তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_3

0
1518

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_3

শামসুন্নাহার বেগম ধীরে ধীরে তার নাতির রুমে ঢুকলেন।তার নাতি পরম শান্তিতে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।সকালের তীক্ষ্ণ রোদ গ্লাসের জানালা ভেদ করে না ঢুকতে পারলেও রুমটায় আবছা আলো রয়েছে।আর সেই আলোতেই বিছানায় শোয়া মানুষটাকে এক রাজপুত্র মনে হচ্ছে।আসলেই তার নাতি কোনো রাজপুত্রের চাইতে কম কীসে?হাজারো মেয়ে তার নাতিকে দেখে চোখ সরাতে পারে না।ছেলেটা একদম তার বাবার মতো হয়েছে।তার ছেলেটাও ঠিক এমন চাঁদের মতো সুন্দর ছিলো।

শামসুন্নাহার এগিয়ে গেলেন জানালার দিকে।পর্দা সরাতেই সারা রুম আলোয় ভরে উঠলো।নাতির দিকে ফিরে দেখলেন চোখ কুচকে শুয়ে আছে। এবার তিনি বিছানার পাশে বসে নাতিকে ডাকলেন।

-“এইযে বড়ো সাহেব,আর কত ঘুমাবি?বেলা বারোটা বেজে গেছে। এখন অন্তত উঠ।”

ঘুম ঘুম চোখে মাহাদ বললো
-“প্লিজ দাদী ডিস্টার্ব করবে না।ঘুমাতে দাও।”

-“হারামজাদার, উঠ বলতেছি।”

এবার মাহাদ চোখ কুচকে তাকালো।আর বললো
-“ইসস দাদী,সকাল সকাল গালি দিতেছ কেনো?”

শামসুন্নাহার বিরক্ত হয়ে বললো
-“তো আর কি করবো?সারাদিন তোকে চোখের দেখাও দেখি না।সারাদিন ব্যাস্ত থাকিস।এই বুড়ির জন্য তোর কাছে কোনো সময়ই নাই।”

মাহাদ এবার দাদীকে জড়িয়ে ধরে বললো
-“সুইট দাদী আমার।এতো রাগ করো কেনো?”

-“রাগ করবো না তো কি করবো? সারাদিন এই বুড়িটার সাথে কথা বলার জন্য বাসায় একটা মানুষ নাই। তোর মা তো নিজের ধ্যানে মগ্ন। আর তোর ছোট ভাই , তার দেখা তো সারা সপ্তাহে পাইনা। কত করে বলি একটা বিয়ে কর, না তা করবি কেন? ওই কালনাগিনী টা আমার সোনার সংসার ধ্বংস করে ফেলেছে।”

এবার মাহাদ বিরক্ত হচ্ছে ভীষণ বিরক্ত। সে দাদীকে ছেড়ে উঠে সোজা বাথরুমে চলে গেলো। আর পেছনে দাদি বকবক করেই যাচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে মাহাদ নাস্তা সেরে এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় বসলো। গত পরশু সে বাংলাদেশে এসেছে। গত তিন মাস সে লন্ডনে থেকেছে। তার বেশ কয়েকটা কনসার্ট হয়েছে সেখানে তাই তিন মাস থাকতে হয়েছে।আর পরশু এসেই কাল আবার ঢাকায় কনসার্ট করলো। তাই আজকের দিন টা একদম ফ্রি। মাঝে মাঝে নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখা দরকার। কিন্তু সকাল সকাল দাদী তার মাথাটা বিগড়ে দিয়েছে। সব কিছু ভুলতে সে যতই পালাতে চায় অতীত তার পিছন আরো বেশি জাপটে ধরে।আজও তার সেই প্রথম দেখার কথা মনে পড়ে। কিভাবে এক পিচ্চি মেয়ে তাকে বোকা বানিয়ে চলে গেছিল।

মাহাদ তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। তখন থেকেই সে টুকটাক গান-বাজনা করতো। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে গান গাইতো। গানের প্রতি আসক্তিই তার ছোটবেলা থেকেই।

সেদিন সে আর তার বন্ধু রাফসান মিলে দোকানে গিয়েছিল কোলড্রিংস কিনতে। হঠাৎই পিছন থেকে একটা মেয়ের ধাক্কা লাগলো। সে দেখতে পেলো ফ্লোরে আইসক্রিম পড়ে আছে। মেয়েদের দিকে তাকাতেই সে কিছুটা চমকালো। কোন এক অদ্ভুত আকর্ষণে সে মেয়েটা থেকে চোখ সরাতে পারছিল না। কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে আইসক্রীমের দিকে একবার তাকাচ্ছে আর একবার তার দিকে তাকাচ্ছে। সেই ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতেই সে বুঝতে পারলো ওই মায়াবতী পিচ্চি মেয়েটা তাকে ভীষণভাবে বোকা বানিয়ে চলে গেছে।
এই বিষয়টা নিয়ে রাফসান সারাটা দিন বেশ মজা নিয়েছে।তার বেশ কদিন পর মাহাদ,রাফসান,তানিম,জয় সকলে মিলে কলেজ গেটে বসে ছিলো। মূলত বন্ধুদের আড্ডা বাজি চলছিলো।

হঠাৎ দেখতে পায় দুইটা মেয়েটা গেট দিয়ে ঢুকছে। তার মধ্যে একটা মেয়েকে খুব ভালো করে চেনে। কারণ এই কয়দিনে মাঝেই এই মেয়েটাকে সে বহুবার কল্পনা করেছে। জামার উপর ক্রস বেল্ট পাড়া আর মাথায় দুইটা জুটি করা এই পিচ্চি মেয়েটা সেদিন তাকে বোকা বানিয়ে চলে গেছিলো। সেদিন খেয়াল করতে না পারলেও মাহাদ আজ বুঝতে পেরেছে মেয়েটা তাদের স্কুলে পড়ে। মূলত এটা স্কুল এবং কলেজ একসাথে।

মাহাদকে সে দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জয় বললো

-“কি মামা! কলেজের সুন্দর সুন্দর মেয়ে রেখে এ বাচ্চাদের দিকে চোখ যায় কেন?”

জয়ের কথায় রাফসান সে দিকে তাকালো। আর দেখতে পেল সেদিনের সেই মেয়েটা। রাফসান হেসে জবাব দিলো

-“আরে ব্যাটা এটাইতো সেই মেয়ে যার কথা তোদের বলছিলাম। আমাদের মাহাদকে বলদ বানাইছে এই পিচ্চি।”

তানিম ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে বললো
-“দারা মামা মেয়েটার ক্লাস নেই।সিনিয়রদের বোকা বানানো?”

তানিম জোরে ডেকে উঠল ‘এই পিচ্চি’ বলে। কিন্তু মেয়েটা তাদের দিকে ফিরেও তাকালো না। তানিমের অবস্থা দেখে বাকি বন্ধুরা হেসে উঠলো। তানিম আবার ডেকে উঠলো ‘এই দুই জুটি’ বলে। দৃশ্য আর নাবিলা প্রথমে না বুজলেও এবার বুঝতে পেরেছে তাই পিছনে ঘুরে তাকালো। তামিম তাদের ইশারায় কাছে ডাকলো। তারা কাছে আসতেই তানিম বললো

-“তোমাদেরকে যে ডাকছি শুনতে পাওনা?”

দৃশ্য বলে উঠলো
-“ভাইয়া আপনি তো পিচ্চি, দুই জুটি এগুলো বলে ডাকছিলেন আমরা কিভাবে বুঝবো আপনি আমাদের ডাকছেন।”

তানিম বেচারার অবস্থা দেখে এবার জয় বলে উঠলো
-“তোমাদের নাম কি বলতো?”

দৃশ্য বলে উঠলো
-“আমার নাম নুরপা জাহান দৃশ্য।আর ও নাবিলা।”

-“তোমাকে ওর নাম বলতে বলেছি?”

-“আপনি তো বললেন তোমাদের নাম বলো তাই আমি আমাদের নাম বললাম। আপনি তো আর এটা বলেন নি যে শুধু তোমার নাম বলো।”

জয় এবার বুঝতে পারলো এই মেয়ে অতি চালাক।
সে আবার বললো

-“কোন ক্লাসে পড়ো?”

-“ক্লাস এইটে।”

এবার তানিম কিছুটা রেগে বললো
-“তোমাদের তো অনেক সাহস।ক্লাস এইটে পড়ে সিনিয়রদের বোকা বানাও।”

দৃশ্য প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে মাহাদ এর দিকে চোখ পড়তেই সে বুঝতে পারলো বড়ো ফাসা ফেঁসে গেছে। নাবিলা তো ভয়ে শেষ।এবার সে বলল

-“আমি কোথায় বোকা বানালাম।এই ভাইয়া তো আমার আইসক্রিম ফেলে দিয়েছ তার বদলে আমাকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছ।”

এবার জয় বলে উঠলো
-“তুমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়েছো।তাইনা?”

-“আমি ইচ্ছা করে দেই নি তো ভাইয়া। আচ্ছা ঠিক আছে আমি ওই ভাইয়াকে টাকাটা দিয়ে দিবো।আমিতো জানতামনা ভাইয়াটা এতো গরীব।”

মাহাদ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো। মেয়েটা আবার তাদের ঘোল খাওয়াতে চাইছে এটা সে বেশ বুঝতে পারলো।তাই সে বললো

-“তোমাকে কোন টাকা দিতে হবে না যাও ক্লাশে যাও।”

-“আরে না ভাইয়া,আমি আপনাকে কাল টাকাটা দিয়ে দিবো।ইসস নিশ্চয়ই আপনার আম্মু অনেক বকা দিয়েছে।আবার মারেনি তো?”

মাহাদ এবার কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। মেয়েটাকে ঠিক এই পরিমাণ বাঁদর হবে সেটা তার আগেই বোঝা উচিত ছিলো।

মাহাদ কিছুটা রেগে বললো
-“বলেছিনা টাকা দিতে হবে না। যাও ক্লাসে যাও।”

দৃশ্য মুচকি হেসে চলে গেলো।
রাফসান হেসে বললো

-“মামা এটা তো পুরাই বোম। এই মেয়ে তো আমাদের এক ঘাটে বেঁচে আরেক ঘাট থেকে কিনে আনতে পারবে।”

মাহাদ এখনো দৃশ্যর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার নাম টা তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। মনে মনে বেশ কয়েকবার নামটা আওরালো দৃশ্য,দৃশ্য,দৃশ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here