্ছে আজকের পরীক্ষা সে সবচাইতে ভালো দিয়েছে।মানুষটার উপস্থিতি তাকে একরাশ মিষ্টি অনুভূতি দিয়ে যায়।
পরীক্ষা শেষে দৃশ্য যখন অবসর সময় কাটাচ্ছে তখন মাহাদ ভীষণ ব্যস্ত।সে তার লেখাপড়া আর গানের মাঝে ডুবে আছে।তবে দিন শেষে তার প্রিয়তমাকে সময় দিতে ভোলেনা।সময় মতো কল দিতে না পারলে দৃশ্য রাগ করে বসে থাকে।আর মাহাদ কে অনেক কাঠ খর পুড়িয়ে তার অভিমান ভাঙতে হয়।সময় গুলো ভালোই কেটে যাচ্ছিলো।তবে কোথাও না কোথাও তারা দুজনই হৃদয়ে সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করে। ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার ভয় দুজনের মনে গেথে রয়েছে।