ইচ্ছের_উল্টোপিঠ #পর্ব_২৮,২৯,৩০ বিয়ে

0
491

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৮,২৯,৩০ বিয়ে
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
২৮

ঐশীর কথা শুনে হুট করেই ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে গেলো। বেশ কিছুসময় নীরব থেকে থমথমে গলায় বললো,
–” কেনো খুন করেছো তন্ময় ভাইকে? ”

” তন্ময় ভাই! ” ঐশী শব্দটা শুনে ভরকে গেলো কিছুটা। কিন্তু বাইরে যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার ভান করে বললো,
— ” এত কিছু যেহেতু জানতে পেরে গেছো। তাহলে খুন করার কারণটাও খুঁজে বের করো। ”
— ” তাও জানি। ”
ঐশী ঘেমে উঠলো। এই ছেলেটা কে! ওর সম্বন্ধে এত কিছু কি করে জানে? ঐশী টেবিলে হাত ভাজ করে বসলো। ভ্রুয়ে ভাজ ফেলে বললো,
— ” তা কি জানো তুমি? ”
— ” তুমি একজন পুলিশ অফিসারের মেয়ে। যাকে তন্ময় ভাই আর তার সঙ্গীরা মেরে ফেলেছে সপরিবারে। অ্যাম আই রাইট? ”

ঐশী কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। কণ্ঠনালি আটকে যেতে লাগলো। মুখের লালা দিয়ে গলা ভিজিয়ে বললো,
— ” তুমি কি করে জানলে? ”
অনল হাসলো। ধূসর রঙের শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলে পিছন দিকে ঠেলে দিলো। সানগ্লাস খুলে টেবিলে রাখলো। অতঃপর ঐশীর দিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বললো,
— ” তুমি নিজে বলেছো এসব। ”
— ” মানে? ”
–” তন্ময় ভাইকে খুন করার সময় তুমি নিজ মুখে বলেছো এসব। ”

ঐশী বারবার যেনো চমকে চমকে উঠতে লাগলো।এই ছেলেটা বহুত শেয়ানা। এত কিছু জেনে গেছে। অদ্ভুত! ঐশী বললো,
–” কি চাও তুমি? ”

অনল ঐশীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে এলো। ঐশী চমকে স্থির হয়ে বসে রইলো। অনল মৃদ হেসে বললো,
–” তোমার মৃত্যু-খেলার সাথী হতে চাই। দুজন মিলে খুন করবো ওদের। রাজি?

ঐশী ত্যাছরভাবে বললো,
–” আমি তোমায় বিশ্বাস করি না। আর এতে তোমার লাভ-টাই বা কি? ”

অনল আবার চেয়ারে হেলান দিলো। শক্ত মনের অধিকারী ছেলের চোখের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা টসটসে জল। ঐশী হতবাক চোখে চেয়ে রইলো ওর দিকে। অনল নিজের চোখ মুছে আবার সোজা হয়ে বসলো। গম্ভীর গলায় বললো,
–“লাভ? লাভ কি লোকসান ,জানিনা। তবে একজন বড় ভাই হিসেবে ওদের মারা আমার কর্তব্য। ”
ঐশী প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো ওর দিকে। অনল বলতে লাগলো,
–” আমার একটা ছোট বোন ছিলো। নাম পুতুল। নামের মত ও দেখতেই পুতুলের মতন ছিলো। বাবা নেই আমার। মা ছিলেন শুধু। পুতুল গ্রামে পড়াশুনা করতো। আর আমি ঢাকায় পড়তাম আর টিউশনি করে বাড়িতে টাকা পাঠাতাম। তন্ময় আর তার সঙ্গপাঙ্গ গ্রামে গিয়েছিলো কি কাজে। আর সেখানেই অভিশাপ লেগে গেলো।একদিন আমার ফুলের মতন বোনের উপর নজর পড়ল তন্ময় ভাইয়ের। তারপর প্রতিদিন ওর পিছু নেওয়া। ওকে বিরক্ত করা।আমি এসবের কিছুই জানতাম না। শহরে ছিলাম। পুতুল আমায় লজ্জার কারনে কিছুই বলতো না। কিন্তু একদিন সকালে শুনি ( একটু থেমে) পুতুল রেপ হয়েছে। আমার মাথা চক্কর দিতে লাগলো এসব শুনে। সেদিন ধর্মঘট ছিলো। গ্রামে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। সেদিন সারাদিন ঘুরে একটাও গাড়ি পাইনি। পরেরদিন খুব কষ্ট গাড়ি জোগাড় করে বাড়িতে যাই। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। বোন আমার সুইসাইড করেছে। আর মা এসব দেখে হার্ট অ্যাটাক করেছেন। বিশ্বাস করো এসব দেখে আমার মাথা ঘুরছিলো। কি করবো, কোথাও যাবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হাতে ছিল একটা সুইসাইড নোট। পুতুলের লেখা। সেখান থেকেই সব তথ্য জানতে পারি।”

ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অনল নামের ছেলেটার দিকে। প্রতিহিংসার আগুনে দাউদাউ করে পুড়ছে এই ছেলেটা। অনল একটু থামলো। গ্লাস থেকে পানি খেলো একঢোক। তারপর চোখ মুছে আবার বলতে লাগলো,
— ” তারপরও তন্ময়দের দলে যোগ দেই নিজের পরিচয় গোপন করে। কিন্তু কখনোই ওই নরপিশাচকে মারতে পারিনি। কিন্তু তুমি পেরেছো। যে মেয়ের নেশা ওর জীবনের ফুর্তি ছিলো, সেই নেশায় ওর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমার এই সিদ্ধান্ত। তোমার সাথে কাজ করবো আমি। তোমার দুঃসময়ের বন্ধু হয়ে। ”

অনল ডান হাত বাড়িয়ে দেয় ঐশীর দিকে। মিহি আওয়াজে বলে,
— ” ফ্রেন্ডস? ”
ঐশী মুচকি হেসে অনলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। দুজন হ্যান্ডশেক করে। দুজনের চোখেই প্রতিশোধের আগুন।

____________________
সিএনজি এসে থামলো ঐশীর ভাড়া বাড়ির সামনে। ঐশী টাকা মিটিয়ে নেমে দাড়ালো। বাড়ির গেট খুলতে খুলতে চারপাশে তাকাল। আশেপাশের মানুষজন কেমন করে যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ঐশী এতে একটু অবাক হলো। কিন্তু পাত্তা দিলো না। গেট খুলে সোজা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। দুই তলায় যেতেই নিজের ঘরের বাইরে তালা ঝুলানো পেলো। ঐশী হতবাক হলো। ভ্রু কুচকে তাকালো তালার দিকে। সে তো লক করে গিয়েছিল। তালা দেয়নি। তাহলে এই তালা কোথা থেকে আসলো। ঐশী তালাটা নেড়ে ” ধ্যাত” বললো। ব্যাগ আকড়ে ধরে এক তলায় বাসার মালিকের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজায় কলিং বেল বাজাতেই মালিক বউ এসে দরজা খুলে দিলেন। ঐশীকে দেখেই তার মুখ কালো হয়ে গেলো। নাক মুখ কুঁচকে বললেন,
— ” কি ব্যাপার, মেয়ে। এখানে কি চাই? ”
ঐশী সোজাসাপ্টা বললো,
— ” আমার ঘর তালা দিয়েছেন কেনো? চাবি দিন। ”
মহিলা কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে ঝগড়া করার মনোভাব নিলো। কড়া গলায় বললো,
— ” দিবো না। বাইরে রং তামাশা করে বেড়াবে। আর রাত হলে আমার পবিত্র বাড়িতে এসে ঘুমাবে। এসব হবে না আমার বাড়িতে। যাও। নিজের পোটলা নিয়ে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও। ”

ঐশী অবাকের চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলো। “রং তামাশা” মানে? ঐশী অবাক হয়ে বললো,
— ” আমি রং তামাশা করে বেড়াই কে বলেছে আপনাকে? ”
— ” কে বলবে আবার। আমার চোখ নাই। আমি নিজ চক্ষে পত্রিকায় দেখেছি। ”
ঐশী আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,
— ” দেখান দেখি পত্রিকা? আমিও দেখি কি এমন রং তামাশা করি আমি। দেখান। ”

মহিলা মুখ তেতো করে এগিয়ে গেলো ভিতরে। একটু পর একটা পত্রিকা নিয়ে আবারও সামনে দাড়ালো। ঐশীর দিকে পত্রিকা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— ” নিজ চোখে দেখো নিজের কীর্তি-কলাপ। ছি ছি ছি। আমার বাড়িতে কেউ এসব করে বেড়ায়। তওবা তওবা। ”
ঐশী বিরক্ত চোখে মহিলাটার দিকে তাকালো। ছু মেরে উনার হাত থেকে পত্রিকা নিয়ে চোখ বুলালো। ঐশী থমকে গেলো। বিশ্বাস হচ্ছে না তার। চোখ বড়বড় করে তাকালো খবর-টার দিকে। সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগছে। চোখ মুছে আবারও তাকালো ছবিটার দিকে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঐশী আর জুভান একে অপরের খুব কাছাকছি আছে। জুভান ঐশীর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। ছবির নিচে আর্টিকেল লেখা,
” এই অজ্ঞাত মেয়ে আর সুপারস্টার জুভান একে অপরকে ডেট করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন জুভান সেই অজ্ঞাত মেয়েকে বাঁচাতে মাতাল ছেলেগুলোকে মেরে রক্তাক্ত করেন। তিনি নিজ মুখে বলেছেন এই অজ্ঞাত মেয়েকে তিনি ভালোবাসেন। জানা যায় তাদের মধ্যে গোপন সম্পর্ক আছে। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন পৃষ্ঠা ২ , কলাম ৩ ”

ঐশীর শক্তি সব হারিয়ে যাচ্ছে। পরের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বাকি খবর পড়বে সেই শক্তি তার নেই। মহিলা ঐশীর হাত থেকে পত্রিকা ছিনিয়ে নিয়ে বললেন,
— ” হয়েছে। আর ন্যাকা সাজতে হবে না। আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও তুমি। এখনি। এসব রং তামাশা আমার ঘরে চলবে না। তওবা তওবা। ”

কথাটা বলে মহিলা ঐশীর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন।
ঐশী মাথা ভোভো করতে থাকে। এসব কি লেখা হয়েছে তার নামে? সে আর জুভান? ছি ছি। ঐশী ব্যাগ হাতে নিয়ে জুভানের বসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

______________________

জুভান মাত্রই ঘুম থেকে উঠলো। এখন দুপুর দু’টো বাজে। জুভান একটা হাই তুলে টি টেবিল থেকে কফির কাপ হাতে নিলো। কাপে চুমুক দিবে তার আগেই শাহাদাত হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। জুভান কাপ হাতে রেখেই শাহাদাতের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বললো,
— ” কি ব্যাপারজ শাহাদাত চাচা। ”
শাহাদাত জুভানের দিকে পত্রিকা এগিয়ে দিয়ে বললো,
— ” স্যার, আজকের পত্রিকা পড়েছেন? ”
— ” আরে না।পড়তে ইচ্ছে করছে না। আর আজকাল পত্রিকায় সত্য খবরের থেকে ভুয়া নিউজ ছাপা হয় বেশি। তাই পড়ার ইচ্ছে নেই। ”
শাহাদাত জোর করে জুভানের দিকে পত্রিকা এগিয়ে দিলো। জুভান কিছুটা অবাক হলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও পত্রিকা হাতে নিলো সে।

#চলবে..

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

শাহাদাত জোর করে জুভানের দিকে পত্রিকা এগিয়ে দিলো। জুভান কিছুটা অবাক হলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও পত্রিকা হাতে নিলো সে। শাহাদাতের দিকে একনজর তাকিয়ে পত্রিকায় চোখ দিলো। সঙ্গেসঙ্গে সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
— ” হোয়াট দা ফা*। এসব কি ? আমি আর ঐশী?লাইক সিরিয়াসলি? ”

জুভান চমকে উঠলো। ওর চোখে মুখ রাগের আভাশ। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি ঝরছে যেনো। জুভান শাহাদাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” কোন নিউজ চ্যানেল এটা? ”
অবাকের চরম মাত্রায় পৌঁছে জুভানের হিতাহিত জ্ঞান যেনো লুপ পেয়েছে। চোখ একটু পেপারের উপরের দিকে নিলেই সে নিউজ চ্যানেলের খোঁজ পেয়ে যাবে। তাও বোকার মতন শাহাদাতকে জিজ্ঞেস করলো। শাহাদাত মাথা নিচু করে ভয়ভয় গলায় বললো,
— ” দৈনিক সমকাল। ”
— ” ড্যাম। ওদের স্টুপিড হেডকে আমার সামনে হাজির করো। এক ঘণ্টার ভিতরে। ”
— ” জ্বি স্যার। ”
জুভান মাথার চুলগুলো দুহাতে খামচে ধরলো। হঠাৎ করে ওর কিছু একটা মনে পড়লো। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
— ” শিট। ঐশী? ওহ নো। ”
জুভান কফির কাপ আবার জায়গায় রেখে দিয়ে বিছানা ছাড়লো। কাবার্ড থেকে টিশার্ট গায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ঘর থেকে।

জুভান যতদ্রুত পারে গাড়ি চালিয়ে ঐশীর বাসার উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। পারলে ও উড়ে চলে যায় ঐশীর দিকে। না জানি ঐশী এখন কতটা সাফার করছে। জুভান একহাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, আরেকহাত দিয়ে ঐশীর ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,
— ” ড্যাম। পিক আপ দা ফোন। পিক আপ দা ফোন স্টুপিড। ”
কিন্তু বারবার ফোন ” নট রিসিবল ” আসছে। জুভান রাগে ফোন পাশের সিটে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। ঠোঁটের উপরে ঘাম-টুকু মুছে নিয়ে ঝাপসা চোখে সামনে তাকালো। মনে মনে একটাই চাওয়া ” তার মেঘবালিকা যেনো কিছুতেই ভেঙে না পড়ে। যায় হয়ে যাক না কেনো।”

________________________
জুভানের গাড়ি এসে থামে ঐশীর বাসার সামনে। জুভান গাড়ি পার্ক না করেই ঝটপট নেমে দাড়ায় গাড়ি থেকে। চাবি হাতে নিয়ে দৌড় দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। হন্তদন্ত হয়ে দুই তলায় যেতেই ঐশীর বাসা তালা দেওয়া দেখে। জুভান তালা দেখে যারপরনাই অবাক হয়। একমুহুর্ত কালবিলম্ব না করে সিঁড়ি বেয়ে এক তলায় গিয়ে কলিং বেল বাজায়। মালিক বউ এসে দরজা খুলে জুভানকে দেখে অবাক হয়ে মুখে হাত চেপে ধরে। চোখ দুটো রসগোল্লা করে ড্যাবড্যাব করে জুভানকে আপদতমস্তক দেখেই যাচ্ছে। জুভান এসব পাত্তা না দিয়ে হাপানো গলায় বলে,
— ” ঐশী? ঐশী কই? ওর ঘরে তালা দেওয়া কেনো? ”
মালিক বউ ঐশীর কথা শুনে মুখ খিচে ফেলে। কিন্তু মুখে একদলা হাসি নিয়ে বলে,
— “জুভান! জুভান ! গ্রেট সিঙ্গার! আমার বাড়িতে। আসুন না। ভিতরে আসুন। আমি আপনার খুব বড় পাঙ্খা ওহ না ফ্যান, ফ্যান। আপনি আমার ঘরে এসেছেন। আমার কত বড় সৌভাগ্য! ভিতরে আসুন না। ”
জুভান মহিলার আদিক্ষেতা দেখে খুব বেশি বিরক্ত হলো। আঙুল উচিয়ে শাসিয়ে বললো,
— ” আমি এখানে খোশ-গল্প করতে আসিনি। ঐশী কোথাও বলুন। আর না বললেও আপনার মুখ থেকে কি করে কথা বের করতে হয় আমি খুব ভালো করে জানি। ( চিৎকার করে) বলুন ঐশী কই? ”

মহিলা থতমত খেয়ে গেলো। জুভানের এই রূপ দেখে কেপে উঠলো। আমতা আমতা করে বললো,
— ” আমি.. ঐশী… ও তো..”
— “জাস্ট শাট আপ। কথা না ঘুরিয়ে সোজাসুজি বলুন ঐশী কই?”
— ” আমি ঐশীকে বের করে দিয়েছি বাড়ি থেকে। ”
চোখ মুখ খিচে একদমে বলে দিলো মালিক বউ। জুভান চোখ কপালে তুলে বললো,
— ” মানে? আপনি ওকে বের করে দিয়েছেন? আর ইউ ম্যাড? ”
মহিলা মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো। জুভানের রাগে মাথার রগ ফুলে উঠলো। কিন্তু এখানে সময় নষ্ট করা উচিত হবে না। তাই জুভান মহিলার দিকে আঙুল উচিয়ে বললো,
— ” আমি আপনাকে পরে দেখে নিবো। মাইন্ড ইট। ”
জুভান বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। গাড়িতে উঠে গতি না দেখেই চালাতে লাগলো। এক আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকিয়ে ভাবতে লাগলো,
— ” এখন কোথাও খুঁজবে ওকে? ড্যাম ইট। ”
জুভান গাড়ি চালাতে চালাতে চারপাশে তাকাতে লাগলো। একটু দূরে গাড়ি চালিয়ে আসতেই জুভান একদিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। রাস্তার একপাশে অনেক গোল করে ভিড় দেখা যাচ্ছে। জুভানের সন্দেহ লাগলো। গাড়ি এক সাইডে পার্ক করে সেদিকে এগিয়ে গেলো।
ভীড় সামনে দাড়াতেই সবাই জুভানের দিকে ঝুঁকে গেলো। একে একে সবাই জুভানকে আজকের খবর নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে লাগলো। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে মাথা উচু করে দূরে তাকালো। রাস্তায় ফুটপাথে ঐশীকে দেখেই তার বুক ছেত করে উঠলো। ঐশী মাথা নিচু করে হাঁটু চেপে বসে আছে ফুটপাথের ময়লায়। জুভান সবাইকে জোরপূর্বক ঠেলে ঐশীর পাশে এসে দাড়ালো। ঝাপসা চোখে আলতো গলায় ডাক দিলো,
— ” ঐশী? ”
ঐশী জুভানের কণ্ঠস্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো। জুভান হতভম্ব হয়ে গেলো। ঐশীর মুখের অবস্থা করুন। চাপা কান্না করলেও চোখে মুখে জলে একাকার অবস্থা। জুভান অনুভূতিহীন ঐশীর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। ঐশীর গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বললো,
— ” আমি আছি তোমার পাশে। আছি আমি। ”
জুভানের আশ্বাস শুনে ঐশীর এতক্ষণের জমে রাখা কান্না উপচে পড়লো মুখের উপর। ঐশী ফুপিয়ে বললো,
— ” ওরা,, ওরা আমায়… ”
— ” কিছু হবে না। আমি আছি তোমার পাশে। কিছু হবে না তোমার। কিছু হতে দেবো না আমি।”
ঐশী ঝাপসা চোখে অপলকে তাকিয়ে রইলো জুভানের চোখের পানে। ইতোমধ্যে ওদেরকে ঘিরে ধরলো মিডিয়ার লোকজন। জুভানকে ঘিরে ধরে একে একে প্রশ্ন ছুড়লো ওর দিকে। জুভান সেসব প্রশ্নের একটাও উত্তর দিলো না। থমথমে মুখে উঠে দাড়ালো। ঐশীর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
— ” দাড়াও। ”
ঐশী অবাক চোখে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান আবারও বললো,
— ” আমি দাড়াতে বলেছি।”
ঐশী চারপাশে তাকালো। এমন বিরূপ পরিবেশে ও কখনোই পড়ে নি। তাই সবকিছু সামলে উঠতে পারেনি ও। ঐশী জুভানের বাড়ানো হাতের দিকে একঝলক তাকিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো। জুভান ঐশীর হাত শক্ত করে আকড়ে ধরলো। ঐশী উঠে দাড়ালো। জুভান ঐশীর হাত ধরে ভিড় ঠেলে গাড়িতে চড়ে বসলো। জুভান ড্রাইভিং সিটে বসে ঐশীর দিকে ঝুঁকে এলো। ঐশী একটু অস্বস্তিতে পরে মাথাটা কিছুটা পিছিয়ে নিল। জুভান থমথমে মুখে ঐশীর সিটবেলট লাগিয়ে আবারও নিজের জায়গায় বসে পড়লো।

_______________________
গাড়ি গিয়ে থামলো কাজি অফিসের সামনে। ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো জুভানের দিকে। জুভান চুপচাপ ঐশীকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। ইতিমধ্যে জুভানের গাড়ি অনুসরণ করে মিডিয়ার লোকজনও সেখানে এসে দাড়ালো। জুভান ঐশীর ডান হাত আকড়ে ধরে ভিতরে ঢুকলো। মাওলানার সামনে দাড়িয়ে বললো,
— ” দাদা, নিকাহ নামা রেডি করুন। ”
ইতিমধ্যে জুভানের পক্ষ থেকে চারজন সাক্ষীও এসে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে দুজন ঐশীর পক্ষে সাক্ষী দিবে। নিকাহ নামা রেডি হলে জুভান বাম হাতে কলম ধরে সাইন করে দেয়। তারপর কলমটা ঐশীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
— ” নাও। সাইন করো। ”
ঐশী এখনো বিস্ময় ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সে ফ্যালফ্যাল চোখে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। জুভান জোর করে ঐশীর হাতে কলম ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— ” সাইন করো বলছি। ”
জুভানের কড়া কথা শুনে ঐশী ঘোর থেকে বেড়িয়ে এলো। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে বললো,
— ” আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। কক্ষণো না।”
কথাটা শুনে জুভান সহ সেখানে উপস্থিত বাকি সবাই অবাক চোখে ঐশীর দিকে তাকালো। ঐশী পুনরায় চোখ মুছে বললো,
— ” আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না। ”
জুভান তীক্ষ্ম চোখে ঐশীর দিকে তাকালো। বুকে দু হাত গুটিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।ববললো,
— “তাহ, কারণটা জানতে পারি? ”

#চলবে

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩০ ( বিয়ে পর্ব)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ঐশী পুনরায় চোখ মুছে বললো,
— ” আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না। ”
জুভান তীক্ষ্ম চোখে ঐশীর দিকে তাকালো। বুকে দু হাত গুটিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।ববললো,
— “তাহ, কারণটা জানতে পারি? ”
ঐশী আশপাশে তাকালো। এত মানুষের ভীড়ে এমন কথা বলতে ওর বাধছে। ঐশীর এমন অস্বস্থি দেখে এক হাফ ছাড়লো। আচমকা ঐশীর বাম হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কোথাও। ঐশী একটু অবাক হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। জুভানের সাথে পা মেলালো। জুভান ঐশীকে একটা রুমে এনে ছেড়ে দিলো। সিটকিনি উপরে তুলে দিয়ে ঐশীর সামনে সোজাসুজি হয়ে দাঁড়ালো। বেশ কয়েক নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। তারপর ঐশীর দিকে তাকিয়ে মোলায়েম সুরে বললো,
— ” নাও টেল মি দা রিজন? ”
ঐশী কোনোরূপ ভনিতা না করেই বলে দিলো,
— ” আপনি কি ভেবেছেন আপনি সারাদিন সারারাত বাড়িতে সো কলড মেয়েগুলো এনে ফুর্তি করবেন। আর আমি সারা বাড়ি আপনার বউ হয়ে ঘুরে বেড়াবো। আপনি যদি এসব ভেবে থাকেন। তাহলে সেখানেই আটকে যান। এমন হলে আপনাকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না। ”
জুভান ভ্রু নাচিয়ে ঐশীর কথা শুনছিলো। ঐশী সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার পর জুভান তীক্ষ্ম চোখে বললো,
— ” এটাই তো সমস্যা? রাইট? ”
ঐশী মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে ফিরলো। জুভান আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকালো। তারপরও কোমরে এক হাত দিয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” ওকে দেন। আমরা একটা ডিল করবো। ”
— ” ডিল? ”
— “হ্যাঁ,ডিল। এই বিয়ে একটা সমঝোতা হবে। ”
— ” মানে? ”
ঐশী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো। জুভান সোজাসুজি বললো,
— ” বিয়ের পর আমি বাড়িতে কোনো মেয়ে আনবো না। এমনকি আমার লাইফেও তুমি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো মেয়ে থাকবে না। আমরা দুজন একই বাড়িতে থাকবো। কিন্তু আলাদা। তুমি এক রুমে, আমি আরেক রুমে। আমি তোমার লাইফে জবরদস্তি করবো না। তেমন তুমিও করবে না। কিন্তু যদি কখনো তোমার মনে হয় আমাদের একসাথে থাকা উচিত না। দেন একটাই পথ বেছে নেবো। “ডিভোর্স”। অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট যদি কখনো তোমার মনে হয় তুমি আমার প্রেমে পড়েছ, তাহলে ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। আমি সেদিন তোমায় ফিরিয়ে দেব না। কথা দিলাম।তো বলো। ডিল মঞ্জুর? ”

ঐশী হতবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ডিল সম্পর্কে ও কখনোই শুনে নি। ঐশী কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। শেষ পর্যন্ত সবদিক ভেবে বললো,
— ” ঠিক আছে। আমি আপনাকে বিয়ে করবো। তবে হ্যাঁ, ডিলের কথা যেনো না ভুলেন। তাহলে কিন্তু…”
— ” ভুলবো না। মাইন্ড শার্প আমার। তোমার মতন না। এখন চলো। ”
ঐশী জুভানের কথায় কিছুটা অপমানিতবোধ করলো। জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,
— ” আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন। ”
জুভান অবাক হওয়ার ভান করলো। গালে তওবা করার মতো হাত রেখে বললো,
— ” আস্তাগফিরুল্লাহ। জীবনেও না। ”
ঐশী জুভানের কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে দিলো।

_______________________
অতঃপর দুজনের প্রণয়ের ঘণ্টা বাজলো। ঐশী এবং জুভান বেঁধে গেলো এক অমূল্য সম্পর্কে। ইতিমধ্যে মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেছে ওদের বিয়ের খবরে। একটু আগে যারা ওদের চরিত্রে আঙ্গুল তুলছিলো এখন তারাই তাদের স্বাগতম জানাচ্ছে। জুভানের বন্ধু বিহান গাড়ি চালাচ্ছে। আর বাকি তিনজন অন্য গাড়ি দিয়ে জুভানের বাড়ীতে যাচ্ছে। ঐশী মুখ ভার করে জানালার পাশে সেটে বসে আছে। জুভান ফোন স্ক্রল করছে আর আড়চোখে ঐশীর দিকে তাকাচ্ছে। জুভানের মাথায় ঘুরছে নানা চিন্তা। ” বিয়ে হয়ে গেছে ওদের! ” হ্যাঁ, “বিয়ে”। কিন্তু এই মুহূর্ত এভাবে না আসলেও পারতো। ঐশী যখন তাকে মন থেকে মেনে নিত তখন ধুমধাম করে তার হৃদয়হরিণী কে নিজের ঘরে তুলতো। কিন্তু এখন! এখন সবটাই বিগড়ে যাওয়া এক ঘুড়ির মতন। যার লাটাই একটা তুচ্ছ ডিলের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। জুভান এসব ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

” নিস্তব্দ কুঠির ” বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো ওদের। জুভান আগে নেমে দাড়ালো। ঐশী নামতে ফেলে জুভান বাধা দেয়। সে নিজে ঐশীর পাশে এসে ওর দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দেয়। ঐশী মুখ কুচকে বলে,
— ” কি? ”
— ” আব, নামতে হেলপ করি। ”
— ” ডিলের কথা কি ভুলে গেছেন? ”
— ” না। ভুলি নি। কিন্তু আমার অনেক শখ ছিল নিজের বউকে নিজের হাতে গাড়ি থেকে নামাবো। তারপর একসাথে বাড়িতে পা রাখবো। কিন্তু এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে তুমি আমার বউ। তুমি এই শখ পূরণ না করলে আমার তাহলে আরেকটা বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখন কি করা যায়?”
জুভান মুখ ভার করে বললো। আরেকটা বিয়ের কথা শুনে ঐশীর মুখ তেতো হয়ে উঠলো। বিয়ের এক ঘন্টা যেতে না যেতেই অন্য মেয়ের চিন্তা করছে। নির্লজ্জ লোক একটা! ঐশী অনিচ্ছাসত্বেও হাত বাড়িয়ে দিলো। জুভান মৃদু হেসে হাত শক্ত করে আকড়ে ধরলো। ঐশী একটু ব্যাথা পেয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো,
— ” আস্তে। ব্যাথা পাচ্ছি। ।”
জুভান হাতের বাধন হালকা করে দিয়ে ঐশীকে গাড়ি থেকে নামালো। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই জুভানের বাকি বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরলো। এদের মধ্যে দুজন মেয়েও আছে। ওরা জুভানকে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। জুভান মুচকি হেসে মাথা চুলকালো। তারপর হুট করে ঐশীকে কোলে তুলে নিলো। ঐশী ত হতবাক। মুখ হা করে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান দুষ্টুমি করে হাতের বাধন হালকা করতেই ঐশী জুভানের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। জুভান বাকা হেসে বাড়ির চৌকাঠে পা রাখলো। ভিতরের ফটিক দিয়ে ঢুকতে গেলে গেলে ওদের উপর ফুলের লাল পাপড়ি এসে ঝরতে লাগলো। পাশ থেকে জুভানের বন্ধুরা মুখে হাত দিয়ে ” ওয়ে,হয়ে। জিও গায়ক সাহেব” বলে চিল্লাতে লাগলো। ঐশী কিছুটা লজ্জা পেলো। কিন্তু বাইরে কাঠিন্যভাব এনে তাকিয়ে রইলো জুভানের দিকে। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে ঐশীকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। ঐশীকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ঠাস করে ওর পাশে বসে গেলো। কয়েকটা দম নিয়ে বললো,
— ” মেয়ে তো নয় যেন বস্তা। বাপরে! ”
ঐশী কটমটিয়ে তাকালো জুভানের দিকে। দাত খিচে বললো,
— ” আমার ওজন মাত্র পঁয়তাল্লিশ কেজি। আমি বস্তা? ”
জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে একটা কিউট করে হাসি দিলো। ঐশী না চাইতেও সেই হাসিতে গলে গেলো। জুভানের দুজন মেয়ে ফ্রেন্ড পুষ্পিতা আর অপর্ণা এসে ঐশীর পাশে বসলো। ঐশীকে একহাত দিয়ে পুষ্পিতা জড়িয়ে ধরে বললো,
— ” জুভান, কেনো লাগছিস ওর সাথে। ছাড় তো। এই বাড়িতে মিষ্টি আছে? ”
জুভান সোফায় পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। বললো,
— ” না। ”
— ” এখন? নতুন বউকে মিষ্টিমুখ করাবি না? ”
জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” নতুন কই? ওলরেডি ওর বউ হওয়ার পয়ষট্টি মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড হয়ে গেছে।”
— ” ধুর। বাজে বকিস না তো। কাউকে পাঠিয়ে মিষ্টি আনা।”
— ” মিষ্টি আছে। ফ্রিজে দেখ। ”
পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বললো,
— ” তুই কখনো শুধরাবি না। অপর্ণা যা। ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আয়। ”
অপর্ণা সোফা থেকে উঠে জুভানের পিঠে এক ঘা বসিয়ে চলে গেলো। জুভান পিঠ ঘষতে ঘষতে বিড়বিড় করলো,
— ” এই মেয়েটার হাত চলার অভ্যাস কখনোই যাবে না। দেখবি ও ওর জামাইরেও সেকেন্ডে সেকেন্ডে মারবে। ডাফার! ”
ঘরের বাকি সবাই হেসে উঠলো। বিহান ঐশীর পাশে এসে দাড়ালো। ঐশীর দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো
— “ভাবি, এটা আমার পক্ষ থেকে গিফট তোমার জন্যে। শাড়ি। ”
ঐশী মুচকি হেসে প্যাকেট হাতে নিলো।

________________________
অতঃপর নানা ঝামেলা পাড় করে ঐশী রুমে এসে বসলো। জুভানের বান্ধুবিরা ঐশীকে জুভানের রুমে এসে দিয়ে গেছে। ওরা এই বিয়ের ডিল সম্পর্কে জানে না। আর ঐশী চায় না ওরা জানুক। তাই কোনো বাধা দেয়নি। জুভানের সব ফ্রেন্ড আজকে এই বাড়িতে থাকবে। তাই ঐশী এখন জুভানের রুকে ঘুমানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ঐশী বিছানায় বসে আছে ঠোঁট ফুলিয়ে। সবকিছু অসহ্য লাগছে। জুভানকে মেনে নিতে ওর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যেই ছেলে কাল অব্দি মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াতো, সেই ছেলে বিয়ের পর হুট করে ভালো হয়ে যাবে, তার কি গ্যারান্টি? ঐশী তাই জুভানকে এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। একটু পর জুভান রুমে এসে প্রবেশ করলো। ঐশীকে বিছানার উপর দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটলো। সিটকিনি আটকে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো ও। ঐশী মাথার ঘোমটা সরিয়ে জোরে শ্বাস নিলো। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এত সময়। এখন শান্তি লাগছে। জুভানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে ঐশী মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো। সঙ্গেসঙ্গে ” ছি ” বলে মুখে হাত চেপে ধরলো। জুভান অবাক হয়ে পিছন ফিরলো। বললো,
— ” হোয়াট? ”
ঐশী চোখ খিচে বললো,
— ” পাগল আপনি? এভাবে হাফ এডম হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ”
জুভান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। উদোম শরীর শুধু একটা ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে ও। জুভান বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোমারই তো হাসব্যান্ড। দেখলে প্রবলেম নেই।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here