ইচ্ছের_উল্টোপিঠ #পর্ব_২৪,২৫

0
485

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৪,২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
২৪

সময়ের কাটা “নয়” টার কাছাকাছি ঘুরছে। জুভান মাত্রই লাগেজ গুছিয়ে শাওয়ার নিতে গেলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর জুভান বের হলো ওয়াশরুম থেকে। ভিজে চুল হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে এসে দাঁড়ালো আয়নার সামনে। একটা কালো টিশার্ট পরে তার উপর জ্যাকেট পড়লো। আর জিন্স। রেডি হওয়া শেষ হলে ফোন হাতে নিয়ে ঐশীকে কল দিলো। ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই জুভানের হার্টবিট বেড়ে গেলো দ্বিগুণ তেজে। জুভান চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস নিলো। নিজের অনুভূতি সামলে বললো,
–” পাঁচ মিনিটের ভিতর ডিনার সেকশনে দেখতে চাই। ”

ওপাশ থেকে ঐশী কিছু বলবে তার আগেই জুভান সুর ত্যাড়া করে বললো,
–” নো মোর ওয়ার্ডস, ওকে? ”

ঐশী কিছুটা রাগ লাগলো। যখন যা বলবে তাই করতে হবে নাকি! মগের মুল্লুক! কিন্তু কণ্ঠে যথাসম্ভব বিনয় প্রকাশ করে বললো,
–” ওকে স্যার। ”

জুভান ফোন কেটে পকেটে রেখে দিয়ে রুম লক করে বেরিয়ে গেলো।
____________________
জুভান ডিনার টেবিলে বসে আছে। হাতে ফোনের নীল স্ক্রিন ভাসছে। একটু পর ঐশী এসে বসলো সেই টেবিলে। জুভান ঐশীকে দেখে আবারও ফোন স্ক্রল করতে মশগুল হলো। নিচে তাকিয়েই বললো,
–” খাবার অর্ডার দাও। ”

ঐশী মুখ ভেংচিয়ে একজনকে ডেকে খাবার অর্ডার দিলো। জুভান এখনো ফোন স্ক্রল করছে। ঐশী এভাবে একা একা বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে। তাই ও দাত দিয়ে নখ কাটছে আর আশেপাশে তাকিয়ে লোকজন দেখছে। জুভান ফোনের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছে ঐশীর বিরক্তি। মনে মনে একটু হেসে নিলো সে। একটু পর খাবার এলে জুভান ফোন পকেটে রেখে খেতে শুরু করলো। ঐশী খাবারে হাত দিবে তার আগেই জুভান মুখের খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,
–“তোমার তো পেট ভরে গেছে। আর খাওয়ার দরকার নেই। বসে বসে এখন আমার খাওয়া দেখো। ”

ঐশী এসব কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো জুভানের দিকে। অবাক হয়ে বললো,
–” মানে? আমি আবার কখন খেলাম ? ”
–” খেলে তো। এই মাত্রই জীবাণু , ব্যাক্টেরিয়া আরো কত ময়লা জিনিস খেলে। পেট ভরেনি? ”

ঐশী জুভানের এসব আজগুবি কথা শুনে বিরক্ত হলো। আঙুল কপালে ঘুরিয়ে বললো,
–” আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? কিসব বলছেন ? আমি কেনো এসব খেতে যাবো? ”
–” তাহলে দাত দিয়ে নখ কেটে কি করলে? এসব খাবারের জন্যেই তো মানুষ নখ খায়। ইজনট্ ইট ? ”

ঐশী এবার জিহ্বা কামড়ে ধরলো। মাথা চুলকে বললো,
–” আসলে আমার অভ্যেস তো। তাই একটু আকটু..”

জুভান খাবার খেতে খেতে বললো,
–” গুড হেবিট। আরো উন্নতি করো নিজের এসব অভ্যাসের। জীবাণু খাওয়ার ভবিষৎ উজ্জ্বল হোক তোমার।আমিন।”

ঐশী রেগে উঠলো। কিন্তু কথা বাড়ালোনা।এটা যে খারাপ অভ্যাস সেটা ও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। তাই ও খাবার খাওয়ায় মন দিলো।
–” লাগেজ গুছানো শেষ ? ”

জুভানের প্রশ্নে ঐশী তাকালো। অবাক হয়ে বললো,
–” লাগেজ গুছাবো কেনো ? ”
–” আমরা এখন ঢাকায় চলে যাচ্ছি। ভুলে গেছো কথাটা? ”

ঐশী আবারও জিহ্বা কামড়ে ধরলো। ইশ! আসলেই তো! তন্ময়ের চক্করে পরে আজ চলে যাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
ঐশী ভাত মেখে মুখে দিয়ে বললো,
–” না। এখনো করেনি। খাওয়া শেষ হলেই করে নিবো। ”

জুভান কিছু বললো না। খাবার খাওয়া শেষ হলে ওরা যে যার রুমে চলে গেলো।

______________________

প্লেন ছেড়ে দিবে আর একটু পর। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে। প্রায় অনেক্ষণ ধরে ওদের নাম ডাকা হচ্ছিল। একটু পর ঐশী আর জুভান তাড়াহুড়ো করে প্লেনে ভীতর প্রবেশ করলো। জুভান নিজের সিট বের করে বসে পড়লো। কিন্তু বিপাকে পড়লো ঐশী। ওর সিট জুভানের পাশে পড়েছে। কিন্তু ওর এক কথা। জুভানের পাশে সে বসবে না। জুভানকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি এখনো। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে আরামসে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। প্লেন ছেড়ে দিবে আর একটু পর। ঐশী দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছে কি করা যায়! তখন জুভান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
–” ওতো চিন্তা করে লাভ নেই। এটা প্লেন। বাস না যে সারা রাস্তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে যাবে। ”

ঐশী তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো জুভানের দিকে। মুখ বাঁকিয়ে বললো,
–” থ্যাংক ইউ মনে করিয়ে দেবার জন্যে। আপনি না বললে আমি তো ভেবেছিলাম এটা ঠেলাগাড়ি। ”

জুভান কিছু না বলে মৃদু হাসলো। একটু পর ইয়ার হোস্টেস এসে ঐশীকে বললো,
–” ম্যাম, প্লিজ টেক ইউর সিট। ”

ঐশী অসহায় চোখে চারপাশে তাকিয়ে ঝট করে বসলো জুভানের পাশে। জুভান ঐশীর এমন শব্দ করে বসা দেখে ভ্রু কুচকালো।
ঐশী প্লেন অনেক ভয় পায় ছোটবেলা থেকেই। একবার ঘুরতে যাওয়ার সময় ওর বাবা প্লেনের টিকেট কেটেছিলেন। কিন্তু ঐশীর জেদ দেখে সেই টিকেট ক্যান্সেল করে বাসের টিকেট কাটতে হয়েছে।
সেই ভয় এখনো কাটে নি। প্লেন টেক অফ করা শুরু করলো। ঐশী ভয়ে একদম সেটিয়ে বসলো সিটের সাথে। প্লেন একটু নড়তেই ঐশী জোরে খামচে ধরলো জুভানের হাত। জুভান হঠাৎ পাওয়া ব্যাথায় ” উফফ ” করে উঠলো। ঐশীর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই ঐশীর ভীত-সন্ত্রস্ত মুখ ভেসে উঠলো। জুভানের রাগ সেখানেই পানি হয়ে গেলো। মুচকি হেসে ঐশীর দিকে ফিরলো। বললো,
–” মিস,রণচন্ডি…”

ঐশী এই ডাক শুনে কড়া চোখে তার দিকে তাকালো। বললো,
–” কে রণচণ্ডী ? ”

জুভান চারপাশে একবার তাকিয়ে ঐশীর দিকে তাকালো। বললো,
–” আমার পাশে তুমি ছাড়া কি আর কেউ আছে? ”

ঐশী জোড়ে এক হাফ ছাড়লো। জুভানের খোঁচা মেরে কথা বলাটা শোধ সমেত ফিরিয়ে দিতে বললো,
–” আছে তো। আপনার ভুত। যেটা এখন আপনার মাথায় চড়ে আছে। যত্তসব। ”

বলেই ঐশী সামনে তাকালো। ততক্ষনে প্লেন ছেড়ে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। ঐশীর ভয় অনেকটাই কমে গেছে। হুট করে ঐশীর কিছু একটা মনে পড়লো। ও জুভানের দিকে ফিরে বললো,
–” আপনি এসব কথা আমার মাইন্ড ডিস্ট্রাক করার জন্যে বলেছেন, তাইনা ? ”

জুভান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। গলা হালকা ঝেড়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,
–” হাও ফানি। তোমার মাইন্ড ডিস্ট্রাক করা ছাড়াও আমার আরো অনেক কাজ আছে। সো নিজেকে এত ইম্পর্ট্যানস দিয়ে লাভ নেই। ”

ঐশী হাসলো। যা বুঝার বুঝে ফেলেছে ও।জুভান প্লেনে উঠে মাস্ক খুলে ফেলেছে। কালো জ্যাকেটটা হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসলো।
ঐশী আশপাশে তাকিয়ে লোকজন দেখছে। হঠাৎ শুনতে পেলো এক মেয়ে জুভানের দিকে আঙুল তুলে কিছু একটা বলছে পাশের জনকে। ঐশী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো মেয়েটার কথা। কিন্তু লাভ বিশেষ হলো না। কিন্তু অবাক হলো যখন মেয়েটা সিট থেকে উঠে জুভানের পাশে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা ওদের পাশে দাড়িয়ে আপ্লুত গলায় বললো,
–” এক্সকিউজ মি , ”

জুভান কান থেকে ইয়ারপড খুলে পাশে তাকালো। মেয়েটা খুশিতে প্রায় লাফাতে লাফাতে বললো,
–” ওয়ান অটোগ্রাফ প্লিজ, প্লিজ ,প্লিজ। ”

জুভান মৃদু হাসলো। মেয়েটার কাছ থেকে নোটবুক নিয়ে বাম হাতে সাইন করে দিলো। মেয়েটা নোটবুক হাতে নিয়ে বলতে লাগলো,
–” আই অ্যাম ইউর বিগ ফ্যান, স্যার। আপনার গান আমার অনেক পছন্দ। ( মাথা হেলিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে) সাথে আপনাকেও। ”
ঐশী হতবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। এমন নির্লজ্জের মত ভালোলাগে কথাটা কিভাবে বললো ভেবে পেলো না ও। জুভান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
–” থ্যাংকস। ”

মেয়েটা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুভান বললো,
–” একচুয়ালি আমি খুব টায়ার্ড। সো…”
–” ওকে ওকে। বায়। ”

মেয়েটা চলে গেলে জুভান জোরে এক হাফ ছাড়লো। এতক্ষণ ধরে মেকি হাসি হেসে সে বড়ই ক্লান্ত। এইজন্যেই সবসময় মাস্ক পরে থাকে। নাহলে যেখানে সেখানে এসব ফ্যান নামক অপদার্থদের খপ্পরে পড়তে হয়। আর এদের সাথে একটু উলটপালোট কথা বললেই সেটা নিউজ হয়ে যায়। রাবিশ! ঐশী মেয়েটার যাওয়ার দিকে একঝলক তাকিয়ে আবারও জুভানের দিকে তাকালো। উত্তেজিত হয়ে বললো,
–” আচ্ছা , একটা কথা জিজ্ঞেস করি? ”

জুভান কানে ইয়ারপড লাগাতে লাগাতে বললো,
–” হুম। ”
–” এই যে আপনার কাছে সবাই অটোগ্রাফ নিতে আসে ,আপনার অনেক ভালো লাগে, তাইনা ? ”

জুভান ভ্রু কুচকে নিলো। সাফসাফ বললো,
–” না। লাগে না। ”
–” কেনো, কেনো? ”
–” হুটহাট এসব বিরক্ত লাগে।”

ঐশী সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বললো,
–” আমার খুব ভালো লাগে, জানেন। মাঝেমধ্যে মনে হয় আমার কাছে যদি কেউ অটোগ্রাফ চাইতে আসতো! খুব মজা হতো, তাইনা। সিলেব্রিটি, সিলেব্রিটি ফিল আসে। সো আমেজিং, ইউ নো। ”

জুভান ঐশীর পুলকিত চোখের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। একটা জিনিষ লক্ষ করলো সে, ঐশী যখন খুব খুশি হয় তখন তার চোখ দুটি ছোটছোট হয়ে যায়। মুখের চারপাশে খুব সুন্দর স্মাইল লাইন পড়ে। জুভান গালে হাত রেখে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। ঐশী অনবরত কথা বলায় মগ্ন। তার এসবে খেয়াল নেই। জুভান চোখের পলক ফেলা বিনা ঐশীর মুখের পানে চেয়ে আছে। তখন ঐশীকে দেখতে কোনো মায়ারাজ্জ্যের অধিপতি মনে হয়। যার চোখে মুখে মায়ার নিদারুণ সম্ভার। তবে কি সে এই রণচ্চণ্ডী মেয়ের প্রেমে পড়েছে? যখন ঐশী ওর আশেপাশে থাকে তখন এমন মনে হয় কেনো? হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। মনে চায় বেহায়া হয়ে বারবার তাতেই মত্ত হয়ে থাকুক। আড়চোখে তাকে দেখে বুকে জ্বালাময় কাপন ধরুক। ঝলসে যাক অবাধ্য চোখজোড়া। জুভান বুঝতে পারে। হুম। সে প্রেমে পড়েছে! মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসে ফেলেছে এই মেয়েকে। যার মায়ার সুতো আজীবনেও কেটে ফেলা সম্ভব না। জুভান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল ঐশীর পানে।

#চলবে..

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আকাশে কুঞ্জ মেঘের ভেলা পেরিয়ে প্লেন এসে নামলো মাটিতে। একজন একজন করে নেমে পড়লো সবাই প্লেন থেকে। জুভানের কাধে একটা ব্যাগ আর ঐশী লাগেজ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
জুভানের জন্যে অপেক্ষা করছিলো শাহাদাত আর ওর দুজন বডিগার্ড। জুভান আর ঐশীকে আসতে দেখে ওরা তিনজন এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ঐশী আশপাশে তাকিয়ে হাঁটছিলো আর নখ কাটছিল দাত দিয়ে। তপ্ত দুপুর। সূর্য একদম মাথার উপরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জুভানের গরম লাগছিলো তাই সে মাস্ক খুলে ফেলে দিলো। কিন্তু এতেই ঘটলো বিপত্তি। একদল লোক ওকে দেখে দৌড়ে এলো ওর কাছে। মুহূর্তেই মধ্যেই ভিড় জমে গেলো এয়ারপোর্টে। জুভানের এসব দেখে কিছুটা রাগ লাগলো। সারাদিন জার্নি করে মন মেজাজ একটুও ভালো নেই। তারমধ্যে এসব! তবুও সে হাসিমুখে ওদের কয়েকজনকে অটোগ্রাফ দিলো। বাকিদেরকে বডিগার্ড সামলে নিলো। ঐশী একপাশে দাড়িয়ে চোখ বড়বড় করে এদের কাজ দেখছিলো। এতদিন টিভিতে, মুভিতে এসব দেখতো। আজ তো সরাসরি! তবে ঐশীর ভালো লাগছে। জুভান ভিড়ের মধ্যে মাথা উচু করে একবার ঐশীকে খুঁজলো। বেশ খানিক তাকানোর পর আচমকা ঐশীর দেখে মিললো একটা ছাউনির নিচে। জুভান ঐশীকে কিছু একটা ইশারা করে কিন্তু ঐশী বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুচকে হাত নাড়ালো ও। জুভান অধৈর্য্য হয়ে শাহাদাতকে ফিসফিস করে বললো,
–” ঐশীকে গাড়ীতে তুলো। যাও। ”

শাহাদাত সবকিছু সামাল দিতে দিতে বললো,
–” কিন্তু স্যার, আপনি একা? ”
–” আমি যেটা বলেছি সেটাই করো। নো মোর ওয়ার্ডস। ”

শাহাদাত অযথাই দাত কেলিয়ে ভিড় থেকে বেরিয়ে গেলো। ঐশীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
–” ঐশী,”

ঐশী ভিড় থেকে চোখ সরিয়ে শাহাদাতের দিকে তাকালো। চোখ দিয়ে “কি” জিজ্ঞেস করলো। শাহাদাত বললো,
–” স্যার, তোমাকে গাড়িতে উঠতে বলেছেন। ”

ঐশী তরিগরি করে বললো,
–” না, না , চাচা। আমি চলে যাবো টেক্সী করে বাসায়। স্যারের গাড়ি লাগবে না। ”
–” ঐশী, জেদ করো না।স্যার জানলে বকবেন আমায়। চলো আমার সাথে। ”
— ” আরে চাচা, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি স্যারকে ফোন করে জানিয়ে দিবো। এখন আসছি। ”

শাহাদাত আরো কিছু বলবে তার আগেই ঐশী উনাকে সালাম দিয়ে লাগেজ হাতে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।

________________________
সবশেষে ভিড় সামলে জুভান গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে উঠেই ঐশীকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে ফেললো ও। কপালে সরু ভাজ ফেলে শাহাদাতকে জিজ্ঞেস করলো,
–” ঐশী কই? ”

শাহাদাত মিনমিনিয়ে বললো,
–” স্যার, ঐশীকে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু ও মানা করে একাই চলে গেছে বাসায়।”

জুভানের প্রচন্ড রাগ লাগলো। দাতে দাত চেপে বললো,
–” আমার কথা বলো নি ওকে? ”
–” আব, বলেছি স্যার। বলেছে আপনাকে ফোন করে জানিয়ে দিবে। ”

জুভান কোনো উত্তর করলো না। কিন্তু ভীতরে ভীতরে ঠিকই ফুসছে ও। ওর বলা সত্বেও কি করে ঐশী একা একা চলে গেলো! এত সাহস! জুভান ফোন বের করে অযথাই স্ক্রল করতে লাগলো। মুঠোফোনের স্ক্রিনের উপর আঙুলগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই দ্রুতগতিতে চলছে। শাহাদাত সেদিকে একঝলক তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করলো,
–” ঐশী, আজ তোমার কপালে শনি নাচছে। ইয়া আল্লাহ!”

________________________

আজ শুক্রবার। ঐশীর ছুটির দিন। ঘড়ির কাঁটা যখন “দশ” এর কাছাকাছি ঘুরছে তখন ঐশীর এলার্ম বেজে উঠলো। সবসময়ের মত ঘুমকাতুরে ঐশী এলার্ম অফ করে কাথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। একটু পর ঐশীর ফোন বেজে উঠলো। ঐশী চোখ বন্ধ করে বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে কানে লাগালো। ঘুমঘুম কণ্ঠে ” হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে কিছুটা কড়া সুরে জুভান বললো,
–” কোথায় আপনি? ”

ঐশী জুভানের কণ্ঠ শুনতেই ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে বললো,
–” বাসায় আমি। কেনো স্যার? কিছু কি হয়েছে? ”
–” না। এখনো কিছু হয়নি। তবে এবার হবে। কাল এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে পাইনি কেনো তোমায়? ”

ঐশী মিনমিনিয়ে বললো,
–” আসলে স্যার , আমি একা একাই বাসায় চলে এসেছিলাম। তাই আরকি..”

ঐশীকে থামিয়ে জুভান বলে উঠলো,
–” এসেছো ভালো কথা। আমাকে জানিয়ে এসেছো? ”
–” আসলে ,আমি আপনাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেবো ভেবেছিলাম। ”
–” তা, তুমি সেই কাজ করেছো? ”

ঐশী এবার জিহ্বা কাটলো। বাসায় ফিরে একদম ভুলে গেছিলো ফোন করার ব্যাপারটা। ঐশী ঢোক গিলে বললো,
–” আসলে..আমি..মানে….”
–” শাট আপ, ঐশী। তুমি আমার আন্ডারে চাকরি করো কিন্তু যাওয়ার আগে আমার পারমিশন নাও নি। এটাই তোমার প্রফেশনালিজম? টেল মি? ”

উফ! জ্ঞান দিচ্ছে! ঐশী একটা হাফ ছেড়ে দিয়ে বললো,
–” সরি স্যার। ”
–” ড্যাম ইউর সরি। আজ সন্ধায় একটা পার্টি আছে। অ্যাড্রেস পাঠিয়ে দিবো। চলে এসো ঠিক টাইম মতো।”

পার্টির কথা শুনে ঐশীর বিরক্ত লাগলো। কিন্তু চাকরি করে সে। তাই কোনোরূপ বারন না করে বললো,
–” ওকে স্যার। আমি পৌঁছে যাবো। ”

অতঃপর কিছুক্ষণ কেটে গেলো নিরবতায়। নিঃশ্বাসের শব্দ কতটা মধুর হতে পারে সেটা জুভান এখন উপলব্ধি করতে পারছে। ফোন কানে নিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো ও। দূরে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ালো,
–” তার এক উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার জ্বলন্ত রাগকেও ঠান্ডা করার ক্ষমতা রাখে। অদ্ভুত! ”
জুভানকে চুপ থাকতে দেখে ঐশী ফোন কানে রেখেই ভ্রু কুচকে নিলো। গলা ঝেড়ে বললো,
–” স্যার , ফোন রাখবো? ”

জুভান কিছুটা থতমত খেয়ে ফেলো। তরিগরি করে কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো সে। ঐশী বোকা বনে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে চিন্তা করলো,
–” উনার আবার কি হলো! স্ট্রেঞ্জ! ”

____________________________

আকাশের রং এখন লালাভ কালো। “গ্রীন ভিউ” রিসোর্ট মুখরিত হয়ে আছে নানাধরণের গানের সুরে। জুভান একপাশে দাড়িয়ে দুজন লোকের সাথে কথা বলছে। তিনজনের হাতে কোল্ড ড্রিংকস। জুভান কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বারবার ঘড়ি দেখছে। ঐশী এখনো এসে পৌঁছায় নি রিসোর্টে। এই মেয়েটা সময়ের কোনো তোয়াক্কাই করে না। সবসময় লেট। জুভান এসব ভেবে যখন লোকগুলোর সাথে কথা বলায় মগ্ন হলো ঠিক তখন ঐশী রিসোর্টের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলো। পরনে সাদা রঙের লেহেঙ্গা। ঐশী দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সাথেসাথে ওর উপর গোলাপের লাল পাপড়ি ছিটিয়ে দেওয়া হলো। ঐশী চমকে উঠলো। দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে ভিজে উঠলো রক্তিম পাপড়ির বৃষ্টিতে।
জুভান দূরে দাঁড়িয়ে ঐশীর কর্যকলাপ দেখলো। চোখ থমকালো হাজারবার। ওকে দেখে মনে হচ্ছে সাদা মেঘের চাদরে জড়ানো এক মেঘবালিকা। ঐশীর মুখের হাসি দেখে জুভানের ঠোঁট আপনা আপনি প্রসারিত হয়ে গেলো।এই মেয়েটা কি অদ্ভুত! সামান্য কিছুতেই অসামান্য খুশি হয়। এত সাধারণ কেনো এই মেয়েটা? তার এই সাধারণ ব্যবহারই জুভানকে ওর দিকে আকৃষ্ট করে। এক মিষ্টি ঘোরে আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জুভানকে অন্যমনস্ক দেখে পাশ থেকে একটা লোক ডাক দেয়। জুভানের ধ্যান ভ্রষ্ট হয়। অপ্রস্তুত হয়ে তাকায় আবার লোকের দিকে। ঠোঁট কথা বললেও অবাধ্য চোখ বারবার সেই মেঘবালিকার দিকে ছুটে যায়। তার একান্ত, ব্যাক্তিগত মেঘবালিকা!

ঐশী রিসোর্টের একপাশে এসে দাঁড়ায়। একজন ওয়েটার ওর কাছে ড্রিংকস দিয়ে যায়। ঐশী ড্রিংকস খেতে খেতে চারপাশে তাকায়। খুব বিরক্ত লাগছে এখানে ওর।
অনেকক্ষণ ধরে দু ছেলে ঐশীর দিকে নজর রাখছে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে একজন আরেকজনকে বললো,
–” ভাই ,কি খাসা মাল। তাইনা? ”
–” একদম। পটাতে পারলে আজকের রাতের ব্যাপারে কোনো চিন্তা করতে হবে না। উফ! ”

ঐশীর মাথা কেনো যেনো ঘুরছে। চোখের সামনে লাল নীল প্রজাপতি দেখছে। ভ্রম নাকি! ঐশী চোখ পিটপিট করে তাকালো। এবার তো আরো ভয়ঙ্কর! ঐশীর সামনে বেলুন উড়ছে। একেক বেলুনের হরেক রং। ঐশী বেলুন গুলো হাত দিয়ে ছুঁতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। ঐশী বুকে হাত গুটিয়ে মুখ ফুলিয়ে তাকালো বেলুনগুলোর দিকে। পঁচা বেলুন! ঠিক তখন ঐশীর পাশে এসে দাঁড়ালো ছেলেগুলো। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
–” হেই, কিউটি? ”

ঐশী চোখ বড়বড় করে ওদের দিকে তাকালো। বললো,
–” কে কিউটি? ”

ছেলেগুলো ঐশীর কথা শুনে অবাক হলো। তাও হাসিমুখে বললো,
–” কে আবার? তুমি। ”
–” কিন্তু সে তো আমায় রণচন্ডি বলে ডাকে। কখনো তো কিউটি বলে ডাকে নি? ”
–” সে কে?

ছেলেগুলোর অবাক করা প্রশ্নে ঐশী খিলখিল করে হেসে উঠলো। হেলেদুলে বললো,
–” সে? আমার সে খুব বড় মানুষ! সবাই তার কাছে , ওটাকে কি যেনো বলে ,ওহ অটোগ্রাফ নিতে আসে। হুমম। ”

ছেলেগুলো একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। এই মেয়েটা যে নেশা করেছে সেটা তাদের বুঝতে বাকি নেই। এবার মেয়েটার পরিণতি ভেবেই ছেলেগুলো হাসলো। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
–” তুমি যাবে তোমার সে’এর কাছে? ”

ঐশী গ্লাসের বাকি ড্রিংকস-টুকু একদমই গিলে ফেললো। তারপর বললো,
–” না। যাবো না। আমি ড্রিঙ্কস খাবো। ”
–” ওহ। তুমি ড্রিংকস খাবে? তাহলে চলো আমাদের সাথে। অনেক ড্রিংকস দিবো তোমায়। চলো। ”

ছেলেগুলো ঐশীর উত্তরের অপেক্ষা না করে ওকে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো তাদের আস্তানায়। নেশায় বুদ ঐশী এসব ঘুর্ণাক্ষরেও টের পেলো না। সেও হেলেদুলে তাল মেলাতে লাগলো ওদের পায়ের সাথে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here