#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_24
মাথায় হাজারো প্রশ্ন নিয়ে প্রায় অনেক রাত করে বাসায় ফিরলো মাহাদ। প্রায় অনেকটা সময় দৃশ্যর বাসার সামনে সে বসেছিল। বাসার কলিং বেল বাজাতেই আমরিন দরজা খুলে দিল। আমরিন কে দেখে মাহাদ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো
-“কিরে তুই এত রাত অব্দি জেগে আছিস কেনো?”
আমরিন মুচকি হেসে বললো
-“আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম? আপনি কি রোজ এত লেট করে বাসায় ফেরেন?”
-“কারো কাছে কৈফিয়ত দিতে আমি মোটেও পছন্দ করিনা সামনে থেকে সর।”
মাহাদকে চলে যেতে দেখে আমরিন দ্রুত বলে উঠলো
-“আমি খাবার রেডি করছি আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
মাহাদ এবার প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। এমনিতেই দৃশ্যর বিষয়টা নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত।তাই সে ধমকের সুরে বললো
-“আমি তোকে বলেছি খাবো? চুপচাপ নিজের রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়।”
-“মাহাদ ভাই আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
-“আমি কি তোকে বলেছি অপেক্ষা করতে? এরপর আর কখনো অপেক্ষা করবি না।”
কথাটা বলেই মাহাদ দ্রুত হেঁটে উপরে চলে গেল। আমরিন ভাবছে আমিতো আপনার জন্য অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছি।কিন্তু আপনি সেটা বুজেও না বুঝার ভান করেন।
মাহিম সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখল। তার ভাইয়ের প্রতি আমরিনের কি অনুভূতি কাজ করে টা সে বুঝতে পারে। কিন্তু আমরিন ভুল জায়গায় নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করছে সেটা কে বোঝাবে তাকে? তার ভাইয়ের মন-মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু দৃশ্য নামটাই প্রতিফলিত হয়। সেখানে আমরিন নামটা প্রবেশ করার অধিকার রাখে না। তবু কেন বোকার মতো মেয়েটা মিথ্যে আশায় বসে আছে?
আমরিন আর মাহিম সমবয়সী। তাদের সম্পর্কটাও অনেকটা পিঠেপিঠি ভাই বোনের মত। সারাক্ষণ ঝগড়া লেগেই থাকে। মাহিম অনেক আগেই বুঝেছে আমরিন তার ভাইয়ের প্রতি দূর্বল।কিন্তু ততো দিনে মাহাদের সারা হৃদয় জুড়ে অন্য কেউ বসবাস করে।
মাহাদের জীবনে কোন একটা মেয়ে আছে এটা যেনে আমিরিন ভীষন ভেঙে পড়েছিল। অনেকদিন মাহাদ দের বাড়িতে আসেনি। একদিন রাস্তায় মাহাদকে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে দেখে সে বুঝে নিয়েছিল এটাই মাহাদের দৃশ্য। দৃশ্য নামটা মাহাদের পরিবারের প্রায় সকলেই জানে।
আমজাদ রহমার দৃশ্যকে দেখার পর বাড়িতে এসে তার স্ত্রীকে সব জানান।আখি রহমান অবাক হয়ে বলেছিলেন
-“আমি আগেই বুঝেছি কিছু একটা তো আছে যার টানে তোমার ছেলে দুই দিন পর পর রাজশাহীতে চলে আসে। তা মেয়েটা দেখতে কেমন?”
আমজাদ রহমান চায়ের চুমুক দিতে দিতে বললেন
-“ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। আমার ছেলের চয়েজ আছে বলতে হবে। তুমি দেখলে বলবে একদম বাচ্চা একটা মেয়ে। আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”
-“এবার আসুক তোমার ছেলে। বাবাকে মেয়েও দেখিয়ে ফেলেছে আর আমাকে জানালোনা পর্যন্ত?”
-“আরে রাগ করোনা। মেয়েটা মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। মাহাদ সময় নিতে চাচ্ছে। আস্তে আস্তে সবার সাথেই ইন্ট্রোডিউস করাবে।”
-“আমারতো এখনি দেখতে ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে? আমার মাহাদের সাথে মানাবে তো? তাছাড়া মাহাদের যেই রাগ সেটা কি ছোট্ট মেয়েটা ট্যাকেল দিতে পারবে?”
আমজাদ রহমান মুচকি হেসে বললেন
-” ছেলে যে অবস্থা দেখলাম সে তো মেয়েটাকে ছোট বাচ্চার মতো কেয়ার করে। তোমার ছেলে যে বউ পাগলা হবে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।”
আখি রহমান স্বামীর কথা শুনে হেসে দিলেন আর বললেন
-“ছেলের কাছ থেকে তোমার কিছু শেখা উচিত।”
চোখ কুঁচকে আখি রহমানের দিকে তাকিয়ে আমজাদ রহমান বললেন
-“আমি কি কম বউ পাগলা নাকি? এত কষ্ট হওয়ার পরেও সপ্তাহে দুই তিনবার করে কার টানে ফিরে আসি রাজশাহীতে আমি?”
আখি রহমান এবার কিছুটা লজ্জা পেলেন। আসলেই এই মানুষটার সাথে জীবন কাটাতে পেরে তিনি ভীষণ ভীষণ খুশি। তিনি সবসময়ই তার স্বামীর কাছ থেকে যথাযথ সম্মান পেয়েছেন আর পেয়েছেন সীমাহীন ভালোবাসা। ছেলেটা যে অনেকটা বাবার মতোই হয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইল না। আখি রহমান প্রসঙ্গ পাল্টে আবার বললেন
-“তা মেয়েটার বাড়ি কোথায় বাবার নাম কি?”
-“আমি এখনো কিছু জানি না তোমার ছেলে আসলে পরে ডিটেইলস জেনে নিও। মেয়েটাকে দেখে তো ভালো ফ্যামিলির মনে হল। তবে যেটাই হোক এই মেয়েটাকেই আমি আমার ছেলের বউ হিসেবে দেখতে চাই।”
-“মেয়েটা তো দেখা যায় আমার ছেলে আর স্বামী দু’জনকেই ভালো মতো পটিয়ে ফেলছে। দেখা যাক আমাকে কতটুকু পটাতে পারে।”
আমজাদ রহমান হেসে বললেন
-“দৃশ্য কে দেখলে তোমারও আদর করতে মন চাইবে। ভীষন কিউট।”
________________
সময় তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকলো।দেখতে দেখতে দৃশ্যর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন চলে আসলো। গতকাল রাতেও মাহাদ অনেকক্ষণ বুঝিয়েছে কোন প্রকার টেনশন না করতে। দৃশ্য ভয়ে ভয়ে মাহাদকে জিজ্ঞাসা করেছিল
-“আমি যদি ফেল করি তবে কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? নিশ্চয়ই কোন ফেলটুস মেয়ের সাথে তুমি থাকবে না?”
-“পিচ্চি আমি তো তোমার রূপ গুণ দেখে তোমার প্রেমে পড়িনি। তোমার প্রতি আমি মন থেকে গভীর টান অনুভব করেছি। তোমাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল তুমি সে যাকে হয়তো মহান আল্লাহতালা আমার জন্য সৃষ্টি করেছে। তাই এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। তুমি ফেল করলেও আমার বউ হবা আর ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করলেও আমারই বউ হবা।”
-“আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে।”
-“চিন্তা গুলো সরিয়ে ঝট পট কয়েকটা চুমু খেয়ে ফেলো তো।”
লজ্জায় দৃশ্যর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। সে বললো
-“তুমি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছ মিস্টার।”
-“অসভ্যতামি তো শুরুই করলাম না। এতদিন ছোট ছিলে তাই তোমার সাথে তো অসভ্য কিছুই করিনি। কিন্তু এখন থেকে তুমি এক অসভ্য মাহাদ কে চিনবে।”
-” আমি তোমার চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো।”
-“টাক জামাই নিয়ে যদি তুমি হ্যাপি থাকো তাহলে ছিঁড়তে পারো আমার সমস্যা নেই।”
রাতে মাহাদের সাথে কথা বলে তার মাথা থেকে টেনশন দূর হলেও সকাল থেকেই সেই টেনশন আবার জেকে বসেছে। দৃশ্য কে চিন্তিত দেখে আনিকা কবির বললেন
-“পরীক্ষা দেওয়ার আগে টেনশন করতে পারিস না? এখন খাতায় যা লিখেছিস রেজাল্ট তো তাই আসবে তাই না? শুধু শুধু টেনশন করে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে লাভ আছে?”
নাবিলা চিন্তিত সুরে বললো
-“চাচি তুমিও কি এখন আম্মুর মত কথা বলবা? আমাকে টেনশন করতে দেখে আম্মু তো সকাল থেকেই আমাকে বকাঝকা করে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে এখানে আসলাম তুমিও দেখি একই কাজ করছ।”
-“তো কি করব তোদের দুইটাকে তো এখন আমার পিটাতে মন চাচ্ছে। পরীক্ষার আগে তো তোদের আমি বই পড়তেই দেখতাম না। এই দৃশ্যকে সারাদিন ঠেলতে ঠেলতে টেবিলে পাঠানো লাগতো।”
নাবিলা মনে মনে ভাবলো চাচী তোমার মেয়ে ভালো রেজাল্ট ঠিকই করবে। বয় ফ্রেন্ড এর প্যারা খেয়ে যে সিরিয়াস পড়াশোনা করেছিল শেষ সময় গুলোতে। আমার তো এখন আফসোস হচ্ছে আমারও একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো যে আমাকে হুমকি দিত আর আমিও বাধ্য হয়ে পড়তাম।”
দুপুরের দিকে তাদের রেজাল্ট বের হলো। দৃশ্য জিপিএ 5 পেয়েছে। আর নাবিলা 4.90। নাবিলার মন কিছুটা খারাপ হয়ে আছে জিপিএ ফাইভ না পাওয়াতে। এবার সে মনস্থির করল একটা প্রেম সে করবেই করবে। দৃশ্য সারারাত প্রেম করেও কেমন করে gpa-5 পেল সেটাই তো মাথায় আসছে না নাবিলার। তাই সে চিন্তা করল এবার সে আশরাফের প্রপোজ একসেপ্ট করে ফেলবে। ইন্টারে সে ফাটাফাটি রেজাল্ট করতে পারবে।
সারাদিনে মাহাদ আর দৃশ্যকে কল করল না। দৃশ্য মনে পাহাড় সমান অভিমান জমতে শুরু করল। মাহাদ একটা খবর নিল না তার রেজাল্টের? তাহলে তখন এত হুমকি কেনো দিলো? সে বেশ কয়েকবার মাহাদ কে কল করলো।মাহাদ ফোন রিসিভ করছে না।
দুপুরের মধ্যেই ফাহিম পুরো এলাকায় মিষ্টি বিলিয়ে ফেলেছে। তার অতি আদরের বোন এত ভালো রেজাল্ট করেছে দেখে সে ভীষণ খুশি। তমাদের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গেলে তমা দরজা খুলে দিল। আর মুচকি হেসে বললো
-“মিষ্টি হাতে আপনাকে আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভীষণ ভালো লাগছে ফাহিম ভাই। দেখতে কেমন জামাই জামাই লাগছে মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে এসেছেন।”
ফাহিম এক ধমক দিয়ে বললো
-“অসভ্য একটা যা আঙ্কেলকে ডাক।”
-“যাচ্ছি তো এতো চিল্লানোর কি আছে?”
মুখ ভেংচি কেটে তমা তার বাবাকে ডেকে আনল।
দৃশ্যর সকল আত্মীয়-স্বজন ই তাকে কল করে কনগ্র্যাচুলেট করেছে। কিন্তু সে যার আশায় বসে আছে সে তো একবারও কনগ্র্যাচুলেট করল না। ভীষণ মন খারাপ নিয়ে দৃশ্য বসেছিল। বিকেলের দিকে নাবিলা ফাহিমকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে দৃশ্য কে নিয়ে বাইরে বেরোলো। মূলত তারা বান্ধবীরা মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসে খাবে। আজকের দিনটায় ফাহিম আর দৃশ্যকে মানা করতে পারলো না।
রেস্টুরেন্টে বসে আছে দৃশ্য ,নাবিলা ,মৌ আর সায়মা। মৌও জিপিএ 5 পেয়েছে।আর সায়মা 4.80।
নাবিলা কিছুটা মন খারাপ করে বললো
-“দেখলি সায়মা, এই দুই বান্দরনী সারা দিন প্রেম করে জিপিএ 5 পেয়ে গেল। আর আমরা দুই বলদ কি করলাম?”
সায়মা মুখটা কালো করে বললো
-“একদম ঠিক বলেছিস।”
নাবিলা এবার বললো
-“এইচএসসি পরীক্ষার আগে আমাদের প্রেম শুরু করতে হবে। না হলে সেখানেও জিপিএ ফাইভ মিস।”
দুই বান্ধবীর কথা শুনে মৌ হেসে কুটিকুটি অবস্থা।দৃশ্যর সেদিকে খুব একটা মন নেই। সেতো মাহাদের চিন্তায় অস্থির।
কিছুক্ষণ পর ওয়েটার তাদের সামনে একটা বড় কেক এনে রাখলো। দৃশ্য মনমরা হয়ে কেকের দিকে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেল। কারণ সেখানে লেখা
“পিচ্চি বউ আর শালিকাদের জন্য রইল অসংখ্য শুভেচ্ছা।”
দৃশ্য কিছুক্ষণ অবাক হয় সেদিকে তাকিয়ে রইল। মুহুর্তে সে পুরো রেস্টুরেন্টে চোখ বোলাতে লাগলো। তার মন বলছে কাঙ্খিত মানুষটি এখানে কোথাও আছে। চারি পাশে তাকিয়ে কোথাও কাঙ্খিত মানুষকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ করে নিজের পাশে তাকাতেই চমকে উঠলো। তার পাশের চেয়ারে মাহাদ বসে গালে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। মুহূর্তেই দৃশ্য মনে হল সে কল্পনা করছে। তাই সে সামনে বসা মানুষটির হাতে জোরে চিমটি কাটলো। মুহূর্তেই মাহাদ জোরে চিৎকার দিয়ে বললো
-“ইয়া আল্লাহ!আমাকে কি চিমটি দিয়ে মাংস তুলে ফেলবে নাকি?”
খুশিতে দৃশ্য কেঁদেই ফেললো। মাহাদ দৃশ্যর মাথাটা পরম আদরে নিজের বুকে নিয়ে সিল্কি চুলে পর পর কয়েকটা চুমু খেয়ে বললো
-“তোমাকে আর সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে না। কারণ যতবারই সারপ্রাইজ দিয়েছি ততবার ই তুমি এভাবে কেঁদে ভাসিয়েছো।”
দৃশ্য নিজেকে শান্ত করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো পাশের চেয়ারে জয় ,তানিম ও রাফসান বসে আছে। দৃশ্য লজ্জায় মাহাদের থেকে সরে বসল। জয় মৌয়ের হাত ধরে বসে আছে। আর মৌ বারবার চোখ গরম করে জয়ের দিকে তাকাচ্ছে আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।রাফসান মুচকি হেসে বললো
-“আরে এখানে তো সব নিব্বা নিব্বি দের প্রেম চলে।আমিই সিঙ্গেল রয়ে গেলাম।”
তানিম হেসে বললো
-“আমিতো শালা খালাতো বোন পটাই ফেলছি।আর তুমি যে মিয়া চিটাগাংগে রুপসা নামক মেয়ের পিছে ঘুরঘুর করতেছ খবর আমরাও পাই।”
মাহাদ হেসে বললো
-“শালারা চুপ থাকবি? আমার হবু বউ আর শালিকাদের সামনে কি শুরু করেছিস?”
খাবার অর্ডার দিয়ে তারা গল্পে মেতে উঠলো। মূলত মাহাদ নাবিলাকে বলে দৃশ্যকে আজ বাইরে আনিয়েছে।সে আজ দৃশ্যকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।
দৃশ্য বারবার আড়চোখে মাহাদ কে দেখছে। এই মানুষটা দিন দিন এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে কেনো? আগের ক্লিন সেভ লুক চেঞ্জ করে এখন গালে কিছুটা খোঁচা খোঁচা দাড়ি খেলা করছে। দেখতে ভীষণ আকর্ষণীয় লাগছে। ভীষণ মন চাইছে একবার মাহাদের দাড়িতে হাত বোলাতে।দৃশ্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহাদ ভ্রু নাচিয়ে ‘ কী’ জিজ্ঞাসা করল। দৃশ্য মাথা নাড়িয়ে না জানালো। মাহাদ দৃশ্যের দিকে ঝুকে তার কানে ফিসফিসিয়ে বললো
-“আমার পিচ্চিটার অভিমান কি এখন কিছুটা কমেছে?”
জবাবে দৃশ্য মুচকি হাসলো। যার মানে হল অভিমান সেই কখনই গলে পানি হয়ে গেছে। মাহাদ নিচুস্বরে আবার বললো
-“তোমার রেজাল্ট শুনে আমি ভীষন খুশী হয়েছি পিচ্চি। এইচএসসি তেও ঠিক এমনই রেজাল্ট করতে হবে বুঝেছ?”
দৃশ্য মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো।
জয় মৌয়ের কানে কানে বলছে
-“আগে দৃশ্য ভাবিকে দেখে ধানি লঙ্কা ভাবতাম আর সেই মেয়ে এখন মাহাদের সামনে লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারে না। আর যাকে সহজ-সরল ভেবেছি সেই মেয়ে কিনা আমাকে দিন রাত 24 ঘন্টা শাসিয়ে বেড়ায়?”
মৌ চোখ গরম করে জয়ের দিকে তাকালো। জয় শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে ভাবলো
এখন দৃশ্য ভাবিকে না বরং এই মেয়েকে দেখলেই আমার ভয় লাগে। পারেনা চোখ দিয়েই আমাকে ভৎস করে দেবে। প্রপোজ একসেপ্ট করলে ও জয়কে সারাক্ষণ দৌড়ের উপরে রাখে মৌ। আর জয় সহজ-সরল মৌয়ের ধানি লঙ্কার রূপ দেখে অবাক হয়।
তার বেশ কয়েকদিন পর দৃশ্য কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। নিয়মিত চলতে থাকে তার কলেজ লাইফ। মাহাদ মাঝে মাঝে আসে দৃশ্য সাথে দেখা করতে। যথেষ্ট সতর্কতার সাথে তারা দুইজন দেখা করে। সময়ের সাথে সাথে তাদের সম্পর্কটা আরো গভীর হতে শুরু করে। মাহাদ কে ছাড়া দৃশ্য নিজের জীবন কল্পনা করতে পারে না।মানুষটা তার মন মস্তিষ্ককে দখল করে বসে আছে। আজকাল প্রায়ই মাহাদ বিভিন্ন কথায় দৃশ্যকে লজ্জায় ফেলে দেয়। রেগে দৃশ্য কতগুলো বকা শুনিয়ে দেয় মাহাদকে।
একদিন সন্ধ্যের দিকে দৃশ্য মাহাদকে কল করে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে একটা মেয়ের গলার শব্দ পায় দৃশ্য। দৃশ্যের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। মেয়েটি তখনও হ্যালো হ্যালো বলছে। দৃশ্য কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো
-“কে আপনি? আর মাহাদের ফোন আপনার কাছে কেনো?”
-“তুমি কে? আর মাহাদকে বারবার কল করছো কেন?”
-“আমি কে সেটা পরেও জানা যাবে। কিন্তু মাহাদের ফোন আপনার কাছে কেন?”
অপর পাশ থেকে মেয়েটি বললো
-“আমি মাহাদের গার্লফ্রেন্ড।তাই তার ফোন আমার কাছে থাকতেই পারে।”
মুহূর্তেই দৃশ্যর বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সেকি ঠিক শুনছে? দৃশ্যর পুরো শরীর কাপতে লাগলো। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
-“আপনি প্লিজ ফোনটা মাহাদকে দিন আমি তার সাথে কথা বলবো।”
-“এখন মাহাদকে কল দেওয়া যাবে না। এখন আমরা ব্যস্ত আছি তুমি পরে কল করো।”
কথাটা বলেই মেয়েটা ফোন কেটে দিল।দৃশ্যর দুচোখ উপচে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সে মাহাদকে প্রচন্ড বিশ্বাস করে। কিন্তু এই মুহূর্তে সে নিজের মনকে সামলাতে পারছে না। হয়তোবা সেই বয়সে নিজেকে সামলানো আসলেই সম্ভব নয়। কষ্টে দৃশ্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে। অন্য মেয়ের মুখে মাহাদের গার্লফ্রেন্ড শব্দটা দৃশ্য ঠিক মানতে পারছে না।
মোবাইলটা খাটের ওপর ছুঁড়ে ফেলে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল দৃশ্য। চারপাশ কেমন বিষাদময় লাগছে। সে মাহাদের আশেপাশে কোন মেয়েকেই সহ্য করতে পারে না। সেখানে তার গার্লফ্রেন্ড শব্দটা সে কিছুতেই হজম করতে পারছে না। মনে হাজারো অভিমান জমা হতে লাগল তার। তাহলে কি মাহাদ তাকে ভুলে অন্য কাউকে চাইছে?তার লাইফ থেকে দৃশ্য নামটাকে মুছে দিতে চাইছে?