#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_30
ফাহিম মাত্রই গোসল সেরে বের হলো।দুই দিন ধরে সে বাসায় তেমন একটা থাকে না।এই দুই দিনে সে দৃশ্যর জন্য নিয়ম করে আইসক্রিম এনে ফ্রিজ ভর্তি করে রেখেছে।কিন্তু সেগুলো দৃশ্য ধরেও দেখে নি।ধরবে কি করে? সেতো জ্বরের কারণে বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারেনি।আর ফাহিমও যায়নি।দৃশ্যর সামনে যাওয়ার শক্তি খুজে পাচ্ছে না।নিজের আদরের বোনকে আঘাত করে সে নিজেও এই দুই দিন ঘুমাতে পারেনি।অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মাঝে।
গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো তমা তার বিছানায় বসে আছে।ফাহিম বিরক্ত হলো।এই মেয়েটা তাকে বিরক্ত করে কি মজা পায়?অথচ এলাকার সব মেয়ে তাকে দূর থেকে দেখলেও কেউ তার কাছে ভয়ে ভিড়তে পারেনা।পারবে কি করে?যা বদমেজাজ তার।ফাহিম কপাল কুঁচকে বললো
-“তুই আবার এসেছিস?দেখ তোর সাথে কেচাল করার মুডে নাই।সো ভালোয় ভালোয় বের হয়।”
তমা চোখ গরম করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো
-“আপনি দৃশ্যকে মেরেছেন কেনো?”
ফাহিম কঠিন স্বরে বললো
-“এই বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। আমাদের ফ্যামিলি মেটারে তুই কোন কথা বলবি না।”
-“ফাহিম ভাই আপনার কাছথেকে আমি এটা আশা করি নাই।এই বাচ্চা মেয়েটার কি দোষ ছিল?আপনি নিজে কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারেননি।আর অন্য কেউ বসলে তাতেও আপনার সমস্যা?”
ফাহিম কপাল কুঁচকে বললো
-“তুই আগে থেকে জানতি দৃশ্য রিলেশনে আছে?”
-“হে জানতাম তো?”
ফাহিমের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।সে তমার গালে একটা জোরে থাপ্পড় মেরে বললো
-“সব নষ্টের গোড়া তুই।আমার অবুঝ বোনটার মাথায় এই সব তুই ঢুকিয়েছিস।নিজে একটা বেহায়া আর আমার বোনটাকে ও বেহায়া বানিয়েছিস।ছেলেদের দেখলেই তোর ঢলে পড়তে মন চায় তাই না?যা না তোদের জন্য পতিতালয় খুলে রেখেছে।সেখানে কাপড় খুলে রঙ ঢং দেখাস।আমার বাড়িতে তোর মতো মেয়েকে আর দেখতে চাইনা।”
তমা গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে।অশ্রু ধরা যেনো আর বাঁধ মানছেনা না।সে কি আসলেই এই মানুষটিকে ভালোবাসেছে?তমা কাপা কাপা গলায় বললো
-“আপনি ভীষণ নিষ্ঠুর ফাহিম ভাই।কখনো কারো ভালোবাসা বুঝতে চাননা।শুধু নিজের রাগকেই মনের ভিতরে পুষে রেখেছেন।একটা মেয়ে শুধু তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায়।নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে চায়।আমিও নিজেকে শুধু একজনের কাছে বিলিয়ে দিতে চাই।আপনিকি কিছুই বুঝেনা?নাকি না বুঝার ভান করেন?একটা মেয়ে শত অপমানের পরও কেনো ওই মানুষটি কাছে বার বার ছুটে আসে আপনি জানেন না?আমাকে কোনো দিন দেখেছেন কোনো ছেলের উপর ঢলে পড়তে যে প্রস্টিটিউট তকমা লাগিয়ে দিলেন? দোষ আমারই।আমিই আপনাকে সুযোগ দিয়েছি বলে পেরেছেন।তবে সেই সুযোগ আর দিবো না।”
কথাটা বলেই তমা চোখের পানি মুছে চলে যেতে নিয়ে আবার পেছনে ফিরে বললো
-“আর একটা কথা।নিজের এই বদ মেজাজকে কন্ট্রোলে আনুন।নাহলে জীবনে সব হারাবেন।আর দৃশ্য ছেলেটাকে ভীষণ ভালোবাসে।নিজেদের ইগোর জন্য বোনটার জীবন নষ্ট করে দিবেন না।ভালোবাসা অনেক মূল্যবান জিনিস।কেউ অনেক সাধনা করেও পায়না।আর কেউ কেউ পেয়েও পায়ে ঠেলে দেয়।”
ফাহিম এক দৃষ্টিতে তমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে আছে আমজাদ রহমান।তার পাশেই বসে আছে আরিফ রহমান আর মাহাদ।আমজাদ রহমান সোফায় হেলান দিয়ে কপালে হাত দিয়ে বসে আছে।তার কাছে মনে হচ্ছে পুরো আকাশ ভেঙে পড়েছে মাথার উপর।ঠিক কি বলা বা করা উচিত তিনি জানেনা।ছেলেটার জীবন কি ছোট ভাইটার মতো হতে যাচ্ছে?
কিছুক্ষণ আগে আরিফ দৃশ্যর পরিবার সম্পর্কে সব জানিয়েছে।সব শুনে তিনি এখন অনেক বেশি চিন্তিত।আশরাফ হুসাইনকে তিনি খুব ভালো করে চেনেন।উগ্র মেজাজের মানুষ সে।বর্তমানে রাজনীতিতে আসার পর সভ্য হওয়ার মুখোশ পরে আছে।কিন্তু এই মানুষটা কতটা পাষাণ সেটা আমজাদ রহমান জানেন।
মাহাদ এমন ভুল কি করে করতে পারলো?ছেলের ভবিষ্যতে নিয়ে তিনি ভীষণ উদ্বিগ্ন।দৃশ্যকে তার ভীষণ পছন্দ।কিন্তু দৃশ্যের পরিবার?তাছাড়া মাহাদের দাদী কিছুতেই মানতে পারবে না।তার ছেলের জীবন নষ্টের জন্য ওই পরিবারকে তিনি সব সময় দায়ী করেন। সেখানে তার নাতিও একই ভুল করতে যাচ্ছে।
মাহাদ তার বাবার সামনে ফ্লোরে বসে বাবার হাঁটুতে মাথা রেখে বলতে লাগলো
-“বাবা আই এম সরি।তোমার কাছে সত্যিটা লুকানোর জন্য।বিশ্বাস করো আমি জানতাম না দৃশ্যর পরিবার সম্পর্কে।তবে যখন জেনেছি ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছিলো।দৃশ্য তখন আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে।তখন ওকে ভুলার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া আমি কাপুরুষ নই যে এই সব সমস্যার জন্য নিজের ভালোবাসার হাত ছেড়ে দিব।
বাবা দৃশ্যকে ছাড়া আমি হয়তো মরে যাবো না।কিন্তু সুস্থ ভাবে বাঁচতেও পারবো না।ওকে আমার জীবনে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চাই।”
কথা গুলো বলতে বলতে মাহাদের দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো।আমজাদ রহমান ছেলের চোখে পানি দেখে কষ্ট পেলেন।তার ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছেলেটা আজ ভালোবাসার মানুষটির জন্য কাতর।তিনি পরম আদরে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-“দৃশ্য অনেক লাকী আমার ছেলের মতো কাউকে জীবনে পেয়ে।নাহলে আজকাল এমন ভাবে কয়জন ভালোবাসতে পারে?আমি ভীষণ প্রাউড ফিল করছি।”
মাহাদ তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।সে জানতো তার বাবা তাকে ফিরিয়ে দিবেন না।
মাহাদ দের বাড়ির পরিবেশ এই মুহূর্তে থমথমে।আজ সকালেই মাহাদ আর তার বাবা চাচু রাজশাহীতে এসেছে।সকালের নাস্তা শেষ করে আমজাদ রহমান সবাইকে সবটা জানালেন।আখি রহমানের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠেছে সব শুনে।ছেলের চিন্তায় তার প্রেসার বেড়ে গেছে।এতো বড়ো ভুল মাহাদ কেনো করলো।শেষ পর্যন্ত ওই পরিবারের মেয়েকে পছন্দ করলো?ছেলের জীবনে যে বড়ো ঝড় আসতে চলছে সেটা তিনি আন্দাজ করতে পারছেন।
শামসুন্নাহার বেগম সব শুনে ছেলেকে বকতে লাগলেন।
-“তোর মাথা ঠিক আছে আমজাদ?পোলা ভুল করলে শুধরিয়ে দিবি তা না করে পোলার লগে তাল মিলাস?ওই জল্লাদ বংশের লগে আমরা কোনো আত্মীয়তা করমু না।ওই শয়তানের বাচ্চারা আমার ছোডো পোলার জীবনডা শেষ কইরা দিছে।অহন আমার নাতির পিছে পড়ছে।
আর আমার জাতও খারাপ।সব মরা ঐহানেই মরতে যাস?দুনিয়ায় আর কোনো মাইয়া আছিলো না।ওই আশরাফ শুয়োরের মাইয়াই পাইলি?ওই মাইয়ার রূপ দেখাইয়া তোর পোলারে পাগল বানায়ছে।শয়তানের মাইয়া শয়তানই হইবো।ওই মাইয়া আমি ঘরে আনুম না।আমার বালা ফিরায় দিতে কও?”
মাহাদ এতখন সব সহ্য করলেও আর পারলো না।সে রেগে বললো
-“দাদী দৃশ্যকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা বলবে না। ওকে দেখেতো নিজেই খুশি হয়ে বালা পরিয়ে দিলে।আর এখন ওর পরিবার সম্পর্কে জানার পর ও খারাপ হয়ে গেলো?”
-“ওই শয়তান চুপ থাক।ওই মাইয়ার লাইগা আমার মুখে মুখে তর্ক করিস?ওই মাইয়া নিশ্চয়ই তোরে জাদু করছে। কালা জাদু। পুরা বংশই খারাপ।হের দাদা আছিলো এক জল্লাদ।পোলা দুইদায় হইসে আরো বড়ো জল্লাদ।আর হেতের পোলা মাইয়া হইলো শয়তানের বাচ্চা।”
আমজাদ রহমান তার মাকে থামিয়ে দিলেন। মাহাদ রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।বাকি সবাইকে যাই বলুক।কিন্তু দৃশ্যকে নিয়ে সে কোনো বাজে মন্তব্য শুনতে রাজি না।
আমজাদ রহমান মাকে নানা ভাবে বুঝলেন।কিন্তু তিনি কোনো ভাবে রাজি না।শেষে আরিফ তার মাকে বুঝাতে বসলো।
-“দেখো মা ভালোবাসা চিন্তা ভাবনা করে হয় না। মাহাদ সত্যিই মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসে। তুমি কি চাও মাহাদ আমার মত জীবনে কষ্ট পাক? প্লিজ মা! তাছাড়া ঐ মেয়েটার তো কোন দোষ নেই। তার পরিবার যেমনই হোক মেয়েটা খুব ভালো। তুমিতো নিজ চোখে মেয়েটাকে দেখেছ তাই না?”
শামসুন্নাহার বেগম এবার কিছু বলতে পারলেন না। আসলেই তিনি মেয়েটাকে ভীষণ পছন্দ করেছেন। বাচ্চা বাচ্চা চেহারার মধ্যে কি যে মায়া লুকানো ছিল মেয়েটার। এত মায়াবী মেয়েটা ঐ শয়তান আশরাফের ঘরে কেমনে হইলো? আরিফ আবার বলতে শুরু করলো
-“ওই মেয়েটাকে ছাড়া তোমার নাতি মোটেও সুখে থাকবে না। আর আমি চাইনা মাহাদ আমার মত একাকী জীবন যাপন করুক। মাহাদ আমার ছেলের মত। ওর জীবনে কোন দুঃখের ছায়া আসুক সেটা আমি চাইনা। তাই মা প্লিজ তুমি আর রাগ করে থেকো না।”
শামসুন্নাহার বেগম বললেন
-“আমার কথা বাদ দে। ওই ইবলিশ শয়তান আশরাফ মানবো বইলাতো মনে হয় না। যেখানে হেয় বোন দেয় নাই সেখানে মেয়ে দিবো বলিয়া মনে হয়না।আমার পোলারে আবার অপমান করলে আমি সহ্য করমু না।”
-“মা আগে কথা বলুক দুই পরিবার। পরেরটা না হয় পরে দেখা যাবে। তবে আমরা চেষ্টা তো করতে পারি। তবে আমার মাহাদকে আমি মোটেও কষ্টে থাকতে দেবো না। যেটা আমি করতে পারিনি দরকার হলে সেটা আমি মাহাদের জন্য করবো।”
শামসুন্নাহার বেগম ছেলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার ছেলে আর নাতি ওই বংশে কি পেয়েছে এক আল্লাই জানে। তবে এটা উনি মানতে রাজি যে দিশা আর দৃশ্য যদি অন্য বংশের মেয়ে হতো তবে তার চাইতে বেশি খুশি কেউ হতো না।
রাত তখন প্রায় পোনে দুইটা।এই সময়ে দুই একটা শেয়ালের ডাক ছাড়া আর তেমন কোনো শব্দ পাওয়া যায় না।তবে আসে পাশে কোথা থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ শোনা যাচ্ছে।দৃশ্য বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।রাতে মা জোর করে কয়েক লোকমা ভাত খাইয়েছে।আসলে দৃশ্যর কাছে সবকিছুই কেমন তেতো তেতো লাগছে।জ্বরের কারণে এমনটা হচ্ছে। এখন গায়ে তেমন জ্বর নেই তবে দুর্বলতা রয়ে গেছে। হয়তো মনের দূর্বলতা কারণে শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে। গতকাল মাহাদের সাথে কথা হওয়ার পর আর কথা হয়নি। সামনে কি হবে সেই চিন্তাই দৃশ্যর কিছুই ভালো লাগছে না।
হটাৎ দৃশ্যর ফোনটা ভাইব্রেট করতে শুরু করলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল ‘হার্টবিট’ লেখা। শত কষ্টের মাঝেও দৃশ্যর মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠল।
কল রিসিভ করতেই মাহাদ বললো
-“আমার পিচ্চি টা কি ঘুমিয়ে পড়েছিলো?”
-“না”
-“এত রাত অব্দি জাগা কিন্তু ঠিক না। পরে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়বে। তখন তোমাকে দেখতে কিউট পেত্নীর মত লাগবে।”
দৃশ্য মলিন হাসলো।আর বললো
-“তখন কি তুমি আমাকে রেখে পালিয়ে যাবে?”
-“মোটেই না। বরং ওই পেত্নীটার গোলাপী ঠোটে চুমু খাব। চুমু খেতে খেতে একদম পুরো চেহারা গোলাপি করে দিব। তখন আমার পিচ্চিটা হয়ে যাবে গোলাপি বানু।”
-“তুমি একটা অসভ্য।”
-“পৃথিবীর সব প্রেমিকরা তার ভালোবাসার মানুষের কাছে অসভ্যই থাকে। এখন তো শুধু প্রেমিক যখন হাজব্যান্ড হব তখন অসভ্যতার লেভেল আরো কয়েক ধাপ উপরে উঠবে। তখন সামলাবে কি করে?”
-“আমিতো সামলে নেব। তুমি আমাকে সামলাতে পারবেতো?”
-“তা আর বলতে।”
দৃশ্য কাঁদো কাঁদো গলায় বললো
-“তোমাকে ভীষণ জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। তোমার বুকের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। মনের দহনটা টা তোমার বুকের মাঝে লেপ্টে থেকে কমাতে ইচ্ছে করছে।”
-“তাহলে নিচে আসো?”
-“কি?”
-“বললাম নিচে আসো তোমার ইচ্ছা পূরণ করি।”
দৃশ্য চমকে বললো
-“তু….. তুমি নিচে?”
-“এসে চেক করো।”
দৃশ্য কল কেটে দ্রুত রুমের দরজা খুলে আশেপাশে চোখ বুলালো।সব নিরব দেখে ধীরে ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। পেছনে এক জোড়া চোখ দৃশ্যকে দেখতে লাগলো।
দৃশ্য দ্রুত গেট থেকে বেরিয়ে বাড়ির পাশের গলিতে ঢুকলো। কারণ দৃশ্য জানে মাহাদ সেখানেই আছে। গলির সামনে আসতেই দেখতে পেল মাহাদ বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃশ্য এক দৌড় দিয়ে মাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দুচোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরছে। সে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। মাহাদ পরম আদরে নিজের প্রিয়তমাকে বুকের সাথে জাপটে জড়িয়ে ধরলো। যেন বুকের সাথে পিষে ফেলবে।কয়েক সেকেন্ড পর মাহাদ দৃশ্যর চিবুকে হাত রেখে তার কপাল চোখ নাক মুখে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে লাগলো। রাস্তার সোডিয়ামের আলোতে দৃশ্যের গালে আঙ্গুলের ছাপ গুলি অনেকটাই বোঝা যাচ্ছে। মাহাদ সেখানে বারবার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে লাগলো। অস্থির হয়ে মাহাদ বললো
-“খুব কষ্ট হয়েছিল তাই না? শরীরটা মনে হয় অনেক দুর্বল। দেখি জ্বর আছে কিনা?”
কথাটা বলেই দৃশ্যের কপালে হাত ছুয়ে দেখলো।দৃশ্য কাঁদতে কাঁদতে বললো
-“এখন জ্বর নেই।”
-“প্লিজ জান কান্না বন্ধ করো।রাতে কিছু খেয়েছো?”
-“হ্যাঁ খেয়েছি।তুমি?”
-“হ্যাঁ খেয়েছি।”
তারপর আবার দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।দৃশ্য মাহাদের টি শার্টের ওপর থেকেই বুকে কয়েকটা চুমু খেলো। মুচকি হেসে মাহাদ বললো
-“কাল বাবা তোমাদের বাসায় আসছে। আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে।”
দৃশ্য চমকে মাহাদের বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো।অবাক হয়ে বললো
-“মানে?”
-“মানে বাবা কাল তোমার পরিবারের সাথে কথা বলতে আসছে।”
দৃশ্যর মনে ভয় টা যেন আরো বেশি বাড়তে লাগলো। তার বাবা কি আদৌ কখনো মানবে? দৃশ্য কাঁপা গলায় বললো
-“আমার ভয় হচ্ছে মাহাদ। বাবা যদি না মানে।”
-“প্লিজ আগে থেকে নেগেটিভ কিছু ভেবোনা। শুধু একটা কথা মনে রেখো দৃশ্য শুধু মাহাদের বউ হবে। যে কোন কিছুর বিনিময় আমি আমার এই পিচ্চিটা কে চাই। তোমার কাছ থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।”
এই মুহূর্তে দৃশ্যর ঠিক কি হল সে জানেনা। সে হঠাৎ মাহাদের ওষ্ঠ জড়ায় আক্রমন করে বসলো। শুষে নিতে থাকলো অমৃত। প্রথমে মাহাদ কিছুটা অবাক হলেও কয়েক সেকেন্ড পর সে ও তার প্রিয়তমার ডাকে সাড়া দিতে লাগলো।
একসময় দৃশ্য ছাড়তে চাইলে মাহাদ তার কোমর জড়িয়ে আরো কাছে টেনে নিলো। দৃশ্য বুঝতে পারল সে ক্ষুধার্ত বাঘ কে জাগিয়ে তুলেছে। আজ তার সর্বনাশ নিশ্চিত। কিছু সময় পর দৃশ্যের মনে হলো সে দম আটকে মারা যাবে।সে মাহাদের বুকে ধাক্কাতে শুরু করলো। মাহাদ দৃশ্য কে ছেড়ে দিয়ে হাপাতে লাগল।আর বললো
-“তুমি সবসময় আমাকে এভাবে দুর্বল করে ফেলো। এটা একদম ঠিক না।”
দৃশ্য এখন লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না। সে সব সময় কেন এমন উদ্ভট কাজ করে ফেলে? দৃশ্য বুঝতে পারলো দিন দিন সে নির্লজ্জ হয়ে উঠছে। মাহাদ মুচকি হেসে ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো
-“আগে থেকে বাসায় কিছু জানানোর দরকার নেই। তুমি নরমাল ভাবেই থাকো। ঠিক আছে?”
দৃশ্য মাথা নেড়ে সায় দিল। মাহাদ তাকে বাসায় চলে যেতে বললো। দৃশ্য মনটা খুশিতে ভরে উঠল। এই মানুষটার উপস্থিতি তার মনের সকল বেদনাকে মুহূর্তেই সারিয়ে তুলতে পারে। দৃশ্য ধীরে ধীরে বাসার দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে নিজের রুমে চলে আসলো। তবে নিজের রুমে এসে কিছুটা চমকালো। মুহুর্তেই তার মনের ভয় টা বাড়তে শুরু করলো। তার মা বিছানায় বসে আছে। দৃশ্য ভয়ে ভয়ে মায়ের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। আনিকা কবির গম্ভীর স্বরে বললেন
-“ছেলেটাকে বলে দিবি এত রাতে যেন দেখা করতে না আসে।”
দৃশ্য ভয়ে ভয়ে মাথা নেড়ে হে জানালো। আনিকা কবির রুম থেকে চলে যেতে নিয়ে আবার পেছন ফিরে বললেন
-“তোরা ভুল পথে হাঁটছিস দৃশ্য। তোর বাবা কোনদিন এই সম্পর্ক মেনে নেবে না।”
কথাটা বলেই তিনি চলে গেলেন।দৃশ্য ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। ভয়ে তার বুক কাঁপছে। আসলেই কি বাবা কোনদিন মানবে না?
আমজাদ রহমান,আরিফ রহমান আর মাহাদের বড় মামা বসে আছে দৃশ্যদের সোফায়। তাদের সামনে বসে আছে আশরাফ হোসাইন ও তার বড় ভাই। রাগের আশরাফ হোসেনের গা জ্বলে যাচ্ছে। তাদের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ফাহিম।সে এই মুহূর্তে চরম বিরক্ত। মাহাদকে সামনে পেলে হয়তোবা দু চার ঘা বসিয়ে দিত। সাহস হয় কি করে তার বোনের জন্য বাবাকে পাঠায়।
দরজার আড়ালে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছে দৃশ্য। ভয়ে সে ঠিক মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। পুরো শরীর কেমন অসাড় লাগছে। তার বাবা ঠিক কি বলবে সেটা নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত। আর অন্যদিকে আনিকা কবির ও তার বড় জা মিলে রান্নাঘরে টুকটাক নাস্তার বেবস্থা করছে। যাই হোক তারা তো এই মুহূর্তে অতিথি হয়ে এসেছে। সামান্যতম ব্যবস্থাতো করাই উচিত। কিন্তু আনিকা কবিরের এর হাত চলছেনা। তিনি খুব ভালো করেই চেনেন তার স্বামীকে। একটাই দোয়া করছেন যাতে সবকিছুর মাঝে তার মেয়েটার জীবন নষ্ট না হয়।
আমজাদ রহমান নরম সুরে বললেন
-“দেখো আশরাফ তুমি হয়তো বা এতদিনে জেনে গেছো যে ছেলেমেয়েরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে। আগে দুই পরিবারের মধ্যে যাই হয়েছে আমি চাই তুমি সব ভুলে ছেলেমেয়েদের সুখের কথা চিন্তা করো।”
আশরাফ হুসেনের বড়ো ভাই আনোয়ার হুসাইন বললেন
-“তোমরা আমাদের বাড়ির মেহমান হয়ে এসেছো। চা নাস্তা খেয়ে বাড়ি ফিরে যাও। তোমাদের পরিবারের সাথে কোন আত্মীয় তো আমরা করবো না।”
মাহাদের বড় মামা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেন
-“ভাইসাহেব এভাবে বইলেন না। এটা ছেলে মেয়েদের জীবনের ব্যাপার। তাছাড়া আমাদের ছেলে তো অযোগ্য না। আর আমজাদ ভাইয়ের সামাজিক মর্যাদা ও কেমন সেটা আপনারা জানেন। অর্থ সম্পদের কোন অভাব নেই। দয়া করে একবার ভেবে দেখুন।”
এবার আশরাফ হোসেন কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললেন
-“অর্থ-সম্পদ যাই থাকুক না কেন আপনাদের বংশে আমরা মেয়ে দেবো না। আমাদের বোনের মৃত্যুর কথা আমরা এখনো ভুলিনি। আপনাদের বাড়ির ছেলের জন্যই আমার বোনটা সুইসাইড করেছে। আপনারা ভাবলেন কি করে সেখানে আমি আমার মেয়েকে দিব? তাছাড়া আপনাদের ছেলে কেমন সেটা আমার জানা হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে গুন্ডামি করে বেড়ায়। আমার ছেলেটাকে কিভাবে মেরেছিল সেটা আমি এখনো ভুলিনি।”
দরজার আড়ালে থেকে দৃশ্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তার বাবা এতটা কঠোর কি করে হতে পারে? মাহাদের বাবার কোনো অপমান দৃশ্য কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
আশরাফ হোসেনের কথা শুনে এবার আরিফ রহমান কিছুটা রেগে গেলেন। তিনি বললেন
-“দিশার মৃত্যুর জন্য কে দায়ী সেটা সবাই ভালো করেই জানে। আপনাদের ইগোর কারণে দিশার জীবন গেছে। আর মাহাদ কোন রাস্তার গুন্ডা না। আপনার বাড়ির ছেলে রাস্তায় অন্য মেয়েদের ইভটিজিং করেছে বলেই মাহাদ তার গায়ে হাত তুলেছে।”
ফাহিম কিছুটা রেগে বললো
-“মুখ সামলে কথা বলবেন। আপনারা বড় বলে যা খুশি তাই আমার উপর চাপিয়ে দিবেন সেটা আমি মানবো না। আমি কোনদিন কোন মেয়েকে রাস্তাঘাট ইভটিজিং করিনি। আপনাদের ছেলে হুটহাট এসেই আমার সাথে ঝামেলা পাকিয়েছে।”
আমজাদ রহমান নিরব স্বরে বললেন
-“দেখো আশরাফ আগে যা হয়েছে সব কিছু ভুলে যাওয়াই ভালো। আমি কিন্তু সবকিছু ভুলেই ছেলে মেয়েদের সুখের জন্য তোমার কাছে এসেছি।”
আশরাফ হোসাইন ক্ষিপ্ত গলায় বললেন
-“আমার মেয়ের সুখের কথা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। তার জন্য আমরা আছি। দরকার হলে মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিব তবুও আপনার পরিবারের মেয়ে দিব না। আপনার ছেলে ফুঁসলিয়ে আমার মেয়েটার মাথা খারাপ করেছে। আমার মেয়ের কাছ থেকে আপনার ছেলেকে দূরে থাকতে বলবেন।”
মাহাদের মামা কিছুটা রেগে বললেন
-“আপনি কিন্তু ভাইজান বেয়াদবি করছেন। আমজাদ ভাই কিন্তু সবকিছু ভুলেই আপনাদের কাছে এসেছে। শুধুমাত্র ছেলের কথা চিন্তা করে। না হলে আমাদের ছেলে মোটেও ফেলনা না। না হলে আর্থিক বা সামাজিক কোনো দিক থেকেই আপনারা আমজাদ ভাইয়ের ধারের কাছেও না।”
আমজাদ রহমান মাহাদের মামার হাতের উপর হাত রেখে থামতে বললেন।
আশরাফ হোসাইন সোফা থেকে দাঁড়িয়ে রেগে বললেন
-“এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। আর কোনদিন যেন আপনার ছেলেকে আমার মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে না দেখি।”
আরিফ উঠে দাড়িয়ে রেগে বললো
-“আপনাদের এই ইগোর কারণে আমি দিশাকে হারিয়েছি।এক মেয়েকে হারিয়েও আপনাদের শিক্ষা হয়নি।আবার একই কাজ করছেন?”
এতক্ষণে দৃশ্য সোফার রুমে সামনে এসে দাড়ালো। সবকিছু সামনে থেকে দেখে কাঁদতে লাগল।
আশরাফ হোসাইন রেগে আঙ্গুর উঠিয়ে বললেন
-“আগে তুই আমার বোন এর পেছনে কুত্তার মত লেগে ছিলি। আর আজ নিজের ভাইয়ের ছেলে কেও আমার মেয়ের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিস। এর আগে তোদের গলাধাক্কা দিয়ে বের করি তার চাইতে ভালো সম্মান নিয়ে বেরিয়ে যা।”
দৃশ্য সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল। তিনি কি তাহলে মাহাদের চাচ্চু? এই মানুষটাই কি তার ফুপিকে পাগলের মত ভালবেসেছে?
অপমানে আমজাদ রহমানের গা জলে যাচ্ছে।বুকে বা পাশে একটু ব্যাথা করছে।শুধু নিজের ছেলের কথা চিন্তা করে তিনি চুপ করে আছেন।তার চোখ পড়ল দৃশ্যর দিকে।কি মায়াবী মুখ মেয়েটার।এই মায়াবীকে তার ছেলেটা কি করে ভুলবে?
মাহাদের মামা রেগে বেরিয়ে গেলেন।আরিফ বেরুতে গেলে চোখ যায় দৃশ্যর দিকে।সে থমকে দাড়ায়। মাহাদ ঠিক বলেছে।দৃশ্য দেখতে একদম দিশার মতো।দৃশ্যর কান্না মাখা মুখটা দেখে তার দিশাকে প্রথম দেখার কথা মনে পড়লো।ঠিক এই ভাবেই রাস্তায় বসে কাদছিলো।
আমজাদ রহমান এগিয়ে আসে দৃশ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। দৃশ্য হু হু করে কেঁদে উঠলো।তার বুকটা কাপছে।এই ভালো মানুষটাকে বাবা কি করে এতো অপমান করলেন?
সবাই চলে যেতেই দৃশ্য ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।জীবনটা এতো বিষাদময় কেনো লাগছে?সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।