#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_26
লাউড মিউজিক আর রংবেরঙের আলোর বর্ষণে ড্রিম ফ্যাশন হাউসের রুফটপ মেতে উঠেছে। ঘড়িতে এখন অলরেডি রাত সাড়ে নয়টা বাজে। রাত বাড়ার সাথে সাথে দৃশ্যর মনে ভয় ঢুকতে শুরু করেছে। এত রাত অব্দি সে বাসার বাইরে থাকে না। আজ ঠিক কিভাবে বাসায় পৌঁছাবে সেটাও বুঝতে পারছে না। তার নজর বারবার ঘড়ির দিকে পড়ছে। যেই মেয়েটা সারা জীবন ধরাবাঁধা নিয়মে চলে এসেছে তার জন্য অধিক স্বাধীনতা সব সময় যে সুখকর হয় তা কিন্তু না। আগে তো এত রাত অব্দি বাইরে থাকার কথা দৃশ্য চিন্তাও করতে পারত না। কিন্তু আজ তাকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। কিন্তু দৃশ্যত এমন চাইনি। মায়ের শাসন ভাইয়ের সাথে ঝগড়া এসব কিছু ভীষণভাবে মিস করছে সে। আর বাবা, তিনি নিশ্চয়ই এত রাত অব্দি বাসায় ফেরার অপরাধে দৃশ্যকে কঠিন শাস্তি দিতেন।আর গম্ভীর গলায় অনেক কঠিন কথা শুনাতেন।
আগে দৃশ্য একটু স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতো। আর আজ মনে হচ্ছে সেই বাঁধাধরা নিয়ম এর মাঝেও এক অন্যরকম সুখ ছিল। হাজারো শাসনের মাঝে ছিল ভালোবাসা, যত্ন।
এসব হাজারো চিন্তা ভাবনার মাঝে দৃশ্য আবার রুফটপ এসে পৌঁছল। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটার ফলে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেল। মাথা তুলে সামনের মানুষটাকে দেখে দৃশ্য ভীষণ অবাক হলো। দৃশ্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামনের মানুষটি বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো
-“ভা…ভাবী?”
-“মাহিম ভাইয়া?”
দৃশ্য কে এখানে দেখে মাহিম ভীষণ অবাক হয়েছে। এই মেয়েটা তার ভাইয়ের জীবনে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আর মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। মাহিম বিস্ময় নিয়ে বললো
-“ভাবী আপনি এখানে?”
মাহিম একবার পেছন ঘুরে তার ভাইকে দেখে নিলো। মাহাদ হেসে সবার সাথে কথা বলছে। দৃশ্য ভাবি কি ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে? ভাবীকে দেখে ভাইয়ার রিয়াকশন কি হতে পারে এমন হাজারো প্রশ্ন মাহিমের মনে উদয় হচ্ছে।দৃশ্য নরম সুরে বললো
-“ভাইয়া আমি এখানে জব করছি।”
কথাটা শুনে মাহিম ভীষণ শক খেলো।দৃশ্য বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো
-“আমি জানতাম না এটা ওর অফিস।”
তাদের কথার মাঝেই পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। মেয়েটা বলছে
-“এই মাহিম চল এখানে কি কর…”
কথাটি আমার কমপ্লিট করতে পারল না আমরিন। দৃশ্য কে দেখে সে চমকে গেল। মনে হচ্ছে আমরিন এর পুরো শরীর কাঁপছে। এই মেয়েটা এখানে কেন? সেকি আবারও মাহাদ ভাইয়ার জীবনে ফিরে এসেছে? কিন্তু এটা কি করে হতে পারে?
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দৃশ্য মাহিম কে উদ্দেশ্য করে বললো
-“ভাইয়া আমি আসছি।”
কথাটা বলেই দৃশ্য চলে গেলো।দৃশ্যর পুরো শরীর কাপছে।সব অতীত তার সামনে কেনো চলে আসছে? অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে গিয়ে দৃশ্য পড়ে যেতে নিলেই মৃদুল তাকে ধরে ফেলে।তবে মৃদুলের হাতে থাকা জুসের গ্লাস থেকে অনেকটা জুস দৃশ্য গায়ে পড়ে যায়।খুব বিচ্ছিরি একটা অবস্থা। মৃদুল নিজেও অনেকটা অবাক। সে দ্রুত টেবিলে রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে দৃশ্যর গাল, গলা থেকে জুস মুছতে লাগলো।মৃদুলের হাত আর একটু নিচে নামতেই দৃশ্য দ্রুত সরে দাঁড়ালো। মৃদুলের খেয়াল হলো সে কি করছে। অস্থির হয়ে দৃশ্য কে বললো
-“দৃশ্য আই এম সরি।আমি ওই ভাবে…..!”
-“ইটস ওকে ভাইয়া। আসলে আমি অন্য মনস্ক হয়ে আসছিল তাই এমন হয়েছে। আপনার সরি বলতে হবে না।”
মাহাদের দৃষ্টি দৃশ্যর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই ঘটনা দেখেও মাহাদের মধ্যে তেমন কোনো রিয়্যাকশন দেখা গেল না।আমরিন সব কিছুই খেয়াল করছে।আমরিন কিছুটা অবাক হলো।কারণ সে মাহাদকে এই মেয়েটার প্রতি ওভার পসেসিভ হতে দেখেছে।তবে আজ মাহাদ চুপ কি করে?
মিস লুবনার কাছ থেকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি নিয়ে নিচে নেমে গেল দৃশ্য। আমরিন সেদিকে এখনো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাহিম আমরিন এর অবস্থা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এখানে তাঁর বলার কিছুই নেই। কারণ মেয়েটা একটা মিথ্যা স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে।
দৃশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ যাবত। এত রাতে যানবাহনের আনাগোনা অনেক কম।দৃশ্যর এবার কিছুটা ভয় হতে লাগল। নির্জন রাস্তায় নিজেকে ভীষণ অসহায় বোধ করছে সে। তবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আজ আর বাসায় যাওয়া হবেনা। মাহাদের দেয়া স্কার্ফ ঘায়ে ভালো মতো জড়িয়ে নিল সে। জামায় জুস পড়ায় সামনের দিকে অনেকটা বাজে লাগছে।কিছুদূর হাঁটতেই হঠাৎ তার সামনে একটা গাড়ী এসে ব্রেক কষলো। দৃশ্য ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেল। গাড়ীর গ্লাস নিচে নামতেই দেখতে পেল মাহাদকে।
দৃশ্য কোন কথা না বলে গাড়ির পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে মাহাদ বলে উঠলো
-“দুই মিনিটের মধ্যে গাড়িতে এসে বসবে।”
কথাটা শুনেই দৃশ্যর কপাল কুঁচকে গেল।এই মানুষটা চায় কি?তার সাথে এমন করার মানে কি?দৃশ্যর ভাবান্তর না দেখে মাহাদ আবার বললো
-“কি হলো কথা কানে যায় না?”
দৃশ্যর এবার রাগ লাগছে।সে রাগী কন্ঠে বললো
-“আমি আপনার সাথে কেনো যাবো?আপনি নিজের কাজে জান।আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”
মাহাদ গম্ভীর স্বরে বললো
-“বেশি কথা শুনতে চাই না। জাস্ট এখনই গাড়িতে উঠবে। রাত কটা বাজে খেয়াল আছে?”
-“সেটা আপনাদের খেয়াল করা উচিত ছিল। রাত-বিরাতে পার্টি রেখে স্টাফদের এভাবে আটকে রাখার কোন মানে হয়না।”
-“গাড়িতে আসো দৃশ্য।রাস্তাঘাটের যে কোন বিপদ হতে পারে।”
-“হলে হোক তাতে আপনার কি? মেরে ফেলুক, রেপ করুক তাতে আপনার কি?তবুও আমি আপনার সাথে যাবো না।”
মুহূর্তেই মাহাদের মাথা চটে গেল। রাগে গজগজ করতে করতে গাড়ির দরজা খুলে দৃশ্যর সামনে এসে দাঁড়ালো। দৃশ্য কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা থাপ্পর পড়লো তার গালে। থাপ্পরের জোর এত বেশি ছিল যে দৃশ্য রাস্তায় পড়ে গেল। দৃশ্য যেন অবাক হওয়ার সময় টুকুও পেল না। মাহাদ তাকে রাস্তা থেকে টেনে তুলে গাড়ির ভেতরে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ফেললো।
দৃশ্যর পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। মাহাদের এই রূপ দৃশ্য ভীষণ ভয় পায়। অপর সাইট দিয়ে মাহাদ গাড়িতে বসেতেই দৃশ্য গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করল।সে এক মুহূর্তও এখানে থাকবে না।
দৃশ্যর এই কাজে মাহাদ আরো রেগে গেলো।দুই হাতে এলোপাথাড়ি তিন চারটা থাপ্পড় বসালো দৃশ্যর গালে।দৃশ্যর মাথা ভনভন করছে। গাল দুটো অসম্ভব জ্বলছে।দৃশ্যর করুন চোখে মাহাদকে দেখছে। তার প্রতি এতটা এগ্রেসিভ মাহাদকে সে কখনোই হতে দেখেনি। এই মাহাদকে অপরিচিত মনে হচ্ছে তার। কারণ তার মাহাদ কখনোই তাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে না। তার মাহাদ তো আদুরে গলা ছাড়া কথাই বলে না তার সাথে।
তবে মাহাদের এমন একটা রূপ আছে সেটা দৃশ্য জানে।এই মানুষটা নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না।তবে দৃশ্যর বেলায় অন্যরকম ছিলো।তবে আজ কেনো এমন করছে?
মাহাদ দৃশ্যর চুল খামচে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আর রাগে কটমট করতে করতে বললো
-“তোর রেপ হওয়ার অনেক ইচ্ছা তাই না? ছেলেদের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইছিস? ওই মৃদুলের সাহস কিভাবে হলো তোকে ছোয়ার?”
দৃশ্য নাক মুখ কুচকে ফেললো। মাহাদের কাছ থেকে কেমন বিদঘুটে একটা গন্ধ আসছে।দৃশ্য বুঝতে পারলো মাহাদ মাতাল হয়ে আছে।সে মাহাদের হাত থেকে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো
-“আমার ব্যাথা লাগছে মাহাদ। অসভ্যের মত মাতাল হয়ে আমার সামনে মাতলামি করবেন না। আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দিন। আমার কোন বিষয়ে আপনি ইন্টারফেয়ার করবেন না।”
মাহাদ চুলের মুঠি আরো শক্ত করে ধরে চেঁচিয়ে বললো
-“ওই ছেলে তোর গায়ে হাত কেন দিলো? তুই থাপ্পর মারতে পারলি না? নাকি তোর খুব ভাল লাগছিল ওর ছোঁয়া?”
দৃশ্যর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। এভাবে মাতাল হয়ে অসভ্যতামোর মানে কি? কেন এত অধিকারবোধ দেখাচ্ছে? যেখানে কোনো সম্পর্ক নেই সেখানে তাঁর সাথে এমন ব্যবহার করার কোন অধিকার নেই মাহাদের।দৃশ্য রেগে চিৎকার দিয়ে বললো
-“হ্যাঁ ভালো লাগে আমার ওর ছোঁয়া। তাতে তোমার কি?আমি হাজার বার যাবো তার কাছে।”
এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো মাহাদের মাথা খারাপ করতে।সে রেগে বললো
-“ও তাই নাকি? তা কোথায় ছুঁয়েছে ও এইখানে তাই না?”
কথাটা বলেই মাহাদ দৃশ্যর গলায় বেশ কয়েকটা কামড় বসিয়ে দিলো।ব্যাথায় দৃশ্যর পুরো শরীর কাপছে।এই মানুষটার তার সাথে এমন জানোয়ারের মতো কেনো করছে?এক সময় দৃশ্য ব্যাথায় কাদতে লাগলো। এতক্ষণে মাহাদের হাত দৃশ্যর জামার নিচে পেটের কাছে চলে গেছে।সে খামচে ধরেছে দৃশ্যর নরম পেটে।আজ মাহাদ তার সকল কষ্ট গুলি দৃশ্যর উপর ঝাড়ছে।।দৃশ্য তার একটা হাত দিয়ে মাহাদের হাত সরানোর চেষ্টা করছে।এতে বিশেষ কোনো লাভ হলো না। মাহাদ আরো জোড়ে খামচে ধরে বললো
-“তুই শুধুই আমার।তোর শরীরে প্রতিটা লোমকূপ আমার।তোর শরীর,মন,মস্তিষ্ক সব কিছুই আমার।সেখানে কারো হস্তক্ষেপ আমি একটুও সহ্য করবো না।আমি যত দূরেই থাকিনা কেনো,তুই শুধুই আমারই থাকবি।না তোকে আমার কাছে রাখবো,আর না অন্য কারো হতে দিবো।”
দৃশ্য কাদতে কাদতে বললো
-“মাহাদ প্লিজ পাগলামি বন্ধ করো।আজ এতো বছর পর এমন করার কোনো মানে হয় না।আমাদের মাঝের সব কিছুই শেষ।আমার উপর তোমার কোনো অধিকার নেই।তুমি নিজেই আমাকে তোমার লাইফ থেকে ছুড়ে ফেলেছো।”
মাহাদ দৃশ্যকে ছেড়ে দিলো।নিজের জায়গাতে বসে সিটে মাথা হেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।এই মুহূর্তে তার প্রচন্ড মাথা ঘুরছে।বুকের বা পাশটায় ব্যাথা হচ্ছে।
দৃশ্য গাড়ির দরজার সাথে মিশে বসে কান্না করছে। গালে আর পেটে প্রচন্ড জ্বলছে।বার বার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলো।কিন্তু অবাধ্য অশ্রু তার কথা শুনছেনা।দৃশ্যর কান্না শুনে মাহাদ চোখ বন্ধ অবস্থায় বির বির করে বলতে লাগলো
-“কান্না করোনা পিচ্চি। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারিনা। বুকে এসে লাগে।”
কথা গুলো বলতে বলতে মাহাদের চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।দৃশ্য ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে না। আসে পাশে সব ঝাপসা দেখছে। মাহাদ যে নেশায় বুঁদ হয়ে আছে সেটা বেশ ভালোমতোই বুঝতে পারছে।দৃশ্যর কাছে মাহাদের পরিবারের কারো নাম্বার নেই।আর তারা এভাবে বসে থাকলে যে কারো নজরে আসতে পারে।এতে মিডিয়াতে তাদের নিয়ে তোলপাড় শুরু হতে পারে।যেটা দৃশ্য মোটেও চাইছে না।
সে দ্রুত কল করলো রিসেপশনে।সেখান থেকে মাহাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট রবিনের নাম্বার নিয়ে তাকে কল করলো।
দৃশ্য এক দৃষ্টিতে মাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহাদ তখনও চোখ বন্ধ করে আছে।চারপাশ কত শান্ত।অথচ কিছুক্ষণ আগেও এই মানুষটা কি তাণ্ডব চালালো।
কিছুক্ষণ পরই গাড়ি গ্লাসে কেউ নক করলো।দৃশ্য দেখলো রবিন এসেছে।দৃশ্য গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো মাহিম এসেছে সাথে।মাহিম রবিনকে বললো
মাহাদকে বাসায় নিয়ে যেতে।রবিন মাহাদকে পাশের সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো। মাহাদের কোনো হুস নেই।রবিন চলে যেতেই মাহিম দৃশ্যকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“ভাবী আমি আপনাকে দিয়ে আসছি।প্লিজ গাড়িতে উঠুন।”
-“তার দরকার নেই ভাইয়া।আমি যেতে পারব।”
-“প্লিজ ভাবী।নিজের ভাই মনে করে আসুন।”
দৃশ্য আর কিছুই বললো না।মাহিমের সাথে গাড়িতে উঠে বসলো।রাস্তার অন্ধকারে এতখন খেয়াল না করলেও গাড়ির ভেতরে আলোতে দৃশ্যকে দেখে সে অবাক হলো।তার দুই গালে অনেকগুলো আঙ্গুলের ছাপ।ঠোঁটের পাশে কেটে অল্প রক্ত শুকিয়ে আছে।গলার পাশে বেশ কয়েকটা কামড়ের দাগ।
মাহিম দুই হাতে নিজের চুল খামচে ধরে কয়েক সেকেন্ড বসে রইলো।তার চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে।নিচু স্বরে দৃশ্যকে বললো
-“ভাই আপনার গায়ে হাত তুলেছে?”
দৃশ্য কিছুই বললো না।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।মাহিম একটা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।তার ভাইয়ের এই অধপতন সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।সবাই মিলে এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে কেনো এতো অন্যায় করছে?
বাসার কর্নিং বেলের শব্দে লতা দরজা খুলে দিল।এত সময় সে দৃশ্য জন্যই বসে ছিল।জিনিয়া ঘুমিয়ে গেছে।তবে দরজা খুলে সে অবাক হয়ে গেলো।সে উত্তেজিত হয়ে দৃশ্যকে বলতে লাগলো
-“দৃশ্য কি হয়েছে তোর?এসব কি করে হলো?তুই ঠিক আছিস?”
-“আমি ঠিক আছি আপু। কাল কথা বলি প্লিজ।”
লতাকে আর কিছুই বলতে না দিয়ে দৃশ্য রুমে চলে গেল।জিনিয়া বিছানার এক পাশে ঘুমিয়ে আছে।দৃশ্য কাধের ব্যাগটা রেখে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।শাওয়ার অন করে সে ফ্লোরে বসে পড়লো।তার চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে।সে দুই হাতে মুখ চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো।তার জীবনটা এমন বিষাদময় কেনো?
অপর দিকে মাহাদকে নিয়ে রবিন বাসায় পৌঁছালো।আমরিন দরজা খুলে দিল।সে কিছুক্ষণ আগেই এসেছে বাসায়।রবিন মাহাদকে তার রুমে নিয়ে গেল।শামসুন্নাহার বেগম সোফায় বসে সব কিছুই দেখছিলো।আমরিন সোফায় বসতেই শামসুন্নাহার বেগম দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে বললো
-“ওই কালনাগিনী আমার নতিটারে শেষ কইরা দিলো।ওই মাইয়া জীবনেই সুখী হইবো না।আর তুই কি পারিস না আমার নাতির কষ্ট ভুলায় দিতে?তোর এই রূপ কোনো কাজেরই না।”
আমরিন সোফায় হেলান দিয়ে বললো
-“দৃশ্য মাহাদ ভাইয়ের জীবনে আবার ফিরে এসেছে দাদী।”
শামসুন্নাহার চমকে বললেন
-“কি বললি?”
-“হে দাদী।আজ আমি দৃশ্যকে ফ্যাশন হাউসে দেখেছি।”
-“ওই মাইয়া হেনে কি করে?”
-“আমি জানিনা দাদী।”
আমরিন এর কথা শুনে তিনি রাগে গজগজ করতে লাগলেন।এই মেয়ের ছায়াও সে এই বাড়িতে পড়তে দিতে চায় না।এত বছর পর কেনো এই মেয়ে আবার এসেছে?
___________________
দৃশ্য বাসা থেকে বের হয়ে গলির মাথায় দাড়িয়ে আছে।আজ সে অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে। মাকে বলেছে আজ মৌ এর ছোট ভাইয়ের বার্থডে।মৌ তাকে দাওয়াত করেছে।সে যেতে চায়।কিন্তু তার মা মোটেও রাজি না।পড়ে মৌ এর সাথে মায়ের কথা বলিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করিয়েছে।নাবিলা দৃশ্যর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো
-“তোর মত বইন যেনো কারো না হয়।নিজে ডেটে যাবে বলে আমাকে ফাসিয়ে দিলো।”
-“কথা কম বল।তোকে তো মৌয়ের বাসায় রেখে যাবো।তাইলে কাঁদিস কেন?নাকি যাবি আমার সাথে?”
-“খেয়ে দেয়ে আমার কাজ নাই।তুই যা লুতুপুতু করতে।আমার এতো শখ নাই।”
-“ওই আমি কবে লুতুপুতু করলাম?ফালতু মহিলা।”
তাদের ঝগড়ার মাঝে মাহাদ আসলো।দৃশ্যকে দেখে কয়েক সেকেন্ড থমকে গেলো।কালো শাড়ী তে এই পিচ্চিকে একটা পরী লাগছে।সে দ্রুত চোখ সরিয়ে নাবিলাকে বললো
-“কি খবর শালিকা?ভালো আছো?”
-“জি ভাইয়া ভালো।”
-“আচ্ছা চলো।”
নাবিলা বললো
-“ভাইয়া আমি আপনাদের সাথে যাবো না।আপনি দৃশ্যকে নিয়ে যান।”
-“আরে কি বলো? আমাদের কোনো সমস্যা নেই।আমি আবার অসভ্য প্রেমিক না।তোমাকে মোটেও লজ্জায় পড়তে হবে না।”
-“না ভাইয়া।আমি আগেই দৃশ্যকে বলে রেখেছি।আমি মৌয়ের বাসায় যাবো।আপনি দৃশ্যকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েন।”
-“ওকে শালীকা।”
নাবিলা চলে গেলে মাহাদ একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো।আর দৃশ্যর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
রিকশা চলছে আর মাহাদ এক ধ্যানে দৃশ্যকে দেখছে।চোখে কাজল আর ঠোটে হালকা লিপস্টিকে দৃশ্যকে দারুন লাগছে।দৃশ্য আড়চোখে মাহাদকে দেখে বললো
-“কি দেখো?”
-“পরী দেখি।”
দৃশ্য বেশ লজ্জা পেলো।পরক্ষনেই মুখ মলিন করে বললো
-“আমার ভীষণ ভয় করছে।”
মাহাদ দৃশ্যর আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল মিশিয়ে বললো
-“ভয়ের কিছু নেই। আমি আছিতো।তাছাড়া আমার বাসার সবাই তোমার সম্পর্কে জানে।”
দৃশ্য চিন্তিত হয়ে বললো
-“তারা কি জানে আমি ফাহিম ভাইয়ার বোন?”
মাহাদ দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
-“এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।”
মাহাদের মনে এখন অন্য চিন্তা।দৃশ্য ভাবছে সমস্যা শুধু তার আর ফাহিমের মধ্যে।কিন্তু সমস্যা ঠিক কত বড় সে এই বাচ্চা মেয়েকে সেটা জানতে দিতে চায়না।সে চায় সবাইকে আগে দৃশ্যকে দেখাতে।তার বিশ্বাস সবাই দৃশ্যকে খুব পছন্দ করবে।যা পরিচয় জানলে হয়তো করবে না। তাছাড়া তার মা দৃশ্যকে দেখতে চেয়েছে।তাই মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে আজ দৃশ্যকে তার পরিবারের সামনে নিয়ে যাবে।