#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩১,৩২,৩৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
৩১
— ” পাগল আপনি? এভাবে হাফ এডম হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ”
জুভান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। উদোম শরীর শুধু একটা ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে ও। জুভান বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোমারই তো হাসব্যান্ড। দেখলে প্রবলেম নেই। ”
” হাসব্যান্ড! ” ঐশীর বুক ধক করে উঠলো। যাকে এতবছর নিজের কল্পনায় ভেবে এসেছে, সেই মানুষটা আজ তারই স্বামী। কিন্তু নিয়তি বলেও একটা কথা আছে। নিষ্টুর, নির্দয় এই নিয়তি তাদের মাঝখানে একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছে। কবে ভাঙবে এই দেয়াল? নাকি এই দেয়াল কখনোই ভাঙবার নয় ?
— ” হেই? ”
ঐশীর সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো জুভান। ঐশী ধ্যান ভেঙে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান দুহাত ঐশীর দুপাশে রেখে ওর দিকে ঝুঁকে আছে। ঐশী জুভানকে এতটা কাছে দেখে এক ঢোক গিললো। থতমত হয়ে বললো,
— ” আপনি এত কাছে কেনো? ডিলের কথা.. ”
ঐশীর কথার মাঝখানে জুভান সরে এলো ওর থেকে। ফুস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” ইয়াহ। ডিল। ম্যাই ব্যাড লাক। ”
ঐশী ভ্রু কুচকে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা ত্রি পিস বের করে ঐশীর দিকে এগিয়ে দিলো। বললো,
— ” দৃশ্য ড্রেস এনেছিল তোমার জন্যে। ফ্রেশ হয়ে আসো। ”
ঐশী মাথা হেলিয়ে চটপট জুভানের কাছ থেকে প্যাকেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
______________________
আষাঢ়ে সকাল। সকাল থেকেই হঠাৎ রোদ, তো আবার হঠাৎ বৃষ্টি ঝড়ছে আকাশ থেকে। ঐশী এখনো বেঘোর ঘুমে। কাল রাতে অচেনা জায়গায় ঘুমোতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে ওর। তাই এখনো বিছানায় শটান করে শুয়ে আছে। জুভান মুখ হাত ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। বিছানার দিকে চোখ যেতেই ওর চোখ স্তব্ধ হলো। পানির নয় বরং অজানা এক ত্তৃষ্ণা পেলো। জুভান গুটিকয়েক ঢোক গিলে ঐশীর পায়ের কাছে বসলো। প্লাজো পায়জামা পড়ায় ঐশীর পা এখন অনেকখানি দৃশ্যমান। মেয়েলি ফর্সা পা দেখে জুভানের ভিতর তোলপাড় হয়ে উঠলো। তবে এই তোলপাড় কোনো কামনার প্রকাশ নয় বরং পবিত্র ভালোবাসার ফলস্বরুপ। কিন্তু জুভান নিজেকে সামলাতে জানে। সে কখনোই চাইবে না ঐশীর মতের বিরোদ্ধে যেতে। ও চায়, তার মেঘবালিকা হাসুক , বাঁচুক। একসঙ্গে ওরা বার্ধক্যের আকাশ দেখুক। জুভান সারাজীবন তার মেঘবালিকার পবিত্র মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে অনায়াসে কাটিয়ে দিয়ে পারবে। জুভান সেসব ভেবে মাথা ঝাড়া দিলো। খুব আলতো হাতে ঐশীর পায়জামা ঠিক করে দিলো। ঐশীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে শিহরণ খেলে গেল ওর মনে। এতটা পবিত্রও কেউ হয়? এতটা মায়া কারো মুখে থাকে? জুভান মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বুকে হাত দিয়ে লম্বা এক নিঃশ্বাস নিলো। বিড়বিড় করে বললো,
— ” উফ! মনে রীতিমত ভূমিকম্প ডেকে আনলো।মিস ভয়ংকরী! ”
সকালের নাস্তার জন্যে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। ঐশী একপাশে মাথায় ওড়না দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছে আর প্লেটে অযথাই আঁকিবুকি করছে। হঠাৎ জুভান ঠাস করে এসে ঐশীর পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ঐশী কিছুটা অবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে প্লেট হাতে নিলো। সার্ভেন্ট নাস্তা বেড়ে দিতে লাগলো। পুষ্পিতা খেতে খেতে আচমকা বলে উঠলো,
— ” ঐশী রাতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? ”
ঐশী হতবাক হয়ে তাকালো পুষ্পিতার দিকে। জুভান পুষ্পিতার মাথায় চাটা মেরে বললো,
— ” মুখ সামলে কথা বল , মেরি মা। তোর কি মনে হয় আমি ওর সাথে কিছু করেছি, যে ওর ঘুমাইতে প্রবলেম হবে? ”
পুষ্পিতা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,
— ” হ্যাঁ। সেটাই। ”
জুভান থমথমে মুখে তাকালো ওর দিকে। দৃশ্য ফিচেল হেসে বলে উঠলো,
— ” ওই জানস, কাল রাতে বিহান আর আমি তোদের রুমে পাহারা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেচারি ঐশী ভাবির কথা ভেবে আর দেইনি। আমার একমাত্র ভাবি। তাকে কি লজ্জা দেওয়া যায়? উহু। ”
সবাই মিটমিটিয়ে হাসলো। আর ঐশী লজ্জায় মাথা নিচু করে খেতে লাগলো। যেমন সে , তেমন তার বন্ধুবান্ধব। একটার মুখেও লাগাম নেই। জুভান ঐশীকে পর্যবেক্ষণ করে ওদের দিকে তাকালো। বললো,
— ” আরে বাদ দে। বেচারীকে আর কত লজ্জায় ফেলবি।
তোদের লজ্জা শরম নাই। ওর তো আছে। অফ যা এখন। ”
সবাই জুভানের কথা শুনে একসাথে বলে উঠলো,
— ” ওয়ে,হয়ে। কি আন্ডারস্ট্যা্ডিং। বাহ্। ”
ঐশী এদের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। আর জুভান সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল অপলক। মুগ্ধ হলো তার দুচোখ। উজ্জ্বলতা খেলে গেলো চোখের মণিতে মণিতে।
_________________________
ঐশী ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। ফোন বের করে অনলের নাম্বারে কল দিলো। দুবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে কেউ বিচলিত গলায় বললো,
— ” হ্যালো ঐশী। তুমি ঠিক আছো? এসব কি শুনছি? আর ইউ ওকে? ”
ঐশী এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” আমি ঠিক আছি। ”
— ” আমি কাল থেকে কতবার তোমায় ফোন দিয়েছি। কিন্তু একবারও ফোন রিসিভ করো নি তুমি। আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল। জানো তুমি? ”
— ” এসব কথা ছাড়ো। শুনো তুমি সাজ্জাদ হোসেনের কিছু তথ্য পেয়েছো? ”
অনল এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” না। এখনো পাইনি। ওই ব্যাটা সিকিউড়িটি গার্ড ছাড়া ঘর থেকেই বের হয়না। রাবিশ! ”
— ” দেখো মাথা গরম করলে চলবে না। আমাদের ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। হি ইজ সো ডেঞ্জারাস ম্যান। ”
— ” জানি। তুমি একবার দেখা করো। আমরা দুজন একসাথে ওর তথ্য বের করবো। আই থিঙ্ক সেটাই ভালো হবে। ”
ঐশী থমথমে গলায় বললো,
— ” আমি এখন মহা ফ্যাসাদে পড়েছি। জুভান স্যারের প্রত্যেক রুমে সিসি টিভি ক্যামেরা। আমি এখন ওয়াসরুমে দাড়িয়ে তোমার সাথে কথা বলছি।আমার এখন এমন কিছু করা যাবে না যেটাতে জুভান স্যারের সন্দেহ হয়। বুঝতে পারছো কি বলছি?”
অনল কপাল চুলকে বললো,
— ” এখন? ”
ঐশী এক হাফ ছেড়ে বললো,
— ” আমি দেখছি কোনো উপায় বের করা যায় কি-না। ”
— ” ওকে। আমি এদিকটা খেয়াল রাখছি। ”
— ” ওকে। এখন রাখছি। ”
ঐশী ফোন কেটে দেয়। বেসিন থেকে পানি নিয়ে মুখে এক আজলা পানি ছিটিয়ে ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে যায়।
ঐশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। তখন জুভান বাইরে থেকে ঐশীর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। ঐশী মুখ ঘুরিয়ে জুভানের দিকে তাকালে জুভান হাত ঘড়ি ঠিক করতে করতে ব্যস্ত গলায় বলে,
— ” আমি বেরোচ্ছি এখন। তোমার যদি কোনো কাজ থাকে তুমি করে নিতে পারো। আমার আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে। ”
ঐশী মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। জুভান যাওয়ার আগে ঐশীর মুখের দিকে একঝলক তাকায়। ঐশীর মুখ খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। জুভান ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝার কথা চেষ্টা করে। একটু পর ঐশীর কাছে এসে ঐশীর গালে আলতো করে হাত রাখে ও। ঐশী অবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকায়। জুভান আদুরে গলায় বলে,
— ” ভয় পেও না। বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আছে। ওরা তোমার খেয়াল রাখবে।আমি খুব জলদি আসার চেষ্টা করবো। ”
ঐশী সেসব কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়। জুভানের এসব আদুরে কথা শুনে ঐশীর মন না চাইতেও গলে যায়। এই মানুষটা আসলেই অদ্ভুত। খুব বেশি রহস্যময়। একেক সময় তার একেক রূপ। কখনো খুব রাগী , আবার কখনো এক পাগলা প্রেমিক। ঐশী জুভানের দিকে তাকিয়ে মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। জুভান ঐশীকে বিদায় দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
_____________________________
দুপুর হয়ে এসেছে। বসার ঘরের জানালা ভেদ করে এক টুকরো আলো এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে ঐশীর কোল জুড়ে। ঐশী সোফায় বসে টিভি দেখছে। ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠে।ঐশী এগিয়ে যায়। সার্ভেন্ট দরজা খুলে দেয়। কে এসেছে দেখতে ঐশীর এগিয়ে যায় সেদিকে। তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। সার্ভেন্ট ওদের আসার কারন জিজ্ঞেস করলে একলোক বলে উঠলো,
— ” আমাদের জুভান স্যার পাঠিয়েছেন। বাড়ির সব সিসি টিভি ক্যামেরা খোলে ফেলার জন্য। ”
#চলবে
#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
নিচের নোট পড়বেন প্লিজ।
অতঃপর বাড়ির প্রতিটি রুমের সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নেওয়া হলো। ঐশী স্থির হয়ে তাকিয়ে দেখলো শুধু এসব। কোথাও যেন একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। সব বাঁধা এভাবে নির্মূল হয়ে যাচ্ছে, ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। ঐশী রুমে বসে মাথায় হাত চেপে এগুলোই চিন্তা করছে। আচ্ছা, কোনক্রমে কি জুভান ওর খুনের ব্যাপারে জেনে গেছে? না,না। তা কেনো হবে? তাহলে তো জুভানের নানা প্রশ্নের সামনে ঐশী টিকতেই পারতো না। মাথায় নানা চিন্তা ঘুরছে কিন্তু তাদের উত্তর? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না ঐশী। হঠাৎ ঐশীর ফোনে রিং বাজলো। ঐশী ধ্যান ভেঙে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করলো।
— ” বলো অনল। ”
— ” ঐশী একবার দেখা করতে হবে। আমি কিছু ইনফরমেশন পেয়েছি। ”
— ” ওহ। কখন ফ্রি আছো? ”
— ” এখনই আসো। আমি আমাদের হিডেন জায়গায় ওয়েট করছি। ”
— ” ঠিক আছে। আমি আসছি। ”
ঐশী ফোন কেটে দিয়ে কাবার্ডের সামনে গেলো। দুই নাম্বার তাকের একদম পিছনে একটা কালো বোরকা রাখা। ঐশী সেটা হাতে নিয়ে দ্রুত গায়ে জড়িয়ে নিলো। মুখে কালো নিকাব আটকে সন্তর্পনে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
_________________________
— ” সাজ্জাদ হোসেন! দা গ্রেট মাফিয়া লিডার। সচরাচর সিকিউরিটি গার্ড ছাড়া এক পাও চলেন না। মন এবং শরীরের দিক থেকে খুবই শক্তিশালী। এখন পর্যন্ত নিজ হাতে করা পঞ্চাশটা খুনের আসামী। কিন্তু এই খুনগুলোর বিচার একটাও হয়নি। ”
ঐশী তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে সামনে টাঙানো সাজ্জাদ হোসেনের বিশালাকার ছবির দিকে। অত্যন্ত হাস্যোজ্বল দেখা যাচ্ছে তাকে। আর এই হাসি দেখেই ঐশীর রাগে মাথা গরম হয়ে উঠছে। মন চাচ্ছে ছবির ভিতরে ঢুকেই এই পাপী বান্দাকে খুব করে ফেলতে। ঐশী নিজের রাগ সামলাতে চোখ বন্ধ করে জোড়ে নিঃশ্বাস নিলো। তারপর অনলের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” আমাদের ওর দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে। ”
অনল কম্পিউটারে স্লাইড পরিবর্তন করলো। ঐশী ডেস্কে দুহাত রেখে ঝুঁকে এলো কম্পিউটারের দিকে। অনলের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,
— ” সাজ্জাদ হোসেনের পাশে এই মেয়েগুলো কারা?”
অনল মাউস একটা মেয়ের মুখের দিকে তাক করলো। বললো,
— ” এই মেয়েটা সাজ্জাদ হোসেনের বিশাল সংখ্যার গার্লফ্রেন্ডের মধ্যে একজন। তবে সে ততটা ইম্পর্ট্যান্ট না তার জন্যে। ”
ঐশী সচেতন চোখে কম্পিউটারের স্ক্রিন জুড়ে কিছু একটা খুজতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত একটা মেয়ের দিকে আঙুল তাক করে বললো,
— ” এই মেয়ে? ”
— ” ইয়েস। এই মেয়েটা সাজ্জাদ হোসেনের প্রাণ বলতে পারো। তবে মেয়েটা খুব টাকার কাঙাল। টাকার জন্যে সাজ্জাদ হোসেনের পাশাপাশি আরো অনেক এফেয়ার আছে ওর। ”
ঐশীর চোখ চকচক করে উঠলো। যেনো এটাই খুঁজছিল ও। ঐশী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— ” পারফেক্ট। আমাদের নেক্সট টার্গেট এই মেয়েটাই। “.
অনল ঐশীর কথা বুঝতে পারলো না। বললো,
— ” আমাদের টার্গেট তো সাজ্জাদ। তাহলে এই মেয়ে কেনো? ”
ঐশী মুচকি হাসলো। পায়চারি করতে করতে বললো,
— ” টাকার মায়া বড় মায়া। মানুষ টাকার জন্যে পশু হতেও একবার ভাবে না। এই মেয়ে নিজে আমাদের হাতে সাজ্জাদ হোসেনকে তুলে দিবে। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি। ”
অনল ঐশীর কথা শুনে ঐশীর দিকে তাকালো। মেয়েটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে। কত জলদি প্ল্যান সাজিয়ে ফেললো। বাহ! কিন্তু? অনল প্রশ্ন করলো,
— “কিন্তু ওতো টাকা তুমি কই পাবে? ”
— ” তন্ময়কে মারার আগে ওর সব টাকা আমি আমার ব্যাংকে ট্রান্সফার করে ফেলেছি। তন্ময়ের অবৈধ টাকা আমি নিজে খরচ করবো না। সবগুলো কালো টাকা ওই পাপিদের খুন করার কাজে লাগবে। তাই রেখে দিয়েছি। ”
অনল অবাক হলো। বললো,
— ” বাহ্, বাহ্। জিও তুমি। ”
ঐশী বিরক্ত হয়ে অনলের দিকে তাকালো। বললো,
— ” ওহ। প্লিজ। ”
— ” ওহ। সরি সরি। এখন চলো তোমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। ”
ঐশী ডেস্ক থেকে ব্যাগ হাতে নিতে নিতে বললো,
— ” না। লাগবে না। আমি একাই যাবো। ”
— ” কেনো কেনো? তোমার জুউউভান স্যার কি মাইন্ড করবে আমাকে দেখলে? ”
অনল ঐশীর দিকে ফিরে ব্যঙ্গ করে বললো। ঐশী এই কথা শুনে মৃদ হাসলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো,
— ” অনল প্লিজ। লেগপুল করো না। জুভান স্যার বাসায় নেই। আর আমি এমন কিছু করতে পারবো না , যেটাতে জুভান স্যারের সন্দেহ হয়। বুঝতে পারছো ? ”
অনল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মাথা হেলালো।
__________________________
রাত হয়ে এসেছে। আকাশে বাঁকা অর্ধ চাঁদ দেখা যাচ্ছে। সেই চাঁদের আলো গায়ে মেখে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে ঐশী। শীতল পরিবেশ। মাঝেমধ্যে ঝড়ো বাতাস এসে ছুঁইয়ে দিচ্ছে ঐশীর গা। কপালের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো নেড়ে উঠছে সে বাতাসের ঝাপটায়।
— ” কফি গরম। কফি গরম। ”
জুভানের কণ্ঠস্বর শুনে ঐশী পিছন ফিরে তাকালো। জুভান দুহাতে দুকাপ কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে ওর সামনে। কাপ দুটো থেকে ধোঁয়া উড়ছে বাতাসে। জুভান এগিয়ে এসে এক কাপ কফি ঐশীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— ” মন খারাপ? ”
ঐশী না বোধক উত্তর দিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিলো। কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
— ” আপনি কখন আসলেন? টের পেলাম না। ”
জুভান রেলিঙে হাত দিয়ে কাপে চুমুক দিলো। তারপর মাথা উচুঁ করে বললো,
— ” এই ঘণ্টা আগে। রুমে বসে কাজ করছিলাম। নতুন গানের সুর মেক করছিলাম। ”
— ” ওহ। এটা খুব কঠিন কাজ। তাইনা? ”
— ” গান আমার পেশন। তাই কঠিন-ফটিন কিছু না। ”
— ” ওহ। ”
তারপর নিরবতা গ্রাস করলো এই দুজন মানব-মানবীকে। জুভান কফির কাপে পরপর চুমুক দিচ্ছে আর বারবার তাকাচ্ছে ঐশীর দিকে। ঐশীর সেদিকে লক্ষ নেই। সে বাইরে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। একবার ঐশীর ছোট কয়েকটা চুল ঐশীর চোখের সামনে পড়তেই ঐশী বিরক্ত হলো। হাত দিয়ে চুল কানের পিছনে গুঁজে দিতে চাইলে জুভান হাত আটকে নেয়। ঐশী অবাক হয়। জুভানের দিকে তাকালে জুভান মাদক গলায় বলে,
— ” থাকুক না। ভালো লাগছে। ”
ঐশী বিস্ময় নিয়ে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে বললো,
— ” আজ চাঁদের আলোয় সাঁতার কেটে গল্প করা যাক। কি বলো? ”
ঐশী এক হাফ ছেড়ে বললো,
— ” ঠিক আছে। ”
— ” তোমাকে নিয়ে প্রথমে জানি। তারপর আমাকে নিয়ে বলবো। শুরু করো। ”
ঐশী চোখ ছোটছোট করে তাকালো বাইরে। এক উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” আমার জীবনটা অনেকটা সিনেমার মতন। একসময় প্রতিটা মুহূর্ত খুশি আর খুশি ছিল। কিন্তু এখন সব নাটক,সব ধোঁয়াশা। পূর্বের যা ভালো লাগতো , এখন তা বিষাক্ত লাগে। মন বলে যে একটা বস্তু আছে, সেটাই ভুলে গেছি। ”
জুভান ঐশীর দিকে এগিয়ে এলো। ঐশীর কপালের চুল কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে আবারও সামনে এনে দিলো। গালে হাত রেখে আলতো গলায় বললো,
— ” একবার মন-কে বুঝতে শিখো। মন যা চায় তাই করো। দেখবে আবার সব ফিরে এসেছে। সব ভালো লাগা সকল পূর্ণতা তোমার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। ”
ঐশী জুভানের সান্নিধ্য থেকে দুকদম পিছিয়ে গেলো। বললো,
— “সম্ভব না। আমি সেই সুন্দর রাস্তা পেরিয়ে অনেক দূর চলে এসেছি।সেই জগৎ থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব না। *
জুভান হাসলো। কিন্তু সেই হাসিতে বরাবরের মতন মুগ্ধ হলো না ঐশী। জুভানের সেই হাসিতে এক লুকানো কষ্ট আছে। ঐশী সেই কষ্টের কারণ বুঝতে পারলো না।
— ” কফি শেষ। ”
ঐশী ধ্যানে ছিল। তাই শুনলো না কথাটা। জুভান ভ্রু নাচিয়ে আবারও বললো,
— ” কফি শেষ। আর এক কাপ আনি? গল্প করতে করতে খাওয়া যাবে। ”
— ” না, না। আর লাগবে না। ”
জুভান ঐশীর হাত থেকে কাপ নিয়ে দুনো খালি কাপ টেবিলে রেখে দিয়ে আবারও বারান্দায় এলো। বারান্দায় রাখা দোলনায় বসে পাশে হাত রেখে ঐশীকে বললো,
— ” আসো। বসো এখানে। ”
ঐশী চুপচাপ জুভানের পাশে দূরত্ব রেখে বসে গেলো। জুভান পা দিয়ে দোলনা আলতো করে দুলিয়ে বললো,
— ” আমার সম্পর্কে জানতে চাও? ”
ঐশী সামনে তাকিয়ে মাথা হেলিয়ে সায় দিলো।
#চলবে
#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ঐশী চুপচাপ জুভানের পাশে দূরত্ব রেখে বসে গেলো। জুভান পা দিয়ে দোলনা আলতো করে দুলিয়ে বললো,
— ” আমার সম্পর্কে জানতে চাও? ”
ঐশী সামনে তাকিয়ে মাথা হেলিয়ে সায় দিলো। জুভান এক নিঃশ্বাস ছাড়লো। ঐশী জুভানের দিকে আগ্রহ চোখে তাকালে জুভান বলতে থাকে,
— ” আমার জীবনটা তোমার মতন সাজানো গুছানো ছিলো না,ঐশী। বরং অনেকটা যান্ত্রিক ছিলো। আর আমি ছিলাম সেই যান্ত্রিক জীবনের যন্ত্রমানব। যার কোনো অনুভূতি, ইচ্ছে-অনিচ্ছের কোনো মূল্য ছিলো না। ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের ঝগড়া দেখেই বড় হয়েছি। আমার কাছে তখন মনে হতো একটা সম্পর্ক মানেই হয়তো প্রতিদিন এই খিটখিটে আচরন, একে অপরকে অভিশাপ দেওয়া, সারাদিন ঝগড়া করে রাতে না খেয়ে ঘুমানো। সেদিন রোজকার মত মায়ের কাছে ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু সকালে উঠে এমন এক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলাম যেটা আমি কল্পনায় ভাবিনি। বাবা মা দুজন মিলে আমাকে প্রশ্ন করেন, –আমি কার কাছে থাকবো। বাবা নাকি মা? তখন ছোট মনে এই প্রশ্নের বিষাক্ততা বুঝতে পারিনি। তাই সরলমনে বলেছিলাম — দুজনের সাথে। মায়ের মুখ এই কথা শুনে কঠিনরূপ ধারণ করলো। সেই সাথে বাবাও হলেন বিরক্ত। শেষ পর্যন্ত আমার স্থান হয়েছিল মায়ের কাছে ,মায়ের নিজস্ব বাসায়। কদিন ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু তারপর মা নতুন বিয়ে করলেন। তারপর মায়ের কাছেও আমার মূল্য ফিকে হয়ে গেলো। ডাস্টবিনের মতন অযত্নে পড়ে থাকতাম ঘরের এক কোণে। দিন যেতে লাগলো, মায়ের কাছে দূরত্ব বাড়লো। মায়ের মমতার সুতো একসময় ছিঁড়ে যেতেই পা বাড়ালাম ঢাকাতে। একা, নিঃসঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতাম সেই শহরে। একসময় নাম- দাম সব হলো আমার। টাকা পয়সা হাতের ময়লায় রূপান্তরিত হলো। কিন্তু কোথাও মনে শান্তি পেলাম না। মেয়ে, মদ আমার রোজকার সঙ্গী হয়ে উঠলো। তারপর একদিন একে মেয়ের সাথে দেখা। যার জন্যে আজকের আমার এই বদল। সে যখন আমার ঘরে গুটিগুটি পা নিয়ে ঘোরাফেরা করে তখন আমার মনে হয় আমার ঘরে দীর্ঘ সময় পর পূর্ণতা এলো। এখন সেই কালো ঘরের আনাচে কানাচে শুধু সুখ আর সুখ। সেই সুখে কোনো স্বার্থ নেই। সেই মেয়েটা কে, চিনেছো নিশ্চই। ”
ঐশী একদলা বিস্ময় নিয়ে জুভানের দিকে তাকিয়ে রইলো। মানুষটা এত কষ্ট পেয়েছে? ও তো দু মাস ধরে একাকী আছে, আর তার পাশের মানুষটা সারাজীবন ধরে একা একা গুমরে মরেছে। ঐশীর চোখ ভিজে এলো। চোখের গা বেয়ে একফোঁটা জল মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তেই জুভান সেই জল আঙ্গুল দিয়ে শুষে নিলো। ঐশী অবাক হয়ে তাকালে জুভান বললো,
— ” তোমার চোখের একফোঁটা জল আমার বুকের সবটুকু পানি শুষে নেয়। তাই সেই জলের অপচয় করবে না। ”
ঐশী অবাক হলো কিন্তু এই কথার মানে বুঝলো না।
নিরবতায় কেটে গেলো আরো আধা ঘণ্টা। নিশ্বাসের নিঃশ্বাসের খেলায় ভারী হলো রাতের আকাশ। সেই আকাশে জ্বলজ্বল করে উঠলো অসংখ্য তারা। কিন্তু সেই বিশাল আকাশের একদম পশ্চিম দিকে দুটো উজ্জ্বল তারা বসে আছে। সবার থেকে আলাদা, একদম স্বকীয়। ঐশী সেদিকে চোখ রেখে মনে মনে নানা কল্পনা আঁকছে। অযথাই ওদের নিয়ে নিজের ভাবনার সুতো বুনছে। আচ্ছা, এই দুটো কি ঐশীর বাবা-মা। যারা এই নিষ্টুর পৃথিবীতে ওকে একদম একা করে রেখে গেছেন। শুনেছে , মানুষ মরার পর আকাশের তারা হয়ে যায়। তাহলে ঐশীর বাবা-মাও কি তারা হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশের ঐ কালো জগতে? ঐশী কোনো উত্তর পেলো না। হবে হয়তো। প্রায় অনেকক্ষণ ধরে ঐশীকে অন্যমনস্ক দেখে জুভান ঐশীকে ডাক দিলো। কিন্তু ওর মুখে “রা” নেই। জুভান এবার ঐশীর বাহু ধরে ঐশীকে ঝাঁকালো। খানিক জোরগলায় বললো,
— ” ঐশী, এই ঐশী? ”
ঐশী হুড়মুড়িয়ে জুভানের দিকে তাকালো। চোখের দৃষ্টি তার এলোমেলো, ছন্নছাড়া। জুভান সেই দৃষ্টি দেখে কিছুটা অবাক হলো। হঠাৎ করে কি হলো এই মেয়ের? জুভান ঐশীর চোখের কোণ থেকে একফোঁটা জল নিজের আঙ্গুল দিয়ে আনলো। জলের স্বচ্ছ ফোঁটা ঐশীকে দেখিয়ে বললো,
— “আবার কাদঁছো কেনো? ”
ঐশী মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরে চোখের জল মুছে নিলো। জুভানের থেকে কষ্ট লুকানোর কি সোচ্চার চেষ্টা তার! জুভান মৃদু হাসলো। সে ঐশীর দু বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরালো। ঐশী বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। জুভান যেনো তার অশ্রু দেখে না নেয়। জুভান ঐশীর থুতনি ধরে মুখ উচু করলো। কণ্ঠে আকাশসম আদর ঢেলে বললো,
— ” মা, বাবার কথা মনে পড়ছে? কাদছো কেনো? হুম? ”
ঐশী ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু বরাবরের মতন ব্যার্থ হলো সে। নিজের অনুভূতি লুকানোর ক্ষমতা কখনোই ছিল না তার। এবারও হয়নি। মাথা নিচু করে হুহু করে কেঁদে উঠলো ও। আকস্মিক কান্নার শব্দে জুভান হতভম্ব হয়ে গেলো। কি করবে ভেবে না পেয়ে ঐশীর মাথা নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো। মাথায় বারবার হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,
— ” হুশশ। কাদে না। আরে। এমন করে কান্না করার কি আছে। শান্ত হও ,ঐশী। রিলাক্স।”
ঐশী জুভানের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে নাক ঘষে কান্না করতে করতে বললো,
— ” কি দোষ ছিল আমার। বলতে পারেন। ওরা আমার পুরো পৃথিবীকে কেড়ে নিলো। আমার সম্বল, আমার বেচেঁ থাকার কারণ সব, সব কেড়ে নিল ওরা। কেনো করলো এমন? আমি তো নির্দোষ ছিলাম। ওরা তাহলে আমায় খুন করে ফেললো কেনো? আমার তো দোষ ছিল না। তাহলে? কেনো করলো এমন? কেন..”
ঐশীর কান্নার একেকটা ফোঁটা জুভানের বুকের উপর পড়ছে। সেই ফোঁটা ঐশীর মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তেই জুভানের বুকে বিষের মতন জ্বালা ধরছে। তার প্রেয়সীকে কান্না করতে দেখে দিল ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে নিরুপায়। এখনো তার হাতে এখনো কিছু করার মতন সুযোগ আসে নি। জুভান ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো গলায় বললো,
— ” তোমার কোনো দোষ নেই,ঐশী। তুমি পবিত্র। দুনিয়ায় যত পবিত্রতা আছে সব তোমায় ঘিরে থাকুক, তোমার মনের কুলষিত অংশ সেই পবিত্রতার ধারালো আচড়ে ধুয়ে মুছে যাক। দুনিয়ার সব শুভ সুখ তোমার পায়ের কাছে আত্মসমর্পন করুক। আমার ভাগ্যের সুখটাও আজ থেকে তোমার হোক, ঐশী।”
ঐশী জুভানের বুক থেকে মাথা তোলে তাকালো। এ কি বললো জুভান! ঐশীর চোখে মুখে খেলে গেলো অপার বিস্ময়, রাজ্যের চমক। জুভান ঐশীর অবাক হওয়া মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আবারও বললো,
— ” আমিন, আমিন। পবিত্র এই দোয়ার জন্যে সহস্রবার আমিন। ”
ঐশী কান্নার মধ্যেই হেসে ফেললো। জলে টুইটুম্বর মুখে সেই হাসি খুব বেশি মোহময় ঠেকলো। ঐশী জুভানের দিকে তাকিয়ে আওড়ালো,
— ” আমিন। ”
আচমকা ঐশী জুভানের কাছ থেকে সরে এলো। মুখে খেলে গেলো লজ্জার আভা। শরীরে আড়ষ্ঠভাব জরিরে ধরতেই ঠোঁট কামড়ে ধরলো ঐশী। দুনো হাত একসাথে কোলের উপর রেখে কচলাতে লাগলো। একটু আগে জুভানের এতটা কাছাকাছি ছিল ও। ইশ! কি লজ্জা! কি লজ্জা! ঐশীর এমন লজ্জা পাওয়া দেখে জুভানের অযথাই হাসি পেলো। দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো। গলা খাকারি দিয়ে বললো,
— ” অনেক গল্পসল্প হলো। এখন ডিনার করা যাক। অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে। ”
ঐশী জড়তা ঠেলে সহজ হওয়ার চেষ্টা করলো। দোলনা থেকে উঠে দাঁড়াতেই আচমকা পায়ে পা লেগে হোচট খেলো। সঙ্গেসঙ্গে কোমর ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিলে জুভান একহাত দিয়ে ঐশীর কোমড় আকড়ে ধরে। ঐশী চোখ খিচে বন্ধ করে আবারও পিটপিট করে তাকালো। জুভান ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,
— ” সাবধানে ম্যাডাম। আপনি হোচট খাচ্ছেন। ”
ঐশী ফ্যালফ্যাল করে জুভানের দিকে তাকালো। কিন্তু এই কঠিন কথার মর্মার্থ বুঝতে না পেরে হতাশ হলো। ঐশী স্বাভাবিক হলে জুভান ঐশীকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঘড়ি দেখে বলে,
— ” ডিনার টেবিলে দেখা হচ্ছে। কুইক এসো। ”
ঐশী মাথা নিচু করে সায় দিলো। জুভান ঐশীর দিকে একঝলক তাকিয়ে মুচকি হেসে সেই জায়গা থেকে চলে গেলো।
#চলবে