#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_25
দৃশ্য আজ ঘুম থেকে খুব সকাল সকাল উঠে পড়েছে। দ্রুত রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে বসতেই জিনিয়া প্রশ্ন করলো
-“কি ব্যাপার দৃশ্য আজ এত দ্রুত অফিসে যাচ্ছিস?”
দৃশ্য পরোটা মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বললো
-“আজ অফিসে প্রোগ্রাম আছে। ড্রিম ফ্যাশন হাউসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।”
জিনিয়া কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞাসা করলো
-“হ্যাঁরে দৃশ্য, আমাদের গায়ক সাহেব মাহাদের সাথে নিশ্চয়ই তোর প্রায়ই দেখা হয়? ইসস!তুই কত লাকী।”
দৃশ্য গম্ভীর স্বরে বললো
-“উনি প্রতিদিন অফিসে আসেন না, সপ্তাহে দুই তিন দিন আসে। তাছাড়া আমি সেখানে কাজ করতে যাই। কোনো সেলিব্রেটিকে দেখতে যাই না।”
জিনিয়া বিরক্তির স্বরে বললো
-“তুই আসলে একটা নিরামিষ। চোখের সামনে এত হট একটা পোলা ঘুরে আর তোর নাকি কোনো হেলদোল নাই।”
লতা এতক্ষণ দুজনের কথা চুপচাপ শুনছিল। জিনিয়াকে কিছুটা ধমক দিয়ে বললো
-“সবাই কি তোর মত বেহায়া?ওইটা দৃশ্যর কাজের জায়গা প্রেম করার না।”
জিনিয়া মুখে ভেংচি কেটে বললো
-“ভাব নিওনা তো আপু। তুমি নিজেই ওই গায়ক সাহেবের উপর ক্রাশ খাইছো আবার আমাকে বল?”
জিনিয়ার কথা শুনে লতার গলায় খাবার আটকে গেল।সে চোখ গরম করে বললো
-“আমি অলরেডি আরেকজনের সাথে কমিটেড বুঝতে পেরেছিস?”
তারপর লতা কিছুটা মুচকি হেসে বললো
-” তাছাড়া সুন্দর পোলা দেখলে ক্রাশ খেলে সমস্যা কি? আমার বয়ফ্রেন্ডের তো সমস্যা নাই তোর এত সমস্যা কেন?”
জিনিয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো
-“সার্থপর মহিলা।নিজে ওই হট পোলা দেখে ক্রাশ খেলে সমস্যা নাই।আর আমি মাসুম বাচ্চা খেলেই যত দোষ?”
দৃশ্য বিরক্তি নিয়ে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে বললো
-“তোমরা দুজন মারামারি, কামড়াকামড়ি করো আমি আসছি।”
দৃশ্যর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লতা বলে উঠলো
-“আমার মনে হচ্ছে দৃশ্যর কিছু একটা হয়েছে।কয়েক দিন ধরে ওকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছে।”
জিনিয়া গম্ভীর স্বরে বললো
-“আমিও খেয়াল করেছি?মেয়েটা নিজের কষ্টগুলো কাউকে বুঝতে দিতে চায়না।”
লতা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
দৃশ্য অফিসে পৌঁছে দেখলো সারা অফিস সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে।তাদের শোরুমে ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট চলছে।যা প্রায় এক সপ্তাহ অব্দি চলবে।তাই সেই দিকটাতে কাস্টমারদের অনেক ভিড়।দৃশ্য লিফটে করে থার্ড ফ্লোরে চলে আসলো।দৃশ্য আগে চলে গেলো মিস লুবনার কেবিনে।
অফিসের রুফটপে আজ বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।দৃশ্য, ঈশিতা সাথে আরও কয়েকজন চেঞ্জিং রুমে রেডি হচ্ছে।তাদের পুরো টিমের সব মেম্বারদের আজ মিস লুবনা তার ডিজাইন করা ড্রেস গিফট করেছে। ঈশিতা প্রচন্ড খুশি হয়ে এই প্রথম মিস লুবনার নামে প্রশংসা করলো।এই মহিলার মতো খচ্চর মহিলা সে আগে কখনো দেখেনি। তবে দৃশ্যর এক অজানা কারণে মিস লুবনাকে ভালো লাগে।জীবনে সাফল্য আনতে হলে তার মতই হতে হবে।তবে দৃশ্য একটা জিনিষ খেয়াল করেছে মিস লুবনা তাকে অন্য সবার চাইতে বেশি পছন্দ করে।তবে কাজে ভুল হলে বকা দিতে পিছ পা হয়না।
সন্ধ্যে হতেই বিভিন্ন গেস্ট আসতে শুরু করেছে।দৃশ্য ও বাকি স্টিফরা তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।বড়ো বড়ো সেলিব্রেটিরা এসেছে।অভিনেতা আব্রাহামকে দেখে ঈশিতা পারে না অজ্ঞান হয়ে যায়।অত্যাধিক সুদর্শন যুবকটি চলচ্চিত্র জগতে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। ঈশিতার অবস্থা দেখে দৃশ্য বললো
-“মৃদুল ভাইয়া কি কি বলবো যে তুমি আব্রাহামকে দেখে ফিট খেয়ে গেছো?”
ঈশিতা মুখ কালো করে বললো
-“আরে আবরামকে দেখে তো ক্রাশ খেয়েছি। যেমনটা মাহাদ স্যার কে দেখে খাই। কিন্তু ভালো তো শুধু ওই একজনকেই বাসী।ব্যাটা বুজলে তো?”
-“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।”
পাঁচ মিনিট পরে দৃশ্যর চোখ গেল সামনের গেটের দিকে। হোয়াইট শার্ট, এস কালার স্যুট পরা ফর্মাল লুকে মাহাদ এগিয়ে আসছে।দৃশ্য কয়েকবার শুকনো ঢোক গিললো। মাহাদ কে দেখে দৃশ্যর কেমন চোখ জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে মাহাদের এইরূপে দৃশ্য চোখ না শুধু তার পুরো শরীরটাই জ্বলে যাবে। বাহুর ফোলা পেশী গুলো সুটের উপর থেকেই বোঝা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এক্ষনি জামা ফেরে বেরিয়ে আসবে।চুল গুলো জেল দিয়ে সুন্দর ভাবে সেট করা।ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে।এক নজর দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে সামনে চলে গেলো।এমন একটা ভাব যেনো দৃশ্যকে চেনেই না।দৃশ্য এক নজরে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড পর তার হুঁশ আসলো আর নিজেকে কয়েকটা গালি দিল মাহাদের দিকে এভাবে বেহায়ার মত তাকিয়ে থাকার জন্য।
মাহাদ আসার পর পরই পার্টিতে ঢুকলো মডেল অরিন।ব্ল্যাক একটা ড্রেস পড়েছে যা গলা থেকে অনেক নিচে আর হাঁটু থেকে অনেক উপরে।টাইট ফিটিং জামাতে ভীষণ মানিয়েছে।ছোট ড্রেস পড়লে যে মেয়েদের বাজে লাগবে এমন কোনো কথা নেই।নাহলে এতো ছোট পোশাকেও অরিনকে এত্তো সুন্দর লাগছে কেমন করে?দৃশ্য মেয়ে হয়েও চোখ সরাতে পারছে না।
সে আজও সেই দিনের মতো একটা কাজ করলো। মাহাদের ভার্সিটিতে ইবদিতা মেয়েকে দেখে নিজের দিকে তাকিয়ে ছিলো।আজও তাই করলো। দেখলো সে একটা জিন্স তার উপর ওয়ান পিস লং থ্রিপিস পড়েছে।এই ড্রেস কোনো ওড়না হয়না।সামান্য ওড়না ছাড়াই তার নিজের কাছে কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। মাহাদের সেই রঙিন দুনিয়ায় সে আসলেই কখনো খাপ খাওয়াতে পারতো না। মাহাদের পাশে শুধু মাত্র অরিন দের মত মেয়েদের মানায়।তার মতো আনস্মার্ট মেয়েকে না।
পার্টি পুরোপুরিভাবে জমে উঠেছে। কখনো গান-বাজনা চলছে তার সাথে চলছে বেয়ার পর্টি। এই ধরনের পার্টি দৃশ্য মোটেও পছন্দ করেনা। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। মাহাদের এই ঊশৃংখল লাইফ ও দৃশ্যর পছন্দ না। মাঝে মাঝে দৃশ্য মন চায় থাপড়িয়ে মাহাদের গাল লাল করে ফেলতে। অসভ্য ,বাজে, গাজাখোর ছেলে একটা।তার ভাবতেই অবাক লাগে এই ছেলেটাকে এক সময় পাগলের মতো ভালোবেসেছে।
দৃশ্যর ফোনে কল আশায় রুফটপ থেকে ফিফথ ফ্লোরে নেমে আসলো। সেখানে প্রচন্ড জোরে মিউজিক বাজছে যার ফলে কথা বলা সম্ভব না। নিচে নেমে দেখল লতা আপু কল করেছে। নিশ্চয়ই দৃশ্য কখন বাসায় ফিরবে সেটা জানতেই কল করেছেন। দৃশ্য জানিয়ে দিল তার ফিরতে দেরী হবে।পেছনে ফিরতেই দেখলো মাহাদ লিফট থেকে বের হচ্ছে। হাতে তার বেয়ার ক্যান।বেয়ারে চুমুক দিয়ে দৃশ্য সামনে দিয়ে যেতে যেতে গম্ভীর স্বরে বললো
-“কাম উইথ মি।”
দৃশ্য কিছুটা অবাক হয়ে বললো
-“জি?”
কিন্তু মাহাদ ততক্ষণে চলে গেছে চেঞ্জিং রুমে। মাহাদের এই অ্যাটিচিউড দৃশ্যর মোটেও পছন্দ হলো না। কেমন একটা ভাব নিয়ে তার দিকে না তাকিয়েই বললো কাম উইথ মি? সে কি ভেবেছে এটা শুনে আমি ঢং ঢং করে তার পেছনে চলে যাব?মোটেই না।”
দৃশ্য চেঞ্জিং রুমে ঢুকে দেখল মাহাদ কাপড়ের শেলফ এর মাঝে কিছু একটা খুঁজছে।দৃশ্য কপাল কুঁচকে সে দিকেই তাকিয়ে রইলো। মাহাদ হাতে একটা স্কার্ফ নিয়ে সেটা পেচাতে পেচাতে তার দিকে এগিয়ে আসলো।দৃশ্যর এবার কিছুটা ভয় হচ্ছে।বেহায়ার মত কেনো যে চলে আসলো? মাহাদ কি তার সাথে আবারো অসভ্যতামো করবে?
মাহাদ তার সামনে এসে পা থেকে মাথা অব্দি একবার স্ক্যান করে নিল। এতে দৃশ্য ভীষণ অস্বস্তিতে পরে গেল। ছি! কি বিচ্ছিরি একটা অবস্থা। মাহাদ গম্ভীর গলায় বললো
-“গায়ের ওড়না কই?”
মাহাদের এমন কথা শুনে দৃশ্য কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।কপাল কুঁচকে বললো
-“আপনি একটা ফ্যাশন হাউজের উনার হয়ে ফ্যাশন সম্পর্কে কোন ধারণা নেই?”
মাহাদ প্রচন্ড রেগে দৃশ্যর চুল খামচে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো
-“ফ্যাশন মাই ফুট।এতটা উশৃংখল ভাবে চলার রাইট তোমাকে কে দিয়েছে? ছেলেদের কি বুক দেখিয়ে এট্রাক্ট করতে চাইছ? মনে রেখো তোমার ভাই এসব করার পারমিশন দিলেও আমি দেইনি।”
মাহাদের আগ্রেসিভ রূপ দেখে দৃশ্য অনেকটা অবাক হলো। মাহাদ তার উপর এতটা অধিকারবোধ কেন দেখাচ্ছে? যে সম্পর্কটা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে সেখানে মাহাদের এমন বিহেভিয়ার মোটেও মানানসই না।দৃশ্য প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। মন চাইছে মাহাদের জেল দেওয়া চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। এই লোকটা পেয়েছে কি? কিছুটা রেগে দৃশ্য বললো
-“মুখ সামলে কথা বলবেন মিস্টার মাহাদ। আমাকে আপনার মডেল গার্লফ্রেন্ডের মত মনে করবেন না। ক্লিভেজ দেখিয়ে আপনাদের মত মানুষদের তারা এট্রাক্ট করতে চায়। আমাকে সেই কাতারে ফেলার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। তাছাড়া আমি কি করব না করব সেটা সম্পূর্ণ আমার বিষয়।”
মাহাদ এবার দৃশ্য চুল ছেড়ে হাতের স্কার্ফটা দৃশ্যর গলায় বাঁধতে বাঁধতে বললো
-“আমি কেমন সেটা তোমাকে বলতে হবে না নিশ্চয়ই? নেক্সটাইম আমি এমন কিছু দেখতে চাই না। ফ্যাশন হাউজের জব করছ বলে আল্ট্রামডার্ন হয়ে যাবা সেটা আমি মোটেও টলারেট করবো না। আগে ঠিক যেমন ছিলে ভবিষ্যতেও তেমনি থাকতে হবে। একটুও চেঞ্জ হলে জানে মেরে ফেলবো।”
-“আপনার কথা মানতে তো আমি বাধ্য নই।”
মাহাদ মুচকি হেসে দৃশ্য ঠোঁটে লিপস্টিক বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মুছতে মুছতে বললো
-“তুমি অবশ্যই বাধ্য।”
কথাটা বলেই দৃশ্যর ঠোঁটে ছোঁয়া আঙুলটা নিজের মুখে পুরে নিল।দৃশ্য অবাক হয়ে সে দিকেই তাকিয়ে আছে। মাহাদের বিহেভিয়ার আজ পুরোপুরি অন্যরকম। নিজের আঙ্গুল টা মুখ থেকে সরিয়ে কপাল কুচকে বললো
-“টেস্ট একদম বাজে। এরকম ফালতু লিপস্টিক আর লাগাবে না। আমার পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। লিপস্টিক ছাড়াই টেস্ট বেটার।”
কথাটা বলেই মাহাদ এক চোখ টিপ দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।দৃশ্য এখনও সেখানেই বোকার মতো হা করে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ঘটনাটা তার মাথার উপর দিয়ে গেল। মাহাদ হঠাৎ তার সাথে এমন বিহেভ কেনো করছে?
দৃশ্য একপাশে দাঁড়িয়ে ঈশিতা, মৃদুলের ও অন্য কলিগদের সাথে গল্প করছে। আশেপাশের কোন কিছুতে ভালো লাগছে না। মাহাদের ব্যবহার তাকে ভীষণ ভাবছে। দৃশ্যর চোখ বারবার মাহাদের দিকে যাচ্ছে। মাহাদ হেসে হেসে সবার সাথে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে। অরিনের সাথে বেশ ক্লোজ হয়ে ছবি তুলছে তারা। সেদিকে তাকিয়ে ঈশিতা বলে উঠলো
-“আচ্ছা এই অরিনের সাথে কি মাহাদ স্যারের আসলেই রিলেশনশিপ চলছে?”
রিমি বলে উঠলো
-“মিডিয়াতে তো এমন খবরই চলছে। তাছাড়া উনাদের সবসময়ই আমি অনেক ক্লোজ থাকতে দেখি।সেটা কাজের সুবাদে নাকি পার্সোনাল রিজনে সেটা জানিনা।”
দৃশ্যর বুকটা ধক ধক করছে।বুকের বা পাশটায় তীব্র ব্যথা অনুভব করছে। মাহাদ তার জীবনে মুভ অন করবে এটাই তো স্বাভাবিক। সে কেন এতটা কষ্ট পাচ্ছে? দৃশ্য সে দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। এই সবকিছু দেখার সাহস করতে পারছে না। খুব দ্রুতই তাকে এই জবটা ছাড়তে হবে। চোখের সামনে এই মানুষটাকে দেখে সে নিজেকে কিছুতেই ধরে রাখতে পারবে না।তাছাড়া অরিনের সাথে মাহাদকে নিয়ে মিডিয়াতে কি চলছে সেটা দৃশ্য ভালো করেই জানে।
সত্যি সময় তাকে অনেক চেঞ্জ করে দিয়েছে।আগে সে মাহাদের সাথে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্যই করতে পারতো না।অথচ এখন কত মডেলদের সাথেই মাহাদেকে দেখে যাচ্ছে। এখনো সেই দিনের কথা দৃশ্যর মনে আছে।যেদিন একটা মেয়ে নিজেকে মাহাদের গার্লফ্রেন্ড বলে দাবি করেছিলো। সেদিন সে কতটা ভেঙে পড়েছিল।
_________________
মাহাদ সেই কখন থেকেই দৃশ্য ফোনে কল করে যাচ্ছে। কিন্তু দৃশ্য ফোনটা সাইলেন্ট করে পাশে রেখে দিয়েছে। সে এই মানুষটার সাথে মোটেও কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। যেহেতু গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে তাকে কেন বারবার কল দিচ্ছে?যাক না ওই মেয়ের কোলে উঠে বসে থাক না।দৃশ্য আবারো কান্নায় ভেংগে পরলো।এক সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আটটা বাজে।দ্রুত উঠে বসলো।কলেজের জন্য অলরেডি লেট।ফোন হাতে নিয়ে আরো অবাক হলো। ১০০+ মিসড কল। 20+ মেসেজ।লাস্ট কল ও মেসেজ এসেছে রাত চারটা তেইসে। মানে সারা রাত সে দৃশ্যকে কল করেছে।দৃশ্য মেসেজ চেক করলো।মেসেজ গুলি এমন
-“কি করো পিচ্ছি?”
-“কি ব্যাপার পিচ্ছি?”
-“কল ধরনা কেনো?”
-“ওই জান!”😍
-“জান পাখি?”🥰
-“পাখিটা কি রাগ করেছে?”😊
-“কি হয়েছে বলবা?😔
-“মেজাজ খারাপ হচ্ছে কিন্তু?”😡
-“কি নিয়ে রাগ করেছো?প্লিজ বলবে?আমি কোনো ভুল করেছি?”
-“প্লিজ জান কলটা পিক করো।তুমি ঠিক আছো?”
-“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে পিচ্ছি।”
-“আমি আসলে তোর ফোনটা এক আছাড় দিয়ে ভাঙবো।ফাজলামি করিস?জানিসনা তোর সাথে কথা না হলে আমি অস্থির হয়ে যায়?”
-“দৃশ্য আই সয়ার,আমি আসলে তোর কপালে শনি আছে।আমাকে যন্ত্রণা দিয়ে মজা নিচ্ছিস?”😡😡😡
দৃশ্য আর পড়ার সাহস পেলো না।সে জানে নিচের মেসেজ গুলি আরো ভয়ঙ্কর।দৃশ্য ফোন রেখে ওয়াস রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ওয়াস রুম থেকে বের হতেই দেখলো ফোনটা বাজছে।ফোনের স্ক্রিনে ‘ হার্টবিট’ লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। এই নামটা ঠিক যতবার তার ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ঠিক ততোবার তার হার্টবিট ও অস্বাভাবিক ভাবে বিট করতে থাকে।দৃশ্য বুঝতে পারছে আজ তার খবর আছে।সে কিছুটা ভয় নিয়ে কল রিসিভ করতেই মাহাদ ঘুম জড়ানো গলায় বলতে লাগলো
-“ভেঙেছে শান্তির ঘুম?আমার ঘুম হারাম করে অনেক মজা পাওয়া যায় তাইনা?তোকে আদর দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলেছি।তোকে তো দিন রাত শুধু থাপড়ানো উচিত।”
দৃশ্যর রাগ লাগছে।যেখানে তার রেগে চিৎকার করার কথা সেখানে এই অসভ্য রেগে কথা বলছে?পেয়েছে কি?দৃশ্যর প্রচন্ড রাগ লাগছে।রাগে তার শরীর কাপছে।আজ এই ব্যাটার ক্লাস নিয়েই ছাড়বে।দৃশ্য রেগে বললো
-“খবরদার! আর এক আর তুই করে বললে তোর জিব টেনে ছিড়ে ফেলবো। খচ্চর পোলা।আসলেই সুন্দর পোলাদের চরিত্র ভালো হয়না।তোর কয়টা মেয়ে লাগে?ঐখানে যদি তোর গার্লফ্রেন্ড থাকে তাইলে আমার সাথে কেনো নাটক করছিস?গাছেরটাও খাবি আবার তলার টাও কুড়াবি?আর জীবনেও আমাকে কল দিবি না।অসভ্য ছাগল।”
দৃশ্যর কথা শুনে মাহাদের ঘুম নিমিষেই উড়ে গেলো।সে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।দৃশ্যর এই রূপ সে আগে কখনো দেখেনি।আগে অনেক চঞ্চল থাকলেও তাদের রিলেশনের পর থেকে দৃশ্য আর বাঁদরামি করতো না।তবে আজ প্রথম দৃশ্য তাকে তুই করে বলছে।সত্যি বলতে মাহাদ কিছুটা ভয় পেয়েছে।বিয়ের পর যে এই মেয়ের ভয়ে সে বাথরুম অব্দি যেতে পারবে না সেটা বোঝা হয়ে গেছে। মাহাদ নরম গলায় বললো
-“পিচ্ছি এতো রেগে আছো কেনো?ভয় লাগে তো।”
দৃশ্য রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো
-“আমার সামনে নাটক করবি না।এই নাটক তোর শহরের গার্লফ্রেন্ডের সাথে করিস।”
-“আল্লাহ! কি বলো?আমার পুরো জীবনে শুধু একটাই গার্লফ্রেন্ড।আর সেটা আমার দৃশ্য পাখি। এখন কি হয়েছে সেটা বলবে?”
-“কাল সন্ধ্যার পর কোন মেয়ের সাথে ছিলি?”
-“জানপাখী কাল সন্ধ্যায় আমার গানের রিহার্সেল ছিল।”
-“তাহলে তোর ফোন রিসিভ করে অন্য মেয়ে কেন আমাকে বলবে যে সে তোর গার্লফ্রেন্ড? আমি একদম সহ্য করতে পারছিনা। কোন মেয়ের সাথে আমি তোকে সহ্য করতে পারিনা।”
কথাটা বলেই দৃশ্য আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল। মাহাদের বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়েছে।দৃশ্যর কান্না সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। হঠাৎ তার মনে পড়ল গতকাল সন্ধ্যার কথা।
মাহাদ আর কয়েকটা ছেলে মেয়ে তাদের গানের রিহার্সেল করছিলো।কয়েকদিন আগে এক মিউজিক ডাইরেক্টর তার সাথে যোগাযোগ করেছে।উনি নাকি মাহাদের স্টেজে পারফরম্যান্স দেখেছেন।তাই মাহাদের সাথে একটা মিউজিক বানাতে ইচ্ছুক।সেদিন মাহাদ ভীষণ খুশি হয়েছে।এটা তার ক্যারিয়ার গড়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ।এটা তার ফার্স্ট ব্রেক। তবে এই নিউজ সে বাবা ছাড়া আর কাউকে জানায়নি। ডিল সাইন হলে তখন সে দৃশ্যকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।
সে যেখানে প্র্যাকটিস করে সেখানে আরো অনেকেই আছে।তার মধ্যে একটা মেয়ে মেহেরীন খুব ভালো গান গায়। মাহাদ কয়দিন ধরে তার সাথেই প্রেকটিস করছিলো।সেই কারণে মেয়েটার সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে এসে প্র্যাকটিস শেষ করে ওয়াশরুমে গেছিলো। ভুলবশত টেবিলে ফোনটা রেখে চলে এসেছিল। ওয়াশরুম থেকে বেরোলে মেহরীন তার হাতে মোবাইলটা দিয়েছিলো। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যেই এই মেয়েটা এরকম একটা ক্যাঁচাল লাগিয়েছে সেটাতো ভাবতেই পারেনি।একারণেই সে কোনো মেয়ের সাথে বেশি কথা বলে না।
মাহাদ নরম গলায় দৃশ্যকে সব খুলে বললো। এবার দৃশ্যকে সামলাতে মাহাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে।বিয়ের পর এই পিচ্ছি বউয়ের আঁচলের নিচে লুকিয়ে থাকতে হবে।নাহলে এমন রেগে বাবা মা আর বিশেষ করে দাদীর সামনে তুই তুকারি করে মান সম্মান ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে দিবে। আর আমার দাদী যেই জিনিস। এই দুই বোম একসাথে হলে বাড়িতে ব্রাস্ট হবে।
মাহাদ আজ রাজশাহীতে এসেছে। মূল কারণ হচ্ছে আজ মাহিমের জন্মদিন। ছোট ভাইকে সারপ্রাইজ দিতেই আজ চলে এসেছে রাজশাহীতে।বাসায় প্রবেশ করতেই বুঝতে পড়লো বাসায় ভালোই আয়োজন চলছে।তার দুই মামা মামী,মামাতো ভাই বোন সবাই উপস্থিত। মাহাদকে দেখেই সবাই উল্লাসে ফেটে পরলো।আমরিন তো সারাক্ষণ মাহাদের পেছনেই পড়ে আছে। মাহাদ এক সময় বিরক্ত হয়ে বললো
-“কিরে তোর আর কোনো কাজ নাই?আমার পেছনে পড়ে আছিস কেনো?”
-“কই না তো?”
-“অরফা পিচ্ছি কই?”
-“ও চাচির সাথে।আপনি আসছেন সেই খবর এখন পায়নি?”
-“সবাইকে নিয়ে ছাদে যা।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
মাহাদ চলে যেতেই আমরিন সেই দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এই মানুষটাকে সে কোনো দিন বলতেই পারলো না কতটা দুর্বল সে তার প্রতি।তার আগেই জানতে পেরেছে এই মানুষটার জীবনে অন্য কেউ চলে এসেছে।
মাহাদ ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো মাহিম তার রুমে বিছানায় বসে ফোন টিপছে। মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“কিরে বার্থডে বয় আমার রুমে কি?”
মাহিম সোজা হয়ে কোলে বলিস নিয়ে বসে বললো
-“কেনো আসতে মানা আছে নাকি?”
-“না নেই।তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
-“কি?”
-“বলদ। সারপ্রাইজ বললে সেটা সারপ্রাইজ থাকে নাকি?”
-“আচ্ছা বলতে হবে না।তবে একটা জিনিষ চাইবো দিবি?”
মাহাদ বিছানায় বসে বললো
-“তুই নিজে থেকে কিছু চাইছিস তার মানে ডেঞ্জারাস কিছু।”
-“মোটেই না।একদম সিম্পল।”
-“আচ্ছা নাটক না করে বলে ফেল?”
-“আজকের অনুষ্ঠানে ভাবিকে নিয়ে আস।”
মাহাদ অবাক হয়ে বললো
-“সেটা সম্ভব না।তোর ভাবিকে সন্ধ্যার পর বাসার বাহিরে বের হতে দেয় না।আর ওর বাসায় এখন আমাদের সম্পর্কে জানাতে চাইছি না।”
-“প্লিজ ভাই।”
-“ভেবে দেখবো। এখন বের হ রুম থেকে।”
মাহিম হেসে চলে গেলো। মাহাদ ভাবছে সেই দিনের কথা যেই দিন মাহিম দৃশ্যকে দেখেছিল।
সেদিন মাহাদ আর দৃশ্য রেস্টুরেন্টে বসে ছিল।মাহিম ও তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে এসেছিল।নিজের ভাইকে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে দেখে কিছুটা অবাক হয়।তার ভাই প্রেম করছে আর সে এতদিন টের পেলো না?মুচকি হেসে মাহাদ দের টেবিলে এসে চেয়ার টেনে বসে দৃশ্যকে বললো
-“আসসালামুয়ালাইকুম ভাবি।”
হঠাৎ কারো উপস্থিতিতে দৃশ্য অবাক হয়ে গেলো।সে আড়চোখে একবার মাহাদকে দেখে নিলো। মাহাদ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।দৃশ্য সালামের উত্তর দিয়ে বললো
-“আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।”
মাহিম মুচকি হেসে মাহাদকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“তুমি আমার কথা বলনি? এটা কিন্তু একদম ঠিক না। ভাবি আমি হলাম আপনার ওয়ানলি ওয়ান পিস দেবর। আপনার সামনে বসা হুতুম প্যাঁচার ছোট ভাই।”
কথাটা শুনেই দৃশ্য ফিক করে হেসে দিল। মাহাদ বিরক্ত নিয়ে বললো
-“তুই এখানে কি করিস?”
-“তোমার সাথে কথা নাই। এতো মিষ্টি একটা ভাবী রেডিমেট তৈরি করা আছে আর আমি জানতামই না?”
দৃশ্য ভীষণ লোজ্জ পেলো।তার চাইতে বয়সে বড়ো একটা ছেলে তাকে দিব্যি ভাবী ডেকে যাচ্ছে?
মাহাদ বিরক্ত হয়ে বলল
-“দেখা হয়েছে ভাবী? এবার ফুট।আমার ডেট খারাপ করিস না।”
মাহিম বিরক্ত হয়ে বলল
-“আমি ভাবিকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।তোমার মত আনরোমান্টিক ব্যাটা এতো মিষ্টি মেয়ে কি করে পেলো সেটাই বুঝতেছি না।ভাবী এই ব্যাটা আপনাকে হুমকি টুমিকি দিয়েছে নাকি?বেশি কেচাল করলে বাবাকে বলে দিবো।”
-“বাবা অলরেডি জানে।আর বৌমা দেখে পছন্দও করে ফেলেছে।”
-“কি? কাহিনী এতো দুর অব্দি চলে গেছে আর আমি কিছুই জানি না? যাই হোক, ভাবী এই ব্যাটা কোনো ঝামেলা করলে সোজা আমাকে বলবেন।আমি এর ক্লাস নিবো।”
দৃশ্য লজ্জা পাচ্ছে।তবে মুখে হাসি নিয়ে বললো
-“আমি আপনার ছোট।আমাকে নাম ধরে আর তুমি করে ডাকবেন।”
মাহাদ ঘোর বিরোধিতা করে বললো
-” মোটেই না।”
মাহিম হেসে বললো
-“বয়সে আপনি ছোট হলেও সম্পর্কে বড়ো।আর আমার এক মাত্র ভাইয়ের বউকে আমি অবশ্যই ভাবী ডাকবো।তবে তুমি করে ডাকা যায়।সো জাস্ট চিল।ভাই আমার জন্য কফি অর্ডার দে।”
-“ওই তুই জাবি?”
-“ভাবী আমি কি চলে যাবো?”
দৃশ্য হেসে বললো
-” মোটেও না।দরকার পড়লে আপনার ভাইকে বাহিরে রেখে আসেন।আমি আপনার সাথেই কফি খাবো।”
দৃশ্যর কথায় মাহিম হাসলো আর মাহাদ গাল ফুলিয়ে বসে থাকলো।