তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_58

0
1052

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_58

রাতের আঁধার যতই গভীর আর দীর্ঘ হোক না কেন ভোরের স্নিগ্ধ আলো সেই আঁধারকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে।সূচনা করে এক নতুন দিনের।দৃশ্যর জীবনে সেই আলোর সূচনা হচ্ছে।এতদিন পর নিজের পরিবারকে পেয়ে তার মনের সব যন্ত্রণা যেনো নিমিষেই গায়েব হয়ে গেছে।বাবা মায়ের স্নেহতলে থাকা যে কতটা প্রশান্তির সেটা দৃশ্য তাদের কাছ থেকে দূরে থেকে বুঝেছে।এইযে মায়ের হাতের খাবারে স্বাদ এতদিন পর পেয়ে মেয়েটা কান্না করে দিয়েছিলো।

দৃশ্য এখন কিছুটা সুস্থ।কিন্তু ডান পা ঠিক মত নাড়তে পারে না।ডক্টর তাকে আরো দুই দিন হসপিটালে রাখবে বলে জানিয়েছে।দৃশ্য লতা আর জিনিয়ার সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো।আনিকা কবির তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন। এরা না থাকলে তার মেয়েটার কি হতো?
জিনিয়া দৃশ্যকে বললো

-“ওই তোর ভাইয়া যে এমন হট জিনিস আগে বলিসনি কেনো?আমি তো ক্রাশ খাইছি।”

-“তোকে আমার ভাবী বানাতে চাইনা।”

জিনিয়া কাদো কাদো মুখ করে বললো
-“কেনো?আমি কি দেখতে খারাপ?”

-“মোটেও না।তুই তো সেই সুন্দরী।আমি চাই না আমার রাগী ভাইয়ের বউ তোকে বানাতে।তোর জন্য শান্তশিষ্ট পোলা দরকার। আমার ভাইয়ের মতো বদরাগী মানুষ না। তোর জীবনটা আমি এভাবে শেষ করতে পারি না?”

লতা মুচকি হেসে বললো
-“তার উপর রাজনীতিবিদ।সেই কড়া মেজাজ থাকে এদের।”

জিনিয়া এবার কিছুটা ভয় পেলো।ক্রাশ যদি বাঁশ হয়ে যায় তবে তার থেকে দূরে থাকাই ভালো।

শামসুন্নাহার বেগম পরিবারে সবার উপর ভীষণ রাগান্বিত।দৃশ্যর অ্যাক্সিডেন্টের কথা শুনে তিনি একটু কষ্ট পেয়েছেন ঠিক।কিন্তু দৃশ্যকে নিয়ে তার পরিবার যা শুরু করেছে তাতে তিনি বিরক্ত।আখি রহমান বাসায় আসলে তিনি অনেক কথাই শুনিয়েছেন।আখি রহমান শুধু জানিয়েছেন তার ছেলের জন্য যা ভালো হবে তিনি তাই করছেন।ছেলের সুখের তিনি সব করতে পারেন।

এতো মানুষের ভিড়ের মাঝে মাহাদ দৃশ্যকে একটু ও কাছে পাচ্ছে না।মনটা তার ছটপট করছে।কিন্তু আত্মীয়স্বজনদের মাঝে দৃশ্য ঘিরে আছে।একটু পর পর সে কেবিনে এসে উকিঝুকি দিচ্ছে। মাহাদের অবস্থা দেখে দৃশ্যর ভীষণ হাসি পাচ্ছে।মুখটা কেমন পানসে করে রেখেছে মাহাদ।
একটু পর আনিকা কবির আর আশরাফ হুসাইন আসলেন দৃশ্যর কাছে।আনিকা কবির বললেন

-“মা পা কি একটুও নাড়াতে পারছিস না?ব্যাথা হচ্ছে?”

-“ব্যাথা হচ্ছে না।কিন্তু পা নাড়াতে গেলে ব্যাথা শুরু হয়।”

-“ডক্টর বলেছেন পায়ের প্লাস্টার আরো কিছুদিন থাকবে।মাথায় কি ব্যাথা আছে?”

-“মা তুমি চিন্তা করো না।আমি ভালো আছি।”

-“ডক্টর বলেছেন তোকে কমপ্লিট বেড রেস্টে থাকতে।তাহলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবি।”

-“হুম।”

-“দৃশ্য বেয়াইন সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে।তিনি চাচ্ছে অনুষ্ঠান করে তোকে ঘরে তুলতে।এমনি মিডিয়াতে জামাই বাবাকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে।তোর সাথে কি সম্পর্ক?তুই কে?আরো কত কি?

আমিও চাই সব ভুলে তোরা সুখী থাক।অতীত দেখে সামনের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।তুই বললে আমি বেয়াইন সাহেবের সাথে কথা বলবো।তোর মতের বিরুদ্ধে কিছুই হবে না।”

দৃশ্য নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।আসলে কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে এক পলক বাবার দিকে তাকালো।আশরাফ হুসাইন বিষয়টা বুঝতে পেরে বললেন

-“আমিও চাই সব ঠিক হয়ে যাক।তোরা সুখে থাকলে আমার পাপের বোঝা কিছুটা কমবে।আমজাদ ভাই তো তোকে আগেই বউ করে ঘরে তুলতে চেয়েছে।আমার জন্যই সব বিগড়ে গেলো।

মাহাদ ভালো ছেলে।তোকে অনেক সুখ রাখবে।তুই আর অমত করিস না।ছেলেটা আমার উপর রাগ করে তোকে ছেড়ে চলে গেছিলো।সব কিছুই আমার জন্য হয়েছে।”

বলেই আশরাফ হুসাইন মাথা নিচু করে নিলেন।
দৃশ্য তার মায়ের হাত ধরে বললো
-“তোমরা সবাই মিলে যা ঠিক করবে তাই হবে।আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই।”

আনিকা কবির খুশি হয়ে দৃশ্যর কপালে চুমু খেল।তিনি বললেন
-“দেখিস মা তুই অনেক সুখী হবি।”

নাবিল দৃশ্যর প্রেসক্রিপশন আর টেস্টের কাগজ চেক করে বললো
-“সবই ঠিক আছে।মাথার দাগটা অয়েন্টমেন্ট দিলে কিছুদিনের মধ্যে মুছে যাবে।আর পা টা সারতে একটু সময় লাগবে।কিছু দিনের মধ্যেই দৌড়াইতে পারবি।”

-“দৌড়ানো লাগবে না।হাঁটতে পারলেই চলবে।আচ্ছা ভাইয়া নাবি কই?ও কেমন আছে?”

-“ওই বাঁদর কে তো বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। চুটিয়ে সংসার করছে।”

-“নাবীর বিয়ে হয়ে গেছে? ও কই?আমার সাথে দেখা করতে আসলো না কেনো?”

-“আরে ওকে আমি আগে জানাই নি।গতকাল রাতে জানিয়েছি।কেদে কেটে শেষ।রওনা দিয়েছে।আজই চলে আসবে।”

-“ভাইয়া তুমি তমা আপুকে আগে থেকে ভালোবাসতে তাই না?”

-“হুম।ওকে আমার জীবনে পাবো ভাবতে পারিনি।”

-“তোমাদের পাশাপাশি ভীষণ মানিয়েছে।”

-“ফাহিমের সাথেও মানাতো,যদি তো ভাই সময় থাকতে বুঝতে পারতো।”

দৃশ্য কিছুটা চমকে গেলো।নাবিল ভাইয়া সব জানে?নাবিল বললো
-“আমার বউ কাকে ভালোবাসতো সেটা বুঝতে পারবোনা ভেবেছিস?কিন্তু আমি আমার অনুভূতি তমার মন অব্দি পৌঁছেছি।যেটা করার সাহস তোর ভাইয়ের ছিলো না।”

-“তুমিকি ভাইয়ার উপর রেগে আছো?”

-“মোটেও না।দেখ আমি জানি ফাহিম আমাকে তেমন পছন্দ করে না।আমাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে।কিন্তু আমি ফাহিমকে সব সময় ভাই ভেবে এসেছি।কিন্তু এখন আমার আর ফাহিমের সম্পর্ক ও অনেক ভালো আছে।সে নিজেকে অনেকটা বদলেছে।”

দৃশ্য হসপিটালের বেডে শুয়ে শুয়ে বোর হয়ে গেছে।কিন্তু কিছু করার নেই।সে পা তেমন একটা নাড়াতে পারছে না।মানুষ জন কিছুটা কমতেই মাহাদ এসে বসে দৃশ্যর পাশে। হাতে করে খাবার নিয়ে আসছে।সে দৃশ্যর মুখের সামনে খাবার নিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো

-” হা করো।”

চিকেন স্যুপ দেখে দৃশ্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছেই মরে গেলো।সে কপাল কুচকে বললো
-“আমি এইসব খাবো না। ছি! এইসব মানুষ খায়?”

-“অসুস্থ হলে এই সবই খেতে হবে। শরীরে তো কিছুই নাই।কয়দিন পর বাতাসের সাথে উড়ে যাবে।”

দৃশ্য কপাল কুঁচকে খাবার মুখে নিলো।এই পাগলকে চটিয়ে লাভ নেই।রেগে আছে এমনি।দৃশ্যর মনে পড়লো তাদের বিয়ের দিনের কথা।সেদিনও মানুষটা তাকে পরম যত্নে এই ভাবে খাইয়ে দিয়েছিলো।খাওয়া শেষে সে দৃশ্যর কপালে চুমু খেয়ে অভিমানী সুরে বললো

-“তুমি আমাকে একটুও সময় দিচ্ছ না।আমি তোমাকে একটুও কাছে পাচ্ছি না।”

দৃশ্য মাহাদের গালে হাত রেখে বললো
-“এমন পাগল পাগল লাগছে কেনো?চুল কাটা হয়না কতো দিন ধরে?”

-“আমিতো তোমার পাগল।আমার বউ বেডে পড়ে আছে তাহলে আমাকে কি হিরো লাগবে নাকি?”

-“আমার বরকে তো হিরো লাগতেই হবে।”

তাদের কথার মাঝেই নাবিলা হন্ত দন্ত হয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো।দৃশ্যকে দেখেই সে কেদে দিলো। মাহাদ আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।এই দুই বোনকে একা ছেড়ে দিলো।দৃশ্য নাবিলাকে দেখে কাছে ডাকলো।নাবিলা দৃশ্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলছে আর বলছে

-“তুই ভীষণ খারাপ।আমার সাথে কেনো কোনো যোগাযোগ রাখিস নি?আমার কতো চিন্তা হয়েছে জানিস।তোর চিন্তায় আমি ঘুমাতে পারতাম না।আর আজ এতদিন পর তোকে এই অবস্থায় দেখতে হচ্ছে।”

-“আচ্ছা কান্না বন্ধ কর।আমি ঠিক আছি।”

-“ফাজিল মাইয়া আমাকে ভুলে দিব্বি দিন কাটাচ্ছিস।”

-“তোদের কাছ থেকে দূরে যেয়ে আমি মোটেও ভালো ছিলাম না।”

-“আমি জানি।”

দৃশ্য দেখলো নাবিলাকে শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।একদম নতুন বউ।দৃশ্য মুচকি হেসে বললো

-“আমাকে রেখে বিয়ে করে নিলি। তা দুলাভাই কই?ওই লাভ ম্যারেজ নাকি অ্যারেঞ্জ?”

-“আর বলিস না সে অনেক কাহিনী।রাকিব নাবিল ভাইয়ার ফ্রেন্ড ছিলো।দুই জনই ঢাকা মেডিকেলে পড়তো।একদিন ভাইয়ার সাথে বাড়িতে যায়।তখন তার সাথে আমার দেখা। কোথা থেকে আমার নম্বর জোগাড় করে আমাকে কল করে।ওর সাথে আমার ভালো একটা বন্ডিং তৈরি হয়। একসময় সে আমাকে প্রপোজ করে। সত্যি বলতে আমিও ওকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু তোর অবস্থা দেখে আমি আর সাহস করতে পারিনি।তোর মধ্যে যতটা সাহস ছিল তার বিন্দুমাত্র আমার ছিলনা। ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম।তাই মানা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। কেমন করে জানি ভাইয়া কে পটিয়ে বাসার সবাইকে বিয়ের জন্য রাজি করে ফেলেছে। আমিও আর দ্বিমত করিনি।তিন মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। তোকে ভীষণ মিস করেছি। কিন্তু তোর ঠিকানা তো আমি জানতাম না।”

-“তুই ভালো আছিস তো?”

-“হুম।রাকিব আমাকে অনেক ভালোবাসে।তাকে তোর কথা সব বলেছি।সে তোকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।”

-“কই সে?”

তারপর দৃশ্য রাকিবের সাথে অনেক ক্ষন গল্প করে।ছেলেটা ভীষণ মিশুক।নাবিলার সাথে ভীষণ মানিয়েছে।সবাই নিজেদের জীবনে ভালো আছে জেনে দৃশ্য ভালো লাগছে।শুধু নিজের ভাইয়াই ভালো নেই।দৃশ্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তখনই মাহাদ রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দৃশ্যর বেডে শুয়ে পড়ে।দৃশ্যকে বুকের মাঝে নিয়ে অভিমানী সুরে বললো

-“সবাই আমার সাথে শত্রুতা করছে।আমার বউকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। এখন আর কাউকে রুমে ঢুকতে দিবো না।আমার বুকে চুপটি করে ঘুমিয়ে পরো।তোমার রেস্ট প্রয়োজন।”

দৃশ্য মুচকি হাসলো। মাহাদের বুকে মুখ গুজে ঘ্রাণ নিলো।সেই মিষ্টি ঘ্রাণ।দৃশ্য যেনো মাতাল হয়ে যাবে।সে তার বুকে একটা ছোট্ট কামড় দিলো। মাহাদ বললো

-“ইদুরের বাচ্চার মতো কামড় দিচ্ছ কেনো?আমার মাথা বিগড়ে গেলে কিন্তু খবর আছে।আগের মতো কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করবো না।চুমুর বর্ষণ শুরু করবো।”

-“অসভ্য।”

-“আমি সভ্য প্রেমিক হলেও চরম মাত্রায় অসভ্য হাজবেন্ড হবো।সো সাবধান।”

দৃশ্য মাহাদের বুকে চুপটি করে শুয়ে রইলো।এই ছেলেটা একদম লাগামহীন হয়ে গেছে।যখন তখন লজ্জা দিচ্ছে।তাই চুপ করে ঘুমিয়ে পরাই ভালো।

পরদিন সকালে দৃশ্য ঘুম থেকে উঠে মাহাদকে পাশে পেলো না।হঠাৎ তার চোখ পড়ল পায়ের প্লাস্টারের দিকে।সেখানে লেখা “will u marry me again Bou”

দৃশ্য অবাক হয়ে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।এমন প্রপোজ সে জীবনেও দেখে নি।প্লাস্টারের লিখে বিয়ের প্রপোজাল মনে হয় এক মাত্র তার পাগলটার পক্ষেই সম্ভব।পাশের টেবিলে চোখ গেলো।সেখানে একটা ছোট্ট বক্স।দৃশ্য বক্সটা খুলে হতাশ হলো।বক্সটা খালি।তখনই মাহাদ কোথেকে এসে তার পাশে বসে দৃশ্যর হাতে একটা সাদা হীরের অংটি পরিয়ে দিলো।আর হাতে বেশ কয়েকটা চুমু খেল।দৃশ্য বললো

-“আমিতো এখনো আনসার দিইনি। আংটি পরিয়ে ফেললে?”

মাহাদ কপাল কুঁচকে বললো
-“আমার আনসারের প্রয়োজন নেই।তুমি তো আমারই।আমি তো জাস্ট এমনি তোমাকে চমকে দেওয়ার জন্য এসব করেছি।উত্তর হে হলেও তুমি আমার বউ।আর না হলেও আমার বউ।”

দৃশ্য অভিমানী সুরে বললো
-“তুমি একটা খারাপ।আনসার শুনবে না তাহলে এই ভাবে জিজ্ঞেস কেনো করো?সব কিছুতেই নিজের মন মর্জি চালাও।”

-“আমার বউ।যা খুশি করবো তোমার কি?”
দৃশ্য মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণ পর এক মহা ঝামেলার সৃষ্টি হলো।ফাহিম বলছে দৃশ্যকে সে তার সাথে রাজশাহী নিয়ে যাবে।অন্য দিকে মাহাদ তা কিছুতেই হতে দিবে না।দৃশ্যকে আর এক মুহুর্ত সে দূরে রাখতে পারবে না।ফাহিম বললো

-“আমার বোনকে আমি নিয়ে যাবো।ওর এই সময় টেক কেয়ার এর প্রয়োজন। তাই তার পরিবারের সাথে থাকাটাই শ্রেয়।”

মাহাদ অন্য দিকে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে বললো
-“আমার বউকে আমি নিয়ে যাবো।ওর টেক কেয়ার এর জন্য আমি একাই যথেষ্ট। তাছাড়া এখন শ্বশুরবাড়ী তার পরিবার।”

-“আমার বোনটা ঠিক মতো হাঁটতেও পারছে না।এই সময় নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে সে কি করে মানিয়ে নিবে?”

-“দৃশ্য আমাকে চেনে আজ আট বছর ধরে।আর আমার পরিবার মোটেও তার জন্য নতুন না।ওর সব বিষয় আমি দেখে নেবো।কিন্তু ওকে আর কোথাও যেতে দিবো না।”

ফাহিম আর মাহাদের মধ্যে তর্ক লেগে গেলো।দৃশ্য চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে।এই মানুষ দুটির মধ্যে ইগোর বিশাল পাহাড়।কেউ কারো কাছে নত হতে রাজি না।বাকি সবাই ও ওদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।আনিকা কবির ফাহিমকে ধমকে থামলেন।আখি রহমান মাহাদকে বললেন

-“অনেক হয়েছে মাহাদ এবার থাম।তোর মধ্যে কোনো কমন সেন্স নেই।বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস।দৃশ্যকে ওর ভাইয়ার সাথে যেতে দে।কয়দিন পর আমরা একেবারে ধুমধাম করে বৌমাকে নিয়ে আসবো।বিয়ের আয়োজন কিছুটা সময় লাগবে।ততদিন বৌমাকে তার পরিবারে সাথে কিছুটা সময় কাটাতে দে।”

মায়ের উপরে কিছুই বলতে পারলো না সে।দৃশ্যর দিকে অসহায় ভাবে তাকালো।দৃশ্য তখনও সবার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
বিকেলের দিকে দৃশ্যকে রিলিজ দেওয়া হলো। মাহাদ দৃশ্যকে কোলে করে ফাহিমের গাড়িতে বসিয়ে দিলো।আর দৃশ্যর কপালে চুমু একে বললো

-“আমি জলদি আসবো তোমাকে নিতে।”

দৃশ্য মাথা নেরে সম্মতি জানালো।
-“সাবধানে থাকবে।আর কোনো সমস্যা হলেই আমাকে জানাবে।তোমার বিষয়ে আমি করো উপর ভরসা করতে পারিনা।আর কল করলে রিসিভ করবে।মনে থাকবে?”
-“হুম।”

-“আই লাভ ইউ পিচ্ছি।”

-“আই লাভ ইউ টু।”

মাহাদ বেরিয়ে আসলে ফাহিম আর তার পরিবার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। মাহাদ অনেকটা সময় সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।মাহিম ভাইয়ের পিঠে চাপর মেরে বললো

-“ভাইয়া তোমাকে দেখতে এখন দেবদাসের নিউ ভার্সন মনে হচ্ছে।আগেও বউ ছাড়া ছিলে।মা কায়দা করে আবারো তোমাকে বিবাহিত ব্যাচেলর করে দিলো।মা একদম ঠিক করেছে।”

মাহাদ রেগে মাহিমের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো
-“আমার সাথে মজা নিস?তোর বিয়েতে একটা বিশাল গেঞ্জাম বাজাবো দেখিস।”

-“আমার বিয়েতে পড়ে গেঞ্জাম বাধিও।আগে নিজের বিয়েতে যে গেঞ্জাম বাঁধবে সেটা সলভ করো। দাদী নামক গেঞ্জাম যে সামনে ত্রিশূল নিয়ে দাড়িয়ে আছে ভুলে গেছো?”

মাহাদ এবার চিন্তায় পরে গেলো।দাদীকে কি করে মানাবে বুঝতে পারছে না।এই দুষ্টু বুড়ি আবার ঝামেলা করবে নাতো?তার দাদী তাকে ভীষণ ভালোবাসে।কিন্তু সে আবার ঘাড় তেরা।তাকে মানানো বেশ মুশকিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here