হলিডে #পর্ব_১১_ও_১২

0
506

#হলিডে
#পর্ব_১১_ও_১২

#পর্ব_১১

গাড়ি থেকে নেমে নীরা একমুহূর্তও দাঁড়ালো না। খুব দ্রুত ভেতরে চলে গেল। লাবণী সৌজন্য হেসে বললো,
—আপনি চলুন না ভেতরে। এক কাপ চা খেয়ে যাবেন।
—মি. শফিক কি বাড়িতে আছেন? উনি থাকলে কথা বলে আসতাম।
লাবণী মুখ গোমড়া করে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। এ তো দেখি মহাঝামেলায় পড়া গেল বাবা। শফিকের কাছে যাওয়া মানে প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ের গল্প শোনা।
—কোনো সমস্যা?
—না না শফিক বাড়িতেই আছে। আসুন না; আসুন। আসলে, আমার দেওর খুবই ভালো ছেলে। মাঝে মাঝে একটু কথাবার্তায়….
—আপনি এত কেন হেজিটেট করছেন?
—আসলে ও’র উপর দিয়ে একটা চরম ধরনের মানসিক ঝড় গেছে। একটু নরমাল ট্র্যাক থেকে ওর মেন্টাল স্টেবিলিটিটা সরে গেছে। শফিক খুব ভালো ছাত্র ছিল।
এটুকু বলতেই যেন লাবণীর গলা ধরে এলো…. সে একটু থামলো। গলা ঝেড়ে নিলো।
—একটা মানুষকে ও ভালোবেসে হাত ধরেছিলো, সেই মানুষটা মাঝপথে ও’র হাত ছেড়ে দিয়েছে। শুধু হাত ছাড়লেই কথা ছিল না, প্রচন্ড অপমানের সাথে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। এজন্য শফিকের কিচ্ছু ঠিক নেই, এলোমেলো হয়ে আছে ওর মনের ভেতরটা।
—উনি একসময় সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যাবেন। এত ঠিক হবেন যে আশেপাশের সবাই চমকে যাবে। ডোন্ট ওরি।
লাবণী আশান্বিত চোখে তামিমের দিকে তাকালো। তাঁর চোখ বলছে, “আমরা অনেক দিন যাবৎ ভালো নেই”।
—ইং শা আল্লাহ, সব ঠিক হয়ে যাবে!
লাবণী হাসার চেষ্টা করলো।

তামিমকে ভেতরে আসতে দেখেই নীরা চাপা স্বরে লাবণীকে ইশারায় বললো,
—-এনেছো কেন বাড়িতে? যত্তসব…
বসার ঘরের তুলকালাম অবস্থা। শফিকের বই চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সকালের নাশতার প্লেটটা পর্যন্ত সরানো হয়নি। এর মাঝে শফিক ফ্লোরে শুয়ে পড়ছে।
তামিমকে দেখে শফিক হাত নেড়ে শুধু হাই বললো কিন্তু শোয়া থেকে উঠলো না।
—কি ব্যাপার? ভালো আছেন? খুব জমিয়ে পড়াশোনা হচ্ছে মনে হয়?
—হুঁ। কিন্তু এখন তো কথা বলতে পারবো না। পড়ছি।
—না না! ইটস ও’কে.. আমি চা খেতে এসেছি।
নীরা উপরের ঘরের দিকেই যাচ্ছিলো। তামিম পিছু ডাকলো।
—মিস নীরা, আমাকে কি দয়া করে অন্য কোনো জায়গায় বসতে দেবেন, এখন এখানে বসলে উনার পড়াশোনার ডিস্টার্ব হবে।
শফিক সুর মেলালো তামিমের সাথে,
—উপরের বারান্দায় নিয়ে যা না নীরা। ক্রাউড হলে আমার এটেনশান ক্রাশ করে যায়। প্লিজজজ।
নীরা কড়া একটা কথা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলালো। প্রচন্ড অনিচ্ছায় নীরা একপেশে সুরে বললো,
—চলুন।
—আপনি এর মধ্যে চেঞ্জও করে নিয়েছেন? বাহ্ দুমিনিটেই!
নীরা জবাব না দিয়ে মনে মনে একটা ভয়াবহ গালি দিলো তামিমকে।
—আপনাদের বাড়িটা তো বেশ গুছানো। কে গুছায়?
নীরা মনে মনে বললো, “তোর **** গুছায়রে শালা”।

সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে তামিমের মনে হলো, এই বাড়িটা অন্যরকম শান্তিময়। তামিম নীরার পেছন পেছন প্রায় কাঁধ ঘেঁষে হাঁটছিলো। কি মিষ্টি ঘ্রাণ! সে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো।
—আপনাদের বাড়িতে আর কেউ নেই? আর কাউকে তো দেখছি না।
—উহুঁ। বাবা মা গ্রামে গেছেন।
এরপর নীরা পেছনে তাকিয়ে বললো,
—-এই দূরে…. দূরে সরে হাঁটুন। এরকম পাশে কেন? আরো দূরে।
তামিম দূরে যাবার ভঙ্গি করলো এবং যথারীতি নীরার পাশেই হাঁটতে থাকলো…
—নিন এখানে বসুন। চা আসছে।
—আমি কি একা বসে থাকবো? আপনিও বসুন।
—আমি বসবো না। চা এলে খেয়ে বিদেয় হোন।
—আপনি এত রেগে আছেন কেন? এরকম আচরণ কেন করছেন?
নীরা জবাব দিলো না। চেয়ারটা টেনে এগিয়ে দিলো।
—একা বসে থাকার জন্য এসেছি আমি? এমন করার মানে কি?
—কেন করছি বুঝতে পারছেন না? ওখানে আপনি কাজটা কি করলেন? হুঁ… কি করলেন? এত সাহস কোথায় পেলেন? এটা কোনো ভদ্র মানুষ করতে পারে?
—আমি আবার কি করলাম?
—-কি করলাম? সারা দুনিয়াকে দেখিয়ে চুমু খাওয়া হয়েছে, এখন বলছেন কি করেছেন? পুরো জায়গাটা সিসিটিভি মনিটর করা। সব হয়তো রেকর্ড হয়ে আছে। দুদিন পর আমি যখন নায়িকা হবো, এরকম সিন টিন কিছু লিক হয়ে গেলে…. ক্যারিয়ার শেষ!

নীরা একটু এগিয়ে গিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালো। তার রাগী কণ্ঠে যেন খাপছাড়া ভাব।
—তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, যে জায়গায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা নেই সেখানে কাজটা করার দরকার ছিল? রেকর্ড হওয়ার কোনো ঝামেলাই থাকতো না সেক্ষেত্রে।
তামিম এগিয়ে গিয়ে নিঃশব্দে নীরার পেছনে দাঁড়ালো। নীরা সেটা টের পেলো না।
—মোটেও না। আমাকে চুমু খাবার দরকারটা কি আপনার? এত চুমু খাওয়ার শখ কেন? লজ্জাশরম বলে তো….
এবং নীরা পেছনে ফিরবার আগেই তামিম তাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নীরার ঘাড়ের কাছে গালের পাশটায় লম্বা একটা চুমু খেয়ে নিলো।
নীরা “ও মাগো” বলে সজোরে চিৎকার দিলো। ততক্ষণে তামিম খুব স্বাভাবিকভাবেই দ্রুত চেয়ারে বসে পরেছে।
চিৎকার শুনে লাবণী ছুটে এসেছে,
—কি হয়েছে নীরা? কি?
—আমিও তো কিছু বুঝতে পারছি না! উনি আমার সাথে কথা বলছিলেন, হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে উঠলেন। মিস নীরা কি হয়েছে বলুন তো?
লাবনী নীরার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। নীরা দু-গালে দু-হাত চেপে মুখ হা করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তার চোখের মণিগুলো যেন এখনি খুলে বেরিয়ে আসবে।
—কি হয়েছে বলো? নীরা কথা বলো….
লাবণী নীরার কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিলো।
তামিম চিন্তিতভঙ্গিতে বললো,
—আসলে একটু আগের ঘটনাটার সারপ্রাইজটা এখনো রয়ে গেছে, বুঝলেন মিসেস লাবণী।
লাবণী পানির গ্লাসটা নীরার দিকে এগিয়ে দিলো।
—পানি খাও নীরা। এত ভয় পেলে হয়? বসো, এখানে এসে বসো। গুন্ডাদের তো উনি ধরেই ফেলেছেন। এখন ভয় কিসের? তুমি না সাহসী মেয়ে। তাছাড়া তামিম সাহেব তো আমাদের পাশে আছেনই, তাই না ভাই?
তামিম মাথা নেড়ে কাঁচুমাঁচুভাবে সায় দিলো।
—জি… জি….
—পানিটা খাও নীরা। এমন দু-গাল চেপে ধরে আছো কেন? গালে কি? দাঁতব্যথা তোমার?

শফিক এসে অত্যন্ত বিরক্ত গলায় বললো,
—চিৎকার কে করেছে? নীরা?
লাবণী মাথা নাড়লো।
—উফ্ ভাবী! বুঝাও ওকে, এভাবে যাতে চিৎকার না দেয়। ডিস্টার্ব হয় আমার! এ বাড়িতে শান্তিতে পড়াশোনারও জো নেই।
শফিক চলে গেল।
নীরা দু-হাতে দু-গাল শক্ত করে চেপে আছে। তার সমস্ত শরীর কাঁপছে।
—তোমার কি দাঁতব্যথা নীরা? গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করবে? কি হলো?
নীরা কিছু না বলে লাবণীর দিকে রক্তচক্ষু করে তাকালো।
—আমার কি দাঁতে পোকা যে ব্যথা করবে?
—এত রাগ করছো কেন? তোমার হাবভাব দেখে বললাম।
তামিম হেসে বললো,
—আপনি বরং চা নিয়ে আসুন ভাবী। মিস নীরা একটু নিজেকে সামলে নিক। সাডেন হিট তো!
লাবণী ব্যস্ত গলায় বললো,
—চা নয় ভাই। আপনি লাঞ্চ করে যাবেন। আমি ভাত দিচ্ছি টেবিলে।
দরজা অবধি গিয়ে লাবণী ফিরে তাকালো,
—তামিম ভাই, ধন্যবাদ ভাবী বলার জন্য!
—ইটস মাই প্লেজার ভাবী।
লাবণী চলে যেতেই নীরা উঠে দাঁড়ালো। এবং সামনের টেবিলটায় পা দিয়ে একটা লাথি মারলো।
—আপনি চলে যাচ্ছেন? আমি কি একা বসবো নাকি? বাড়িতে গেস্ট এলে এমন করেন বুঝি আপনারা?
নীরা শক্ত গলায় বললো,
—আমি আপনাকে দেখে নিবো। ছাড়বো না।
আপনার সব কিছু আমি পাব্লিককে জানিয়ে দিবো।কেইস করবো আপনার উপর। আপনাকে জেল খাটিয়ে ছাড়বো। আপনি তো চেনেন না আমাকে!
তামিম উঠে দাঁড়ালো। নীরার মুখোমুখি এসে বললো,
—মিস নীরা, আপনি এভাবে দু-গালে হাত চেপে না রেখে বরং একটা হ্যালমেট পরে আসুন। তাহলে আমার চুমুর হাত থেকে বেঁচে যাবেন। কেইসও করতে হবে না। স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবেন।
নীরা আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না, যাবার সময় প্রথমে সামনে রাখা টেবিলে বারি খেলো, পরে গিয়ে দরজার ফ্রেমে বারি খেলো এবং সবশেষে ঘরের ভেতরে কিছু একটায় হোঁচট খেয়ে দড়াম করে পড়ে গেল।
তামিম আর ওদিকে গেল না। বারান্দার রেলিং এ ধরে আকাশের দিকে তাকালো। কি ঝকঝকে রোদ উঠেছে! এত সুন্দর আকাশ কেন আজ?

রাতে ডিনারের সময় তামিম এনাউন্সের মতো করে বললো,
—মা, আজ আমরা তিন ভাই-বোন একসাথে ডিনারে বসবো। তুমি আর বাবা আলাদা!
সেলিনা বিস্মিত চোখে ছেলের দিকে তাকালেন।
—কেন বলতো?
—আমাদের কথা আছে। তুমি বরং বাবাকে নিয়ে টাইম স্পেন্ড করো।
তামিমের বাবা মেজবাউর রহমান ছেলের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন,
—মাই ডিয়ার সান, তোমার মা নামক বস্তুটার সাথে আমি একসাথে খেতে পারবো না। আই কুইট দ্য ডিনার!
—কেন খেতে পারবেনা বাবা? এতদিন পর তোমরা একসাথে ডিনারে, তোমাদের তো সেলিব্রেট করবার কথা!
—সেটা তোমার মাকে বলো, আমি এসে অবধি তোমার মায়ের কাছ থেকে এক কাপ চা পাইনি।
সেলিনা চমকে যাওয়ার মত মুখভঙ্গি করে বললেন,
—চা পাওনি মানে? দু-বার চা দিয়েছি। কি মিথ্যুক তুমি!
—যেটা পাঠিয়েছো, সেটা র-চা। আমি যে র-চা খাই না এটা কি তোমায় দলিল করে লিখে দিতে হবে? ডু ইউ নিড এনি রাইটিং ডকুমেন্ট? বলো, আমি লিখে দিচ্ছি। গিভ মি দ্য পেপার।
—দুধ চা তো আমি তোমায় দিবো না। একদম না। তুই তো জানিস না তামিম, দুধ চা খেলে তোর বাবার পেটে গ্যাস হয়। সারারাত সে গ্যাস নির্গত করে। “পেটের গ্যাস” কোম্পানি লিমিটেড। তোরা তো আর তোদের বাবার সাথে ঘুমোস না! আমাকে ঘুমোতে হয়, আমি বুঝি। সেই গ্যাস নিঃসরণও নিশব্দে নয়, ককটেল বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ করে। আমি যে কতবার ভয়ে চমকে উঠি জানিস?
ইতু হেসে ফেললো।
মেজবাউর সাহেব কর্কশ গলায় বললেন,
—শাট ইওর মাউথ!

রিতু পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বললো,
—বাবা তোমার কাছে থেকে ক’দিন দূরে থেকে কেমন শুকিয়ে গেছে দেখেছো মা?
সেলিনা জবাব দিলেন না।
মেজবাউর সাহেব গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললেন,
—আমার খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দেয়া হোক। আমার সাথে কাউকে খেতে হবে না।
সেলিনা এরচেয়ে দ্বিগুণ রাগান্বিত হয়ে বললেন,
—আমি কখন বললাম যে, আমি তোমার সাথে খাবো? তোমার ওই বিচ্ছিরি আঙুল চোষা দেখলে আমার পেট গোলায়। ছিঃ….
—ইউ স্টপ, দুষ্টু মহিলা। তুমি যে সব তরকারি একত্রে মাখিয়ে একটা কি পদার্থ তৈরি করে খাও না, সেই পদার্থটা দেখতে কিরকম হয় জানো? সেটা দেখতে হয় একদম…
রিতু বাবার মুখের কথাটা কেড়ে নিলো,
—সেটা দেখতে একদম আনারসের ভর্তার মতো হয়, তাই না বাবা?
মেজবাউর সাহেব নিজের রাগ সামলালেন।
—বাবা, আমরা দুই বোনে আর ভাইয়া মিলে একটু আলোচনা করবো। সিক্রেট টাইপ। এজন্য আমরা আলাদা বসতে চাচ্ছি।
সেলিনা চট করে স্বামীর পক্ষে চলে গেলেন,
—দেখেছো, এই হলো আমাদের ছেলেমেয়ে! আলোচনাতেই আমাদের রাখতে চায় না। আর বুড়ো বয়সে এরা ভাত দেবে বলছো?
মেজবাউর সাহেব বিরস মুখে বললেন,
—সেলিনা, চলো আমরা দুজনে বরং আজ ছাদে ডিনার করি। খাবার রেডী করো।
সেলিনা স্বামীর আবদারে মহাউৎসাহ পেলেন। তিনি অত্যন্ত ব্যস্তভঙ্গিতে ছাদের দিকে রওনা হলেন। টেবিল পাতা আছে কিনা কে জানে!

আমরা আজ ইতুর রাগ ভাঙানো দিয়ে শুরু করি, কি বলিস?
—এই যে মহামান্য তাসনিম রহমান ইতু, এটা আপনার জন্য।
তামিমের হাতে সুন্দর একসেট চুড়ি।
ইতু মহানন্দে কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইলো।
—তুই কিভাবে জানলি এটা যে চাই আমি?
—রিতু বলেছে।
ইতু তামিমকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো। তামিম কড়া গলায় বললো,
—নো নো, তোর মেকআপে আমার টি-শার্ট মেখে যাবে।
ইতু তাও ধরলো।
—থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
রিতুই ডিনার সার্ভ করলো।
—এবার বল ভাইয়া, তোর প্রেমের খবর কি?
—বিশেষ কোনো খবর নেই, চেষ্টাচরিত চলছে দেখা যাক! মেয়েটার মেজাজটা না ফ্লাকচুয়েটিং মুডে থাকে… সো ট্রায়িং।
ইতু হাত তুলে বললো,
—আমার কিন্তু হয়ে গেছে ভাইয়া। ও ফিল্ম এন্ড টেলিভিশনে পড়ছে, জগন্নাথে!
বলেই লজ্জা লজ্জা মুখ করে তাকালো।
তামিম ও রিতু কারোরই তাতে কোনো এক্সট্রা এক্সপ্রেশন পাওয়া গেল না।
ইতু আবারও বললো,
—অনেক হ্যান্ডসাম। ডাকনাম ‘জিজ’! কুল না ভাইয়া?
রিতু হাসলো।
—এবার তোরটা বল রিতু।
রিতু উদাস গলায় বললো,
—ওসব আমার লাস্টিং করে না। ম্যাক্সিমাম, এক সপ্তাহেই ব্রেকআপ হয়ে যায়।
ইতু অবাক হয়ে বললো,
—বলিস কি? কেন, কেন?
—এই যে একটু পরপর পিক দাও, পিক দাও বলে ঘ্যাঁনঘ্যানঁ করে না, অসহ্য! রাত দুটায় উঠে মেসেজ করবে, একটু কল দাও সোনা; ন্যাঁকার হাড্ডি সবগুলা। সোনা, তুমি কি একটা নীল জামা পরে আসবা… কেন রে তোর বাপের জন্মে দেখিস নাই নীল জামা? ডিসগাস্টিং!
—এটা তো ফিলিংস। ভালোবাসা বুঝলি না।
—ফিলিংস বলে ঘুম ভাঙিয়ে কথা বলতে হবে? ভালোবাসায় কি নীল জামা কোনো কিছু ম্যাটার করে? আর মোস্ট ইম্পর্টেন্ট থিং, রোমান্টিক কথা বললে আমার পেট ব্যথা করে।
তামিম সশব্দে হেসে উঠলো।
—হাসার মতো তো কিছু বলিনি ভাইয়া। ডোন্ট লাফ। ইট ইজ দ্য মেটার। তবে হ্যাঁ যখন হৃদয় কাঁপানো রিয়েল প্রেম হবে আমার, তখন আমি শিওর এমন হবে না। এখন যেগুলা হচ্ছে, ওগুলা প্যাঁকপ্যাঁক টাইপ।
তামিম উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—কি করে বুঝবি যে তোর হৃদয় কাঁপানো প্রেম হয়েছে?
রিতু খাওয়া বন্ধ করে একটু আগ্রহী হয়ে বসলো,
—সাচ এস, তোর যখন প্রেমটা হবে তোর মনে হবে আমি তাকে সারাক্ষণ খুশি রাখতে চাই। সে যদি মন খারাপ করে থাকে, একশ মাইল দূরে থাকলেও তোরও মন খারাপ হয়ে থাকবে। তাঁর দিকে তাকানো মাত্র তোর কান গরম হয়ে যাবে, হাত পা শিরশির করবে। ইচ্ছে করবে তাকে কাঁধে করে আকাশে উড়ে যেতে।
সে তোকে বকা দিলেও ভালো লাগবে। ইচ্ছে করবে তাকে নিয়ে এভারেস্টে বসে চা খেতে। সে ব্যথা পেলে, তোর কষ্ট হবে। ঘন শীতের রাতে তাকে কফি করে দিতে তোর একটুও অলস লাগবে না তখন।

তামিম ভাতের পাতে পানি ঢেলে উঠে দাঁড়ালো। আর খাওয়া যাবে না। বুকে ভাত আটকে আসছে। নীরার কথা মনে পড়ছে। নীরা বকার সময় তার খুব ভালো লেগেছে! নীরাকে দেখলে তামিমের কান, না না পুরো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তবে কি তার হৃদয় কাঁপানো প্রেমটা হয়ে গেছে?
তামিম বিড়বিড় করে বললো, “আই এম ফিনিশড”

রিতু পিছু ডাকছে,
—কি হলো, খাবি না ভাইয়া? কি হলো, চলে যাচ্ছিস কেন?
তামিম সেটা শুনতে পেলো না।

#পর্ব_১২

রাতে খাবার পর মেজবাউর সাহেব মদ্যপান করার সব ব্যবস্থা করে নিয়ে ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। আজ তাঁর মনটা বেশ ফুরফুরে। অনেকদিন পর পরিবারের সাথে একটা গেট টুগেদার হলো। মেজবাউর সাহেব ছেলের জন্য অপেক্ষা করে নিজেই দুটো গ্লাসে পেগ রেডী করলেন। আজ ছেলেকে তিনি একটা ধন্যবাদ দিবেন। ছেলেটা এত চ্যালেঞ্জিং একটা পেশায় জব করছে। সব মহল থেকে তিনি প্রশংসা পাচ্ছেন। ছেলের জন্য তিনি একটা গিফটও রেখেছেন। তামিমের একটা বড় ছবি তিনি বাঁধিয়ে এনেছেন। ছবিতে আট বছর বয়সের তামিম একটি কবুতর হাতে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। কান্নার কারণ, কবুতরটির একটি ডানা ভেঙ্গে গেছে। ছবিটার দিকে তাকালেই মন কেমন হা হুতাশ করতে শুরু করে। শ্রাবণের সন্ধ্যাগুলোতে কালো মেঘের আকাশের দিকে তাকালে যেমন বুকের ভিতর শাঁ শাঁ করে; তেমন একটা অনুভূতি হয়। ছবির ফ্রেমটা করেছেন তিনি পুরোটাই প্লাটিনামে। মাঝে মাঝে হীরে বসিয়ে ডেকোরেট করা হয়েছে। ছবির উপরে যে কাঁচটা ব্যবহার করেছেন তারও একটা বিশেষ গুণ আছে, একেক ধরনের আলোতে ছবিটা একেক রকম দেখায়।

ছোটবেলায় তামিমের মন ছিলো ভীষণ নরম। সে যে গুলি চালানোর মতো কাজ করতে পারবে এটা ধারণার বাইরে ছিল। অথচ বড় হয়ে সে জয়েন করলো এনএস আইতে। তাও ইন্টারনাল সিকিউরিটি উইংয়ে। এই অল্প বয়সে ছেলেটা কত সাহসী ভূমিকা পালন করছে ভাবা যায়? অথচ এই চাকরি নিয়ে প্রথমে তিনি ছেলের উপর নারাজ ছিলেন। তামিম ঘরে এসে নিঃশব্দে চেয়ার টেনে বসলো। তার হাতে একটা সবুজ ফাইল।
মেজবাউর সাহেব হেসে বললেন,
—হ্যালো ডিয়ার সান, টেইক ইট। ইট’স এ নিউ কালেকশন.. আই ওপেনড ইট যাস্ট নাউ।
তামিম খুবই আগ্রহের সাথে হাত বাড়িয়ে ড্রিংকের গ্লাসটা নিলো। মেজবাউর সাহেব জানেন, তামিম তা থেকে এক চুমুকও নিবে না। প্রতিবারই তামিমকে যখনই তিনি কথা বলতে ডাকেন, তিনি এরকম একটা ড্রিংক অফার করেন। তামিম আলোচনার শুরু থেকে শেষ অবধি সেই ড্রিংকের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে থাকে। আলোচনার শেষে চলে যাবার সময় হাসিমুখে বলে,
—বাবা, এটা তোমার জন্য।
মেজবাউর সাহেবের মন তখন বিশাল আনন্দে ভরে যায়।
তামিম গ্লাসটা হাতে নিয়ে নাকে শুকলো।
—স্মেলস কোয়াইট ডিফারেন্ট। এটার নাম কি বাবা?
—ম্যাকালান সিঙ্গল মল্ট! এটা হুইস্কি। এটার আসল বিশেষত্ব কিন্তু এর বোতল। লুক এট ইট, বোতলের ঢাকনাটি পিওর ক্রিস্টালে তৈরি। বটম ফ্রেমটা পিওর গোল্ড। সিক্সটি ইয়ারস ওল্ড! আর এর টেস্ট নিয়ে তো কথাই নেই। বলা হয় যে, এর স্বাদ এমন যে এক চুমুকেই তুমি এটিকে ভালোবাসতে বাধ্য হবে।
—একটা চুমুক দিয়েই ফেলি তাহলে… কি বলো?
—ওহ! শিওর.. শিওর… মাই সান।
তামিম গ্লাসে চুমুক দিলো না। শুধু ডানহাত বদলে বাঁ-হাতে গ্লাসটা নিলো।
—এটা কি?
—ইট ইজ এ গিফট ফর ইউ। উহু.. এখন খুলবে না। ওয়েট…
তামিম মিষ্টি করে বাচ্চাদের মত হাসলো। মেজবাউর সাহেব ছেলের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন। হাসলে তামিমকে দেখতে অপূর্ব লাগে। উপরের ঠোঁটের বাঁ-দিকটা একটু করে আপনাআপনি উপরে উঠে যায়! মুখটা তখন দেখায় একটু করে পাপড়ি খুলে যাওয়া হেলেন ফ্লাওয়ারের মতো। কিন্তু ছেলেটা একেবারেই কম হাসে। মেজবাউর সাহেব মনে মনে বললেন, “গড ব্লেস মাই সান”।
—পেপারে দেখলাম ছবি এসেছে তোমার তাও আবার প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ের সাথে কফি খাচ্ছো। গসিপ আকারে লিখা।
তামিম এই কথারও জবাব না দিয়ে হাসলো।
মেজবাউর সাহেবের গ্লাস খালি হয়ে গেছে। তিনি বোতল থেকে আরেকটু মদ ঢেলে নিলেন।
—গসিপ হলেও লেখাটা ভালো লেগেছে আমার। কোয়াইট নাইস কাপল ইউ আর।
—সেরকম কিছু একদমই নয় বাবা। এক্সেজারেট নিউজ!
—কেন নয়? তুমি কি হেজিটেশনে আছো? তোমার বাবার যতটুকু আছে তা দিয়ে এরকম একটা মেয়েকে বিয়ে করাটা কোনো ব্যাপার নয়।
—বাবা টাকাপয়সার ব্যাপার কিন্তু নয়। আমি এরকম ভাবতেই পারি না। ইট ইজ আউট অফ মাই থিংকিং।
—তোমার পেশাটা কিন্তু ভালো। সব বড় বড় মানুষের সাথে কাজ করছো। এভরিডে ইউ গেট এ নিউ স্টার্ট। পকেটে বন্দুক আবার প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ের সাথে সময় কাটাচ্ছো… কোনোদিন হয়তো ক্লিক করতেই পারে সম্পর্কটা।
—বাবা, নিউ স্টার্ট পাচ্ছি সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আর কিছু নয়।
—না হলেই ভালো মাই ডিয়ার চাইল্ড। বিয়ে করে একটা মেয়েকে জীবনে জড়ানো মানে জীবনটাকে একটা জ্বলন্ত চুলার সংস্পর্শে নিয়ে আসা। যেটার তাপে তুমি সারাজীবন কষ্ট পাবে কিন্তু একেবারে পুড়বে না। লাইক তোমার মা, সে যখন আমার লাইফে এলো তখন থেকেই আমার জীবনে নতুন কিছু অভ্যাস তৈরি হতে লাগলো যার কারণে আমার প্রতিভাগুলো কমতে থাকলো।
—হঠাৎ বিয়ে নিয়ে কেন কথা বাবা?
—তোমার মা হয়তো মেয়ে টেয়ে দেখছেন তোমার জন্য তাই। বাট মাই সাজেশন ইজ “ডোন্ট ম্যারি “। বিয়ে হলো আইনত, ধর্মমত এবং সমাজ মতো একটা পানিশমেন্টের পার্মানেন্ট ব্যবস্থা! সো স্কিপ দিস প্রোগ্রাম।
—বাবা, তুমি বোধহয় একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছো। ভুলভাল বলছো।
—মোটেও ভুলভাল বলছি না। তাহলে একটা ঘটনা শোনো, তখন আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে। বিয়ের দু-মাস পর আমাদের প্রথম ঈদ। তোমার নানাজানের শরীর খারাপ। তোমার মা গিয়েছেন অসুস্থ বাবাকে সেবা করতে। পুরো ঈদ থেকে গোটা দুইদিন, তুমি বুঝতে পারছো টোটাল টু ডেইজে সে আমাকে একটা ফোনও করেনি। আন্ডারস্ট্যান্ড? হাউ ক্রয়েল হার্টেড শি ওয়াজ। আই কুডন্ট ইভেন থিংক, একটা মানুষ সেটা কিভাবে পারলো? আই হেইট ইওর মাদার।
—স্টপ বাবা। স্টপ। তোমার গলার স্বর কাঁপছে। আর খেয়ো না। প্লিজজজজজজ..
মেজবাউর সাহেব হাসলেন।
—কথাগুলো তোমার মাকে নিয়ে বলে তোমার এমন মনে হচ্ছে। আই এম ওকে। কমপ্লিটলি ওকে। বাট দ্য রিয়েলিটি ইজ, অল উইমেন অফ দিস ওয়ার্ল্ড আর সেইম। বি কেয়ারফুল মাই ডিয়ার সান। বি কেয়ারফুল।
—বাবা, তুমি মাকে পছন্দ করো না সেটা কিন্তু ঠিক নয়। আই হ্যাভ এ পার্সোনাল এক্সপ্লেনেশন! তোমার যখন মায়ের সাথে ঝগড়া হয়, তুমি যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যাও তখন তুমি কিন্তু ইতুকে সাথে নিয়ে যাও;
রিতুকে নাও না। এর কারণটা হলো, ইতুর স্বভাব একদম মায়ের মতো। হার এটিচিউড ইজ কোয়াইট সেইম লাইক মা। তুমি মা’কে মিস করবে বলেই ইতুকে সাথে নিয়ে যাও, তাই না?
মেজবাউর সাহেব ছেলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালেন।
—-মানে?
—ইয়েস বাবা, তুমি মায়ের স্বভাবগুলোকে ভালোবাসো। মা এরকম বোকা বোকা বলেই তুমি মুগ্ধ। মায়ের সব ইলোজিক্যাল জিনিসগুলোই তোমাকে ভালোবাসায় বেঁধে ফেলেছে। ইতুর মাঝে তুমি সেটা দেখতে পাও। সেই ছায়াটা তোমাকে টানে।
মেজবাউর সাহেব হাসলেন এবার।
—ইওর স্পিচ ইজ নাইস!
—আমার জীবনে কে আসবে এখনো আমি শিওর না বাবা। বাট আমি চাই, মনেপ্রাণে চাই আমি যাতে তাকে তোমার মতো করে ভালোবাসতে পারি। দিনশেষে সেই যাতে হয় আমার আনন্দ!

তামিম উঠে দাঁড়ালো। হারুন ফোন করেছে। বাবার সামনে কথা বলা যাবে না।
—আরও কিছুক্ষণ বসো, তোমার এক্সপ্লেনেশন শুনতে ভালো লাগছে। সাউন্ডস ইন্টারেস্টিং!
তামিম সবুজ ফাইলটা বাবার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
—এখানে তোমার আর মায়ের জন্য ইউরোপ ট্যূরের একটা এনিটাইম প্যাকেজ প্ল্যান আছে। যদি তুমি এটা নাও, আমি খুব খুশি হবো বাবা।
মেজবাউর সাহেব ছেলের হাত থেকে ফাইলটা নিলেন।
—সারাজীবন তুমিই দিয়েছো বাবা। জবটা হবার পরও আমার পকেট মানি তুমিই দাও। আমার স্যালারি থেকে তোমাদের কিছু দেওয়া হয়নি। আমি কি এখন আমার উপহারটা নিতে পারি?
মেজবাউর সাহেব ছেলের দিকে র্যাপিং পেপারে মোড়ানো ছবির ফ্রেমটা এগিয়ে দিলেন এবং মনে মনে প্রার্থনা করলেন, হে করুণাময় আমার ছেলের যেন আনন্দময় চমৎকার একটি জীবন হয়!
তামিম ছবির প্যাকেটটা খুলে কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইলো।
অস্পষ্ট গলায় বললো,
—এটা আমার খুব প্রিয় ছবি। আমার ড্রিংকটা তোমার জন্য! ধন্যবাদ বাবা।
তামিম দরজার কাছে গিয়ে দুষ্টুমিরকম হেসে বললো,
—প্যাকেজ প্লানটাতে ছোট্ট আরেকটু কথা আছে বাবা, ইতু রিতুকেও এড করে দিয়েছি। নিয়ে যেও ওদের।

তামিমের ঘুম ভাঙলো ফোনের আওয়াজে। তামিম ঘড়ি দেখলো। তিনটা একুশ। এতরাতে কে ফোন করতে পারে? অপরিচিত নাম্বার।
—হ্যালো,
—হ্যালো, মি. তামিম আমি নাফিসা বলছি। শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো।
—জি জি, শুনতে পাচ্ছি। বলুন ম্যাম। এত রাতে? এনি ইমার্জেন্সি?
—আমি আপনার সেই রিলেটিভের সাথে মিট করতে চাই। এখনই….
—এখনই?
—ইয়েস মি. তামিম! আমাকে হুট করে চলে যেতে হচ্ছে। সকাল সাড়ে আটটায় আমার ফ্লাইট।
তামিম থতমত খেয়ে গেল।
—আপনি হঠাৎ দেখা কেন করবেন?
—আপনার রিলেটিভ মি. শফিক সাহেব কিছুক্ষণ আগে আমায় একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। সেটি পড়েই দেখা করতে ইচ্ছে করলো। আপনি কি বার্তাটি শুনতে চান?
—জি না, মানে জি হ্যাঁ।
—তিনি লিখেছেন, “সম্মানিত মহোদয়া, আমি অনেকদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলাম। আপনি আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। আমার কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে সকল ধরনের ঝামেলা মিটিয়ে আমার পড়াশোনার পথকে সুগম করে দিয়েছেন। পড়াশোনা আমার জীবনে সহজভাবে ফিরে এসেছে বলে আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমার বিচ্ছিন্ন এলোমেলো জীবন সুস্থ প্রবাহে এনে দেওয়ার জন্য আমি আপনাকে একদিন ধন্যবাদ দিতে আসবো। তবে সেদিন আমার সাথে অন্য কেউও আসবে। আর আমি জানি তাকে দেখলে আপনি ভীষণ খুশি হবেন!”
—হ্যালো, বুঝতে পেরেছেন তো মি. তামিম আমি কেন দেখা করতে চাচ্ছি?
—জি ম্যাডাম, বুঝতে পেরেছি।
—আপনি কি একটু এরেঞ্জ করতে পারবেন? আমি আসলে একা যেতে চাই সেখানে। সিকিউরিটি টিম নিয়ে আপনি বাইরে থাকবেন।
—ওকে ম্যাম, আমি এক্ষুণি আসছি।
—আচ্ছা, একটা ব্যুকে পাওয়া যাবে? রজণীগন্ধা আর হলুদ গোলাপের ব্লেন্ড হলে ভালো হয়।
—আমি ম্যানেজ করছি ম্যাম।
—থ্যাংকস। রাখছি আমি।
—ইয়েস ম্যাম।
ফোন রেখেই তামিমের মনে হলো, নাফিসা ম্যামকে জিজ্ঞেস করা হয়নি তিনি এত তাড়াতাড়ি কেন চলে যাচ্ছেন? উনার তো ডিসেম্বরে যাওয়ার কথা।

নাফিসা ফ্লাওয়ার ব্যুকেটা হাতে করে গাড়ি থেকে খুব সাবধানে নামলো।
—ম্যাম, আমি কি যাস্ট আগে গিয়ে একটু ডেকে দিবো? এত রাতে আপনি নক করে যদি অপেক্ষা করতে হয়!
—মি. তামিম আপনাকে আমি বলেছিলাম না, আমি অনেক ব্যাপারেই আগে থেকে বলতে পারি। আজও আমি আগে থেকেই একটা জিনিস গেস করে এসেছি, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে দরজা খুলবেন মি. শফিক। আপনি কিন্তু আমার অনুমান পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
নাফিসা সোজা গিয়ে দরজায় নক করলো। বেশিক্ষণ নক করতে হলো না।নাফিসার অনুমান মিলে গেছে,
দরজা খুলেছে শফিক। তাঁর একহাতে বই, অন্যহাতে চায়ের মগ! সে খালি গায়ে এবং একটি শর্টস পরে আছে।
নাফিসা হাসিমুখে বললো,
—হ্যালো, মি. শফিক! আমি নাফিসা। আপনার সম্মানিত মহোদয়া! এটা আপনার জন্য…
বলেই ব্যুকেটা এগিয়ে ধরলো।
শফিক অত্যন্ত বিব্রত হয়ে তাঁর পরনের শর্টসের দিকে তাকালো এবং হাতের চায়ের মগ ফেলে দিয়ে ভেতরের ঘরের দিকে দৌড় দিলো।

তামিম দরজার এপাশটা থেকে সরে এলো। গাড়িতে বসে থাকাই ভালো। হালকা শীত করছে বাইরে।
আচ্ছা, নীরা কি ঘুমোচ্ছে এখন? তাঁরও কি এমন শীত শীত করছে?

(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here