ইচ্ছের_উল্টোপিঠ #পর্ব_৪০,৪১

0
449

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪০,৪১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
৪০

— ” স্যার-স্যার, ঐশী ম্যামকে পাওয়া যাচ্ছে না বিকেল থেকে। ”

জুভান স্থির হয়ে গেলো। কানে জ্বালা করছে এই নিষ্ঠুর বাক্য শুনে। গলার কাছে অনেকগুলো শব্দ সাজানো। কিন্তু মুখ ফুটে কথা বেরুচ্ছে না। কি আশ্চর্য! জুভান কাপা গলায় বললো,

— ” ভালো করে খুঁজো দেখো। পেয়ে যাবে। ঘর ছেড়ে কোথাও যাবে ও? ”

— ” স্যার, আমরা সম্পূর্ণ ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু ম্যাম কোথাও নেই। ”

জুভান ফোন কেটে দিলো। জলদি ডায়াল নাম্বারে প্রবেশ করে অনলের নাম্বার ডায়াল করলো। ওর হাত কাপছে। যদি অনলও জানেনা ঐশীর খবর। তখন? এক রিং বাজতেই অনল ফোন রিসিভ করলো। জুভান তাড়াহুড়ো করে বললো,

— ” অনল, ঐশী কি তোর সাথে? ”

অনল কিছুটা অবাক হলো। বললো,

— ” না তো। কেনো? ঘরে নেই ও? ”

জুভানের কপালে ভাঁজ পড়লো। পাশে থাকা দেয়ালে ঘুষি মারলো সজোরে। হাত লাল হলো। রক্ত জমাট বাঁধলো হাতে। কিন্তু সেই ব্যথা নিতান্তই তুচ্ছ। ঐশীর চিন্তায় তার বুকের ভিতরটা জ্বালা করছে। তাহলে ওরা কি নিয়ে গেছে ঐশীকে? ওপাশ থেকে অনল বারবার বলতে লাগলো,

— ” জুভান,তুই ঠিক আছিস? ঐশী ত ঘরেই আছে। ভালো করে খুঁজে দেখ। ”

— ” না। ঐশী ঘরে নেই। শোন, তুই এক্ষুনি আমার বাড়িতে চলে আয়। ”

— ” কিন্তু..”
— ” কোনো কথা না অনল। আমিও আসছি। ”

জুভান ফোন কেটে দিলো। কোনো দিক-অদিক চিন্তা না করে গাড়ীর দিকে ছুঁটে গেলো। পিছন থেকে প্রোডিউসার দৌড়ে আসলেন। জুভান গাড়িতে উঠে ঝটপট গাড়ির ইঞ্জিন চালু করলে প্রোডিউসার হাপাতে হাপাতে গাড়ির জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন। জুভান ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালে প্রোডিউসার বললেন,

— ” কোথাও যাচ্ছো? শো ত এখনো বাকি। ”

জুভান গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো,

— ” পার্সোনাল প্রবলেম হয়ে গেছে। এক্ষুনি যেতে হবে। ”

— ” দেখো জুভান , তোমার পার্সোনাল প্রবলেম তোমার প্রফেশনাল লাইফকে হেম্পার করছে। শো ছেড়ে তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না। ইট উইল বি এ মিসটেক। ”

জুভান গাড়ি বন্ধ করে উনার দিকে তাকালো। ভ্রুতে ভাজ ফেলে বললো,

— ” হেম্পার করলে করুক। আই ডোন্ট কেয়ার। ”

অতঃপর প্রোডিউসারকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে জুভান শো শো আওয়াজ তুলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। প্রোডিউসার জুভানের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে জোরে হাফ ছাড়লেন। এই ছেলেটা এমন ঘরত্যারা কেনো হলো? কারো কথা শুনে না, কাউকে পরোয়া করে না। কিন্তু কিছু করার নেই। জুভানের যা ফ্যান ফলোয়ার তাতে ওকেই সবসময় হায়ার করতে হয়। নাহলে মানুষ রীতিমত হামলে পড়ে ওদের উপর। সবই কপাল!

___________________
জুভান আর অনল বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করলো। কিন্তু খুব অদ্ভুত ভাবে সব সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছে না। জুভান আর অনল একে অপরের দিকে তাকালো। অনল অবাক হয়ে বললো,

— ” ঐশী বললো ,তুই নাকি বাড়ির সব সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলেছিস। তাহলে এই ফুটেজ-গুলা কিসের? ”

জুভান আবারও কম্পিউটারে মন দিলো। কীবোর্ডে কি একটা করতে করতে বললো,

— ” যে ক্যামেরাগুলো খুব বড় ছিল । ঐশী যেগুলো দেখে নিয়েছিলো আমি সেগুলো খুলে নিয়েছি। তার বদলে মিনি সাইজের সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি। তুই কি করে ভাবলি ঐশীকে আমি এভাবে নজরবিহীন খোলা ময়দানে ছেড়ে দিবো? ”

অনল খুব একটা অবাক হলো না এই কথা শুনে। জুভান ঐশীকে কতটা ভালোবাসে সে এই কদিনে খুব ভালো করে বুঝে গেছে। ঐশী যাতে সেফ থাকে তাই অনলকে ঐশীকে সাহায্য করার জন্যে পাঠিয়েছে। পপ্রতিনিয়ত অনল ঐশীর জন্যে জুভানের পাগলামি দেখেছে।

— ” শিট, আজকের কোনো ফুটেজ-ই নেই।ওরা সব ফুটেজ ডিলেট করে দিয়েছে। ”
— ” এখন?
— ” অন্য কোনো উপায় বের করতে হবে। ”
— ” কি উপায়? ”

জুভান কপালে হাত রেখে কতক্ষণ চিন্তা করলো। ওর বুকটা ধকধক ধকধক শব্দ তুলছে। জীবনের প্রথম কোনো বিষয় নিয়ে ও এতটা ভয় পাচ্ছে। ঐশীকে সে হারাতে পারবে না। জীবনে সবকিছু হারাতে পারবে কিন্তু ঐশীকে নয়। ঐশী-বিহীন সে নিঃস্ব। ঐশীকে হারানোর চিন্তা তার ভিতরটা ধুকেধুকে খাচ্ছে। জুভানের চোখের কোনায় জল জমা হলো। কিন্তু কেউ দেখার আগেই খুব কৌশলে সে আঙ্গুল দিয়ে জলটুকু মুছে নিলো। তাকে একদমই দুর্বল হওয়া চলবে না।

— ” আমাদের সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে হবে। সেখান থেকে কোনো ক্লু পাওয়া যেতে পারে। ”

— ” ওয়াও। এটা খুব ভালো আইডিয়া। ”

জুভান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। নিজে যেতে চাইলে অনল হাত দিয়ে আটকে দেয়। জুভান অবাক হয়ে তার দিকে তাকালে অনল বলে,

— ” তুই থাক। আমি যাচ্ছি। ”

জুভান অনলের হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। গমগমে সুরে বলে,

— ” তুই ভাবলি কি করে, তুই যাবি আর আমি এই জায়গায় শান্তিমতে বসে থাকবো। যতক্ষণ না জানবো ঐশী কোথাও ততক্ষণ আমার বুকে পানি আসবে না। ছাড় আমাকে। ”

জুভান অনলের বাঁধা উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লো। অনলও কোনো উপায় না পেয়ে জুভানের পিছু পিছু আসতে লাগলো।

____________________
— ” হাই, মিস লেডি ডন। ”

কারো কথা শুনে ঐশী চোখ খুলে তাকালো। অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশনের পাওয়ার ধীরে ধীরে কমতে লাগলো। কিন্তু ঘাড়ের দিকটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। নাড়াতে পারছে না যন্ত্রনায় কারণে। ঐশী ঘাড় উঠাতে চাইলে ব্যাথায়” আহ্” করে আবারও নামিয়ে ফেলে। কোনক্রমে চোখ খানিক উপরে তুলে সামনে থাকা লোকটার অবয়ব দেখার চেষ্টা করে। ঐশীর সামনে মহেন্দ্রলাল বাগতি দাড়িয়ে আছে। ওর বাবা মায়ের চতুর্থ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুনি। ঐশী তাকে দেখেই আবারও চোখ বুজলো। ক্লান্ত থাকার ফলে আর তাকানো সম্ভব হলো না। চোখের পাতা আনমনে দমে এলো। মহেন্দ্রলাল ঐশীর পাশে চেয়ার টেনে বসলো। ঐশীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর আচমকাই ঐশীর নাক বরাবর দিলো এক ঘুষি। ঐশী চমকে উঠলো। নাকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরলো। ঐশী যন্ত্রণায় হাত পা নাড়াতে লাগলো। কিন্তু বাধা থাকায় কিছুই করতে পারলো না। মহেন্দ্রলাল ঐশীর দিকে বাঁকা হেসে তাকালো। কিছুক্ষণ মন ভরে ঐশীর ছটফটানি দেখলো। অতঃপর ঐশীর নাক থেকে আঙ্গুল দিয়ে রক্ত এনে বললো,

— ” ইশ! কত কত রক্ত ঝরছে। ”

ঐশী নাকের রক্ত মুখে, ঠোঁটে গড়াগড়ি খেলো। নাক বন্ধ হয়ে গেছে। শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। তাও ঐশী মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো। মহেন্দ্রলাল খুব মনযোগ সহকারে দেখলো ঐশীর একেকটা কার্যক্রম। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” বাঁচতে চাস? ”

ঐশী হা না উত্তর দিলো না। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো। মহেন্দ্রলাল রাগে ঐশীর গালে চটাস করে এক থাপ্পর বসালো। থাপ্পড়ের চোটে ঐশীর ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরুলো। মহেন্দ্রলাল রাগে গড়গড় করতে করতে বললো,

— ” মাইয়ার জেদ দেখছো? হ্যাঁ? এইটুকু মাইয়ার কি জেদ! মাইরা ফালামু তোরে আজকে, শালী। ”

মহেন্দ্রলাল রাগে ছুরি হাতে নিলে পাশ থেকে একজন তার হাত আটকে নেয়। মহেন্দ্রলাল চোখ গরম করে তার দিকে তাকালে মধ্যবয়স্ক লোকটা বলে,

— ” মাথা গরম কইরা না। এই মাইয়ারে মাইরা ফেললে ওর সাথীর খোঁজ করবা কেমনে? ওরে বাঁচানো লাগবো। আমাগো স্বার্থের লাগি। বুজলা? ”

উনার কথা শুনে মহেন্দ্রলাল কিছুটা নিভে এলেন। ছুরি ছিটকে মাটিতে ছুড়ে ফেললো। তারপর ঐশীর দু গাল ধরলো শক্ত করে। এতে ঐশীর গালে তার নখ খানিক দেবে গেলেও ঐশী চিৎকার করলো না। কটমট চোখে তাকালো মহেন্দ্রলালের দিকে। মহেন্দ্রলাল চোখ গরম করে বললো,

— ” তোর সাথীর নাম কি? বল? ”

— ” বলবো না। যা করার করে নে। ”

ঐশী দাত চেপে বললো। মহেন্দ্রলাল ঐশীকে ছেড়ে গড়গড় করলো রাগে। আচমকা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক লোকের গলা কেটে ফেললেন ধারালো ছুরি দিয়ে। লোকটা গলায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ফিনকে দিয়ে রক্ত ঐশীর মুখে এসে পড়লো। ঐশী চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। মহেন্দ্রলাল আবারও ঐশীর গাল চেপে ধরলো। বললো,

— ” এর মত তোরেও মাইরা ফালামু। ভয় থাকলে বইলা দে তোর সাথীর নাম কি? কো বলছি? ”

ঐশী পুনরায় বললো,

— ” মেরে ফেল। তাও বলবো না। ”

মহেন্দ্রলাল রাগে গজগজ করলো। ঐশীকে ছেড়ে দিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা লোককে বললো,

— ” এই মাইয়ের তেজ কমা তোরা। থার্ড ডিগ্রি টর্চার কর এরে। মুখ থেকে কথা ফুটানো লাগবো আইজ। ”

মহেন্দ্রলাল চলে গেলো। রেখে গেল ঐশীকে এই নরক যন্ত্রণার ভিতর।

#চলবে

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

পুলিশ স্টেশনে বসে আছে জুভান আর অনল। তবে মামলা করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। ইন্সপেক্টর জেনারেল বিহান সিকদারের জন্যে অপেক্ষা করছে তারা। বিহান জুভানের খুব ভালো বন্ধু। জুভান খবর দেওয়ার প্রায় বিশ মিনিটের মধ্যে পুলিশ স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। জুভান আর অনল বিহানকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। বিহান তাড়াহুড়ো করে বললো,

— ” ভাবীর কি হয়েছে? ফোনে ভালো করে বুঝিনি। এখন বলতো কাহিনী কি? ”

জুভান মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। তারপর তাড়া দেখিয়ে বললো,

— ” এখন এসব বলার সময় নেই। আমি সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে এসেছি। জলদি চল। ”

বিহান আর দেরি করলো না। জুভান যে অস্থির হয়ে আছে তা সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। বিহান ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে কন্ট্রোল রুমের দিকে পা বাড়ালো। পিছন পিছন জুভান আর অনল এগিয়ে গেলো।

— ” গাড়ীর নাম্বার জানিস? ”

জুভান মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর দিলো। বিহান এতে একটু চিন্তায় পড়ে গেল জুভান বলে উঠে,

— ” আমার বাড়ির সামনের দিকটা দেখ। গাড়ি ওখান থেকেই বেরিয়েছে। ”

বিহান ফুটেজ বদলালো। জুভানের বাড়ির সামনে কোনো সরকারি সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। সেখানে ফুটেজ থাকার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু বাড়ির সামনে দু মাইল দূরে মেইন রোড আছে। সেখানে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করা। বিহান সেই ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলো।

বিকেল চারটা নাগাদ শা শা করে দুটো গাড়ি জুভানের বাড়ির রাস্তা দিয়ে গিয়েছিল। আবার সেই গাড়ি সেই রাস্তা দিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ একই রাস্তা দিয়ে ফিরে এসেছে। জুভান গাড়ি দেখেই বললো,

— ” গাড়িটা জুম কর। কুইক। ”

বিহান জুম করলো। গাড়ীর সামনের গ্লাস দিয়ে ড্রাইভার আর একটা লোক দেখলো। জুভান আবারও বললো,

— ” আরো একটু জুম করতো। ”

বিহান জুম করলে জুভান কিছু একটা দেখে জুভানের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে তাড়াহুড়ো করে বললো,

— ” লুক। গাড়ীর পিছন সিটে ঐশীর ওড়না! এই ওড়না আমি আজকে ওকে পড়তে দেখেছিলাম।”

বিহান আর অনল ভালো করে জুম করে ফুটেজ-টা দেখলো। ঐশীর দেখা পেয়ে জুভানের চোখ ভিজে এলো। এখন ঐশীর খবর পাওয়া আরো সহজ হবে। আল্লাহ! রক্ষা করো আমার মেঘবালিকাকে।

বিহান গাড়ির নাম্বার নোট করলো। গাড়ি সব ফুটেজ লক্ষ করে দেখা গেলো গাড়ি ঢাকা থেকে বেরিয়ে গেছে। সিলেটের রাস্তা দিয়ে গাড়ী এগিয়ে গেছে। জুভান আর অপেক্ষা করলো। রাগে বেরিয়ে যেতে নিলে বিহান আটকে নেয়। জুভান চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালে বিহান বলে,

— “মাথা ঠাণ্ডা কর জুভান। আমি জানি তুই এখন একে জানে মেরে ফেলবি। ”

জুভান দাত চেপে বললো,

— ” ত কি করবো একে? পূজা? ”

— ” কিন্তু দেখ, তুই একে মারবি কিন্তু এতে ফলাফল কি আসবে? তোর জেল। তাইতো? কিন্তু যার জন্যে তুই একে মারবি সে তোর জেলে যাওয়ার খবর মানতে পারবে তো? ভেবে দেখ।”

জুভানের তীক্ষ্ম চোখ শীতল হয়ে এলো। চোখ বুজে নিলে ঐশীর কান্নামাখা মুখ ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো। জুভান জলদি চোখ খুলে নিলো। বললো,

— ” কি করবো এখন? ”

— ” ওকে এমনভাবে মারবি যেনো সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে। আর আমি জানি তুই অলরেডী ভেবে নিয়েছিস ওকে কিভাবে মারা যায়। অ্যাম আই রাইট? ”

বিহানের কথা শুনে জুভানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। ওর সাথে হেসে উঠলো আর দুই মুখ। এবার?

_______________________
ঐশীর অবস্থা নাজেহাল। থাপ্পড়ের কারণে ঠোঁটের বেশিরভাগ অংশ ফেঁটে রক্ত ঝরছে। নাকের নীচে রক্ত জমে শুকিয়ে গেছে। জিহ্বা খানিক কেটে গেছে দাত লেগে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো, উষ্ককুষ্ক। হাত পায়ে দড়ি বেধে রাখার কারণে চিকন দাগ পড়ে গেছে। ঘাড়ের ব্যাথায় আর টিকে থাকা যাচ্ছে না। ঐশী এতটাই ক্লান্ত যে চেয়ারে বসা অবস্থায় মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে বসে আছে। মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে আসছে। এতটা যন্ত্রনা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ঐশীর দম আটকে আসছে। মরণ ঘণ্টা কি বেজে গেলো?

একটু পর দরজা খোলার আওয়াজ এলো ঐশীর কানে। কিন্তু চোখ খোলার শক্তি তার মধ্যে নেই। একটা মেয়ে হাতে এক প্লেট ভাত নিয়ে ঐশীর সামনে এসে বসলো। মেয়েটা নিজে ভাত মেখে ঐশীর মুখের সামনে ধরে বললো,

— ” নে। খা। হা কর। ”

ঐশী হা করলো না। মেয়েটা এবার জোর করে ঐশীর গাল ধরে ভাত ওর মুখে পুড়ে দিলো। সঙ্গেসঙ্গে ঠোঁটের কাটা জায়গায় ঐশীর জ্বলে উঠলো। ঐশী জ্বলায় গুঙিয়ে উঠলো। কিন্তু তার থেকেও বেশি জ্বললো মুখের ভিতরে। ভাত সম্পূর্ণটা লাল মরিচ দিয়ে মাখানো। ঐশীর মুখের ভিতর অনেকখানি কেটে গেছে। কাঁটা জায়গায় লাল মরিচ লাগতেই ঐশী ছটফট করে উঠলো। ” পানি পানি ” বলে গুঙিয়ে উঠলো ও। মেয়েটা ঐশীর ছটফটানি দেখে পৌশাচিক হাসি হাসলো। জোর করে আরো ঠেসে ঠেসে মুখের ভিতর খাবার প্রবেশ করালো। আর ঐশী এতে গলা কাটা মুরগীর মতন ছটফট করলো শুধু।
__________________
প্লেন এসে থামলো সিলেট এয়ারপোর্টে। জুভান আর অনল প্লেন থেকে নেমে দাড়ালো। দুজনের মুখেই মাস্ক। এবার তাদের প্রথম কাজ মহেন্দ্রলালকে খুজে বের করা। ওদের গাড়ির নম্বর থেকে মহেন্দ্রলালের সব খবর নিয়েছে জুভান।

— ” সবার আগে কোথায় যাবি? ”

জুভান মাথার ক্যাপটা খুলে চুলগুলোকে মুক্ত করে দিলো। রোদের আলোয় বেটে আসা চোখ দিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,

— ” প্রথমে মহেন্দ্রলালের বাড়িতে যাবো। লুকিয়ে নজর রাখবো ওদের লোকের উপর। হয়তো ওখান থেকে ঐশীর কোনো খবর পেয়ে যাবো। ”

অনল মাথা হেলালো। যার অর্থ সে বুঝেছে।
_______________
মৌলভীবাজারে বিশাল বাড়ি। বাড়ীর চারপাশে শ লোকজন পাহারা দিচ্ছে। বাড়ির পাশের বিল্ডিং এর ছাদ থেকে জুভান দূরবীন দিয়ে বাড়িটায় নজর রাখছে।

হঠাৎ এক বয়স্ক লোক বাড়ীর মেইন ফটিক থেকে বের হলো। সবাই লোককে দেখে সালাম দিলো। লোকটা দম্ভভরে গাড়ির সামনে দাঁড়ালে একজন লোক গাড়ির দরজা খুলে দেয়। জুভান এসব দেখে খানিক অবাক হয়। কে এই লোক? এতো মহেন্দ্রলাল নয়। তবে? জুভান আর দেরি করে না। জলদি ছাদ থেকে নেমে গাড়িতে উঠে বসে। পিছু নেয় সেই লিকের গাড়ীর।

জুভান একহাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। আরেকহাত দিয়ে বিহানের নাম্বারে ডায়াল করলো। ফোন রিসিভ হতেই বললো,

— ” শোন, তোকে একটা গাড়ির নাম্বার দিচ্ছি। গাড়িটার নাম্বার থেকে তার মালিক আর মালিকের ফোন নম্বরের খোজ নে। আর সেই ফোন নাম্বারের কল রেকর্ড শোন। কোনো সন্দেহ কিছু পেলে আমাকে জানা। কুইক। ”

বিহান হা না বলার আগেই জুভান ফোন কেটে লোকের গাড়ি ফলো করে। এতদূর কোথায় যাচ্ছে এই লোক?
________________________
একটা বাংলো বাড়িতে এসে গাড়ি থামে। জুভান সেই বাংলো বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিজের গাড়ি থামায় যাতে লোকটার সন্দেহ না হয়। এখন অপেক্ষা বিহানের কলের। তারপর যা করার করা যাবে।

জুভানের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এলো। জুভান জলদি মেসেজ ওপেন করলো। একটা ভয়েস রেকর্ড। জুভান রেকর্ডটা অন করলে শোনা যায়,

— ” হ্যালো, মহি। ”
— ” বলো। ”
— ” এই মাইয়া তো কথা কইতেছে না। এহন কি করবা? ”
— ” তুমি তো ওর মারতে দাও না। শালিরে মাইরা ফেলি। তারপর আমরাই খুইজা বের করুন ওর সাথীর নাম। ”
— ” আবার একই কথা। শোন তুই একবার শান্তি নিকেতনে আয়। মাইয়াটার আচ্ছা ধোলাই কর। কথা এমনেই বারইবো। ”
— ” আচ্ছা আইতাছি। ”

কল রেকর্ড বন্ধ হয়ে যায়। জুভান অবাক হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বাংলোর নরম প্লেটের দিকে তাকায়। বড়বড় করে লেখা – ” শান্তি নিকেতন “। জুভানের চোখের পাতা কেপে উঠে। তারমানে ঐশী এই বাংলোতে আছে। জুভানের বুক ধকপক ধকপক করে উঠে।

একটু পর অনলের মোটর বাইক এসে জুভানের সামনে থামে। জুভান অনলকে শর্টকার্ট-এ কি করতে হবে বুঝিয়ে দেয়। অনল সব ভেবে মাথা নাড়ায়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here