হলিডে #পর্ব_৩৪

0
458

#হলিডে
#পর্ব_৩৪

দুর্নিবারের ঘুম ভাঙলো ছ’টায়! ঘুম ভাঙলো বলা যাবে না, ভাঙানো হয়েছে। কেউ একজন মিট করতে এসেছে। সে শিল্পপতি মেজবাউর সাহেবের লোক।
এই লোকটার কি বিশেষ এত দরকার? সকাল দশটার এপয়েন্টমেন্ট করা ছিল অথচ ভোর ছ’টায় লোক পাঠিয়ে দিয়েছে! মানে কি? এই যে এপয়েন্টমেন্টের জন্য দুর্নিবারকে আজকের শুটিং পর্যন্ত ক্যানসেল করতে হয়েছে। ভদ্রলোক ফোন করিয়েছিলেন ডিরেক্ট তথ্যমন্ত্রীকে দিয়ে। তার মানে হলো ভদ্রলোকের হাত অনেক উপরে। কি চান তিনি? দুর্নিবারকে তাঁর দরকার কেন? কোনো ঝামেলায় ফেলার জন্য নয় তো?

দুর্নিবারের পি এস কামাল এসে আবার নক করছে।
—স্যার, যিনি দেখা করতে এসেছেন, তিনি গাড়িতে বসে আছেন। ভেতরে নিয়ে আসবো?
—তিনি কি বলেছেন?
—তিনি কিছু বলেননি স্যার৷ শুধু বলেছেন, জরুরি কথা আপনার সাথে; এক্ষুণি যাতে ডেকে দিই! দশটার এপয়েন্টমেন্ট ছিল কিন্তু উনি কিছুতেই শুনছেন না।
—ভেতরে নিয়ে আসো কামাল। ব্রেকফাস্ট অফার করো, ততক্ষণে আমি নামছি।
—স্যার, সাথে একটা পুলিশ জিপও নিয়ে এসেছেন।চার জন ফোর্স সাথে। সবাই আর্মড মনে হচ্ছে।
দুর্নিবার এক মুহূর্ত ভাবলো,
—আচ্ছা, ভেতরে আসতে বলো। টাইট সিকিউরিটি চেক করবে। মোবাইল, ক্যামেরা, রেকর্ডিং ডিভাইস এসব কিচ্ছু এলাউ করবে না৷ আমি ফ্রেশ হয়ে নামছি।

দুর্নিবার নিচে এসে একটা হাই ভোল্টেজ শক খেলো। চুলে দুই বিণুনি করা ছিপছিপে, পাতলা গড়নের একটি মেয়ে সোফার উপরে পা তুলে বসে আছে। তাঁর গলায় সবুজ মাফলার, মাথার অরেঞ্জ কালারের বেবী ডিজাইন ওলের টুপি। পরনে একটা মেজেন্টা টপের সাথে ডার্ক ব্লু স্কার্ট। গলায় লম্বা চেইনে ছোট লকেট আর পায়ে কেডস৷ কেডস নিয়েই সে দিব্যি সোফায় বসা। চোখের চশমা মাথার উপরে তুলে দেওয়া। চুলটা বোধহয় রাতের বাঁধা, বিণুনির বেবী হেয়ার সব পাকিয়ে এলোমেলো। চোখের কাজল পুরোনো হয়ে আছে। তবে তাঁর নাকের নিচের তিলটা একদম ঝকমক করছে। বয়স কত হবে? ১৫বা ১৬ নাকি তাঁও কম? এই এতটুকু মেয়ে দুর্নিবারের কাছে কি চায়?সেলফি? অটোগ্রাফ?
দুর্নিবারের হঠাৎই মনে হলো, তার মাথা ঝিমঝিম করছে, ধোঁয়াশা দেখতে লাগছে সব। কেন?
তারপরও দুর্নিবার এগিয়ে এসে বললো,
—হাই…..
মেয়েটি কিছু না বলে হাসলো। জোর করে হাসা যাকে বলে। চোখের চশমা নামিয়ে ঠিকঠাক পরে নিলো। পা নামিয়ে ঠিক হয়ে বসলো।
—আমি রিতু! হলিক্রসে পড়ছি। সায়েন্সে। আমিই বাবাকে বলে আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছি। এটা আমার বাবার কার্ড আর এটা আমার আইডি কার্ড। প্লিজ সিট ডাউন।
দুর্নিবার থতমত খেয়ে গেল। তারই বাড়িতে কেউ তার সাথে দেখা করতে এসে তাকেই বসতে বলছে।
এই প্রথম দুর্নিবার কারো এক কথায় বসে পড়লো।
—আপনি কি কিছু নেবেন রিতু? চা -কফি?
দুর্নিবারকে আরো অবাক করে দিয়ে রিতু বললো,
—সকালে কি আপনার এখানে ভাত হয়? হলে স্ট্রেইট ভাত খাবো। আপনার সাথে দেখা হওয়া নিয়ে এত টেনশনে ছিলাম যে, গতকাল দুপুর থেকে আমি কিছু খেতে পারিনি। আই এম ভেরি হাংগ্রি নাউ!
—ইয়েস, ইয়েস…. ভাত হয়। আমি বলে দিচ্ছি যাস্ট!

দুর্নিবার আইডি কার্ডে চোখ বুলালো। রোল নাম্বার দেখে বললো,
—বাহ্,ফার্স্ট গার্ল! ক্লাস টপার।
—টপার হওয়া তেমন বিশেষ কিছু নয়। যে সেকেন্ড, সেও ভালো। যে থার্ড সে আরো ভালো। এক দু নম্বরের ব্যবধান থাকে।
—তারপরও রোল নাম্বারের তো একটা ফেইস ভেলু আছেই।
রিতু হাসলো।
—আমি কিছু উপহার নিয়ে এসেছিলাম আপনার জন্য, আপনার লোক ভেতরে এলাউ করলো না। কেন? একশবার করে বললাম, এটম বোম তো আর আনিনি। বললো, আপনার স্ট্রিক্ট নিষেধ আছে।
—একচুয়েলি, সবসময়ই এমন বলি আমি। আচ্ছা আমি এক্ষুণি বলে দিচ্ছি ভেতরে নিয়ে আসতে।
দুর্নিবার উঠে গিয়ে ইন্টারকমে ফোন করলো। ফিরে এসে দেখলো, রিতু ডাইনিং টেবিলে।
—ফিলিং মাচ থার্স্টি। নিজেই পানি নিয়ে নিলাম।
নায়ক হলে কি সকাল বেলাতেও এমন টিপটপ থাকতে হয়? কি ভালো দেখাচ্ছে আপনাকে!
রিতু বুড়ো আঙুল তুলে এপ্রিশিয়েট সাইন দেখালো।

একটা পুঁচকে মেয়ে ভোর বেলা দুর্নিবারের মতো একজনকে জাগিয়ে এত নরমালি কি করে কথা বলতে পারে? হাউ?
—আপনার কি ইন্টারেস্টিং লাইফ! আমরা ঘর সাজাতে দাম দিয়ে শোপিস কিনি অথচ আপনার ঘরটা আপনার ছবি দিয়েই আজানো। খরচ বেঁচে গেল, ভাবা যায়? একই সাথে আপনি একটা ডেকোরেশনের আইটেমও। কোয়াইট নাইস…
দুর্নিবার কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তার কথা ছেড়ে ছেড়ে যাচ্ছে, কিছুই মনে পড়ছেনা যেন! এরকম খাপছাড়া কেন লাগছে? এই যে শীত লাগছে, আবার কপাল ঘামছে। তার কি শরীর খারাপ করেছে? জিভটাও ভারী ভারী লাগছে। মেয়েটা স্বাভাবিক কথা বলছে ঠিকই কিন্তু মনে হচ্ছে, সে ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে। তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে মেয়েটাকে বিদায় দেয়া দরকার। দুর্নিবারের এই প্রথম কোনো মেয়ের সামনে খেই হারানো লাগছে। এটা প্রকাশ পেলেই মহাসমস্যা।
সে মনে মনে বললো, বি ইজি দুর্নিবার।
—রিতু, তুমি বসো না। বসে কথা বলো। কি কথা আছে তোমার?
—মি. হিরো, তা আপনার কাছে আমি যে দরকারে এসেছি তা হলো…
—ওয়ান মিনিট বাইরে খুব ফগ! আমি একটা জ্যাকেট নিয়ে আসছি।
দুর্নিবার সামনে থেকে সরতে চাইলো, একটা চুইংগাম মুখে দেওয়া দরকার। এতে স্টেবিলিটি আসবে।
—ওহ্ জ্যাকেট তো। ওই সোফায় ওটা কি ব্লু? আপনার জ্যাকেট না?
দুর্নিবার উঠার আগেই রিতু জ্যাকেটটা এনে দুর্নিবারের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
—থ্যাংকস।
—অনারেবল হিরো স্যার, আমি যে দরকারে এসেছি তা একই সাথে দুটি বিষয়কে প্রভাবিত করবে। কিন্তু আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই হিরো হোন, তাহলে আমার কথা শোনার পরও আপনি সেই বিষয়গুলোকে প্রভাব মুক্ত রেখে ঠিকঠাক এখনের মতো থেকে যাবেন।
দুর্নিবার নড়েচড়ে বসলো। তার মানে অভিনয় নিয়ে এফেক্টিং কিছু বলবে।
—আমি সত্যিকারের হিরো কিনা সেটা যাচাই করবার জন্য একটা পিওর এক্সাম এসেছে। বাহ্….
ততক্ষণে কফি এসে গেছে।
—আমি বললাম তো, নো টি অর কফি!
—সকালে আমি একটা কফি নিই। রুটিন খাবার যেটা। এজন্য এসেছে! তোমার জন্য ভাত করা হচ্ছে।
তা তুমি কি যেন বলছিলে রিতু!
—আমার ভাই, এনএসআইর একজন এডি। আন্ডার কভার পুলিশ কপ! বুঝতে পারছেন তো।
হি ইজ এ হ্যান্ডসাম ম্যান, নাইস গাই। আর হাইট সিক্স থ্রি। আপনার যেন কত? ওহ.. ফাইভ ইলেভেন! আই নো দ্যাট…. আপনার থেকেও বেশি। আর মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল। অবশ্য ইন্টিলিজেন্সে জব তো, তাই ছেঁটে ফেলতে হয়। রেগুলার জিম করে, কি দারুণ বডি ও’র!
—হু হু তারপর…?
দুর্নিবার কফিতে চুমুক দিয়েই মনে মনে বললো, বাহ্ চমৎকার কফি। অথচ প্রতিদিন ঘুম ভাঙবার পর এই কফিটাই তার তেতো লাগে খুব। আজ ভালো কেন?
—আমার ভাইয়া চাইলেই হিরো হতে পারতো। তবে ভাইয়া কিন্তু রিয়েল লাইফের হিরো, গুলিভর্তি রিভলভার নিয়ে সে দিব্যি হাসতে হাসতে কফি বানায়। শোবার আগে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুণগুণ করে গানও গায়! শুটিং এ ওর অনেকগুলো মেডেল আছে।
—বাহ্! ইন্টারেস্টিং তো… তিনি কোথায় এখন? সাথে নিয়ে আসতে, আলাপ হয়ে যেত।
—সে ট্রেনিং এ আছে বিদেশে। তো যা বলছিলাম, আমার সেই ভাইয়ার জীবনে হুট করে একদিন নীরাপু চলে এলো।
দুর্নিবার এবার পুরো ব্যাপারটা ধরতে পারলো।
—আমি চাই, আমার ভাইয়া যাতে কোনো ধরনের কষ্ট না পায়। নীরাপুকেও আমি ব্যাপারটা বলতে পারতাম কিন্তু সেটাতে উনার অসম্মান হতো। উনার কাজের জায়গা নিয়ে কথা বলা মানে কাজটাকেই ছোট করে দেখা। আপনাকে বলার কারণ হলো, ভাইয়াটা একটু পাগলাটে আসলে। ভালোবাসে তো ভীষণ, আপনি যদি উনার সাথে ফোনে একটু কথা বলে নিতেন! মানে আপনি ভাইয়া আর নীরাপু তিনজনেই তাতে ভালো বন্ধু হয়ে যেতেন।
—রিতু, ইফ আই এম নট রং তোমার এই নীরাপুর সাথে তোমার ভাইয়ার ডিপ কোনো কানেকশন আছে,
তাই না?
রিতু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
—কিন্ত ইন ভেরি নিয়ার ফিউচার নীরা কিন্তু অন্য হিরোদের সাথেও কাজ করবে, তখন তুমি কি করবে? এরকম ভোর বেলায় তাদের বাড়ি গিয়ে গিয়ে রিকোয়েস্ট করবে, যে আপনি আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলে নিন। ইজ ইট নট সো সিলি?
—মোটেও সিলি কিছু নয়। ভাইয়া কিন্তু মোটেও নীরাপুর অথরিটি নয়। শুধু বলছি, নীরাপুর কাজের জগতের একটা মানুষের সাথে যদি ভাইয়ার বন্ধুত্ব হয়, সে কষ্ট পাওয়া থেকে বেঁচে যাবে। তাঁর ধারণা নীরাপু যদি হারিয়ে যায়। অনেক খ্যাতির মাঝে যদি সে কখনো ঢুকতে না পারে?

দুর্নিবার কফিমগটা খুব সাবধানে সামনের কাঁচের টেবিলটাতে নামিয়ে রাখলো।
—তোমার ভাইয়া চায় না উনি কাজ করুক?
—অবশ্যই চায়। সাথে আরেকটা জিনিসও চায়, সেটা হলো নীরাপুর ভালোবাসা।
—কারও জীবনে ফোর্সড এন্ট্রি নেওয়া কি ঠিক?
—ভালোবাসলে ঠিক। ভাইয়া, যেভাবে ভালোবাসে সেটাই ঠিক। নীরাপুর জন্য সে প্রতি মুহূর্তে কষ্ট পাচ্ছে। এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছে যে, সে আপনার মতো বেস্ট নয় বলে যদি নীরাপু ছেড়ে যায় তাকে!
—এই তো তুমি একটু আগেই বললে, তোমার ভাইয়া আমার থেকেও বেস্ট। তাহলে?
—বেস্ট কিন্তু… আমি অত কিছু এক্সপ্লেইন করতে পারবো না।
রিতুর গলা ধরে এসেছে।
—রিতু, তোমার ভাত রেডী। টেবিলে জয়েন করবে চলো।
রিতু উঠে দাঁড়ালো,
—আমার সেকেন্ড রিকোয়েস্ট হলো, আমি যে এই ব্যাপারে কথা বলেছি নীরাপু…..
রিতুর কথা শেষ হলো না।
—তোমার নীরাপু একদম জানবে না এবং আমি ঠিক এখনের মতোই আন্তরিক হয়ে তাঁর সাথে কাজ করবো। ওটা আমাদের প্রফেশনাল লাইফ।
রিতু কেন জানি দুর্নিবারের কথাটা তক্ষুণি বিশ্বাস করে নিলো এবং খুব সহজভাবেই ভাত খেতে বসলো৷

দুর্নিবার রিতুর খাবার সময়টা চুপচাপ পাশে বসে ছিল। এটা ওটা এগিয়ে দিয়েছে। খাওয়ার শেষে তোয়ালে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
—তবে আমি কিন্তু তোমার ভাইয়াকে ফোন করবো না। দাঁড়াও এভাবে তাকাবে না। কারণটা আমি বলছি। দেখো তোমার ভাইয়া যেহেতু ভালোবাসে, তাহলে তাঁর ভালোবাসাটা তাকে তাঁর ভাষাতেই বুঝাতে দাও। তিনি ভালোবাসায় কষ্ট পেয়ে কিভাবে ভালোবাসার মানুষটাকে জয় করে নেন, সেটাও দেখার দরকার। অন্য কেউ যদি মাঝখান থেকে মিটিয়ে দেয়, ভালোবাসার শক্তি কোথায় তাহলে? আর নীরার জীবনে নীরা কোন ভালোবাসাকে বয়ে বেড়াবে সেটাও নিশ্চয়ই নীরার মন ঠিক করবে, তাই না?
রিতু চোখ বড়বড় করে সোফার হাতলেই বসে পড়লো।
—তার মানে দুজন মানুষ যখন ভালোবাসে বা কষ্ট পায়, সেখানে মাঝখান থেকে কথা বললেই বরং পুরো ব্যাপার ঘেটে যায়। ও মাই গড!
—ইয়েস। লজিক্যালী দেখলে তাদের দুজনের ভালোবাসা তারাই ঠিক করবে। আমরা কেউ নই কিছু করবার। ভালোবাসার মতো অত্যন্ত নিজস্ব একটা ব্যাপারে তৃতীয় বলে কিছু থাকতে নেই। ইটস এ ক্রাইম। ইয়েস অফকোর্স আমরা মিডিয়া হতে পারি, বাট নট দ্য ম্যানেজার। এখানে ম্যানেজমেন্টের এর প্রশ্নই আসে না। ক্লিয়ার? দে আর দ্য প্রাইম অথরিটি অফ দেয়ার লাভ।
রিতু আশ্বস্ত হবার ভঙ্গিতে দুর্নিবারের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর দিক যে ভালোবাসার আছে, সে তো ভাবেইনি আগে।
—রিতু, কেউ কারো ভালোবাসা গড়ে দিতেও পারে না, আবার কেউ চাইলেও কারো ভালোবাসা বিগড়ে দিতে পারে না।
—মি. হিরো আপনি প্লিজ একটু লেকচারের মতো করে বলুন, আমার ফোনোগ্রাফিক মেমোরি খুব ভালো। আর আপনি তো জানেন ই, ফোনোগ্রাফিক মেমোরি ভালো হওয়া মানে আপনার কথাকে আমি ভেঙে ভেঙে একটা কোলাজ থিংকিং দাঁড়া করাবো। ভাইয়াকে বলা দরকার। প্লিজ…. আমি আসলে ভালোবাসা ব্যাপারটার এই চরম দিকটা ভাবিইনি কখনো। প্লিজ স্যার।
—ওকে.. লুক, আরেকটু সহজ করে বলি। ভালোবাসা শর্তহীন আর অন্ধ হয়, এটা তো আমরা জানি। অন্ধ ব্যাপারটা হলো, সব কিছু তুচ্ছ করেও বহাল থাকে নিজস্ব শক্তিতে। এই যেমন, তোমার অনেক বছর আগের কোনো সুখের মুহূর্তকে তুমি এখনো ভালোবেসে যেমন আনন্দ পাও, তেমন। কেউ কি চাইলেও বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি কথা বলে ওই অনুভূতি বদলাতে পারবে? একদম না। শুধু অপেক্ষা করে, কষ্ট পেয়ে, সময় নিয়ে একে ধারণ করতে হয়! ব্যস….
আর শর্তহীন হলো, এর জন্য কোনো মন্দ বা ভালো দায়ী থাকবে না। যেমন, একটা নীল জামা তুমি ভালোবাসো; তাতে খুব দাগ লেগে গেলেও তুমি তাকে ফেলে না দিয়ে ক্লোজাটের কোনো কোণে বছরের পর বছরে রেখে দিয়েছো। কেন? তোমার ভালোবাসায়! কেউ যখন বললো, এটা ফেলে দাও; খারাপ হয়ে গেছে। দাগ এতেঁ তোমার মন তখন কি বললো, হোক দাগ। এটা আমার প্রিয় জামা, রাখবো আমি।
—উফ্ আপনি কত বুঝেন এই ব্যাপারগুলো। আমি তো ভাইয়ার অস্থিরতা দেখেই মরে যাচ্ছিলাম প্রায়।ভাবলাম, সত্যিই যদি অঘটন ঘটে কিছু!
—একদমই না। মনের টান বলে কথা। জানো, এই মনের টানেই তো কেউ রাজপ্রাসাদ ফেলে নালাপাড়ার ছোট্ট ভাঙা বাড়িতে গিয়ে পড়ে থাকে, আবার এই মনের টানেই ছোট্ট ভাঙা বাড়িটাকে রাজপ্রাসাদ ভেবে আনন্দ পায়। সামান্য মানুষ আমরা; হৃদয়ে ভালোবাসা না থাকলে কি এরকম কেউ সম্ভব করতে পারতো?
রিতু বিস্মিত দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে আছে। আনন্দে তাঁর ঠোঁট কাপঁছে, চোখ চকচক করছে। ভালোবাসার মতো এত চমৎকার একটা ব্যাপার নিয়ে মানুষ কেন যে এত বেসামাল হয়ে পড়ে, সেটাই তো অবোধ্য!

দুর্নিবারের পি এস কামাল এসে বললো,
—আপনার ব্রেকফাস্ট রেডী স্যার।
—কি দিয়েছো?
—টোস্ট আর চা।
—কামাল, ভাত দিতে বলো আজকে। আমার বোধহয় ভাতের অরুচি রোগ সেড়ে গেছে।
রিতু উঠে দাঁড়ালো ,
—আমি আসছি। এত সময় দেওয়ার জন্য…
দুর্নিবার রিতুর কথা কমপ্লিট করতে দিলো না,
—শুধু ধন্যবাদ দিলে হবে না রিতু। ধন্যবাদ আমার চাই না!
—তাহলে?
—আমি জানি না। তবে যেটা চাই সেটা ধন্যবাদ নয়!
রিতু মুচকি হাসলো,
—আমি আন্ডার এজ! অনেক বিষয় বুঝি না।

গেট পর্যন্ত এসে দুর্নিবার মনে মনে বললো, চমৎকার সকাল ছিল এটা। এত কম বয়সে কেউ এত ম্যাচিউরড থিংকার হয় কি করে?
রিতু ঘুরে তাকালো।
—আপনি কখন ফ্রি থাকেন বলুন তো হিরো? আমি ফোন করবো আপনাকে মাঝে মাঝে।
—তুমি যখনি ফোন করবে আমি ফ্রি হয়ে যাবো। তবে তুমি বোধহয় ফোন করবে না।
রিতু রহস্যময়ভাবে হাসলো।
গাড়িতে উঠে সে মাথা বের করে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
—ফোন করলে যদি প্রেম হয়ে যায় আপনার সাথে, এজন্যই ফোন করবো না। ভালো থাকবেন।
দুর্নিবার ফিসফিস করে বললো, সেটা তো ফোন না করলেও হবে।

রোদ উঠে গেছে চারিদিকে। কি সুন্দর ঝলমলে লাগছে আশপাশটা! এমন সকাল কি দুর্নিবার আগে কখনো দেখেছে? নাকি দুর্নিবারের জীবনে এত চমৎকার সকাল আগে হয়নি কখনো?

(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here